বাংলার জন্য ক্লিক করুন

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   প্রবন্ধ -
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু

মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতি সংঘ কতৃক মানবাধিকারের সার্বজনিন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর ডিসেম্বর ১০ তারিখে মানবাধিকার দিবস পালিত হয়ে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এদেশে একটি ন্যায় ও দুর্ণীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাংলার ৭ কোটি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সহরার্দি ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতার মাঝে বজ্রকন্ঠে ঘোষণা দেন” এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। বঙ্গবন্ধুর আহবানে বাংলার মানুষ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৩০ লক্ষ লোকের রক্তের বিনিময় দেশ স্বাধীন হইল। আমরা একটি দেশ পাইলাম স্বাধীন বাংলাদেশ। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ স্থান পাইল। বঙ্গবন্ধু সংবিধান রচনা করলেন। সংবিধানে বাংলার,গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের অধিকার ও বাংলার সকল মানুষের অধিকার ফিরে পাইল। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ১৯৭২ এর সংবিধানে আন্তর্জাতিক ভাবে স¦ীকৃতি সর্বস্তরে মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। মানবাধিকারের সার্বজনিন, জাতি ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবার জন্য সমান। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী আমাদের জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তার তরুন বয়স থেকেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় নিরলস কাজ করেছেন মানবাধিকার সুরক্ষায় আইনের শাসন, ন্যায়বিচার,মত প্রকাশের স্বাধীনতা অত্যাবশ্যক । বিশ^ মানবাধিকার দিবস ডিসেম্বর ১০ তারিখে উপলক্ষ্যে সকল মানুষের সচেতনতা সৃষ্টি, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় সকলকে আন্তরিক হইতে হইবে । অধিকার প্রতিষ্ঠা হইলে দেশের সকল মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক মুক্তি সাধিত হইবে এবং দৈনন্দিন গুম, খুন, হত্যা, আত্মহত্যা, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, হানাহানি,মারামারি,ধর্ষন ইত্যাদি অপশক্তি সমাজ থেকে বিলপ্ত হইবে। ফলে বাংলার মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এবং বঙ্গবন্ধুর আত্মায় শান্তি লাভ করবে।

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু
                                  

মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতি সংঘ কতৃক মানবাধিকারের সার্বজনিন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর ডিসেম্বর ১০ তারিখে মানবাধিকার দিবস পালিত হয়ে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এদেশে একটি ন্যায় ও দুর্ণীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাংলার ৭ কোটি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সহরার্দি ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতার মাঝে বজ্রকন্ঠে ঘোষণা দেন” এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। বঙ্গবন্ধুর আহবানে বাংলার মানুষ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৩০ লক্ষ লোকের রক্তের বিনিময় দেশ স্বাধীন হইল। আমরা একটি দেশ পাইলাম স্বাধীন বাংলাদেশ। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ স্থান পাইল। বঙ্গবন্ধু সংবিধান রচনা করলেন। সংবিধানে বাংলার,গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের অধিকার ও বাংলার সকল মানুষের অধিকার ফিরে পাইল। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ১৯৭২ এর সংবিধানে আন্তর্জাতিক ভাবে স¦ীকৃতি সর্বস্তরে মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। মানবাধিকারের সার্বজনিন, জাতি ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবার জন্য সমান। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী আমাদের জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তার তরুন বয়স থেকেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় নিরলস কাজ করেছেন মানবাধিকার সুরক্ষায় আইনের শাসন, ন্যায়বিচার,মত প্রকাশের স্বাধীনতা অত্যাবশ্যক । বিশ^ মানবাধিকার দিবস ডিসেম্বর ১০ তারিখে উপলক্ষ্যে সকল মানুষের সচেতনতা সৃষ্টি, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় সকলকে আন্তরিক হইতে হইবে । অধিকার প্রতিষ্ঠা হইলে দেশের সকল মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক মুক্তি সাধিত হইবে এবং দৈনন্দিন গুম, খুন, হত্যা, আত্মহত্যা, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, হানাহানি,মারামারি,ধর্ষন ইত্যাদি অপশক্তি সমাজ থেকে বিলপ্ত হইবে। ফলে বাংলার মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এবং বঙ্গবন্ধুর আত্মায় শান্তি লাভ করবে।

মানবাধিকার রক্ষায় এতো আইন, তবুও লঙ্ঘিত মানবাধিকার
                                  

সৃষ্টির শুরুতে মানবতার প্রথম লংঘন হয়েছে মানবাধিকার কাবিল কর্তৃক হাবিলকে খুনের মাধ্যমে। আজও অবিরত চলছে এই খুনের ধারা। মানবাধিকার লংঘন হয়েছে কারবালার প্রান্তরে।নির্দোষ সক্রেটিসের, রানী ইসাবেলার ইনকুইজিশনের জলন্ত অগ্নিকুন্ডে, স্টালিনের শাসনামলেও। মানবাধিকার লংঘন হয়েছে নাৎসী কনস্ট্রেশন ক্যাম্পে, হিরোশিমায় আনবিক বোমার আঘাতেও মানবাধিকার লংঘন হয়েছে, বর্ণ বৈষম্যে সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে. যুদ্ধ সংঘটিত কারনে গৃহহীন শরনার্থীদের। মানবাধিকার লংঘন হয়েছে ক্ষমতার অপব্যাবহারে, পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি সম্পত্তি মাত্র এক শতাংশ পুজিপতিদের দখলের মাধ্যমে, বিশে^র প্রতিটি প্রান্তে প্রতিনিয়ত লংঘন হচ্ছে মানবাধিকার।

মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে যুগে যুগে বহু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় জন্য, প্রাচীনতম ব্যবিলনের রাজা হাম্মুরাবি মানবাধিকার সংরক্ষনে আইন করেছেন। খৃষ্টীয় ৭ম শতাব্দিতে সাম্প্রদায়ী শান্তির জন্য বহু ধর্মভিত্তিক সমাজে হজরত মুহাম্মদ (সঃ) কর্তৃক প্রনীত মদিনা সনদ’ এ মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। ক্ল্যাসিকাল যুগে, মধ্য যুগে, রেনেসার যুগে বিভিন্ন দার্শনিকগন মানবাধিকারের কথা বলে গেছেন। তাতেও মানবাধিকার হরন কমেনি। পরবর্তী বিশে^ বিভিন্ন দেশের প্রজা সাধারন স্বৈর শাসকদের অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হতে থাকে। এবং স্বেচ্ছাচারী শাসকগন কর্তৃক তাদের মৌলিক অধিকার সমূহ ব্যাপক ভাবে লংঘিত হতে থাকে। সেজন্য উপযুক্ত দার্শনিকগনের চিন্তা ধারার আলোকে বিপ্লবের নায়কগন বিভিন্ন দেশের চার্টার, বিল, পিটিশন ও ডিক্লারেশন প্রনয়ন করেন যেখানে কয়েকটি অধিকার দাবি পায়। এ সকল দলিল প্রনীত হওয়ার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার সনদের ধারা অব্যাহত থাকে। ১৯৪৫ সালে জুনে সানফ্রান্সিসকোতে একটি সনদ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় পরবর্তি কালে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর  ফ্রান্সের প্যারিসে গৃহীত জাতিসংঘের সার্বজনীন ঘোষনা ‘ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অবহিউম্যান রাইটস’ বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘে প্রায় ৬০ টির অধিক দলিল ও কনভেশন প্রনীত ও গৃহীত হয়েছে যেন মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।

যুগে যুগে সবচেয় বেশি মানবাধিকার লংঘন হয়েছে ক্ষমতার লড়াইয়ে। এই উপমহাদেশে বহুজাতির শোষনে লংঘন হযেছে মানবাধিকার । এই দেশে মানবাধিকারের সব সীমা অতিক্রম হযেছে ১৯৭১ সালে নীরস্ত্র মানুষদের হত্যার মাধ্যমে। স্বাধীন বাংলায় মানবাধিকার লংঘন হয়েছে রাষ্ট্র প্রধানদের খুনের মাধ্যমে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু স্ব-পরিবার হত্যার মাধ্যমে ধুলিসাৎ করা হয়েছে মানবতাকে।

মানবাধিকার রক্ষায় এতো আইন ধারা নিয়ম করার পরও বিশে^ প্রতিটি মানুষ কি তার পূর্ণ অধিকার নিয়ে বাচতে পারছে? আজও কি আমরা প্রতিটি মানুষকে তার প্রাপ্য অধিকার দিতে পারছি? বিশে^ এতো শক্তিধর রাষ্ট্র, ক্ষমতাসীনগন মানবতার জন্য সবাই কি এক হতে পারছে? বিশ^ মোড়ালগন লোভ, শক্তি ও ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় মরিয়া হয়ে মানব সভ্যতাকে বিপন্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

১০ ডিসেম্বর এলেই বিশ^ মানবারধিকার দিবস পালন করা হয় কিন্তু এর কার্যকারিতা কতটুকু প্রভাব বিস্তার  করছে বিশ^বাসির সেদিকে নজর রাখতে হবে। মানুষের সবচেয় বড় অধিকার হচ্ছে বেঁচে থাকা, মানব সভ্যতাকে বাঁচাতে হলে অকল্যানকর যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার উন্নয়নে মনবাধিকার রক্ষায় কতোটুকু ভুমিকা রাখতে পারছি সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সমাজ থেকে দরিদ্রতা দুর করতে হবে। হিংসা-বিদ্ধেষ, সন্ত্রাস, লুন্ঠন বন্ধ করতে হবে। রুখে দিতে হবে মানবাধিকার লংঘন কারীদের। জাগ্রত করতে হবে মানবিক মূল্যবোধ। সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে মানবতার।

 

মুজিবের চেতনায় নারী অধিকার
                                  

যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-সমাজ সংস্কারকগণ এসেছেন, নারী অধিকারের কথা বলে গেছেন, নারী মুক্তির আন্দোলন করেছেন। সমাজের কুসংস্কার থেকে নারীদের রক্ষার প্রচেষ্টা নিয়েছেন। সমাজকে সচেতন করতে উদ্যোগী হয়েছেন।
এ ভূখন্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীর ক্ষমতায়নে সবচেয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। শুধু কথা ও লেখনী দ্বারা নয়, বাস্তব জীবনে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ তিনি সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। স্বাধীন দেশের সকল নাগরিকের সম-অধিকারের কথাও তিনি বলেছেন। ‘এই ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ আমরা গড়ব’- এটা ছিল তার আন্তরিক প্রত্যয়। তাই তিনি সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যার সুফল আজ বাংলাদেশের নারীসমাজ পাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে নারীগণ আজ নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছেন।
‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার/ কেন নাহি দেবে অধিকার?/ হে বিধাতা’... বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ আকুতি করে গেছেন। কারণ, তিনি নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।
কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার আধুনিক চিন্তা ও ভাবধারায় সমৃদ্ধ ছিল। সমাজকে এগিয়ে নিতে এই পরিবারের অনেক অবদান রয়েছে। শিক্ষাদীক্ষার প্রসার, সাংস্কৃতিক চর্চা এবং কুসংস্কার দূর করার ক্ষেত্রেও সে সময় তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন—‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী/ অর্ধেক তার নর।’ সমাজে নারীর যে অবদান রয়েছে সে কথাই তিনি তুলে ধরেছেন তার কবিতায়। নারীকে তার অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছেন কবি নজরুল ইসলাম এই লেখার মধ্য দিয়ে। এ বার্তাই পৌঁছে দিয়েছেন যে, নারীকে অবহেলার চোখে দেখার সুযোগ নেই। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরুষের যে কোনো অর্জনের পেছনে নারীর অবদান রয়েছে। তাদের ত্যাগ-প্রেরণা-উত্সাহ পুরুষকে শক্তি ও সাহস জোগায়। সে অবদান ভুলে যাওয়া ঠিক নয়। কবি নজরুল আধুনিক চিন্তা-চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক ভাবধারায় বিশ্বাস করতেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মা ছেলেকে, বোন ভাইকে, স্ত্রী স্বামীকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন। প্রেরণা দিয়েছেন। ক্ষেত্রবিশেষে সঙ্গী হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে মা-বোনদের অবদান অপরিসীম।
যুদ্ধে বিজয়ের পর জাতির পিতা শেখ মুজিব প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে নারীর সম-অধিকার বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭, ১৯, ২৮, ২৯-সহ বিভিন্ন ধারায় নারীর শিক্ষা, চাকরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টির বাধ্যবধকতা সন্নিবেশ করে নারীর সম-অধিকার নিশ্চিত করেছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামাচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’—বইগুলোতে তিনি নারী অধিকারের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তাদের সমস্যা, দুঃখ-কষ্ট সমাধানের কথাও তিনি বলেছেন।
১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চীন গিয়েছিলেন শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে। যাওয়ার পথে বার্মা (মিয়ানমার) এবং হংকং হয়ে যেতে হয়েছিল। সেখানে যাত্রাবিরতির সময় তিনি শুধু নতুন জায়গা দেখেননি, সামাজের অবস্থা, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক-সামাজিক বিষয়গুলোও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিক দৈন্যের বিষয়গুলো তিনি তার লেখায় তুলে ধরেছেন। সামাজিক বিষয়ে নিজের চিন্তাভাবনার কথা উল্লেখ করে সুচিন্তিত মতামত রেখেছেন তার বইগুলোতে।
সমাজে নারীর ওপর যে বৈষম্য ও নির্যাতন চলে, সে বিষয়ে নয়াচীন যাওয়ার পথে হংকংয়ে যাত্রাবিরতির সময় সেখানকার সমাজব্যবস্থা বিষয়ে যা দেখেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে :‘এই মেয়েদের দোষ দিয়ে লাভ কি? এই সমাজব্যবস্থায় বাঁচবার জন্য এরা সংগ্রাম করছে, ইজ্জত দিয়ে পেটের ভাত জোগাড় করছে। হায়রে মানুষ! রাস্তায় রাস্তায় বহু মেয়েকে এইভাবে হংকং শহরে ঘুরতে দেখা যায়।...দেশের মালিক ইংরেজ, জনগণ না।’ (আমার দেখা নয়াচীন, পৃ. ৯৯)
তার হূদয় ব্যথিত হয়েছে নারীদের এই দুর্দশা দেখে। হংকং তখন ইংরেজদের কলোনি ছিল। জনগণের হাতে ক্ষমতা ছিল না। সেখানকার জনগণ অবর্ণনীয় শোষণ-বঞ্চনার শিকার ছিল। আর তাই সরকারের যে দায়িত্ব রয়েছে—মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করার—সে কথাই তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন। সমাজের দায়বদ্ধতার কথা বলেছেন।
চীনে শান্তি সম্মেলনের সময় তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন। নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে তিনি লিখেছেন—‘আজ নয়াচীনে সমস্ত চাকুরিতে মেয়েরা ঢুকে পড়ছে। পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করছে। প্রমাণ করে দিয়েছে পুরুষ ও মেয়েদের খোদা সমান শক্তি দিয়েই সৃষ্টি করেছে। সুযোগ পেলে তারাও বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক, ডাক্তার, যোদ্ধা সকল কিছুই হতে পারে।’ (আমার দেখা নয়াচীন, পৃ. ৯৯)
ধর্মের নামে মেয়েদের ঘরে বন্দি করে রাখতে চায় একদল। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব উল্লেখ করেছেন—‘মুসলিম দেশ তুরস্ক নারীর স্বাধীনতা স্বীকার করেছে। নারীরা সে দেশে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। তুরস্কে অনেক মেয়ে পাইলট আছেন, যাঁরা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ পাইলটদের মধ্যে অন্যতম।...আমাদের দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত লোকের মনে এই ধারণা যে পুরুষের পায়ের নিচে মেয়েদের বেহেস্ত। পুরুষ যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। মেয়েদের নীরবে সব অন্যায় সহ্য করতে হবে বেহেশতের আশায়। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে মেয়েদের নির্ভর করতে হয় পুরুষদের অর্থের উপর।’
ইসলাম ধর্ম নারীদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। মেয়েরা যে শুধু ঘরে আটকে থাকবে, বাইরে যাবে না, পরনির্ভরশীল বা পুরুষদের উপার্জনের ওপরই কেবল নির্ভরশীল থাকবে, তা কিন্তু নয়। বরং নবিজির যুগেও মেয়েদের যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল।
পুরুষদের পাশাপাশি থেকে দায়িত্ব পালন করতেন, এমনকি রণাঙ্গনেও তাদের ভূমিকা ছিল। এ কথাও তিনি লিখেছেন :‘...কিন্তু ইসলামের ইতিহাস পড়লে জানা যায় যে, মুসলমান মেয়েরা পুরুষদের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে যেত, অস্ত্র এগিয়ে দিত। আহতদের সেবা-শুশ্রূুষা করতো। হযরত রসুলে করিম (স.)-এর স্ত্রী হযরত আয়েশা নিজে বক্তৃতা করতেন। দুনিয়ায় ইসলামই নারীর অধিকার দিয়াছে।’ (আমার দেখা নয়াচীন, পৃ. ১০০)
নারী নেতৃত্ব যাতে গড়ে ওঠে সেজন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা রাখেন। ১৯৭২ সালে মাত্র নয় মাসের মধ্যে এই সংবিধান অর্থাৎ শাসনতন্ত্র তিনি রচনা করেন। নারীর অধিকার নিশ্চিত করার এক বিরল দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর, রাজাকার, আলশামস বাহিনী গণহত্যা, নারী নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই তারা করেনি। আমাদের দেশের মেয়েদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে তাদের লালসা মেটাতে তুলে দেয়। বিজয়ের পর সেই নির্যাতিত মেয়েদের উদ্ধার করে চিকিত্সার ব্যবস্থা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
সমাজে এই নারীরা যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারে এজন্য তাদের ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাবে ভূষিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাদের এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান দেখান। অনেকের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করেন। যখন বিয়ের ব্যবস্থা হয়, অনেক পিতা সন্তানের পরিচয় দিতে সমাজের ভয়ে পিছিয়ে যায়। তখন তিনি পিতার নামের স্থানে শেখ মুজিবুর রহমান আর বাড়ির ঠিকানা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের তার বাড়ির ঠিকানা লিখে দিতে বলেন। এই পরিচয়ে মেয়েদের বিয়ে হয়। এই ঘোষণার পর আর কোনো দ্বিধা কারো মনে ছিল না। বঙ্গমাতা নিজে বিয়ের সব ব্যবস্থা করেন।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করেন, যেখানে নির্যাতিতা নারীদের অগ্রাধিকার ছিল। এ সবই ছিল যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
পাকিস্তানি শাসনামলে জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারীদের অংশগ্রহণ আইন করে বন্ধ ছিল। মেয়েরা কখনো জজ হতে পারতেন না। স্বাধীনতার পর সে আইন পরিবর্তন করে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। চাকরির ক্ষেত্রে সর্বত্র মেয়েদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। পুলিশ বাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ দেন। এর কারণ হলো, তিনি বিশ্বাস করতেন অর্থনৈতিকভাবে একজন নারী যদি স্বাবলম্বী হয়, তাহলে সংসার ও সমাজে তার অবস্থান শক্ত হবে। সংসারে তার মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
তিনি বলেছেন, ‘একজন নারী যদি নিজে উপার্জন করে ১০টা টাকাও কামাই করে তার আঁচলের খুঁটে বেঁধে আনে, তবে সংসারে তার গুরুত্ব বাড়ে।’
এ কথাটা আমি আমার বাবার মুখে বারবার শুনেছি। এ কথার অর্থ হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া। আমাদের সমাজে একজন পুরুষ মানুষ অর্থ উপার্জন করে আর পুরো পরিবার তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। মুখাপেক্ষী হতে হয় গোটা পরিবারকে। আর এ কারণেই আর্থিক স্বাবলম্বিতা একান্তভাবে অপরিহার্য। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সে সুযোগ করে দিতে পারে। শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য মেয়েদের শিক্ষা তিনি অবৈতনিক করে দেন। পিতা-মাতার কাঁধের বোঝা হালকা করে দেন।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭ (ক)-এ উল্লেখ করা আছে :‘রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
এখানে ‘বালিকাদের’ কথাটা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে মেয়েদের শিক্ষাটা নিশ্চিত হয়; গুরুত্ব পায়—সে চিন্তা থেকেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বেগম রোকেয়া নারীদের শিক্ষা ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ‘পদ্মরাগ’ উপন্যাসে তিনি লিখেছেন :‘তোমাদের কন্যাগুলিকে সুশিক্ষিতা করিয়া কার্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও, নিজেরাই নিজেদের অন্ন, বস্ত্র উপার্জন করুক।’
একটি সমাজকে গড়ে তুলতে হলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবারই প্রয়োজন। যে সমাজের অর্ধেকটা নারী, তাদের বাদ দিয়ে উন্নয়ন করা যায় না। একটা দেশ, একটা সমাজ বা সংসারের সবাই যদি পণ করে, তারা সত্যিকারের উন্নতি করতে চায়, তাহলে অবশ্যই সবাইকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। মেধা মনন ও শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯ (৩)-এ উল্লেখ রয়েছে :‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।’ সংবিধানে সব নাগরিকের সম-অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ‘সরকারি নিয়োগ লাভের সুযোগের সমতার’ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব লিখেছেন :‘সত্য কথা বলতে গেলে একটা জাতির অর্ধেক জনসাধারণ যদি ঘরের কোণে বসে শুধু বংশবৃদ্ধির কাজ ছাড়া আর কোনো কাজ না করে, তা হলে সেই জাতি দুনিয়ায় কোনো দিন বড় হতে পারে না।’
৬৯ বছর পূর্বে ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এ কথা উপলব্ধি করেছিলেন; অথচ তখনকার সমাজব্যবস্থা ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন। এই কুসংস্কারের অচলায়তন ভেঙে সামজের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনকেই গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। তাই নারী পুরুষকে একই সঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮(২)-এ বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।’
চীন ভ্রমণের সময় কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের সমান অংশগ্রহণ তাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি লিখেছেন :‘নয়াচীনের মেয়েরা আজকাল জমিতে, ফ্যাক্টরিতে, কলকারখানাতে, সৈন্য বাহিনীতে দলে দলে যোগদান করছে।... যে সমস্ত ফ্যাক্টরি, কলকারখানা, সরকারি অফিসে আমি গিয়েছি, সেখানেই দেখতে পেয়েছি মেয়েরা কাজ করছে; তাঁদের সংখ্যা স্থানে স্থানে শতকরা ৪০ জনের উপরে।
‘নয়াচীনের উন্নতির প্রধান কারণ পুরুষ ও মহিলা আজ সমানভাবে এগিয়ে এসেছে দেশের কাজে। সমানভাবে সাড়া দিয়েছে জাতিগঠনমূলক কাজে। তাই জাতি আজ এগিয়ে চলেছে উন্নতির দিকে।’ (আমার দেখা নয়াচীন, পৃ. ৯৯।)
কর্মক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলাদেশে যাতে নারী ও পুরুষের সমান সুযোগ সৃষ্টি হয় যে বিষয়ে লক্ষ রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে সংবিধান ১৯৭২ সালে জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন, সেখানে সম-অধিকারের কথা উল্লেখ রয়েছে।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯ (১)-এ বলা হয়েছে :‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।’
সমাজের শুধু নারী বা পুরুষ নয়, সমাজের সকল নাগরিক যেমন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী বা অনগ্রসর শ্রেণি—সকলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার বিধান এই সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ বঞ্চিত না হয়। অনগ্রসর যারা তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯ (৩) (ক)-তে উল্লেখ আছে :‘নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’
৪৯ বছর পূর্বে সংবিধানে যে ক্ষমতা নারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছেন তা সে সময়ের সমাজব্যবস্থায় একটা সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। সমাজে নারীদের সম্মানজনক অবস্থানের ভিত্তি তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথেই নারী ক্ষমতায়নের পদক্ষেপ আওয়ামী লীগ সরকার গ্রহণ করে। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করে। সন্তানের পরিচয়ে পিতার সঙ্গে মায়ের নাম যুক্ত করা হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটি তিন মাস থেকে বৃদ্ধি করে প্রথমে চার মাস এবং পরে ছয় মাস করা হয়।
উচ্চ আদালতে কোনো নারী বিচারক নিয়োগ পেতেন না। প্রথম নারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি আমরাই দিই। জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার (ওসি)সহ প্রশাসনের সর্বস্তরে মহিলাদের নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিমানের পাইলট, মেরিন একাডেমিতে ভর্তির ব্যবস্থাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়েদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি বা উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা-সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ বৃত্তি দেওয়ার যে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি, সেখানে ৭০ শতাংশই নারী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার বৃত্তি পাচ্ছে। মেয়েদের জন্য উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বিধবা, স্বামী-পরিত্যক্তা, বয়স্ক নারীদের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। মাতৃত্বকালীন ভাতার প্রচলন করা হয়েছে। মাতৃদুগ্ধদানকারী মায়েরা ভাতা পাচ্ছেন। সংসারে মেয়েদের যাতে কেউ বোঝা না মনে করে, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। চিকিত্সা সেবা, বিনা মূল্যে ওষুধ, বিনা মূল্যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
নারী সুরক্ষার জন্য অনেক আইন পাশ করা হয়েছে। নারী ও শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করার জন্য স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সারা বাংলাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানেও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্লট বরাদ্দের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গ্রামের মেয়েরা নিজেদের উত্পাদিত পণ্য যাতে বাজারজাত করতে পারেন তার জন্য ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’ গঠন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে মেয়েদের শিক্ষার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। অভিভাবকরা মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে উত্সাহিত হচ্ছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টারে নারী উদ্যোক্তারা স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক, তথ্য আপা, আমার বাড়ি আমার খামার-সহ বিভিন্ন কর্মমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কৃষি, শিল্প, সেবাসহ সব ক্ষেত্রে মেয়েদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে নারীদের অসামান্য অবদান বিস্মৃত হওয়ার নয়। দেশের মোট জনসংখ্যার যেখানে অর্ধেকই নারী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চাইতেন তারা সমাজ ও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবেন। যাতে দেশের উন্নয়ন দ্রুততর হয়; দারিদ্র্য বিমোচন করে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করা যায়। আওয়ামী সরকার তার প্রদর্শিত পথেই দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশকে শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। শিগিগরই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন পূরণ হবে। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
লেখক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

