বাংলার জন্য ক্লিক করুন

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   ইসলাম -
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 
আশুরার মর্মকথা ঃ করণীয় ও বর্জনীয় আমল সমূহ

আশুরা আরবী শব্দ। আশারাতুন থেকে নির্গত হয়েছে যার অর্থ দশ। আশুরা অর্থ দশ বা দশম। আক্ষরিক অর্থে যে কোন মাসের দশ তারিখকেই আশুরা বলা যায়। কিন্তু ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় কেবলমাত্র মুহাররম মাসের দশ তারিখকেই আশুরা বলা হয়।
ইসলাম ধর্মে এই দিবসটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এই দিনে ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্য পূর্ণ ঘটনাবলী সংঘটিত হয়েছে।
যেমনঃ হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে যে, (একদা) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদীদের কতিপয় এমন লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, যারা আশুরার দিনে রোযা রেখেছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন “এটা কিসের রোযা?” উত্তরে তারা বলল, “এই দিনে আল্লাহ তা‘আলা হযরত মূসা আ. ও বনী ইসরাঈলকে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেছিলেন। (অন্য বর্ণনায় আছে ফিরআউনের নির্যাতন থেকে মুক্ত করেছিলেন।) এবং ফিরআউনকে দল-বল সহ নিমজ্জিত করেছিলেন। আর এই দিনেই হযরত নূহ আ.- এর কিশতী জূদী পর্বতে স্থির হয়েছিল। ফলে এই দিনে হযরত নূহ আ. ও হযরত মূসা আ. কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোযা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এই দিনে রোযা রাখি।” তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “মূসা আ.-এর অনুসরণের ব্যাপারে এবং এই দিনে রোযা রাখার ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে বেশী হক্বদার।” অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিন (আশুরার দিন) রোযা রাখেন এবং সাহাবাদেরকেও রোযা রাখতে আদেশ করেন।
(বুখারীঃ হাঃ নং ২০০৪, মুসলিমঃ হাঃ নং ১১৩০, মুসনাদে আহমাদ হাঃ নং-৩৬০)
ফযীলত
১. হযরত আবূ কাতাদাহ রাযি.থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমি আশাবাদী যে, আশুরার দিনের রোযার উসীলায় আল্লাহ তা‘আলা অতীতের এক বৎসরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।” (তিরমিযীঃ হাঃনং ৭৫১)
২. হযরত আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত অপর হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “রমাযানের রোযার পর মুহাররম মাসের রোযা সর্বোত্তম।” (মুসলিমঃ হাঃ নং ১১৬৩)
করণীয়
১. আশুরার দিনে রোযা রাখা। তবে এর সাথে ৯ তারিখ বা ১১ তারিখ মিলিয়ে রাখা। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা আশুরার দিনে রোযা রাখ। তবে এ ক্ষেত্রে ইয়াহুদীদের থেকে ভিন্নতা অবলম্বন করতঃ তোমরা আশুরার পূর্বে অথবা পরের একদিন সহ রোযা রাখবে।” (মুসনাদে আহমাদ-হাঃ নং ২৪১)
২. এই দিন বেশী বেশী তাওবা-ইস্তিগফার করা। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মুহাররম হলো আল্লাহ তা‘আলার (নিকট একটি মর্যাদাবান) মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যাতে তিনি অতীতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন। (তিরমিযীঃ নং ৭৪১)
৩. দীনের খাতিরে এই দিনে হযরত হুসাইন রাযি. যে ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রদর্শন করেছেন তা থেকে সকল মুসলমানের দীনের জন্য যে কোন ধরনের ত্যাগ ও কুরবানী পেশ করার শিক্ষা গ্রহণ করা।
৪.আশুরার দিনে যথাসাধ্য ভালো খাবার খাওয়াঃ
হযরত আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সা: থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করবে, সে সারা বছর প্রশস্ততায় থাকবে।’ (তাবরানি, মুজামে কবির : ১০০০৭, বায়হাকি : ৩৭৯৫)
বর্জনীয়
১. তা’যিয়া বানানো অর্থাৎ, হযরত হুসাইন রাযি. এর নকল কবর বানানো। এটা বস্তুত এক ধরণের ফাসেকী শিরকী কাজ। কারণ মূর্খ লোকেরা ‘হযরত হুসাইন রাযি. এতে সমাসীন হন’ এই বিশ্বাসে এর পাদদেশে নযর-নিয়ায পেশ করে, এর সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ায়, এর দিকে পিঠ প্রদর্শন করাকে বেয়াদবী মনে করে, তা’যিয়ার দর্শনকে ‘যিয়ারত’ বলে আখ্যা দেয় এবং এতে নানা রকমের পতাকা ও ব্যানার টাঙ্গিয়ে মিছিল করে; যা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। এছাড়াও আরো বহুবিধ কুপ্রথা ও গর্হিত কাজের সমষ্টি হচ্ছে এ তা’যিয়া। (ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ ৫/২৯৪,৩৩৫, কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৩২, ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়াঃ ২/৩৪৩)
স্মর্তব্য: তা’যিয়ার সামনে যে সমস্ত নযর-নিয়ায পেশ করা হয় তা গাইরুল্লাহর নামে উৎসর্গ করা হয় বিধায় তা খাওয়া হারাম। (সূরায়ে মা ইদাহঃ ৩)
২. মর্সিয়া বা শোকগাঁথা পাঠ করা, এর জন্য মজলিস করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা সবই নাজায়িয। (ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ ৫/২৯৪, কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৩২, ৪২)
৩. ‘হায় হুসেন’, ‘হায় আলী’ ইত্যাদি বলে বলে বিলাপ ও মাতম করা এবং ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ থেকে রক্ত বের করা। এগুলো করনেওয়ালা, দর্শক ও শ্রোতা উভয়ের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।
(আবূ দাউদ, হাঃ নং ৩১২, ইবনে মাজাহঃ হাঃ নং ১৫৮৪)
৪. কারবালার শহীদগণ পিপাসার্ত অবস্থায় শাহাদতবরণ করেছেন তাই তাদের পিপাসা নিবারণের জন্য বা অন্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই দিনে লোকদেরকে পানি ও শরবত পান করানো। (ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ ৫/২৮৯, কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৪০)
৫. হযরত হুসাইন রাযি. ও তাঁর স্বজনদের উদ্দেশ্যে ঈছালে সাওয়াবের জন্য বিশেষ করে এই দিনে খিচুড়ি পাকিয়ে তা আত্মীয়-স্বজন ও গরীব মিসকীনকে খাওয়ানো ও বিলানো। একে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ যেহেতু নানাবিধ কু-প্রথায় জড়িয়ে পড়েছে তাই তাও নিষিদ্ধ ও না-জায়িয। (কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৪০)
৬. হযরত হুসাইন রাযি.-এর নামে ছোট বাচ্চাদেরকে ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করানো। এটা করিয়ে মনে করা যে, ঐ বাচ্চা দীর্ঘায়ু হবে। এটাও মুহাররম বিষয়ক কু-প্রথা ও বিদ‘আত। (ইসলাহুর রুসূম)
৭. তা’যিয়ার সাথে ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো।(সূরায়ে লুকমানঃ ৬)
৮. আশুরার দিনে শোক পালন করা; চাই তা যে কোন সূরতেই হোক। কারণ শরীয়ত শুধুমাত্র স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রীর জন্য ৪ মাস ১০ দিন আর বিধবা গর্ভবতীর জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুতে সর্বোচ্চ ৩ দিন শোক পালনের অনুমতি দিয়েছে। এই সময়ের পর শোক পালন করা জায়িয নেই। আর উল্লেখিত শোক পালন এগুলোর কোনটার মধ্যে পড়ে না। (বুখারীঃ হাঃ নং ৫৩৩৪, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়াঃ ২/৩৪৪)
উল্লেখ্য যে শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত শোক পালনের অর্থ হলো শুধুমাত্র সাজ সজ্জা বর্জন করা। শোক পালনের নাম যাচ্ছেতাই করার অনুমতি শরী‘আতে নেই। (দুররে মুখতারঃ২/৫৩০)
৯. শোক প্রকাশ করার জন্য কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরিধান করা। (ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়াঃ ২/৩৪৪)
১০. এই দিনের গুরুত্ব ও ফযীলত বয়ান করার জন্য মিথ্যা ও জা‘ল হাদীস বর্ণনা করা। কারণ হাদীসে মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারীকে জাহান্নামে ঠিকানা বানিয়ে নিতে বলা হয়েছে। (বুখারীঃ হাঃ নং ১০৭)
এখানে আশুরার দিনের নিন্দিত ও গর্হিত কাজসমূহের কিছু নমুনা পেশ করা হলো মাত্র। মূলকথা, ‘করনীয়’ শিরোনামের অধীনে উল্লেখিত ৪টি আমল ব্যতীত এই দিনে আর কোন বিশেষ আমলের কথা শরী‘আতে প্রমাণিত নেই। তাই এই ব্যতীত আশুরাকে কেন্দ্র করে বিশেষ যে কোন কাজই করা হবে তা বিদ‘আত ও মনগড়া আমল হবে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে শিরক, বিদ‘আত ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুন।
লেখক: সহকারী সম্পাদক মানবাধিকার খবর ও মহাপরিচালক, দারুল উলূম বাংলাদেশ।

আশুরার মর্মকথা ঃ করণীয় ও বর্জনীয় আমল সমূহ
                                  

আশুরা আরবী শব্দ। আশারাতুন থেকে নির্গত হয়েছে যার অর্থ দশ। আশুরা অর্থ দশ বা দশম। আক্ষরিক অর্থে যে কোন মাসের দশ তারিখকেই আশুরা বলা যায়। কিন্তু ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় কেবলমাত্র মুহাররম মাসের দশ তারিখকেই আশুরা বলা হয়।
ইসলাম ধর্মে এই দিবসটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এই দিনে ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্য পূর্ণ ঘটনাবলী সংঘটিত হয়েছে।
যেমনঃ হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে যে, (একদা) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদীদের কতিপয় এমন লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, যারা আশুরার দিনে রোযা রেখেছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন “এটা কিসের রোযা?” উত্তরে তারা বলল, “এই দিনে আল্লাহ তা‘আলা হযরত মূসা আ. ও বনী ইসরাঈলকে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেছিলেন। (অন্য বর্ণনায় আছে ফিরআউনের নির্যাতন থেকে মুক্ত করেছিলেন।) এবং ফিরআউনকে দল-বল সহ নিমজ্জিত করেছিলেন। আর এই দিনেই হযরত নূহ আ.- এর কিশতী জূদী পর্বতে স্থির হয়েছিল। ফলে এই দিনে হযরত নূহ আ. ও হযরত মূসা আ. কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোযা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এই দিনে রোযা রাখি।” তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “মূসা আ.-এর অনুসরণের ব্যাপারে এবং এই দিনে রোযা রাখার ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে বেশী হক্বদার।” অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিন (আশুরার দিন) রোযা রাখেন এবং সাহাবাদেরকেও রোযা রাখতে আদেশ করেন।
(বুখারীঃ হাঃ নং ২০০৪, মুসলিমঃ হাঃ নং ১১৩০, মুসনাদে আহমাদ হাঃ নং-৩৬০)
ফযীলত
১. হযরত আবূ কাতাদাহ রাযি.থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমি আশাবাদী যে, আশুরার দিনের রোযার উসীলায় আল্লাহ তা‘আলা অতীতের এক বৎসরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।” (তিরমিযীঃ হাঃনং ৭৫১)
২. হযরত আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত অপর হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “রমাযানের রোযার পর মুহাররম মাসের রোযা সর্বোত্তম।” (মুসলিমঃ হাঃ নং ১১৬৩)
করণীয়
১. আশুরার দিনে রোযা রাখা। তবে এর সাথে ৯ তারিখ বা ১১ তারিখ মিলিয়ে রাখা। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা আশুরার দিনে রোযা রাখ। তবে এ ক্ষেত্রে ইয়াহুদীদের থেকে ভিন্নতা অবলম্বন করতঃ তোমরা আশুরার পূর্বে অথবা পরের একদিন সহ রোযা রাখবে।” (মুসনাদে আহমাদ-হাঃ নং ২৪১)
২. এই দিন বেশী বেশী তাওবা-ইস্তিগফার করা। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মুহাররম হলো আল্লাহ তা‘আলার (নিকট একটি মর্যাদাবান) মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যাতে তিনি অতীতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন। (তিরমিযীঃ নং ৭৪১)
৩. দীনের খাতিরে এই দিনে হযরত হুসাইন রাযি. যে ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রদর্শন করেছেন তা থেকে সকল মুসলমানের দীনের জন্য যে কোন ধরনের ত্যাগ ও কুরবানী পেশ করার শিক্ষা গ্রহণ করা।
৪.আশুরার দিনে যথাসাধ্য ভালো খাবার খাওয়াঃ
হযরত আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সা: থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করবে, সে সারা বছর প্রশস্ততায় থাকবে।’ (তাবরানি, মুজামে কবির : ১০০০৭, বায়হাকি : ৩৭৯৫)
বর্জনীয়
১. তা’যিয়া বানানো অর্থাৎ, হযরত হুসাইন রাযি. এর নকল কবর বানানো। এটা বস্তুত এক ধরণের ফাসেকী শিরকী কাজ। কারণ মূর্খ লোকেরা ‘হযরত হুসাইন রাযি. এতে সমাসীন হন’ এই বিশ্বাসে এর পাদদেশে নযর-নিয়ায পেশ করে, এর সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ায়, এর দিকে পিঠ প্রদর্শন করাকে বেয়াদবী মনে করে, তা’যিয়ার দর্শনকে ‘যিয়ারত’ বলে আখ্যা দেয় এবং এতে নানা রকমের পতাকা ও ব্যানার টাঙ্গিয়ে মিছিল করে; যা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। এছাড়াও আরো বহুবিধ কুপ্রথা ও গর্হিত কাজের সমষ্টি হচ্ছে এ তা’যিয়া। (ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ ৫/২৯৪,৩৩৫, কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৩২, ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়াঃ ২/৩৪৩)
স্মর্তব্য: তা’যিয়ার সামনে যে সমস্ত নযর-নিয়ায পেশ করা হয় তা গাইরুল্লাহর নামে উৎসর্গ করা হয় বিধায় তা খাওয়া হারাম। (সূরায়ে মা ইদাহঃ ৩)
২. মর্সিয়া বা শোকগাঁথা পাঠ করা, এর জন্য মজলিস করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা সবই নাজায়িয। (ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ ৫/২৯৪, কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৩২, ৪২)
৩. ‘হায় হুসেন’, ‘হায় আলী’ ইত্যাদি বলে বলে বিলাপ ও মাতম করা এবং ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ থেকে রক্ত বের করা। এগুলো করনেওয়ালা, দর্শক ও শ্রোতা উভয়ের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।
(আবূ দাউদ, হাঃ নং ৩১২, ইবনে মাজাহঃ হাঃ নং ১৫৮৪)
৪. কারবালার শহীদগণ পিপাসার্ত অবস্থায় শাহাদতবরণ করেছেন তাই তাদের পিপাসা নিবারণের জন্য বা অন্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই দিনে লোকদেরকে পানি ও শরবত পান করানো। (ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ ৫/২৮৯, কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৪০)
৫. হযরত হুসাইন রাযি. ও তাঁর স্বজনদের উদ্দেশ্যে ঈছালে সাওয়াবের জন্য বিশেষ করে এই দিনে খিচুড়ি পাকিয়ে তা আত্মীয়-স্বজন ও গরীব মিসকীনকে খাওয়ানো ও বিলানো। একে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ যেহেতু নানাবিধ কু-প্রথায় জড়িয়ে পড়েছে তাই তাও নিষিদ্ধ ও না-জায়িয। (কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৪০)
৬. হযরত হুসাইন রাযি.-এর নামে ছোট বাচ্চাদেরকে ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করানো। এটা করিয়ে মনে করা যে, ঐ বাচ্চা দীর্ঘায়ু হবে। এটাও মুহাররম বিষয়ক কু-প্রথা ও বিদ‘আত। (ইসলাহুর রুসূম)
৭. তা’যিয়ার সাথে ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো।(সূরায়ে লুকমানঃ ৬)
৮. আশুরার দিনে শোক পালন করা; চাই তা যে কোন সূরতেই হোক। কারণ শরীয়ত শুধুমাত্র স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রীর জন্য ৪ মাস ১০ দিন আর বিধবা গর্ভবতীর জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুতে সর্বোচ্চ ৩ দিন শোক পালনের অনুমতি দিয়েছে। এই সময়ের পর শোক পালন করা জায়িয নেই। আর উল্লেখিত শোক পালন এগুলোর কোনটার মধ্যে পড়ে না। (বুখারীঃ হাঃ নং ৫৩৩৪, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়াঃ ২/৩৪৪)
উল্লেখ্য যে শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত শোক পালনের অর্থ হলো শুধুমাত্র সাজ সজ্জা বর্জন করা। শোক পালনের নাম যাচ্ছেতাই করার অনুমতি শরী‘আতে নেই। (দুররে মুখতারঃ২/৫৩০)
৯. শোক প্রকাশ করার জন্য কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরিধান করা। (ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়াঃ ২/৩৪৪)
১০. এই দিনের গুরুত্ব ও ফযীলত বয়ান করার জন্য মিথ্যা ও জা‘ল হাদীস বর্ণনা করা। কারণ হাদীসে মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারীকে জাহান্নামে ঠিকানা বানিয়ে নিতে বলা হয়েছে। (বুখারীঃ হাঃ নং ১০৭)
এখানে আশুরার দিনের নিন্দিত ও গর্হিত কাজসমূহের কিছু নমুনা পেশ করা হলো মাত্র। মূলকথা, ‘করনীয়’ শিরোনামের অধীনে উল্লেখিত ৪টি আমল ব্যতীত এই দিনে আর কোন বিশেষ আমলের কথা শরী‘আতে প্রমাণিত নেই। তাই এই ব্যতীত আশুরাকে কেন্দ্র করে বিশেষ যে কোন কাজই করা হবে তা বিদ‘আত ও মনগড়া আমল হবে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে শিরক, বিদ‘আত ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুন।
লেখক: সহকারী সম্পাদক মানবাধিকার খবর ও মহাপরিচালক, দারুল উলূম বাংলাদেশ।

