করোনায় পর্যটন খাতে বেহাল দশা
মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিপর্যস্ত দেশের পর্যটন খাত। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এ খাতের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৪০ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। আর টানা কয়েক মাসে এ খাতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়। গত তিন মাসে দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকার হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পর্যটন খাতের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। খাতটি কবে নাগাদ চাঙ্গা বা স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত।
পর্যটন খাত নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, ‘আমরা টোয়াবে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মচারীকে ছাঁটাই করিনি। তবে কোনো কাজও আমরা করতে পারছি না। কোনো ভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি।’
পর্যটন খাতের সঙ্গে ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল-মোটেল ছাড়াও পর্যটন স্থানকেন্দ্রিক নানা ব্যবসা জড়িত। আর এ মানুষদের সামনে এখন ঘোর অমানিশা। স্থানীয় ১ কোটি পর্যটক ছাড়াও বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বর্তমানে দেশের পর্যটন স্পটগুলোয় নেই পর্যটকের আনাগোনা। মার্চে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলো একরকম বন্ধ রয়েছে।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে সার্বিক পর্যটন শিল্পে ৯ হাজার ৭০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৩ লাখ ৯ হাজার ৫০০ জন চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ হিসাব করোনা সংক্রমণের আগে থেকে হওয়ায় টোয়াবের পরিমাণের থেকে কিছুটা বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পর্যটননগর সিলেটে পর্যটনের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১০ হাজার মানুষ করোনার জন্য বর্তমানে বেকার জীবন যাপন করছেন।
সেখানে অবস্থিত ১০০-এরও বেশি হোটেল, মোটেল এখন পর্যটনশূন্য। সিলেট ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন বলেন, ‘করোনা সংক্রমণে পর্যটক না থাকায় গত কয়েক মাসে আমাদের প্রায় ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলকে পর্যটনের সঙ্গে জড়িত প্রান্তিক মানুষগুলোকে তৎক্ষণাৎ সহযোগিতা প্রদানের কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা তাদের দেওয়া হয়নি।’
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সভাপতি ইলিশ পার্কের উদ্যোক্তা রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, মার্চের পর থেকে সেখানকার ছোট-বড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক হোটেল-মোটেল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন তাদের লোকসান হচ্ছে অর্ধ কোটি টাকা আর তিন মাসে অন্তত ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলগুলোয় অন্তত ২ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক আরও খরচ আছে কয়েক লাখ টাকা।
ভালো নেই দেশের আরেক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পট কক্সবাজারের হোটেল মালিক ও কর্মচারীরাও। করোনা সংক্রমণের পর কক্সবাজারে পর্যটনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানান কক্সবাজার হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বলেন, পর্যটনের সঙ্গে জড়িত এ মানুষগুলোর পক্ষে অন্য কোনো পেশায় যাওয়া সম্ভব নয়।
পর্যটক না আসায় অনেক হোটেলের অব্যবহৃত দামি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নষ্ট হতে শুরু করেছে। আবার একটি টু স্টার মানের হোটেলে গড়ে প্রতিদিন কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৩ লাখ আর পাঁচ তারকা মানের হোটেলের খরচ ১০ লাখ টাকা। কিন্তু পর্যটক না থাকলে এ খরচ হোটেলগুলোর পক্ষে দীর্ঘদিন বহন করা সম্ভব নয়। তিনি জানান, স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও সংসদ সদস্যের উদ্যোগে শিগগির যদি হোটেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এ বিপদে তাদের বাঁচানো যাবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘আমরা হোটেল-মোটেলের সব মালিকের কাছে সংকটের এই সময়ে কর্মী ছাঁটাই না করার জন্য অনুরোধ করেছি। সরকার সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। এই বিপদের সময় পর্যটন খাত কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তার জন্য চিন্তভাবনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আমরা করণীয় বিষয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছি।
’ এর বাইরে পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারী ট্যুর অপারেটরসহ আরও ২০০ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন, তাদের প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। লকডাউনের সময় বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। আর পর্যটন খাতের এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় প্রয়োজন দাবি করে এ খাতে
|
মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিপর্যস্ত দেশের পর্যটন খাত। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এ খাতের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৪০ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। আর টানা কয়েক মাসে এ খাতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়। গত তিন মাসে দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকার হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পর্যটন খাতের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। খাতটি কবে নাগাদ চাঙ্গা বা স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত।
পর্যটন খাত নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, ‘আমরা টোয়াবে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মচারীকে ছাঁটাই করিনি। তবে কোনো কাজও আমরা করতে পারছি না। কোনো ভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি।’
পর্যটন খাতের সঙ্গে ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল-মোটেল ছাড়াও পর্যটন স্থানকেন্দ্রিক নানা ব্যবসা জড়িত। আর এ মানুষদের সামনে এখন ঘোর অমানিশা। স্থানীয় ১ কোটি পর্যটক ছাড়াও বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বর্তমানে দেশের পর্যটন স্পটগুলোয় নেই পর্যটকের আনাগোনা। মার্চে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলো একরকম বন্ধ রয়েছে।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে সার্বিক পর্যটন শিল্পে ৯ হাজার ৭০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৩ লাখ ৯ হাজার ৫০০ জন চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ হিসাব করোনা সংক্রমণের আগে থেকে হওয়ায় টোয়াবের পরিমাণের থেকে কিছুটা বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পর্যটননগর সিলেটে পর্যটনের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১০ হাজার মানুষ করোনার জন্য বর্তমানে বেকার জীবন যাপন করছেন।
সেখানে অবস্থিত ১০০-এরও বেশি হোটেল, মোটেল এখন পর্যটনশূন্য। সিলেট ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন বলেন, ‘করোনা সংক্রমণে পর্যটক না থাকায় গত কয়েক মাসে আমাদের প্রায় ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলকে পর্যটনের সঙ্গে জড়িত প্রান্তিক মানুষগুলোকে তৎক্ষণাৎ সহযোগিতা প্রদানের কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা তাদের দেওয়া হয়নি।’
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সভাপতি ইলিশ পার্কের উদ্যোক্তা রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, মার্চের পর থেকে সেখানকার ছোট-বড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক হোটেল-মোটেল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন তাদের লোকসান হচ্ছে অর্ধ কোটি টাকা আর তিন মাসে অন্তত ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলগুলোয় অন্তত ২ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক আরও খরচ আছে কয়েক লাখ টাকা।
ভালো নেই দেশের আরেক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পট কক্সবাজারের হোটেল মালিক ও কর্মচারীরাও। করোনা সংক্রমণের পর কক্সবাজারে পর্যটনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানান কক্সবাজার হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বলেন, পর্যটনের সঙ্গে জড়িত এ মানুষগুলোর পক্ষে অন্য কোনো পেশায় যাওয়া সম্ভব নয়।
পর্যটক না আসায় অনেক হোটেলের অব্যবহৃত দামি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নষ্ট হতে শুরু করেছে। আবার একটি টু স্টার মানের হোটেলে গড়ে প্রতিদিন কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৩ লাখ আর পাঁচ তারকা মানের হোটেলের খরচ ১০ লাখ টাকা। কিন্তু পর্যটক না থাকলে এ খরচ হোটেলগুলোর পক্ষে দীর্ঘদিন বহন করা সম্ভব নয়। তিনি জানান, স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও সংসদ সদস্যের উদ্যোগে শিগগির যদি হোটেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এ বিপদে তাদের বাঁচানো যাবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘আমরা হোটেল-মোটেলের সব মালিকের কাছে সংকটের এই সময়ে কর্মী ছাঁটাই না করার জন্য অনুরোধ করেছি। সরকার সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। এই বিপদের সময় পর্যটন খাত কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তার জন্য চিন্তভাবনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আমরা করণীয় বিষয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছি।
’ এর বাইরে পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারী ট্যুর অপারেটরসহ আরও ২০০ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন, তাদের প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। লকডাউনের সময় বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। আর পর্যটন খাতের এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় প্রয়োজন দাবি করে এ খাতে
|
|
|
|
খুকু খালেদ : নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কথা পৃথিবীর কম বেশি সবার জানা। পানি প্রবাহের দিক দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তর জলপ্রপাত এটি। আমেরিকা ও কানাডার আন্তর্জাতিক সীমানায় অবস্থিত এই জলপ্রপাত। নায়াগ্রা নদীরতে অবস্থিত বলে এর নাম নায়াগ্রা জলপ্রপাত। স্থানীয় ভাবে একে অংগিয়ারা বলে। অংগিয়ারার অর্থ জলরাশির বজ্রধনী। এতটাই প্রবল এর শব্দ যে অন্য কোন শব্দ এর কাছে গৌন। তিনটা ছোট বড় প্রপাত নিয়ে এই বিশাল জলরাশির সৃষ্টি । এর মধ্যে কানাডার জলরাশিকে বলা হয় হর্স শু। এই জলরাশির নববই ভাগ জল এই হর্স শু দিয়ে প্রবাহিত হয়। উপর থেকে দেখলে একে ঘোড়ার খুরের মতন লাগে তাই একে হর্স শু বলে। এই হর্স শু অংশ ১৬৭ ফুট উঁচু ও ২০০০ ফুট চওড়া । আমেরিকার অংশকে বলে আমেরিকান ফলস্। ১০০ ফুট উঁচু ও ৯৫০ ফুট চওড়া । তৃতীয় টি ব্রাইডাল ভেইল ফলস্। এটি ৭৮ ফুট লম্বা ও৫৬ ফুট চওড়া। এটি আমেরিকার অংশে। দশ হাজার বছর আগে একাধিক লেকের সমষ্টি দি গ্রেট লেক অঞ্চলটি ছিল বরফে আবৃত। তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে এর বরফ গলতে শুরুকরে এবং লেক ইরি ও লেক অন্টারিও থেকে প্রবাহিত বিপুল পরিমাণ জলরাশি নায়াগ্রা তে পতিত হয়ে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। গ্রীষ্ম ও বসন্তে জলরাশি ভয়ংকর রুপ ধারন করে এবং দর্শনার্থীদের ভিড় বেশী হয় এই সময় । সমগ্র পৃথিবীর মিঠা পানির বিশ ভাগ এই দি গ্রেট লেকে এ মজুত । আর এই পানি নায়াগ্রা ফলস্ দিয়ে প্রবাহিত হয় । সৌন্দর্য ও বিশালতার পাশাপাশি এটা ভংয়করও বটে। প্রতি মিনিটে ৪০ লাখ ঘনফুট পানি প্রবাহিত হয় । এই জলরাশি থেকে দুই দেশ জলবিদ্যুত্ উৎপনন করে। কানাডার অংশ থেকে এই জলপ্রপাতের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তবে বোটে করে ঘুরে জলরাশির নীচে পর্যন্ত গিয়ে পুরোটা খুব কাছ থেকে দেখার আনন্দই আলাদা । হেলিকপ্টার রাইডেও উপর থেকে ঘুরে দেখা যায়। মেইড অব দি মিসট নামের ক্রুজে চড়ে জলপ্রপাতের নীচ থেকে ঘুরে আসার সুন্দর সুযোগ আছে। প্রতি বছর শীতে এর পানি জমে বরফ হয়ে অল্প পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয় । রাতের জলরাশিতে আলোকসজ্জা এক অপার্থিব সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। বছরে তিন কোটি লোক এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করে। ১৮৪৮ সালের মার্চে পুরো জলপ্রপাত বরফে জমে যায় এবং ঐ সময় একবার ৪০ ঘন্টা পানি প্রবাহিত হয়নি। এই জলপ্রপাতের একটা রহস্য হচ্ছে এর পানি নীচে পতিত হয়ে কোথায় যায় এটা কেউ বের করতে পারেনি। নীচে পড়ে নদী দিয়ে দূরে কোথায় চলে যায় এমন না। শুধু নীচে পড়ে এরপর কি হয় কেউ জানেনা। যদিও অনেকের ধারনা এই পানি চক্রাকারে ঘুরে কোন এক অজানা দিক দিয়ে আবার উপরে যেয়ে নীচে পড়ে । নায়াগ্রা জলপ্রপাত-এক অপার বিস্ময়ের নাম : পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু আছে, যা দেখে আমাদের মনে বিস্ময় জাগে। নায়াগ্রা জলপ্রপাত এদের মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত এটি। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নায়াগ্রা জলপ্রপাত প্রকৃতির এক মহাবিস্ময়। এই জলপ্রপাতের নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ভ্রমণ পিপাসু সকল প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের কাছে নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি একটি রোমাঞ্চকর স্থান। এখানে গেলে যে কারো মনে হতে পারে এই বুঝি আকাশ ভেঙ্গে জগতের সব বৃষ্টি দানব আকার ধারন করে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ছে। ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ যেমন আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিচিতির চিহ্ন, ঠিক তেমনি ২৮ অক্টোবর ১৮৮৬ সালের আগে নায়াগ্রাই ছিল এখানকার প্রধান আকর্ষণ। নায়াগ্রা জলপ্রপাত কোথায় অবস্থিত : নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের মধ্যবর্তী আন্তর্জাতিক সীমানার ওপর অবস্থিত। জলপ্রপাতটি বিমান, সড়ক ও রেল পরিবহন মাধ্যম দ্বারা সু-সংযুক্ত হওয়ায় এই জলপ্রপাতে পৌঁছানো খুবই সহজ। এর নিকটবর্তী বিমানবন্দরগুলি হল- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাফেলোয় অবস্থিত বাফেলো নায়াগ্রা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কানাডার ওন্টারিওতে অবস্থিত লেস্টার বি. পিয়ারসন্ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কানাডার, ওন্টারিও-তে অবস্থিত নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি টরন্টো থেকে ১২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নায়াগ্রার উৎপত্তি : ঙহমঁরধধযৎধ শব্দ থেকে নায়াগ্রা কথাটির উৎপত্তি যার অর্থ জলরাশির বজ্রধ্বনি। অনুমান করা হয়, আজ থেকে প্রায় দশ হাজার নয়শ বছর আগে এই জলপ্রপাতকে প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছেছিল। আমেরিকাবাসীরা সম্ভবত এই জলপ্রপাত দর্শনকারী প্রথম মানুষ ছিলেন। যদিও এই জলপ্রপাতটির সম্পর্কে লিখিত আকারে উল্লেখিত প্রথম ইউরোপীয় ব্যাক্তিটি ছিলেন ফাদার ল্যুইস হেনেপিন। এই ফরাসি যাজক তাঁর “আ নিউ ডিসকভারি” নামক পুস্তকে এটির বর্ণনা করেছিলেন। নায়াগ্রা ইতিহাস : নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উৎপত্তির ইতিহাসটা বেশ মজার। নায়াগ্রা নদীটি প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো। এরও আগে ১৮০০ বছর পূর্বে ওন্টারিওর দক্ষিণে প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার বরফে ঢাকা ছিল। সময়ের সাথে সাথে আর নিয়মিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় পরিবর্তনের ফলে গলতে শুরু করে বরফ। আর গ্রেট লেকস বেসিনে প্রচুর পানি জমতে থাকে এবং লেক ইরি আর লেক ওন্টারিও থেকে আসা পানি মিলে নায়াগ্রা নদীতে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই প্রপাতের সৃষ্টি হয়। এই বিশাল জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। নায়াগ্রার মোহময় আকর্ষণ : জলপ্রপাতের দিকে তাকালে একদিকে যেমন ভয়ে আপনার বুক কেঁপে উঠে তেমনি কিছুতেই এর মোহময় আকর্ষণকে আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। এই আকর্ষণই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষকে টেনে আনে নায়াগ্রাকে ছুঁয়ে দেখার কিংবা তার উপর হেঁটে যাওয়ার এক অদম্য বাসনাকে। ১৮২৯ সালের অক্টোবরের দিকে ‘স্যামপেচ’ নামের এক দুঃসাহসী অভিযাত্রী ঝাঁপ দিয়েছিলেন নায়াগ্রায়। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ঝাঁপ দেয়ার পরও এই ভদ্রলোক কিন্তু বেঁচে গিয়েছিলেন। স্যামের এই অদ্ভুত কা- আরও অনেক মানুষকে দু:সাহসী করে তোলে। কেউ দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে ভয়ংকর এই জলপ্রপাত পার হয়েছেছেন, কেউ নিজেদের একটা ব্যারেলে ভরে নিয়ে ভেসে গিয়েছেন জলপ্রপাতের উত্তাল জলগ্রোতের মধ্যে, ব্যারেলসুদ্ধ আছড়ে পড়েছেন ১৬৭ ফিট উচ্চতা থেকে। এদের নাম দেওয়া হয়েছেছিল ‘ফাঁনামবুলিস্ট’। ১৮৫৯ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত এরকম উপায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নায়াগ্রা পার হওয়া একটা নেশায় পরিণত হয়েছেছিল। জলবিদ্যুৎ শক্তির উৎস : শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, নায়াগ্রার পানির ¯্রােতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। প্রতিদিন প্রতি মিনিটে নায়াগ্রা জলপ্রপাত ৬০ লক্ষ ঘনফুট মাত্রাধিক জল প্রবাহিত করে। যার গড় পরিমাণ হল ৪০ লক্ষ ঘনফুট। নায়াগ্রা সমগ্র নিউইয়র্ক ও ওন্টারিও-র জলবিদ্যুৎ শক্তির এক অন্যতম প্রধান উৎস। অন্যান্য জলপ্রপাতগুলোর চেয়ে নায়াগ্রার ¯্রােত ঢের বেশি। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের এই ¯্রােতকে কাজে লাগিয়ে প্রতি বছর ব্যাপক পরিমাণে তড়িৎ শক্তিও উৎপাদন করা হয়। নায়াগ্রা জলপ্রপাতে ¯্রােতের শব্দ এতটাই তীব্র যে, অন্য কোনো শব্দ, ¯্রােতের শব্দের কারণে কানে পৌঁছায় না। পর্যটকদের বিশ্বখ্যাত স্থান : আমেরিকায় নায়াগ্রা জলপ্রপাত বিখ্যাত এক পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটকদের কাছে এটি এক ভয়ংকর সুন্দর জলপ্রপাত। মূলত, অষ্টাদশ শতক থেকে এটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। এখানে প্রতি বছরে প্রায় ৩০ মিলিয়ন পর্যটক আসেন। এই মনোরম ও প্রাণবন্ত জলপ্রপাতটি পরিদর্শনের সেরা সময় হল বসন্ত ও গ্রীষ্মকাল। জলপ্রপাতের পাশাপাশি পর্যটকেরা ঘুরে আসতে পারবে প্রজাপতি ভা-ারে, যেখানে আছে দুই হাজারেরও বেশি প্রজাতির প্রজাপতি। পর্যটকেরা আরো যেতে পারেন নায়াগ্রার আ্যকোয়ারিয়াম, নায়াগ্রা সায়েন্স মিউজিয়াম, ওয়ার্লপুল স্টেট পার্ক, ডেভিল’স হোল স্টেট পার্ক, নায়াগ্রা আ্যডভেঞ্চার থিয়েটার এবং হাইড্ পার্ক। নায়াগ্রা জলপ্রপাত প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। ১৬৭ ফুট উঁচু এই জলপ্রপাত থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৬৪ হাজার ৭৫০ ঘনফুট পানি নদীতে আছড়ে পড়ে। মেড অব দ্য মিস্ট নামের বোটটি জলপ্রপাতের পাড়ে সর্বদা অপেক্ষমান থাকে পর্যটকদের নায়াগ্রার অপার সৌন্দর্যের আরো সান্যিধ্যে নিয়ে যাবার জন্য। এখানে জলপ্রপাতের পানি পতনের কলকল গর্জন কানে মধুর সংগীতের মতো বাজে। সব মিলিয়ে জলপ্রপাতটি বিস্ময় আর রোমাঞ্চের এক অপরূপ সৌন্দর্যের সম্ভার।
|
|
|
|
তানভীর অপু বাংলাদেশের কৃতি সন্তান। একজন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। পেশাগত জীবনে স্থায়ী কোন চাকরি নেই। নেশায় তিনি পরিব্রাজক। বর্তমানে বসবাস করছেন ফিনল্যান্ডে। সে দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন তিনি। ফিনল্যান্ড থেকেই ভ্রমণের নেশা চেপে বসে। ফলে স্থায়ী কোন চাকরি করা সম্ভব হয় না। মন চাইলে আর পকেটে টাকা থাকলেই বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে।
ছোটবেলা থেকেই তানভীর অপুর অদ্ভুত একটি বাতিক ছিল। টাকা জোগাড় হতেই বেরিয়ে পড়তেন ঘুরতে। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি এ পর্যন্ত ৬৫টি দেশের ৬৫০টি শহর ঘুরেছেন। শুনতে অবাক লাগছে, তাই না? মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এতগুলো শহর ঘোরার মতো টাকা তিনি কোথায় পেলেন? এ প্রশ্নের উত্তরটি সহজ হলেও তার মতো করে দেখানো কঠিন।
তানভীর পরিশ্রম করেন। তিনি খণ্ডকালীন বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হন। কখনো পানশালায়, কখনো জাহাজের রেস্তোরাঁয় কাজ করেছেন। তবে কিছুদিন নিজেই একটি রেস্তোরাঁ খুলে বসেছিলেন। তা-ও একসময় গুটিয়ে নিয়েছেন। কারণ টাকা জোগাড় হলেই বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে। ঘুরতে গিয়ে তিনি আয়েসী জীবন কাটান না। সেখানে সস্তা হোটেলে রাত কাটান, কম দামি খাবার খান, প্রচুর হাঁটেন।
তানভীর অপুর দেখা প্রথম দেশ এস্তোনিয়া। এরপর যান সুইডেন। ২০০৬ সালে শুরু হয় তার যাত্রা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন। তখন ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসেছিল জার্মানিতে। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন রুস্তভ শহরে। তখন থেকেই ভ্রমণযাত্রা শুরু, এখনো চলছে।
তিনি ভারত, হাঙ্গেরি, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মরক্কো, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, মেসেডোনিয়া, মিসর, নরওয়ে, ফিলিস্তিনসহ ৬৫টি দেশের ৬৫০টি শহর ঘুরেছেন। একেক দেশের মানুষের জীবন, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বৈচিত্র্য জানতেই তিনি মূলত ভ্রমণ করেন।
এত এত শহর ঘোরার পরও সুযোগ পেলেই বাংলাদেশে ছুটে আসেন তানভীর। কারণ বাংলাদেশেই তার শেকড়। ৩৯ বছর বয়সী তানভীরের বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। মা মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক পদে চাকরি করতেন। বাবা ইব্রাহীম আলী দেওয়ান ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। স্ত্রীর নাম সীমা খান।