মানবাধিকার দিবসঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
                                  

আদিম অসভ্য যুগে কোন নিয়মনীতি-শৃঙ্খলা ছিল না। ক্রমবিকাশের মধ্যে দিয়ে সভ্যতার সোপান রচিত হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নীতি নৈতিকা, শৃঙ্খলা ও আইনের প্রবর্তন হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র এখন আর নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আন্তর্জাতিক রূপ নিয়েছে, আমরা এখন বিশ্বয়নের যুগ। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ সংগঠন সহ আঞ্চলিক অসংখ্য সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে। লক্ষ্য একটিই, গোটা বিশ্বকে শান্তিময় করে তোলা, সন্ত্রাস ও দারিদ্রের হাত থেকে রক্ষা করা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অনিবার্য শর্ত হল মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিাত করা। যখনই মানুষ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের আশ্রয় নেয়। দেশের সবোর্চ্চ আইন, অর্থাৎ সংবিধানের মানুষের মৌলিক অধিকরের গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে। সাংবিধানিক আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ তার ন্যায় বিচার প্রাপ্তি ও অধিকার বাস্তবানের দাবি জানায়। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এখন রাজা-প্রজা বা প্রভূ-কৃতদাস প্রথা না থাকলেও বাস্তবে তার ছায়া-প্রভাব পড়ে আছে। এখনও ধনী-দরিদ্র, প্রভাবশালী-দুর্বল, পরাক্রমশালী রাষ্ট্র-দরিদ্র, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ব্যবস্থার মৌলিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে ক্ষমতার প্রভাবের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। মানবাধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসর থেকে শুরু করে আঞ্চলিক পর্যায়ে অনেক সংগঠন ও ব্যাক্তি কাজ করছেন। মানবাধিকার রক্ষায় সাফল্যের পরিমাণও কম নয়। তবে, দুর্দন্ড প্রতাপশালী রাষ্ট্র, ব্যক্তি ও সমাজ এখনও অব্যাহতভাবে অপর রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। যারা নিজেরাই অন্যের মানবাধিকার খর্ব করছে প্রতাপের সঙ্গে, তারাই মোড়লের মত মানবাধিকরের উপদেশ দিচ্ছে অন্যদেরকে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করে সেখানে নির্বিচার দখলদারিত্ব, নাগরিকদের হত্যা করা, মারনাস্ত্রের নির্বিচার প্রয়োগ করে চলেছে। সন্ত্রাসী ও খুনী রাষ্ট্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে চলেছে, যেমন ফিলিস্তিনিদের হত্যাকারী ইসরাইল, নিরীহ বাঙ্গালীদের হত্যাকারী পাকিস্তান। লিবিয়া, ইরাক,ইয়ামেন, নিকারাগওয়া, মিশর, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান সহ অসংখ্য দেশকে উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে। গুয়ান্তানামা কারাগারে বিনা বিচারে নির্যাতনের কাহিনী পৃথিবীর সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনকে হার মানায়। রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ও বৈষম্য ও শোষণের নির্মম চিত্র প্রতিনিয়ত দেখা যায়। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আদালতের আশ্রয় নেয়া বিচার প্রার্থীর সংখ্যা লক্ষ-লক্ষ। কিন্তু বাস্তবে প্রত্যাশিত বিচার পাচ্ছে কতজন ? বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদছে। তদন্ত সংস্থা থেকে শুরু করে বিচারালয়ে প্রভাবশালী-ধনী ব্যক্তিদের প্রভাবের বলয়ে দরিদ্র-দুর্বল বিচার প্রার্থীদের হয়রানী নিত্য নিয়মিত বিষয়ে পরিনত হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিচার চাইতে এসে আরও বেশী হয়রানী ও অবিচারের শিকার হতে হচ্চে অসহায় বিচার প্রার্থীদেরকে। নীতি বাস্তবায়ন করবেন এবং তাদের নীতি ও কাজের জন্য জনগনের নিকট সম্পূর্ণভাবে দায়ী থাকবেন। বছরের পর বিচার ঝুলে থাকায় এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে বিচারের আশা ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে অনেকেই। কোন কোন বিচার দেখে যাবার সৌভাগ্য অর্জন করেনা। নানা অজুহাতে মৌলিক অধিকার-মানবাধিকার ব্িঞ্চত হতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। হয়ত কোন জরিপ হলে দেখা যাবে বিচার বঞ্চিতের সংখ্যা সমাজ জীবনে সবচেয়ে বেশী। নাগরিকের ট্যাক্সের টাকায়ই রাষ্ট্রযন্ত্র চলছে, চলছে বিচারালয়। কিন্তু যাদের জন্য সত্যিকার অর্থে বিচারালয়, তারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, দরিদ্র ও কম ক্ষমতারধর অসহায় মানুষ। তারা কি প্রত্যাশিত হারে বিচার পাচ্ছেন ? ্র প্রশ্নের জবারে দ্বিধাহীন ভাবে বলা যায় “প্রায়ই পাচ্ছেন না”। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন। যেখানে ধনী ও প্রভাবশালীদের কৌশলগত প্রভাবের কাছে দরিদ্র-অসহায় বিচার প্রার্থীদের ফিরে যেতে হবে না বিনা বিচারে। একই সঙ্গে আইনের কঠোর বিধান হতে হবে তাদের জন্য, যারা রাষ্ট্র ক্ষমতার যে কোন স্তরে থেকেই হোক মানবাধিকার লঙ্ঘণ করবে। শুধুমাত্র আইন করলেই হবে না, হতে হবে আইনের কঠোর প্রয়োগ। যে যত বড়ই হোক, দল-সরকার বা অর্থ-বিত্তের প্রাচুর্যে যে স্তরে থাকুক না কেন আইনের আমলে আনার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রকে হতে হবে নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তাকারী প্রতিষ্ঠান। আইনের উর্দ্ধে থাকবে না কেউ। এই প্রত্যাশা বাস্তবায়ন ছাড়া প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করা বাস্তবে অসম্ভব। অনিবার্যভাবে মনে রাখতে হবে পরিবার, সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে চলছে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন। নাগরিক দায়িত্বে সোচ্চার হতে হবে সচেতন সকলকে। শ্রেণী, পেশা, ধর্ম, দরিদ্র নির্বিশেষে সোচ্চার হতে হবে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা অন্যায় অবিচারের দীর্গ ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে। তবেই বন্ধ হবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন, প্রতিষ্ঠিত হবে নাগরিকের জন্মগত মৌলিক অধিকারের প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তিময় সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব।
(লেখক : এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, সাবেক সম্পাদক, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি)
মানবাধিকার আপনার জন্মগত গণতান্ত্রিক অধিকার। একজন সুনাগরিক হিসেবে আপনার কি কি অধিকার রয়েছে তা জানতে হলে নিয়মিত পড়–ন মাসিক “মানবাধিকার খবর”

সবার ‘দুদু’ জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম
                                  

“দ্বীনের এক নিশাচর পাখি”
সমাজসেবা যার অলংকার
সবার ‘দুদু’
জনাব মুঃ আমিনুল ইসলাম

আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কবি, শিল্পী ও সাহিত্যিক জনাব মতিউর রহমান মল্লিকের একান্ত ঘনিষ্ঠজন জনাব আমিনুল ইসলাম ফকির ইংরেজি ১৯৫৫ ইং সালে কচুয়া উপজেলার এক নিভৃত পল্লী টেংরাখালী গ্রামের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামেই তিনি বড় হয়ে ওঠেন,মূলতঃ কচুয়া উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ সি.এস.পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃৃতি ছাত্র হিসেবে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয়। তাঁর পিতা মরহুম সিরাজউদ্দীন ফকির এলাকার স্বনামধন্য সমাজ সেবক হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি আছে ; উপজেলার অন্যতম সিনিয়র মাদ্রাসার উন্নয়নে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। জনাব আমিনুল ইসলামের বড় ভাই বিশিস্ট আইনজীবী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ্যাডঃ মুনসুর আলী ফকির অনেক সুনামের সাথেই বাগেরহাটের বার সমিতি পরিচালনা করছেন। কয়েক মাস হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
ছাত্র জীবন থেকেই তিনি সবার প্রিয় ছিলেন। তার এক ভাইপো মোঃ জাহিদুল ইমন (বাবুল ফকির) খুব মেধাবী ছাত্র ছিলো। সি.এস.পাইলট স্কুলের বাবুল ক্লাসে ফার্স্ট বয় ছিলো সবাই তাকে আদর করতো আর বাবুল তার চাচা আমিনুলকে চাচা না বলে ‘দুদু’ বলে ডাকতো। এতে, আমিনুল ইসলাম সাহেব খুব খুশী হতেন। তবে, তার মুখে ডাকা ‘দুদু’ নামটি সবার মুখে মুখে থাকলেও, সেই বাবুল এস.এস.সি. পাশ করার আগেই চলে গেলেন। পানিতে পড়ে তিনি মৃত্যু বরন করে। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি। বাবুল চলে গেলেও, তার মধুমাখা ডাক জনাব আমিনুল ইসলাম সাহেবের বন্ধুরা ধরে রেখেছেন। আজও সর্বস্তরের মানুষ তাকে দুদু বলে ডাকে। সবাই বাবুলের স্মৃতি রক্ষার্থে দুদু নামে ডাকুক, এটাই সবার কাম্য।
সেই ৬ষ্ট শ্রেনী থেকেই জনাব আমিনুল ইসলাম সাহিত্য, সংস্কৃতি ও দ্বীনেদায়ী হিসেবে কাজ করে চলেছেন। আজও করছেন। কোনো কোনো সময়ে ভালো বক্তা পেলে ওয়াজ শুনতেন। ওয়াজ শুনে বেড়ানো ছিল তাঁর শখ। পরিনত বয়সে তিনি আমাকে নিয়ে যে কত মাহফিলে যেতেন তার ইয়াত্তা নেই। জীবনের এক অধ্যায়ে তিনি উদ্ভিদ বিদ্যার (ইড়ঃধহু) এর ছাত্র ছিলেন। বিধায়, কৃষি কাজের প্রতি তাঁর ছিল প্রবল আগ্রহ। যার কারণে,তিনি চাষী সমিতি করে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাষীদের সহযোগিতা করেছেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি দুই সন্তানের পিতা,ছেলে শাকিল দেশের কৃতি ছাত্র। ফল ,ফুলের বনায়ন করা তার নেশা, পিতার সখ বাস্তবায়ন করার জন্য শাকিল বাড়ীর সামনে সুবৃহৎ ফল ও ফসলের বাগান করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। শাকিল প্রায় সময় বলতোঃ শিক্ষা,সাহিত্য ও সংস্কৃতির পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানকে অনুসরন করা উচিত।
দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এরদোগান এখন বিশ্বের মডেল হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করে চলছেন। আরব বিশ্বের গর্ব এরদোগানের নাম এখন সবার মুখে মুখে। শাকিল তার পিতার উদ্যোগ কে এগিয়ে নিতে বাড়ীর সামনে ফলের বাগান করেছে। আমারা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
শিক্ষানুরাগী জনাব আমিনুল ইসলাম ফকির শত কাজের পাশাপাশি দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের লালন করতেন। তাঁর ¯েœহ-আদরে কতো ছেলে যে বড় হয়েছে, তা’ বলা মুশকিল।
আজকের মানবাধিকার খবর পত্রিকার সম্পাদক ও উপজেলার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব রিয়াজ উদ্দীনের উত্থানে তাঁর ভুমিকা ছিল অনন্য। তিনি উপজেলা সদরের সি.এস.পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র। জনাব রিয়াজের আন্তজার্তিক মানবাধিকার পুরস্কার পেয়েছেন শুনে তিনি খুশি হয়েছেন। কতো মানুষ চাকরি নিয়ে দেশে-বিদেশে বেঁচে আছে এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার ইয়াত্তা নেই। জনাব রিয়াজের মতো কতো ছাত্র যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা’ গুনে শেষ করা যাবে না। ষাটোর্ধ বয়সের জনাব আমিনুল ইসলাম একজন সফল শিক্ষক ছিলেন। তাঁর পিতার পিতা আলহাজ্ব সিরাজ উদ্দীনের অর্থায়নে কত ছাত্র যে পড়াশুনা করেছেন, তার হিসাব নেই। আল্লাহ তাঁর পিতাকে জান্নাত নসীব করুন এ দোয়া করি।
সারা জীবন আমাদের মত সাধারন মানুষদেরকে তিনি লালন করেছেন। লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছেন। পড়াশুনার প্রতি তাঁর ঝোঁক অতীতে যেমন ছিলো,আজও তেমনি আছে।
শ্রদ্ধেয় আমিনুল ইসলাম সাহেব দেখা হলে প্রায়ই বলেন শেষ জীবনে অনেক ভালো বই হাতে এসেছে। কিন্তু, পড়ে এগুতে পারিনা বয়সের কারণে। লেখার কলেবর বৃদ্ধির কারণে, আবারো অন্য কোনো এক সময়ে জনাব আমিনুল ইসলাম দুদুর কৃীর্তিগাঁথা শুনবো। এ আশা নিয়ে শেষ করতে হচ্ছে। মহান আল্লাহর কাছে তাঁর দীর্ঘ্যায়ু ও সুস্থতা কামনা করি।