আজ পবিত্র হজ : লাব্বাইক ধ্বনিতে আরাফার পথে হাজিরা
                                  

আজ পবিত্র হজ। ১৪৪১ হিজরির ৯ জিলহজ মুসলিম উম্মাহকে হজ পালনে ঐতিহাসিক এ ময়দানে উপস্থিত হতে হয়। হাদিসের ভাষায়- আল-হাজ্জু আরাফাহ অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজ। এ যে বিশ্ব মুসলিমের সম্মিলন স্থল বা মিলনমেলা। হাজিদের গ্রহণ করতে সৌদির বিশেষ ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুত আরাফাতের ময়দান। লাব্বাইক ধ্বনিতে আরাফার পথে হাজিরা...

প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজ পালনকারীদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সেবার সর্বোচ্চ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছে হজ ও ওমরাহ কর্তৃপক্ষ। আরাফাতের ময়দানে প্রচণ্ড গরম মোকাবেলায় নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও প্রস্তুত রাখা হয়েছে অভিজ্ঞ স্বেচ্ছাসেবক ও স্বাস্থ্য সেবকদল।

 

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ কর্তৃপক্ষ হজে অংশগ্রহণকারী আল্লাহর মেহমানদের আরাফাতের ময়দানে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এবার হজে অংশগ্রহণকারী ১০ হাজার হাজি আজ জোহরের আগেই জমায়েত হবেন ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। দুপুরে শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে সুলাইমান আল-মানিয়ার কণ্ঠে শুনবেন হজের খুতবা ও দিকনির্দেশনা।

তাওবাহ-ইসতেগফার, তাকবির ও তালবিয়ায় মুখরিত থাকবে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দান। হজে অংশগ্রহণকারীরা এক সামিয়ানায় সমবেত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

হাজিদের উপস্থিতিতে এবারের আরাফাতের ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ না হলেও বিশেষ ব্যবস্থায় জাবালে রহমতের পাদদেশে হজর পঅরন করবেন হাজিরা। মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের ইতিহাসে এবারই প্রবীণ শায়খ ড. আব্দুল্লাহ ইবনে সুলাইমান আল-মানিয়া মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে খুতবা দেবেন।

মহামারি করোনার কারণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার সৌদি আরবের বাইরে থেকে  পবিত্র হজ পালনে  কোনো লোক অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তবে সৌদি বসবাসকারী বিশ্বের ১৬০ দেশের মানুষ এবারের হজে অংশগ্রহণ করেছে। যেখানে অন্যান্য বছর প্রায় ২৫ লাখ লোক হজে অংশগ্রহণ করতো সেখানে সবমিলিয়ে ১০ হাজার লোকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের হজ। 

বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহও আজ হজ পালনকারীদের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে তাদের জন্য দোয়া কামনা করছে। যাতে হজে অংশগ্রহণকারীরা সুস্বাস্থ্য, সুস্থতা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে সুন্দরভাবে হজ সম্পাদন করতে পারে।

সব হাজির কাণ্ঠে একই সঙ্গীত- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’।

দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, রহমত প্রাপ্তি ও নিজেদের গোনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে ফরিয়াদ জানাবে সমবেত ধর্মপ্রাণ মুসলমান। সংখ্যায় অল্প হলেও মহামারি করোনার এ সময়েও বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্যের অবতারণা হবে আজ আরাফাতের ময়দানে।

আজ ৯ জিলহজ (বৃহস্পতিবার) সূর্যোদয়ের পর থেকে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আরাফাতের ময়দান মুখী হজে অংশগ্রহণকারীরা। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা ও ইবাদত-বন্দেগি চলবে সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত।

বিশ্ব মুসলিমের কল্যাণ কামনাসহ মহামারি করোনা থেকে মুক্তি চাইবে হজে অংশগ্রহণকারীরা। দিনভর কান্নাকাটি দোয়া-ইসতেগফারের পর সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে রওনা হবে মুজদালিফার দিকে। যেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাবে মুসলিম উম্মাহ। আর এর মাধ্যমেই পালিত হবে হজ।

মহামারি করোনার এ সময়ে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুস্থতা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে যথাযথভাবে হজ সম্পাদনের তাওফিক দান করুন। মুসলিম উম্মাহর গোনাহ মাফ করুন। হজে অংশগ্রহণকারীদের হজে মাবরূর দান করুন। সারা দুনিয়া থেকে মহামারি করোনাসহ যাবতীয় দুর্যোগ থেকে মুক্তি দিন। আমিন।

দুবাই আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানাল
                                  

শেখ ফাতিমা বিনতে মোবারক আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা ২০১৯-এ অংশগ্রহণের জন্য বিশ্বের ১২০ দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দুবাই। ৪র্থ বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় শুধু নারীরাই অংশগ্রহণ করতে পারবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই আন্তর্জাতিক কুরআন অ্যাওয়ার্ড ইনস্টিটিউট বিশ্বের ১২০ দেশের নারীদের পবিত্র কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আগামী ২ নভেম্বর দুবাইতে এ প্রতিযোগিতা শুরু হবে।

সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ইবরাহিম মুহাম্মাদ বুমিলহা বলেন, ‘শেখ ফাতিমা বিনতে মোবারক আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতার চতুর্থ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। গত তিন আসরে যথাক্রমে ৭২, ৭৬ ও ৭৫ দেশের প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এ প্রতিযোগিতায় তাজবিদে দক্ষ ও ২৫ বছরের কম বয়সী নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

প্রতিযোগিতার সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত নারী প্রতিযোগিদের জন্য শিক্ষামূলক বিশেষ কোর্সও অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান ইবরাহিম মুহাম্মাদ বুমিলহা।

আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষ এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শীর্ষ ৩ প্রতিযোগিকে ২৫০০০০, ২০০০০০, ১৫০০০০ দিরহাম পুরস্কার প্রদান করবে।

ইসলাম প্রচার পরিষদের ডায়েরী ও ক্যালেন্ডার বিতরণ সম্পন্ন
                                  

৬ অক্টোবর রাজধানীর পুরানা পল্টন মৈত্রী অডিটোরিয়াম মানবতার কল্যাণে আলেমদের অনন্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইসলাম প্রচার পরিষদের ২০১৯ সালের ডায়েরী ও ক্যালেন্ডার বিতরণের উদ্বোধন করা হয়। পরিষদ সভাপতি বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মানবাধিকার খবরের সহকারী সম্পাদক মুফতি আবুবকর সিদ্দীক আদদাঈ এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আল্লামা নূরুল ইসলাম কাছেমীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সম্মানিত ভাইস চেয়ারম্যান আল্লামা ড. আ. ন . ম. রফিকুর রহমান মাদানী বিশেষ অতিথি ছিলেন ছারছীনা দরবারের ছোট পীর মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী। বক্তব্য রাখেন পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের সহকারী অধ্যাপক আল্লামা ড. লুৎফুর রহমান আল আযহারী, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইমাম হাসান নাসেরী, মানব কল্যাণ বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান খান মোহাম্মাদ ফরিদ হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মাদ আবু নোমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুফতি গোলাম কবির চৌধুরী আল আযহারী, আইন সম্পাদক এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সিরাজী, সাংস্কৃতিক বিভাগের চেয়ারম্যান মাওলানা ক্বারী খন্দকার শহীদুল হক, মানব কল্যাণ বিভাগের সেক্রেটারী মোসাদ্দেক হোসেন, কুরআন শিক্ষা সম্পাদক মাওলানা সারওয়ার হোসাইন ইয়াকুবী, অর্থ সম্পাদক মাওলানা ওমর ফারুক, সহকারী কুরআন শিক্ষা সম্পাদক ডাঃ হাফেজ মাওলানা সাইফুল্লাহ মানছুর, ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি মুুফতি হাফেজ মুহাম্মাদ জাকারিয়া, বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হায়দার নিজামী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মুফতি আবু ইউসুফ, ওয়াজ ও দাওয়াহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হোসাইন খান, সহকারী প্রচার সম্পাদক মাওলানা মামুনুর রশীদ, প্রচার ও মিডিয়া সহযোগী শাহীন আহমেদ, মানব কল্যাণ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালিম আল আযহারী, সিরাজগঞ্জ জেলা সাাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আলী আসগর, ঢাকা জেলা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের রুহানী প্রমুখ। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন শুধু কর্মসূচীর ডায়েরী নয় বরং জীবনের ডায়েরীটাও মিলিয়ে নেওয়া দরকার। ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি ইসলামী জ্ঞান অর্জনে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