তানভীর অপু রাজশাহীতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। এরপর নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিকেএসপির হকি দলের খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। কয়েক বছর ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পক্ষে হকি খেলেছেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষে ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক পড়ার সময়েই ২০০৫ সালে চলে যান ফিনল্যান্ডে।
তানভীরের ভ্রমণের মূল লক্ষ্য মানুষের জীবন দর্শন। শুধু দেখাই নয়, মনে-প্রাণে উপলব্ধি করা। জীবন ও শহর নিয়ে তিনি অনেক ছবি তুলেছেন। বাংলাদেশে সেসব ছবির প্রদর্শনীও হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে তার ভ্রমণ বিষয়ক একটি বইও বের হয়েছে।
তানভীর অপু বলেন, ‘যতদিন টাকা আছে, ঘুরবো। টাকা শেষ হয়ে গেলে হয়তো আর ঘুরতে পারব না। তবে মনের ভেতর জমে থাকা ভ্রমণের গল্পগুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেব। যাতে তারাও ভ্রমণের প্রতি উৎসাহিত হয়। বিশ্বকে জানার আগ্রহ বাড়ে।’
|
|
|
|
দিশা বিশ্বাস
আমাকে আমার সাংবাদিক দাদু অমর সাহা মাঝে মধ্যে বলতেন, এবার তুই ঢাকা গেলে তোকে রকেটে চড়াব। শুনে আমি থ খেয়ে যেতাম । সে আবার কী ? রকেট তো সাধারণ মানুষের চড়ার জন্য নয়। আমেরিকা, রাশিয়া,ভারত সহ পৃথিবীর নানা দেশ রকেট ছাড়ছে। চাঁদে যাচ্ছে। মহাশুন্যে ঘাঁটি করছে। তাই রকেটের কথা শুনে চমকে উঠি। এরপরেই দাদু বললেন, আরে সে রকেট নয়। এ রকেট জলে চলে। রহস্য আরও ঘনীভূত হল। বুঝে উঠতে পারছিলামনা এ বার কী ধরণের রকেট, যে রকেট জলে চলে। দাদু বুঝলেন, সত্যিই আমি রকেট নিয়ে ধোয়াশায় পড়ে গেছি।
শেষমেষ দাদু রহস্যের দরজা খুলে দিলেন। বললেন, স্টিমারের কথা শুনেছিস না? সেই দ্রতগামী স্টিমারকে বাংলাদেশে রকেট বলে। আবার জাহাজও বলে। তবে, বেশি পরিচিত রকেট স্টিমার হিসাবে। একেবারে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে খুলনায় যায়। সন্ধ্যায় এই রকেট ঢাকা থেকে ছাড়লে পরেরদিন দিনগত রাতে খুলনায় পৌঁছে। এই রকেট স্টিমার আবার দোতালা। রং গেরুয়া। দোতালায় রয়েছে প্রথম শ্রেণী আর দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরা। রয়েছে সাধারণের জন্য ডেক। আর তিনতলার ওপরে রকেটের পাইলট বা সারেং’এর ঘর। তিনিই রকেট চালান। এই রকেটের মাঝ বরাবর দুদিকে অর্থ্যাৎ বাম ও ডানদিকে রয়েছে বৃহৎ আকারের দুটি চাকা। এই চাকা দুটিই জলকেটে টেনে নিয়ে যায় রকেটকে। লঞ্চে যেমন রয়েছে পেছনে জলের তলে পাখা বা প্রপেলার। যে পাখায় চলে লঞ্চ। আমি শুনে বললাম, ঢাকা থেকে খুলনা যেতে বাসে ৮-৯ ঘন্টা লাগে। তবে কেন রকেটে ২৮ ঘন্টায় খুলনা যাব? দাদু বললেন, রকেটের যাত্রা আর বাসের যাত্রা এক নয়। রকেটের যাত্রা রোমাঞ্চকর। আলাদা অনুভূতির যাত্রা। দেখা যায় বাংলাদেশের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তোর ভাল লাগবে। এই বিশাল রকেট স্টিমার নদীর বুক চিরে চলে সেই বুড়িগঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা নদী পেরিয়ে বরিশালের কীর্তনখোলা , কচা, বলেশ্বর, পানগুছি, পশুর, রুপসার ভৈরব নদী হয়ে খুলনার পাড়ের খুলনা শহর পর্যন্ত। দাদুকে বললাম, একবার তুমি আমাকে এই রকেটে করে নিয়ে যাবে তোমার গ্রামের বাড়িতে ? তোমাদের আদি বাড়িতো বৃহত্তর বরিশাল জেলায়। এখন পিরোজপুর জেলা। তুমি একবার বলেছিলে এই জেলার হুলারহাট বন্দরে রকেট থামে। এবার না হয়, ঢাকা থেকে হুলারহাট যাব রকেটে করে। দাদুও রাজী হয়ে যান। আমিও ভাবলাম ট্রেন, বাস, লঞ্চ ও বিমানে চড়েছি। এবার না হয় রকেটে চড়ে নতুন এক অনুভূতিতে আনন্দ ভাগ করে নেব। দাদু রাজী হয়ে যান। বললেন, নিশ্চয়ই তোকে রকেট স্টিমারে করে পিরোজপুরের হুলারহাট বন্দরে নিয়ে যাব। তারপর সেখান থেকে দাদুর শহর পিরোজপুরে নিয়ে যাব রিক্সা বা ব্যাটারিচালিত ইজি-বাইক, কলকাতার কথায় টো-টো গাড়িতে করে। সেইভাবে আমি প্রস্তুতি নেই দাদুর সঙ্গে যাওয়ার। আমাদের আরও সঙ্গী হন দিদাও। আমরা তিনজনে মিলে কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসি মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে করে। ঢাকায় সপ্তাহখানেক বেড়ানোর পর পিরোজপুরে যাওয়ার উদ্যোগ নেই। আগেই কলকাতায় এসে আমাদের দাদুর দেশের এক মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সাংবাদিক কাজী সিরাজুল ইসলাম হিরণ দাদু আমাদের বাসায় বেড়াতে এসে বলেছিলেন, এবার তোমাদের আমি পিরোজপুরে নিয়ে যাব রকেট স্টিমারে। ভাল লাগবে। তিন দশক আগে তোমার দাদু চড়েছিলেন রকেটে। এবার সেই রকেটেই দাদুর সঙ্গে তোমাকেও চড়াব। হিরণ দাদু আমার দাদুকে রকেটে করে পিরোজপুর বেড়ানোর কথা বললে, আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আর ভাবছিলাম সত্যিই এবার রকেটে চড়ার সুযোগ পাব। কলেজের বন্ধুদেরতো রকেটে চড়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে করতে পারব। ঠিক হয় ১৭ জুলাই আমরা ঢাকা থেকে হুলারহাট হয়ে পিরোজপুর যাব রকেট স্টিমারে। সঙ্গী জুটে যায় । ঢাকার মানবাধিকার পত্রিকার সম্পাদক মো: রিয়াজ উদ্দিন আমাদের সঙ্গে যাবেন। আমি আবার মানবাধিকার খবর পত্রিকার কলকাতা প্রতিনিধি। রিয়াজ আংকেলের বাড়ি পিরোজুরের পাশে বাগেরহাট জেলার কচুয়ায়। বাংলাদেশের আভন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ রিয়াজ আংকেলের জন্য রকেটের প্রথম শ্রেণীর একটি রুমের ব্যবস্থা করে দেন। আমরাও ছিলাম প্রথম শ্রেণীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অন্য একটি কক্ষে। আমাদের পাশেই ছিল রিয়াজ আংকেল । আমার দাদু থাকেন অবশ্য আংকেলের কক্ষে। আর আমাদের কক্ষে থাকেন আমি এবং আমার দিদা। যথারীতি সন্ধ্যার একটু আগে রকেট স্টিামারটি ঢাকার সদরঘাট থেকে ছাড়ে। দাদু বললেন, আমাদের সৌভার্গ্য সেদিন আবার এই নৌপথে চলা রকেট স্টিমারের মধ্যে বড় রকেট স্টিমার বা জাহাজটি ছিল মাসুদ। পিএস মাসুদ। এটিই এখন বড় জাহাজ বা রকেট স্টিমার। আগে এই পথে সবচেয়ে বেশি নাম ছিল গাজী রকেট স্টিমারের। এখন গাজী নেই। চলছে মাসুদ, লেপচা। ছিল টার্ন রকেটও। জানলাম পিএস মাসুদ পুরনো জাহাজ। তবে বরাবর বলা হয় একে রকেট স্টিমার। ১৯২৮ সালে এটি নির্মিত হয় কলকাতার গার্ডেনরিচ ওয়ার্কশপে। পরবর্তীতে আবার এটিকে নতুন করে রুপ দেওয়া হয় ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জ ডক ইয়ার্ডে। দাদু বললেন, আজ থেকে তিন দশক আগে এই মাসুদে চড়ে আমার দাদুর শ্যালিকা দীপ্তি দিদার বিয়ের বর এবং বরযাত্রী গিয়েছিল ঢাকা থেকে হুলারহাটের পর চড়খালি স্টেশন ছাড়িয়ে মোড়েলগঞ্জ স্টেশনে। ওখানেই বসেছিল বিয়ের আসর। ওখানেই ছিল আমার দাদুর শ্বশুর বাড়ি। দীপ্তি দিদার বিয়ের দিনটি ছিল ১৯৮৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি । আর আমরা রকেটে উঠেছিলম ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকার সদরঘাট থেকে। এই মাসুদ সেদিন মোড়েলগঞ্জ পৌঁছেছিল পরেরদিন অর্থ্যাৎ বিয়ের দিন সকাল সাড়ে ১১টায়। বলছিলেন দাদু। আমার দাদুর শ্যালিকা দীপ্তি সাহার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল প্রকৌশলী শান্তিময় সাহার। শান্তিময় দাদুর বাড়ি ছিল ঢাকার পাশের নারায়নগঞ্জের পঞ্চবটিতে। পঞ্চবটি থেকে বরযাত্রীরা ঢাকার সদরঘাট স্টেশনে এসে উঠেছিলেন রকেটে। বিয়ের পরদিন অধিকাংশ বরযাত্রীরা আবার ফিরে এসেছিলেন এই মাসুদ রকেটেই ঢাকাতে। ঢাকার সদরঘাট থেকে যথাসময় রকেট ছাড়ে। বুড়িগঙ্গ নদীর পথে। সেদিন বুড়িগঙ্গায় জমে থাকা প্রচুর কচুরিপনাকে রকেটের দুদিকের বিশাল চাকা ঝপঝপ করে ওই কচুরিপনা কেটে ছুটে ছুটে চলছিল হুলারহাটের পথে। প্রথমে দাড়াবে চাঁদপুর, তারপর বরিশাল, এরপর ঝালকাঠি। ঝালকাঠি ছাড়ার পর দাড়াবে কাউখালি তারপরেই হুলারহাট। ওইদিনই জানলাম এখন আর এই রকেট স্টিমার খুলনা পর্যন্ত যায়না। গন্তব্য বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত। তারপর সেখান থেকে আবার ফিরে আসে ঢাকায়। রকেট চলছে, আমি দেখছি। কী আনন্দ যে ভাষায় ব্যক্ত করতে পারছিনা। সব কিছুই নতুন লাগছে। পদ্মা মেঘনা নদী। স্বপ্নের নদী। দুপাড়ে সৌন্দর্যের নানা হাতছানি। বুড়িগঙ্গা ছেড়ে আমরা মুন্সিগঞ্জ হয়ে চলেছি চাঁদপুরে দিকে মেঘনা হয়ে। তারপর আসবে পদ্মা। বিশাল নদী। জুলাই মাস। সামান্য হাওয়া ছিল। নদীতে সামান্য ঢেউ ছিল, তবুও এতটুকু আতংক হয়নি। দাদু বলেছিল, বর্ষাকালে মানুষ বেশি চলেন এই রকেট স্টিমারে। রকেট ডোবার কোনও ঘটনা শোনেনি দাদু। নদীর দুপাড়ে দুরদুরান্তে বৈদ্যুতিক আলোর ঝলকানি মুগ্ধ করেছিল আমার মন। কী অপরুপ সৌন্দর্য! মনভোলানো । আমরা চলেছি রকেটে।
আমার প্রথম চলা এই রকেটে। তাই খুঁটিনাটি জেনে নিচ্ছিলাম দাদুর থেকেই। একসময় রকেটের পাইলটকে বলে আমরা উঠে যাই ব্রীজে। সেখানে চালক আর তাঁর সহকারিরা রকেট চালান। আমরা কলকাতা থেকে এসেছি শুনে ওনারা আমাদের কাছে নিলেন। বললেন রকেট চালনার কথা । এমনকি আমাদের ছবি তুলতেও দিলেন। রকেটের ছাদে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নতুন মাত্রা যোগ করে। আমিতো দারুণ মুগ্ধ। দাদুকে বললাম এবার সত্যিই আমার বাংলাদেশ সফর সার্থক হল। রকেটে যে এত আনন্দ, এত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় তা আমার ভাবনায় ছিলনা। সব দেখে অমি খুবই মুগ্ধ। সেদিন রাতে আমরা আহার সেরেছিরাম এই রকেটে। দাদু আগেই বলেছিলেন, রকেটের রান্নার একটা আলাদা মাত্রা ছিল। সেই রান্নার অপরূপ গন্ধ নাকি ছড়িয়ে থাকতো রকেট জুড়ে। তাইতো দাদু যখন ডেকের যাত্রী থাকতেন তখনও তিনি এই রকেটে খাবার খেতেন সেই দ্বিতীয় শ্রেণীর ডাইনিং কক্ষে এসে। প্রথম শ্রেণীর ডাইনিং কক্ষে যেতে দিতেননা ডেকের যাত্রীদের। দাদু একথাও বলেছেন, সেদিনের খাবারের সেই স্বাদ আর এখন পাওয়া যায়না। তবে রকেটের কর্মীদের আতিথিয়তায় এতটুকু ঘাটতি ছিলনা। সকালে উঠে দাদু ডেকে গিয়ে রকেটের চায়ের দোকান থেকে চা বিস্কুট খেয়ে নিয়েছিলেন। একটু পিছিয়ে যাই। রাত ১১টায় রকেট পৌঁছে চাঁদপুর বন্দরে। ভোর ৪ টায় বরিশাল বন্দরে বা শহরে। সকাল পৌণে ৮টায় ঝালকাঠি। সকাল সোয়া ৯টায় কাউখালি আর সকাল পৌনে ১০টায় পৌছি হুলারহাট বন্দরে। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর রকেটের সামনে গিয়ে মনভরে উপভোগ করেছি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দেখেছি গ্রামগাঁয়ের নানা ছবি। সকাল বেলা এক পশলা বৃস্টিও হয়েছে ঝালকাঠি বন্দর ছাড়ার পর। সেই বৃস্টিও রকেটে বসে মনভরে উপভোগ করেছি। রকেটের একেবারে সামনের চেয়ারে বসে। তবে একটি আফসোস থেকে গেছে। দাদু বললেন, কাউখালির শীতল পাটি এই অঞ্চলে দারুণ প্রসিদ্ধ। রকেট স্টিমার কাউখালি বন্দরে ভিড়লে শীতল পাটি নিয়ে উঠে পড়েন পাটি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেদিন আর চোখে পড়েনি শীতল পাটি নিয়ে রকেটে ওঠা পাটি ব্যবসায়ীদের। আর একটি আফসোসের কথা বললেন দাদু। কাউখালির চিড়ের মোয়া আর নারকেল কোড়া দারুণ ভাল। আমার দাদু এই চিড়ের মোয়া কোড়ানো নারকেল দিয়ে খেতে দারুণ ভালবাসেন । রকেটে উঠলেই খেতেন। কিন্তু ওইদিন রকেটে আর খোঁজ মেলেনি চিড়ের মোয়া আর নারকেল কোড়া নিয়ে ওঠা গ্রামের মোয়া বিক্রেতাদের। দাদু খেতে না পেরে তাঁর আফসোসের কথা বলতে দ্বিধা করেননি। রকেট তখন হুলারহাট বন্দরে ভিড়েছে। আমরা রকেট থেকে নামলাম। সেখান থেকে টোটো করে পিরোজপুর শহর যেতে হবে। হুলারহাট বন্দরে আগে থেকে অপেক্ষা করছিল আমার সেজ দাদুর ছেলে শুভ। ওই-ই আমাদের নিয়ে গেল ওদের বাড়িতে অর্থ্যাৎ আমাদের দাদুর সেজ ভাই সমর দাদুর বাড়িতে। পিরোজপুর শহরের পালপাড়ায়। ব্যাটারিচালিত ইজি-বাইক বা টো টোতে উঠে দাদু বললেন, দিশা সত্যিই এখন মাসুদ বুড়ো হয়ে গেছে। জীর্ণ হয়ে পড়েছে। দেখোনি বহু জায়গায় জোড়াতালি লাগনো হয়েছে। রং উঠে গেছে। ছাদ চুষে জলও পড়ে। তবু রকেট স্টিমার তার ঐতিহ্য একেবারে হারায়নি। এখনও সেই ঐতিহ্যের টানে বহু মানুষ পর্যটকরা রকেটে চড়ছেন। সত্যিই এ এক নস্টালজিয়া!
লেখিকা : মানবাধিকার খবর, কলকাতা প্রতিনিধি।
|
|
|
|
সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতে লেখক ও তার পরিবার
(পঞ্চম পর্ব)
”মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। ভ্রমন করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় দুস্কর। একঘেঁয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠে, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম, একটু বিরাম ও একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন সৃষ্টিকর্তার অপারময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। ঢাকার বাইরে ঘুরে আসতে চান? তবে স্বল্প মূল্যে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দেশের দর্শনীয় স্থানসমুহ। আমাদের সুজলা-সুফলা নদী মাতৃক এই দেশের মধ্যেই রয়েছে পাহাড়, পর্বত সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে বিনোদনের নানান ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। পর্যটক হিসেবে আপনি যদি ভ্রমণ করতে চান, মাথার ওপর নীল চাঁদোয়া, মেঘে-বৃষ্টিতে ভেজা বাতাস, পায়ের নিচে অন্য এক পৃথিবী উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্রগ্রামের রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন। ঘুরে এসে ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের উদ্দেশে লিখেছেন- মোঃ রিয়াজ উদ্দিন
পাঠকদের ভ্রমনের সুবিধার্থে প্রাকৃতিক সুন্দর্যের পর্যটন স্থল সেন্টমার্টিন বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ
সেন্টমার্টিন ঃ ছুটিতে বেড়িয়ে আসার জন্য পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের তুলনা হয় না। সারি সারি ঝাউবন, বালুর নরম বিছানা, সামনে বিশাল সমুদ্র। কক্সবাজার গেলে সকাল-বিকাল সমুদ্রতীরে বেড়াতে মন চাইবে। আর রয়েছে নীল জলরাশির গর্জন। মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরী, সেন্টমার্টিন কক্সবাজারকে করেছে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয়। এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মাতা মুহুরী, বাঁকখালী, রেজু, কুহেলিয়া ও নাফ নদী। পর্যটন, বনজসম্পদ, মৎস্য, শুঁটকি, শামুক, ঝিনুক ও সিলিকাসমৃদ্ধ বালুর জন্য কক্সবাজারের অবস্থান তাই ভ্রমণবিলাসী পর্যটকদের কাছে সবার শীর্ষে। এখানে গিয়ে বেড়াতে পারেন হিমছড়ি ও ইনানী বিচে। কক্সবাজারের ১২ থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে রয়েছে এ দুটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। যারা ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে চান তারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার অথবা সরাসরি বাসে কক্সবাজারে যেতে পারেন। এসি ও নন এসি, ডিলাক্স ও সাধারণ বাস সরাসরি পরিবহনের ভাড়া পড়বে ৩৯০-৭৩০ টাকা পর্যন্ত। বিচ কক্সবাজারে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বেশকটি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকায় কক্সবাজারে রাতযাপন করা যায়। অন্যান্য হোটেল রেস্ট হাউসের ভাড়া প্রায় নির্ধারিত। তবে কক্সবাজারে ভ্রমণের আগে ফোনে যোগাযোগ করে বুকিংমানি পাঠিয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ভালো। এ ছাড়া বেড়াতে পারেন সেন্টমার্টিন। আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল সেখানে মিলেমিশে একাকার। তীরে বাঁধা নৌকা, নান্দনিক নারিকেল গাছের সারি আর ঢেউয়ের ছন্দে মৃদু পবনের কোমল স্পর্শ- এটি বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ। বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। কক্সবাজার থেকে প্রথমে জিপে চড়ে টেকনাফ, টেকনাফ থেকে সি-ট্রাক, জাহাজ কিংবা ট্রলারে চড়ে পৌঁছবেন সেন্টমার্টিন। সেখানে থাকার জন্য বেশ উন্নতমানের কয়েকটি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। এ ছাড়া আরও আছে বিচ ক্যাম্প শীর্ষে। এখানে গিয়ে বেড়াতে পারেন হিমছড়ি ও ইনানী বিচে। কক্সবাজারের ১২ থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে রয়েছে এ দুটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। যারা ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে চান তারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার অথবা সরাসরি বাসে কক্সবাজার যেতে পারেন। এসি ও নন এসি, ডিলাক্স ও সাধারণ বাস সরাসরি পরিবহনের ভাড়া পড়বে ৩৯০-৭৩০ টাকা পর্যন্ত। বিচ কক্সবাজার রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বেশ কয়েক টি হোটেল,
মোটেল ও রিসোর্ট। সর্ব নম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকায় কক্সবাজারে রাতযাপন করা যায়। অন্যান্য হোটেল রেস্ট হাউসের ভাড়া প্রায় নির্ধারিত। তবে কক্সবাজার ভ্রমণের আগে ফোনে যোগাযোগ করে বুকিংমানি পাঠিয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ভালো। এ ছাড়া বেড়াতে পারেন সেন্টমার্টিন। আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল সেখানে মিলেমিশে একাকার। তীরে বাঁধা নৌকা, নান্দনিক নারিকেল গাছের সারি আর ঢেউয়ের ছন্দে মৃদু পবনের কোমল স্পর্শ- এটি বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ। বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। কক্সবাজার থেকে প্রথমে জিপে চড়ে টেকনাফ, টেকনাফ থেকে সি-ট্রাক, জাহাজ কিংবা ট্রলারে চড়ে পৌঁছবেন সেন্টমার্টিন। সেখানে থাকার জন্য বেশ উন্নতমানের কয়েকটি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। এ ছাড়া আরও আছে বিচ ক্যাম্প।
সেন্টমার্টিনের নীলেঃ আমরা যে রিসোটে রাত্রিযাপন করি, সেই রিসোটের সামনে ঠিক ৬টায় এসে হাজির কক্সবাজার-টেকনাফে আমাদের নিয়ে যাওয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিনি বাসটি। অন্যান্য যাত্রীদের নিয়ে বাস শহর ছাড়ে আরও ঘণ্টা খানেক পর। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছলাম টেকনাফ লঞ্চঘাটে। পথিমধ্যে ট্যুর গাইড সাইদুল গাড়িতে বসে দেখালেন বেশ কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্প। আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কেউ কেউ ক্যাম্প ছেড়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশে গেছে বলে তথ্য দেন। দু`একজন আবার নানা অপরাধে জড়িয়েছে বলেও জানান। সাড়ে ৯টায় ছাড়ল লঞ্চ, আমাদের আসন বরাদ্দ ছিলো কেয়ারি সিন্দবাদ জাহাজের তৃতীয় তলার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভি আই পি কক্ষে। নিচতলা ও দ্বিতীয় তলা লোকে লোকারণ্য হলেও তৃতীয় তলার বেশ কিছু আসন শূন্য পড়ে আছে। পাশের টেবিলেই খুঁজে পেলাম দুইজন বিদেশিনীকে। নিজ থেকেই তার পরিচয় জানতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর বাসিন্দা অ্যালেক্সজান্ডার জানান, নেপাল থেকে তারা বাংলাদেশে এসেছেন। সেন্টমার্টিনে এক রাত থেকে দিবা-রাত্রির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান। আমাদের পাশেই আসন নেন নোয়াখালীর কামাল উদ্দিন। পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময় করে চা-চক্র শেষেই লঞ্চের পেছনে দাঁড়িয়ে উড়ে চলা গাঙচিল আর প্রাকৃতিক পরিবেশের ছবি তোলা শুরু করেন মোবাইল ক্যামেরায়। অসাবধানতাবশত নদীতে পড়ে যায় তার ফোনটি। যাত্রার শুরুতেই মোবাইল ফোন হারিয়ে বেশ মুষড়ে পড়েন স্বামী-স্ত্রী। পূর্ব নির্দেশনা থাকায় উক্ত জাহাজের ক্যাপ্টেন মনিরুদ্দিন আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানান জাহাজের সামনে মাস্টার ব্রিজে বসে সমুদ্রের নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্যে। আমরা ক্যাপ্টেনের আতিথিয়তা গ্রহন করলাম। এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি জাহাজের ক্যাপ্টেন ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের। তাদের আন্তরিক আথিতেয়তার জন্য। নদী আর সমুদ্রের বুকে দুলতে দুলতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর জাহাজ ভিড়ল সেন্টমার্টিন দ্বীপে। দ্বীপের সেতুতে অগণিত মানুষের সারি দেখে মনে পড়ে ঈদ যাত্রার বাসস্টেশন বা রেলওয়ে স্টেশনের দৃশ্য। যেন মানুষের ঢল নেমেছে সেন্টমার্টিনে।
জাহাজ থেকে নামতেই ছোটখাটো গড়নের এক কিশোরকে গাইড হিসেবে সঙ্গী করার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানায়। পুরো সেন্টমার্টিন আমাদের ঘুরে দেখাবে। বিনিময়ে খুশি মনে যা দেব তাতেই হবে। আলাপান্তে জানা গেল, অষ্টম শ্রেণিপড়ূয়া কিশোরের নাম সাইফুল ইসলাম। পিতৃহীন অভাবের সংসার চালাতে তাকে এ পেশা বেছে নিতে হয়েছে। পর্যটন মৌসুমে স্কুলে তেমন যাওয়া হয় না। শিক্ষার চেয়ে ক্ষুধার তাড়না যে মুখ্য। সে আরও জানায়, তার মতো অনেকেই শুস্ক মৌসুমে পর্যটকদের গাইডের কাজ করে জীবন চালায়। অভাবের তাড়নায় অনেকেই এরই মাঝে স্কুলকে বিদায় জানিয়েছে। তার মতো কেউ কেউ আবার পড়াশোনায় থেকেও স্কুলে নেই। তাকে আমরা বললাম পুরো দ্বীপ আমাদের চেনা। এখানে আমাদের একটা বাংলোও আছে। এ কথা শুনে সে অন্য ট্যুরিস্টদের কাছে চলে গেলো। পুরো দ্বীপকে স্থানীয়রা আবার চারটি নামে পৃথক অস্তিত্ব তৈরি করেছে। ব্রিজ থেকে নেমেই দ্বীপের যে অংশ দেখা যায় স্থানীয়রা এর নামকরণ করেছে বিচ। এ অংশেই অনেক প্রবাল দেখা যায়। জোয়ার থাকলে প্রবালের দেখা মেলে না। আমরা পানিতে নোঙর করা জেলে নৌকা আর বহমান নীল জলরাশির ছবি তুলতে থাকি । জানা যায়, সেন্টমাটিনের এই দ¦ীপে কিছুদিন আগে ফুটবল খেলতে গিয়ে চোরাবালিতে তলিয়ে যায় তরুণ এক পর্যটক। যা হোক, আমরা ভ্যানে করে আমাদের কোণাপাড়া বাগান বাড়ি রিসোর্টে যাই। সেখানে বিশ্রাম নিয়ে নিজস্ব গাছের সবুজ ডাবের পানি খেয়ে নেমে পড়লাম সমুদ্রে । আমরা এই সমুদ্রের নোনা জলে, মাতাল করা ঢেউয়ের তালে তালে দুপুরের গোসল সেরে নিলাম ।
এরপর বিচ এলাকা ছেড়ে আমরা এগিয়ে গেলাম নারিকেল বাগান এলাকায়। অসংখ্য নারিকেল গাছ থাকায় স্থানীয়রা এমন নামকরণ করেছে। নারিকেল বাগানের গোড়ায় স্তূপাকার পাথরে দাঁড়িয়ে স্মৃতিকে ক্যামেরাবন্দি করে নেন অনেকেই।
নারিকেল বাগানের পরেই দারুচিনি দ্বীপের অবস্থান। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ছবির শুটিং এখানে করেছিলেন বলেই এ স্থানটির এমন নামকরণ। এদিকটায় পানি বেশ নিচে থাকায় বেশ কিছু ভাসমান প্রবাল দেখা যায়। সেই প্রবালের ওপর দাঁড়িয়ে এ পথে চলা প্রায় সবাইকেই ছবি তুলতে ব্যস্ত পাওয়া গেল। দারুচিনি দ্বীপ থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই পাওয়া যায় মূল সৈকত। প্রবাল না থাকায় পুরো দ্বীপের এখানটাতে সৈকতের আমেজ পাওয়া যায়। পর্যটকরা অনায়াসে সমুদ্র স্নান সারেন। এখানে মানুষের উপস্থিতিও সর্বাধিক। সৈকতের ঠিক ওপরেই হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত `সমুদ্র বিলাস`। ছবির শুটিং করতে এসে তিনি তৈরি করেছিলেন `সমুদ্র বিলাস`। এখন নির্দিষ্ট ভাড়ায় এখানে থাকার সুযোগ পান আগন্তুকরা। এখন এটি সেন্টমার্টিনের অন্যতম দর্শনীয় স্থাপনা। সমুদ্রের সামনের `সমুদ্র বিলাস`কে সাক্ষী রেখে ছবি তুলতে মানুষের জটলা দেখা গেল। দশ বছর আগে যখন আমার স্ত্রীকে নিয়ে এই সেন্টমাটিনে হানিমুনে গিয়েছিলাম তখনও `সমুদ্র বিলাস` নিয়ে পর্যটকদের এমন উচ্ছ্বাস চোখে পড়েছিল। `সমুদ্র বিলাস`-এর কাছেই শুঁটকি পল্লী । তবে দামটা বেশ চড়া মনে হলো। এক বিক্রেতা জানান, কোনো ধরনের রাসায়নিক ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি প্রক্রিয়াকরন হয় বলেই দামটা একটু বেশি।