১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ঘোষনা ও জাতিসংঘ
                                  

প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থানের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, সাংস্কৃতিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার ও মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় সহজাত ক্ষমতার সৃজনশীল বিকাশ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় কতিপয় অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার।
শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মানবাধিকারের প্রভাব অনস্বীকার্য। প্রাচীনতম আইন ব্যাবিলনের রাজা হাম্মুরাবি নিয়মাবলীতে মানবাধিকার সংরক্ষনের কথা পাওয়া যায়। খৃষ্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মদিনার বহু ধর্মভিত্তিক সমাজে হযরত মুহম্মদ (স:) কর্তৃক প্রনীত ‘মদিনার সনদ’-এ মদিনার সকল নাগরিকই সমান অধিকার ভোগ করবে, এ কথা বলা হয়েছে। ক্লাসিকাল যুগে, মধ্যযুগে ও রেনেসাঁর যুগের বিভিন্ন দার্শনিক যেমন ফ্রান্সের বদিন ও রুশো, ইতালির হুগো, গ্রোসিয়াস, ইংল্যান্ডের ভেটেল জনলক ও ক্লার্কস্টোন এবং জার্মানীর কার্ল মার্ক্স্ প্রমুখের লেখা থেকে মানবাধিকারের প্রাথমিক ধারনা পাওয়া যায়। এরা প্রত্যক্ষ করেন যে, প্রত্যেক মানুষ ‘মানুষ’ হিসেবে কতগুলো প্রাকৃতিক অধিকার লাভ করে থাকে। পরবর্তীকালে বিশে^র বিভিন্ন দেশের প্রজা-সাধারন স্বৈর শাসকদের অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হতে থাকে এবং স্বেচ্ছাচারী শাসকগন কর্তৃক তাদের মৌলিক অধিকারসমূহ ব্যাপকভাবে লংঘিত হতে থাকে। তখন উপযুক্ত দার্শনিকগনের চিন্তাধারার আলোকে বিপ্লবের নায়কগন বিভিন্ন দেশে চার্টার, বিল, পিটিশন ও ডিক্লারেশন প্রণয়ন করেন, যাতে মানুষের কতগুলো ন্যূনতম অধিকারের দাবি স্থান পায়। এ সকল দলিল প্রনীত হওয়ার মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। এই সব দলিলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে ইংল্যান্ডের ১২১৫ সালে প্রনীত ‘মেগনা কার্টা’ ১৬২৮ সালে প্রনীত ‘পিটিশন অব রাইট্স্’, ১৬৮৯ সালে প্রনীত ‘বিল অব রাইট্স্’, ১৬৯১ সালে প্রনীত ‘ভার্জিনিয়া বিল অব রাইট্স্’, ১৭৭৬ সালে উত্তর আমেরিকার ১৩টি উপনিবেশিক দেশের প্রতিনিধিগন কর্তৃক প্রনীত ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেন্ডেন্স’ এবং ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে প্রনীত ‘ডিক্লারেশন অব দি রাইট্স্ অব ম্যান এন্ড সিটিজেন’ ইত্যাদি।
জাতিসংঘের পূর্বসুরি ‘লীগ অব নেশন্স্’- এ মানবাধিকার বলে কোনো কথার উল্লেখ ছিলনা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধকালীন ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র জার্মানী ও ইতালি কর্তৃক সংঘটিত নৃশংসতা ও বর্বরতা বিশ^বিবেককে স্তম্ভিত ও হতবাক করে দেয়। এ সময়ে ইহুদি ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার স্থানচ্যুত এবং নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ক্ষমতা সম্বলিত আইনসমূহ, নিবর্তনমূলক পুলিশি তল্লাশি ও বাজেয়াপ্ত করনের অনুমতি সংক্রান্ত আইনসমূহ এবং নাৎসী জার্মানী কর্তৃক ১৯৩৮ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কনসেন্ট্রেইশন ক্যাস্প বা মৃত্যুশিবিরে ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যার অনুমতি সম্বলিত আইনসমূহ বিশ^জাতিসত্ত¡ার সম্মিলিত ক্ষোভ ও ক্রোধের উদ্রেক করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার সংরক্ষনের বিষয়কে ত্বরান্বিত করে। বিশে^র জাতিসমূহ অনুধাবন করে যে, ব্যক্তি-স্বাধীনতার সংরক্ষন রাষ্ট্রসমূহের একক স্বেচ্ছাচারে আর ছেড়ে দেয়া যেতে পারেনা। তারা অনুধাবন করে যে, ব্যক্তি যেহেতু জাতিসমূহের স্থাপক ও একক, সুতরাং তার মানবিক মর্যাদা ও মূল্যের স্বীকৃতি ছাড়া বিশে^র জাতিসমূহের মধ্যে প্রকৃত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা। এটা সাধারন ভাবেও বিবেচ্য যে, যে জাতি নিজের নাগরিকদের অধিকারকে অগ্রাহ্য করে, সে অন্য জাতির নাগরিকদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারেনা। তাই বিশ^বাসী ব্যক্তি-মানবাধিকারকে আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষনের ব্যাপারে বিশেষভাবে তৎপর হয়ে ওঠে। যুদ্ধ সমাপ্তির পূর্ব থেকেই বিশ^ নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন বিবৃতি ঘোষনা ও প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারীতে কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের ‘চার স্বাধীনতার বার্তা’ (ফোর ফ্রিডম মেসেজ), ১৯৪১ সালের ১৪ আগষ্টের ‘আটলান্টিক চার্টার’ এবং ১৯৪২ সালের জানুয়ারি মাসে জাতিসংঘের গৃহীত ঘোষনা মানবাধিকার সংরক্ষনের সনদের প্রত্যশা করে। ১৯৪৪ সালে ডাম্বর^টন ওক্স্-এ জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা আলোচনার মধ্যেও মানবাধিকার প্রসঙ্গটি স্থান পায়। ১৯৪৫ সালের জুনে সান্ফ্রান্সিস্কোতে একটি সনদ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের এ সনদটিই ছিল সর্বপ্রথম গৃহীত একটি আন্তর্জাতিক দলিল, যাতে মানব জাতির আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা উন্নয়নে সম্মতি ব্যক্ত করে। এ সনদে মোট নয়টি স্থানে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার কথা সরাসরি উল্লেখ থাকলেও মানবাধিকারের কোনো সংজ্ঞা ছিলনা। পরবর্তীকালে, ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে গৃহীত জাতিসংঘের সার্বজনীন ঘোষনা (ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন) হলো বিংশ শতাব্দীর মানবাধিকার আইনের প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন। এ ঘোষনা যে দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তা’ হলো সকল মানুষই বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সমমর্যদা ও সম-অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাদেরকে বুদ্ধি ও বিবেক দেয়া হয়েছে এবং তাদের সবার উচিত ভ্রাতৃসুলভ মনোভাব নিয়ে পরস্পরের প্রতি আচরন করা। সম্বলিত মানবাধিকারের সার্বজনিন ঘোষনা ৩০টি ধারা রয়েছে।
মানবাধিকার কথাটির ধারনা আগে থাকলেও ব্যাপকভাবে ছিলনা এবং তা যথাযথভাবে প্রয়োগ হতো না। আর প্রয়োগ হলেও শুধু একক রাষ্টের মধ্যে নিহিত ছিল। জাতিসংঘের অধীনেই মানবাধিকার ধারনাটি বিশ^ব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তাই বিশ^ব্যাপি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাতিসংঘের সেরা কয়েকটি কৃতিত্বের মধ্যে অন্যতম একটি হলো বিশ^ব্যাপী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
১০ ডিসেম্বর বিশ^ মানবাধিকার দিবস ; এই একটি দিনকে উদযাপনে সীমাবদ্ধতায় না রেখে প্রতিটি মূহুর্তেই মানবতার কাজ করতে হবে পুরো প্রাণী-জাতির কল্যানে। বিশ^বাসী এক হয়ে পৃথিবীকে মুক্ত করতে হবে সন্ত্রাস থেকে। মুক্ত করতে হবে যুদ্ধে থেকে। শরণার্থীদের ফিরিয়ে দিতে হবে নিজ ভূূমিতে। পৃথিবীর ১টা মানুষও যেন অনাহারে না থাকে। একটা মানুষও যেন গৃহহীনভাবে না থাকে। এই ধরিত্রী যেন হয় সকল ধর্ম-বর্ণের। এই প্রচেষ্টায় আমরা মানুষ হয়ে আমাদের সকলকে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে যেতে হবে।

জাগ্রত হোক মনুষ্যত্ব ও মানবিকতা
                                  

মানুষের যে গুণটি সবার আগে থাকা উচিত সেটি হচ্ছে মানবিকতা। মানুষকে মানুষ বলা হয় কারণ তার মধ্যে মানবিকতা আছে, বোধ-বিবেক আছে, হিতাহিত জ্ঞান আছে, ভালো-মন্দ যাচাই করার সক্ষমতা আছে যা অন্য কোনো প্রাণী বা জীবের মধ্যে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।


সংবাদমাধ্যম থেকে আমাদের প্রতিনিয়তই পেতে হচ্ছে অসংখ্য অমানবিক সংবাদ। কখনো নির্মমভাবে পিটিয়ে বা পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু হত্যা কখনোবা চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ, কখনোবা ছয় বছরের শিশুকে বলাত্কারের ঘটনা। আবার কখনোবা বখাটেদের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা নয়তো বা কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করার খবর।
আর যখনই এ ধরনের খবরগুলো শুনতে হয় তখনই মনে হয় আমরা বোধ হয় সভ্য জগত্ থেকে আজও অনেক দূরে। সভ্যতার আলো বোধহয় আমাদের স্পর্শ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আজ বিবেকহীন হয়ে গেছি! আমাদের মাঝে মানবতা নেই বললেই চলে!

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে বর্তমান দারিদ্র্যের হার কমবেশি ২১ শতাংশ। তবে দলিতদের মধ্যে এই হার ৯০ শতাংশ। মূল সমাজের বাইরে অদৃশ্য অন্ধকারে যেন দলিতদের বসবাস! এই জনগোষ্ঠী শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, আবাসন সংকট, খাদ্য ও পুষ্টিমানের ঘাটতি, প্রজনন স্বাস্থ্যসহ নানান আর্থ-সামাজিক সংকটে আবর্তিত।

আমাদের মানবিকতা হারিয়ে গেছে! তা যদি না হয় সমাজের একজন মানুষ কি নেই যে একটা দরিদ্র মানুষের দায়িত্ব নিতে পারবে? এটাও যদি না পারে আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে একটি পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারি না? আমরা পারব তখনই যখন আমরা মানুষের কষ্ট বিবেক দ্বারা উপলব্ধি করতে পারব, অন্যের কষ্টে ব্যথিত হব, অন্যের কষ্টকে যখন নিজের বলে ভাবতে পারব।

 

সর্বদা সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজ বিবেক থেকে এগিয়ে আসা উচিত আমাদের। একজন মানুষ ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে! একজন মানুষ মাথা গুঁজবার জায়গা পাচ্ছে না! একজন মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে! বৃদ্ধ মা-বাবা ভিক্ষা করছে! এ সব চোখের সামনে দেখার পর সরকার কখন দিবে সেদিকে তাকিয়ে না থেকে আপনার কাছে সামর্থ্য আছে আপনি এগিয়ে আসুন কিংবা আপনার প্রতিবেশীদের সঙ্গে এই ব্যাপারে আলোচনা করুন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সহযোগিতা করুন। এইভাবে যেদিন আমরা মানবিক এবং বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ হব সেদিন এই দেশ সত্যিকারেই এগিয়ে যাবে।

আমরা অন্ধ বিবেকের বদ্ধ ঘরে থাকতে চাই না। আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ সুন্দরভাবে সাজাতে চাই। মানবিক আলোয় ভরে উঠুক আমাদের সমাজ। সত্য, সুন্দর ও স্বচ্ছতায় জেগে উঠুক বিবেক। সবার ঘুমিয়ে থাকা মানবিকতা এবং মনুষ্যত্ব জাগ্রত হোক-এই কামনা।

লেখক শিক্ষার্থী : সরকারি তোলারাম কলেজ (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়)
অনার্স ২য় বর্ষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব
                                  

 

ইতিহাসের পাতায় ১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে অঙ্কিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের নাম। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে সমগ্র বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দুঃসাহসিক নেতৃত্ব বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সেদিন। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেন ইতিহাসের মহানায়ক। বঙ্গবন্ধুর মহানায়ক হওয়ার পিছনে যার সহনশীলতা, নির্লোভ চরিত্র আর দেশপ্রেম বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে, সেই অন্তরালের তিনিই আমাদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। আমার মনে হয় বঙ্গমাতার জীবনটাও যেন আল্লাহর বিশেষ চিন্তার ফসল। শিশু বয়সে ফজিলাতুন নেছা হারিয়েছিলেন বাবা ও মাকে। বঙ্গমাতার ছোট একটি নাম ছিল, রেনু নামে বঙ্গবন্ধু তাঁকে ডাকতেন।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যখন রেনুর বিয়ে হয় তখন বঙ্গবন্ধুর বয়স ছিল ১২-১৩ বছর এবং রেনুর বয়স ৩ বছর। রেনুর বাবা শিশু বয়সেই ইন্তেকাল করেন। রেনুর বয়স যখন ৫ বছর তখন তাঁর মা মারা যান। দাদাও রেনুর ৭ বছর বয়সে মারা যান। তার পর থেকে একাই বাসায় রেনু এবং বঙ্গবন্ধুরা থাকতেন। বঙ্গবন্ধুর মায়ের কাছেই বেড়ে উঠেন রেনু। পরিবারের মানুষগুলোর চিন্তা, মানসিকতা, দেশপ্রেম সেই বয়সেই তার ভিতরে তৈরি হতে আরম্ভ করে। ইতিহাস যেমন নেতৃত্ব সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি নেতৃত্ব সৃষ্টি হতে চাই পরিবেশ। বঙ্গবন্ধু ছেলেবেলা থেকেই নেতৃত্বের অধিকারী ছিলেন। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন আর স্বাধীনতা, স্বাধীনতার শীর্ষে পৌঁছতে বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করতে হয়েছে অনেক ত্যাগ।

আমরা কিছুটা জানি সেই ত্যাগের ইতিহাস। কিন্তু আমরা কি জানি বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি তাঁর সহধর্মিণী কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন? সেই ১৯৪৯ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদী জীবন আর সেই সঙ্গে কারাবরণ শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু আর ফজিলাতুন নেছার কন্যা শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে জন্ম হয় শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রেহানার। এই ছোট শিশুদের নিয়ে বঙ্গমাতাকে কাটাতে হয়েছে নিদারুণ কষ্টের জীবন। শেখ মুজিবকে হয়রানি করতে তৎকালীন সরকার সব সময় ব্যস্ত থাকত। শেখ মুজিব অন্তরে যা পোষণ করতেন, মুখেও তাই প্রকাশ করতেন। আমি যদি অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করি তাহলে বলতেই হয় বঙ্গমাতা ও বঙ্গবন্ধুর এই নেতৃত্বসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিকে নীরবে ভালোবাসতেন।

তাই তো তিনি তাঁকে উৎসাহ দিতেন। পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যায় বঙ্গবন্ধুকে জড়াতেন না। পরোক্ষভাবে তিনিও কষ্টের জীবন কাটাতেন। সংগ্রামী শেখ মুজিবের জীবনের সঙ্গে নিবেদিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। স্বামীর কারাগারে দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলতেন, “কত রকমের টিফিন কেরিয়ারই না আমার বাসায় ছিল।” বড় সাইজের টিফিন কেরিয়ার ভরে স্বামীর জন্য তিনি জেলে খাবার পাঠাতেন। যাদের আপনজনরা খাবার পাঠাত না তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু খেতেন। কোথায় তিনি রাগ করতেন, তা নয় বরং সাহস জুগিয়েছেন সব সময়। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে নিজের জীবনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে গিয়ে বারবার বলেছেন সহধর্মিণীর কথা-যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি ছিলেন। কখনো কোনো দুঃসময়ে এলোমেলো কথা বলে বঙ্গবন্ধুকে বিচলিত করতেন না, বরং দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। শুধু তাই নয় সময়মতো সঠিক পরামর্শ দিতেন।

 

৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ, যে ভাষণটি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেই ভাষণ যেদিন বঙ্গবন্ধু দিতে যাবেন সে সময়ে বঙ্গমাতা একটি কথাই তাঁকে বলেছিলেন, অনেকে অনেক উপদেশ দিবে, তবে তোমার মনে যেটা আসবে তুমি তাই বলবে। তিনি জানতেন তার স্বামী জনগণকে কতটা ভালোবাসতেন। কখন কী বলতে হয় তা তিনি সবচেয়ে ভালো জানেন। আজ ইতিহাসের পাতায় সেই ভাষণ স্থান পেয়েছে। কিন্তু বঙ্গমাতাকে কে মনে করেছে।


আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলায় যখন বঙ্গবন্ধু কারাবন্দী। বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এই খবর বঙ্গমাতার কাছে যখন পৌঁছাল, তিনি এক মুহূর্ত দেরি করেননি। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর দেশপ্রেমের সঠিক চিন্তা তাঁর ভিতরে আসে। বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা যেন একই চরিত্রের দুজন মানুষ, যাদের জীবন গাঁথা একসঙ্গে। সাধারণত দেখা যায় স্ত্রীরা অনিশ্চিত জীবন যখন দেখেন তখন হতাশ হয়ে পড়েন। স্বামীকে ফিরে আসতে বলেন, কিংবা পরিবারে অশান্তি তৈরি করে ফেলেন। বঙ্গমাতার মধ্যে কিন্তু আমরা সেই চরিত্র দেখি না। বরং কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে গেলে নিজের কষ্ট, পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যা কিংবা সন্তানদের দায়িত্ব নিয়ে তিনি কিছুই বলতেন না। তিনি বারবার এটাই বুঝতেন বঙ্গবন্ধু যেন ভেঙে না পড়েন

তার নেতা-কর্মীদের সাহস দেওয়ার পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়া সবই নিজে তাঁর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে চালিয়ে যেতেন। যখন অর্থ সংকটে পড়েছেন ছেলেমেয়েদের সেই ভাবেই মানিয়ে নিতেন। তাঁর কন্যার মুখ থেকে শোনা, “মা খিচুড়ি রেঁধে বলতেন আসো আমরা আজকে গরিব খাওয়া খাই।” ফ্রিজ বিক্রি করে বলতেন ঠা-া খাওয়া ঠিক না, তাই ফ্রিজের দরকার নেই। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যার বিয়ে হয় একটি অনাড়ম্বর পরিবেশে। এই নিয়ে বঙ্গমাতার বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই। তিনি তো তাঁর স্বামীকে দেশের তরে উৎসর্গ করেছিলেন। যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলছিল দেশের বাইরে থেকে ব্যারিস্টার নিয়ে আসা এসব কিছুই ছিল খুব ব্যয়বহুল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন আমার বাবা শহীদ ময়েজউদ্দিন।

বাবার মুখ থেকে শুনেছিলাম এই মামলা পরিচালনার জন্য বিভিন্নভাবে চাঁদা উঠাতে হয়েছে। তারপরও প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বঙ্গমাতা সেই সময়ে তাঁর কাছে যা স্বর্ণ-অলঙ্কার ছিল তাও তিনি এই মামলার জন্য দিয়ে দিয়েছিলেন। যুদ্ধকালীন বঙ্গবন্ধু যখন পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী, বঙ্গমাতা তখন সন্তানদের নিয়ে গৃহবন্দী। এ অবস্থায় জুলাই মাসে তাঁর প্রথম নাতির জন্ম হয়। বন্দীজীবনে তিনি সব রকম সাহস নিয়ে বুদ্ধি দিয়ে সময় অতিবাহিত করেছেন। স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরে আসেন তিনি আগে জনগণের কাছে ছুটে যান। তারপর তিনি বাসায় ফেরেন। বঙ্গমাতা কীভাবে সময় কাটিয়ে ছিলেন কেউ কি উপলব্ধি করতে পারেন?