পর্ণগ্রাফীর খারাপ দিকগুলি ও বাঁচার উপায়
                                  


মানুষকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করার জন্য শয়তানের অন্যতম অস্ত্র হলো নগ্নতা। আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম(আ) ও হাওয়া(আ) শয়তান জান্নাত থেকে বের করার আগে নগ্ন করে ছেড়েছিল। আল্লাহ্ বলেন:
হে আদমসন্তান। শয়তান যেন তোমাদের কিছুতেই প্রলুব্ধ না করে যেভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাবার জন্য বিবস্ত্র করেছিল (সূরা আ’রাফ ৭:২৭)
মানুষকে নগ্ন করে বিপথে নেয়ার শয়তানের সেই চক্রান্ত শেষ হয়নি, বরং যুগের পর যুগ ধরে বেড়েই গেছে। আর বর্তমান যুগে শয়তানের এই শয়তানি চরম মাত্রা লাভ করেছে ইন্টারনেট পর্ণগ্রাফির কারণে।
যে কারণে পর্ণ আপনার দেখা উচিত নয়
পর্ণগ্রাফি মানুষকে মানষিক ও শারিরীকভাবে ভারসাম্যহীণ করে দেয়। নিচে পর্ণগ্রাফির ৬টি ভয়াবহ ক্ষতিকর পরিণতি তুলে ধরা হলো। নেক্সট টাইম যখন আপনার পর্ণ ফিল্ম দেখতে ইচ্ছে করবে, এই কথাগুলো নিজেকে মনে করিয়ে দিবেন।
১) পর্ণগ্রাফি আপনাকে ভালবাসার বিকৃত সংজ্ঞা শেখায়: আপনি যখন পর্ণ মুভি দেখেন তখন আপনি নিজের অজান্তেই অনুভূতিহীন, নিষ্ঠুর, স্বার্থপর মানুষে পরিণত হন। কারণ, পর্ণ মুভিগুলোতে মানুষের ভালো-লাগা, ভালোবাসা, দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ কোন অনুভূতিকেই দেখানো হয় না, শুধু দেখানো হয়“পেনেট্রেশন”। অথচ বাস্তব জীবনে আপনি আপনার সঙ্গীকে আদর-সোহাগ করবেন, গল্প-গুজব করবেন, আড্ডা মারবেন, ঘুরতে যাবেন এগুলো সবই একটা সুস্থ ভালবাসাময় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পর্ন মুভি আপনার হৃদয় থেকে ভালোবাসার সেই অনুভূতিকে কেড়ে নেয়, নষ্ট করে দেয়। পর্ণ মুভি আপনাকে এভাবে প্রোগ্রাম করে ফেলে যে আপনি বিশ্বাস করা শুরু করেন যে ভালবাসার অপর নাম পেনেট্র্রেশন। আমেরিকায় এক জরিপে দেখা গেছে ডিভোর্স হওয়া দম্পতিদের ৫৬% ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর একজন পর্ণ আসক্ত।
অনেক তরুণ মনে করে “এখন তো আমার বয়স কম, এখনো বিয়ে করিনি, এখন পর্ণ দেখি, বিয়ের পর আমি এগুলো দেখা ছেড়ে দিব”। কিন্তু, পরিসংখ্যান বলে ভিন্ন কথা দেখা গেছে তরুন বয়সে পর্ণ দেখা যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়, বিয়ের পরেও তাদের বেশীরভাগই পর্ণ দেখা ছাড়তে পারে না। কাজেই আমি এ নো বিয়ে করিনি, তাই পর্ণ দেখব এটা পর্ণ দেখার জন্য কোনও অজুহাত হতে পারে না।
২) পর্ণ আপনার মানবিক অনুভূতিকে নষ্ট করে ফেলে: পর্ণ আপনাকে শেখায় মেয়েরা মানুষ নয়, শুধুই উপভোগের বস্তু। পর্ণ দেখার ফলে আপনি রাস্তা-ঘাটে, অফিসে-বিশ্ববিদ্যালয়ে যখনই কোন মেয়েকে দেখেন তখন চিন্তা করেন না তারও একটা জীবন আছে, আশা-আকাংক্ষা আছে, দু:খ-কষ্ট-আনন্দ-ভালোবাসার অনুভূতি আছে, আপনি শুধু চিন্তা করতে থাকেন এই মেয়েটার মধ্যে উপভোগ করার মত কি আছে। একটা মেয়ে রাস্তায় পা পিছলে পড়ে গেলে আপনি চিন্তা করেন না মেয়েটা ব্যাথা পেয়েছে কি না, তাকে উদ্ধার করা যায় কি না, বরং আপনি চিন্তা করেন তার শরীরের কোনও অংশ উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে দেখা যায় কি না।একটি মেয়েকে তার সততা, মেধা ও মানবিক গুণাবলী দিয়ে বিচার না করে আপনি তাকে বিচার করেন তার শরীরের বিশেষ কিছু স্থানের আকার-আকৃতি দিয়ে। পর্ণ মুভি আপনাকে শেখায় যে ক্লাসের বন্ধু, অফিসের কলিগ থেকে শুরু করে সবার সাথেই শারিরীক সম্পর্ক গড়া যায় এভাবে পর্ণ আপনাকে অবৈধ সম্পর্ক গড়তে উৎসাহিত করে। আমেরিকায় এক জরিপে দেখা গেছে যে গড়ে ৬৮% বিবাহ বিচ্ছেদ হয় অনলাইন পরকিয়ার কারণে।
৩) পর্ণ আপনার স্মরনশক্তি কমায়, আপনার মধ্যে ডিপ্রেশন তৈরী করে: ইসলামের স্কলারেরা সেই প্রথম থেকেই বলে আসছেন আল্লাহ্ যা দেখতে নিষেধ করেছেন তার দিকে তাকালে স্মরনশক্তি, চিন্তাশক্তি কমে যায়। একবার ইমাম শাফেঈ কোরআনের কিছু আয়াত ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি তার উস্তাদ ইমাম মালিককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন  “তুমি হয়তো হারাম কিছু দেখেছ। তাই আল্লাহ তোমার থেকে জ্ঞান তুলে নিয়েছেন”। ইমাম শাফেঈ প্রথমে কিছুতেই মনে করতে পারছিলেন না তিনি কার দিকে হারাম দৃষ্টি দিয়েছিলেন। পরে বুঝতে পারলেন আজকে যখন বাজারে গিয়েছিলেন তখন এক মহিলাকে তার বাহন থেকে নামতে দেখেছিলেন। যখন সে নামছিলো তখন তার পায়ের গোড়ালির উপরে একটু কাপড় উঠেছিল, আর সেটার দিকে ইমাম শাফেঈর চোখ পড়ে গিয়েছিল। সাথে সাথে ইমাম শাফেঈ আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন, নিজের পাপের জন্য আকুতি-মিনতি করলেন। আর এর পরেই আল্লাহ্ তাকে ভুলে যাওয়া কোরআনের আয়াতগুলো ফিরিয়ে দিলেন।
মনোবিজ্ঞানীরাও গবেষনায় দেখেছেন যে পর্ণ মানুষের স্মরনশক্তি কমিয়ে দেয়, চিন্তাশক্তি হ্রাস করে, অমনোযোগী করে, ডিপ্রেসড করে দেয় এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। জার্মানির ডুইবার্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ডক্টর ক্রিস্টিয়ান লেয়ের ২৬ বছর বয়সী ২৮জন মানুষের উপর পর্ণ ছবি দেখার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি গবেষনায় পেয়েছেন পর্ণ দেখার শর্ট-টার্ম ইফেক্ট হিসাবে এদের স্মৃতিশক্তি কমেছে এবং মনোযোগী হবার ক্ষমতা কমেছে। এছাড়া অন্য গবেষনায় পর্ণ দেখার লং-টার্ম ইফেক্ট হিসাবে ডিপ্রেশন, সামাজিকভাবে ব্যর্থতা ও একাকিত্ব থাকার প্রবণতা পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
৪) পর্ণ আপনাকে অক্ষম করে দিতে পারে: গবেষনায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত পর্ন ভিডিও দেখলে আপনার উত্তেজিত হওয়ার ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। এর কারণ হলো আজ কালকার পর্ণ গুলো ধারণ করা হয় হাই ডেফিনিশন ক্যামেরায়, এইসব ক্যামেরায় মেয়েদের শরীরকে এত নিঁখুতভাবে ও জুম করে দেখানো হয় যে বাস্তবে আপনার সংগীকে আপনি এভাবে দেখতে পারবেন না, ফলে সহজে উত্তেজিত হবেন না। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকটা পর্ণ মুভি আপনার সামনে নিয়ে আসে নতুন নতুন পর্ণ মডেল, নতুন নতুন লোকেশন আর নতুন নতুন কাহিনী। আপনার ব্রেইন ক্রমেই এই নতুনত্বে অভ্যস্ত হয়ে যায়, পুরনো কিছু তখন আর আপনাকে সহজে উত্তেজিত করতে পারে না। এর ফলে, এরকম ঘটতে পারে যে আপনি কিছুতেই আর আপনার স্ত্রীকে দেখে উত্তেজিত হবেন না। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই অক্ষমতা এমন আকার ধারণ করে যে তারা শুধু পর্ণ মুভি দেখেই উত্তেজিত হতে পারে, এমন কি ভায়াগ্রার মতো শক্তিশালী ওষুধেও তাদের কোন কাজ হয় না। এই সমস্যাকে ইরেক্টাইল ডিস্ফাংশন বলে এবং গবেষনায় দেখা গেছে যারা কিশোর বয়সে পর্ণ দেখা শুরু করে (বিশেষ করে ১২ বছর বয়সের পূর্বে) তাদের মধ্যে এই সমস্যা সবচেয়ে প্রকট।
তবে আশার কথা এই যে, ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে আবার সক্ষম হওয়া সম্ভব। গবেষনায় দেখা গেছে কোনও ব্যক্তি টানা তিন মাস পর্ণ মুভি না দেখলে ও স্বমেহন না করলে তার ব্রেইন আবার আগের প্যাটার্নে ফিরে আসে, ফলে সে ডিজিটাল মিডিয়ার বাইরে মেয়েদেরকে দেখেও উত্তেজিত হতে পারে। ভেবে দেখুন ব্রেইনের এই নিজে নিজে সেরে উঠার ক্ষমতা আল্লাহর তরফ থেকে কত বড় রহমত! আপনি বছরের পর বছর তাঁর অবাধ্যতা করার পরেও মাত্র তিন মাস নিজেকে সংযত রাখলে আল্লাহ্ আবার আপনাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিবেন।
৫) আপনি যখন পর্ণ দেখেন, আপনি প্রস্টিটিউট তৈরী করেন: আপনি কি মনে করেন যারা পর্ণ মডেল হয়েছে তারা সবাই নিজের ইচ্ছাতেই পর্ণ মুভিতে এসেছে? মোটেই না। এদের অনেককেই লোভনীয় চাকুরী, ফ্রি-ট্যুর সহ বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে শুটিং স্পটে নিয়ে আসা হয়। তারপর অনেক টাকার লোভ দেখিয়ে, রঙ্গিন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে পর্ণ মুভিতে অভিনয় করানো হয়। আমেরিকাতে সাধারণ কাজে ঘণ্টায় যত টাকা পাওয়া যায়, পর্ণ মুভির জন্য প্রতি ঘন্টায় তার ২০গুণ টাকা দেয়া হয়। টাকার লোভে পড়ে কলেজ-ইউনিভার্সিটি পড়–য়া মেয়েরা পর্ণ মুভিতে নাম লেখায়, আর এভাবে করেই প্রস্টিটিউট হয়ে যায়।
মানুষ নতুন নতুন পর্ণ মডেল দেখতে পছন্দ করে। আর তাই পর্ণ মুভির প্রডিউসাররাও নিত্য-নতুন প্রলোভন দেখিয়ে নতুন নতুন মেয়েদেরকে প্রস্টিটিউশনের জগতে নিয়ে আসে। আপনি যে মেয়েটাকে পর্ণ-মুভিতে হাসতে দেখছেন, আনন্দে-উচ্ছ্াসে ডুবে যেতে দেখছেন কম্পিউটার বন্ধ করে দিলেই আপনার তাকে দেখতে হয় না, কিন্তু আপনার সামনে সে যাতে পরের মুভিতেও আসতে পারে তার জন্য কিন্তু তাকে প্রস্টিটিউট হিসাবেই থেকে যেতে হয়। আপনি আপনার কম্পিউটারের সামনে বসে নিত্য-নতুন পর্ণ মডেল দেখার জন্য যে ক্লিক করছেন, সে ক্লিকের ডিমান্ড মেটানোর জন্য পর্ণ মুভির প্রডিউসারকে ক্রমাগত নতুন নতুন মেয়ে জোগাড় করে সাপ্লাই দিয়ে যেতে হচ্ছে। এভাবে করে, আপাত:দৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হওয়া এই ক্লিকের কারণেই বিশ্বজুড়ে পর্ণ ব্যবসার পালে হাওয়া লাগছে, আর এর সূত্র ধরে নতুন নতুন মেয়ে প্রতিদিন প্রস্টিটিউট হয়ে উঠছে।
আর যে সব পর্ণ মুভি গোপনে ধারণ করা হয়, এগুলো যে কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে, কত মেয়ে এগুলোর জন্য আত্মহত্যা করেছে তার ইয়ত্তা নেই। ভেবে দেখুন কেউ যদি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও না দেখত, তাহলে কেউ এগুলো বানাতোও না, ফলে এই ভিডিওগুলোর জন্য কোনও মেয়ের জীবনও নষ্ট হতো না।
৬) সব কিছু আমলনামায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে: মনে রাখবেন, আপনি একা ঘরে কম্পিউটারের সামনে বসে যা করছেন তা আর কেউ না দেখলেও আল্লাহ্ দেখছেন, আর ফেরেশতারা তা লিখে রাখছে এক পরিষ্কার গ্রন্থে। আল্লাহ্ যদি এখনো আপনার কুকর্ম মানুষের সামনে প্রকাশ না করে দিয়ে থাকেন  তাহলে বুঝবেন আপনাকে আল্লাহ্ তাওবাহ করার জন্য সুযোগ দিচ্ছেন। আপনি যদি তাওবাহ না করে মারা যান, তাহলে এই গ্রন্থের সবকিছু একদিন আপনার সামনে তুলে ধরা হবে, আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু সবাই আপনার আমলনামা দেখতে পাবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন সেদিনের সেই লজ্জার সম্মুখীন কি আপনি হতে পারবেন? ( চলবে)
লেখক: সভাপতি

দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহনে ইসলাম প্রচার পরিষদের ইফতার মাহফিল
                                  


ধর্মচিন্তা
দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহনে
ইসলাম প্রচার পরিষদের ইফতার মাহফিল
॥ মানবাধিকার খবর প্রতিবেদক ॥
বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন প্রফেসর ড. আ ন ম রফিকুর রহমান মাদানী বলেছেন, আলেমদের বিভাজন ও অহঙ্কারের কারণে বাংলাদেশে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান, বিশ্ব ইজতিমা, আন্তর্জাতিক একাধিক বড় বড় ইসলামী সম্মেলন সত্ত্বেও বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। তাই বিভাজন ও আত্মঅহংকার বিসর্জন দিয়ে আলেমদের একতাবব্ধ হয়ে মানবতার জন্য জীবন সপে দিতে হবে।
গত ৩১ মে, বৃহস্পতিবার বিকাল চারটায় রাজধানীর মানিক নগর রেড বক্স অডিটোরিয়ামে মানবতার কল্যাণে আলেমদের অনন্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইসলাম প্রচার পরিষদের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন মুফতি মুহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক আদদাঈ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আরো বলেন, আলেমদের বিভাজন দূর করে একতা একান্ত জরুরী। তদুপরি মানবতার কল্যাণে আলেমদেরকে আরো তৎপর হতে হবে।বিশেষ অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে সর্বাবস্থায় ইসলাম প্রচার পরিষদের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সভাপতি তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ইসলাম প্রচার পরিষদ মানবতার কল্যাণে আলেমদের অনন্য প্রতিষ্ঠান। এ পরিষদ বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষী আলেমদেরকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে মানবতার কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছে। রমজানেই রয়েছে ইয়াতিম ও দুস্থদের সঙ্গে ইফতার মাহফিল এবং তাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কর্মসূচি। ঈদের পরে রয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প সহ নানা জন কল্যাণমুখি কর্মসূচি। অস্ট্রিয়া ও মিসরে রয়েছে এর পৃথক শাখা। তিনি সহীহ দ্বীন প্রচারে আলেমদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার মাওলানা মোহাম্মাদ আবু নোমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, বিশেষ অতিথি হককানী পীর মাশায়েখ কমিটির সভাপতি ছারছীনা দরবার শরীফের ছোট পীর মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দীকী, টেকেরহাটের পীর আল্লামা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, জমিয়াতুল মুফাসসিরিন বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা কে এম আব্দুস সোবহান, কুরআন-সুন্নাহ রিসার্চ সেন্টারের মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দিন হেলালী, বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসসির পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শায়খ জামাল উদ্দিন, মানবাধিকার খবরের সম্পাদক মো.রিয়াজ উদ্দীন, কুরআন রিসার্চ একাডেমির মহাসচিব মাওলানা ইমাম হাসান নাসেরী, আন নাহদা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম মিয়াজী, ইসলাম প্রচার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাজধানীর বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদের খতিব আল্লামা নূরুল ইসলাম কাসেমী, দপ্তর সম্পাদক বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার মাওলানা সাদিক মোহাম্মাদ ইয়াকুব আল আযহারী, আইন সম্পাদক বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রচার সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সিরাজী, সাংস্কৃতিক বিভাগের চেয়ারম্যান মাওলানা ক্বারী খন্দকার শহীদুল হক, তাফসীর বিভাগের সেক্রেটারী যাত্রাবাড়ী বিশ্বরোড জামে মসজিদের খতিব মুফতি গোলাম কবির চৌধুরী আল আযহারী, মানব কল্যাণ বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ল` এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আব্দুস সবুর, মৈত্রী ইকো ভিলেজের এমডি ও রিলিজাস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কে এম ফরিদ হাসান, মানব কল্যাণের সেক্রেটারী বিশিষ্ট শিল্পপতি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মোসাদ্দেক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজমুল হক মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক মুহাদ্দিস মাহবুবুল্লাহ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি রাজধানীর ভোলা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সরোয়ার হোসাইন ইয়াকুবী, ঢাকা জেলা সভাপতি রাজধানীর টিপু সুলতান রোড জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল কাইয়্যুম সাদী, মানব কল্যাণ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রহমান, শিশু মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: আর কে চৌধুরী , ঢাকা জেলা সহ সভাপতি মাওলানা বদরুদ্দোজা কুতুবী, মাওলানা লোকমান হোসাইন, মাওলানা সালাউদ্দিন আশরাফী, ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বোরহান উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আলী আসগর প্রমুখ ।