আমাদের মতো স্বল্প সময়ের অতিথিদের জন্য সেন্টমার্টিন এক আনন্দ কানন। কিন্তু স্থানীয়দের কাছে এটি এক বিচ্ছিন্ন জনপদ। সভ্যতার এ যুগেও বৈদ্যুতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা। জীবনের অনেক মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার সংগ্রামে সদা ব্যস্ত দরিদ্র এই দ্বীপবাসী। কবে সভ্যতার আলোয় আলোকিত হবে- এ স্বপ্ন দেখতে দেখতেই সময় বয়ে যায় তাদের। বিশ্বের একমাত্র এই প্রবাল দ্বীপ নিয়ে আমাদের পর্যটন খাত যেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারত, সেন্টমার্টিনে সে অবকাঠামোগত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। পরিবেশের ভারসাম্যের দোহাই দিয়ে সরকারিভাবে উচ্চতর ভবন নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। আর এ সুযোগে অপরিকল্পিত অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁ তৈরি করে নষ্ট করা হচ্ছে নৈসর্গিক সৌন্দর্য।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা জনিত কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে ২৮-৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল ধরণের জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে বিধায়, আমরা রাত্রি যাপন না করেই ঐদিন দুপুরে সামুদ্রিক নানান ধরনের মাছ ও বার্মিজ পাহাড়ি মোরগ দিয়ে খাবার খেয়ে আবারো ৩টার মধ্যে চলে এলাম জাহাজ ঘাঁটে। জাহাজ যথারিতি ৩টার পর ছেড়ে দিলো। বিকেল, সন্ধ্যা ও রাতের সমুদ্রের দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা চলে এলাম টেকনাফে। গভীর সমুদ্রে আমাদের সঙ্গী ছিলো অসংখ্য সামুদ্রিক সাদা গাংছিল পাখি। জাহাজে থাকা পর্যটকদের প্রতিনিয়ত আনন্দ যুগিয়েছে এই গাংছিল পাখির কলরব। টেকনাফ থেকে কক্সবাজার প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ। অধিকাংশ পথই নব-নির্মিত মেরিন ড্রাইভ এলাকায়। আসা-যাওয়ার পথে রাস্তার একদিকে পাহাড়ের সাড়ি, অন্যদিকে সমুদ্রের ছন্দময় ঢেউয়ের নান্দনিক দৃশ্য মন কেড়ে নেয় সবার।
বিঃদ্রঃ প্রিয় পাঠক, সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার, ভ্রমনের বিস্তারিত জানতে নিয়মিত পড়–ন পরবর্তী পর্বগুলী।
লেখক: সম্পাদক, মানবাধিকার খবর
Email-md.reaz09@yahoo.com
|
|
|
|
সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমার সাথে লেখক ও তার পরিবার
(চতুর্থ পর্ব)
”মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। ভ্রমন করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় দুস্কর। একঘেঁয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠে, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম, একটু বিরাম ও একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন সৃষ্টিকর্তার অপারময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। ঢাকার বাইরে ঘুরে আসতে চান? তবে স্বল্প মূল্যে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দেশের দর্শনীয় স্থানসমুহ। আমাদের সুজলা-সুফলা নদী মাতৃক এই দেশের মধ্যেই রয়েছে পাহাড়, পর্বত সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে বিনোদনের নানান ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। পর্যটক হিসেবে আপনি যদি ভ্রমণ করতে চান, মাথার ওপর নীল চাঁদোয়া, মেঘে-বৃষ্টিতে ভেজা বাতাস, পায়ের নিচে অন্য এক পৃথিবী উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্রগ্রামের রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন। ঘুরে এসে ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের উদ্দেশে লিখেছেন- মোঃ রিয়াজ উদ্দিন
পাঠকদের ভ্রমনের সুবিধার্থে প্রাকৃতিক সুন্দর্যের পর্যটন স্থল বান্দরবান বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ-
বান্দরবান ঃ সবুজ আর পাহাড়ের অনন্য রূপ মিলেমিশে রয়েছে বান্দরবানে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ ছুটে যায়। উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে নীলগিরি, স্বর্ণমন্দির, মেঘলা, শৈল প্রপাত, নীলাচল, মিলনছড়ি, চিম্বুকসহ বেশ কয়েকটি জায়গা। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৭ কি.মি. দক্ষিণ পূর্ব দিকে লামা উপজেলার অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট ওপরে বাংলাদেশের নতুন পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরির অবস্থান। যাকে বাংলাদেশের দার্জিলিং হিসেবে অবহিত করা যায়। নীলগিরি যেতে হলে আগে থেকে ল্যান্ডক্রুজার জিপ ভাড়া করতে হবে। চাদের গাড়ি ও ডিজের চালিত অটোতে যাওয়া যায়। এ ছাড়া রয়েছে স্বর্ণমন্দির। বর্তমানে স্বর্ণমন্দির উপাসনালয়টি বান্দরবান জেলার একটি অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে পরিগণিত হয়। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই ”বৌদ্ধ ধাতু জাদী”কে স্বর্ণমন্দির নামকরণ করা হয়।
এটির নির্মাণশৈলী মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ টেম্পলগুলোর আদলে তৈরি করা হয়। তারপর যেতে পারেন মেঘলা। বান্দরবান জেলা শহরে প্রবেশের ৭ কি.মি. আগে মেঘলা পর্যটন এলাকাটি অবস্থিত। এটি সুন্দর কিছু উঁচু নিচু পাহাড়বেষ্টিত একটি লেককে ঘিরে গড়ে উঠে। ঘন সবুজ গাছ আর লেকের স্বচ্ছ পানি পর্যটককে প্রকৃতির কাছাকাছি টেনে নেয় প্রতিনিয়ত। শৈল প্রপাত। শৈল প্রপাত বান্দরবান শহর হতে ৭ কি.মি. দক্ষিণ পূর্বে চিম্বুক বা নীলগিরি যাওয়ার পথে দেখা যাবে। পাহাড়ের চূড়া থেকে চারদিকের সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য অবগাহন এখানে প্রকৃতিপ্রেমীদের টেনে আনে। ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম তারপর চট্টগ্রাম থেকে সোজা বান্দরবান। এতে খরচ পড়বে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।
বান্দরবানে পর্যটন কর্পোরেশনের একটি হোটেল আছে মেঘলাতে। যার ভাড়া রুম প্রতি ৭৫০ হতে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। হোটেলগুলোতে রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা আছে। বান্দরবানে সব হোটেলে খাবারের মানের চেয়ে দামটা বেশি।
বান্দবনের বর্ণনাতীত অনেক সুন্দরের সন্ধান পাওয়া যাবে, কিন্তু বান্দরবনের সামনে সবকিছুই যেন মলিন মনে হয়। একেবারে খাঁটি সত্য হলো, এমন ঘুমঘুম সুন্দর জায়গা পৃথিবীতে আর একটিও নেই। শরতের আকাশ শুভ্রতার প্রতীক। শরতে আকাশ ভরে থাকে সাদা মেঘে। কিন্তু শরতেও আকাশ কালো হয়, মেঘ নামে, অঝোরধারায় বৃষ্টি ঝরে। সাহিত্য হয়, হয় ফটোগ্রাফি। বাকরহিত করে তারপর সৃষ্টিশীল ভাবনায় মন হয় আন্দোলিত। আজ সেসব অনেক কিছু হওয়ার গল্প বলব। যে গল্পের শুরু ঢাকা থেকে হলেও প্রকৃত শুরু বান্দরবান শহর থেকে! শেষ পর্যন্ত আসব না, আসব না করে বান্দরবান পর্যন্ত চলে এলাম। এসেই যখন পড়েছি, তখন কেবলই সামনে চলা। রাঙামাটি থেকে আমরা জিপ নিয়ে ছুটলাম বান্দরবনের উদ্দেশ্যে। চালক জুয়েল যথারীতি আমাদের সফর সঙ্গী। এই পাহাড়ি জনপদের সব রাস্তা ও স্পট তার চেনা জানা। জুয়েল আমাদেরকে বলল স্যার সন্ধ্যার আগে যেতে না পারলে নীলাচলের প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যাবে না। তাই সে দ্রুত গতিতে যেতে লাগল। রাঙ্গামাটি থেকে বান্দরবন যাওয়ার পথে পাহাড়ি জনপদে দেখা হয়ে যায় আমাদের পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্টজন খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় জননেত্রী বাসন্তী চাকমা এর সাথে। পথিমধ্যে দেখা হওয়ায় আমাদের ভ্রমণের আনন্দ আরো বেড়ে যায়। এর আগে তিনি আমাদের ভ্রমণের খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। পথে প্রথমে ঝিরিঝিরি শুরু, কিছুক্ষণ সেই ঝিরিঝিরি অঝোরধারার রূপ পেল। আমরা খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম, পাহাড়ে বৃষ্টি না হলে কী জমে! এভাবেই বৃষ্টি মাথায় ঘুমাব ঘুমাব করেও না ঘুমিয়ে প্রকৃতির সব সুন্দর গিলে গিলে চলে এলাম বান্দরনে নীলাচলে। পাহাড়ের পাদদেশে নয়নাভিরাম সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে থাকলাম। দেশ বিদেশ থেকে আগত অনেক পর্যটকদের ভিড় পরিলক্ষিত হল। একদল পাহাড়ী মানুষ তখন সেখানে গেয়ে যাচ্ছিল আঞ্চলিক গান। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। রাত নেমে অন্ধকার গাড় হতে লাগলো আমরা পাহাড় বেয়ে নিচের দিকে আসতে থাকলাম, বান্দরবন শহরের অদূরে রেস্ট হাউসে রাত্রিযাপনের জন্য । বান্দরবন শহরের পাহাড়গুলি যেভাবে দাঁড়িয়ে, তা দেখি আর ভাবি, নিশ্চিত এ তার উদ্যাপনের ভঙ্গিমা, প্রকৃতির সামনে সবকিছু তুচ্ছ বোঝাতেই তার এমন উদ্যাপন।সেদিন রাতে পাহাড়ের কাছে শুধু একটি কথাই জানতে চেয়েছিলাম, কেন আমরা সত্যিকার অর্থে মানুষ হতে পারছি না।
পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত বান্দরবন শহরের সর্বোচ্চ উচ্চতায় একটি পাহাড়ে হিলটপ রেস্ট হাউজ পুরোটাই আমাদের জন্য বরাদ্ধ। দ্বিতীয় তলায় বিশাল সুপ্রসস্থ নান্দনিক ভি.আই পি ‘নীলগিরি’ নামক স্যুটরুমে আমাদের থাকার ব্যবস্থা। তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, এই রেস্ট হাইজটি নাকি দেশের সবচেয়ে নান্দনিক ও আধূনিক সুযোগ সুবিধায় নির্মিত। আমরা রেস্ট হাউজের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে থাকলাম। যা আজকের লেখায় বলে শেষ হবে না। তবু একটু বলি, আসলে মারমা নৃ-গোষ্ঠী ও রেস্ট হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আথিতেয়তা তুলনা হয়না এবং ভুলবার নয়। রাতের বেলায় পাহাড়ের ওপর চলে মেঘের লুকোচুরি। পাহাড়ে নেমে এসেছে রাত। চারদিকে গাঢ় অন্ধকার। কিন্তু এই রাতেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সামনে পাহাড়ের সারি। আকাশভরা তারা। প্রকৃতি আলো করে উঠেছে পূর্ণিমার চাঁদ। মায়াবী এই আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে কেমন যেন রহস্যময় করে তুলেছে। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে শুনছি ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝি পোকার একটানা শব্দ। জোনাকি পোকার দল আলো জ্বেলে আমাদের চারপাশে উড়ছে। মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে প্যাঁচা বা বাদুড়ের ডাক। আরও, আরও অনেক দূরে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের পাদদেশে বৈদ্যুতিক বাতির আলোকসজ্জা। এ যেন অপার্থিব কোনো দৃশ্য, যা আমাদের কাছে খুব অচেনা। ভালো লাগায় ভরে গেল মনটা। রাতের এই রূপ দেখতে দেখতে এক সময় আমরা ঘুমিয়ে গেলাম।
আজ শুধু এইটুকু থাক, এই গল্প তুলে রেখে চলুন শুনি বান্দরবনের সেই ভোরের গল্প। চোখের সামনে রাতের অন্ধকার ভেদ করে সূর্য উদয় হলো, আহা, কতদিন এভাবে ভোর দেখা হয় না। পাখির ডাকে সকাল হলো। কিন্তু এ কী! সূর্য কোথায়? এ যে মেঘের পালক। চারদিকে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা সাদা মেঘ।
এমনকি ঘরের দরজা-জানালা দিয়ে মেঘ ঢুকে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাদের। একসময় একপশলা বৃষ্টিও নিয়ে এল সেই মেঘ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা পাওয়া গেল। হঠাৎ করেই যেন দৃশ্যপট পাল্টে গেল। উজ্জ্বল সোনালি আলোয় ঝকঝক করে উঠল প্রকৃতি। চারদিকে সবুজের সমারোহ। পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। রঙিন প্রজাপতি, ফড়িংয়ের দল উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবারও মনে হলো এ কী স্বপ্ন, না সত্যি? আমাদের চারপাশের এই সৌন্দর্য কোনো কল্পনা নয়, এ সত্যি। আমরা দাঁড়িয়ে আছি বান্দরবানের উঁচু পাহাড়ের ওপর হিল টপ রিসোর্ট খোলা অলিন্দে। সেদিন রাঙ্গামাটি থেকে বান্দরবান পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল বলে রাতের রূপ দিয়েই শুরু হয়েছিল আমাদের সময়। খোলা চত্বরে দাঁড়িয়ে সামনে তাকিয়ে মনে হলো নজরুলের সেই গানখানি, ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ।’ খোলা বারান্দায় সকালের নাশতা করতে করতে দেখা যায় নীল আকাশ, পাহাড়, সবুজ বনবনানী। পাহাড়ের কোলজুড়ে সাজানো আছে ছোট ছোট পাহাড়ি বাড়িঘর । সেদিন আমরা বেলা বাড়ার আগেই ভোর সাতটার সময় স্বদলবলে চলে যাই নীলগিরির সৌন্দর্য দেখার জন্য। পাহাড়ী রাস্তার রাজা জিপ ছুটে চলল, গাড়ির জানালা থেকে দেখতে থাকি মেঘের রাজ্য।
পুরো বিষয়টাই স্বর্গীয় মনে হচ্ছিল আমাদের কাছে। এ যেন বিশাল এক মেঘের বন। আহা কী চমৎকার! জীবনে এমন অসাধারণ দৃশ্য না দেখে বাঁচলেই বা কী! আমরা সকাল আটটায় নীলগীরি রিসোটে পৌঁছায়। এই রিসোটি সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত। এখানে সুন্দর একটি রেস্তোরা রেেয়ছে, এই রেস্তোরায় সকালে নানারকম সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। এখানে রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার হেলিপ্যাড। নাস্তা শেষে ঘুরে বেড়ানো যায় এই রিসোটের চারপাশ। একদম উঁচুতে রয়েছে অভিনব একটি সেতু, যা দুটি পাহাড়কে এক করেছে। সেখানেই তৈরি হচ্ছে সুইমিংপুল। ইচ্ছে হলে গা এলিয়ে দিয়ে এই রেস্তোরায় বসে চা-কফি পান করতে পারেন বা গান শুনতে পারেন। একা বসে বই পড়তে চান? খোলা বারান্দায় বসে ছবি আঁকতে চান? দল বেঁধে বসে গল্প করতে বা গান গাইতে বা আড্ডা হই হুল্লোড় করতে চান? অথবা দুজনে নিভৃতে বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চান? তাহলে নীলগীরি যেতে পারেন। বান্দরবান শহর থেকে এক ঘণ্টার পাহাড়ি পথ। রিসোর্টটির সুন্দর স্থাপত্য, আধুনিক সুবিধা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে সহজেই। সকাল গড়িয়ে বেলা বাড়তে থাকল। বারান্দায় বসে সামনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখতে পেলাম আকাশজুড়ে মেঘের যে খেলা চলছে, তারই ছায়া পড়েছে পাহাড়ে। যেখানে কালো মেঘ, সেখানে পাহাড় কালো; যেখানে রোদ, সেখানে প্রকৃতি উজ্জ্বল। পাহাড়ে একসঙ্গে এত রূপ, আমি কখনো দেখিনি আগে। জুন থেকে অক্টোবর মাসে গ্রীষ্ম ও শরৎকালে এখানে ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতি তার রূপ বদলায়। কবির ভাষায়, ‘আকাশজুড়ে মেঘের খেলা, কোথায় বা সীমানা/ দেশে দেশে খেলে বেড়ায় কেউ করে না মানা।’ আরও জেনে নিন নীলগীরির অদূরে সাইরু পাহাড়। সাইরু নামের একটি পাহাড়ি মেয়ের ভালোবাসার গল্প, যা লেখা আছে এই পাহাড়ে। শীতকালটা আবার অন্য রকম ভালো। মেঘ আর রোদের আনাগোনা চলতেই থাকে। আবার সাইরু থেকে ফেরার পথে দেখে নিতে পারেন চিম্বুক, শৈলপ্রপাত। কিনতে পারেন পাহাড়িদের তৈরি পোশাক, পেঁপে, জাম্বুরা, আনারস, জুমের সবজি, বাংলা কলা, হলুদের ফুল, আদার ফুল, স্কোয়াশ ইত্যাদি। আমরা চিম্বুক পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে চলে যাই স¦র্ণ মন্দিরে। বান্দরবন শহরের অদূরেই এই স্বর্ণ মন্দির। ধর্মীয় স্থাপত্যে তৈরী এই মন্দির দেখে আমরা চলে আসি হিলটপ রেস্ট হাউজে। তখন দুপুর গড়িয়ে যায়।
আমরা বান্দরবনের পাহাড়ি পাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে ২৬ডিসেম্বর হিলটপ রেস্ট হাউজে দুপুরের সুস্বাধু টাটকা খাবার খেয়ে বিকেলে ছুটলাম পর্যটন নগরী কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। পাহাড়ি রাস্তা বান্দরবন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িতে কয়েকদিন ভ্রমণে আমাদের সাথে থাকা চালক জুয়েল রানীরহাট নামক জায়গায় পৌঁছে দিলো। আমরা অন্য একটি গাড়িতে করে সন্ধ্যায় কক্সবাজারে পৌঁছাই। মানবাধিকার খবরের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানে আলম সাকি আমাদেরকে গ্রহন করার জন্য আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। তিনি আমদেরকে গ্রহনের পর নিয়ে গেলেন একটি নিরিবিলি রিসোর্টে। সেখানে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করলেন এবং আমাদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। রাতের খাবার শেষে আামরা ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন ২৭ডিসেম্বর ভোরে চলে যাই সেন্টমার্টিনের জাহাজ ধরার জন্য টেকনাফে। জানে আলম সাকি আগে থেকেই সেন্টমার্টিনে যাওয়া-আসার সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।
বিঃদ্রঃ প্রিয় পাঠক, সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ভ্রমনের বিস্তারিত জানতে নিয়মিত পড়–ন পরবর্তী পর্বগুলী।
লেখক: সম্পাদক, মানবাধিকার খবর
Email-md.reaz09@yahoo.com
|
|
|
|
”মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। ভ্রমন করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় দুস্কর। একঘেঁয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠে, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম, একটু বিরাম ও একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন সৃষ্টিকর্তার অপারময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। ঢাকার বাইরে ঘুরে আসতে চান? তবে স্বল্প মূল্যে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দেশের দর্শনীয় স্থানসমুহ। আমাদের সুজলা-সুফলা নদী মাতৃক এই দেশের মধ্যেই রয়েছে পাহাড়, পর্বত সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে বিনোদনের নানান ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। পর্যটক হিসেবে আপনি যদি ভ্রমণ করতে চান, মাথার ওপর নীল চাঁদোয়া, মেঘে-বৃষ্টিতে ভেজা বাতাস, পায়ের নিচে অন্য এক পৃথিবী উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্রগ্রামের রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন। ঘুরে এসে ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের উদ্দেশে লিখেছেন- মোঃ রিয়াজ উদ্দিন
পাঠকদের ভ্রমনের সুবিধার্থে প্রাকৃতিক সুন্দর্যের পর্যটন স্থল সাজেকের বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ-
সাজেকঃ সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উল্লেখ্যযোগ্য পর্যটন স্থল। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমনকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ আমাদের বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসক এদেশ শাসন করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন সুরম্য প্রাসাদ, মসজিদ, মিনার ইত্যাদি তৈরী করেছেন। এগুলোর সাথে প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্য যেমন পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার তো আছেই। এছাড়াও এদেশের বন, জঙ্গল, অরণ্য, পাহাড় ইত্যাদি এখন আমাদের দর্শনীয় স্থানে পরিনত হয়েছে। এরকমই একটি পাহাড়ি পর্যটন কেন্দ্র সাজেক। সাজেক নদী হতে সাজেক ভ্যালীর নামকরণ হয়েছে। বাংলাদেশ এর রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন সাজেক। এর আয়তন ৬০৭ বর্গমাইল(১৫৭২ বর্গ কি.মি)। বাংলাদেশ এর সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হলো এই সাজেক। সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার পথটা একটু বেশিই সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা। দুই পাশে সবুজ গাছগাছালি। দূরে দাঁড়িয়ে উঁচুউঁচু পাহাড়। আকাশ পরিষ্কার থাকায় নীল দেখাচ্ছিল। নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা, সবুজ গাছের সারি আর নির্মল বাতাস, এর থেকে ভালো কোনো দৃশ্য আর হতে পারে না। সাজেক ইউনিয়নের মধ্যে সাজেক ভ্যালি একটি বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ। এর সবখানেই মেঘ, পাহাড় আর সবুজের মিতালী চোখে পড়ে। সাজেকে তিনটি হ্যালিপ্যাড রয়েছে; যা থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের অপুর্ব দৃশ্য দেখা যায়। এখানে ২৪ ঘন্টায় প্রকৃতির তিনটি রুপের দেখা মিলে। কখনো প্রচন্ড গরম, তার কিছুই পরেই হয়তো চারদিকটা ঢেকে যায় মেঘের চাদরে; মনে হয় যেন একটা মেঘে উপত্যকা। তার কিছু পরেই বৃষ্টি। রাঙামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অব¯িত সাজেক। সেভেন সিস্টার্সের এক সিস্টার হলো মিজোরাম। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত। সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে ট্রাকিং করে কংলাকে পাহাড়ে যাওয়া যায়। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তে বড়বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবন যাপন, চারদিকে মেঘের আনাঘোনা ভ্রমনপিপাসুদের দৃষ্টি কাড়ে এবং ক্লান্তি দুর করে। এখানে সাজেক বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে। বিজিবির এই ক্যাম্পটি খুবই দৃষ্টিনন্দন এবং এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত। বিজিবি সদস্যদের সুষ্ট পরিকল্পনায়, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের দ্বারাই বর্তমানে এর ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। সাজেকের ভ্রমনরত পর্যটকদের প্রায় সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। সারাবছরই এখানে যাওয়া যায়। উঁচু উঁচু পাহাড় থাকা সত্বেও এখানে পাহাড় ধস বা রাস্তাধসের কোনো ঝুঁকি নেই। রুইলুইপাড়া ও কংলাকপাড়া’ সমন্বয়ে সাজেক গঠিত। রুইলুই পাড়ার উচ্চতা প্রায় ১৭২০ ফুট। কংলাক পাহাড়ের উচ্চতা ১৮০০ফুট। সাজেকের মূলত লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসীরা বসবাস করে। এখানকার কলা ও কমলা বেশ বিখ্যাত। সাজেক ভ্যালি থেকে রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখা যায়। একারণে সাজেক ভ্যালিকে রাঙামাটির ছাদ বলা হয়। এখানে সকালের সূর্যোদয় ও সূর্য়াস্তের দৃশ্য সত্যিই নয়নাভিরাম এবং মনে হবে আমরা আকাশের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। কংলাক পাহাড়ের উপর ৩৫টি পরিবার বসবাস করে লোকসংখ্যা প্রায় ২১০-২২০ জন। মানুষ কম কিন্তু তারপরও এখানে চার ধর্মের লোক বাস করে-মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান। এখানে দাড়িয়ে চারপাশ অনেক সুন্দরভাবে দেখা যায়। কংলাকে যাওয়ার পথে কমলাবাান চোখে পড়ে। শুধু তাই নয়, বুনো কলাগাছের ছড়াছড়ি। কলাও ধরেছে, কিন্তু কেউ খায় না। মাঝে মাঝে আনারসের চাষ ও রাবারের বাগান করা হয়েছে। পাহাড়ি রাস্তায় চলতে চলতে দু’পাশের সৌন্দর্য দেখে যেন চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না। আর তখনই মনে পড় গেল- আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি তুমি এই অপরুপ রুপে বাহির হলে জননী ওগো মা তোমায় দেখে দেখে আখিঁ না ফেরে....