দেশ তখন এলোমেলো, একদিকে ৩০ লাখ শহীদের পরিবার অন্য দিকে ২ লাখ নির্যাতিত নারী, তাদের জীবন। এই নারীদের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গমাতা। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের পর যখন সুখের মুখ দেখলেন, স্বাধীন দেশ, দুই ছেলের বিয়ে দিয়ে ছেলে বউদের ঘরে এনেছেন। স্বামী এখন আর কারাগারে থাকে না, প্রতি দিন চিন্তায় থাকতে হয় না স্বামীর জন্য, ঠিক সেই সময়ে ষড়যন্ত্রের কালো থাবা সব শেষ করে দেয়। বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে যে নারী দেশমাতৃকার জন্য পার্থিব জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়েছিলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকরা এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার চিরদিনের সাথীকেও নিয়ে গেল পরপারে। রক্তভেজা ধানমন্ডির ৩৩ নম্বরের বাড়ি বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে বঙ্গমাতার রক্ত। ইতিহাসেও মিশে থাকবে তাঁদের কথা, তাঁদের আত্মদান। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন তিনি আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করেননি। বরং খুনিদের বলেছিলেন, আমাকেও মেরে ফেল। আমি বেঁচে থাকতে চাই না।


একজন সাহসী, দেশপ্রেমিক নারী টুঙ্গিপাড়া থেকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির জীবনে বহু চড়াই-উতরাই পার করে এদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবনের সব স্বত্ব বিসর্জন দিয়ে ছিলেন। আমরা তাঁকে ভুলতে পারি না। তাঁর সন্তানদের তিনি তৈরি করেছেন দেশের জন্য। দুর্ভাগ্য তাঁর আদরের তিন পুত্র সন্তানকে হত্যা করা হয়েছিল। দুই কন্যা বেঁচে থেকে তাঁর শিক্ষার আলোর চেতনায় দেশকে নিয়ে যাচ্ছে সূর্যোদয়ের পথে। ইতিহাস কখনো হারিয়ে যেতে পারে না। বঙ্গমাতা চিরদিন অ¤øান হয়ে থাকবেন ইতিহাসের পাতায়।

লেখক : সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদ
মহিলা সম্পাদিকা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

 

বন্ধ হোক ক্রসফায়ারের গল্প
                                  

 

সিনহা রাশেদ খানের যে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে, সেটির দিকে যতবার তাকিয়েছি ততবারই মন খারাপ হয়ে গেছে। ছবিটি এক স্মার্ট, সুদর্শন যুবকের। চেহারায় যে শার্পনেস, তা নজর কাড়বে যে কারও। মুক্তিযোদ্ধা পিতার সন্তান সিনহা রাশেদ খান ২০১৮ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই মেজর হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। অবসরের জন্য ৩৪ কোনো বয়স নয়। সিনহা আসলে অবসর নয়, শুরু করতে চাচ্ছিলেন জীবনের নতুন এক অধ্যায়। তার ইচ্ছা ছিল বিশ্বভ্রমণের। চাকরি ছেড়ে সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছিলেন অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় সিনহা।

করোনাভাইরাস না এলে বোধহয় সিনহা এখন ল্যাটিন আমেরিকার কোনো দেশে থাকতেন। মেজর (অব.) সিনহা আমাদের মতো ছাপোষা জীবন চাইতেন না। বিয়ে থা করেননি- জীবনটাকে উল্টেপাল্টে উপভোগ করবেন বলে, ঘুরে ঘুরে দেখতে চেয়েছিলেন সৃষ্টির বিস্ময়, প্রকৃতির সৌন্দর্য। করোনা তাকে বিশ্ব ভ্রমণে যেতে না দিলেও খুব বেশি দিন ঘরে আটকেও রাখতে পারেনি।

‘জাস্ট গো’ নামে ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ডকুমেন্টারির শুটিং করতে গত ৩ জুলাই কক্সবাজারে যান। সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের তিন শিক্ষার্থী। হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ছিলেন তারা। ৩১ জুলাই টেকনাফের পাহাড়ে রাতের শুটিং শেষে ফেরার সময় এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। তারা পুলিশকে ডাকাত সন্দেহের কথা জানায়। ফেরার পথে প্রথমে একটি বিজিবি ক্যাম্প তাদের গাড়ি আটকালেও পরিচয় পেয়ে ছেড়ে দেয়। পরে শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে তাদের গাড়িটি আটকানো হয়। সেখানেই পুলিশের গুলিতে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে একটি অপরিসীম সম্ভাবনার ইতি ঘটে। কীভাবে মারা গেলেন সিনহা রাশেদ খান? কী ঘটেছিল সেখানে? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে

তারা নিশ্চয়ই সত্যটা তুলে আনবেন। আপাতত আমরা পুলিশের বক্তব্যকেই সত্য হিসেবে ধরে নিচ্ছি। ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ জানিয়েছে, ওই সাবেক সেনা কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে অন্য একজন সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসছিলেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া তল্লাশি চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তা বাধা দেন। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তা তার কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রাশেদ গুরুতর আহত হন। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। আমি আপাতত তর্কের খাতিরে পুলিশের এ গল্প বিশ্বাস করছি।

তবে বিশ্বাস করি আর না করি, ক্রসফায়ারের ব্যাপারে র‌্যাব-পুলিশের পাঠানো গল্প আমাদের মেনে নিতে হয়। মাঝেমধ্যে দু-একটা ঘটনা আলোড়ন তোলে বটে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা পুলিশের এ বানানো গল্পটি কোনো প্রশ্ন ছাড়াই মেনে নিই। একই গল্প। কোনো সৃষ্টিশীলতা নেই। বারবার পুলিশের আত্মরক্ষার অধিকারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই যদি নিজেকে রক্ষা করতে আরেকজনকে মেরেই ফেলতে হয় তাহলে তো পুলিশের দক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। হাতে অস্ত্র আছে বলেই নিরস্ত্র কাউকে মেরে ফেলায় কোনো বীরত্ব নেই, এটা কাপুরুষের কাজ। তবে টেকনাফের শামলাপুরের ঘটনাটি অন্যসব ঘটনার মতো নয়। এখানে পুলিশকে জবাব দিতেই হবে। এ ঘটনা তদন্ত হচ্ছে। তবে পুরো ঘটনাটি একদম সহজ। মেজর (অব.) সিনহার সঙ্গে গাড়িতে সিফাত নামে একজন ছিলেন। তিনি এখনো বেঁচে আছেন।

এ ছাড়া ঘটনাস্থলে পুলিশের আরও অনেকে ছিলেন। সবাইকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে। তখন জানা যাবে, পুলিশের বক্তব্য সত্য না মিথ্যা। ইতোমধ্যে পুলিশের বক্তব্যের পাল্টা একটি বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাপা হচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, মেজর (অব.) সিনহা তার লাইসেন্স করা পিস্তল গাড়িতে রেখে হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নামছিলেন। নামার সঙ্গে সঙ্গেই ইন্সপেক্টর লিয়াকত তাকে ৩ রাউন্ড গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ হয়েও সিনহা অনেকক্ষণ বেঁচে ছিলেন। কিন্তু সময়মতো তাকে হাসপাতালেও নেওয়া হয়নি। একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা পুলিশের দিকে পিস্তল তাক করবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। একজন সেনা কর্মকর্তা অবশ্যই জানেন অস্ত্রের ব্যবহার কখন, কোথায়, কীভাবে করতে হয়। তার পরও আমি ধরে নিচ্ছি পুলিশের বক্তব্যই সত্য। মেজর (অব.) সিনহা পুলিশের দিকে অস্ত্র তাক করেছিলেন।

কিন্তু সন্দেহটা হলো, একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চৌকস সেনা কর্মকর্তা চাকরি জীবনে যিনি এসএসএফেও দায়িত্ব পালন করেছেন; তিনি পিস্তল তাক করতে করতে পুলিশের একজন ইন্সপেক্টর তাকে ৩টি গুলি করে মেরে ফেললেন; এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। যদি সত্যি মেজর (অব.) সিনহা পিস্তল দিয়ে গুলি করতে চাইতেন, তাহলে তিনি নিজে মরার আগে আরও কয়েকজনকে মেরে যেতে পারতেন। তাও ধরে নিচ্ছি, একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজরের চেয়ে একজন দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টরের রিফ্লেক্স ভালো। কিন্তু তাই বলে ইন্সপেক্টর লিয়াকত ৩টি গুলি করতে করতে সিনহা ১টি গুলিও করতে পারলেন না, এও বিশ্বাস করতে হবে? আর একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ কেন অপ্রয়োজনে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ করতে যাবেন? তার পরও আমি ধরে নিচ্ছি, পুলিশের বক্তব্যই সত্য। মেজর (অব.) সিনহা পুলিশের দিকে পিস্তল তাক করেছিলেন। কিন্তু তাই বলে তাকে একেবারে ৩টি গুলি করে মেরে ফেলতে হবে! আত্মরক্ষার অধিকার পুলিশের আছে।

কিন্তু সিনহাকে তো পিস্তল ধরা হাতে বা পায়ে গুলি করেও ধরার চেষ্টা করা যেত। এখন পর্যন্ত মেজর (অব.) সিনহার অপরাধ হলো, পুলিশের দিকে পিস্তল তাক করা। কিন্তু এটি কি মৃত্যুদন্ড যোগ্য অপরাধ? গুলি করার পর নাকি তার গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৫০টি ইয়াবা বড়ি, কিছু গাঁজা ও ২টি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। কোনো অভিযানে যাওয়ার আগে মদের বোতল, ইয়াবা, গাঁজা নিয়ে যাওয়ার পুলিশি কৌশল বহু পুরনো ও ক্লিশে। ঢাকার অনেক মোটরসাইকেল চালক অনেকবার পুলিশের ইয়াবা বা গাঁজা কৌশলের শিকার হয়েছেন। তার পরও আমি ধরে নিচ্ছি, পুলিশের এ দাবিও সত্যি। কিন্তু ইয়াবা, মদ বা গাঁজা বহন করা কি মৃত্যুদ-যোগ্য অপরাধ? এতক্ষণ পুলিশের বক্তব্য বিশ্বাসের কথা বললেও আমি এবং আমি জানি বাংলাদেশের কেউই ক্রসফায়ার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গল্প বিশ্বাস করেন না।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশে ক্রসফায়ার এক ধরনের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আর এ গ্রহণযোগ্যকতাকে পুঁজি করেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ভাষায় ‘ক্রসফায়ার’, সুশীলসমাজের ভাষায় ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড’, আসলে ঠান্ডা মাথায় নির্দোষ মানুষকে ‘খুন’ করে যাচ্ছে। ২০০৪ সালে র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটা হয়ে আসছে। বিএনপির উদ্ভাবিত ক্রসফায়ার নামের এ অপকর্মটি আওয়ামী লীগ করে যাচ্ছে অবলীলায় বছরের পর বছর ধরে। ক্রসফায়ারের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একসঙ্গে অনেক অপরাধ করে- ঠান্ডা মাথায় খুন, তারপর একটি মিথ্যা গল্প, ক্রসফায়ার জায়েজ করতে মৃত ব্যক্তির চরিত্রহনন, আর বারবার অপরাধ করতে করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেদের সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভাবতে থাকে। আপনি যখন কাউকে একটা অন্যায়ের অনুমতি দেবেন, সে কিন্তু সে অনুমতি ব্যবহার করে আরও দশটা অপরাধ করবে। তখন আপনার নৈতিক অধিকার থাকবে না তাকে বারণ করার। কারণ একই ধরনের অপরাধ করার অধিকার আপনি তাকে দিয়েছেন। ওপরের অনুমতি ছাড়া পুলিশ তো নিজেদের ইচ্ছায় ক্রসফায়ার করছে না।

তাই ইন্সপেক্টর লিয়াকতরা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবতে থাকেন। মেজর (অব.) সিনহার মৃত্যুর ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির খবর দিচ্ছেন কেউ কেউ। এটা ঠিক, মেজর (অব.) সিনহার মতো একজন প্রাণবন্ত সহকর্মী বা বন্ধু হারালে যে কেউ ক্ষুব্ধ হবে। আমি যে কখনো তাকে দেখিনি, আমারই তো বেদনায় বুক ভেঙে যাচ্ছে। তবে একটা বিষয় মানতেই হবে, মেজর (অব.) সিনহার মৃত্যু অবশ্যই বেদনাদায়ক। কিন্তু এর দায় ব্যক্তির, কোনো বাহিনীর নয়। পুলিশের বিরুদ্ধে হাজারটা অভিযোগ আছে। কিন্তু এবার করোনার সময় পুলিশ যে অসাধারণ মানবিক ভূমিকা পালন করেছে, আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কখনই পুলিশকে ঢালাও গালি দেব না।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সিনহার মাকে ফোন করে সান্তনা দিয়েছেন, ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ একসঙ্গে কক্সবাজার গিয়েছেন। সেনাপ্রধান বলেছেন, সিনহার মৃত্যুর দায় ব্যক্তির, কোনো প্রতিষ্ঠানের নয়। আর আইজিপি বলেছেন, কোনো উসকানিতে দুই বাহিনীর সম্পর্ক নষ্ট হবে না। এ ঘটনায় সিনহার বোন নয়জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেছেন। এরই মধ্যে সাত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি সিনহা হত্যার সুষ্ঠু বিচার হবে। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ যেন পানি ঘোলা করতে না পারে সতর্ক থাকতে হবে সে ব্যাপারেও।

এটা ঠিক, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে বাংলাদেশের সরকার ও মানুষ চট করে সন্ত্রাস দমন, মাদক বন্ধ, ধর্ষণ বন্ধ করতে ক্রসফায়ারকেই অব্যর্থ উপায় হিসেবে বেছে নেয়। ক্রসফায়ারের পক্ষে তাদের হাজারটা যুক্তি আছে। সন্ত্রাসীদের ধরা হলে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। কেউ ভয়ে তাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিতে চায় না। আর আইনের ফাঁক গলে সন্ত্রাসীরা জামিন পেয়ে যায় বা কিছুদিন কারাভোগ করে এসে আবার দ্বিগুণ উদ্যমে সন্ত্রাস শুরু করে। মানবাধিকার নিয়ে যারা কথা বলেন, তাদের মুখ বন্ধ করতে বলা হয়, সন্ত্রাসীদের কোনো মানবাধিকার থাকতে নেই। কিন্তু যত যুক্তিই দেওয়া হোক, আমাদের মানতে হবে, বুঝতে হবে ক্রসফায়ার কখনই সমাধান নয়। সব মানুষেরই মানবাধিকার আছে, তিনি সন্ত্রাসী হোন আর ভালো মানুষ।

একজন মানুষ দোষী না নির্দোষ তা নির্ধারণ করবে আদালত, পুলিশ নয়। সবারই আইনের সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে। যে দেশে বঙ্গবন্ধুর খুনি, যুদ্ধাপরাধীরা আইনের সর্বোচ্চ সুবিধা পান, ন্যায়বিচার পান সে দেশে ক্রসফায়ার চলতে পারে না। আমার বিবেচনায় ক্রসফায়ার হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সূচক। ক্রসফায়ার যত বেশি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তত খারাপ। আইনের শাসন না থাকলেই ক্রসফায়ারের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। আইনের শাসনে বিশ্বাস করলে হাজারো যুক্তিতেও আপনি ক্রসফায়ার জায়েজ করতে পারবেন না। কারণ মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। বিজ্ঞান অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে। কিন্তু মানুষের জীবন দিতে পারে না। তাই যা আপনি দিতে পারবেন না, তা নিতেও পারবেন না। আর এ কারণেই ফাঁসির আসামি আপিল, রিভিউ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা- আইনের সব ধাপে সুযোগ পান। বলাই হয়, ১০ জন দোষী ছাড়া পেয়ে যাক, তবু যেন কোনো নির্দোষ মানুষ সাজা না পায়।

সেই একই দেশে পুলিশ রাস্তায় কাউকে আটকে ইচ্ছা হলেই গুলি করে মেরে ফেলতে এবং একটি গল্প বানিয়ে সেই হত্যাকে জায়েজ করতে পারে না। তবে যে দেশে সাধারণ মানুষ ক্রসফায়ারকে সমর্থন করে, সুশীলসমাজের মানুষও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ষককে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়ার পরামর্শ দেয় এবং যে দেশে সংসদে আইনপ্রণেতারাও ক্রসফায়ারের দাবি তোলেন; সে দেশে আইনের শাসন আশা করা কঠিন। বাংলাদেশে সব ঘটনায় সবাই যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হয়, আমিও তেমনি হচ্ছি। আমি জানি একমাত্র শেখ হাসিনা চাইলে এবং তিনি নির্দেশ দিলেই ক্রসফায়ারের নামে এ হত্যা বন্ধ হবে। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা চাইলেই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ক্রসফায়ারে দিতে পারতেন।

কিন্তু তিনি প্রতিশোধ নেননি, এমনকি দ্রæত বিচারও করেননি; আইনের স্বাভাবিক গতিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। খুনিদের বিচার করতে তাঁকে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা যদি ন্যায়বিচার পেতে পারেন, দেশের প্রতিটি মানুষ তা পাবে না কেন? সন্ত্রাসী হোক, মাদক ব্যবসায়ী হোক, ধর্ষক হোক; পুলিশের দায়িত্ব হলো তাকে আইনের আওতায় আনা এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। পুলিশই যদি তৎক্ষণাৎ গ্রেফতারকারী, তদন্তকারী, বিচারকারী এবং রায় বাস্তবায়নকারী হয়ে যায় তাহলে আর আইন-আদালত, বিচার, তদন্ত এসবের দরকার কী? আমার মনে আছে, শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা থাকার সময় ক্রসফায়ারের বিরোধিতা করেছিলেন। তখন দলের লোকেরাই বলেছেন, ক্রসফায়ার পাবলিক খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। এর বিরোধিতা না করাই ভালো।

শেখ হাসিনা তখন বলেছিলেন, মানুষ গ্রহণ করলেও খারাপ খারাপই। তাই তিনি জনমতের বিপক্ষে যাবে জেনেও ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। আমি জানি, শেখ হাসিনা বরাবরই ক্রসফায়ারের বিপক্ষে, আইনের শাসনের পক্ষে। তিনি নিশ্চয়ই সেই নৈতিক নির্দেশনাটা দেবেন তাঁর বাহিনীকে। আর এ নির্দেশনাই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নৈতিকভাবে আরও অনেক শক্তিশালী করবে। টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুলের কন্যার কান্না- ‘আব্বু তুমি কান্না করতেছ যে’ সারা দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছিল। ভেবেছিলাম তখনই ক্রসফায়ার বন্ধ হবে। হয়নি। তবে এবার মেজর (অব.) সিনহার মৃত্যু আবার কাঁদিয়েছে সবাইকে। প্রার্থনা- মেজর (অব.) সিনহাই যেন বাংলাদেশে বিনা বিচারে হত্যার সর্বশেষ ব্যক্তি হন। আমরা চাই সন্ত্রাস, মাদক, ধর্ষণের ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকুক; কিন্তু কোনোভাবেই ক্রসফায়ার চাই না।
লেখক : সাংবাদিক

বড়দিন : মঙ্গল আলোকে উদ্ভাসিত হোক মানবজীবন : শান্তা মারিয়া
                                  

শান্তা মারিয়া , কবি ও সাংবাদিক

আমি যখন খুব ছোট তখন ‘বড়দিন’ কথাটি শুনে মনে মনে ভাবতাম, ২৫ ডিসেম্বর ‘বড়দিন’ কেন? শীতের এই মাসে দিন তো খুবই ছোট। বিকেল পাঁচটা বাজতে না বাজতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। বাবাকে কথাটা জিজ্ঞেস করতে তিনি হেসে বললেন, দিন বড় বা ছোটর ব্যাপার নয়, বড়দিন সত্যিই বড় তার মানব কল্যাণ ও মঙ্গলচিন্তার আদর্শে। পরে ধীরে ধীরে বুঝেছি কথাটার সত্যিকার অর্থ।


ক্রিসমাস স্পিরিট বা বড়দিনের চেতনা হলো সব মানুষের কল্যাণ ও প্রীতির আদর্শ প্রতিষ্ঠা। দুহাজার বছরেরও বেশি সময় আগে বেথেলহেম শহরের প্রান্তে একটি গোশালায় যে আলোকোজ্জ্বল শিশুর জন্ম হয়েছিল তিনি পরবর্তিতে মানবজাতিকে দেখিয়েছিলেন ক্ষমা ও মুক্তির পথ। মহামানব যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনকে ঘিরে পঁচিশে ডিসেম্বর সারা বিশ্বের খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের মানুষ পালন করেন ক্রিসমাস বা বড়দিন।