ধর্মচিন্তা
দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহনে
ইসলাম প্রচার পরিষদের ইফতার মাহফিল
॥ মানবাধিকার খবর প্রতিবেদক ॥
বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন প্রফেসর ড. আ ন ম রফিকুর রহমান মাদানী বলেছেন, আলেমদের বিভাজন ও অহঙ্কারের কারণে বাংলাদেশে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান, বিশ্ব ইজতিমা, আন্তর্জাতিক একাধিক বড় বড় ইসলামী সম্মেলন সত্ত্বেও বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। তাই বিভাজন ও আত্মঅহংকার বিসর্জন দিয়ে আলেমদের একতাবব্ধ হয়ে মানবতার জন্য জীবন সপে দিতে হবে।
গত ৩১ মে, বৃহস্পতিবার বিকাল চারটায় রাজধানীর মানিক নগর রেড বক্স অডিটোরিয়ামে মানবতার কল্যাণে আলেমদের অনন্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইসলাম প্রচার পরিষদের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন মুফতি মুহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক আদদাঈ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আরো বলেন, আলেমদের বিভাজন দূর করে একতা একান্ত জরুরী। তদুপরি মানবতার কল্যাণে আলেমদেরকে আরো তৎপর হতে হবে।বিশেষ অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে সর্বাবস্থায় ইসলাম প্রচার পরিষদের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সভাপতি তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ইসলাম প্রচার পরিষদ মানবতার কল্যাণে আলেমদের অনন্য প্রতিষ্ঠান। এ পরিষদ বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষী আলেমদেরকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে মানবতার কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছে। রমজানেই রয়েছে ইয়াতিম ও দুস্থদের সঙ্গে ইফতার মাহফিল এবং তাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কর্মসূচি। ঈদের পরে রয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প সহ নানা জন কল্যাণমুখি কর্মসূচি। অস্ট্রিয়া ও মিসরে রয়েছে এর পৃথক শাখা। তিনি সহীহ দ্বীন প্রচারে আলেমদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার মাওলানা মোহাম্মাদ আবু নোমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, বিশেষ অতিথি হককানী পীর মাশায়েখ কমিটির সভাপতি ছারছীনা দরবার শরীফের ছোট পীর মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দীকী, টেকেরহাটের পীর আল্লামা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, জমিয়াতুল মুফাসসিরিন বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা কে এম আব্দুস সোবহান, কুরআন-সুন্নাহ রিসার্চ সেন্টারের মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দিন হেলালী, বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসসির পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শায়খ জামাল উদ্দিন, মানবাধিকার খবরের সম্পাদক মো.রিয়াজ উদ্দীন, কুরআন রিসার্চ একাডেমির মহাসচিব মাওলানা ইমাম হাসান নাসেরী, আন নাহদা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম মিয়াজী, ইসলাম প্রচার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাজধানীর বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদের খতিব আল্লামা নূরুল ইসলাম কাসেমী, দপ্তর সম্পাদক বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার মাওলানা সাদিক মোহাম্মাদ ইয়াকুব আল আযহারী, আইন সম্পাদক বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রচার সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সিরাজী, সাংস্কৃতিক বিভাগের চেয়ারম্যান মাওলানা ক্বারী খন্দকার শহীদুল হক, তাফসীর বিভাগের সেক্রেটারী যাত্রাবাড়ী বিশ্বরোড জামে মসজিদের খতিব মুফতি গোলাম কবির চৌধুরী আল আযহারী, মানব কল্যাণ বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ল` এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আব্দুস সবুর, মৈত্রী ইকো ভিলেজের এমডি ও রিলিজাস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কে এম ফরিদ হাসান, মানব কল্যাণের সেক্রেটারী বিশিষ্ট শিল্পপতি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মোসাদ্দেক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজমুল হক মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক মুহাদ্দিস মাহবুবুল্লাহ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি রাজধানীর ভোলা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সরোয়ার হোসাইন ইয়াকুবী, ঢাকা জেলা সভাপতি রাজধানীর টিপু সুলতান রোড জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল কাইয়্যুম সাদী, মানব কল্যাণ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রহমান, শিশু মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: আর কে চৌধুরী , ঢাকা জেলা সহ সভাপতি মাওলানা বদরুদ্দোজা কুতুবী, মাওলানা লোকমান হোসাইন, মাওলানা সালাউদ্দিন আশরাফী, ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বোরহান উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আলী আসগর প্রমুখ ।

কোরআন/হাদিস
                                  


কোরআন/হাদিস
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“এমন দু’টি বাক্য আছে যা উচ্চারণ করতে খুবই সহজ, ওজন-দন্ডের পরিমাপে খুবই ভারী, দয়াময় আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয় (বাক্য দু’টি হলো)-
‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি
সুবহানাল্লাহিল ‘আযীম’
(অর্থ: মহা পবিত্র আল্লাহ, তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা। মহা পবিত্র আল্লাহ্, তিনি মহামহিম।)”
উক্তি
“স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। তাই বলে, স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়, তাকে সঙ্গে নিয়ে চলো। স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন”
ব্রায়ান ডাইসন
“এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না। যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করেনা তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে”
আইনস্টাইন

 

 

 

 

ধর্মচিন্তা রোযাঃ আল্লাহ ভীতি ও মানবতাবোধের মহান দীক্ষা মাওলানা আবুবকর সিদ্দীক আদ্দাঈ
                                  

"শান্তির বাণী নিয়ে হীম শীতল রবে
মাহে রমযান এলো তমশার ভবে।"
বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালা মাহে রমযানে রোযা রাখা ফরয ( অপরিহার্য) করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের বাণী- " হে বিশ্বাসী গণ, তোমাদের ওপর রোযা অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে। যেভাবে অপরিহার্য করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। সম্ভাবত তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে ।" ( সূরা আল বাক্বারা-১৮৩)
আল কুরআনে `তাকওয়া ` শব্দটি তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
১.ভীতি
২.আনুগত্য
৩.পাপ মোচন।
এই তিনটি অর্থের সম্মিলিত রূপই তাকওয়া। অর্থাৎ জগৎ স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভয় রেখে তাঁর বিধানের ওপর পূর্ণ আনুগত্যশীল হওয়া এবং যাবতীয় পাপ বর্জন করাই হলো তাকওয়া। আর রোযা ফরয হওয়ার প্রধান কারণ হলো এই তাকওয়া অর্জন। কেননা, কারও ভিতর আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হলে তার পক্ষে গুনাহের কাজ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। রমযানের রোযা ফরয হওয়ার এই কারণটির সাথে যদি অন্যান্য কারণগুলো পর্যালোচনা করি তাহলে সহজেই অনুমেয় হবে, রোযা খোদাভীতি ও মানবতাবোধের শ্রেষ্ঠ দর্শন।
রোযা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যকে নিয়ন্ত্রণ করে আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনে সহায়তা করে। এ জন্যই আমরা দেখতে পাই, পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মে রোযা বা রোযা জাতীয় উপাসনার নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,"যারা রিপুগুলোকে দমন করে খাঁটি পথে অবিচল থাকবে তাদেরকে অগণিত সওয়াব প্রদান করা হবে।" ( সূরা আল জুমার-১০) রোযার মাধ্যমে ধৈর্য - সহিষ্ণুতা ও বিনম্র স্বভাবের সৃষ্টি হয়। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার বন্ধ রেখে ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধির মাধ্যমে রোযাদার অনাহারী ব্যক্তির কষ্ট অনুধাবন করতে পারে। যা তাকে গরিবের প্রতি দয়া প্রদর্শনে উৎসাহিত করে।
মুমিনদের বৈশিষ্ট্যের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন," যারা না দেখে বিশ্বাস করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদেরকে যে রিযিক দেয়া হয়েছে তা থেকে ব্যয় করে।" ( সূরা আল বাক্বারা-০৩)
রমজান মাসে একই সাথে ধনী- গরিব রোযা রাখার মাধ্যমে মুসলিম সমাজে সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার জন্ম হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন," মুমিনরা পরস্পর ভাই। অতএব, তোমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক যথাযত ভাবে পুনর্গঠিত করে নাও। "(সূরা আল হুজরত-১০) রোযা মানুষের চির শত্রু শয়তানের হামলা প্রতিহত করতে ঢালের ভূমিকা পালন করে। রাসূলে করিম ( সঃ) বলেছেন," রোযা ঢাল স্বরূপ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সুরক্ষিত দুর্গ বিশেষ। " ( মুসনাদে আহমদ) রমযান মাস কুরআন অবর্তীণের মাস । আল কুরআন সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নিরূপণকারী। এ মাসে রোযা রাখার মাধ্যমে কুরআনের আলোকে জীবন গঠনের প্রেরণা সৃষ্টি হয়। মহান আল্লাহর বাণী," রমযান মাসই হলো সেই মাস, যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। যা মানুষের জন্য জীবন বিধান এবং সত্য পথ যাত্রীদের জন্যে সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। ` ( সূরা আল বাক্বারা-১৮৫) রমযানের রোযা বান্দার অতীত জীবনের সমস্ত পাপ মোচনের অন্যতম পন্থা। নবী ( সঃ) এর বাণী,"যে ব্যক্তি ঈমান ও চেতনা সহকারে রমযান মাসের রোযা রাখবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাপ হয়ে যাবে।" ( সহীহ আল বুখারী,৩য় খন্ড) রমযান মাস রহমতের মাস। এ মাসে রোযা রাখার মাধ্যমে বান্দার উপর রহমত অবতীর্ণ হয়। নবী করিম ( সঃ) বলেন," যখন রমযান মাস আসে তখন রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়।( সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল ( সঃ) বলেন," রমযান মাসে আমার ( রোযাদার) উম্মতকে পাঁচটা বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে যা পূর্ববর্তী কোন নবীর উম্মতকে দেয়া হয়নি। তা হলো-
১. রমযানের প্রথম রাতে আল্লাহ তায়ালা তাদের দিকে দৃষ্টি দেন। আর আল্লাহ যার দিকে দৃষ্টি দেন তাকে কখনো শান্তি দেন না।
২. তাদের মুখে যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় তা আল্লাহর নিকট মেশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক প্রিয়।
৩. রমযানের প্রত্যেক দিনে ও রাতে ফেরেশতারা রোযাদারের জন্য দোয়া করে।
৪. আল্লাহ তায়ালা জান্নাতকে বলেন, তুমি আমার বান্দাদের জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও। আমার বান্দারা অচিরেই দুনিয়ারর দুঃখ- কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে আমার বাড়িতে ও আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে এসে বিশ্রাম নিবে।
৫. রমযানের শেষ রাতে আল্লাহ তাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন।" ( বায়হাকী) রোযা শরীরে প্রবাহমান পদার্থ সমূহের মধ্যে ভারসাম্য সংরক্ষণ করে। যেহেতু রোযার দ্বারা মানব দেহের বিভিন্ন প্রবাহমান পদার্থের পরিমান হ্রাস পায় তাই এদের কার্যক্রমে ব্যাপক প্রশান্তির সৃষ্টি হয়। এজন্যই প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রাহ ( রাঃ) বলেছিলেন," তোমরা রোযা রাখ, সুস্থ থাকতে পারবে।" অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মূর পাল্ড দিল বলেন," ইসলাম যদি স্বীয় অনুসারীদেরকে অন্য কিছু শিক্ষা না দিয়ে শুধুমাত্র রোযার ফর্মুলাই শিক্ষা দিত তাহলে এর চেয়ে উত্তম আর কোন নিয়ামত তাদের জন্য হতো না।" বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমল্ড নারাড বলেন," রোযা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ নির্মুল করে।" কুরআনুল কারীমের সূরা বাকারার ১৮৪ নম্বর আয়াতের শেষাংশ এই বিষয়গুলোর দিকেই ইঙ্গিত বহন করে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেম,"অ-ইন তাছুমু খয়রুল্লাকুম ইনকুনতুম তায়ালামুন- আর যদি ( পীড়িত অবস্থায়ও) রোযা রাখ তবে তা বিশেষ কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝতে পারো।" আল্লাহ তায়ালা রোযা রাখার মাধ্যমে গোটা মুসলিম জাহানকে তাঁর সন্তোষ, ভীতি ও মানবতাবোধ অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক ঃ ধর্মীয় গবেষক, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত
আলোচক ও সহকারী সম্পাদক, মানবাধিকার খবর

কোরআন/হাদিস
                                  

আমাদের সামনে এসে গেছে অতি ফজিলতের একটি মাস মাহে শা’বান। প্রিয় নবীজী(সাঃ) এমাসেও দু’আ করতেন যেভাবে রজব মাসেও দু’আ করতেনঃ “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রজব ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাযান।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শা’বান মাসকে বরকতময় করে দিন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌছেঁ দিন। আমীন।” শা’বান মাসে তিনি অকনকগুলো নফল রোজা রাখতেন।