রাঙামাটি, বান্দরবন-খাগড়াছড়ি, পাহাড়ি অঞ্চলের মেয়েরা খুবই পরিশ্রমী হয়। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বেঁচে থাকার জন্য। ছেলেরা বাচ্চা কোলে নিয়ে হেলে-দুলে হেঁটে বেড়ায়। সাজেকেও এর ব্যত্যয় হয়নি। একই দৃশ্য দেখতে পেলাম। বাঁশের তৈরী ঝুড়িতে কাঁচা হলুদ ভর্তি করে পিঠের ওপর নিয়ে মেয়েরা নিচ থেকে পাহাড়ে উঠে যাচ্ছে। যে উচ্চতায় সাধারন মানুষ বাঁশে ভর করে উঠে সেখানে ওরা হলুদ ভর্তি ঝুড়ি নিয়ে হাটুর জোরেই উঠে গেলো। আর আমরা তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম আর বিস্মিত হলাম! সেনাবাহিনীর তত্ত্ববধানে নির্মিত ও পরিচালিত সাজেক রিসোর্ট। এটা জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত নয়। তিনতলা বিশিষ্ট রিসোর্টটি সত্যিই সুন্দর! এছাড়া আরো সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর তিন তলায় দাঁড়িয়ে চারদিকের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মনে হবে চতুর্দিকের পাহাড়গুলো যেনো ঘুমিয়ে আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে মনে হলো মহান আল্লাহ না জানি কত সুন্দর! যার সৃষ্টি এত সুন্দর! সন্ধ্যার পর সাজেকের সত্যিকারের সৌন্দর্য দেখা যায়। তখন আকাশের তারাগুলো খুব কাছে মনে হয়। মনে হয় গোনাও যাবে। এতো নীল এত সবুজ চোখকে এমন ভাবে আকৃষ্ট করেছে যে এর আকর্ষণ শেষ হয় না। তার চেয়েও বড় কথা হলো, মন বলবে এখনই তো চলে যেতে হবে যত পার দেখে নাও। কিভাবে যাবেনঃ খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দুরুত্ব প্রায় ৭০ কি.মি। আর দীঘিনালা থেকে প্রায় ৪৯ কি.মি.। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ি থেকে। রাঙামাটি থেকে নৌপথে কাপ্তাই হয়ে অনেকটা পথ পায়ে হেঁটেও সাজেকে যাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি অথবা দীঘিনালা হতে স্থানীয় গাড়িতে করে সাজেকে যাওয়াই হচ্ছে বর্তমানে সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় মাধ্যম। তবে একসঙ্গে বেশি মানুষ গেলে চান্দের গাড়িতেই সবচেয়ে মজা। এক্ষেত্রে ১০নং বাঘাহাইট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্পের অনুমতি নিতে হয়। শুধু তাই নয় মূলত অনুমতির জন্য ভ্রমনরত সদস্যদের তথ্য ক্যাম্পে জমা দিতে হয়। একে আর্মি এসকর্ট বলা হয়। আর্মির পক্ষ থেকে গাড়িবহর দ্বারা পর্যটকদের গাড়িলোকে নিরাপত্তার সাথে সাজেক পৌছে দেয়া হয়। দিনের দুটি নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত আর্মি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে সাজেক যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। পর্যটকদের সর্বাধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়। সাজেক যাওয়ার পথে বাঘাইহাটে একটি অপরুপ সুন্দর ঝর্ণা রয়েছে, যার নাম হাজাছড়া ঝর্ণা। অনেক পর্যটক মূল রাস্তা হতে সামান্য ট্রাকিং করে গিয়ে ঝর্ণাটির সৌন্দর্য উপভোগ করেন। সমাপ্ত-
বিঃদ্রঃ প্রিয় পাঠক, সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান ভ্রমনের বিস্তারিত জানতে নিয়মিত পড়–ন পরবর্তী পর্বগুলী।
লেখক: সম্পাদক, মানবাধিকার খবর
Email-md.reaz09@yahoo.com
|
|
|
|
“দ্বিতীয় পর্ব“
”মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। ভ্রমন করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় দুস্কর। একঘেঁয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠে, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম, একটু বিরাম ও একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন সৃষ্টিকর্তার অপারময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। ঢাকার বাইরে ঘুরে আসতে চান? তবে স্বল্প মূল্যে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দেশের দর্শনীয় স্থানসমুহ। আমাদের সুজলা-সুফলা নদী মাতৃক এই দেশের মধ্যেই রয়েছে পাহাড়, পর্বত সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে বিনোদনের নানান ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। পর্যটক হিসেবে আপনি যদি ভ্রমণ করতে চান, মাথার ওপর নীল চাঁদোয়া, মেঘে-বৃষ্টিতে ভেজা বাতাস, পায়ের নিচে অন্য এক পৃথিবী উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্রগ্রামের রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন। ঘুরে এসে ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের উদ্দেশে লিখেছেন- মোঃ রিয়াজ উদ্দিন
পাঠকদের ভ্রমনের সুবিধার্থে রাঙামাটিসহ আমাদের ভ্রমনের গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলির বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ- পার্বত্য অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বরাবরের মতোই প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি। রাঙামাটির প্রকৃতি, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি ভ্রমণপ্রিয়দের আকৃষ্ট করে। প্রকৃতি যেন এখানে বছরের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রুপে সাজে। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা-রুপের জৌলুস থাকে সাড়া বছরই। পার্থক্য কেবল ঋতুর সাজে। অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলা। এখানে চলে পাহাড়, নদী আর হ্রদের মিলনমেলা। কোনো উপমাই যথেষ্ট নয় যতটা হলে বোঝানো যায় রাঙামাটির সৌন্দর্য। এখানকার পত্যেক পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অদেখা ভুবন যেখানে অপেক্ষা করছে নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। লেকের পানি চিরে ভেসে ওঠা ছোট্ট শহর। নানান বৈচিত্রের ভান্ডারের মধ্যে উপজাতীয় সংস্কৃতি, পাহাড়ি জনপদ এবং মানুষের জীবন সংগ্রাম মনোমুগ্ধ করে তোলে। শহরের আকর্ষন উপজাতীয় জাদুঘর। এখানকার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের পুরোটাই মিলবে জাদুঘরে। উল্লেখ্য বাংলাদেশে একমাত্র রিক্সা মুক্ত জেলা হল এই রাঙামাটি শহর। সৌন্দযের লীলাভূমি রাঙামাটি। পাহাড়ের বুকে সূর্যালোক, ভরা পূর্ণিমা রাতে হ্রদের পানিতে মৃদু ঢেউয়ের ওপর জোছনার ঝলকানি আর গিরি নির্ঝর ঝরনার রূপমাধুরী দেখেনি যে, সে যেন অপরূপ পাহাড়ি অরণ্যের জনপদ রাঙামাটি দেখেনি। এলোমেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের সমাবেশ। এসব নিয়েই পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটি। যেদিকেই তাকাবেন যেন শৈল্পিক আঁকা দৃশ্য। আঁকাবাঁকা কাপ্তাই লেক। চারদিকেই স্বচ্ছ জলধারা। কাপ্তাই লেক মিশেছে প্রকৃতির সঙ্গে অপরূপ সাজে। প্রকৃতিপ্রেমীদের প্রতিনিয়তই যেন কাছে টানছে কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ জলধারা। এমন পাগল করা প্রকৃতির অদ্ভুদ সৌন্দর্যের আঁধারে মিলিয়ে যেতে কার না মন চায়। তাই তো সময় পেলেই প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন রাঙামাটির দৃষ্টিকাড়া মনোরম রাঙামাটি জাদুঘর, জেলা প্রশাসন বাংলো, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার কার্যালয়, বৌদ্ধদের তীর্থস্থান । বৌদ্ধ ধর্মের বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে এখানে। ইচ্ছে করলে অটোরিক্সা ভারা করে ঘুরে আসা যায়। কারণ এগুলো শহরে মধ্যে অবস্থিত। এছাড়া আরো রয়েছে নৌপথে কাপ্তাই হৃদরে স্বচ্ছ জলরাশি বুক চিড়ে অবস্থিত সুভলংয়ের সবুজ দ্বীপ , সেগুন বাগানকে কেন্দ্র করে রয়েছে বেসরকারি পর্যটন স্পট পেদা টিং টিং নামক রেস্টুরেন্ট। পর্যটন স্পট আর নৈসর্গিক আবেশে, ঘুরে বেড়াচ্ছেন পাহাড়ে।
রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জাদুঘরে রয়েছে পাহাড়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ জাতিগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সাংস্কৃতির প্রাচীন নিদর্শন। কিভাবে যাবেনঃ ঢাকার কলাবাগন, ফকিরাপুল ও কমলাপুর থেকে সরাসরি রাঙামাটি ছেড়ে যায় এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী সহ বিভিন্ন পরিবহন। এছাড়া অন্যান্য বাস ট্রেন ও বিমানে চট্টগ্রাম হয়ে বাই রোডে রাঙামাটি আসা যায়। চট্টগ্রাম বদ্দারহাট বাসটার্মিনাল থেকে প্রতিদিনই মিলবে রাঙামাটির বাহন। চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া যায় খুব সহজে। চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পর্যটন শহর রাঙামাটি। চট্টগ্রাম শহর থেকে রাঙামাটি আসতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। চট্টগ্রামের মুরাদপুর বিশ্বরোডে আছে রাঙামাটির প্রধান বাস স্টেশন। যেখান থেকে ছাড়ে বিআরটিসি এবং বিরতিহীন বাস সার্ভিস সমূহ।
কোথায় অবস্থান করবেনঃ একটু নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে চাইলে উঠতে পারেন রাঙামাটির পর্যটন মোটেলে। এখানে শুধু ডবল রুম রয়েছে। প্রতি রুমের জন্য ভাড়া গুনতে হবে ৮০০টাকা। আবার এসি ডবল রুমের ভাড়া পরবে ১২০০ টাকা। এছাড়া বেসরকারী হোটেলে রাতযাপন করা যায়। এজন্য বাড়া নিতে পারেন পৌরসভার কার্যালয়ের পাশেই অবস্থিত হোটেল সুফিয়া, রির্জাভ বাজারে গ্রীন ক্যাসেল, কলেজ েেটর মোঠেল জজ। এসব হোটেলে সিঙ্গেল রুরে ভাড়া পরবে ৫০০ টাকা, ডবল রুম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং এসি রুমের জন্য দিতে হবে ১২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা । এ ছাড়াও পর্যটকদের থাকার জন্য মাঝারি মানের অল্প টাকার হোটেলেও রয়েছে।
রাঙামাটির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের চিত্র পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো। কাপ্তাই লেকঃ পার্বত্য অঞ্চলের সম্পূর্নটাই সৌন্দর্যে ভরপুর পুরো এলাকা তন্ন তন্ন করে চষে বেড়ালেও আপনার মুগ্ধতা শেষ হবে না। এখানে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ঘুমিয়ে থাকে শান্ত পানির হ্রদ। প্রকৃতি এতো সুন্দর! তবে কাপ্তাই লেককে প্রাকৃতিক বললে ভুল হয়ে যাবে। পাকিস্তান আমলে জলবিদ্যুত বাস্তবায়নের স্বার্থে কর্ণফুলী নদীর গতিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে পাহাড়ে ফাঁক ফুকুরের সমতল আবাদি জমি গুলো পানিতে পূর্ণ হয়ে বিশাল এক সরোবরে পরিণত হয়। এটি এখন কাপ্তাই লেক। লেকের নীল জল যে কারো হৃদয় শীতল করে দেয়। সম্পূর্ন আবৃত করে রেখেছে পর্বতশ্রেণী। লেকের জলে নৌকায় ভেসে বেড়ানো যে কারো জন্য স্মরণীয় ঘটনা।
শুভলং ঝরণাঃ জেলার সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় জায়গার মধ্যে শুভলং ঝরনা একটি। রাঙামাটি ভ্রমনে এলে সবার প্রথম আকর্ষণ। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে ঝরনাটি পতিত হয়েছে কাপ্তাই লেকে। শুভলং কাছে যেতে বাধা নেই, ফলে ঝরনার রুপমাধুর্য প্রাণ ভরে উপভোগ করা যায় সহজেই। সেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায় নৌকা বা স্প্রীড বোট। শুভলং বাজারঃ এখানকার সাজসজ্জা অন্য বাজারের থেকে খানিকটা ভিন্ন। বিন্নিচাল তিতগুলা, তিতবেগুন, বাঁশপ্রোল, গোমাইত্যা, শিমে আলু, তারা ডাঁটা- এগুলো স্থানীয় খাবার। রাঙামাটি রেস্তোরায় পাওয়া যায় নানা ধরনের পাহাড়ি খাবার। পাওয়া যায় তাদের হাতে বোনা ঐতিহ্যবাহী পোশাক, গামছা, গায়ের চাদর, কম্বল ইত্যাদী। বাজারে যেতে হলে শুভলং ঝরনার পথেই যেতে হয়।
রাজবন বিহারঃ দেশের সর্ববৃহৎ এ জেলার বেশ কয়েকটি নিদর্শনের মধ্যে রাজবন বৌদ্ধ বিহার একটি। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি পবিত্র স্থান। আধ্যাত্মিক মন্দির বলেও এর পরিচিতি বা নাম রয়েছে। মন্দিরের দৃষ্টিনন্দন গঠনের জন্য সাধারন পর্যটকদের কাছেও এটি আকর্ষণীয় জায়গা। কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কঃ জাতীয় এ উদ্যানের অবস্থান কর্ণফুলী নদী ও কাপ্তাই মাউন্টেন রেঞ্জের মাঝামাঝি। ৫,৪৬৪.৭৮ হেক্টর জমি নিয়ে ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে হরিণ, বনবিড়াল, হাতি, বানরসহ অন্যান্য প্রানী। বিলুপ্তপ্রায় বেশ কয়েক প্রকার পাখিও আছে। বর্তানে এটি বন্য পশু-পাখির এক অভয়ারণ্য।
ঝুলন্ত সেতুঃ দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতির পেছনে এখন পর্যন্ত কাপ্তাই লেকের পরই যার স্থান সে হলো রাঙাাটির ঝুলন্ত সেতু। দৃষ্টিনন্দন সেতুটি কাপ্তাই লেকেরই বিশেষ এক অংশে স্থাপিত। সেতুকে কেন্দ্র করে এখানে রয়েছে একাধিক ক্যাটাগরির বোটিং সেবার আয়োজন। বর্ষায় লেক ও তার চারপাশের প্রকৃতিতে লাগে যৌবনের ছোঁয়া। পানিতে টইটম্বুর হয়ে থাকে লেকপ্রাঙ্গন।
প্যাদা টিং টিংঃ কাপ্তাই লেকের একটি অংশের মাঝখানে দ্বীপের মতো জায়গাটিতে একটি রেস্তোরা রয়েছে, নাম প্যাদা টিং টিং। সেখানে মোটামুটি স্বল্প খরচে পাহাড়ি খাবারের হরেক পদ থেকে বেছে নিতে পারবেন আপনার পছন্দের খাবার। মন্ডি, নতুনমন্ডি, চিকেন চাটনি ইত্যাদি এখানকার জনপ্রিয় পদ। বিশেষ করে সেখানে গিয়ে কলাপাতা ও বাঁশের চোঙার মধে রান্œা করা মুরগীর মাংস অথবা মাছ খেতে ভুলবেন না।
কেন যাবেনঃ যেদিকেই তাকাবেন যেন শৈল্পিক আাঁকা দৃশ্য। আঁকাবাঁকা কাপ্তাই লেক। চারদিকেই স্বচ্ছ জলধারা। কাপ্তাই লেক মিশেছে প্রকৃতির সঙ্গে অপরুপ সাজে। দেখলে মনে হয় যেন কোনো এক শিল্পী তার তুলিতে একেছেন জীবন্ত এক চোখ জুৃড়ানো ছবি। সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে অসংখ্য পাহাড়ি ঝরনার কলতান আরো আকর্ষণীয় করেছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের প্রতিনিয়তই যেন কাছে টানছে কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ জলধারা।
যাওয়ার পথে যা দেখতে পাবেনঃ চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে বাসে চড়ারসময় বেতবুনিয়া পা বাড়ালেই রাঙামাটি পার্বত্য জেলা। এ বেতবুনিয়ায় দেশের সর্বপ্রথম উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রটি অবস্থিত। এরপর রানীহাট বাজার অতিক্রম করে সামনে দিকে তাকালে সুউচ্চ অসংখ পাহাড়ের সাড়ি।
ছবি তোলায় সতর্ক ঃ পাহাড়ি ও উপজাতিদের সঙ্গে ছবি তুলতে আগে অনুমতি নিয়ে নিবেন। নতুবা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। কারণ, উপজাতীদের ছবি বাঙালীদের সাথে তোলার পর যদি সোস্যাল মিডিয়ায় যায়, আর সেই ছবি উপজাতীয় নেতারা দেখতে পায় তাহলে তাদের উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করেন। উপজাতীয়দের সাথে অনেকে ছবি তুলে বানিজ্য করে বলে নিয়মটা একটু কড়াকড়ি।
বিঃদ্রঃ প্রিয় পাঠক, সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটি ভ্রমনের বিস্তারিত জানতে নিয়মিত পড়–ন পরবর্তী পর্বগুলী।
লেখক: সম্পাদক, মানবাধিকার খবর
Email-md.reaz09@yahoo.com
|
|
|
|
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
নজরকাড়া এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর স্থানের নাম কুয়াকাটা। দক্ষিণাঞ্চলের ‘সাগর-কন্যা’ খ্যাত কুয়াকাটা ভ্রমণ ও অবকাশ সময় কাটানোর অন্যতম জায়গা। শুধু দেশে নয়, কুয়াকাটার পরিচিতি এখন বিশ্বজুড়ে। বেলাভূমির একই স্থানে দাঁড়িয়ে বারো ঘণ্টার ব্যবধানে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বিরল মনোরম দৃশ্য দেখার সমুদ্র সৈকত। নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে কুয়াকাটার রয়েছে আলাদা সুখ্যাতি। দেশের সর্বদক্ষিণে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে সাগরপারের এ জনপদ কুয়াকাটা। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এক কিলোমিটার প্রস্থ সৈকতের সর্বত্র রয়েছে সুন্দরের সমাহার। চোখ ধাঁধানো সবকিছু। রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, যার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য লেক। সৈকত লাগোয়া নারিকেল বীথি। রয়েছে জাতীয় উদ্যান অধীন ইকোপার্ক ও আন্ধার মানিক মোহনার উল্টোদিকের ফাতরার বিশাল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। রয়েছে শুটকি পল্লী,লাল কাঁকড়ার চর। অদূরেই রয়েছে পর্যটন-পল্লী গঙ্গামতি সৈকত। কুয়াকাটার অবিচ্ছেদ্য অংশ এখানকার আদি বাসিন্দা রাখাইন সম্প্রদায়। এদের ভিন্ন আদলের বৈচিত্রময় জীবনযাত্রা অবলোকনের সুযোগ রয়েছে। চোখে পড়বে এদের তাঁতসহ উল বুনন কার্যক্রম। সুযোগ মেলে অন্যতম সৌন্দর্য ইন্দো-চীনের আদলে রাখাইনদের শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার দর্শনের। এছাড়া কুয়াকাটার অদূরে মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে সীমা বৌদ্ধবিহার। এ-বিহারের মধ্যে গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন ১৩৭ মন ওজনের অষ্টধাতু নির্মিত বিশাল আকৃতির বৌদ্ধমূর্তি শোভা পাচ্ছে। রাখাইনদের দাবি এশিয়ার বৃহত্তম বৌদ্ধমুর্তি এটি। নিজের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করতে কুয়াকাটায় ভ্রমণের বিকল্প নেই। প্রাকৃতিক শোভাম-িত দৃশ্যপট অবলোকনের পাশাপাশি দেশের প্রাচীন পুরাকীর্তি বিভিন্ন বৌদ্ধবিহার ও প্রাচীন কুয়া স্বচক্ষে দেখার সুযোগ রয়েছে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী। সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা। ঢাকা থেকে পটুয়াখালী রুটে চলাচল করে এমভি দ্বীপরাজ, সৈকত ইত্যাদি লঞ্চ। এসব লঞ্চে প্রথম শ্রেনীর দ্বৈত কেবিনের ভাড়া ৮৫০-১০০০ টাকা। পুয়ায়াখালী বাস স্টেশন থেকে প্রতি ঘন্টায় কুয়াকাটার বাস ছাড়ে। ভাড়া ৬০-৭০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশাল এসে সেখান থেকেও বাসে চড়ে কুয়াকাটা আসা যায়। ঢাকা থেকে বরিশাল ও পটুয়াখালীর লঞ্চগুলো ছাড়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায়। ঢাকা থেকে সরসরি বাসও চলে কুয়াকাটার পথে। কমলাপুর বিআরটিসি বাস স্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ছাড়ে সরকারী পরিবহন সংস্থার বাস। আর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে কুয়াকাটার পথে চলে সাকুরা, সুরভী, দ্রুতি ইত্যাদি পরিবহনের বাস। কুয়াকাটায় থাকার জন্য এখন বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল আছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পর্যটন করপোরেশনের পর্যটন হলিডে হোমস। হোটেল স্কাই প্যালেস, হোটেল নীলঞ্জনা ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল গোল্ডেন প্যালেস, হোটেল সাগর কন্যা।
|
|
|
|
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। ভ্রমন করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় মুশকিল। একঘেয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম, একটু বিরাম, একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পরেন সৃষ্টিকর্তার অপারময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। ঢাকার বাইরে ঘুরে আসতে চান? তবে স্বল্প মূল্যে পরিবার নিয়েঘুরে আসতে পারেন দেশের দর্শনীয় স্থান। আমাদের সুজলা-সুফলা নদী মার্তৃক এই দেশের মধ্যেই রয়েছে পাহাড়, পর্বত সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে বিনোদনের নানান ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। আর আপনি যদি একজন পর্যটক হিসেবে ভ্রমণ করতে চান, তবে মাথার ওপর নীল চাঁদোয়া, মেঘে-বৃষ্টিতে ভেজা বাতাস। পায়ের নিচে অন্য এক পৃথিবী উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন চর কুকরি মুকরি। ভ্রমণ পিপাসুদের উদ্দেশে লিখেছেন- মোঃ রিয়াজ উদ্দিন