বড়দিন মানেই স¤প্রীতি ও ভালোবাসার উৎসব। কালক্রমে ক্রিসমাস হয়ে উঠেছে বিশ্ব সংস্কৃতিরও প্রতীক। বড়দিনের গাছ সাজানো, সান্তাক্লজের কাছ থেকে শিশুদের উপহার পাওয়া, স্নোম্যান, ক্রিসমাস বেল, ক্রিসমাস স্টার, রেইন ডিয়ার আর এলফদের নিয়ে মজার গল্প, ক্রিসমাস কেক এগুলো এখন শুধুমাত্র খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের নয় বরং বিশ্ব সংস্কৃতিরই অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের প্রধান উৎসব বড়দিন পালিত হচ্ছে প্রার্থনা, উপহার, আনন্দ ও সম্মিলনের মধ্য দিয়ে। ঢাকার কাকরাইল চার্চ, তেজগাঁওয়ের হলি রোজারি চার্চ বা জপমালা রানীর গির্জার মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎসব রীতিমতো জমকালো। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা চার্চগুলোতেও পালিত হচ্ছে বড়দিনের উৎসব। যা সারাদেশেই একটা উৎসবের আবহ তৈরি করেছে সব স¤প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই।


বাংলাদেশে খ্রিস্ট ধর্মের আদর্শ প্রচারিত হয় প্রধানত চারশ’ বছর আগে। মূলত পর্তুগিজ ও ওলন্দাজ মিশনারিদের মাধ্যমে প্রথম যুগে খ্রিস্ট ধর্মের প্রসার ঘটে। ভারতীয় উপমহাদেশে অবশ্য অনেক আগেই খ্রিস্ট ধর্মের প্রবেশ ঘটেছিল। সেন্ট টমাস ৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসেন।


৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি মালাবার উপকূলে একদল মানুষকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করেন। তবে অবিভক্ত বাংলায় খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারকদের আগমন অনেক পরে। জেসুইট স¤প্রদায়ের প্রচারকদের মাধ্যমে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারকরা বাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ১৫৭৬ সালে ফাদার অ্যান্টোনি ভাজ ও ফাদার পিটার ডায়াস এবং ১৫৮০ সালে রোমান ক্যাথলিক যাজকরা বাংলায় আসেন।


ষোল শতকে পর্তুগিজ ক্যাথলিক অগাস্টিনিয়ানরা হিজলিতে দুটি চার্চ নির্মাণ করে। বলেশ্বর, ঢাকার তেজগাঁও, হাসনাবাদ, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম এবং বাকেরগঞ্জে ষোল ও সতের শতকে বেশ কয়েকটি চার্চ নির্মিত হয়। তেজগাঁওয়ের হলি রোজারি চার্চ এবং আরমানিটোলার আর্মেনীয় গির্জা ঢাকার দুটি প্রাচীন খ্রিস্টান উপাসনালয়। ঢাকায় সতেরশ ও আঠারশ শতকে আর্মেনীয় খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের মানুষের বসতি গড়ে ওঠে ব্যবসা সূত্রে। ১৭৮১ সালে আর্মেনীয় গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে এখানে আর্মেনীয় খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের একটি কবরস্থান ছিল।


বাংলায় খ্রিস্টান ক্যাথলিক ও প্রোটেসটান্ট উভয় স¤প্রদায়ের মিশনারিরাই জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। সারা উপমহাদেশেই খ্রিস্টান মিশনারিরা অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরপরই নির্যাতিত নারী ও যুদ্ধশিশুদের পুনর্বাসনে মাদার তেরিজা প্রতিষ্ঠিত দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য মিশনারি প্রতিষ্ঠানও সেসময় যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে এগিয়ে আসে।

 

মুক্তিযুদ্ধের পর সেসময়কার আর্চবিশপ টি এ গাঙ্গুলী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে নিজের গলার স্বর্ণের চেইন ও ক্রুশ দান করেছিলেন দেশ গঠনের কাজে ব্যয় করার জন্য। মিশনারি পরিচালিত আশ্রমগুলোতে আশ্রয় জুটেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার যুদ্ধাহত নারীদের। এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে মিশনারিদের কল্যাণমূলক ভূমিকাও অনবদ্য। সেন্ট গ্রেগরীস, সেন্ট ফ্রান্সিস, নটরডেম কলেজ, হলিক্রস স্কুল ও কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এদেশে অসংখ্য মেধাবী কৃতী শিক্ষার্থীর জীবনে আলোর বার্তা নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে সেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, অনাথ আশ্রম এখনও পরিচালিত হচ্ছে খ্রিস্টান মিশনারিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে।


বাংলাদেশের জনসংখ্যার অধিকাংশ মুসলিম হলেও এদেশ মূলত ধর্মীয় স¤প্রীতি ও ভালোবাসার দেশ। বহুযুগ ধরেই এদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী ধর্মীয় স¤প্রদায়ের মানুষ পারস্পরিক স¤প্রীতির মধ্যে বাস করছেন। কখনও কখনও কুচক্রী ও স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে সা¤প্রদায়িক অস্থিরতা দেখা দিলেও এদেশে শান্তিপ্রিয় মানুষের সংখ্যাই অনেক বেশি। ক্রিসমাস বা বড়দিনের উৎসব দেশের সকল ধর্মের মানুষের জন্যই সেবা, ভালোবাসা ও ত্যাগের বার্তা বয়ে আনে।


এবারে বড়দিন এমন একটি সময় পালিত হচ্ছে যখন প্রতিবেশি দেশ ভারতে চলছে সামাজিক অস্থিরতা। যদিও ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার বিষয়ে কিছু বলার নেই, তবুও বন্ধুপ্রতীম দেশটির সংকট উত্তরণ নিশ্চয়ই আমাদের কাম্য।


ক্রিসমাসের প্রেম ও শান্তির বাণী বিশ্বের সকল দেশের, সকল মানুষের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক। যুদ্ধ নয়, হানাহানি নয়। পরম করুণাময়ের মঙ্গল আলোকে উদ্ভাসিত হোক মানবজীবন। মেরি ক্রিসমাস।

লেখক : কবি, সাংবাদিক, শিক্ষক।

ঐতিহাসিক বদর দিবসের তাৎপর্য, গুরুত্ব ও শিক্ষা
                                  

ইসলামের ইতিহাসে বদর একটি অন্যতম বিজয় প্রান্তর। বদর পবিত্র মদীনা শরীফ হতে প্রায় ৮০ মাইল দূরবর্তী একটি কূপের নাম। এ নামে একটি গ্রামও রয়েছে। ইসলামের প্রথম যুদ্ধ সংগঠিত হয় হিজরী ২য় সনের ১৭ রমজান মোতাবেক ৬২৪ সনের ১৮ নভেম্বর শুক্রবার। মতান্তরে ৬২৪ সনের ১৭ মার্চ। ইতিহাসে ইহাই বদরের যুদ্ধ নামে অভিহিত। ইসলামের ইতিহাসে ইহা-ই সর্বপ্রথম ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। সংক্ষিপ্তাকারে বদর যুদ্ধের ইতিহাস, গুরুত্ব,তাৎপর্য ও শিক্ষা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

বদর যুদ্ধের কারণ ও পটভূমি : মক্কাবাসীদের মধ্যে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে কুরাইশরা তাদের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। তাদেরকে স্বদেশ থেকে বিতাড়িত ও তাদের ধন-সম্পদ জবর দখল করে নেয়া হয়। অন্যদিকে যে সব দেশে মুসলমানগণ আশ্রয় গ্রহণ করেন কুরাইশরা সে সব দেশের শাসক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের উপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু সব প্রচেষ্টা ব্যার্থতায় পর্যবেসিত হয়। (তারীখে তাবারী-১/১৬০৩, ইবনে হিশাম ২১৭ পৃঃ) অপরপক্ষে মুসলমানরাও হিযরতের পর মদীনা থেকে প্রতিশোধ গ্রহনের ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত হতে থাকে। তারা কুরাইশদের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেন। কুরাইশদের সমস্ত গৌরব, অহংকার ও শক্তির প্রধান উৎস ছিল শাম দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। তাই রাজনৈতিক দৃষ্টকোন থেকে তাদের গর্ব ও অহংকারকে বন্ধ করার উদ্দেশ্যে মুসলমানরা তাদের উপর ঝটিকা আক্রমণ চালায় এবং ব্যবসার সুযোগ বন্ধ করে দেয়। একবার নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট মদীনায় এ সংবাদ এসে পৌছে যে, আবু সুফিয়ান একটি বাণিজ্যিক কাফেলার পণ্য সামগ্রী নিয়ে সিরিয়া থেকে মক্কার দিকে যাচ্ছে। আর এই বাণিজ্য মক্কার সমস্ত কুরায়েশদের অংশীদার। ইবনে আকবার বর্ণনাতে, মক্কার এমন কোন কোরায়েশ নারী বা পুরুষ ছিল না যার অংশ এ বাণিজ্যে ছিল না। কারো কাছে এক মিসকাল পরিমাণ সোনা থাকলে, সেও তার এ বাণিজ্যের অংশ হিসেবে লাগিয়েছে। এ কাফেলার মোট পুঁজি সম্পর্কে ইবনে আকাব বলেন, তা ছিল ৫০ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা দিনার। ১৪০০ বছর পূর্বে যার মূল্য ছিল ২৪ লাখ টাকা। যা বর্তমান বাজারে প্রায় ১৫০ কোটির অপেক্ষা ও বেশি। প্রকৃতপক্ষে এ বাণিজ্য কাফেলাটি ছিল কুরাইশদের একটি বাণিজ্য কোম্পানী।

 

ইমাম বাগাভী (রহঃ) বলেন, একথা সকলের জানাছিল যে, কুরাইশদের এ বাণিজ্য এবং এ বাণিজ্যিক পুঁজিই ছিল সবচেয়ে বড় শক্তি। এর উপর ভরসা করে তারা রাসুল (সাঃ) ও সাহাবীদের উপর উৎপীড়ন করে মক্কা থেকে মদীনায় যেতে বাধ্য করেছিল। সে কারণেই নবী করীম (সাঃ) যখন সিরিয়া থেকে এ কাফেলা ফিরে আসার সংবাদ পেলেন তখন তিনি স্থির করেন যে, এখনই কাফেলার মোকাবেলা করার। কুরাইশদের ক্ষমতাকে ভেঙ্গে দেয়ার উপযুক্ত সময়। তিনি সাহাবায়ে কেরামদের সাথে পরামর্শ করে নির্দেশ দিলেন যে, যাদের নিকট এ মুহুর্তে সাওয়ারী উপস্থিত রয়েছে এবং জেহাদের যেতে চান, শুধু তারাই যাবে। আরও যারা যুদ্ধে যেতে ইচ্ছুক ছিলেন, কিন্তু তাদের সাওয়ারী ছিল গ্রাম এলাকায়, তারা গ্রাম থেকে সাওয়ারী এনে পরে যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি দিলেন। কিন্তু তখন এতটা অপেক্ষা করার সময় ছিলনা। কাজেই নবী করীম (সাঃ)-এর সাথে আগ্রহীদের মধ্য হতে খুব কম সংখ্যককে তিনি সাথে নিতে পারলেন। তাদেরকে নিয়েই তিনি রওয়ানা হলেন যুদ্ধ যাত্রায়। বি’রে সুকাইয়া নামক স্থানে পৌছে মহানবী (সাঃ) কায়েস ইবনে সাদাআ (রাঃ)-কে সৈন্য গণনা করার নির্দেশ দেন। তখন তিনি গণনা করে জানালেন যে, সৈন্য সংখ্যা ৩১৩ জন। মহানবী (সাঃ) একথা শুনে আনন্দিত হয়ে বললেন, তালুতের সৈন্য সংখ্যাও তাই ছিল। কাজেই লক্ষণ ভালো। বিজয় ও সফলতার লক্ষণ বটে। সাহাবায়ে কেরামদের সাথে মোট উট ছিল ৭০টি। প্রতি ৩ জনের জন্য ১টি। যাতে তারা পালাক্রমে সাওয়ার করেছিলেন। এমনকি স্বয়ং রাসুল (সাঃ) নিজেরও পালাক্রমে পালা এলে পায়ে হেটে যেতেন। অপরদিকে সিরিয়ার বিখ্যাত স্থান ‘আইনে যোরকায়’ পৌছে একব্যক্তি কুরাইশ কাফেলার নেতা আবু সুফিয়ানকে এ সংবাদ দিল যে, নবী করীম (সাঃ) তাদের এ কাফেলার অপেক্ষা করছেন। তিনি এর পশ্চাদ্ধাবন করবেন। আবু সুফিয়ান সতর্কতা মূলকঃ প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। যখন হেজাজের সিমানায় কাফেলাটি পৌঁছল, তখন জনৈক দমদম ইবনে ওমরকে কুঁড়ি মিসকাল স্বর্ণ অর্থাৎ তখনকার প্রায় ২ হাজার টাকা মজুরি দিয়ে এ ব্যাপারে রাজী করাল যে, সে একটি দ্রুতগামী উষ্ট্রিতে চড়ে যথাশীঘ্র মক্কায় গিয়ে এ সংবাদটি পৌছে দিবে যে, তাদের কাফেলা সাহাবায়ে কেরামের আক্রমণে আশঙ্কার সম্মুখীন হয়েছে। দমদম ইবনে ওমর সেকালের বিশেষ রীতি অনুযায়ী আশঙ্কার ঘোষণা দেয়ার উদ্দেশ্যে তার উষ্ট্রীর নাক-কান কেটে এবং নিজের পরীধেয় বস্ত্রের সামনে পেছনে ছিড়ে ফেলল এবং হাওলদাটি উল্টোভাবে উষ্ট্রীর পিঠে বসিয়ে দিল। এটি ছিল সেকালে ঘোর বিপদের চিহ্ন। যখন সে এভাবে মক্কায় এসে ঢুকলো, গোট মক্কা নগরীতে এক হৈ-চৈ পড়ে গেল। সাজ সাজ রব উঠলো। সমস্ত কুরাইশ প্রতিশোধের জন্য তৈরি হয়ে গেল। মাত্র ৩দিনের মধ্যে সমগ্র কুরাইশ বাহিনী পরিপূর্ণ সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। তাদের বাহিনীতে ১০০০ সৈন্য, ২০০ ঘোড়া, ৬০০ বর্মধারী এবং সারী গায়িকা ও বাঁদীদল তাদের বাদ্যযন্ত্রসহ বদর অভিমূখে রওয়ানা হলো। প্রত্যেক মনজিলে তথা বিরতীতে তাদের খাবারের জন্য ১০টি করে উট জবাই করা হতো। অপরদিকে রাসুল (সাঃ) শুধুামাত্র একটি বাণিজ্যিক কাফেলার মোকাবেলা করার অনুপাতে প্রস্তুতি নিয়ে ২য় হিজরীর ১২ রমজান শনিবার মদীনা থেকে রওয়ানা হন। কয়েক মঞ্জিল অতিক্রম করার পর বদরের নিকট এসে পৌঁছে দু’জন সাহাবীকে আবু সুফিয়ানের সংবাদ নিয়ে আসার জন্য পাঠালেন। (মাযহারী) সংবাদ বাহকের ফিরে এসে জানালেন যে, আবু সুফিয়ানের কাফেলা মহানবী (সাঃ)-এর পশ্চাদ্ধাবনের সংবাদ জানতে পেরে নদীর তীর ধরে অতিক্রম করে চলে গেছে। আর কুরাইশরা তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ও মুসলমানদের সাথে মোকাবিলা করার জন্য হাজার সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছে। (ইবনে কাসীর) মুশরিকদের সেনাবাহিনীর অধিনায়ক ছিল আবু জেহেল ইবনে হিশাম। কুরাইশদের ৯জন বিশিষ্ট ব্যক্তি খাদ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১দিনের ৯টি, অন্যদিনের ১০টি এভাবে উট জবাই করা হতো।

পক্ষান্তরে রাসুলে করীম (সাঃ) মুসলিম সেনা বিন্যাস এভাবে করেছিলেন যে, একদল ছিল মুজাহিদ এবং অন্যদল ছিল আনছার। মুসলমান রোজা ও ক্ষুধা অবস্থায় যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। (আর রাহীকুল মাখতুম) অভিশপ্ত ইবলিস ছোরাকা ইবনে মালেক ইবনে জাশআম মুদলিজীর রূপ ধারণ করে এসেছিল। মুশরেকদের নিকট থেকে সে তখনো আলাদা হয়নি। কিন্তু মুশরিকদের বিরুদ্ধে ফেরেশতাদের প্রস্তুতী গ্রহণ দেখে সে ছুটে পালাতে লাগল। কিন্তু হারেস ইবনে হিশাম (রাঃ) তাকে ধরে ফেললেন। তিনি ভেবেছিলেন, লোকটি আসলেই ছোরাকা ইবনে মালেক। শুরাকাকে বলতে লাগল, ছোরাকা ইবনে তুমি কোথায় যাচ্ছ? তুমি কি বলনি যে, আমাদের সাহায্য করবে। আমাদের নিকট থেকে দূরে সরে থাকবে না? ছোরাকা বলল, আমি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যা তোমরা দেখতে পাওনা। আল্লাহকে আমার ভয় হচ্ছে। তিনি কঠোর শাস্তিদাতা। এরপর ইবলিশ সমুদ্রে গিয়ে আত্মগোপন করল। যুদ্ধে সময়কালীন আগে-পরের কিছু ঘটনা এ যুদ্ধে হযরত ইকাশা ইবনে মুহসিন আসাদীর তালোয়ার ভেঙ্গে যায়। তিনি নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলেন। নবী করীম (সাঃ) তাকে এক খণ্ড কাঠ টুকরো দিয়ে বললেন, এটি দিয়ে লড়াই কর। সেই কাঠখণ্ড হাতে নিয়ে সোজা করতেই একখানা ধারালো চকচকে তলোয়ারে পরিণত হলো। এরপর তিনি সেই তরবারী দিয়ে লড়াই করতে লাগলেন। ইতিমধ্যে মুসলমারা জয়লাভ করেন। সেই তরবারীর নাম রাখা হয় ‘আওন’ অর্থাৎ সাহায্য। সেই তরবারী ইকাশার নিকটই থাকতো। তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে এ তরবারী ব্যবহার করতেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। সেই সময়েও ঐ তরবারী তার সাথেই ছিল। মুশরিকদের লাশ যখন কুফে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হলো, তখন ওতবা ইবনে রবীয়ার লাশ কূয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সে সময় রাসুল (সাঃ) ওতবার পুত্র হুযাইফার দিকে তাকালেন। লক্ষ করলেন, আবু হুযাইফা বিষন্ন গম্ভীর। নবী করীম (সাঃ) বললেন, হে হুযাইফা! তুমি কি তোমার পিতার ব্যপারে মনে কষ্ট পাচ্ছ? তিনি বললেন, জ্বীনা, হে আল্লাহ্’র রাসুল (সাঃ)। আমার মনে আমার পিতার হত্যকাণ্ডের ব্যপারে কোনা আফসোস নেই। তবে আমার ধারণা ছিল আমার পিতার কিছু বুদ্ধি ও বিবেক আছে। তার দ্বারা তিনি ইসলামের শীতল ছায়াতলে আসবেন। কিন্তু এখন তার পরিণাম দেখে খুব খারাপ লাগছে। বলাবাহুল্য, এ সংবাদে অবস্থার মোড় পাল্টে গেল। তখন রাসুল করীম (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামের ইতিবাচক পরামর্শে রাসুল (সাঃ) অত্যন্ত খুশী হলেন এবং স্বীয় কাফেলাকে হুকুম করলেন, আল্লাহ্ পাক ওয়াদা করেছেন যে, এ দু’টি দলের মধ্যে একটির উপর আমাদের বিজয় দান করবেন। দু’টি দল বলতে, একটি হল আবু সুফিয়ানের বাণিজ্যিক কাফেলা, আর অপরটি হল মক্কা থেকে আগত সৈন্যদল। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ও মাজহারী) বদর প্রান্তরে পৌঁছার পর মহানবী (সাঃ) কয়েকজন সঙ্গী-সাথী নিয়ে সমতল ভূমির উপর চলাফেরা করলেন। যে স্থানে কুরাইশ বাহিনীর প্রধাণরা নিহত হবে, অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে তিনি সাহাবায়ে কেরামকে সে স্থানটি দেখালেন। তিনি সকল স্থান চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন। ঠিক সেখানেই নিহতদের লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সে যুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ সাধারণত সকালের দিকে শুরু হত। সে কারণেই মহানবী (সাঃ) মুসলিম বাহিনীর সমাবেশের জন্য এমন একটি স্থান নির্বাচন করলেন যেখানে দাঁড়ালে উদীয়মান সূর্যের তীক্ষ্ম রশ্মি মুসলিম বাহিনীর চোখে পড়ে চোখে প্রতিফলিত হবে এবং তাদের গতিকে বিঘিœত করবে। (আল-ওয়াকিদী)