মুসলিম জাতির বিভাজন : উত্তোরণের উপায়
                                  

মাওলানা আবুবকর সিদ্দীক আদ্দাঈ
আজ মুসলিম উম্মাহ শত বিভক্ত। এই বিভক্তির সুযোগে ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদের ধ্বংস সাধনে অধিকতর তৎপর হয়ে উঠেছে। ফলে বিশ্বের দিকে দিকে আজ মুসলমানরা মার খাচ্ছে। পৃথিবীর আকাশ বাতাস মজলুমের আত্ম চিৎকারে অস্থির হয়ে উঠেছে। এ অবস্থা  থেকে মুক্তির প্রয়োজনে দরকার মুসলিম জাতির ইস্পাত কঠিন ঐক্য। যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে রসুল(সঃ)- এর ক র্মপদ্ধতির পূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে। কিন্তু বড়ই পরিতাপ ও লজ্জার বিষয়, মুসলিম সমাজে রসুল (সঃ)- এর কর্মপদ্ধতির পূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণের বড়ই অভাব। এ অভাবই মুসলিম অনৈক্যের মৌলিক কারণ। তাই আজ গোটা মুসলিম বিশ্বে দাউ দাউ করে জ্বলছে অশান্তির আগুন। গোটা মুসলিম উম্মাহ তার মৌলিক দায়িত্ব বিশ্ব মানবতাকে আল্লøাহর পথে আহ্বান ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ পরিত্যাগ করে দ্বীনের কিছু কাজ আঞ্জাম দিয়ে রসুলের সুন্নতকে মেনে চলার দাবি করে আত্ম তৃপ্তি লাভ করছি, আর অপর দিকে রসুলের প্রতিষ্ঠিত জীবন ব্যবস্থা যা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ, তা ধ্বংসের যারা চক্রান্ত চালাচ্ছে তাদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে, বুকে বুক মিলিয়ে চলছি।
মুসলিম ঐক্যের বদলে এই বিভক্তির কারণ কী তা বুঝে নেয়ার সময় এসেছে। আমাদের এ কালে আমরা অধিকাংশ মুসলমানই বিক্ষিপ্ত ভাবে রসুল (সঃ)-এর অনুসরণের কিছু কিছু কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু রসুলের উপরে অর্পিত মূল দায়িত্ব দ্বীনকে বিজয়ী করার কাজ থেকে দূরে অবস্থান করছি। অথচ রসুলের প্রতি আগত কিতাবের প্রতিষ্ঠাই ছিল আমাদের মূল কাজ। এ কথাই ইরশাদ হচ্ছে পবিত্র কালাতুলাহতে-“বলে দিন : হে আহলে কিতাবগণ,  তোমরা কোন পথেই নও, যে পর্যন্ত না তোমরা তাওরাত, ইঞ্জিল এবং যে গ্রন্থ তোমাদের উপরে  তোমাদের পালন কর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে তা সর্বোপরি প্রতিষ্ঠা না কর। (আল মায়েদা- ৬৮)
এই দায়িত্ব পালন করা ছিল মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ কাজ। কিন্তু আমরা আল্লøাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য রসুলের সুন্নত অনুযায়ী অগ্রসর হতে আগ্রহী নই। যে কারণে আমরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি মহব্বত ও দরদ অনুভব করি না। সাহাবায়ে কেরাম রসুলের সুন্নাত অনুযায়ী দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে গেছেন, তাইতো তারা ছিলেন ‘রুহামাউ বাইনাহুম’ -একে অপরের প্রতি ছিলেন বন্ধু প্রতিম। কিন্তু আমরা সাহাবাগণের বৈশিষ্ট্যের কাছাকাছিও নেই। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে বরং আমরা একে অপরকে হেয় করার জন্য ফতোয়াবাজিতে ব্যস্ত। এ জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে উপদলে বিভক্ত সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ মূলক হাদিস- “তোমাদের পূর্ববর্তী কিতাবধারীগণ বাহাত্তরটি দলে বিভক্ত ছিল আর উম্মতেরা তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে এবং একটি দল জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর সেই দলটি হলো জামায়াত। (ইবনে মাজাহ, সুনান, আবওয়াব আল ফিতান) যেখানে মুসলমানদের উচিত ছিল একে অপরের সাধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুন্নাত প্রতিষ্ঠায় আত্ম নিয়োগ, সেখানে এই হাদিসকে ভিত্তি করে তারা একে অন্যকে ভ্রান্ত, ফাসেক এমনকি কাফের ফতোয়া দিয়ে বাহবা কুড়াচ্ছে।
আমরা একজন নাস্তিক বা ইসলামের কট্টর দুশমনকে ততটা দুশমন মনে করি না যতটুকু করছি অন্য এক মুসলমানকে, যিনি আমার দলের অনুসারী হয়ে ঠিক আমার মত জীবন যাপন করছে না। এই যে বিভেদ ও ফতোয়াবাজি, তার মূল কারণই হলো সুন্নতের সঠিক জ্ঞানের অভাব, আর জ্ঞান থাকলেও তার সঠিক বাস্তব প্রয়োগ না থাকা। এই জঘন্য ব্যাধি হতে মুক্তি পেতে সুন্নতের উপরে প্রতিষ্ঠিত আমাদের পূর্ববর্তী মহান ব্যক্তিদের ইতিহাস থেকে সবক গ্রহণ করা দরকার। আসুন, আমরা খোলা মন নিয়ে ইতিহাস ঘেটে সুন্নতের দাবিদারেরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এক দিলের অধিকারী হওয়ার প্রচেষ্টা চালাই।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই “পূর্বেকার বিশেষজ্ঞ আলেমগণ (সালাফ)  থেকে পরবর্তী আলেমগণ (খালাফ) পর্যন্ত তাঁরা যাদের সম্মান ও মর্যাদার পাত্র মনে করতেন তাদের নিষ্পাপ মনে করা তাদের নীতি ছিল না এবং তাদের ইজতেহাদী বিষয়ের মধ্যে কোন জিনিসকে ভ্রান্ত ও ভুল মনে করেছেন তার বিরোধিতায় অবতীর্ণ হওয়া এবং তাঁদের অবদান অস্বীকার করার মনোবৃত্তি তাদের ছিল না। পক্ষান্তরে তাঁরা যে জিনিসকে ভুল মনে করেছেন তাকে যুক্তি প্রয়োগের সাহায্যে প্রত্যাখ্যান করেছেন, কিন্তু কারো ইজহেদী ভুলকে তাঁরা সংশ্লিষ্ট মুজতাহিদের মান-মর্যাদার জন্য কলঙ্কজনক মনে করেননি। তাঁরা ইজতেহাদী ভুলকে ভুলও বলতেন এবং তার সাথে মতভেদও পোষণ করতেন, কিন্তু মুজতাহিদের মান-মর্যাদার প্রতিও লক্ষ্য রাখতেন এবং ইজতেহাদী ভুলের কারণে তাঁর সমস্ত অবদান অস্বীকার করে বসতেন না। ” (রাসায়েল ও মাসায়েল-৩য় খন্ড)
সলফে সালেহীনদের এ ব্যাপারে কেমন আচরণ ছিল, তা থেকে দু’একটি ঘটনা তুলে ধরা হলো।
বাদশাহ হারুণ-অর -রশীদ ছিলেন ইমাম মালেক (রঃ )-এর অনুসারী। ইমাম মালেকের মতে রক্ত প্রবাহিত হলে অজু ভঙ্গ হয় না। তাই একদিন রক্তের চাপ কমানোর জন্য দেহ থেকে রক্ত বের করেছিলেন কিন্তু পরে ওজু না করেই নামাজে ইমামতী করেন। ইমাম ইউসুফ রক্ত  বের হলে ওজু ভঙ্গ হয় বলে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তিনি ইমাম মালেকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তাঁর নিজস্ব ইজতেহাদ লব্ধ জ্ঞান পরিত্যাগ করেন। ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) বাদশাহর ভয় বা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার জন্য নয় বরং ইমাম মালেকের প্রতি শ্রদ্ধার জন্য নিজ ইজতেহাদী জ্ঞানকে ছেড়ে দিতে কুণ্ঠা বোধ করেননি।
আর একটি ঘটনা ইমাম শাফেয়ী (রঃ)-এর জীবনের। ইমাম শাফেয়ী (রঃ )-এর মতে ফজরের নামাজে দুয়া-ই- কুনুুত পড়তে হয় এবং তিনি ও তাঁর মযহাবের অনুসারীরা বছরের সময় সময়ই এভাবে পড়ে থাকেন। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রঃ)- এর ইন্তিকালের পরে তাঁর কবর জিয়ারতে আসেন ইমাম শাফেয়ী (রঃ)। তিনি ফজরের নামাজ ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-এর কবরের পাশেই আদায় করেন। কিন্তু তিনি সে দিন তাঁর নিজস্ব মযহাব অনুযায়ী ফজরে দোয়া -ই- কুনুুত পড়েননি। এ ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তাঁর (ইমাম আবু হানিফার) প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তিনি তাঁর নিজস্ব অভিমত এ জায়গায় পরিত্যাগ করেছেন।
যদিও ইমাম শাফেয়ী (রঃ) ফজরে দোয়া ই-কুনুত পাঠ জরুরি তা হাদিস থেকে প্রমাণ  পেশ করে থাকেন। কিন্তু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত জরুরি আমলটি একজন মৃত ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য তাঁর কবরের পাশে এসে ছেড়ে দিলেন। আর এভাবেই একজন প্রথম শ্রেণির ইমাম তাঁর পরবর্তী অনুগামীদের জন্য সম্প্রীতি বজায় রাখার আদর্শ রেখে  গেলেন।
একের প্রতি অপরের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার ইতিহাস এখানেই শেষ নয়। হজরত ইবরাহিম নখয়ী ও হজরত ইবরাহিম তায়িমী দুইজন ফকিহ ফেকহী মতামতের ব্যাপারে দুই ধরনের মত অবলম্বন করতেন। কিন্তু তাই বলে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের শ্রদ্ধাবোধ ও আন্তরিকতা মোটেও কম ছিল না। তখনকার গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ একটি ব্যাপারে ইবরাহিম নখয়ী (রঃ)-এর উপরে ক্ষেপে গিয়ে তাকে বন্দী করার নির্দেশ প্রদান করেন। গভর্নরের লোকেরা হজরত ইবরাহিম তায়িমীকে ইবরাহিম নখয়ী মনে করে বন্দী করে জেলখানায় আবদ্ধ করে।                                                                                           
                                                                                                                    চলবে-
লেখক ঃ ধর্মীয় গবেষক, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত
 আলোচক ও সহকারী সম্পাদক, মানবাধিকার খবর


কোরআন/হাদিস *হত্যার সম্পকের্*
                                  

"আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে,  প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখম সমূহের বিনিময়ে সমান যখম।
অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গোনাহ থেকে পাক হয়ে যায়।
যেসব লোক আল্লøাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।"- (সূরা আল মায়েদাহ, আয়াত ৪৫)

উক্তি
“হ্যাঁ এবং না কথা দুটো সবচেয়ে পুরনো এবং সবচেয়ে ছোট। কিন্তু এ কথা দুটো বলতেই সবচেয়ে বেশি ভাবতে হয়।”
পীথাগোরাস
“যে নিজেকে অক্ষম ভাবে, তাকে কেউ সাহায্য করতে পারে না।”
জন এন্ডারসন