সভ্যতার বিকাশ, জীবন কিংবা জীবিকা অথবা প্রযুক্তির গতি যাই বলি না কেন আমরা দিনেদিনে কেবলই যন্ত্র হয়ে উঠছি। তাই প্রয়োজন হয় ক্ষণিকের বিরতি। ক্লান্তি দূর হয়, মনে প্রশান্তি আসে আর সামজিক বন্ধন হয় কিঞ্চিৎ দৃঢ়। শহুরে জীবন থেকে, যানবাহনের বিকট শব্দ এবং শিল্পকারখানার দূষণ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে যেতে হবে একটু দূরে, সবুজের কাছে। নদী, সমুদ্র কিংবা পাহাড় চূড়া যেখানেই যেতে চান, প্রয়োজন হবে একটু সময় এবং অর্থ। এবারের ঈদে বেশ লম্বা ছুটিছিলো। আমরা যারা সারা বছর কর্ম ব্যস্থ্য থাকি তারা শিকড়ের টানে গ্রামে ছুটে যাই। কেউ কেউ ভীড় করে দেশের ভেতরের বিনোদন কেন্দ্র, কিংবা পর্যটনের জন্য প্রসিদ্ধ স্থান সমূহে। দেশের বাইরেওযাচ্ছেন অনেকে। তবে আমি দেশের গন্ডি পেরুনোর আগে, নিজের দেশ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে অনুরোধ করবো সবাইকে। আমরা ঘর থেকে দুই পা ফেলে সত্যিই দেখিনি প্রকৃতির অপার সম্ভার! নদী মাতৃক বাংলাদেশে এক সময় জলপথ ছিলো যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। তবে তখন প্রচুর সময় লাগতো কোথাও যেতে চাইলে। প্রযুক্তির অপর্যাপ্ততা এবং আমাদের বাণিজ্যিক মানসিকতার বলিহয়ে অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন না করায় ইতিমধ্যে ঝড়ে গেলে বিপুল অমূল্য প্রাণ। তবে আশার কথা হলো এই যে, জলপথ এখন বেশ নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী। যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনে এইজলপথ এখনো অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে একনো জন বান্ধব। যারা সমুদ্র দেখতে ট্রেন, বিলাসবহুল বাস কিংবা বিমানে কক্সবাজার গিয়েছেন তাদের বলবো সময় হলে দক্ষিণবঙ্গে পা রাখুন। দেখতেনদী ও সমুদ্রের সঙ্গমে প্রকৃতির রূপ লাবণ্য। বলছি ব-দ্বীপ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ জেলে ভোলার প্রত্যন্ত চরফ্যাশণ উপজেলার সবচেয়ে পুরনো এবং আকর্ষণীয় চর কুকড়ি মুকড়ির কথা। কিভাবে যাবেনঃ সদরঘাট ঢাকা থেকে আপনি চাইলে লঞ্চে করে চরফ্যাশন এর বেতুয়া ঘাটে যেতে পারেন। বেতুয়ায় প্রতিদিন ৩ টি লঞ্চ যায়। বিলাসবহুল স্যুট, এসি/ননএসি কেবিন এবং ডেক যেযার সমর্থ অনুযায়ী ভ্রমণ করতে পারেন। রাত ৮ টায় ছেড়ে ভোর ৬:৩০ টায় আপনি বেতুয়ায় পৌঁছে যাবেন। রাতের খাবারের ব্যবস্থা লঞ্চেই করা যাবে, মান খারাপ না। বেতুয়া থেকে চরফ্যাশন বাজারে চলে আসুন, অনেক মান সম্পন্ন হোটেল আছে। নিরালা র মিষ্টি ভীষণ মজা। দুপুরে গেলে গরম রসগোল্লার স্বাদ পাবেন। নাস্তা করে চলে যেতে পারেন দৃষ্টিনন্দন জ্যাকব টাওয়ার দেখতে। উপরে উঠেগোটা চরফ্যাশন দেখতে পাবেন। আরো আছে কফি শপ... বিকেলের দিকে ভাটা থাকায় চলে আসুন চর কচ্ছপিয়া। এখান থেকে ট্রালার ২/৩ ঘণ্টা পর পর ছাড়ে, ভাড়া ৫০/৬০ টাকা। আপনি চাইলেরিজার্ভ করে নিয়ে যেতে পারেন হাজার টাকায়। চর কুকড়ি মুকিড়ি যাবার পথটাই সবচেয়ে সুন্দর বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। দুইপাশে প্রচুর সবুজ, ভাগ্য ভালো থাকলে বানর এমন কি হরিণের দেখা পেতেই পারেন... চরে কোন শব্দ দূষণ নেই, এটা একটা সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বন বিভাগের আওতায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত আছে কোষ্ট গার্ড। চরে ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় চমৎকার একটা মোটেল। তাছাড়াও বন বিভাগ এবং কোষ্ট ট্রাষ্ট এর গেষ্ট হাউজ আছে। চর কুকরি-মুকরি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য। ভোলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার, চরফ্যাশন উপজেলা থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। স্পীড বোটেও যাওয়া যায়। মেঘনাও তেতুলিয়া নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের উপকন্ঠে কয়েকশ বছর আগেজেগে ওঠা চর সবুজের চাদরে মোড়ানো এক মনোমুগ্ধকর স্থান। এখানে রয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি হরিণ। এ ছাড়াও অতিথি পাখি, লাল কাঁকড়া, বুনো মহিষ, বানর, বনবিড়াল, উদবিড়াল, শেয়াল, বনমোরগসহ নানা প্রজাতির বন্য প্রাণীর দেখা মেলে। হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসুন, ভালো লাগবে।
|
|
|
|
বিশ্ব পর্যটন ভারত ভ্রমণের দিনলিপি ভারত উপমহাদেশ, আসলে মনে হয় মহাদেশ। ভারত ভ্রমণ করলেই পৃথিবী ভ্রমণ হয়ে গেল। লেখকের বইটি পড়ে আবার আমার ভ্রমণ তৃষ্ণা জেগে উঠেছে। যেতে ইচ্ছে করছে আবার আগ্রা, আগ্রার তাজমহল, আজমির, যমুনা, বৃন্দাবন, পুরী, কোণারক, ভুবনেশ্বর, ব্যাঙ্গলোর, হায়দরাবাদ, মুম্বাই, দিল্লি। অনেক জায়গার নাম শুধু পড়েছি, যাইনি। যাওয়ার সময়ও শেষ। তাই পরিব্রাজকের বই নিয়ে বসলাম। তাতেও ভ্রমণের সাধ মেটে বৈকি। ১৬১ পৃষ্ঠার বইটি পড়তে লাগল কয়েক ঘণ্টা সময়, তার চেয়ে অনেক বেশি মাস-বছর-সময় লাগত ভ্রমণে। কি ভাগ্য, বিনা খরচে সব দেখা হয়ে যায় বই পড়ে। লেখকের বর্ণনায় কলকাতায় প্রথম গেলাম। ময়দানের পাশেই হাজির হলাম ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে, যেটি বাংলা ভাষার জন্মকেন্দ্র, ১৮০০ থেকে ১৮৫৪ ভাষার যখন ক্রমবিবর্তন চলেছে। ওখানেই কয়েকটি দিন কাটিয়ে দেয়া যায়, চিনে নেয়া যায় কীভাবে সমাজ বিবর্তিত হয় শিক্ষার কল্যাণে। টিপু সুলতানের হত্যাকাণ্ডের এক বছর পর স্থাপিত ফোর্ট উইলিয়াম। উদ্দেশ্য ভাষার প্রসার। আসলে তা নয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসারদের ভারতীয় ভাষার শিক্ষার জন্যে প্রতিষ্ঠিত ওই কলেজটি। এখানে শিক্ষকতা করেছেন— মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রামনাথ বাচস্পতি, তারিনি চরণ মিত্র, রামরাম বসু, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। কাজের ভাষা ছিল ফারসি। আর মুসলমানদের শিক্ষা ছিল আরবি, ফারসি। ব্রাহ্মণ পন্ডিতেরা পড়াতেন সংস্কৃত, কারণ বাংলা ছিল নিচু স্তরের ভাষা। বাংলার অধ্যাপকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের উইলিয়াম কেরি। বাইবেলের প্রথম বাংলা অনুবাদ করলেন তিনি। ১৮০১ সালে উইলিয়াম কেরি লিখলেন ‘প্রথম বাংলা ব্যাকরণ’ ও বাংলা গদ্যে ‘কথোপকথন’। রাজা রামমোহন রায় প্রথম বাংলা গদ্যভাষা চর্চা করেন, যাতে সংস্কৃতের প্রাবল্য। বিদ্যাসাগর যোগালেন শক্তি। সেই পথেই বঙ্কিমচন্দ্র। মধুকবি মাইকেল আনলেন অমিত্রাক্ষর ছন্দ। মুসলমানদের ব্যবহূত পালি, প্রাকৃত, সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি অনেকটা অগ্রাহ্য করে ফোর্ট উইলিয়াম নিল উঁচু শ্রেণির ভাষা সৃষ্টির উদ্যোগ। মুসলমানরা পিছিয়ে ছিলাম ইংরেজি লেখাপড়ায়, তাই সামনের দিকে এগোতে পারিনি। দুজন তিনজন করে গ্র্যাজুয়েট বের হতো আমাদের পক্ষ থেকে। আর ওদের পক্ষ থেকে হাজার হাজার। আর আজ আমরা পৃথিবীতে একমাত্র সার্বভৌম পতাকার নিচে সমবেত ষোলো কোটি বাঙালি, হাজার হাজার লাখ লাখ গ্র্যাজুয়েট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, নানা পেশার বাংলাদেশি পুরো পৃথিবীতে। ওই কলেজটি না দেখলে অনেক ইতিহাসের শিড়্গা থেকে হতাম বঞ্চিত। লেখক নিয়ে গেছেন নিউমার্কেটে, যেখানে ইন্ডিয়ান সিল্ক হাউস। লিন্ডসে স্ট্রিটে যেখানে নিউমার্কেট। তারপর ভার্দান মার্কেট, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা বাজার সওদা করেন। আমি খালেদের সঙ্গে সর্বক্ষণ ছিলাম। কারণ কলকাতা আমার জন্ম শহর। ঠিক যেন জন্ম নদী কালজানির মতো। কলকাতার সবকিছু আমার ভালো লাগে। খালেদের ভাষা খুব মিষ্টি, যা নতুন লেখকদের মধ্যে বিরল। নিচের অল্প একটু পড়লেই বুঝতে পারবেন— ‘অন্ধকারের জমিনে আলোর খেলা দেখছি। অন্ধকারের মাঝে যেন আলোর গান শুনতে পাচ্ছি। ধ্বংসের গান, সৃষ্টির গান। আলোর গান, অন্ধকারেরও গান। একই গান। রেলগাড়ির গতির কারণেই অনুভূতিটা আরও প্রগাঢ় হচ্ছে বোধকরি। বাতাস যেন আলোদের গায়ে- অন্ধকারের গায়ে বাড়ি খেতে খেতে মূর্ছনা তুলছে। আমি জানালার পাশে বসে অন্ধকারের গান শুনি।’ কলকাতার পথঘাট ভুলে গেছি। কিছুদিন আগে আতিথ্য পেলাম গঙ্গার পারে একটি দিন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের মন্দির ও বিবেকানন্দ কুটিরে। মনটা ভরে গিয়েছিল। বইতে যাদের কথা পড়েছি যেন ওদেরকে দেখতে পাচ্ছি। যার অতিথি তিনি জানতে পারলেন না, আমি কী পেলাম। এত বড় ভারত। যাকে বলা হয় ভূ-ভারত তার সবটা দেখা হয়নি। হয়তো আর হবে না। কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষী দিল্লি এই বইটির সঙ্গে মিলিয়ে পড়বেন, তাহলেই অনেক কিছু জানতে পারবেন। আমার ভালো লেগেছে কলকাতার আখ্যান। কারণ ওইখানেই আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। মহর্ষি ভবনের দোতলায় একমাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত একটানা বারান্দা। ‘জীবন স্মৃতি’ গ্রন্থের ‘দক্ষিণের বারান্দা’, যার সঙ্গে জড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের শৈশব স্মৃতি। এই ভবনেই রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ কক্ষ ও শয়ন কক্ষ। রান্নাঘর, খাওয়ার ঘর তেমনটি আছে। তিনতলায় শোভা পাচ্ছে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কেশব চন্দ্র সেন, স্বামী বিবেকানন্দ, প্রমুখের তৈলচিত্র। রবীন্দ্রনাথকে লেখা মৃণালিনী দেবীর পত্র, তাদের বিয়ের আমন্ত্রণলিপি। পুরনো গ্রামোফোন রেকর্ড, সবই আছে। আমরা একদিনেই সব দেখে ফেলতে চাই। তা কখনোই সম্ভব নয়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে সাত দিন। তেমনি মুর্শিদাবাদে মুসলমানদের যা কিছু সৌন্দর্য চেতনা, তা দেখতে লাগবে সাত দিন। যদি আরেকটা জন্ম পাই, তাহলে নিশ্চয়ই আমি খালেদের সঙ্গী হবো। বড় হোটেলে থাকতে চাই না, যে কোনো খানে ঘুমাতে পারি। মসজিদ হলেও চলবে। আমি মুসাফির। আমার নেই কোনো চাহিদা। এবার পাঠকদের নিয়ে যাই পাহাড়ের হাতছানি দেয়া সিমলা ও মানালিতে। লেখকের লেখা এত মিষ্টি। হিমাচলে পদার্পণের পর পরই একটা এসএমএস এসেছিল, অনুবাদ করলে দাঁড়ায়— ‘দেবতাদের ভূমি হিমাচল প্রদেশে স্বাগতম। আপনার ভ্রমণ সুখময় ও আরামদায়ক হোক। আপনার নিরাপত্তা ও কল্যাণের স্বার্থে নদী তীরে বিপজ্জনক ভ্রমণ বা নদীর পানিতে নামা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করছি’। আমি ঘুমিয়েছিলাম বোধকরি, খেয়াল করে পড়া হয়নি। ফোনের অ্যালার্মে ঘুম ভাঙে, বন্ধ করতে গিয়ে এই বার্তাটি দেখি। আজ ‘দেবতাদের ভূমিতে’ ঘুরে বেড়ানোর দ্বিতীয় দিন। আজকের গন্তব্য কুফরি আইস পয়েন্ট। বরফের দেখা হয়তো পাওয়া যাবে না এখন, তবে সেখান থেকে বেশ দূর পর্যন্ত দেখা যায়। চমৎকার প্যানোরোমিক ভিউ ছাড়াও আট হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কুফরি ভারতের অন্যতম স্কিইং পয়েন্ট।’ শাহ মোস্তফা খালেদের কাছে কৃতজ্ঞ, কারণ তার কাছে ভ্রমণের মনটি আবার ফিরে পেলাম। যেতে চাই দার্জিলিং, ভুটান। কুচবিহারের পাশেই। সঙ্গীর প্রয়োজন নেই। ভ্রমণের জন্য প্রয়োজন ভ্রমরের মন। ভ্রমর যাবে মনের সঙ্গে। তা হলেই ভ্রমণ। বইটি বের করেছেন ”স্বরেআ”। সুন্দর প্রচ্ছদ দাম - ২৭০ টাকা । লেখক: সাহিত্য-সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব।
|
|
|
|
প্রকৃতি তার সব সৌন্দর্য যেন দিয়েছে মেঘালয় ও আসাম জুড়ে। পাহাড়ের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে যেন স্বর্গীয় হাতছানি। চোখ জুড়ানো শুভ্র পাহাড়ের আল্পনার সঙ্গে সাদা মেঘের ভেসে বেড়ানো প্রতিটি মুহুর্ত মুগ্ধ করে। ধারণা করা হয়, মেঘালায় নামটি এসেছে মেঘ থেকে। যার অর্থ হলো মেঘের বাসভুমি। ভারতের একটি রাজ্য মেঘলালয়। যা ভারতের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। বাংলাদেশেরও পূর্বে সিলেট সীমান্তের চারিদিকের মেঘলালয়ের অবস্থান। আর যাদু বিদ্যায় খ্যাত দেশ আসামের কামরুখ কামাক্ষা তার পাশেই অবস্থিত। আসামের নাম শুনলেই গন্ডার ও যাদু বিদ্যা সহ বিভিন্ন কারণে গা শিহরে উঠে। যাই হোক, মেঘের দেশ মেঘালয় এর সৌন্দর্য ও গন্ডায় যাদু বিদ্যার দেশ আসাম দেখার দীর্ঘদিনের প্রবল ইচ্ছা ছিল আমার। অবশেষে সময়, শ্রম ও অর্থের সমন্বয় করে গত ৩ মে যাত্রা শুরু করি এ দুই রাজ্যের উদ্দেশ্যে। ১৯৯২ সাল থেকে ভারতে বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে দেখার সুযোগ হলে প্রকৃতিক সৌর্ন্দযে ভরপুর এ রাজ্য ২টি দেখার সুযোগ হয়নি। বাংলাদেশের সাথে ভারতের উত্তর-পূর্বের এ রাজ্যগুলির সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন শিল্প বিকাশে সুযোগ-সুবিধা অনেক কম থাকায়, পর্যটকদের সংখ্যা এখনো অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কম। কারণ হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের অংশে পাহাড়িয়া অঞ্চল হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থায় রেল, বিমান এর পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় পর্যটকরা এ দুর্গম রাজ্য গুলিতে যেতে চায় না। আগের তুলনায় বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরাপওার ব্যবস্থার একটু উন্নতি হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি যেমন : - ত্রিপুরা, আসাম, অরুনাঞ্চল, মনিপুরী, নাগাল্যান্ড সহ এসব রাজ্য গুলির সাথে ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটনের উজ্জল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে বাংলা-আসাম ফ্রেন্ডশীপ এসোসিয়েশান (বিএএফএ) নামক একটি সংগঠনের আত্ম প্রকাশ করে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্প বিকাশে আগ্রহীদের নিয়ে এ সংগঠনের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রেসিডেন্ট হলেন এ,টি,এম জাহিদ হাসনাত বুলবুল ও জেনারেল সেক্রেটারী মোঃ জহিরুল ইসলাম মনির। আমি এ সংগঠনের মিডিয়া সেক্রেটারীর দায়িত্বে আছি। কমিটি গঠনের পর অনেকদিন ধরে চেষ্টা চলছিল দু’দেশের পর্যটনে সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য আসাম ও ভ্রমনের। ভিসা জটিলতা সহ, নানান কারণে তিন তিন বার পিছিয়ে যায় আসাম ভ্রমনের নির্ধারিত তারিখ। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ৩ মে রাত ১০ টায় ঢাকার গুলশান ১নং-এর মাহিমা টুরস এন্ড ট্রাভেল লিঃ এর কার্যালয় থেকে আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে ৫ দিনের যাত্রা শুরু করি। মেঘালয়-আসাম ট্যুরটির সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনায় ছিলো মাহিমা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেল লিঃ। আমি সহ মোট ১৪জন ছিলাম এ ট্যুরে অন্যান্যদের মধ্যে যারা এ টুরে ছিলেন তারা হলেন- এ.টি.এম জাহিদ হাসনাত
 
বুলবুল, ড. লেঃ কর্নেল, মোঃ কবির আহমেদ খান, রেজাউল করিম, এস.এম.এনামুল্লাহ, কাজী নজরুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, মোঃ রিয়াজ উদ্দিন, মোঃ শামীম উদ্দিন সুমন, মিসেস সালমা বেগম, ডা. ফরিদা ইয়াসমিন, ফৌজিয়া রশীদ, মিসেস মমতাজ বেগম, আবুল মোনায়েম, ডা. শফিকুল হাসান চৌধুরী। এর মধ্য ৩ জন ডাক্তার, ১জন অবসর প্রাপ্ত কর্নেল, সাংবাদিকসহ গুরুত্বপূর্ণ পর্যটকবৃন্দ ছিলেন। আমি সহ আরও ২ জন সুমন ও রফিক ভাই যাদের বয়স ৪০ বছর এর নিচে। বাকীরা সবাই ছিলেন ৫০ বছরের উপরে। যারা ৫০ এর উপরে ছিলেন তাদেরকে বয়স্ক যুবকই বলা যায়। কারণ এত বড় লম্বা ভ্রমনে আসা-যাওয়ায় প্রায় তিন হাজার কি.মি পথ পাড়ি দেয়ার পরেও তাদের ক্লান্ত মনে হয়নি। এই ক্লান্ত না হওয়ার অনেক কারণ আছে। তার মধ্য অন্যতম কারন আমার হাসি মাখা কথা সবাইকে প্রতিনিয়ত তরতাজা রাখার সাহস ও উৎসাহ যুগিয়েছে। যাই হোক, আমরা ঢাকা থেকে ১০ জন মাহিমা ট্যুরিজমের অত্যাধুনিক এসি মাইক্রো বাস করে সিলেটে তামাবিল স্থল বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ৪ তারিখ সকাল ৬টা হযরত শাহাজালাল মাজারে পৌছে যাই। মাজারে নামাজ ও জিয়ারত করে সকালের নাস্তা সম্পন্ন করে শাহ্পরান মাজারে যাই। এরপর আমরা সকাল ৮ টায় তামাবিল পৌছাই। ওখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল আরও ৪ জন। সকাল ১০ টার আগে তামাবিল স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস না খোলায় আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। ১০ টার পর দুই পাশের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সম্পন্ন করে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমরা ভারতের ওপারে ডাউকি বর্ডারে রাখা ২৬ সিটের একটি মিনি বাসে ১৪ জন চরে বসলাম। দুই পাশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে আমাদের প্রায় ৩/৪ ঘন্টা সময় লেগে গেল। যা সবাইকে ধৈর্য্য হারা করে তোলে। এ দুই বর্ডারের আধুনিক ব্যবস্থাপনায় কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন চালু হয়নি। চলছে ধীর গতির ম্যানুয়ালী ব্যবস্থাপনা। ডাউকি বর্ডার থেকে আমাদের গাড়ি চলা শুরু করল। দক্ষ চালক দক্ষতা দিয়ে আমাদের নিয়ে চলল আকাবাকা পাহাড়ি পথ ও মেঘের উপর এবং মধ্য দিয়ে। অভিজ্ঞ গাইড আসামের নাগরিক বিনজু আমাদেরকে দু’পাশের পাহাড়ও স্থানের ইতিহাস বর্ণনা দিতে থাকল। আমরা অবাক দৃষ্টিতে বিশাল বিশাল পাহাড়ের সৌন্দর্য্য দেখতে থাকলাম। পাহাড়ের কোথাও কোথাও ৭/৮ হাজার ফুট গভীরতা। আমাদের সাথে দুর্বল চিত্তের কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে স্মরন করতে থাকল। ভারতীয় বেলা ১২টার সময় রওনা দিয়ে বিকাল ৩টায় পৌছাই পৃথিবীর অন্যতম বৃষ্টি প্রবন এলাকা চেরাপুঞ্জীতে। তখনও গুড়ি গুড়ি বৃস্টি হচ্ছিল। পাহাড়ের সেভেন সিস্টার জলপ্রপাত থেকে নিচে তাকালে বাংলাদেশের সুরমা নদী দেখা যায়। পাহাড়ের পাদদেশে গ্রামগুলির বাড়িঘর অন্যরকম সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে রেখেছে। দুরে বা কাছ থেকে মেঘ ভেসে যাচ্ছে। আমরা চেরাপুঞ্জির সৌন্দর্য্য উপভোগ করে ওখানেই ইকোপার্ক রিসোর্টে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। ক্ষুধার্থ পেটে সবাই তৃপ্তি সহকারে খাবার খেয়ে নিল। হোটেলের সব কর্মচারীই ছিল মহিলা। তাদের আতিথিয়তা সবাইকে মুগ্ধ করে। ওখানকার মহিলারা অনেক
 