বদরের রণাঙ্গনে খোদায়ী সাহায্য : বদরের রণাঙ্গণে আল্লাহর সাহায্য স্বরূপ ফেরেস্তাগণ নেমে আসেন। হযরত আলী (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি বদরের কূপ থেকে পানি আনছিলাম, এমন সময় একটা তীব্র দমকা হাওয়া অনুভব করিনি। কিছুক্ষণ পর আরও একটি দমকা হাওয়া এল। আসলে পর পর ৪ বার দমকা হাওয়া এলো। আসলে এটা ছিল প্রধান প্রধান ৪ ফেরেস্তার আসার আলামত। তারা ১০০০ ফেরেস্তা নিয়ে তাবুর ডান দিকে সারিবদ্ধভাবে কাফেরদের উপর আক্রমণ করে। এতে কাফেররা দিগ-বিদিক হয়ে যায়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, বনী গেফারের এক ব্যক্তি বলল, আমি এবং আমার চাচাত ভাই বদরের এক টিলায় দাঁড়িয়ে যুদ্ধের দৃশ্য অবলোকন করছিলাম, আমাদের পরিকল্পনা ছিল বিজয়ী দলে সাথে মিশে গিয়ে লুটতরাজে অংশগ্রহণ করব। কেননা, তখন আমরা মুসলমান ছিলাম না। হঠাৎ একখণ্ড মেঘ বুকে পড়তে দেখলাম এবং আমরা ঘোড়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম। হে খায়রুম! আগ্রসহ হও। খায়রুম হচ্ছে হযরত জিব্রাইল (আঃ)-এর বাহনের নাম। আমার চাচাত ভাই সেই আওয়াজ শুনে ভয়ে ঢলে পড়লো। আমি মৃত প্রায় ছিলাম ঃ কিন্তু বেঁচে গেলাম। (শাওয়াহেদুন নবুয়্যত) যুদ্ধের সূচনায় প্রথমে কুরাইশদের ৩জন এগিয়ে আসলো। মুসলমানদের মধ্য হতে হযরত আলী (রাঃ) হযরত হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) এবং হযরত ওবায়দা বিন হারেছ (রাঃ) তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ৩জন কাফেরই নিহত হল। এরপর ভীষন য্দ্ধু চলতে থাকে। একদিকে ভয়াবহ অবস্থা অন্যদিকে সাইয়্যেদুল মুরসালিন (সাঃ) সিজদায় পড়ে আল্লাহর দরবারে সাহায্যের প্রার্থনা করেছেন। অবশেষে গায়েবী সুসংবাদে মহানবী (সাঃ) শান্ত হন। যুদ্ধের ফলাফল এ যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে ১৪ জন মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেন। এবং আবু জাহেল সহ ৭০ জন কাফের নিহত হন। ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসের বদরের যুদ্ধের তাৎপর্য ও বিজয় অবিস্মরণীয়। কারণ বদরের যুদ্ধের জয়লাভের ফলে একটি পরিপূর্ণ রাষ্ট্রের পরবর্তীতে রূপ চলে আসে। ইসলাম সত্য, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সত্য বাণী নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন তার বাস্তবতা ফুটে উঠে। সর্বোপরী মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস তৈরী হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, এ যুদ্ধ সত্য মিথ্যার পার্থক্য তৈরি করে দেয়। যুদ্ধ অস্ত্র, সৈনিক ও বাহু বলের দ্বারাই শুধু জয়লাভ সম্ভব নয় আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল, আত্মবিশ্বাস, ঐক্যতা ও সঠিক নেতৃত্ব এবং যুদ্ধাস্ত্র দ্বারাই বিজয় সম্ভব। বদর দিবসে করণীয় বদর দিবসে করণীয় হলো বদরী সাহাবীদের জন্য আমাদের কল্যানার্থে দোয়া কামনা করা। তাদের উছিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং বদরী সকল সাহাবীর প্রতি মহাব্বত ও ঈমানী ভালোবাসা রাখা। আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে বদর দিবসের মর্যাদা রক্ষা করার তাওফীক দান করুন এবং তামাম বিশ্ব মুসলমানদের উপর বদর দিবসের চেতনা আবার ফিরে আসুন। গর্জে উঠুক সেই হুঙ্কার, ঈমানী শ্লোগান, ভেঁসে উঠুন আকাশে বাতাসে ইসলামের জয়গান। আমীন!

 

লেখক : নুরুল আফছার আরমান

নির্বোধ
                                  

সন্ধ্যার সময় আক্লিমার বোন আক্লিমাকে তার বেগম সাহেবের বাসায় বাঁধা কাজের জন্য নিতে নিতে বলে,এই তোর এগারো নম্বর বাসা। এইখানে যদি থাকতে না পারোস, তাইলে দুনিয়ার অন্য কোথাও তোর জায়গা হইতো না। আমার বেলী বেগম খুব ভালো আর দরদী মানুষ। তোর জন্য খাটতে খাটতে আমার জান শেষ, তোর জন্য তোর দুলাভাইয়ের আর কতো গালি খামু,কতো? একটু মন লাগাইয়া কাজ র্কবি। যা’ যা’ কাজ কইব, মন দিয়া শুন্বি। আমার মান- সম্মান নষ্ট করিস্ না। ম্যাডাম্ আমাকে অনেক ভালো জানে। অনেক বুঝাইয়া তরে দেওনের জন্য রাজী করাইছি। সাহেব তো রাজী ছিল না। ম্যাডামের মায়া বেশী, তাই রাজী হইছে।“ বুয়া বক্ বক্ র্কতে র্কতে বোনকে নিয়ে হাজির হয়।
আক্লিমাকে প্রথম দেখেই বেলীর হাসির উদ্রেক হলো, যখন জিজ্ঞেস করলো, তোমার নাম কি? উত্তর ছিল” ভিউটি বেগম। “বুয়া বলে,“ ভাবী, ওর নাম আক্লিমা খাতুন, নিজে নাম দিছে, বিউটী বেগম। আর কইয়েন না, ভাবী; ঠিক মতন কথা কইতে পারে না। কোথাও কাজ দিলে হয় ওকে তাড়ায় দেয়; আর নাইলে, কয়দিন পর ও নিজেই আইয়া হাজির হয়। ও আইলে, আমার স্বামী দুই চোখে দেখ্বার পারে না। বাবার কাছে গেলে, সৎমা জায়গা দেয় না। সবার অভিযোগ, ওর স্বভাব ভাল না; ভাবীরে, বোন আমার ভাল; কিন্তু সমস্যা হলো ঠিক মতন আচার-ব্যবহার র্কতে পারে না। বোকা, গাধা, হাব্লা যার যার মনে আসে কয়। কিন্তু ভাবী, একদম চোর না; কেউ এই অভিযোগ করে না। আপনি যদি সারাদিন খাবার না দেন, তাইলেও হাত দিয়া নিয়ে খাবে না। বোনটাই আমার পোড়া কপালী। ও কোলে থাকতে মা মইরা গেল, বাপ আবার বিয়া কইরা ফ্যালাইলো। সৎ মা দুই চোখে দেখতে পারে নাই। বড় অবহেলায় মানুষ হইছে, আচার ব্যবহারও ঠিক মতন শিখায় নাই। ডাঙ্গর হইতে না হইতে দুইটা বিয়া দিয়া দিছে সৎ মা। কিন্তু একটাও টিকে নাই। একটা দিছিলো সৎ মার বুইরা মামার লগে। বাবার মুখে কোন রা ছিল না। সৎমা শুধু আপদ বিদায় করার ধান্দায় ছিল। ওর দুই স্বামীর অভিযোগ ছিল আকলিমা সংসার করার উপযোগী না।”
বেলীর কানে যাচ্ছিল বুয়ার কথা; আর চোখ ছিল বিউটীর উপরে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত অবলোকন করছিল। শুকনা বলতে শুকনা শরীরে হাড়ের উপর চামড়া ছাড়া আর কিছু নেই। ছোট্ট খাট্টো কালো রং। কিন্তু তার মাঝেও কেমন একটা স্রিগ্ধভাব। নিজেকে পরিপাটি করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। পরিধানের শাড়িটা পরিপাটি করে পড়া। চুল গুলো তেল দিয়ে আঁচ্ড়িয়ে একটা বেনী করে রেখেছে। ওকে স্রিগ্ধ দেখার কারণটা বেলী আবিষ্কার র্কতে র্পাল, ওর কপালের ছোট্ট কালো টিপটা। অসুন্দর মেয়েটা নিজেকে সুন্দর রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে, সেটা বুঝা যায়। নিজের একটি আধুনিক নামও দিয়েছে সুন্দর উচ্চারণ র্কতে যেয়ে বিকৃত হয়ে ‘বিউটি’ হয়ে যাচ্ছে ‘ভিউটি’। বেলীর মেয়েটার উপর মায়া ধরে যায়। একদম অবলা। মনে মনে বলে, দেখিনা মেয়েটার অসংগতি গুলো দূর করা যায় কিনা। কাজ যা পারে করুক, বুয়া তো রইল। শুরু হলো ‘ভিউটিকে’ ‘বিউটি’ করার অভিযানে। যখনই বিকৃত উচ্চারণ করে বেলী সাথে সাথে তা ঠিক করে বলা শিখিয়ে দিতে ল্গালো। কোনো কথা বলতে গেলে চোখ, মুখ, নাক কুচ্কে বলে। বেলী সংশোধন করে দিতে লাগ্ল। আর কাজ শুরু করার পর, বেলী হাড়ে হাড়ে র্টে পেতে লাগ্লো। একদম হ, য, ব, র, ল অবস্থা। কোন একটা কাজ ঠিক মতন করতে পারে না। অসম্ভব ধীরে কাজ করে। বেলী আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে লাগ্লো। তবে বিউটীর আন্তরিকতার অভাব নেই। কিভাবে কাজটা সঠিক হবে, ঐ বোধটাই কাজ র্কতো না। বেলী মনে মনে বলে, মানসিক প্রতিবন্ধি। বেলী স্বামী রাসেলকে বলায়, বলে,ওরে বিদায় করে দাও। কিন্তু বেলী দেয়। অসহায় একটা মেয়ে ছোট বেলায় মা হারা, অনাদর, অবহেলায় সঠিক পুষ্টির অভাবে ওর মানসিক, শারীরিক বিকাশ ঠিক মতন হয়নি। অসহায় মেয়েটি নিজের অসহায়ত্বটুকুও উপলব্ধি র্কতে পারে না। কাউন্সিলিং করে করে যদি মেয়েটির জীবনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা যায় ক্ষতি কি? অন্ততঃ এতোটুকু তৃপ্তি হবে যে একটা মেয়ের জন্য ভালো কিছু বেলী র্কতে পেরেছে।
বিউটির কাজ শেষ হোক আর না হোক আযান কানে গেলেই বাথরুমে ঢোকা চাই। গোসল করে চুল শুকিয়ে নিজেকে পরিপাটি র্খাতে হবে। বেলী ওর তামাশা দেখে দেখে হয়রান। নিজের বাচ্চাকে সামলানোর সাথে সাথে ওকেও সামলাতে হয়। বকাবকি করেও কেনো লাভ হয় না। কোনো কারণে বকার পরিমানটা একটু বেশী হল্ েঅনেকক্ষন বেলীর সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয় সাহস সঞ্চয় করে এবং নাক-মুখ কুঁচ্কে কেমন মায়া মায়া মুখ করে করুন গলায় বল্তো,“ভাবী,আমারে বইকেনা না। “আহারে, অবলা, মনের কষ্টটাও ঠিক মতন বল্তে পারে না। বেলীর খুব মায়া লাগ্ত, অনুশোচনায় শেষ হয়ে যেত। বিউটিকে খুশী করার জন্য অস্থির হয়ে যেত। কানের দুল, চুড়ী, মালা যা’ যা পেত, তাই দিত। বিউটির ঝল্মলে চোখের দৃষ্টি দেখে বেলীর অনুশোচনা দূর হতো।
দোষ র্কলে বিউটির সব কিছুতেই দোষ ধরা যায়। বিউটির বোনের হুকুম ছিল, দোষ দেখ্লে পিটুনী দেওয়ার। কিš, বেলীর কাছে কাজের লোকের গায়ে হাত দেওয়া পৃথিবীর জঘন্যতম কাজ। অন্যের গায়ে হাত তোলার অধিকার কারো থাকা উচিৎ নয়। অদ্ভুত এক ভঙ্গিতে নাক-মুখ কুচ্কে কথা বঁল্ত।‘ভাবীকে বল্ত’, বাবী,’ ‘বাব’ুকে বলতো ‘ভাবু’, ‘ভাত’কে বলতো ‘বাত’, ‘বাথ্রুম’কে বলত ‘ভাত্রুম’। বেলী মাঝে মাঝে হেসেই র্মত। নিজেও ওমন করে কথা বল্ত।
শুধু একটা কাজই বিউটি নিষ্ঠার সাতে পালন র্কত। সপ্তাহে দুইদিন দুপুরের খাওয়ার পর বেড়াতে যাওয়া। বেড়ানো বল্তে বাপের ঘরে আর বোনের ঘরে। খাওয়ার পর বস্তো সাজ্তে এক ঘন্টা ধরে সাজ্ত, সাজের সাজ্ কিছু না। চুলটা সুন্দর করে আঁচ্ড়ে নিত। মুখে পাউডার আর কপালে ঐ কালো টিপ্। কালো টিপ্টা অসুন্দরের মাঝে একটা মায়া ভরা ভালো লাগা ছড়িয়ে দিত বিউটির মুখটায়। যেটা বিউটি নিজেও বুঝ্ত না। বেড়িয়ে সন্ধার আগেই ফিরে আস্তো। বেলী কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস র্কতো, বিউটি বেগম, মা কি খাওয়াইলো? নাক-মুখ কুঁচ্কে বিউটি বল্ত, কি আর খাওয়াইব গো বাবী; গেলে বস্তেই দিতে চায় না। তাও যাই বাবী, না গেলে কইব ভিউটী বড়লোক হয়ে গেছে, তাই আসে না।“ এই হলো সহজ সরল বিউটি বেগম। নির্বোধ বিউটির বড় গুন সততা। কোনো মিথ্যা বল্ত না, চুরিতো দূরের কথা; খাবার না দিলে, কখনো মুখে তোুলেনি। বেলী কতো বল্তো, খিদা লাগ্লে যেটা মন চায় খেয়ে নিতে। কিন্তু, কোনোদিন খায়নি। ওর এই সততার কোনো নাম ছিল না। কেউ সততা দেখার চেষ্টাও করেনি। ওর অসুন্দর ব্যাপারটা সবাই মূল্যায়ন র্কত।
অসুন্দর-নির্বোধ বিউটিকেও বিকৃত পুরুষের লালসার শিকার হতে হয় খোদ বেলীর বাসায়। রাসেলের চাচাতো ভাই গ্রাম থেকে বেড়াতে আসে। সুদর্শন, শিক্ষিত ও রুচিশীল দেবর এতো নীচ কাজ র্কবে, বেলী কল্পনাতেই ভাবে নি। ছেলেকে স্কুলে দিয়ে চলে আস্তো, আবার নিয়ে আস্তো। এতোটুকু সময়ের মাঝে এমন জঘন্য একটা কাজ হয়ে গেল, অথচ বেলী কিছুই বুঝ্তে পারলো না। বিউটিও কিছু বলে নি। একদিন বিউটি বোনের বাসায় যায়। সন্ধ্যার সময় বোন ওকে নিয়ে এসে কাঁদ্তে লাগ্ল। কাঁদ্ত কাঁদ্ত বলে,“ভাবীগো, গাধাটারে আপনার বাসায় দিয়া নিশ্চিন্তে ছিলাম; অথচ সেই আপনার বাসায় ওর কি সর্বনাশ হইয়া গেল।“ কি হয়েছে, বেলী জান্তে চায় মাগীটা পেট বাধাইছে বলে বোনকে আবার র্মাতে থাকে। বেলীর বুকটা টিপ টিপ র্কতে থাকে পায়ের নীচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে। আতংকে কাঁপা গলায জিজ্ঞেস করে, “কে করেছে? বুয়া বলে, “আপনার বাসায় যে বেড়াইতে আইছিল, এক সাদা মূলা দেবর। সেই হারামী। মাগী কিছু কয় না দেখি বমি করে, সন্দেহ হইলে, চাইপ্পা ধরায় স্বীকার হইছে। এখন কি হইব; ভাবী গো? মাগীটা জীবনের ষোলোকলা পূর্ণ কইরা ফ্যালাইলো। আপনার ঘরে এমন কান্ড হইল; আর আপনি কিছুই বুঝ্তে র্পালেন না। রাগে লজ্জায় বেলী থম্কে আছে। কেনো কথা বল্তে র্পাল না কিছুক্ষন। বিউটিকে জেরা করে জানা গেল, বেলী স্কুলে গেলে বদমায়েশটা বিউটির দিকে হাত বাড়ায়। প্রথম দিকে বিউটি বাঁধা দেয়। কিন্তু লম্পটটা যখন প্রেমের অভিনয় করে, তখন আর সাড়া না দিয়ে পারে নি। ঘৃনায় বেলীর গা রি-রি করে ওঠে। মনে হচ্ছিল, বদটাকে ধরে বিউটির সাথে বিয়ে দিয়ে দিতে। কতো নি¤œরুচী হলে পারে বিউটির দিকে হাত বাড়াতে। রাসেল এলে সব শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। বেলীকে বলে, ওর বোনকে টাকা পয়সা দিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা’ করার র্কতে। আর বিউটিকে বিদেয় করে দিতে। বেলীও রাসেলকে বলে, “এরপর থেকৈ তোমার ঐ ভাইর সাথে চিরতরে সম্পর্ক শেষ।”
বিউটিকে নিয়ে যাওয়ার মাস খানেক পর বুয়া বল্লো, বিউটির বিয়া ঠিক হইছে। বেলী বুয়ার হাতে বিউটির জন্য হাজার টাকা দেয়। স্বামী বেশ বয়স্ক বউ মারা গেছে একটা ছেলে; আছে রিকশা চালায় কিছুদিন ঐ স্বামীর ঘরে ছিল এক মেয়ে হয়; ছেলেটাকেও আপন করে নেয়। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় বিউটি এসে হাজির বাবী, আমারে কাজে রাখেন, আমি আর ঐ ব্যাটার ঘরে যাব না। খালি পিটায়। বেলী তো অবাক। এতো ছোট মেয়েকে কার কাছে রেখে এলা? দুই মাসের মেয়েকে কিভাবে একা ফেলে এলা? বেলীর মুখে উৎকণ্ঠা। বিউটি বলে, জানি না কে দেখ্ব। দেখেন, শরীরে খালি পিটানির দাগ। আমি নাকি কোনো কাম কাজ পারি না কয় আর পিটায়। বেলীর মনটা খারাপ হয়ে যায়। বলে, “যাও আগে মেয়েকে নিয়ে এসো, তারপর সব শুন্ব।” সত্যি সত্যি বিউটি যেয়ে এক ঘন্টার মধ্যে মেয়েকে নিয়ে এলো, মজার বিষয় সৎ ছেলেটাকেও সাথে নিয়ে এসেছে। বেলীতো অবাক “ওকে এনেছো কেন?” “কি র্কব বাবী, আমাকে ছাড়ে না, আমার সাথে আস্ব, মায়া লাগ্ল,তাই নিয়ে আইলাম।” বেলী বলে, “কিন্তু বিউটি, এতো মানুষ আমি কই জায়গা দিব?” বিউটির চোখ দিয়ে জল পরে আর ম্নিম্ন করে বল্তে লাগ্লো, “বাবী, আমারে খেদায় দিয়েন না। আজীবন আপনার পায়ে পইরা থাক্ব।” এমনই সহজ সরল বিউটি, নিজের খাওয়া পরার ঠিক নাই। অন্যের বাচ্চা নিয়ে হাজির। বেলীর খুব মায়া লাগে। ঐ রাত কোনো রকম পার করে পরের দিন বুয়া এলে বেলী বিউটির স্বামীকে আন্তে পাঠায়। বিউটির স্বামী এসে ওর নামে নানা অভিযোগ দেয়, অভিযোগের সীমা নেই। সব শুনে বেলী শুধু বলে, সব বুঝ্লাম বিউটি অযোগ্য। কিন্তু ভেবে দেখেন, আপনার ছেলেকে কতোটা ভালোবাসে যে, ছেলেটা ওর সাথে চলে এলো। আপনার বাচ্চা দুইটারে তো আদর করে মানুষ করবে, শুধু এই জন্য নিয়ে যান। মেয়েটা ভাল, বাচ্চা দুইটা মায়ের আদর পাবে। বেলীর কথায় ওর স্বামী মনে হয় ভরসা পেল। ওর স্বামীর হাতে পাঁচশ টাকা দিল। বিউটি খুশী খুশী মনে স্বামীর সাথে ফিরে গেল।
এক বছর পর বিউটি বেগম আবার বেলীর বাসায় এসে ওঠে; সম্পূর্ণ একা। বেশ চটপটে ভাবে বলে, “বাবী, আমার তালাক হয়ে গেছে। মেয়েটাকে একখানে পাল্তে দিয়া দিচ্ছি এই বার আমারে রাখেন।” কিন্তু তখন বুয়ার মেয়ে বেলীর কাছে বাঁধা থাকে। পরে ওর বোন অন্য কোথাও কাজ দেয়। আবার এক দিন এসে বলে, “বাবী, আমার মেয়েটা মইরা গেছে। বিউটির কোনো ঠিকার নেয় আবার বিউটিকে ওর বোন বিয়ে দেয় দেশের বাড়িতে সেই স্বামীও বুড়ো বিপত্র¥ীক। ছেলে-মেয়ে সব আলাদা, বুড়োকে দেখার কেউ নেই। বুয়ার কথায়ঃ এবার বিউটির ভালো বিয়া হইছে। অবস্থা ভালো, পেটে বাতে ভালো থাকবে। “বুয়ার কথায় পেটে ভাতে বেঁচে থাকাটাই বিউটির সুখ। এভাবেই একের পর এক নিয়তি বিউটিকে নিয়ে তামাশা করেছে। কিন্তু বিউটি নির্বাক, কোন ঠিকার নেই। বিউটি সব নিরবে মেনে নিত। ভাগ্যের স্পর্শ র্কবো না এমনই নির্বোধ বিউটি বেগম। লেখক: খূকু খালেদ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক সূচনা ২৬শে মার্চ
                                  