শিরক ঃ ঈমান ধ্বংসের গুপ্ত ঘাতক
                                  

রব ও ইলাহ হিসাবে আল্লøাহর সহিত আর কাউকে শরীক সাব্যস্ত করার নামই শিরক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়াত তথা ইলাহ হিসাবে আল্লøাহর সাথে শরীক করা হয়। যেমন আল্লøাহর সাথে অন্য কারো নিকট দোয়া করা কিংবা বিভিন্ন প্রকার ইবাদাত যেমন যবেহ, মান্নাত, ভয়, আশা, মহব্বত ইত্যাদির কোন কিছু গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করা। বস্তুত শিরক ঈমান ধ্বংসের এমন এক ঘাতক  যা কখনও কখনও মনের অজান্তেই ঈমান নষ্ট করে দিতে পারে।
নিম্ন লিখিত কারণে শিরক সবচেয়ে বড় গোনাহ্ হিসাবে বিবেচিত:
১. এতে `ইলাহ`- এর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে খালেক তথা সৃষ্টিকর্তার সাথে মাখলুক তথা সৃষ্ট বস্তুর তুলনা করা হয়। কেননা যে ব্যক্তি আল্লøাহর সাথে কাউকে শরীক করলো, সে প্রকারান্তরে তাকে আল্লøাহর অনুরূপ ও সমকক্ষ বলে স্থির করলো। আল্লাহ্ বলেন,
`নিশ্চয়ই আল্লøাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।`[১]
জুলুম বলা হয় কোন বস্তুকে তার আসল জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখা। সুতরাং যে গায়রুল্লøাহর ইবাদত করে, সে মূলত: ইবাদাতকে তার আসল স্থানে না রেখে ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নয় এমন কারো উদ্দেশ্যে তা নিবেদন করে। আর এটা হল সবচেয়ে বড় জুলুম এবং অন্যায়।
২. আল্লøাহ্ তাআলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন, শিরক করার পর যে ব্যক্তি তা থেকে তওবা করবেনা, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ্ বলেন:
`নিশ্চয়ই আল্লাহর তাঁর সাথে শরীক করার পাপ ক্ষমা করেন না। এতদ্ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। `[২]
৩. আল্লাহ্ এও বলেন যে, তিনি মুশরিকদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে। তিনি বলেন:
`নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লøাহর সাথে শরীক করে, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।`[৩]
৪. শিরক সকল আমরকে নষ্ট ও নিষ্ফল করে দেয়। আল্লøাহ্ তাআলা বলেন:
`যদি তারা শিরক করত, তবে তাদের কাজকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেত।`[৪]
আল্লøাহ্ আরো বলেন:
`আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যদি আল্লøাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন।`[৫]
৫. মুশরিক ব্যক্তির রক্ত (তথা প্রাণ সংহার) ও ধন-সম্পদ কেড়েনেয়া উভয়ই হালাল। আল্লøাহ্ তাআলা বলেন:
`অতঃপর মুশরিকদেরকে হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদেরকে বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক।`[৬]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
`আল্লøাহ্ ছাড়া আর কোন হক মা`বুদ নাই, একথা বলা পর্যন্ত লোকজনের সাথে লড়ে যাওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে। অতঃপর যখনই তারা এই বাণী উচ্চরণ করল, আমার হাত থেকে তাদের জান-মাল তারা রক্ষা করে নিল। অবশ্য এ বাণীর দাবী অনুযায়ীকৃত দন্ডনীয় অপরাধের সাজা পেতেই হবে।`[৭]
৬. কবীরা গোনাহসমূহের মধ্যে শিরক সবচেয়ে বড় গোনাহ্।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
`আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম- জ্বী, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা- মাতার অবাধ্য হওয়া।`[৮]
আল্লøামা ইবনুল কাইয়েম বলেন [৯]: আল্লাহ্ জােিয় দিয়েছেন যে, সমস্ত জগতের সৃষ্টি এবং এর উপর কর্তৃত্বের উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহ্ তাআলাকে যেন তার নাম ও গুণাবলীসহ জানা যায়ও শুধু তাঁরই ইবাদত করা হয়। তাঁর সাথে আর কারো শরীক করা না হয়। আর মানুষ যেন নিজেদের মধ্যে ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করে। ন্যায় ও ইনসাফ হলো সেই নিক্তি যদ্বারা আসমান ও জমীন প্রতিষ্ঠত। যেমন আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
`নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। `[১০]
এখানে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছিন যে, তিনি তাঁর রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন এবং স্বীয় গ্রন্থসমূহ নাযিল করেছেন, যাতে মানুষ `ক্বিসত` তথা ইনসাফ হচ্ছে তাওহীদ। বরং তাওহীদ হচ্ছে আ`দল ও ইনসাফের মূল স্তম্ভ। পক্ষান্তরে শিরক হলো স্পষ্ট জুলুম ও অন্যায়। যেমন আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
`নিশ্চয়ই শিরক একটি বড় জুলুম` [১১]
অতএব শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম এবং তাওহীদ হচ্ছে সর্বোত্তম আদল ও ইনসাফ। আর যা বিশ্ব সৃষ্টির এই উদ্দেশ্যের সবচেয়ে বেশী পরিপন্থী, তাই সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ্। এ ব্যাপারে ইবনুল কায়েম আরো বলেন: যখন শিরকই হলো এই উদ্দেশ্যের পরিপন্থী, তাই সর্বতোভাবে এটাই সবচেয়ে  বড় কবীরা গোনাহ্। আল্লাহ প্রত্যেক মুশরিকের উপর জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তার জান-মাল ও পরিবার- পরিজনকে তাওহীদ পন্থীদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। তদুপরি তাদেরকে দাস হিসাবে গ্রহণ করার ও অনুমতি দিয়েছেন, কেননা তারা আল্লাহ্র ইবাদত ও দাসত্বের কাজ আদায় করা থেকে বিরত থেকেছে। আল্লøাহ্ মুশরিক ব্যক্তির কোন কাজ কবুল করতে, আখিরাতে তার ব্যাপারে কোন সুপারিশ গ্রহণ করতে ও তার কোন দোয়া কবুল করতে এবং তার কোন আশা বাস্তবায়ন করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মুশরিক ব্যক্তি আল্লাহ্ সম্পর্কে সবচেয়ে অজ্ঞ। কেননা সে সৃষ্টির কাইকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে। অথচ এ হল চূড়ান্ত অজ্ঞতা এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের জুলুম। যদিও বস্তবিকভাবে মুশরিক ব্যক্তি তার রব আল্লøাহ্ তাআলার উপর জুলুম করেনা। বরং সে নিজের উপরই জুলুম করে থাকে।
৭. শিরক হলো এমন ত্রুটি ও দোষ যা থেকে আল্লাহ্ তাআলা নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করলো, সে আল্লøাহর জন্য ওটাই সাব্যস্ত করলো যা থেকে তিনি নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর তাই শিরক হলো আল্লাহর পরিপূর্ণ নাফরমানী, চূড়ান্ত হঠকারিতা ও তাঁকে কষ্ট দেওয়ারই নামান্তর।
শিরকের প্রকারভেদ
শিরক দুই প্রকার:
১. শিরকে আকরার (বড় শিরক) যা বান্দাকে মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে দেয়। এ ধরণের শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি যদি শিরকের উপরই মৃত্যুবরণ করে, এবং তা থেকে তওবা না করে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ী ভাবে দোজখে অবস্থান করবে।
শিরকে আকবর হলো গায়রুল্লাহ্ তথা আল্লøাহ্ ছাড়া যে কোন ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত আদায় করা, গায়রুল্লাহর উদ্দেশে কুরবানী করা, মান্নাত করা, কোন মৃত ব্যক্তি কিংবা জ্বিন অথবা শয়তান কারো ক্ষতি করতে পারে কিংবা কাউকে অসুস্থ করতে পারে, এ ধরনের ভয় পাওয়া, প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করা এবং বিপদ দূর করার ন্যায় যে সব ব্যাপারে আল্লøাহ্ ছাড়া আর কেউ ক্ষমতা রাখেনা সে সব ব্যাপারে আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো কাছে আশা করা।
আজকাল আওলিয়া ও বুযুর্গানে দ্বীনের কবরসমূহকে কেন্দ্র করে এ ধরনের শিরকের প্রচুর চর্চা হচ্ছে। এদিকে ইশারা করে আল্লাহ্ বলেন:
`তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, কোন উপকার। আর তারা বলে, এরা তো আল্লøাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। `[১২]
২. শিরকে আসগার (ছোট শিরক) শিরক আসগার বান্দাকে মুসলিম মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে দেয়না, তবে তার একত্ববাদের আক্বীদায় ত্রুটি ও কমতির সৃষ্টি করে। এটি শিরকে আকবারে লিপ্ত হওয়ার অসীলা ও কারণ। এ ধরনের শিরক দু`প্রকার:
প্রথম প্রকার: স্পষ্ট শিরক
এ প্রকারের শিরক কথা ও কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
কথার ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
আল্লøাহর ব্যতীত অন্য কিছুর কসম ও শপথ করা। রাসূল সাল্লøাল্লøাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
`যে ব্যক্তি গায়রুল্লার কসম করল, সে কুফুরী কিংবা শিরক করল `[১৩]
অনুরূপভাবে এমন কথা বলা যে, ``আল্লাহ্ এবং তুমি যেমন চেয়েছে``  কোন এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ``আল্লাহ্ এবং আপনি যেমন চেয়েছেন`` কথাটি বললে তিনি বললেন, ``তুমি কি আমাকে আল্লøাহর সাথে সমকক্ষ স্থির করলে? বরং বল, আল্লাহ এককভাবে যা চেয়েছেন। ``[১৪]
আর একথাও বলা যে, ``যদি আল্লাহ্ ও অমুক ব্যক্তি না থাকত" । উপরোক্ত ক্ষেত্রদ্বয়ে বিশুদ্ধ হল নিম্নরূপে বলা- ``আল্লøাহ্ চেয়েছেন, অতঃপর অমুক যেমন চেয়েছে"  ``যদি আল্লাহ্ না থাকতেন, অতঃপর অমুক ব্যক্তি না থাকত" । কেননা আরবীতে (যার অর্থ: তারপর বা অতঃপর) অব্যয়টি বিলম্বে পর্যায়ক্রমিক অর্থের জন্য ব্যবহৃত হয়।
তাই "এবং " শব্দের বদলে "তারপর" কিংবা "অতঃপর শব্দের ব্যবহার বান্দার ইচ্ছাকে আল্লøাহর ইচ্ছার অধীনস্ত করে দেয়। যেমন আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
‘তোমরা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুরই ইচ্ছা করতে পারনা। `[১৫]
পক্ষান্তরে আরবী  যার অর্থ : এবং অব্যয়টি দুটো সত্ত্ব বা বস্তুকে একত্রীকরণ ও উভয়ের অংশীদারিত্ব অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। এদ্বারা পর্যায়ক্রমিক অর্থ কিংবা পরবর্তী পর্যায়ে সংঘটিত অর্থ বুঝা যায়না। যেমন একথা বলা যে, " আমার জন্য তো কেবল তুমি এবং আল্লাহ্ আছ" ও " এতো আল্লøাহ্ এবং তোমার বরকতে হয়েছে"।
আর কাজের ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
যেমন বিপদাপদ দূর করার জন্য কড়ি কিংবা দাগা বাঁধা, বদনজর থেকে বাঁচার জন্য তাবীজ ইত্যাদি লটকানো। এসব ব্যাপারে যদি এ বিশ্বাস থাকে যে, এগুলো বলাথ-মসীবত দূর করার মাধ্যম ও উপকরণ, তাহলে তা হবে শিরকে আসগার। কেননা আল্লাহ্ এগুলোকে সে উপকরণ হিসাবে সৃষ্টি করেননি। পক্ষান্তরে কারো যদি এ বিশ্বাস হয় যে, এসব বস্তু ¯য়ং বালা- মুসীবত দূর করে, তবে তা হবে শিরক আকবর। কেননা এতে গায়রুল্লাহর প্রতি সেই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে যা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।
দ্বিতীয় প্রকার: গোপন শিরক
এ প্রকার শিরকের স্থান হলো ইচ্ছা, সংকল্প ও নিয়্যাতের মধ্যে। যেমন লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রসিদ্ধি অর্জনের জন্য কোন আমল করা। অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এমন কোন কাজ করে তা দ্বারা মানুষের প্রশংসা লাভের ইচ্ছা করা। যেমন সুন্দর ভাবে নামায আদায় করা, কিংবা সদকা করা এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ তার প্রশংসা করবে, অথবা সশব্দে যিকির- আযকার পড়া ও সুকণ্ঠে তেলাওয়াত করা যাতে তা শুনে লোকজন তার গুণগান করে। যদি কোন আমলে রিয়া তথা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত থাকে, তাহলে আল্লøাহ্ তা বাতিল করে দেন। আল্লাহ্ বলেন:
`অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে` [১৬]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লøাম বলেন:
`তোমাদের উপর আমি যে জিনিসের ভয় সবচেয়ে বিশী করছি তা হল শিরকে আসগর। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন:
ইয়া রাসূলুল্লাহ! শিরকে আসগর কি? তিনি বললেন: রিয়া (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করা) [১৭]
পার্থিব লোভে পড়ে কোন আমল করাও এ প্রকার শিরকের অন্তর্গত। যেমন কোন ব্যক্তি শুধু মাল- সম্পদ অর্জনের জন্যেই হজ্জ করে, আযান দেয় অথবা লোকদের ইমামতি করে, কিংবা শরয়ী জ্ঞান অর্জন করে বা জিহাদ করে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
` দীনার, দিরহাম এবং খামিসা- খামিলা (তথা উত্তম পোশক-পরিচ্ছদ- এর যারা দাস, তাদের ধ্বংস। তাকে দেয়া হলে সে সন্তুষ্ট হয়, আর না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। `[১৮]
ইমাম ইবনুল কাইয়েম র. বলেন সংকল্প ও নিয়্যাতের শিরক হলো এমন এক সাগর সদৃশ যার কোন কূল- কিনারা নেই। খুব কম লোকই তা থেকে বাঁচতে পারে। অতএব যে ব্যক্তি তার আমল দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কিছু ও গায়রুল্লাহর কাছে ঐ আমলের প্রতিদান প্রত্যাশা করে, সে মূলতঃ উক্ত আমল দ্বারা তার নিয়ত ও সংকল্প নিয়্যত খালেছ ভাবে আল্লøাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্যে করা। এটাই হলো সত্যপন্থা তথা ইব্রাহীমের মিল্লাত, যা অনুসরণ করার জন্য আল্লøাহ্ তাঁর সকল বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এতদ্ব্যতীত তিনি কারো কাছ থেকে অন্য কিছু কবুল করবেন না। আর এ সত্য পন্থাই হলো ইসলামের হাকীকত।
`কেহ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনও কবুল করা হবেনা এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত। `[১৯]
উপরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বাবে বুঝা যাচ্ছে যে, শিরকে আকবার ও শিরকে আসগারের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে।
সেগুলো হল:
১. কোন ব্যক্তি শিরকে আকবারে লিপ্ত হলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যায়।
পক্ষান্তরে শিরকে আসগারের ফলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয় না।
২. শিরকে আকবরে লিপ্ত ব্যক্তি চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। পক্ষান্তরে শিরকে আসগারে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে গেলে চিরকাল সেখানে অবস্থান করবেনা।
৩. শিরকে আকবার বান্দার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেয়, কিন্তু শিরকে আসগার সব আমল নষ্ট করেনা। বরং রিয়া ও দুনিয় অর্জনের উদ্দেশ্যে কৃত আমল শুধু তৎসংশ্লিষ্ট আমলকেই নষ্ট করে।
৪. শিরকে আকবারে লিপ্ত ব্যক্তির জান-মাল মুসলমানদের জন্য হালাল। পক্ষান্তরে শিরকে আসগারে লিপ্ত ব্যক্তির জান-মাল কারো জন্য হালাল নয়। ঈমান ধ্বংসের এগুপ্ত ঘাতক শিরক থেকে আল্লাহ্ তা’আলা সবাইকে হিফাজত করুন। (আমিন)
তথ্যসূত্রঃ
[১] সূরা লোকমান, ১৩।
[২] সূরা নিসা, ৪৮।
[৩] সুরা মায়ািদা, ৭২।
[৪] সূরা আন আম, ৮৮।
[৫] সূরা যুমার, ৬৫।
[৬] সূরা তাওবা, ০৫।
[৭] বুখারী, মুসলিম।
[৮] বুখারী, মুসলিম।
[৯] আল জাওয়াব আলকাফী,১০৯।
[১০] সুরা হাদীদ, ২৫।
[১১] সুরা লুকমান, ১৩।
[১২] সূরা ইউনুছ, ১৮।
[১৩] তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং হাসান বলেছেন। আর হাকেম একে সহীহ বলে অবহিত করেছেন।
[১৪] নাসায়ী।
[১৫] সূরা তাকবীর, ২৯।
[১৬] সূরা কাহাফ, ১১০
[১৭] আহমদ, তাবারানী, বাগাভী।
[১৮] বুখারী।
[১৯] আলে ইমরান, ৮৫।
লেখক ঃ ধর্মীয় গবেষক, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত
  আলোচক ও সহকারী সম্পাদক, মানবাধিকার খবর




বাইয়াতের ইসলামী দৃষ্টিকোণ
                                  

মাওলানা মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দীক আদ্দাঈ

আল্লাহর তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিজের জান ও মালকে হকপন্থী আমীর বা নেতার নিকট আনুগত্যের শপথের মাধ্যমে আল্লাহর পথে সপে দেয়ার শপথ, ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতির নাম বাইয়াত। সত্যিকার মুসলিম রূপে আত্ম পরিচয় পেশ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

হাদীসের আলোকে বাইয়াতের প্রকার:

রাসূলে করিম (সঃ) এর নবুওয়াতে জিন্দেগির ২৩ বছর পর্যালোচনা করলে অন্তত পাঁচ ধরনের বাইয়াতের প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন:

১. ঈমানী বাইয়াত
২.বিষয় ভিত্তিক বাইয়াত
৩.আমলের বাইয়াত
৪.আনুগত্যের বাইয়াত
৫. জিহাদের বাইয়াত

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাইয়াতের প্রয়োজনীয়তা:

মুসলিম সমাজ আজ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন । একতার অভাব সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে । সর্বত্র মতবিরোধ আর গোলযোগে ভরপুর । মানবতার ভয়ঙ্কর আর্তনাদ ভারী করছে আকাশ-বাতাস । বিশ্ব জুড়ে মানবতাবাদীদের মানবতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে চলছে মুসলিম নির্মুলের পায়তারা। আমরা ভুলতে বসেছি বংশগত মুসলমান আর প্রকৃত মুসলমান এক নয়। ইচ্ছা-অনিচ্ছা জানা-অজানা অবস্থায় আমাদের জীবনের সাথে মিশে গিয়েছে শিরক আর বিদয়াত। এমত অবস্থায় নিজেদের ঈমানকে পরিপুষ্ট এবং বাস্তব জীবন থেকে কর্ম বৈষম্য দূরীভূত করতে এক জন হকপন্থী নেতার নিকট জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলার অঙ্গীকার করা ধ্বংসের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পেতে ঈমানের দাবি ।

আজ সমস্বরে গোটা মুসলিম মিল্লাতের পড়ে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন "বলো, নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ, সব কিছু বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তা’য়ালার জন্য।" (সূরা-আনয়াম: ১৬২)

বাইয়াত কার নিকট হতে হবে :

কুরআন-সুন্নাহের কোন বক্তব্যই একাকী বাইয়াতকে সমর্থন করে না। বরং বাইয়াত সংক্রান্ত সকল হাদীস এবং আয়াতে কারীমা কোন নেতা বা আমীরের নিকট বাইয়াত করাকে ইঙ্গিত করে। যেমন বাইয়াতে রিদওয়ানের ব্যাপারে মহান আল্লøাহর বাণী " হে রাসূল (সঃ) যে সব লোক আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল তারা আসলে আল্লøাহর নিকটই বাইয়াত হচ্ছিল। তাদের হাতের ওপর আল্লাহর কুদরতের হাত ছিলো। (সূরা আল ফাতহ: ১০)

এ আয়াতে কারীমায় নবী (সঃ) এর নিকট বাইয়াত করার কথাই বলা হয়েছে । যেহেতু নবী করিম (সঃ) আমাদের মাঝে নেই সেহেতু তাঁর আদর্শের ধারক-বাহক কোন আমীরের নিকট বাইয়াত হওয়াটাই যুক্তিবহ।

নবী করিম (সঃ) ইমাম মাহদীর হাতে বাইয়াত হওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, "তোমরা যখন তাদেরকে দেখতে পাবে তখন তাদের নেতার হাতে বাইয়াত করবে।" (কিতাবুল ফিতান " ইবনে মাজাহ)

সুতরাং বাইয়াত যে হকপন্থী আমীর বা নেতার নিকট করতে হবে তা সুস্পষ্ট ।

বাইয়াত শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী :

১. বাইয়াত অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহের আলোকে হতে হবে । বাইয়াতের রীতি -পদ্ধতি বিষয়বস্তু নবী করিম (সঃ) এর দেখানো পথে হওয়া বাঞ্চনীয়।
২. নবী করিম (সঃ) এর আদর্শের ধারক- বাহক কোন আমীর বা নেতার নিকট হতে হবে।
৩. বাইয়াতের ওয়াদাকৃত বিষয় বস্তুর সাথে কাজের মিল থাকতে হবে। অর্থাৎ বাইয়াত কৃত বিষয়ের ওপর অটুট থাকা অপরিহার্য ।

হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লøাহ্ ( স:) এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেছি শ্রবণ ও আনুগত্যের ব্যাপারে এবং এটা স্বাভাবিক অবস্থা, কঠিন অবস্থা, আগ্রহ ও অনাগ্রহ সর্বাবস্থার জন্য প্রযোজ্য ।

আমরা আরো বাইয়াত গ্রহণ করেছি যে, যে কোন ব্যাপারে আমীরের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবো না এবং সর্বাবস্থায় সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবো এ ব্যাপারে কোন তিরস্কার কারীর তিরস্কারকে পরোয়া করবো না। (নাসায়ী )

এই হাদীসের আলোকে বাইয়াতের দাবি আমাদের নিকট দৃশ্যমান হয়।

"বাইয়াত বিহীন মৃত্যু জাহেলিয়াতের নামান্তর"- হাদীসটির ব্যাখ্যা :

হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা:) রাসূলে করিম (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন "যে ব্যক্তি বাইয়াতের রজ্জু গলদেশে ঝুলানো অবস্থা ছাড়া মারা যাবে তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু।" (মুসলিম ) অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামদের মতে, হাদীসটি মূলত ঈমানী বাইয়াতের সাথে সম্পৃক্ত, যে বাইয়াতের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি ঈমানদারের কাতারে গণ্য হয়। সকল আমল কবুলিয়াতের প্রধান শর্ত হলো ঈমান। আর ঈমানী বাইয়াত আল্লাহ তায়ালাকে রব (প্রভু, প্রতিপালক, বিধানদাতা, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক) এবং নবী (সঃ) কে তাঁর মনোনীত রাসূল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) এর আনুগত্যের মধ্যে প্রবেশ করলো না নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করলে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বা ইসলাম বিমুখ বেঈমানের মৃত্যু হিসেবে পরিগণিত হবে।

লেখক ঃ ধর্মীয় গবেষক, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত
আলোচক ও সহকারী সম্পাদক, মানবাধিকার খবর

নারী অধিকারের স্বরূপ বিশ্লেষণ প্রেক্ষিতঃ ইসলাম ও আধুনিক সভ্যতা
                                  



মাওলানা মোহাম্মদ আবুবকর সিদ্দীক আদ্দাঈ

পূর্ব প্রকাশের পর ...একজন নারী নবী (স:) এর দরবারে এসে নিবেদন করে বলল, আমার পিতা তার সামাজিক মর্যাদা রক্ষার জন্যে আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু এতে আমি সন্তুষ্ট নই। মহানবী তাকে বললেন, “তোমার ইচ্ছা হলে বিয়ে বহাল রাখতে পার অথবা বাতিল করেও দিতে পার।”(আহমদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

এ থেকে বুঝা যায় মহানবী (স:) শুধু নারী সম্পর্কে পুরুষের নয় বরং নারীরও মনোবৃত্তির প্রতিফলন ঘটাতে পূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্যের অধিকার দিয়েছেন। ইসলাম একজন নারীকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার অধিকার ও স্বাধীনতা যেমন দিয়েছে, তেমনিভাবে দিয়েছে বিশেষ প্রয়োজনে বিবাহ বিচ্ছেদের স্বাধীনতা ও অধিকার। তবে তালাক পেতে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী বা আদালতের নিকট তালাকের আবেদন করার বিধান রাখা হয়েছে। বিবাহের পরে নির্যাতিত জীবন যাপনে শরীয়ত কখনো তাকে বাধ্য করেনি। স্বামী তাকে জুলুম নির্যাতন করবে, তার অধিকার চূর্ণ-বিচুর্ণ করে তাকে জীবিকা নির্বাহের উপকরণ থেকে বঞ্চিত রাখবে, তার ইজ্জত সম্মানের হানী ঘটাবে এর পরও স্ত্রী তা নিরবে সহে যাবে এমন কোন বাধ্য-বাধকতা ইসলামে নেই। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সামান্য কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো যাবে। যেমনটি পাশ্চাত্য সমাজে আমরা দেখতে পাই। রাসূলে করিম (স:) এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।“যে নারী অকারণে তার স্বামীর নিকট তালাক চাইবে, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণও হারাম হয়ে যাবে।” (মিশকাত)

বিবাহবিচ্ছেদের শরীয়ত অনুমদিত কারণসমূহ হলো: ১. খেয়ারে বুলুগ তথা নাবালেগ অবস্থায় কোন মেয়েকে বিয়ে দেয়া হলে বালেগা হওয়ার পর বিয়ে ঠিক রাখা বা না রাখার ইখতিয়ার, ২. কুফু বা সমতা না হওয়া, ৩. স্বামী নিখোঁজ বা উধাও হওয়া, ৪. স্বামী পাগল হওয়া, ৫. স্বামীর নপুংসকতা বা পুরষত্বহীনতা, ৬. স্বামী শ্বেত রোগী বা কুষ্ঠ রোগী হওয়া, ৭. স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে খোরপোষদানে অক্ষমতা বা খোরপোষদানের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও না দেয়া, ৮. ইসলাম স্ত্রীকে যেসব অধিকার দিয়েছে তা স্বামী কর্তৃক লঙ্ঘিত হওয়া, ৯. নির্যাতন করা, ১০.স্বামীর ফাসেকী কর্মকা-ে লিপ্ত থাকা, যেমন মদ্যপ বা নেশাখোর হওয়া যা স্ত্রীর ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ১১. শরীয়ত বিরোধী কাজে স্ত্রীকে বাধ্য করা, ইত্যাদি। (ইসলাম মে আওরাত কা মাকাম)

এছাড়া, ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের ৩২৩ ধারায় স্বামীর চার বছর ধরে নিখোঁজ থাকা, দুই বছর ধরে স্ত্রীর ভরণ পোষণের ব্যর্থতা এবং স্বামীর ্ওপর সাত বছরের কারাদ-ের আদেশকে বিবাহ বিচ্ছেদের ঐচ্ছিক কারণ হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিন্ন আইনের অধিকারঃ প্রাচীন ধর্মগুলো নারীকে নগণ্য কর্ম মর্যাদা এবং পুরুষকে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী মনে করে পৃথক আইন রচনা করেছিলো। কিন্তু ইসলামে নারী-পুরুষের মর্যাদা সমান এবং তাদের জন্য অভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে: পুরুষ যেমন কাজ করবে তেমনি ফল পাবে এবং নারী যেমন কাজ করবে ঠিক তেমনি তার ফল লাভ করবে। আরও বলা হয়েছে,“ চোর পুরুষ হোক বা নারী উভয়কে হাত কেটে দাও।”(সূরা আল মায়েদা: ৩৮ ) অর্থাৎ নারী যদি এমন অপরাধ করে যা সাধারণ আইনে দ-নীয় তবে সে পুরুষের সমান শাস্তিই পাবে। বিচারের ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয় নি। জারীকৃত আইনের একটি ধারা হচ্ছে, “স্ত্রীলোকের হত্যাকারী কোন পুরুষ হলে শাস্তি স্বরূপ তাকে হত্যা করা হবে।” অর্থাৎ সমস্ত ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমান আইন প্রযোজ্য।

মত প্রকাশ ও পরামর্শের অধিকারঃ একজন পুরুষ যেমন শরীয়তের সীমারেখার ভিতরে থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রাখে, এমনিভাবে একজন মহিলারও অধিকার আছে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে তার মত প্রকাশের। চাই ধর্মীয় ব্যাপার হোক বা পার্থিব ব্যাপারে। রাসূলে করিম (স:) এর সম্মুখে মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সব সাহাবাই স্বাধীন ভাবে প্রশ্ন করার ও মত প্রকাশের সুযোগ পেতেন। তাই ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সমাজ জীবনের বিভিন্ন ব্যাপারে মেয়েদের অভিমত ও হৃদয়াবেগ প্রকাশের অবাধ অধিকার রয়েছে। এটা তারা মৌখিকভাবে বা লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে। নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে এই মত প্রকাশের অধিকার তাদের রয়েছে। হযরত হাসান বসরী (র:) বলেছেন, নবী (স:) মেয়েদের সাথেও পরামর্শ করতেন এবং কোন কোন সময় তাদের অভিমত গ্রহণ করতেন। মহানবী (স:) বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নারীদের মতামতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির একটা শর্ত ছিল যে, এই বছর মুসলমানরা উমরা না করেই ফিরে যাবে। তাই রাসূল (স:) সকলকে মাথা মু-ন করতে এবং নিয়ে আসা পশুগুলোকে জবাই করার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু সাহাবাগণ যেহেতু এই সন্ধির শত দেখে মর্মাহত হয়েছিলেন, সে কারণে তারা কেউ এই নির্দেশ পালনে কোন তৎপরতাই দেখালেন না। এরূপ অবস্থা রাসূল (স:) হযরত উম্মে সালমা (রা:) এর নিকট প্রকাশ করলে তিনি সাহাবাদের মনস্তত্ব লক্ষ করে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা সহকারে পরামর্শ দিলেন যে, আপনি এর পর আর কাউকে কিছু না বলে যা কিছু করার নিজেই অগ্রসর হয়ে করে ফেলুন। দেখবেন, সকলেই আপনার দেখাদেখি সব কাজই করবে। রাসূল (স:) এই পরামর্শ সানন্দে গ্রহণ করলেন এবং যখনই তিনি করণীয় সব কাজ করলেন সাহাবায়ে কেরামরাও তাঁর অনুসরণ শুরু করে দিলেন। এভাবে হযরত উম্মে সালমার(রা:) যথার্থ ও সুচিন্তিত পরামর্শ উপস্থিত অচলাবস্থা দূর করাতে সক্ষম হল এবং বাস্তবে প্রমান করে দিল যে, মহিলাদেরও যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি আছে এবং তাদের পরামর্শ জাতীয় জীবনে অনেক সমস্যারই সমাধান করতে সক্ষম।

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের নিকট অবশ্যই দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হবে যে, অন্যান্য ধর্ম এবং আধুনিক সভ্যতার তুলনায় ইসলামই সর্বাধিক নারী অধিকার নিশ্চিত করেছে। বাস্তবিক অর্থে ইসলাম বর্ণিত নারী অধিকার সমূহ যদি আমাদের সমাজে বাস্তবায়িত হত তবে নারী জাতির জন্য এর থেকে কল্যাণ দায়ক আর কিছুই হতো না। সমাজের সর্বস্তরে ইসলাম বর্ণিত নারী অধিকার সমূহ নিশ্চিত হোক এ প্রত্যাশা রেখে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
...সমাপ্ত

লেখক: ধর্মীয় গবেষক, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত আলোচক ও সহকারী সম্পাদক, মানবাধিকার খবর