পরিশ্রমী। আরও একটি নতুন তথ্য জানা গেল বিবাহিত মহিলাদের গায়ে ওড়নার মত একটি চাদর পেচানো থাকে। চাদর পেচানো থাকা মানেই সে বিবাহিত। চেরাপুঞ্জিতে নামার পর আমরা প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভুত করলাম। তখন তাপমাত্রা ৭/৮ ডিগ্রী ছিল। ঠান্ডায় আমাদের শরীর শীতল হয়ে আসছিল। ২/১ জন ছাড়া কেউ গরম কাপড় নেয়নি। কেউ জানতো না এত শীত ওখানে। যা হোক, আমরা চেরাপুঞ্জি থেকে রওনা দিয়ে মেঘলায়ের রাজধানী ও পৃথিবীর অন্যতম উচ্চতম শহর শিলং শহরের উপর দিয়ে আমাদের গাড়ী চলতে থাকল। পাহাড়ের উপর থেকে শিলং শহর খুবই আকর্ষনীয় দেখতে পেলাম। মনে হয় যেন, কোন চিত্র শিল্পী শহরটিকে রং তুলি দিয়ে মনের মাধূরী মিলিয়ে একে রেখেছেন। শিলং শহরে আমরা চা বিরতি দিয়ে আমাদের গাড়ী আসামের রাজধানী গোহাটিতে চলতে শুরু করল। তখন রাতের নিরবতা নেমে এসেছে। কারণ, সীমান্তবর্তী গ্রামের রাস্তায় বিকাল ৫ টার পর যাতায়াত নিষিদ্ধ। আমাদের গাড়ী শহর এলাকায় থাকাতে নির্বিঘেœ আকাবাকা প্রায় একশ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে রাত ১০ টায় গোহাটিতে হোটেল গ্রাবো গ্রান্ড পৌছাই। উল্লেখ্য যে ডাউকি সীমান্ত থেকে শিলং এর ৮০ কি.মি পথ শুধু পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এই সময় বাংলাদেশের জাফলং এর ঘড় বাড়ি ,পাহাড় ও মনোরম দৃশ্য চোখকে খুব আকৃষ্ট করে। পাহাড় ঘুরে ঘুরে গাড়ী শুধু উপরেই উঠতে থাকে । দুপাশের বিভিন্ন গাছ গাছালির সাথে পাহার সমান অসংখ্য লম্বা লম্বা পাহাড়ি গাছ ও ছোট ছোট গ্রাম ও শহর চোখে পড়তে থাকল। শিলং থেকে আবার ১০০ কি.মি. নামতে হয় শুধু পাহাড়ের আকাবাকা পথ বেয়ে। সমুদ্রের সমতল থেকে শিলং এর উচ্চতা প্রায় ৭ কি.মি.। রাত্রে আমরা গোহাটিতে হোটেলে রাত্রি যাপন করে পরের দিন ৫ মে শনিবার সকালে আমরা আসাম-বাংলা এসোসিয়েনের কর্মকর্তাদের অভ্যর্থনা গ্রহন ও সকালের নাস্তা সম্পন্ন করি। রাজধানী গোহাটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা ঘুরতে থাকি। কেউ কেউ মার্কেটিং এর কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। আসামের অন্যতম পর্যটন আকর্ষন কামরুখ কামাক্ষা মন্দির।এই মন্দিরটি প্রায় ১ কি.মি উচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এই কামরুখ কামাক্ষা সারা বিশ্বের অন্যতম যাদু বিদ্যার জন্য বিখ্যাত। পাহাড় ঘুরে ঘুরে আমাকে একা বহনকারী গাড়ী চলল কামরুখ কামাক্ষার পাহাড়ের চূড়ায়। আমার অতি উত্তেজনায়, ভয়ভীতি ও আতংকের মধ্য দিয়ে শরীর শিহরে উঠছে। কারণ ছোটবেলায় এই কামরুখ কামাক্ষার যাদু বিদ্যার কথা অনেক শুনেছি। আমাদের বাড়ীর কাছে হাটবাজারে হকাররা ঔষধী গাছ-গাছালীর ঔষধ বিক্রি করার জন্য মজমা মিলিয়ে বিক্রি করত। এই মজমায় বিক্রেতারা বলতো কামরুখ কামাক্ষা থেকে যাদু শিখে এসেছি, সেই যাদু গুলোই প্রদর্শন করত। সাধারন মানুষকে বোকা বানিয়ে যাদু দেখাতো। এই সময়ে সাধারন মানুষকে বলতো যাদু বিদ্যার সময় হাতের মুঠ আটকে রাখবেন না, তাহলে যাদু প্রদর্শনকারী লোকটি মারা যাবে, এই কথা বলে আতংকে সৃষ্টি করত। আমিও মাঝে মাঝে হাটবাজারে এ দৃশ্য দেখে আতংকিত হইতাম। সেই থেকেই কামরুখ কামাক্ষার দেখার আমার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল। সকালে আমরা যখন হোটেল থেকে বের হই তখন দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে যাই। একটি গ্রুপ গাড়ি নিয়ে আসামের একটি বিখ্যাত মসজিদ সহ অন্যান্য স্পট দেখার জন্য বের হয়। অন্য গ্রুপে আর আমার উপর দায়িত্ব পরে আমাদের সাথে যাওয়া মহিলাদের ও আসমের দুই জন মহিলাকে নিয়ে মার্কেটে যাওয়ার। যথারীতি সিব্ধান্ত অনুযায়ী আমরা পেন্টোলিন্স মার্কেটে যাই। মার্কেটে গিয়ে ডলার ভাঙ্গাতে না পারায় আমার সাথে থাকা বাংলাদেশী ভদ্র মহিলারা সমস্যায় পড়ে যায়। আমি পেন্টোলিন্স মার্কেটে উক্ত মহিলাদের রেখে রাস্তার অপর পারে ডলার ভাঙ্গাতে
 
যাই। আমার সাথে আসামের ঐ দুইজন মহিলা পরিচিত ডলারের দোকানে নিয়ে যায়। ডলার ভাঙ্গানোর জন্য আমাদের আসতে দেরি হওয়ায় বাংলাদেশী ভদ্র মহিলারা নিজেরাই অটোতে করে অন্য একটি মার্কেটে চলে যায়। আমি একাকি হয়ে পরি তখন আসামের ঐ দুই মহিলা আমাকে সঙ্গ দেয় এবং তাহাদের সাথে ঘুরতে থাকি। তাদের মধ্য একজন আসামের ভাষার উপর পিএইচডি করছেন তার নাম ইয়াতান্নেছা । তারা আমাকে দুপুরে আপ্যায়নও করায়। এরপর আমি গাড়ীতে করে ওখান থেকে একাকি কামরুখ কামাক্ষায় চলে যাই। সেখানে ঘুরে ঘুরে দেখে অনেক অজানা তথ্য নিয়ে ফিরে আসি হোটেলে । আগের দিনের হোটেল ছেড়ে পাশেই নতুন গ্রীন হেরিটেজে সবাই মিলে উঠি । ঐ হোটেলের লবিতে পরিচয় হয় সিলেট থেকে আগত গোহাটিতে বেড়াতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া রাশেদ, তানভীর ও প্রভার সাথে। পরিচয় সূত্রে সবাই ভ্রমনের খুটিনাটি ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একে অপরকে শেয়ার করলাম। অল্প সময়ে তাদের সাথে ঘনিষ্টতা গড়ে ওঠে। হোটেলে রাত্রি যাপন করে ৬ই মে আমরা শিলং এর উদ্দেশ্যে সকাল ১০ টায় রওনা দিলাম। পথে সৌন্দর্য মন্ডিত লেক, সারে ৩ কিঃ মিঃ র্দৈঘ্য গুহা, পাহাড় ও পবিত্রা সাফারি পার্ক দেখতে দেখতে রাত ১০ টায় শিলং এ পৌছাই। পবিত্রা সাফারি পার্ক দেখে আমরা সবাই হতাশাগ্রস্ত’ হলাম। কারণ সেখানে ২/১ টা গন্ডার ,গরু ,ছাগল ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না।সাফারি পার্ক ঘুরতে সময় লাগলো ২ঘন্টা। অপরদিকে প্রত্যেক গাড়িতে ৬জন করে পর্যটক ও ১ বন্দুকসহ নিরাপত্তা কর্মী থাকা বাধ্যকতা রয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীদের কোন প্রয়োজনই দেখলাম না। শুধু লোক দেখানোর জন্য নিরাপত্তা প্রহরী রাখা। আমাদের মধ্যে অনেকেই গেল না। কারণ ভারতীয়দের প্রবেশ টিকিট ৫০টাকা হলেও বিদেশীদের ৫০০টাকা। আমরা বাংলাদেশিরাও ওখানে বিদেশী হিসেবে গন্য। আমরা যখন সাফারি পার্ক ঘুরে ফিরে এলাম। তখন যারা যায়নি তারা আমাদের সাথে ঠাট্টা মশকারী করতে থাকল। টিকিট সংগ্রহের সময় মেঘালয় রাজ্য থেকে আশা একদল কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে পরিচিত হইলাম। কথার্বতা এক পর্যায়ে ঘনিষ্ট সম্পর্ক হলে তারা আমাকে তাদের সাথে ভারতীয় হিসেবে টিকিট সংগ্রহের আমন্তণ জানায় । কিন্ত শেষ পর্যন্ত আমাদের দলের দুষ্টু ট্যুরিষ্টদের বাধার কারণে তাদের সাথে আর যাওয়া হল না । শিলংয়ে আগে থেকে আমাদের হোটেল রিজার্ভ না থাকায় আমরা একটু বিড়ম্বনায় পড়ে গেলাম। এতগুলো লোক একসাথে রুম পাওয়া খুবই মুশকিল হয়ে গেল। যা হোক শহরের এ পাহাড় ওপাহাড় ঘুরে শিলং এর পলো রোডে ওরসিড হোটেল নামে একটি হোটেলে রুম খুজে পেলেও বাংলাদেশী শুনে তারা আমাদেরকে রুম দিতে রাজি হচ্ছিল না। কারণ এই হোটেলে নাকি বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে একটি ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। শিলং এর পুলিশের হাতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়ে সালাউদ্দিন বর্তমানে জামিনে থেকে শিলং এ অবস্থান করছেন। সেই জন্য বাংলাদেশী হিসেবে আমাদেরকে হোটেলে রুম দিতে বিলম্বিত করে। রাত বাজে তখন ১০টা এত রাতে আমরা এখন কোথায় যাই। অনেক অনুরোধ করে পুলিশের সকল ধরনের নিয়ম কানুন মেনে আমরা ঐ হোটেলেই রাত্রি যাপন করি। পরের দিন ৭ মে বেলা ১২টার সময় হোটেল থেকে চেকিং করে ডাউকি বর্ডারের উদ্দেশ্যে দেশে আসার জন্য রওনা হই। কিন্তু প্রতিমধ্যে বাধসাধে প্রচন্ড ঘনমেঘ। চারিদিকে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। আমাদের গাড়িসহ অন্যান্য বাস ট্রাক, গাড়ির হেডলাইট জালিয়ে আস্তে আস্তে
 
পিপড়ার মত চলতে লাগল। পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে ডাউকি বর্ডারে আসতে আমাদের দুই ঘন্টা পথ লাগল ৩ ঘন্টা। মেঘের ভিতর ও উপর দিয়ে পথ চলা কি যে রোমাঞ্চকর তা নিজের চোখে না দেখলে আসলে কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। দুই বর্ডারে ভিড়াভিড় না থাকায় আমরা ৩০ মিনিটের মধ্যে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বিকাল ৫ টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা করি। সিলেট শহরের বিখ্যাত পাচভাই হোটেলে গরুর মাংসের কালা ভুনা সহ বিভিন্ন রকমের ভর্তা দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। রাত ১২ টায় আমরা ঢাকায় পৌছাই। সময়ের অভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা আমরা ভ্রমন করতে পারিনি। আগামীতে আবারো সময় করে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। ভ্রমন পিপাসুদের সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টির লীলাভূমি দেখতে পর্যটকদের উক্ত স্থানগুলি ভ্রমনের জন্য আমন্ত্রন জানাচ্ছি। ঢাকা-আসাম-মেঘালয়-ঢাকা এই দীর্ঘ আসা-যাওয়ার পথে নারীদের বিষয়গুলি নিয়ে আমার সাথে সংঘটিত ঘটনাবলি নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠে । ট্যুরিস্ট দলের সবাই নারী প্রীতি এবং নারী ভীতি নামক বিষয়টি নিয়ে আমাকে বলির পাঠা বানিয়ে হাস্য রহস্যে মেতে উঠে। সবার হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়।কখন যে ক্ষুধা লেগে গেছে তাও ভূলে যায়, ভূলে যায় ক্লান্তি । সবাইকে চলার পথে আনন্দ দিতে পেরে আমি নিজেও ধন্য। চলতি পথে আনন্দ ভ্রমনে আমাকে দেওয়া হয় রমনীকান্ত সহ নানা রকম উপাধি। অন্যান্য উপাধির কথা না-ই বললাম। এই দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে আমরা যে কখন ঢাকায় পৌছে যাই তা বুঝতেই পারলাম না। টুরিস্ট দলের সবার ভাষ্যমতে আমিই ছিলাম হাস্যরহস্যের মধ্যমনি। সারাপথ আনন্দ ও মজা করে সুস্থ্য সফল ভাবে যার যার গন্তব্যে ফিরতে পেরে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দর্শনীয় স্থান সমূহঃ আকাশ ছোঁয়া মেঘ, নদ-নদী, মসজিদ, মন্দির, কাজী রাঙ্গা ও মানাস ন্যাশনাল পার্ক সহ রয়েছে আরও দর্শনীয় স্থান। সাবধানতাঃ

১। মেঘালয় পাহাড় এলাকা হওয়ায় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। অক্সিজেন স্বল্পতা এড়াতে ধীরে ধীরে থেমে থেমে বেড়ানো উচিৎ। ২। পর্যাপ্ত শীতের কাপড় সঙ্গে রাখা বাধ্যতামুলক। ৩। সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বরের ঔষধ সঙ্গে রাখুন। ৪। পাহাড় ভ্রমনে অভিজ্ঞ গাইডের সহায়তা নিন। ৫। মেঘালয় পাহাড় গুলোর গভিরতা এত বেশী যে, একবার পড়লে আর খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। এ বিষয়ে অবশ্যই সচেতনতা অবলম্বন করুন। কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে বাই রোড়ে অথবা রেল কিংবা এয়ারে পৌছে যান কলকাতা। কলকাতা থেকে বাই ট্রেন আসামের রাজধানী গোহাটি। মেঘালয়ে কোন ট্রেন ব্যবস্থা নেই। সব চেয়ে সহজ পথ হচ্ছে ঢাকা থেকে সিলেট তামাবিল স্থল বন্দর দিয়ে ওপারে ডাউকি বর্ডার। যেখান থেকে ট্যুরিষ্ট বাস, বা ভাড়া করা প্রাইভেট গাড়িতে মেঘালয় রাজধানী শিলং যাওয়া যায়। কোথায় থাকবেনঃ পাচঁ তারকা হোটেল থেকে শুরু করে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সব ধরনের হোটেল পাবেন মেঘালয় ও আসামের শহরগুলিতে। ভাড়া পরবে ৫০০-৫০০০ রুপি। কোথায় খাবেনঃ মেঘালয় ও আসামের বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টই ভেজিটেরিয়ান। তবে শপিংমল এলাকায় বাঙালী ও মুসলিম রেস্টুরেন্ট খুজে পাবেন। পতিবেলায় খাবারে আপনার খরচ হবে ১০০-৫০০ রুপি। এটা আসলে নির্ভর করবে আপনার খাবারের মেন্যু কি নির্বাচন করছেন তার উপর। প্যাকেজ ব্যবস্থাঃ মাহিমা ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস-০১৭০৭২৫৫৯০৭। ঢাকা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস-৯৫৮৫১৩৯, সহ বিভিন্ন ট্যুরিজম কোম্পানী সারা বছর প্যাকেজর ব্যবস্থা করে থাকেন।
|
|
|
|
সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার (রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের কুরমা বনবিট) গহীন অরণ্য ঘেরা দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে নৈসর্গিক এই জলপ্রপাত। রোমাঞ্চপ্রেমীদের জন্য হামহাম হতে পারে আদর্শ স্থান। লোকালয় আর শহর থেকে দূরে, যাওয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এই জলপ্রপাত সম্পর্কে মানুষের জানাশোনা খুব বেশি দিনের নয়। পরিচিত একজনের কাছ থেকে গল্প শুনেছিলাম। তারপরই এই জলপ্রপাত দেখতে যাওয়ার ভূত মাথায় চাপলো। অবশেষে বন্ধুদের রাজি করানো সবকিছু ঠিকঠাক করা থেকে শুরু করে যাতায়াতের সব খোঁজখবর নেওয়া শেষে একদিন ছুটে গেলাম হামহামের পথে। কমলগঞ্জের একেবারে শেষ গ্রামের নাম কলাবনপাড়া। তৈলংবাড়ি নামেও জায়গাটি পরিচিত। বলতে গেলে এরপর থেকেই আর তেমন কোনো জনবসতি নেই। আর এখান থেকেই শুরু হয় হামহাম যাওয়ার আসল অ্যাডভেঞ্চার। চারদিকে ঘনজঙ্গল। বিশেষ করে প্রচুর বাঁশবন। বেয়ে উঠছি ছোটবড় পাহাড়। আবার কখনও বেশ খাড়া পথ বেয়ে নিচে নামতে হচ্ছে। প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা। তারপরেও মনে আনন্দ, নতুন জায়গা আবিষ্কারের নেশায় আত্মহারা। অনেকটা পথ যেতে হচ্ছে হিমশীতল ঠান্ডা পানির ঝিরি পথ ধরে। পুরো জায়গা জুড়ে কেমন যেন সুনসান নীরবতা। অনেকটা কাচের ঘরে আটকে থাকলে যেমন লাগে অনেকটা সেরকম। তবে মাঝে মাঝেই খুব কাছে কখনও দূর থেকে ভেসে আসছে অচেনা পাখির মিষ্টি কণ্ঠের গান। পাহাড়ের গায়ে হালকা বিশ্রাম নিতে নিতেই দেখে নেওয়া যায় অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতি। চোখ জুড়ে থাকে মাতাল করা সবুজে ঘেরা চারপাশে। ঘামে ভেজা শরীর ঝিরির পানিতে ভিজিয়ে সমস্ত ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়। পিচ্ছিল পাথুরে পথ, সাবধানে পা ফেলতে হয়। এভাবে প্রায় অনেকটা সময় হাঁটার পর হঠাৎ শুনতে পেলাম এক শিহরণ জাগানিয়া শব্দ। সেই কাঙিক্ষত হামহাম জলপ্রপাতের শব্দ। মনে হল এইতো এসে পড়েছি। একটু ভালো করে উঁকি দিলেই দেখা যাবে জলধারা। হামহাম জলপ্রপাত বনকাসি পাহাড়ের নিচে পৌঁছে চলছিল বিশ্রামের আয়োজন। পাহাড়ের ওপরে তৈলংকামী গ্রাম থেকে কয়েকজন আদিবাসী নারী ও শিশু আমাদের দেখছিল। চোখে কৌতূহল। পাহাড়ের ওপরে এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ১০-১২টি ঘর নিয়ে আদিবাসীদের ছোট্ট গ্রাম তৈলংকামী। শণ-বাঁশে তৈরি ঘরগুলো। বারান্দা ও উঠোন লাল মাটি দিয়ে নিকানো। নকশা আঁকা, সুন্দর ও পরিপাটি। প্রতিটি ঘরের পেছনের আঙিনায় কলাগাছের ঝোপ। অবিরাম ঝিঁঝি পোকার ডাক, নানা জাতের পাখির কলরব আর বাতাসে দোল খাওয়া গাছগাছালির আওয়াজ একসঙ্গে মিশে প্রকৃতি এক অন্য রকম সুর তৈরি করে রেখেছে গ্রামটিতে। সারাক্ষণ এ সুর-মূর্ছনা সবুজ গ্রামটির বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতিনির্ভর এই গ্রামের মানুষও যেন প্রকৃতির মতোই সুন্দর। কী সহজ-সরল তাদের প্রকাশভঙ্গি! কী আন্তরিক তাদের আতিথেয়তা। নিজেদের ফলানো কলা, হাতের তৈরি পিঠা দিয়ে তারা আমাদের আপ্যায়িত করল। আর সঙ্গে দিল কুয়ার ঠান্ডা স্বচ্ছ পানি। এখানে আধঘণ্টা বিশ্রাম শেষে আবারো পথে পা বাড়ালাম। কিছু দূর এগোতেই একটানা নিরবধি হামহামের শব্দ কানে বাজল। ভাবলাম, এই তো এসে গেছি। কিন্তু না। কয়েকটি টিলা মাড়ানোর পর সামনে পড়ল একটা বিশাল পাহাড়। এবার দলের সবার রসিকতা, এই তো এভারেস্ট! এবার আমাদের সামনেও এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার দুর্লভ সুযোগ। মনের মধ্যে ভীষণ অ্যাডভেঞ্চার দানা বেঁধে উঠতে লাগল। এ সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। শ্যামল আমাদের হাতে বাঁশের শক্ত লাঠি ধরিয়ে দিলেন। এটাতে ভর দিয়ে পাহাড়ে চড়তে হবে। নামতেও হবে এটাতে ভর দিয়েই। চূড়ায় উঠে দেখি, সামনে নিচে কলকল শব্দে বয়ে চলেছে একটি স্রোতধারা। সাবধানে পাহাড়ের ওপর থেকে নিচে নেমে শ্যামলের পিছু পিছু এই স্রোতধারা অনুসরণ করে উজানে হাঁটতে লাগলাম। ঠান্ডা পানি। পানির নিচে পিচ্ছিল পাথর। এর ওপর দিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম। প্রন্ডচ- গরমের মধ্যেও যেন পা দুটো ঠান্ডায় একসময় স্থির হওয়ার উপক্রম। আর বুঝি পারব না। হামহাম শব্দ অনেকক্ষণ থেকেই কানে বাজছিল। কিন্তু কোথায় সে শব্দের উৎস? আর কত দূর? একসময় আমরা একটা গিরিপথের মধ্যে গিয়ে পড়লাম। পথের সামনে-পেছনে খোলা। ওপরে গহিন বনের বিচিত্র গাছগাছালির আচ্ছাদন। দুই পাশে পাথর হয়ে যাওয়া পাহাড়। গিরিপথ ধরে প্রায় ২০ মিনিট এগিয়ে যেতেই চোখ জুড়িয়ে গেল। এই তো সেই অপরূপ ঝরনা। এ তো কষ্ট সার্থক। দুই চোখ ভরে দেখে নিলাম। তার জলে গা ভিজিয়ে নতুন উদ্যম ফিরে পেলাম। এখান থেকে আবার ফিরতিপথে হাঁটা। তবে আমাদের আরও কিছুটা পথ যেতে হল তার দেখা পেতে। অনেকটা কাছে গিয়ে যখন সোজা তাকালাম প্রায় ১৬০ ফিট ওপর থেকে নেমে আসা জলরাশির সেই অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য দেখে প্রায় বাকরুদ্ব হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। প্রবল ধারায় উপর থেকে গড়িয়ে পড়ছে পানি। চারদিকে কেমন জানি হিমশীতল পরিবেশ। এক নাগাড়ে ঝরনার পানি পড়ে যাচ্ছে ছোটবড় পাথরের ওপর। তাতেই তৈরি হচ্ছে এক কুয়াশাময় পরিবেশ। হাঁটুগেড়ে বসে সেই পরিবেশ উপভোগ করলাম অনেক্ষণ ধরে। একদিকে পাহাড়ে ঘেরা বনজঙ্গল আর অন্যদিকে অবিরাম বয়ে চলা জলরাশি পাথরের খাঁজে খাঁজে ঢেউ খেলে যাওয়া পানিতে ব্যাঙ আর ব্যাঙাচির মেলা। বনজঙ্গলের মায়া ছেড়ে আসতে আমাদের একটু বেশিই সময় লেগে যায়। যদিও সন্ধ্যার আগেই চলে আসা উচিৎ। তবে সেদিন যে ছিলো জ্যোৎস্নায় মাতাল হওয়ার দিন। দূর পাহাড়ের গায়ে বুকচিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষলতার ফাঁক দিয়ে গলেগলে পড়ছে চাঁদের আলো। এরকম জ্যোৎস্না স্নানের উৎসব এ জীবনে একবারই হয়তো আসে। আসলে এই অনুভুতি ভাষায় বা লেখায় প্রকাশ করা যায় না। শুধু উপলব্ধি করতে হয়। আর সেই বোধের স্বাদ পেতে যেতে হবে হামহামের পাদদেশে। যেভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার যাওয়ার সরাসরি বাস আছে। ভাড়া ৪০০-৪৫০ টাকা। এছাড়া শ্রীমঙ্গল থেকেও যাওয়া যায়। মৌলভীবাজার থেকে যেতে হবে কমলগঞ্জ। সেখান থেকে আদমপুর বাজার, বাস ভাড়া ১৫-২০ টাকা। এখান থেকে ২০০-২৫০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় পৌঁছে যেতে পারেন আদিবাসী বস্তি তৈলংবাড়ি বা কলাবনপাড়ায়। এরপর হাঁটা রাস্তা। প্রায় ৮ কিলোমিটারের মতো পাহাড়ি পথ শেষে হামহাম ঝর্ণার দেখা মিলবে। তবে যেখান থেকেই যাওয়া হোক, কলাবনপাড়ার দিকে অবশ্যই সকালে রওনা হতে হবে। যেখানে থাকবেন- থাকার ব্যবস্থা বলতে যাওয়ার আগে শ্রীমঙ্গলে এক রাত থেকে পরদিন খুব ভোরে উঠে রওনা দিয়ে সারাদিন কাটিয়ে সন্ধ্যার পরে শ্রীমঙ্গল ফিরতে পারেন। তবে ওই সময়টায় ফেরার সম্ভাবনা খুব একটা বেশি থাকেনা। সেক্ষেত্রে আদিবাসীদের বাড়িতে থাকা যায়। যদি শ্রীমঙ্গল ফেরা না যায় তবে দুঃচিন্তার কোনো কারণ নেই। কেননা তৈলংবাড়ি বস্তি বা কলাবনপাড়ায় থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সাবধানতা যাওয়ার আগে অবশ্যই কলাবনপাড়ার স্থানীয়দের কাছ থেকে ভালো-মন্দ জেনে যাওয়া উচিৎ। সঙ্গে সরিষার তেল আর লবণ রাখতে হবে। কেননা প্রচুর জোঁকের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এই দুটি ব্যবস্থাই কার্যকরী। হাতে একটা ছোট বাঁশের টুকরা বা লাঠি সঙ্গে নেওয়া ভালো। এতে পাহাড়ি পথে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা থেকে শুরু করে সাপ বা অন্যান্য বন্যপ্রাণী থেকে নিরাপদ রাখবে। সঙ্গে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর খাবার স্যালাইন রাখতে ভুলবেন না। জীবাণুনাশক ক্রিম আর তুলা সঙ্গে নেবেন। আর খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। প্যাকেজ ব্যবস্থা ঢাকা ট্যুরসসহ বিভিন্ন ট্যুরিজম কোম্পানী সারা বছর প্যাকেজর ব্যবস্থা করে থাকেন। ফোন ঃ ০১৯৭৯-৮৭৪০৪২, ৯৫৮৫১৩৯
|
|
|
|