শামীমা সুলতানা

 

২৬ মার্চ সুজলা সুফলা সবুজে ঘেরা আমাদের এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে রক্তের অক্ষরে লেখা গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এই দিনটির জন্য ৩০ লাখ শহীদের রক্ত¯œাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। হাজার বছরের শোষণ-বঞ্চনার শাপমুক্ত হওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল এই দিনেই।
১৯৭১ এর ৭ মার্চ সাবেক রেসর্কোস ময়দানে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া এক ঐতহিাসিক ভাষণের সময় মুহূর্মুহু গর্জনে উত্তাল ছিল জনসমুদ্র লক্ষ কণ্ঠের একই আওয়াজ উচ্চারতি হতে থাকে দেশের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ঢাকাসহ গোটা দেশে পত পত করে উড়ছিল সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্যের পতাকা।
স্বাধীনতা দিবস বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুক্তির প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশীদের স্বাধীকার আন্দোলন, এমনকি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের আইনসঙ্গত অধিকারকেও রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শুরু করেছিল সারাদেশে গণহত্যা। সেইরাতে হানাদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিক্ষকদের বাসা, পিলখানার ইপিআর সদরদপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একযোগে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে হত্যা করে অগণিত নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। পাকহানাদার বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একাধিক গণকবর খুঁড়ে সেখানে শত শত লাশ মাটি চাপা দিয়ে তার ওপর বুলডোজার চালায়। নগরীর বিভিন্ন স্থানে সারারাত ধরে হাজার হাজার লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়। পুরানো ঢাকার বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া হয় নিহতদের লাশ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাসভবনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আগমুহূর্তে দেওয়া সে ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ ও নির্দেশ দেন। ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে প্রথমে ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়। আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের ইপিআর সদর দপ্তর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেস মারফত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এবং ২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণায় সেদিনই ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুরো জাতি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগানে শপথ নেয় স্বাধীন বাংলার অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত এ সরকারের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক কাঠামো লাভ করে।
৪৮ বছর আগে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটেছিল বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। পাকিস্তানি শোষকদের কবল থেকে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। ৯ মাস বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে অর্জিত হয় বিজয় ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব। জাতি অর্জন করে একটি স্বাধীন দেশ নির্মিত হয় একটি জাতীয় পতাকা রচিত হয় প্রাণের সঞ্চার জাতীয় সঙ্গীত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বেশ বর্ণাঢ্য ভাবে উদযাপন করা হয়। ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন রঙের পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। জাতীয় স্টেডিয়ামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ, কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও শরীরচর্চা প্রদর্শন করা হয়। এই দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকে। দেশের পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করে। বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে।

আজন্ম অধিকার বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার নারী
                                  

শাহনাজ পলি


যুগ যুগ ধরেই অধিকার বঞ্চিত ও অবহেলার শিকার নারী। সেই মানব সভ্যতার শুরু থেকেই। আদিতে এটা ছিল পুরুষের শক্তিমত্তার জন্য । পরবর্তীতে তা আরো বৃদ্ধি পায় সামাজিক বৈষম্যের কারনে। আজকের যুগে সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষা ও সচেতনার অভাবের কারনে।
সামাজিক ও পারিবারিক বৈষম্যের কারণে নারীর উপলদ্ধি সৃষ্টি হলেও নানা প্রতিকুলতায় তা কাটিয়ে উঠতে পারছে না নারী। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা শিক্ষা সংম্কৃতি ও রাজনীতিতে এগিয়ে আসছে ঠিকই কিন্তু হয়রানী ও বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। ঘরে বাইরে সবখানেই নারীর নিরাপত্তার অভাব। নারী শ্রমিকের মজুরি বৈষম্যের ব্যবধান কমলেও সুরক্ষার বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত। কর্মজীবি নারীদের জন্য সুরক্ষা আইন থাকলেও তাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন নেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীদের সুরক্ষার জন্য বেশকিছু আইন প্রণীত হয়েছে ।
তারপরও আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশের নারী প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা আইন করে বন্ধ করা যাবে না ; এ জন্য সকলের সচেতনতা দরকার।
আমাদের দেশে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। পরিবারে শারিরিক বা মানষিক নির্যাতন, যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, পাচার বা খুনের মত ঘটনা ঘটছে নিত্য দিন। ঘরের বাইরে বখাটেদের অত্যাচারে নারীর স্বাভাবিক জীবন বিঘ্নিত হচ্ছে। কিশোরীরা ইভটিজিংয়ের ভয়াবহতা সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। কর্মস্থলে বেতন বৈষম্যের চেয়ে ভয়াবহ রূপে দেখা দিয়েছে পুরুষ সহকর্মীদের যৌন হয়রানীর ঘটনা। এ সবের কতটাই বা প্রকাশ পায়?
সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ঘোষিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাস্তবে নারীরা একজন মানুষ হিসেবে তাদের জন্য প্রদত্ত অধিকারগুলো পুরুষের মতো সমভাবে ভোগ করতে পারে না। মানবাধিকার জন্মগতভাবে প্রতিটি মানুষের একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। যা মানুষ ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। স্থানীয়,জাতীয়,আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হল এসব অধিকার মানুষ ভোগ করবে কিন্তু অন্যের বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হলেও বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের বিষয়টি এখন আরো প্রকটভাবে অনুভূত হচ্ছে। শিক্ষা, খাদ্য. কর্মক্ষেত্রে সব খানেই তারা ন্যায্য অধিকার পাচ্ছে না। মৌলিক অধিকার ছাড়াও বাল্য বিয়ে, সন্তান জন্মদানে তাদের মতামতকে উপেক্ষা, যৌতুক প্রথা, যৌন হয়রানি, গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবায় তাদের সঠিক মুল্যায়ন নেই। দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে দেওয়া সুবিধাগুলো কারখানার নারী শ্রমিকেরা পাচ্ছেন না।
পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি,ঐতিহ্য, আইন-কানুন বা রীতি-নীতি,বিচার ব্যবস্থায় দেখা যায় নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক। এমন কি নারী শিশু ধর্ষণের শিকার হলেও তারা সুবিচার পাচ্ছে না। ধর্ষণকারী রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বিচার তো দুরের কথা ধর্ষণের জন্য মামলা করতে গিয়েও অনেকে হেনস্তার শিকার হচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, মামলা দিতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ নারী শিশুর অর্ধেকই হেনস্তার শিকার হতে হয়। দেখা যায়, মামলা করার সময় নারী শিশুর সঙ্গে পুলিশের আচরণ মানবিক নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ষণের মামলা রেকর্ড করতে পুলিশ হেলাফেলা করেছে। এর জন্য টাকা খরচ করতে হয়েছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ আসামি ধরতে পারে না। আসামী ধরতে না পারার পেছনে পুলিশ রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় মাস্তান ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুলিশ স্টাফ কলেজের গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে থানায় যাওয়ার পর থেকে নারী ও শিশুরা বিচারের প্রতিটি ধাপে কী কী প্রতিবন্ধকতার শিকার হয় তা দেখানো হয়েছে।
পুলিশ তদন্তে দেখা গেছে, ধর্ষণের শিকার নারীদের দুই তৃতীয়াংশ শিশু। এবং ধর্ষকের সবচেয়ে বড় অংশ প্রতিবেশী। এছাড়াও সহপাঠী বা ফেসবুক বন্ধুদের দ্বারাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তারপরে মামলার গাফিলতি তো রয়েছেই। ধর্ষিত নারী শিশুদের একটা বড় অংশই বিচার চাইতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয় আথবা বিচারের প্রাথমিক পর্যায় পেরোতেই হিমসিম খায়। থানায় পুলিশের কটুক্তির কারণেও মামলা করতে অনেক সময় নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু কোথায় নারীর অধিকার। বাংলাদেশে নারী শ্রমিকের প্রায় অধের্ক নারীই কাজ করে তৈরি পোশাক কারখানায়। সেখানেও তারা নানা বৈষম্য এবং হেনস্তার শিকার হচ্ছে। এক গবেষনায় জানা যায়, নারী শ্রমিকদের ১২৬ জন কর্মক্ষেত্রে মৌখিক নির্যাতনের শিকার হন। আর যৌন নির্যাতনের শিকার হন ১৮ জন। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন যথাক্রমে ১০৬.৫ এবং ৩০ জন। ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত ১৫০ জন নারী শ্রমিকের ওপর দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেশির ভাগ নারী পোশাক শ্রমিক কাজে যোগ দেওয়ার সময় নিয়োগ সংক্রান্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাঁরা নিয়োগপত্র,পরিচয়পত্র,পে-স্লিপ,সার্ভিস বই, উপস্থিতির কার্ড পান না। তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত সময়ের কাজ করতে না চাইলেও অনেক সময় তাঁদের বাধ্য করা হয়।
অনেক ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের মৌখিক নির্যাতনের শিকার হতে দেখা যায়। মৌখিক নির্যাতন বলতে তারা কর্তৃপক্ষ ও সুপারভাইজার কর্তৃক বকাঝকা এবং নিজেদের ও মা-বাবা তুলে গালাগাল করার কথা শোনা যায়। মালিকের মন মত না চললে কর্মক্ষেত্রে ছাঁটাইয়ের ঝুঁকি রয়েছে। নারী শ্রমিকদের ওপর করা গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে,শ্রম আইন অনুযায়ী নির্ধারিত চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না। অনেক সময় গর্ভবতী হওয়ার পর অনেক নারী শ্রমিকের চাকরি চলে যায়। তা ছাড়া মাসিক চলাকালীন তাঁরা আগে চলে যাওয়া,কাজের কম চাপ এবং বসে কাজ করা এবং ওষুধ ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের সুবিধা পান না।
কিন্তু একটা দেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ সেখানে নারীর অধিকারকে আগে নিশ্চিত করা দরকার। নারী পোশাক শ্রমিকদের শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা-নিয়োগপত্র,কর্মঘণ্টা,বিশ্রাম ও ছুটি,কর্মপরিবেশ,কল্যাণ ও সামাজিক সুরক্ষা এবং নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ গড়েতুলতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। নারী পোশাক শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পেশাগত অগ্রগতি সহায়ক ভূমিকা রাখা দরকার। সমাজে নারী পুরুষ বৈষম্য কমিয়ে আনা এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকারের সাথে সকল নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে। সরকার কর্তৃক যে আইন আছে বাস্তবায়নের দায় তো শুধু সরকারের না। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে বা নানা স্তরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। সমাজ এগিয়ে না আসলে নারীর অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব না আবার নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব না।
নারীর মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কোনো অনুগ্রহ নয়,বরং তা একজন মানুষ হিসেবেই সেটা তাদের প্রাপ্য। সমাজ বা জাতির উন্নয়নের মূলে যেমন একজন পুরুষ দরকার তেমনই দরকার একজন নারীরও।
নারীর মানবাধিকার হচ্ছে ন্যায় বিচারের অন্যতম পূর্বশর্ত। তাই খাদ্য, শিক্ষা, আশ্রয়, সম্পদ, সম্পত্তি, যৌনতা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, মতপ্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সকল প্রকার নির্যাতন থেকে মুক্তিসহ সব কিছুতেই নারীর সমান অধিকার থাকতে হবে। এগুলো হলোমানুষ হিসেবে নারীর জন্মগত ও সহজাত অধিকার।
কবির কথায় ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’ এটা যদি আমরা মানি তাহলে নারীকে অবহেলা বা নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
                                  

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চল্লিশ বছর পূর্তিতে আবদুলাহ আবু সায়ীদ 

আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে একটা বেদনা আমার সারা অস্তিত্বকে অসম্ভবভাবে কামড়ে ধরেছিল। সে বেদনা আমার জাতির অজ্ঞতার বেদনা। তখন আমাদের দেশ জাতীয় জীবনের দীর্ঘ নেতিবাচক ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করে প্রথমবারের মতো স্বাধীন হয়েছে। যুগ যুগের পরাধীনতা, দাসত্ব, দুঃখ আর লাঞ্চনার নিগ্রহে জাতি তখন মুমূর্ষু। জ্ঞানের অভাবে, মনের সংকীর্ণতায়, অজ্ঞতায়, দারিদ্র্যে ও অন্ধকারে দেশ যেন ভবিষ্যৎহীন। অথচ আমরা তখন একটি জাতীয় যুদ্ধ সাফল্যজনকভাবে শেষ করে নিজেদের জন্যে একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছি।
অনেক নৈরাজ্য ও বেদনার পাশাপাশি মানুষের মন তখনও এক অফুরন্ত আশা ও স্বপ্নে জাগ্রত। দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে তাই তখন এক নিদ্রাহীন উৎকণ্ঠা: কী করে সেই নিষ্ক্রিয়তা আর জাড্য থেকে দেশ ও জাতিকে শক্তি গতি ও সামর্থ্যের জগতে উন্নীত করা যায়।
আমি শিক্ষক মানুষ। একজন শিক্ষক যেভাবে এমন পরিস্থিতির জবাব দেবার কথা ভাবতে পারেন আমি সেভাবেই ভাবলাম।
স্পষ্ট দেখলাম যুগ যুগের নিঃস্বতা আর দারিদ্র আমাদের জাতীয় চেতনার চারপাশে এক দুরারোগ্য অন্ধকারকে চিরস্থায়ী করে রেখেছে। তাই দেশকে বড় করে তুলতে হলে যেভাবেই যতদিনেই হোক এই দুর্ভেদ্য অন্ধকারের জড়ীভূত জগদ্দল ভেঙে আমাদের বেরিয়ে যেতে হবে। আর তা করতে হলে এই জাতির প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জ্বালিয়ে তুলতে হবে আলো- জ্বলিত উদ্যত ও অপরাজেয় আলো- কেননা আলোর দীর্ঘ জাগ্রত উজ্জ্বল বর্শাই সেই আয়ুধ যা দিয়ে অন্ধকারের হৃদয়কে ছিন্নভিন্ন করা যায়।
তখন প্রশ্ন উঠল: যে মানুষদের হৃদয়কে আমাদের প্রজ্বলিত করতে হবে তাঁরা কারা? প্রথমেই স্পষ্ট হল যাঁরা বয়স্ক, নির্জীব, নিষ্ক্রিয়; যাঁরা বৃদ্ধ, অথর্ব, অক্ষম, যাঁরা সৃজনক্ষমতায় নীরক্ত ও নিঃশেষিত তাঁরা আমাদের মূল লক্ষ্য হবে না। আমাদের এই মূল লক্ষ্য হবে শিশুরা, কিশোরেরা, তরুণরা, নবীনেরা- যারা আগামী দিনের বাংলাদেশ- যারা কচি, উন্মুখ, উৎকর্ণ; যারা অনুভূতিময়, স্পর্শকাতর, গ্রহণক্ষম। মনে হল, এদের তরুণ জীবনে শুভ-স্বপ্নের বীজ যদি কোনও মতে একবার বুনে দেওয়া যায় তবে পাথুরে মাটির রুক্ষ অনুর্বরতা তাদের ব্যর্থ করতে পারবে না। তাদের কাঁচা বয়সের পলিপড়া নরম উর্বর মাটিতে সেই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে একটু একটু করে বিকশিত হয়ে চলবে। একসময় তাদের কান্ড গজাবে, ডাল হবে, পাতা আসবে, শাখা-প্রশাখায় ফুলে-ফলে তারা ভরে উঠবে। আর তাদের সেসব ফল চারপাশের মাটিতে পড়ে পড়ে সেখানে জন্ম দেবে আরও অনেক নতুন গাছ। এমনি করে গোটা এলাকাটা একদিন অরণ্য হয়ে উঠবে। এই জন্য একটি শিশুর হৃদয়কে আলোতে প্রজ্বলিত করা এত জরুরি। এতে সে যে শুধু নিজে আলোকিত হয় তা নয়। জীবনের দীর্ঘ পরিক্রমায় চারপাশের জগৎকেও সে আলোকিত করে চলে। তারপর একদিন সেই উজ্জ্বল মশাল সে তুলে দেয় পরবর্তী প্রজন্মের হাতে।
মৌমাছিদের যেমন চাক থাকে, তেমনি একটি দেশের কিশোর-তরুণদের জীবনের সেই চাক হল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ তাদের উৎকর্ষে বসতি। আমরা ভেবে দেখেছিলাম আমরা যদি আমাদের উৎকর্ষ কার্যক্রমগুলো নিয়ে দেশের প্রতিটি স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিশোর-তরুণদের কাছে পৌঁছাতে পারি তবে তা হবে আগামী দিনের সম্পন্ন বাংলাদেশের কাছেই পৌঁছানো। তাই আমরা তাদের আলোকিত জীবনের লালনক্ষেত্র হিসেবে মূলত এই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বেছে নিয়েছিলাম।
প্রথমেই আমাদের ভাবতে হয়েছিল কী কী উপায়ে আমাদের কিশোর-তরুণদের চিত্তকে আলোকিত করে বড় জীবনের স্বপ্ন ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তোলা যায়। আমাদের মনে হয়েছিল দুটি ব্যাপার এই লক্ষ্যে বড় রকমের অবদান রাখতে পারে:
এক. তাদের মন ও বয়সের উপযোগী শ্রেষ্ঠ ও অনিন্দ্যসুন্দর বইগুলো পড়িয়ে তাদের জীবনকে অনুভূতিময় সৌন্দর্যস্নাত ও উচ্চমূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তোলা । বইয়ের ওপর আমরা জোর দিয়েছিলাম একটি কারণে। তা হল, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষদের আত্মার আলো এদের ভেতর জ্বলছে। ওইসব মানুষদের হৃদয়ের ভেতরকার যা কিছু সুন্দর, গভীর, ঐশ্বর্যময়, কল্পনাসমৃদ্ধ, মহৎ ও বৈভবসমৃদ্ধ- তাদের ওই বইগুলোর মাধ্যমে সেই সব দীপ্তি ও উজ্জ্বলতার সাহচর্যে বিকশিত হলে আমাদের তরুণদের হৃদয়েও এসবের সংক্রাম অনিবার্য হবে।
দুই. পড়ার পাশাপাশি সুস্থ সাংস্কৃতিক কর্মসূচির ভেতর দিয়ে তাদের বড় করে তোলা।
ফলে বইপড়ার ভেতর দিয়ে ঘটবে তাদের বৌদ্ধিক জীবনের সমৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক কর্মসূচির ভেতর দিয়ে ঘটবে তাদের হৃদয়ের পরিশীলন। এতে তারা উন্মীলিত হবে আলোকস্নাত কার্যকর ও দীপান্বিত মানুষ হিসেবে। গত চল্লিশ বছরের নিরন্তর চেষ্টায় বইকে আমরা আজ জাতির কাছে জনপ্রিয় করতে পেরেছি এ-ও আমাদের একটা অর্জন।
আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে মাত্র দশজন তরুণ ও তাদের জন্য দশটি বই কেনার দাম বাবদ এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে পাওয়া ৩৫টি টাকা সম্বল করে শুরু হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রর যাত্রা। আমাদের সেই সভ্যসংখ্যা আজ বছরে ২৮ লক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে। গত চল্লিশ বছরে নব্বই লক্ষ কিশোর-তরুণ আমাদের বিভিন্ন উৎকর্ষ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আলোর স্পর্শ পেয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী ২০২২ সাল নাগাদ বছর প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী নিয়মিতভাবে আমাদের উৎকর্ষ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৫০টি উপজেলার প্রায় ১৫,০০০ স্কুল ও কলেজে, এক কথায় প্রায় সব স্কুল ও কলেজে, আমাদের এই কর্মসূচি প্রসারিত হয়েছে। কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি গত বিশ বছর ধরে দেশের ৫৬টি জেলায় পাঠকদের বাড়ির দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দিয়ে আসছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে এই লাইব্রেরি সারা দেশের সবখানে, অর্থাৎ দেশের প্রতিটি জেলা শহরে, উপজেলার শহরে, ইউনিয়নে এমনকি বর্ধিষ্ণু গ্রামে পাঠকদের দরজায় বই পৌঁছানোর কাজ শুরু করবে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রকাশনা কার্যক্রমের আওতায় বাংলাভাষার চিরায়ত বইসহ অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বইগুলোর প্রকাশের কাজ চলছে। এই বিভাগ থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচশ বই বেরিয়েছে। ‘আলোর ইশকুল’ স্কুল-কর্মসূচির মাধ্যমে মানব জ্ঞানের ৭৫টি শাখার ব্যাপক পঠন-পাঠন, শ্রবণ ও দর্শনের ভেতর দিয়ে উচ্চায়ত মানুষ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। ‘আলোর পাঠশালা’ কর্মসূচির মাধ্যমে অন-লাইন বই পড়ার কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে।