ঈদ-উল্ ফিতর ঃ জয় হোক মানবতার
                                  


শান্তি আর মানবতার বাণী নিয়ে ধরায় আসে পবিত্র ঈদ। ভ্রাতৃত্বের মোহনী সুরে ডেকে যায় বারংবার। উন্মোচিত হয় সৌহার্দ আর সম্পৃতির দ্বার। প্রবাহিত হয় খুশির জোয়ার। আনন্দের বন্যা বয়ে যায় সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
ঈদ-উল ফিতর উৎসব হিসেবে যেমন আনন্দের তেমনি তাৎপর্যের। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ আর মাৎসর্য এই ষড়রিপুগুলোকে নিয়ন্ত্রণের অদম্য বাসনা নিয়ে এবং আত্মগঠন ও জাতি গঠনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিম বিশ্ব পালন করে ঈদ-উল ফিতর।
ঈদ-উল-ফিতর সর্বাধিক অর্থবহ একটি মহান দিবস। আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা আর ভালোবাসায় ভরপুর এক স্বর্গীয় পরশ। যা পাপ পঙ্কিল সমাজ থেকে স্বার্থপরতার মূলোচ্ছেদ ঘটিয়ে শান্তিময় সমাজ ও দেশ গড়তে উৎসাহ প্রদান করে। প্রতি বছর ঈদ আসে ধনী-দরিদ্রের আকাশ-পতাল প্রভেদ দূরীভূত করতে সাম্য ও অধিকারের মহান শিক্ষা নিয়ে। ঈদ-উল্ ফিতরের প্রাক্কালে এক মাস রোজা রাখার বিধান দিয়ে ইসলাম তার অনুসারীদের এই মহান শিক্ষাই দেয় অনাহারে থাকা ক্ষুধার যন্ত্রণা কত বেদনার; কত নিস্পৃহ।
কিন্তু এই রোজা বা ঈদ থেকে আমরা কতটুকু শিক্ষা নিজেদের চরিত্রে লালন করতে পারি এটাই ভাবনার বিষয়। আমরা কি পেরেছি অন্নহীন-বস্ত্রহীন মানুষের দুঃখ বুঝে তাদের মুখে খাবার কিংবা শরীরে বস্ত্র তুলে দিতে? আজও অনাহারে অর্ধাহারে অগণিত মানুষ হাত পাতছে অন্যের দ্বারে।
ঈদের ছুটিতে শহরের লাখ লাখ মানুষ পাড়ি জমায় গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু বাড়ী যাবার পূর্বে ফুতপাতে যে হত দরিদ্র মানুষকে অন্ন-বস্ত্রহীন দেখেছিল তার খবর কে রাখে। একবারও কি ঈদ আয়োজনের অর্থ থেকে তাদের জন্য হয়েছে কোন বরাদ্ধ?
নির্বাচন এলে প্রার্থীদের কত অঙ্গীকার! ঈদের ব্যানার ফেস্টুনে সে দৃশ্য কম নয়। কিন্তু সে অঙ্গীকার পূরণে বাস্তবতা কতটুকু? শিল্পপতি, ধনবান, রাজনীতিবদদের কেউ কেউ বিতরণ করেন যাকাতের শাড়ি কিংবা লুঙ্গি। আর তা আনতে গিয়ে পদপৃষ্ঠ হয়ে প্রাণ হারানোর নির্মম ঘটনা শুনিনি এমন নয়। যাকাত গরিবের প্রতি ধনীর করুণা নয় বরং ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার। বাংলাদেশ দারিদ্র্য প্রধান দেশ। তারপরেও এদেশের কিছু কিছু বিত্তবানদের বিদেশী ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাদ দিলাম সে কথা। শুধুমাত্র এ দেশের ব্যাংকে যে পরিমান টাকা জমা আছে তা থেকে যদি যাকাত প্রদান করা হয় তাহলে এক বছরের যাকাতের অর্থ দিয়ে এ দেশের হত দরিদ্র মানুষেরা পাঁচ বছর চলতে পারবে সুতরাং ৮৯.৭% মুসলমানের এ দেশে যাকাতের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ কাজ থেকে আমরা আছি অনেক দূরে।
ঈদ যে ভ্রাতৃতের শিক্ষা দেয় তা আমরা নিজেদের জীবনে কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেবেছি? পবিত্র করআনের ভাষ্য “ইন্নামাল মু’মিনুনা ইখওয়া-নিশ্চয়ই মুমিন মুসলমানেরা ভ্রাতৃ সম্পর্কীয়।” হাদিস শরিফে বলা হয়েছে মুসলমানেরা একটি দেহের ন্যায়।’ শরীরের একটি অংশ কাটলে যেমন সমগ্র শরীরে ব্যথা অনুভূত হয় তেমনি পৃথিবীর কোন প্রান্তে একজন মুসলমান নির্যাতিত হলে কিংবা কষ্ট পেলে গোটা মুসলিম জাতি তার পাশে এসে দাড়াবে। তাহলে, আরকানের রোহিঙ্গা মুসলমানরা কি আমাদের ভাই নয়? যদি তাই হতো তবে অথৈ সমুদ্র মাঝে অজানা পথে আমরা তাদের ছেড়ে দিতাম! আমরা তাদেরকে বলতাম ঠাঁই হবে না এদেশের বুকে! অবশ্যই না। বরং আমাদের মুখ থেকেই বেরিয়ে যেত- “আয় ভাই আমাদের বুকে, থাক আমাদের সাথে”
আজ পৃথিবীতে অর্ধশত মুসলিম দেশ রয়েছে। রয়েছে প্রায় দুইশতকোটি মুসলমান। আছে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, কোথায় সেই ওআইসি? তারা কি দায়িত্ব মুক্ত মিয়ানমার, ইরাক, সিরিয়া, মিশরে মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো থেকে!
ঈদের শিক্ষা নৈতিকতার অবক্ষয় নয়। রমজানের রোজা আমাদেরকে শিখিয়েছিলো  কুপ্রবৃত্তি পরিহার করে নৈতিক পদস্খলন থেকে দূরে থাকতে, খোদাভীতির চেতনা বাস্তব চরিত্রে লালন করতে। আমরা কি পেরেছি? তাহলে কেন ঘটছে নারীর শীলতাহানী ? এক সময় প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ জাতীয় ঘটনার অবতারণায় আমরা শিউরে উঠতাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ সেই ঘটনাগুলোকেও যেন হারাতে বসেছি। চলছে শয়তানি, নোংড়ামি, আর বদরামির প্রতিযোগিতা। মাইক্রোতে, বাসে, ট্রাকে এমনকি নৌকায়ও ঘটছে এমন ঘটনা। জলপথ আর স্থলপথ শেষ; এখন অবশিষ্ট শুধু আকাশপথ। হতভাগ্য লম্পটগুলোর হাত থেকে জানিনা সে পথটিও রক্ষা পাবে কি না! অথচ ইতিহাস বলে, ঈদ ও রোজার প্রকৃত শিক্ষা মুসলমানেরা যখন ধারণ করেছিল তখন উন্মুক্ত হয়ে কোন নারী হেটে গেলেও কেউ তার দিকে ফিরে তাকাতো না। দল-মত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জীবনে নেমে এসেছিল শান্তির ছায়া। সুখে-দুঃখে, জীবনে-মরনে এক সাথে ছিল তাদের প্রতিটি কাজ।
হায়! আজ আমরা কোন পথে?
ঈদের জামাতে কী চমৎকার দৃশ্য! একসাথে দাঁড়ানো, একসাথে বাসা, একসাথে সিজদা আর কোলাকুলি। যা আমাদের শিক্ষা দেয় শৃঙ্খলাপূর্ণ শান্তিময় সমাজ গঠনে। কিন্তু পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র আমাদের ভূমিগুলো গোলযোগে ভরপুর। প্রতি মূহুর্তে ঘটছে রক্তক্ষয়। কখনও শিয়া-ছুন্নির দ্বন্দ্ব, কখনো রাজনৈতিক সংঘাত। চলছে দুর্বলদের ওপর সবলদের অত্যাচার। ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে আমরা অনেক দূরে। তাইতো আজ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছে মানবতা। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে “তোমরা পরস্পর সংঘবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে আকড়ে ধরো এবং বিচ্ছিন্ন থেকো না।”
(সূরা আলে ইমরান-১০৩)
নবী করিম (স) বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছিলেন, “আমি তোমাদের নিকট রেখে যাচ্ছি দুটি নির্দেশনামা, তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না যদি এই দুটো জিনিসকে মেনে চলতে পার। এক-আল্লাহর কিতাব কুরআন আর দুই-আমার সুন্নাহ-রীতি পদ্ধতি।”
জানিনা কবে শুভবোধদয় হবে বিশ্ব মুসলিমের। ঈদের শিক্ষা আকড়ে ধরার মাধ্যমে ফিরে আসবে মানবতা। আরকানে রোহিঙ্গাদের জীবনে আসবে সোনালী দিন আর বিশ্ব জুড়ে বন্ধ হবে মানবাধিকার লঙ্ঘন।
সমাগত ঈদে এই প্রত্যাশা রেখে শেষ করেছি- ঈদ-উল-ফিতর জয় হোক মানবতার।
লেখক ঃ ধর্মীয় গবেষক, জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত আলোচক ও সহকারী সম্পাদক, মানবাধিকার খবর

নামাজে বিনয়াবনত মানুষই সফল ও সৌভাগ্যবান
                                  

মাধ্যম হলো- নামাজ

 

নামাজ মুসলমানদের জন্য অবশ্য পালনীয় ফরজ ইবাদত। নামাজ শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আদায় করতে হবে। নবী করিম (সা.) এ প্রসঙ্গে বলেন, নামাজ ইসলামি বিধি-বিধানের অংশ এবং এই নামাজের মধ্যেই রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি।

 

একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা) মসজিদে নববীতে বেশ প্রফুল্লচিত্তে উপস্থিত হয়ে সাহাবিদের সামনে নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে পাওয়া সুসংবাদ তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, তোমরা কি জানো আল্লাহতায়ালা নামাজিদের জন্য কি সুসংবাদ দিয়েছেন? উপস্থিত সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন, আমরা শোনার জন্য প্রস্তুত। 

তখন নবী করিম (সা.) আল্লাহতায়ালার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায় করবে এবং নামাজের যত্ন নেবে ও এই অবস্থায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, আমি তাকে বেহেশতে প্রবেশের ওয়াদা দিচ্ছি। আর যে নামাজ আদায় করবে না, তার সম্পর্কে আমার এ ধরনের কোনো ওয়াদা নেই। আমি চাইলে তাকে শাস্তি দেব অথবা ক্ষমা করবো। 

এই সুসংবাদ শোনার পর মুসলমানদের চোখ থেকে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়লো এবং এই নেয়ামতের জন্য তারা কৃতজ্ঞতা জানালো মহান আল্লাহর প্রতি। এরপর সবাই আরও সুশৃঙ্খলভাবে ও বেশি উদ্দীপনা নিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করলো এবং নামাজের প্রতি আরও যত্নবান হলো।

উল্লেখিত হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহতায়ালা নামাজিকে কতো বেশি ভালোবাসেন। নামাজ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির অংশ ও সবচেয়ে সেরা ইবাদত বলে অন্য অনেক ইবাদতের চেয়ে এর পুরস্কার অনেক বড়। 

আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সংযোগের সুনিশ্চিত পথ এবং আত্মাকে উন্নত করার মাধ্যম হলো- নামাজ। এই উন্নত ইবাদতের ইতিবাচক শিক্ষা নামাজির মন-মানসিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে এবং সবচেয়ে উন্নত গুণবালীর সমাবেশ ঘটে তার মধ্যে। ইসলামে নামাজের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়ার অন্যতম কারণ এটাই। 

‘বিশ্বাসীরা অবশ্যই সফলকাম, যারা বিনয়াবনত তাদের নামাজে’ –সূরা মুমিনুন 
পবিত্র কোরআনের সূরা আহকাফের ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, প্রত্যেকের মর্যাদা তার কর্মানুযায়ী, এটা এ জন্য যে আল্লাহ প্রত্যেকের কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না।’

একজন নিষ্ঠাবান নামাজি সুখে ও দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রেমে মত্ত থাকেন এবং তারই সাহায্য কামনা করেন। আল্লাহতায়ালাও তার বিনম্র ও ভীত-বিহ্বল বান্দাদের জন্য নিজ রহমতের অসীম দিগন্ত খুলে রাখেন। 

অবশ্য প্রকৃত নামাজিরা পুরস্কারের আশায় বা দোজখের শাস্তির ভয়ে নামাজ আদায় করেন না। তারা একমাত্র আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয়েই নামাজ পড়েন। আল্লাহর স্মরণ তাদের অন্তরকে সজীব করে এবং তারা মহান আল্লাহর নৈকট্যের সুবাদে ব্যাপক কল্যাণের অধিকারী হন। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিফল বৃথা যেতে দেন না। আর তাই তিনি সৎকর্মশীল ও নামাজিদেরকে ব্যাপক নেয়ামত ও পুরস্কার দান করে থাকেন।

নামাজিদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার হলো- তাদেরকে নিজের নৈকট্য প্রদান। পবিত্র কোরআনের সূরা আলাকে আল্লাহতায়ালা নবী করিমকে (সা.) তার (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের জন্য নামাজ ও সিজদা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহর নেয়ামতগুলোর মধ্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভ একটি তুলনাহীন ও অমূল্য নেয়ামত। আর এ নৈকট্য নামাজের মাধ্যমে অর্জিত হয়। 

নামাজ এমন এক সৌভাগ্যের পরশমনি যা মানুষের অন্তরাত্মায় গভীরে প্রভাব ফেলে তাকে আধ্যাত্মিক গুণাবলী ও পরিপূর্ণতার সৌন্দর্য্যময় শিখরে উন্নীত করে। এ অবস্থায় বান্দাও আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালাও এমন ব্যক্তির ব্যাপারে সূরা ফজরের শেষ আয়াতে বলেছেন, ‘হে প্রশান্ত চিত্ত! তোমার প্রতিপালকের দিকে ফিরে আসো এমন এক অবস্থায় যখন তুমি তার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনিও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। এরপর আমার দাসদের অন্তর্ভুক্ত হও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।’

সৌভাগ্যের অর্থ হলো- মানুষের আত্মার উন্নতি। মানুষ সঠিক-সরল পথে চলে আন্তরিক চিত্তে ইবাদত ও সৎকর্ম করার মাধ্যমে চিরন্তন সৌভাগ্য এবং মুক্তি অর্জন করতে পারে। নামাজ অসচেতন মানুষকে সচেতন করে এবং তাকে মুক্তি ও সৌভাগ্যের পথ দেখিয়ে দেয়। আল্লাহতায়ালা সূরা মুমিনুনের প্রথম আয়াতে এ বিষয়ে ইরশাদ করেন, ‘বিশ্বাসীরা অবশ্যই সফলকাম, যারা বিনয়াবনত তাদের নামাজে।’


   Page 1 of 2
     ইসলাম
আশুরার মর্মকথা ঃ করণীয় ও বর্জনীয় আমল সমূহ
.............................................................................................
আজ পবিত্র হজ : লাব্বাইক ধ্বনিতে আরাফার পথে হাজিরা
.............................................................................................
দুবাই আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানাল
.............................................................................................
ইসলাম প্রচার পরিষদের ডায়েরী ও ক্যালেন্ডার বিতরণ সম্পন্ন
.............................................................................................
পর্ণগ্রাফীর খারাপ দিকগুলি ও বাঁচার উপায়
.............................................................................................
দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহনে ইসলাম প্রচার পরিষদের ইফতার মাহফিল
.............................................................................................
কোরআন/হাদিস
.............................................................................................
ধর্মচিন্তা রোযাঃ আল্লাহ ভীতি ও মানবতাবোধের মহান দীক্ষা মাওলানা আবুবকর সিদ্দীক আদ্দাঈ
.............................................................................................
কোরআন/হাদিস
.............................................................................................
মুসলিম জাতির বিভাজন : উত্তোরণের উপায়
.............................................................................................
কোরআন/হাদিস *হত্যার সম্পকের্*
.............................................................................................
শিরক ঃ ঈমান ধ্বংসের গুপ্ত ঘাতক
.............................................................................................
বাইয়াতের ইসলামী দৃষ্টিকোণ
.............................................................................................
নারী অধিকারের স্বরূপ বিশ্লেষণ প্রেক্ষিতঃ ইসলাম ও আধুনিক সভ্যতা
.............................................................................................
ঈদ-উল্ ফিতর ঃ জয় হোক মানবতার
.............................................................................................
নামাজে বিনয়াবনত মানুষই সফল ও সৌভাগ্যবান
.............................................................................................
সৌম্যকে আরেকটি সুযোগ দিতে চান কোচ চন্ডিকা হাতুরুসিংহ
.............................................................................................
ব্যাটসম্যানদের নিয়ে আলাদা মিটিং করলেন হাথুরুসিংহে
.............................................................................................
জাতীয় শাটলাররা লাঞ্ছিত
.............................................................................................
বিপিএল উপস্থাপনায় আমব্রিন ও শিনা
.............................................................................................
ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য পছন্দের ক্রিকেটার ডেকেছেন সাকিব আল হাসান
.............................................................................................
মানুষ মানুষের জন্য বন্যা দূর্তদের সহায়তায় এগিয়ে এলেন মাশরাফি-সুমন
.............................................................................................
অলিম্পিক পদক বিক্রি ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুকে বাঁচাতে সহায়তায় অলিম্পিয়ান
.............................................................................................
অভিমানেই অধিনায়কত্ব ছাড়লেন মুশফিক ?
.............................................................................................
ফেসবুকে তামিমের দুঃখ প্রকাশ
.............................................................................................
‘আরো অনেক বড় হোক, সুনাম বৃদ্ধি করুক’ মুস্তাফিজের একদিনের ইফতারে আড়াই লাখ টাকা খরচ
.............................................................................................
লক্ষ কোটি ভক্তকে আশাহত করে কোপা থেকে ব্রাজিলের বিদায়
.............................................................................................
আইপিএলে হায়দরাবাদ চ্যাম্পিয়ন সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় মুস্তাফিজ
.............................................................................................
আইপিএল নিয়ে জমজমাট জুয়া বাংলাদেশে
.............................................................................................
সংবর্ধিত হলো স্বর্ণকন্যারা
.............................................................................................
মুস্তাফিজের একটি বলে ৫ ধরনের গুণাবলী!!!!!
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308
    2015 @ All Right Reserved By manabadhikarkhabar.com    সম্পাদকীয়    আর্কাইভ

   
Dynamic SOlution IT Dynamic POS | Super Shop | Dealer Ship | Show Room Software | Trading Software | Inventory Management Software Computer | Mobile | Electronics Item Software Accounts,HR & Payroll Software Hospital | Clinic Management Software Dynamic Scale BD Digital Truck Scale | Platform Scale | Weighing Bridge Scale Digital Load Cell Digital Indicator Digital Score Board Junction Box | Chequer Plate | Girder Digital Scale | Digital Floor Scale