৭. ২০ বছর আগে লেখা আমার একটি জর্নাল উদ্ধৃত করে এই প্রসঙ্গ শেষ করি :
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রর আসল লক্ষ্য কী, এ নিয়ে নানান লোকের কাছে নানান কথা বলি। কিন্তু আমি তো জানি এই কেন্দ্রের সামনে আজ যদি সত্যিকার করণীয় কিছু থাকে তবে তা হচ্ছে দুটো :
এক, আজকের তরুণদের অর্থাৎ আগামীদিনের মানুষদের বড় করে তোলা;
দুই, তাদের সংঘবদ্ধ জাতীয় শক্তিতে পরিণত করা।
ভালো সময় বলতে কী বুঝি আমরা? ভালো সময় মানে সেই সময়- যখন ভালো মানুষেরা সংঘবদ্ধ আর খারাপেরা বিভক্ত এবং পরাজিত। এর উল্টোটা হলেই তাকে আমরা বলি দুঃসময়।
আমাদের দেশে সব জায়গায় আজ শুধু অশুভের সংঘবদ্ধতা। কোথাও একটা দুর্বৃৃত্ত হেঁকে উঠলে মুহূর্তে সব দুর্বৃত্ত সংঘবদ্ধ হয়ে যায়।
আমাদের দেশে ভালো মানুষেরা আজ বিচ্ছিন্ন, যোগাযোগহীন- যে যার আলাদা ঘরে শুয়ে একা একা কাঁদছে। পরস্পরকে খুঁজে পাচ্ছে না।
তারা পরস্পরের কাছে অপরিচিত আগন্তুক এবং প্রত্যেকের মাঝখানে এক আকাশ অন্ধকার। তাদের মাঝখানকার এই বিচ্ছিন্নতার দেয়াল ভাঙতে হবে।
তাদের সকলকে করতে হবে- ‘একত্রিত, সমবেত, আয়োজিত’।
এতগুলো বছর তাদের একত্রিত করার উপায় বের করতেই শেষ হয়েছে। এখন পথ জানা হয়ে গেছে। এখন সংগ্রাম গন্তব্যর জন্যে।
কাজ এখন একটা: প্রদীপ উঁচিয়ে রাখা। ‘ভাই হে, তোমাদের মশালগুলো যেন পলকের জন্যেও না-নেভে।’

ঈদ-উল ফিতরঃ জয়হোক মানবতার
                                  


প্রবন্ধ
ঈদ-উল ফিতরঃ জয়হোক মানবতার

শান্তি আর মানবতার বাণী নিয়ে ধরায় আসে পবিত্র ঈদ। ভ্রাতৃত্বেরমোহনী সুরেডেকে যায় বারংবার। উন্মোচিত হয়সৌহার্দ আর সম্পৃতির দ্বার। পবাহিত হয় খুশিরজোয়ার। আনন্দের বন্যা বয়ে যায় সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
ঈদ-উল ফিতর উৎসব হিসেবে যেমন আনন্দের তেমনি তাৎপর্যের। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ আর মাৎসর্য এই ষড়রিপুগুলোকে নিয়ন্ত্রণের অদম্য বাসনা নিয়ে এবং আত্মগঠন ও জাতি গঠনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিম বিশ্ব পালন করে ঈদ-উল ফিতর।
ঈদ-উল-ফিতর সর্বাধিক অর্থবহ একটি মহান দিবস। আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা আর ভালোবাসায় ভরপুর এক স্বর্গীয় পরশ। যা পাপ পঙ্কিল সমাজ থেকে স্বার্থপরতার মূলোচ্ছেদ ঘটিয়ে শান্তিময় সমাজ ও দেশ গড়তে উৎসাহ প্রদান করে। প্রতি বছর ঈদ আসে ধনী-দরিদ্রের আকাশ-পতাল প্রভেদ দূরীভূত করতে সাম্য ও অধিকারের মহান শিক্ষা নিয়ে। ঈদ-উল্ ফিতরের প্রাক্কালে এক মাস রোজা রাখার বিধান দিয়ে ইসলাম তার অনুসারীদের এই মহান শিক্ষাই দেয় অনাহারে থাকা ক্ষুধার যন্ত্রণা কত বেদনার; কত নিস্পৃহ। কিন্তু এই রোজা বা ঈদ থেকে আমরা কতটুকু শিক্ষা নিজেদের চরিত্রে লালন করতে পারি এটাই ভাবনার বিষয়। আমরা কি পেরেছি অন্নহীন-বস্ত্রহীন মানুষের দুঃখ বুঝে তাদের মুখে খাবার কিংবা শরীরে বস্ত্র তুলে দিতে? আজও অনাহারে অর্ধাহারে অগণিত মানুষ হাত পাতছে অন্যের দ্বারে।
ঈদের ছুটিতে শহরের লাখ লাখ মানুষ পাড়ি জমায় গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু বাড়ী যাবার পূর্বে ফুতপাতে যে হত দরিদ্র মানুষকে অন্ন-বস্ত্রহীন দেখেছিল তার খবর কে রাখে। একবারও কি ঈদ আয়োজনের অর্থ থেকে তাদের জন্য হয়েছে কোন বরাদ্দ?
নির্বাচন এলে প্রার্থীদের কত অঙ্গীকার! ঈদের ব্যানার ফেস্টুনে সে দৃশ্য কম নয়। কিন্তু সে অঙ্গীকার পূরণে বাস্তবতা কতটুকু? শিল্পপতি, ধনবান, রাজনীতিবীদদের কেউ কেউ বিতরণ করেন যাকাতের শাড়ি কিংবা লুঙ্গি। আর তা আনতে গিয়ে পদপৃষ্ঠ হয়ে প্রাণ হারানোর নির্মম ঘটনা শুনিনি এমন নয়। যাকাত গরিবের প্রতি ধনীর করুণা নয় বরং ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার। বাংলাদেশ দারিদ্র্য প্রধান দেশ। তারপরেও এদেশের কিছু কিছু বিত্তবানদের বিদেশী ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাদ দিলাম সে কথা। শুধুমাত্র এ দেশের ব্যাংকে যে পরিমান টাকা জমা আছে তা থেকে যদি যাকাত প্রদান করা হয় তাহলে এক বছরের যাকাতের অর্থ দিয়ে এ দেশের হত দরিদ্র মানুষেরা অন্তত পাঁচ বছর চলতে পারবে সুতরাং ৮৯.৭% মুসলমানের এ দেশে যাকাতের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ কাজ থেকে আমরা আছি অনেক দূরে।
ঈদ যে ভ্রাতৃতের শিক্ষা দেয় তা আমরা নিজেদের জীবনে কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেবেছি? পবিত্র করআনের ভাষ্য “ইন্নামাল মু’মিনুনা ইখওয়া-নিশ্চয়ই মুমিন মুসলমানেরা ভ্রাতৃ সম্পর্কীয়।” হাদিস শরিফে বলা হয়েছে মুসলমানেরা একটি দেহের ন্যায়।’ শরীরের একটি অংশ কাটলে যেমন সমগ্র শরীরে ব্যথা অনুভূত হয় তেমনি পৃথিবীর কোন প্রান্তে একজন মুসলমান নির্যাতিত হলে কিংবা কষ্ট পেলে গোটা মুসলিম জাতি তার পাশে এসে দাঁড়াবে । আজ পৃথিবীতে অর্ধশত মুসলিম দেশ রয়েছে। রয়েছে প্রায় দুইশতকোটি মুসলমান। আছে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, কোথায় সেই ওআইসি? তারা কি দায়িত্ব মুক্ত ফিলিস্তিন, মিয়ানমার, ইরাক, সিরিয়া, কাশ্মীর, মিশরে মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো থেকে! সম্প্রতি ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে ইসরাঈলদের আক্রমণে নিহত হলো অর্ধ শতাধিক নিরাপরাধ মুসলমান । চলছে মুসলিমদের প্রথম কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাসকে নিয়ে ভয়াল ষড়যন্ত্র । কিন্তু ফিলিস্তিনে কিংবা মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধে এবং পবিত্র জেরুজালেম রক্ষার্থে মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা কতটুকু?
ঈদের শিক্ষা নৈতিকতার অবক্ষয় নয়। রমজানের রোজা আমাদেরকে শিখিয়েছিলো কুপ্রবৃত্তি পরিহার করে নৈতিক পদস্খলন থেকে দূরে থাকতে, আলল্লাহভীতির চেতনা বাস্তব চরিত্রে লালন করতে। আমরা কি পেরেছি? তাহলে কেন ঘটছে নারীর শীলতাহানী ? এক সময় প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ জাতীয় ঘটনার অবতারণায় আমরা শিউরে উঠতাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ সেই ঘটনাগুলোকেও যেন হারাতে বসেছি। চলছে শয়তানি, নোংড়ামি, আর বদরামির প্রতিযোগিতা। মাইক্রোতে, বাসে, ট্রাকে এমনকি নৌকায়ও ঘটছে এমন ঘটনা। জলপথ আর স্থলপথ শেষ; এখন অবশিষ্ট শুধু আকাশপথ। হতভাগ্য লম্পটগুলোর হাত থেকে জানিনা সে পথটিও রক্ষা পাবে কি না!
কেউ ছুটেছে নারীর মোহে কেউ খুঁজিছে ধন,
দ্বীনের তরে নেই যে আর মুসলমানের মন!
অথচ ইতিহাস বলে, ঈদ ও রোজার প্রকৃত শিক্ষা মুসলমানেরা যখন ধারণ করেছিল তখন উন্মুক্ত হয়ে কোন নারী হেটে গেলেও কেউ তার দিকে ফিরে তাকাতো না। দল-মত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জীবনে নেমে এসেছিল শান্তির ছায়া। সুখে-দুঃখে, জীবনে-মরনে এক সাথে ছিল তাদের প্রতিটি কাজ।
হায়! আজ আমরা কোন পথে?
ঈদের জামাতে কী চমৎকার দৃশ্য! একসাথে দাঁড়ানো, একসাথে বাসা, একসাথে সিজদা আর কোলাকুলি। যা আমাদের শিক্ষা দেয় শৃঙ্খলাপূর্ণ শান্তিময় সমাজ গঠনে। কিন্তু পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র আমাদের ভূমিগুলো গোলযোগে ভরপুর। প্রতি মূহুর্তে ঘটছে রক্তক্ষয়। কখনও শিয়া-ছুন্নির দন্দ্ব, কখনো রাজনৈতিক সংঘাত। চলছে দুর্বলদের ওপর সবলদের অত্যাচার। ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে আমরা অনেক দূরে। তাইতো আজ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছে মানবতা। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে “তোমরা পরস্পর সংঘবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে আকড়ে ধরো এবং বিচ্ছিন্ন থেকো না।”
(সূরা আলে ইমরান-১০৩)
নবী করিম (স) বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছিলেন, “আমি তোমাদের নিকট রেখে যাচ্ছি দুটি নির্দেশনামা, তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না যদি এই দুটো জিনিসকে মেনে চলতে পার। এক-আল্লাহর কিতাব কুরআন আর দুই-আমার সুন্নাহ-রীতি পদ্ধতি।” (মুয়াত্তা )
জানিনা কবে শুভবোধদয় হবে বিশ্ব মুসলিমের। ঈদের শিক্ষা আকড়ে ধরার মাধ্যমে ফিরে আসবে মানবতা। আরকানে রোহিঙ্গাদের জীবনে , ফিলিস্তিনে মুসলিমদের জীবনে ফিরে আসবে সোনালী দিন আর বিশ্ব জুড়ে বন্ধ হবে মানবাধিকার লঙ্ঘন।
সমাগত ঈদে এই প্রত্যাশা রেখে শেষ করেছি- ঈদ-উল-ফিতর জয় হোক মানবতার।
আজো পথের ধারে অসহায় নিঃস্ব শিশুরা
সদা দিবা-নিশি কাঁদে,
আজো কুকুরের সাথে ফুটপাতের শিশুদের
খাবার নিয়ে বাঁধে ।
আজো গরিবের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ধনী
সোনার প্রাসাদ গড়ে,
আজো ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিয়ে মানুষ
অন্যের দ্বারে ঘোরে ।
আজো থামেনি নিরীহ মানুষের উপরে
সেই জুলুম -নির্যাতন,
আজো ন্যায্য অধিকার পাবার আশায়
হয় মিছিল অনশন ।
অশ্রু ভেজা এই দুঃখের ঈদ যে কবে
খুশির ঈদ হবে?
যেদিন ধনী-গরিব মিলিয়ে কাঁধ
সাম্যের গান গাইবে!
লেখকঃ কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলাম প্রচার পরিষদ ও সহকারী সম্পাদক, মানবাধিকার খবর ।


   Page 1 of 3
     প্রবন্ধ
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু
.............................................................................................
মানবাধিকার রক্ষায় এতো আইন, তবুও লঙ্ঘিত মানবাধিকার
.............................................................................................
মুজিবের চেতনায় নারী অধিকার
.............................................................................................
মানবাধিকার দিবসঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
.............................................................................................
সবার ‘দুদু’ জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম
.............................................................................................
১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ঘোষনা ও জাতিসংঘ
.............................................................................................
জাগ্রত হোক মনুষ্যত্ব ও মানবিকতা
.............................................................................................
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব
.............................................................................................
বন্ধ হোক ক্রসফায়ারের গল্প
.............................................................................................
বড়দিন : মঙ্গল আলোকে উদ্ভাসিত হোক মানবজীবন : শান্তা মারিয়া
.............................................................................................
ঐতিহাসিক বদর দিবসের তাৎপর্য, গুরুত্ব ও শিক্ষা
.............................................................................................
নির্বোধ
.............................................................................................
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক সূচনা ২৬শে মার্চ
.............................................................................................
আজন্ম অধিকার বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার নারী
.............................................................................................
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
.............................................................................................
ঈদ-উল ফিতরঃ জয়হোক মানবতার
.............................................................................................
বেলা ডুবে যায়, জাগ্রত হও
.............................................................................................
আমাদের ঘুম ভাঙবে কবে!
.............................................................................................
মানবাধিকার
.............................................................................................
প্রধানমন্ত্রী ও রোহিঙ্গানীতি এবং দেশের সংখ্যালঘু ইস্যু
.............................................................................................
পরিবর্তিত জলবায়ু ও আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা
.............................................................................................
একজন নোবেল বিজয়ী বনাম রাষ্ট্রহীন একজাতি এবং কিছু কথা
.............................................................................................
বাংলাদেশে ধর্ষণপ্রবণতা ও প্রতিকার ড. খুরশিদ আলম
.............................................................................................
নবায়নযোগ্য জ্বালানি চাই, কয়লা নয়
.............................................................................................
চৌদ্দ এপ্রিল মানেই পহেলা বৈশাখ?
.............................................................................................
ভালোবাসার পয়লা বৈশাখ
.............................................................................................
নতুন ধারায় আসছে মানবাধিকার খবর
.............................................................................................
বড়দিন বারতা ও তাৎপর্য
.............................................................................................
মানবাধিকার সংস্কৃতির স্বরূপ
.............................................................................................
বিজয় দিবসটি একান্তভাবে বাঙালির
.............................................................................................
বুলবুল চৌধুরী বেঁচে আছেন তার সংস্কৃতি ও মানবতাবাদী কর্মকান্ডে
.............................................................................................
পর্নোগ্রাফি জীবন ধ্বংসের হাতিয়ার
.............................................................................................
বাঙালির দুর্গোৎসব: ইতিহাস ফিরে দেখা
.............................................................................................
বঞ্চিত ও দরিদ্রদের জন্য কোরবানীর পশু বন্টনঃ একটি মডেল উপস্থাপন
.............................................................................................
ঈদ মোবারক! ঈদ আসলো ফিরে খুশির ঈদ, মানবতার ভাঙুক নীদ
.............................................................................................
রোযা: খোদাভীতি ও মানবতাবোধের শ্রেষ্ঠ দর্শন - আবুবকর সিদ্দীক
.............................................................................................
গরম ভাতের পান্তা : আনন্দের না উপহাস
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

Editor & Publisher: Rtn. Md Reaz Uddin
Corporate Office
Kabbocash Bhabon (5th Floor), Room No: 5/18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com,manabadhikarkhabar34@yahoo.com,
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308
    2015 @ All Right Reserved By manabadhikarkhabar.com    সম্পাদকীয়    আর্কাইভ

   
Dynamic SOlution IT Dynamic POS | Super Shop | Dealer Ship | Show Room Software | Trading Software | Inventory Management Software Computer | Mobile | Electronics Item Software Accounts,HR & Payroll Software Hospital | Clinic Management Software Dynamic Scale BD Digital Truck Scale | Platform Scale | Weighing Bridge Scale Digital Load Cell Digital Indicator Digital Score Board Junction Box | Chequer Plate | Girder Digital Scale | Digital Floor Scale