জুনের মাঝামাঝি ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে এশিয়ার একটি আন্তর্জাতিক আইন সমিতির আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তাই সম্মেলনের অন্তর্জালে একটি গবেষণা প্রবন্ধের সারাংশ পাঠিয়ে দিলাম দুরু দুরু বুকে। কিছু দিনান্তে ওপার থেকে সাড়া এলো সম্মেলনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে। ভিয়েতনাম সম্পকে খোঁজ নেয়ার সেই শুরু। এমনিতে খুব একটা ধারণা ছিল না দক্ষিণ চীন সাগরের পাড়ে বিস্তৃৃতির পাখা মেলে শুয়ে থাকা লম্বাটে দেশটি সম্পর্কে। শুধু জানতাম তৈরি পোশাক খাতে এই দেশটি আমাদের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী! চাল রপ্তানিতে দ্বিতীয় কৃষিপ্রধান এক দেশ, যারাও নাকি উন্নয়নের মিছিলে শামিল হতে বাংলাদেশের মতো করেই ছুটছে প্রাণপণে। ইন্টারনেট ঘেঁটে আরও জানলাম চলতি সময়ের লু হাওয়াও আমাদের মতোই সেখানেও উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে সর্বত্র।ভিয়েতনাম ভ্রমণে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রয়োজন পড়ে। আয়োজকদের মাধ্যমে সেসব জোগাড় করে ভিসা প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ করে পিঠে দুটি ডানা লাগিয়ে হ্যানয়ের পথে উড়াল দেয়া।ঢাকা থেকে হ্যানয় সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় যাত্রা বিরতিসহ আকাশে উড়ে উড়েই চলে গেল ১২ ঘণ্টা। তাই সূর্য যখন হ্যানয়ের মধ্য গগনে তখন যেয়ে নামলাম নৈ বেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। নেমেই দে ছুট সম্মেলন পানে। সম্মেলন যে শুরু হয়েছে আগের রাতেই। বিমানবন্দর থেকে শহরের দিকে যেতে যেতেই মুগ্ধ করল হ্যানয়। প্রশস্ত, পরিষ্কার রাস্তা। ঢাকার মতো অসহ্য জট নেই; অযথা ভেঁপুর আওয়াজ নেই। রাস্তার পাশ দিয়ে উদ্যান, ফাঁকা মাঠ, অদূরে অনুচ্চ দালান। এদের বেশিরভাগ বাড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো উপরের তলার ছাদ টিনের চালের মতো মাঝখানে উঁচু হয়ে দু ধারে ঢাল বেয়ে নেমে যাওয়া। ঢাকার মতো সুউচ্চ ঘিঞ্জি বিল্ডিং না থাকলেও তাতে আভিজাত্যের কমতি নেই। সাধারণেই সে অসাধারণ! যাত্রার শুরুতে প্রস্তুুতি ছিল হ্যানয় এবং তার আশেপাশের অনন্য নিদর্শনসমূহ ঘুরে দেখা। কিন্তু হ্যানয়ে পা রেখে জানলাম ভিয়েতনামের বিখ্যাত নেতা হো চি মিনের নামে নাম রাখা শহরে না গেলে ভিয়েতনাম ভ্রমণ যে বৃথা। তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত; আর কাল বিলম্ব নয়, সেদিন রাতেই হো চি মিনের পানে ডানা লাগিয়ে আবার উড়াল দেয়া। আসলেই তাই; হো চি মিনের সঙ্গে হ্যানয়কে মেলান দায়। সচরাচার যা ঘটে এখানে তার উল্টো। হ্যানয় কাগজে-কলমে ভিয়েতনামের রাজধানীর তকমা পেতে পারে; কিন্তু ভিয়েতনামের পর্যটনের রাজধানীর নাম হো চি মিন! হ্যানয় কিছুটা শান্ত-নিরিবিলি শহর। আর পাঁচটা রাজধানী শহরের মতো না। রাত ১০টা নাগাদ সেখানে নেমে আসে নির্জনতা। আর তার ঠিক উল্টো হলো হো চি মিন। যে শহর কখনো ঘুমায় না; বরং রাতে যার রূপ উপচে পড়ে। সমস্ত আনন্দ-উচ্ছ্বাস রাতের অপেক্ষায় প্রহর গোনে। আর সমগ্র শহরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণবন্ত যে জায়গা তার নাম ভুই বেন। কপালগুণে আমাদের আবাসও সেই ভুই বেনে। মধ্যরাতে হো চি মিনের মাটি স্পর্শ করার পর কিসের নিস্তব্ধতা? সমস্ত যৌবন নিয়ে যেন এ শহর পর্যটকদের আগমনকে স্বাগত জানানোর জন্যই অপেক্ষায় রয়েছে। কয়দিনের যাত্রা ক্লান্তির সঙ্গে সকালের অলস ঘুম যোগ হওয়ায় পরদিন তাই হোটেলের ব্যবস্থাপনায় শহর দর্শনের আয়োজন মিস করে উপায়ান্তর না পেয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভিয়েতনাম যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ দেখতে ছুটে চলা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কী প্রতাপের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করে ভিয়েতনামের ওপর চাপিয়ে দেয়া অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে এনেছিল তারই সাক্ষী যুদ্ধাবশেষ জাদুঘর। ভিয়েতনামে সমাজতন্ত্রের উত্থানে আতঙ্কিত যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ফ্রান্সকে লেলিয়ে দিয়ে সুবিধে করতে না পারায় পরবর্তীতে নিজেই দেশটির ওপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে দখলের অপচেষ্টার নিমিত্তে সাধারণ নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল। ভিয়েতনাম যুদ্ধ ১৯৬৬-তে শেষ হলেও বাংলাদেশকেও যুক্তরাষ্ট্রের মদদে একই ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে দিনানিপাত করতে হয়েছিল। জাদুঘরের একপ্রান্তে স্পষ্ট বাংলায় লেখা ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)’র একটি শুভেচ্ছা বার্তা ‘বিজয়ী ভিয়েতনাম লাল সেলাম, হো চি মিন লাল সেলাম’ শোভা পাচ্ছে। বিদেশ-বিভূঁইয়ে অনাকাক্সিক্ষতভাবে বাংলা পোস্টার শোভা পেতে দেখা যে কী গর্বের তা এর আগে অনুভূত হয়নি। জাদুঘরের একপ্রান্তে যুদ্ধবন্দীদের অত্যাচারের সামান্য নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা। আর আছে আমেরিকার ব্যবহৃত সমরাস্ত্র। দেখলে বিস্ময়ের ঘোর কাটে না; এই বিশাল অস্ত্রের মুখে দরিদ্র ভিয়েতনাম কীভাবে জয় ছিনিয়ে এনেছিল? আসলে অন্যায্য যুদ্ধ যুগে যুগে নিঃস্ব-দরিদ্রের মনোবলের কাছে কালে কালে পরাভূত হয়। যেমনটা হয়েছিল ১৯৭১-এও! জাদুঘর ঘুরে দেখে শেষ করে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলা কু চি গুহার দিকে। শহর থেকে বাসে প্রায় দু ঘণ্টার যাত্রাপথ কু চি টানেল। টানেল দেখতে যাওয়ার পথে দেখা হলো যুদ্ধের ক্ষত বয়ে নিয়ে বেড়ান বর্তমান প্রজন্মের ভিয়েতনামিদের তৈরি কারুপণ্য ও উৎপাদন কৌশল। তবে টানেল দর্শন স্মরণীয় হয়ে থাকবে ভিয়েতনামিদের গুহা তৈরির কৌশল, সেখানে কাটান জীবন বা যুদ্ধ জয়ের রণনীতি জানার জন্য নয় বরং আমাদের গাইডের নিদারুণ বর্ণনা, দেশের প্রতি তার মমত্ব, চূড়ান্ত রকমের মজা করতে জানা আর তার ইতিহাস জ্ঞানের দরুন! কী করেনি সে? যেমন চোস্ত তার ইংরেজি, তেমন গানের গলা; তেমনি সে জানিয়েছে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। ভিয়েতনামিদের সম্পর্কে ধারণা দিয়ে, একই শহরের দুই নামের ইতিহাস জানিয়ে আর তার প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব দিয়ে সে মুগ্ধ করেছে আমাদের। গাইড হলে এরকম-ই হওয়া উচিত। অথচ প্রথম দেখাতে মনে হয়েছিল অশিক্ষিত বাসকর্মী হয়তো এক! ভিয়েতনামিরা ইংরেজিতে খুব একটা পারঙ্গম না, তাতে আপাত অসুবিধা হলেও যোগাযোগ থেমে থাকে না। সবকিছুর শেষে দিনান্তে মানুষে মানুষে যোগাযোগের পথে ভাষা অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে না। নইলে এই ভরা গ্রীষ্মে ভিয়েতনামে কেন পর্যটকে গমগম করবে? হো চি মিনের পূর্ব নাম আসলে সাইগন। এখনও কেউ কেউ সে নামে তাকে ডাকে। হো চি মিন তার মৃত্যুর পূর্বে জানিয়ে গিয়েছিলেন সাইগন তার জন্মভূমি না হলেও তিনি সাইগনেরই সন্তান এবং সাইগন একদিন ভিয়েতনামের অংশ হবেই। তখন তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চাইলে যেন সাইগনের নাম হো চি মিন নামে নামাঙ্কিত করা হয়। সেই থেকে এ শহর এই দুই নামেই পরিচিত। তবে ভিয়েতনামিদের যে গুণের প্রশংসা না করলে অন্যায় হবে তা এদের সারল্য এবং পরোপকারিতা। ইংরেজির দক্ষতা কম থাকলেও জাতি হিসেবে এরা যথেষ্ট সভ্য। নইলে কি আর রাতের বেলা ফাঁকা রাস্তায় কেউ ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলে? আর যে বিষয়ে এরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা হলো ট্যাক্সি ব্যবস্থাপনায়। মুঠোফোনে অ্যাপের মাধ্যমে যে কোনো শহরেই ট্যাক্সি ডাকার ৬ মিনিটের মধ্যেই ট্যাক্সি আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে আপনার দ্বারপ্রান্তে এসে হাজির হবে। সবই মিটার ট্যাক্সি, তাই অযথা দরাদরির কোনো প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশের তুলনায় ট্যাক্সি সেবা অনেক সস্তাও বটে। তবে ভিয়েতনামে সে অর্থে নারীর ক্ষমতায়ন হয়নি। নারীরা নীতিনির্ধারণে এখনও উপেক্ষিত। ভিয়েতনামি ছেলেরা বয়সী বা মোটা মেয়েদের বিয়ে করতে চায় না। কন্যার পিতাদের তাই মেয়েকে রোগা রাখতে তটস্থ থাকতে হয়। তবে নারীরা সেখানে পুরুষের তুলনায় দুর্দান্ত পরিশ্রমী এবং কর্মঠ। সন্তান লালন, ঘরের কাজ এবং উপার্জন সমানতালে করে যায় তারা! তবে এরা অন্যদের মতো কারও সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে তথাকথিত ভদ্রতা দেখায় না। প্রথম দেখাতেই তাই তারা বয়স জানতে চাইবে। কারণ বয়সে বড় হলে তাকে এক নামে সম্বোধন করে সম্মান জানাবে আর ছোট হলে ভিন্ন নামে ডেকে হৃদ্যতা বাড়াবে। কত টাকা বেতন পায় তাও নির্দ্বিধায় শুধাবে। কারণ যে বেশি আয় করে সে চেষ্টা করবে অন্যের জন্য ভালো আয়ের ব্যবস্থা করার। এই হলো ভিয়েতনামিদের স্বভাব! তবে এদের বেশিরভাগই নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের অনুসারী নয়। পূর্বপুরুষদের পূজা করা তাদের ধর্ম। ক্ষুদ্রকিছু জনগোষ্ঠী বৌদ্ধ ধর্মানুসারী। এসবই আমাদের মহান গাইড অ্যালেক্সের কাছ থেকে ধার করা জ্ঞান নিয়ে বর্ণনা করা। তবে এদের নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই আর কিছু না থাকলেও একটি করে স্কুটি আছে। স্কুটিই তাদের মূল বাহন। যারা ধনী তাদের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। গাড়ি এখানে আভিজাত্যের প্রতীক। সঙ্গত কারণেই তাই গণপরিবহন সেভাবে চোখে পড়েনি। আবার ফিরে আসা যাক যুদ্ধ গুহার গল্পে। মূলত ফ্রান্স যুদ্ধের সময় শুরু হয়েছিল কু চি’র গভীর জঙ্গলে প্রায় ২৫০ কি.মি. দীর্ঘ গুহা তৈরির কাজ যার আরও বিস্তৃৃতি ঘটে মার্কিন আগ্রাসনের সময়। কু চি হলো বিষাক্ত গাছ। কু চি বৃক্ষের আধিক্য থাকায় মার্কিনিরা এই এলাকার নামও সে অনুসারে রেখেছিল। যোদ্ধারা গুহার মধ্যেই জীবনযাপন করত। তাদের প্রাত্যহিক কর্মাদি, খাওয়া-দাওয়া, যুদ্ধ পরিকল্পনা সবই চলত গুহাতে। সেনারা ব্যবহার করত টায়ারের তৈরি জুতো। প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দিতে যার অগ্রভাগ থাকত বিস্তৃত আর পশ্চাৎ সুচাল। গুহায় কোনো মার্কিন সেনা প্রবেশ করলে জুতোর গন্ধে প্রতিপক্ষকে চেনা যেত। কারণ টায়ারের জুতো গন্ধ ছড়াত না, অন্যদিকে বৃষ্টি ভেজা এলাকায় মার্কিনিদের জুতো ভিজে দুর্গন্ধ ছড়াত; ফলে আলোবিহীন গুহায় সহজেই শত্রু“ ঘায়েল করা যেত। এ ছাড়াও গুহার চারপাশে বিভিন্ন জায়গায় গুপ্ত ফাঁদ পাতা থাকত শত্রু“দের বাগে আনতে। সবশেষে যুদ্ধ গুহা পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা ছিল শ্বারুদ্ধকর! ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বর্তমানে ২০ মিটারের মতো ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে। তা পাড়ি দিতেই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! ভিয়েতনাম সফরের শেষদিন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য হা লং বে’র অপরূপ রূপের আস্বাদনে বাসযোগে প্রাতেই গমন করা। প্রায় তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে সে রূপের লেশ দেখতে পাওয়ার সৌভাগ্য হলো! প্রকৃতি যেন রূপের ডালি সাজিয়ে বসে আছে যেন হা লং বে-তে। ছোট-বড় প্রায় দুই হাজার দ্বীপ রয়েছে এই উপসাগরে। যাদের নামও বেশ অদ্ভুত! একটার নামতো মোরগ যুদ্ধ দ্বীপ! হা লং বে’র এক পাড়ে রয়েছে পর্যটকদের জন্য কায়াক চালানোর ব্যবস্থা। দু’জন মিলে কায়াক চালাতে চালাতে পাড়ি দিয়ে দেয়া যায় ছোট্ট সুড়ঙ্গ। কী চমৎকার সে নিসর্গ! শহুরে জীবনের সমস্ত ক্লান্তি ভুলে ডুব দিতে মন চায় হা লং বে’র স্বচ্ছ জলে। জাহাজে ঘুরতে ঘুরতে আর মধ্যাহ্নভোজন সারতে সারতে সাগরের রূপ চুপি চুপি আস্বাদন করার মধ্যে যে স্বর্গীয় প্রশান্তি রয়েছে তা এই প্রথম উপলব্ধি করার সৌভাগ্য হলো। তবে বিস্ময়ের শেষ এখানেই নয়। সাগর পাড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর অবয়ব নিয়ে দাঁড়ানো বিশাল সুড়ঙ্গ। জেলেরা বাঁদরের দলকে অনুসরণ করে এই সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করেছিল। সুড়ঙ্গটি চমৎকারভাবে সাজিয়েছে পর্যটন কর্তৃপক্ষ এবং তুলে ধরেছে ভিয়েতনামি ঐতিহ্য। তবে ভিয়েতনাম সম্বন্ধে যে প্রসঙ্গ না পড়লে এ কাহিনি অস¤পূর্ণ থাকবে তা হলো তাদের মুদ্রা। এদের মুদ্রার নাম ভিয়েতনাম ডং বা সংক্ষেপে ঠঘউ। যার সর্বনিম্ন নোটটি ১০০০ মূল্যমানের এবং সর্বোচ্চটির মূল্যমান ৫০০০০০ মাত্র! নোটের অঙ্ক থেকেই অনুমেয় কতটা মূল্য আসলে নোটগুলো বহন করে! বঙ্গ টাকার একটি নোটের বিনিময়ে এদের প্রায় ২৮৫টি নোট পাওয়া যাবে আর শত ডলারের মার্কিন মুলুকের নোটের বিনিময়ে পাওয়া যাবে ২২ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডং! এখানে আসলে তাই ডংয়ের হিসাব মেলাতে কিছুটা বিপত্তিতে পড়তে হয়। উপায়ান্ত না দেখে দোকানি কিংবা ড্রাইভারের সহায়তা নেয়া। সব ডং তার দিকে বাড়িয়ে দিলে সে তার প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তিটা আবার মনিবকে ফিরিয়ে দেয়। অর্ধ লিটারের এক বোতল পানির দাম যেখানে ১৮০০০ ডং! এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল পর্যন্ত ট্যাক্সি ভাড়া নিয়েছিল সাড়ে তিন লক্ষ ডং। কিছু ক্ষেত্রে সে অঙ্ক কোটিতেও যেয়ে ঠেকে! ল্যাপটপ বা ফোন কেনা তো মামুলি ব্যাপার। তবে উপায় একটা এতদিনে বের হয়েছে। এরা সাধারণত শেষ তিনটি শূন্য আর বলে না। ফলে ব্যাপারটা বেশ সোজা হয়ে যায়। আবার শেষ তিনটি শূন্যের আগে পয়েন্ট(.) লেখা থাকে। ব্যস, গেল ল্যাটা চুকে। যেমন খেয়ে দেয়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডংয়ের বিল বানালে এরা বলে একশো তিরিশ। তবে শুধু আমরা না; অনেক পর্যটককেই দেখেছি নতুন এসে ডংয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে। অবশেষে ত্রাতা হয়ে পাওনাদারকেই কাছা দিয়ে ডংয়ের হিসাব মেলাতে মাঠে নামতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে স্বল্প সময়ের ভিয়েতনাম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এক কথায় অসাধারণ। মনের স্মৃতিপটে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে কফি উৎপাদনের অন্যতম শীর্ষে থাকা এই আসিয়ান সদস্য। এই কয়েকটা দিনে ভিয়েতনাম যা দিয়েছে, তা সহজে ভোলার নয়। নতুন মানুষ, মূল্যবোধ, সভ্যতা, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটা সবসময়ের জন্যই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। সে অভিজ্ঞতার মুকুটে নতুন পালক যোগ করল মায়াবী ভিয়েতনাম আর তার সরল মানুষগুলো। প্যাকেজ ব্যবস্থাঃ ঢাকা ট্যুরসসহ বিভিন্ন ট্যুরিজম কোম্পানী সারা বছর প্যাকেজর ব্যবস্থা করে থাকেন। ফোন ঃ ০১৯৭৯-৮৭৪০৪২, ৯৫৮৫১৩৯
|
|
|
|
বিভিন্ন ছুটিতে তাদের গন্তব্য হতে পারে কক্সবাজার। ছুটির এ সুযোগ সবাই পেতে চাই। সেকারণে এসব ভ্রমণ গন্তব্যে পর্যটকদের প্রচন্ড ভিড় লাগে। তাই আগে থেকেই জায়গাটি নির্বাচন করে সেখানে যাওয়া-আসার বাসের টিকেট, হোটেল ইত্যাদি অগ্রিম বুকিং নিশ্চিত না করলে শেষমেশ ভ্রমণটা অনেক সময় সুখকর হয় না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে শান্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। ১২০ কিলোমিটারের সমুদ্র সৈকত ঘিরে প্রাচীন ঐতিহ্য এবং দর্শনীয় স্থানের কারণে প্রতিবছর কক্সবাজারে ছুটে আসেন বিপুল সংখ্যক পর্যটক। কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানসমূহ কক্সবাজার এসে আপনি দেখতে পাবেন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, শহরের মাহাসিংদোগ্রী বৌদ্ধ মন্দির, বার্মিজ মার্কেট, অগ্গমেধা ক্যং, রাডার স্টেশন, হিলটপ সার্কিট হাউজ, হিমছড়ি ঝর্ণা ও সমুদ্র সৈকত, রামুর নবনির্মিত ও পুরনো ঐতিহ্যের ধারক বৌদ্ধ বিহার, রাবার বাগান, চকরিয়াস্থ ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, টেকনাফের সমুদ্র সৈকত, মাথিনের কূপ, সেন্টমার্টিন প্রবালদ্বীপ, ছেঁড়াদ্বীপ, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির ও ক্যাং, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া বাতিঘর। এসবের সাথে যোগ হয়েছে রামুর উত্তর মিঠাছড়ির ১০০ ফুট সিংহসয্যা বৌদ্ধমূর্তি এবং বোটানিক্যাল গার্ডেন। কক্সবাজারের উৎপত্তি : কক্সবাজারের আদি নাম পালংকী। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামের এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা ১৭৯৯ সালে এখানে এসে একটি বাজার স্থাপন করেন। তার নাম অনুসারে কক্স সাহেবের বাজার হতে কক্সবাজার এর নাম করণ করা-এমনটিই প্রচলিত। কক্সবাজারের উত্তরে চট্টগ্রাম, পূর্বে-বান্দরবান পার্বত্য জেলা ও মিয়ানমার, পশ্চিম ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। ২৪৯১.৮৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে এ জেলার রয়েছে ৫টি নদী। এগুলো হল, মাতামুহুরী, বাঁকখালী, রেজু, ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী ও নাফনদী। এখানকার দ্বীপের সংখ্যা ৫টি। এগুলো হলো- মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন। কক্সবাজারের প্রাচীন ঐতিহ্য: প্রাচীন ঐতিহ্যে ভরপুর আমাদের কক্সবাজার। কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকরা এসব ঐতিহ্য সমূহ ঘুরে দেখেন। যেসব ঐতিহ্য রয়েছে তার মধ্যে আলোচিত হচ্ছে আজগবি মসজিদ। ধারণা করা হয় ১৬০০-১৭০০ খিস্টাব্দে শাহ সুজার আমলে এটি তৈরি হয়েছিল। এটি মোঘল মসজিদ হিসেবেও পরিচিত। কক্সবাজার পৌরসভার বিজিবি ক্যাম্পের উত্তর দিকে এটি অবস্থিত। রিকশা টমটম যোগে ওখানে যাওয়া যায়। কক্সবাজার পৌরসভার গেট থেকে ভাড়া পড়বে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। প্যাগোড়া (জাদী) ১৭৯০ ইংরেজি সালের দিকে বার্মিজরা আরাকান বিজয়ের পর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় রাখাইন সম্প্রদায় এটি নির্মাণ করে। তারা এটিকে স্মৃতিচিহ্ন জ্ঞান করে। কক্সবাজার সদর, রামু ও টেকনাফের পাহাড় বা উচুঁ টিলায় এ ধরণের অনেক প্যাগোড়া রয়েছে। রামকোট তীর্থধাম এটি রামুর রামকোট বনাশ্রমের পার্শে¦র পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। ৯০১ বাংলা সনে এ তীর্থধাম স্থাপিত। কথিত আছে রাম-সীতা বনবাসকালে এই রামকোটে অবস্থান করেছিল। তীর্থধামে মন্দিরের পাশাপাশি আলাদা একটিবৌদ্ধ বিহারে ধ্যানমগ্ন ছোট একটি বৌদ্ধমূর্তিও রয়েছে। জনশ্রুতি আছে, দু’টিধর্ম পাশাপাশি শান্তিতে সহাবস্থানের প্রমাণ স্বরূপ সম্রাট অশোকের সময়ে এই মূর্তি স্থাপিত হয়। রামুর দৃষ্টিনন্দন ক্যাং রামুর শ্রীকুলস্থ বাঁকখালী নদীর তীরে ছেংখাইব ক্যাং (বৌদ্ধ বিহার) অবস্থিত। এ বৌদ্ধ বিহারে নানা রকম নকশা খঁচিত আসন ও কাঁচের পাত্রে সংরক্ষিত ১০টিরও বেশি পিতল এবং আরো অনেক শ্বেতপাথরের মূর্তি শোভা পাচ্ছে। সব মিলে রামু থানায় ২৩টি বৌদ্ধ বিহারে শতাধিক মূল্যবান বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে। ২০১২ সালে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার পর রামুর প্রাণ কেন্দ্রে লালচিং, সাদাচিং ও সীমাবিহার বৌদ্ধ বিহার গুলো পুনরায় তৈরি করা হয়েছে বিশ্বমানের স্থাপনায়। ঐ ঘটনায় শত বছরের ঐতিহ্য পুড়ে গেলেও নতুন স্থাপনা বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে এগিয়ে দিয়েছে ৫০ বছর! আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া পুরনো ক্যাং ঐতিহ্যের জানান দেয় আর নতুন স্থাপনার বিহারগুলো পর্যটনের অংশ হয়েছে। ১০০ ফুট সিংহসয্যা বৌদ্ধমূর্তি রামুর উত্তর মিঠাছড়ির ভাবনাকেন্দ্র বিহারে উঠানে স্থাপন করা হয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম ১০০ ফুট দৈর্ঘের সিংহসয্যার গৌতম বৌদ্ধের মূর্তি। এ মূর্তির চারপাশের স্থানটা এমন পরিবেশ তৈরি করেছে এখানে আসলে মনটা এমনিতে ভাল হয়ে যায়। তাই যেকোনো ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নির্ধারিত স্থান হচ্ছে এটি। বোটানিক্যাল গার্ডেন রামুর নারকেল বাগান এলাকার আগে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। নানা প্রজাতির গাছ ও ফুলের সৌরভের পাশাপাশি বসার জায়গা করা হয়েছে এখানে। তাই কাছের মানুষকে নিয়ে একান্ত কিছু সময় এখানে নির্জনে কাঁটাতে পারেন আপনি। কানা রাজার সুড়ঙ্গ উখিয়া থানার জালিয়া পালং ইউনিয়নেপাটুয়ার টেক সৈকতের কাছে নিদানিয়া পাহাড়ের মধ্যে এ সুড়ঙ্গ বা গর্ত। সুড়ঙ্গের ব্যাস ১২ ও ১২। একটা বড় ট্রাক অনায়াসে সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করতে পারবে। কথিত আছে, জনৈক মগ সম্প্রদায়ের কানা রাজার (এক চোখ অন্ধ) শাসন আমলে আত্মরক্ষার জন্যেই সুড়ঙ্গটি নির্মাণ করেছিল। সেন্টমার্টিন দ্বীপ টেকনাফ থানা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কি. মি. সমুদ্রগর্ভে মনোরম দ্বীপ সেন্টমার্টিন। প্রায় ১৬ বর্গ কি. মি. জুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা, সমুদ্র তীরে সারি সারি নারিকেল বৃক্ষ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি আর এখানকার আদিবাসীদের বিচিত্র জীবনযাপন- সব মিলিয়ে পর্যটকদের আগ্রহ জাগানিয়া উপাদানের বিন্দুমাত্র অভাব নেই। সেন্টমার্টিন দ্বীপ স্থানীয়ভাবে নারকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত। জনশ্রুতি রয়েছে প্রাচীন কালে এই দ্বীপটি ছিল একটি বিশ্রামাগারের মত। বিভিন্ন দেশের বণিকরা বিশেষ করে আরব বণিকরা পণ্য নিয়ে যখন সওদা করতে যেতো তখন তারা এই দ্বীপে বিশ্রাম নিত। আর তখন থেকেই এই দ্বীপের নাম হয় জাজিরা। তবে পরবর্তী সময়ে এটি নারিকেল জিনজিরা বলে পরিচিতি লাভ করে। অসংখ্য নারিকেল গাছের সমারোহ থাকায় এই দ্বীপকে এই নামে ডাকা হয়ে থাকে। সর্বশেষে ইংরেজরা এই দ্বীপটির নামকরণ করে সেন্টমার্টিন এবং দেশ বিদেশের মানুষের কাছে এখন পর্যন্ত এ নামেই পরিচিত। কুতুবদিয়া বাতিঘর বাতিঘরের জন্য বিখ্যাত কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপ এ প্রবাদটি ছোটবেলায় বিভিন্ন পাঠ্য পুস্তকে লেখা ছিল। ইদানিং তেমনটি আর লেখা হয় না। কারণ বাতিঘরটি আর কুতুবদিয়াতে নেই। আছে বাতিঘরটির ভগ্নস্তূপ এলাকা নিয়ে গঠিত বাতিঘরপাড়া। চান্স অ্যান্ড ব্রাদার্স কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক মনোনীত স্থপতি নেয়ার বার্মিংহাম এর তত্ত্বাবধানে ১৮৪৬ সালের দিকে কুতুবদিয়ার উত্তরধুরং ইউনিয়নের আলী ফকির ডেইল নামক স্থানে আটতলা তথা বিশিষ্ট বাতিঘরটি নির্মাণ করা হয়। ১২০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট গোলাকৃতি আলোক স্তম্বের প্রতিটি কক্ষে মূল্যবান কাঁচখচিত জানালা ছিল। কক্ষের চারদিকে রেলিং ছিল। সর্বোচ্চ কক্ষে বাতিঘরটি প্রজ্বলন করা হতো। ১৯ মাইল দূর থেকে নাবিকরা এ বাতিঘর থেকে আলো প্রত্যক্ষ করে দিক চিহ্নিত করতো। শংখ নদীর তীব্র স্রোতের তোড়ে বাতিঘরটি ধ্বংস হতে থাকে। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে বাতিঘরটি পুরোপুরি ধ্বংস হলে গভীর সমুদ্রে চলাচলরত নাবিক ও মাঝিমাল্লাদের কথা মাথায় রেখে তদানীন্তন সরকার ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ধুরং এলাকায় আগের স্থান থেকে দু’কিলোমিটার পূর্বে বাঁধের ভেতরে প্রায় সাত একর জমিতে আরো একটি বাতিঘর নির্মাণ করে। বাতিঘরের সাথে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য একটি রেস্ট হাউস ও দুটি আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ২৯ এপ্রিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে পুনঃনির্মিত বাতিঘরটি সাগরে বিলীন হয়ে যায়। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় মেয়াদোত্তীর্ণ এসব স্থাপনা জরাজীর্ণ অবস্থায় কালের নীরব সাক্ষী হিসেবে এখনো সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ায় বিদ্যমান রয়েছে। কুতুব আউলিয়ার উত্তরসূরি হযরত শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবী (রাঃ) এর মাজার শরীফের অসংখ্য ভক্ত প্রায় প্রতিদিন কুতুবদিয়া সফর করে থাকেন। কুতুবদিয়া সফরের প্রাক্কালে ঐতিহাসিক বাতিঘরের অস্তিত্ব সন্ধানের জন্য পর্যটকদের ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। সোনাদিয়া দ্বীপ দেশের পাহাড়দ্বীপ মহেশখালীর সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কূল অপূর্ব সৌন্দর্য্য বেষ্টিত পর্যটন স্পট সোনাদিয়া দ্বীপ। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সোনাদিয়া দ্বীপের আয়তন ৪ হাজার ৯২৮ হেক্টর। এ দ্বীপটি পূর্ব পশ্চিমে লম্বা। সৃষ্টি শৈল্পিক আদলে গড়া সোনাদিয়া জেলার পর্যটন শিল্পের আরেক সম্ভাবনাময় সৈকতের নাম। এখানে রয়েছে বালিয়াড়ি, কাছিম প্রজনন ব্যবস্থা, চামচ ঠোঁটের বাটন পাখি এবং অতিথি পাখির অভয়ারণ্য, দূষণ ও কোলাহল মুক্ত সৈকত, লাল কাঁকড়ার মিলন মেলা, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম, পূর্ব পাড়ার হযরত মারহা আউলিয়ার মাজার ও তার আদি ইতিহাস, জেলেদের সাগরের মাছ ধরার দৃশ্য, সূর্যাস্তের দৃশ্য, প্যারাবন বেষ্টিত আঁকা-বাঁকা নদীপথে নৌকা ভ্রমণ। যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ দ্বীপে সরকারি বা বেসরকারিভাবে যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে এ পযন্ত পর্যটন আর্কষণের আধুনিক কোনো পদক্ষেপ বলতে গেলে নেয়া হয়নি। এ দ্বীপের শুটকির কদর সবার মাঝে লক্ষ্য করা যায়। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের কথা প্রচার পাবার পর থেকে এখানকার ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিসহ সরকারি জমি উচুঁ দামে হাতবদল ও দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। দ্বীপ হলেও এটি কুতুবজুম ইউনিয়নের ওয়ার্ড হিসেবে এখানে জনবসতি রয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ০৩ দশমিক ১৫ একর ও চিংড়ি চাষযোগ্য ৯৮.০০ একর জমিতে চাষ করেই চলে এখানকার বাসিন্দাদের জীবিকা ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে ডুলাহাজরায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। প্রায় ৯০০ একর পাহাড়ি ও সমতল ভূমির সমন্বয়ে এপার্কটি সববয়সের মানুষের কাছে বিনোদনের স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানে দেখা মিলবে নানা রকম প্রাণির। প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খোলা থাকে ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক। নিজেদের গাড়ি হলে ভ্রমণে সুবিধাটা বেশি। শহর থেকে খোলা জীপ কিংবা মাইক্রোবাস নিয়ে যাওয়া যায়। কোথায় থাকবেন পর্যটক সেবায় কক্সবাজারে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল মোটেল, রিসোর্ট এবং কটেজ। এর মধ্যে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লি, সায়মান বিচ রিসোর্ট, রয়েল টিউলিপ সি পার্ল এবং তারকা মানের সীগাল হোটেল হোটেল সী প্যালেস, হোটেল সী ক্রাউন হোটেল দ্য কক্স টু-ডে, হোটেল মিডিয়া ইন্টার ন্যাশনাল উল্লেøখযোগ্য। রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কর্তৃক পরিচালিত মোটেল শৈবাল , লাবনী ও প্রবাল। এখানে এক রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা দামের কক্ষ। কক্সবাজারে সড়ক পথে আসা-যাওয়ার তথ্য ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল হতে কক্সবাজার ৪৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। ঢাকা থেকে সৌদিয়া মার্সিডিজ বেন্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহনসহ বিভিন্ন বাসের এসি নন এসি কোচে সব সময় আসা যায়। প্যাকেজ ব্যবস্থা ঢাকা ট্যুরসসহ বিভিন্ন ট্যুরিজম কোম্পানী সারা বছর প্যাকেজর ব্যবস্থা করে থাকেন। ফোন ঃ ০১৯৭৯-৮৭৪০৪২, ৯৫৮৫১৩৯
|
|
|
|
একঘেয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম, একটু বিরাম,একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন সৃষ্টিকর্তার অপরময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। ভ্রমণ করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় দুষ্কর। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। দেশের বাইরে ঘুরে আসতে চান? তবে ঘুরে আসতে পারেন হিমালয়ের কোলে সুখী মানুষদের দেশ ভুটান। ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন- নাজিয়া ইসলাম। ‘ভুটান যাবা? খালি বলে দেখ এবার, জ্যান্ত পুঁতে ফেলব’, ফোনে ফাহমিদার হুঙ্কার। জ্যান্ত মরার ভয়ে, নাকি খুব দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছিল ঠাহর করে বলতে পারছি না শুধু ঈদের ছুটি শুরুর দু’দিন আগের এক দুপুরে নিজেকে আবিষ্কার করলাম দ্রুক এয়ারলাইন্সের এক ছোট্ট বিমানে; সঙ্গী রেহনুমা আপু, তানজিবা আর ফাহমিদা। জানালা দিয়ে নিচে তাকাতেই দেখি সাদা মেঘের ঝোপ। ওখানে নেমে খানিক গড়াগড়ি খেয়ে আসার পরিকল্পনা করতে করতেই দেখি নীলচে পাহাড় সারি। পাইন গাছেরা রাজকীয় সবুজ পোশাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়কে ডানা দিয়ে প্রায় স্পর্শ করে বিমান থামল পারো বিমানবন্দরে। ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের হলকা থেকে ৫০ মিনিটের মধ্যে ২৩ ডিগ্রির হালকা শীতল স্পর্শে আমাদের ‘পার ক্যাপিটা হ্যাপিনেস’ বেড়ে গেল। সুখী মানুষদের দেশে নেমেছি বুঝতে হবে তো! কারুকার্যময় পারো বিমানবন্দরের বাইরেই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল আমাদের পরের ৬ দিনের সঙ্গী নরবু। বিমানবন্দর থেকে আমাদের গন্তব্য রাজধানী থিম্পু; রাস্তায় বের হতেই ছিপছিপে তন্বী ‘পারো চু’র সঙ্গে দেখা; ভারি ইচ্ছে হচ্ছিল ওর ঝকঝকে স্বচ্ছ জলে পা ডুবিয়ে পাথরের ওপর বসে থাকি। এইবেলা বলে রাখি কোনো প্যাকেজ ছাড়া ভুটান গেলে দেশ থেকে ট্যাক্সি বা গাড়ি ঠিক করে যদি যান সময় বাঁচাতে পারবেন অনেকখানি। সেই সময়টা বরং ঘোরাঘুরির পেছনে ব্যয় করুন। যাহোক, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি মসৃণ পথ ধরে ছুটে চলেছি আমরা, একপাশে উঁচু পাহাড়ের পাথুরে শরীর; আর অন্য পাশে জলজ শিলা বুকে নিয়ে গর্বিত ছন্দে বয়ে চলা ‘পারো চু’; মনে মনে গান ভাজতে থাকি- ‘তুই লাল পাহাড়ের দেশে যা, রাঙ্গামাটির পথে যা’। পথেই ‘পারো চু’-এর ওপরে লোহার ঝুলন্ত সাঁকো; তার ওপাশে ‘তামচোগ মোনাস্ট্রি’। এ যেন হঠাৎ রূপকথার রাজ্যে চলে আসা অথবা টাইম মেশিনে চড়ে অতীতে পাড়ি জমানো; বুঝে উঠতে পারছিলাম না কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখব- রুক্ষ পাহাড়, রোদ্দুর মেখে ছুটে চলা ঝিকিমিকি নদী নাকি অচিন দেশের অদ্ভুত সুন্দর ধর্মশালা। ঘোর কাটতে না কাটতেই পৌঁছে যাই সিলভার পাইন হোটেলে। আমরা আগে থেকে বুকিং করে আসিনি; অফ সিজন বলে লোকজন তেমন নেই; মনুষ্যশূন্য হোটেলে থাকার ঝুঁকি তাই আর নিলাম না। শুনলাম ওয়াইফাইও নেই। এ যুগে আর যা-ই হোক ইন্টারনেট ছাড়া কি দিন কাটে! থিম্পু শহরের ভেতরে পিসফুল রিসোর্টে আমাদের নিয়ে গেল নরবু; দামাদামি করে হোটেল ভাড়াটাও কমিয়ে দিল। শান্তি হোটেলে শান্তিতে দু’দিন থাকব ঘোষণা দিয়ে আমরা নিজেদের বাক্স-পেঁটরা রেখে থিম্পু শহরে গেলুম খাবারের সন্ধানে। ভুটানে খাবার খেতে হয় নির্দিষ্ট সময়ে; ওই সময়ের বাইরে মাথা খুঁড়লেও খাদ্যদ্রব্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই সকালের খাবার যে হোটেলে থাকবেন ওখানেই খেয়ে নেয়া ভালো। ওখানে রেস্তোরাঁগুলো সাধারণত পারিবারিক ব্যবসা; পরিবারের সদস্যরাই চালায়, ভুটানি, ভারতীয়, তিব্বতি- সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। তবে ভুটান যাবেন আর সুগন্ধি লাল চালের ভাতের সঙ্গে ‘এমা দাতসি’, ‘কেওয়া দাতসি’, ‘জাশামারো’, ‘ফাকশাপা’ অথবা ‘ মোমো’ না খেয়ে চলে আসবেন তা তো আর হয় না। রাতের থিম্পু শহরটাও দেখার মতো। উঁচুতে দাঁড়িয়ে আলো ঝলমলে জং দেখে শান্তি হোটেলে ফিরলাম আমরা ক্লান্ত চতুষ্টয়। পারো শহর পরদিন সকাল সকাল নাশতা সেরেই ছুটলাম মেমোরিয়াল চর্তেন বা কিংস মেমোরিয়ালে। লোকজন এখানে প্রধান মন্দিরের চারপাশে চক্রাকারে ঘোরে আর মন্ত্র পড়ে। চত্বরে আছে অসংখ্য পায়রা। আমরাও সবার সঙ্গে একটা চক্কর দিয়ে, পায়রা উড়িয়ে বুদ্ধ দরদেনমা স্ট্যাচু বা বুদ্ধ পয়েন্টে গেলাম। ধ্যানী বুদ্ধ শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টির ওপরে মেঘের চাদর জড়িয়ে সবাইকে পাহারা দিচ্ছেন। ওখান থেকে গেলাম চাঙ্গাংখা লাখাং-এ; থিম্পুর সবচেয়ে পুরনো দুর্গমন্দির এটা। বাচ্চাদের নাম রাখা আর আশীর্বাদ করার জন্য নিয়ে আসা হয়। এখানে, প্রধান বেদিতে মেয়েরা নিষিদ্ধ তাই খানিক মনের আনন্দে প্রার্থনা হুইল ঘুরিয়ে দুটো ভুটানি বাচ্চার গাল টিপে আদর করে আর ছবি তুলে ছুটলাম দুপুরের খাবার খেতে। এরপর ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভিজে গেলাম মোনাস্ট্রিতে। এর পা ঘেঁষে চলা পাথুরে নদীর অধীর ঢেউ, পানিতে সবুজ বনানীর ছায়া, কিনারের ভেজা পাথরে বসে থাকা আনমনা আমাদের চোখে কী যে স্বপ্ন এঁকে দিচ্ছিল তা শুধু আমরাই জানি। পথে রয়্যাল টেক্সটাইল একাডেমি দেখে বিকেলে গেলাম তাশিচো জংয়ে। ওখানে তখন আমাদের রাষ্ট্রপতি আসবেন বলে তুমুল প্রস্তুতি চলছে। আমাদের একটু আলাদা খাতির করল বাংলাদেশ থেকে এসেছি বলে। জংয়ের পাশেই ওদের পার্লামেন্ট হাউস আর প্রাসাদ। প্রাসাদ বলতে ছোট্ট সুন্দর একটা বাড়ি। কেউ বলে না দিলে বোঝাই যাবে না ওটা প্রাসাদ। রাজা-রানী ওখানটাতেই থাকেন। কী জানি তাদের সম্মানেই কিনা জং চত্বরের মাথায় হ্যাট, হুডি বা ছাতা নিয়ে হাঁটা নিষেধ। বৃষ্টিতে ভিজে একশা হয়ে তাদের সম্মান অথবা নিরাপত্তা রক্ষা করলাম। ভুটানের শহর আর পথঘাট মুগ্ধ করার মতো। উঁচু-নিচু পথ, দু’ধারে প্রাচীন রীতির বাড়ি। একে পরিচ্ছন্ন তাতে যানজট নেই। ট্রাফিক পুলিশ ১০০ বছর আগের মতো হাতের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করে যানবাহন। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার পুরো সময়ে কোনো হর্নের শব্দ শুনিনি। তবে কোলাহল যেমন নেই, তেমনি একটা টং দোকানও খুঁজে পেলাম না তন্ন তন্ন করেও, এক কাপ চা খাবার জন্য। তৃতীয় দিনে আমাদের গন্তব্য দো-চুলা পাস হয়ে পুনাখা ভ্যালি। দো-চুলা পাস থেকে হিমালয়ের কয়েকটা চূড়ার দেখা মেলে রৌর্দকরোজ্জ্বল দিনগুলোতে। আমরা যখন রাস্তায় পাহাড় ধস এড়িয়ে দো-চুলা পাসে পৌঁছলাম তখন মেঘের ঢেউ জলে আর মেঘ পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে গলে গলে পড়ছে আমাদের ওপরে। মেঘের হিমে আচ্ছন্ন পথে চলতে চলতে নামার সময় লাল কাদায় গাড়ির সামনের অংশ ঢেকে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় গাছগুলো ঝুলে আছে রাস্তার ওপরে। পথে ঝিরঝিরে একটা ঝরনাও পড়ল, একেই বুঝি বলে ভয়ঙ্কর সুন্দর। পথে লাম্পেরিতে রয়্যাল বোটানিক্যাল পার্কে ঢুকলাম। মনে হলো হঠাৎ পথ ভুলে ‘হ্যারি পটার’-এর জাদুর জগতে চলে এসেছি। এক্ষুনি সামনে ঝোপের আড়াল থেকে কেউ বেরিয়ে আসবে। যাহোক কেউ বেরোয়নি। দিব্যি হেঁটে চলে এসেছি; ভাবি একটা লাল পান্ডা বেরিয়ে এলে মন্দ হতো না। হোটেল লোবেসাতে বাক্স-পেঁটরা রেখে দে দৌড় পুনাখা জংয়ে। পাহাড়ের ঢালে পোচু নদ আর মোচু নদীর সঙ্গমে ফুলে ফুলে ঢাকা এই অসম্ভব সুন্দর মন্দির দুর্গ। এখানে না এলে ফণিমনসার ফুল আছে আর সেটা দেখতে এত সুন্দর তা আমার জীবনে জানাই হতো না। এই মন্দির চত্বরেই রাজা-রানীর বিয়ের অনুষ্ঠান হয়, সব রাজকীয় পূজাও এখানে হয়। পরদিন আবার সেই দো-চুলা পাস হয়ে থিম্পু হয়ে পারোতে; যেতে অনেকটা সময় লাগে। পারো পৌঁছে বিকেলে গেলাম ভুটানের জাতীয় জাদুঘরে। তারপর সেদিনের মতো বিশ্রাম। পরেরদিন কাল বাঘের ডেরায় যেতে হবে কিনা! পারো চু’র পানির অবিরাম বয়ে চলার শব্দ শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়েছি জানি না। সকালে সবার মধ্যেই উত্তেজনা; টাইগার’স নেস্টে যাব; ছবি তুলতে তুলতে পাহাড়ের নিচে থেকে যাত্রা শুরু। পথে দেখা হলো পুনর্জন্ম নেয়া শিশু (!) যাজকের সঙ্গে। জাপানি-ভারতীয়-চীনা-নেপালি-আমেরিকান-বাঙালি কে নেই যে যাচ্ছে না সেখানে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা-বাচ্চা কাঁধে ভারী ব্যাগ নিয়ে যেমন তরতর করে উঠে যাচ্ছিল আমার নিজের ৫ মিনিটে একবার জিরিয়ে নেয়াটা কিছুটা লজ্জার ব্যাপারই হয়ে দাঁড়াল। সে যাহোক, অমন উঁচুতে মন্দির বানানোর বুদ্ধি যার মাথায় এসেছে তার মপাত করতে করতে আর পাহাড়ের ওপর থেকে পারো উপত্যকার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে উঠেই পড়লাম পাহাড়ের চূড়ায়। ‘একেবারে চূড়ায়; মাথার খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুলা পৃথিবী, চরাচরে তীব্র নির্জনতা’। এরপরেই খাড়া সিঁড়ি বেয়ে নেমে নিচের ঝরনায় ভিজে আবার উঠলে তবেই মন্দির। ওঠার পর মনে হলো এই মন্দির স্রেফ একটা ছুতো। এমন অদ্ভুত রোমাঞ্চকর একটা পথ বেয়ে চলাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য। সেদিন বিশেষ পূজা চলছে, বাচ্চা মঙ্কদের হাসির পেছনে ভীত, বিষণœ মুখগুলো দেখে কেমন অসহায় লাগছিল; ওরা কি ইচ্ছে করে এই কঠিন জীবন বেছে নিয়েছে? কতটুকু দেখেছে ওরা জীবনের? ফিরবার সময় পথ যেন আর ফুরোয় না। যখন নিচে পৌঁছলাম, আর এক পা হাঁটার শক্তি অবশিষ্ট নেই আমাদের, তবু মুখে পাহাড় জয়ের হাসি। ফেরার দিন চলে এলো। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একই বিমানে করে দেশের মাটিতে পৌঁছলাম; মনে হলো আমরা আর আগের আমরা নেই; বদলে গেছি; সুখী মানুষের দেশে ঘুরে আমাদের মনেও উড়ছে সুখের প্রজাপতি। ভুটান যাওয়ার আগে জেনে নিন কিছু টুকিটাকি সময়: আগস্ট থেকে অক্টোবর- এই তিন মাস ভুটানে ঘোরার উৎকৃষ্ট সময়। শীতকাল বা বর্ষাকাল ভুটান বেড়ানোর খুব একটা উপযুক্ত সময় নয়। মুদ্রা: ভুটানে ইন্ডিয়ান রুপি আর গুলট্রাম দুটোই চলে। রুপি আর গুলট্রামের মান সমান। বিমানবন্দর অথবা বর্ডার থেকে ডলার ভাঙাতে পারবেন। তবে কিছু দোকানেও ডলার ভাঙানো যায়, ট্যাক্সিওয়ালাকে বললেই দেখিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে দাম কিছু বেশিই পাবেন। ভাঙিয়ে রুপি নিয়ে গেলেও কোনো সমস্যা নেই। ভিসা: সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ভুটানে যেতে ভিসার দরকার হয় না। কেবল টিকিট কাটুন আর চলে যান। দ্রুক এয়ারওয়েজ ভুটানের একমাত্র বিমান সংস্থা; বাংলাদেশ থেকে কেবল দ্রুক এয়ারওয়েজেই ওখানে যাওয়া যায়। টিকিটের মূল্য ২২ হাজার টাকার মতো। সড়ক পথে যেতে চাইলে প্রথমে ভারতীয় ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে আপনাকে ভারত হয়েই ভুটানে প্রবেশ করতে হবে। টিকিটের মূল্য ৩-৪ হাজার টাকা। ভারতীয় ভিসা পাওয়ার ব্যাপারটা একটু ঝক্কির। তবে এটুকু কষ্ট ভুটানের সৌন্দর্যের তুলনায় কিছুই না। ঢাকা থেকে বাস লালমনিরহাট হয়ে শিলিগুড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। শিলিগুড়ি পৌঁছানোর পর সেখান থেকে অন্য আর একটি বাসে জয়গাঁ সীমান্ত এবং সেখানে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রবেশ করবেন ভুটানের ফুন্টসলিং। এরপর আপনার যাত্রা থিম্পু অথবা পারোর দিকে। বিমানে বা সড়কপথে যেভাবেই যান, ওরা পাসপোর্টে এন্ট্রি পারমিশনের সিল দিয়ে দেবে, তবে এই পারমিশন শুধুমাত্র থিম্পু, পারো আর ফুন্টসলিংয়ের জন্য। অন্য কোথাও যেতে বা থাকতে হলে থিম্পু থেকে পারমিশন নিতে হবে। যাতায়াত: ভুটানের বেশিরভাগ গাড়িই ছোট; ৮-৯ জন বসা যায় এমন গাড়ি বা মাইক্রোবাস অবশ্য ভাড়া পাওয়া যায়। চারজনের দল হলে একটা গাড়ি ভাড়া করে নেবেন, খরচ কম লাগবে। শেয়ারের ট্যাক্সিতেও ঘুরতে পারেন কিছু জায়গাতে। ভুটানের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন; কিন্তু এগুলো নির্দিষ্ট কিছু টাইমে ছাড়ে, তাই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে খুব একটা সুবিধা হবে না। এছাড়া এগুলো সব ট্যুরিস্ট স্পটে যায়ও না। গাড়ি ভাড়া করলে ড্রাইভারের থাকা-খাওয়ার খরচ সে নিজেই বহন করবে। আসলে ভুটানের প্রায় সব হোটেলেই ড্রাইভারদের থাকা-খাওয়া ফ্রি। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় বেশ কিছু ট্যুর অপারেটর রয়েছে যারা ভুটানে ট্যর পরিচালনা করে। ঈদ উপলক্ষে এরা আকর্ষণীয় অফার দেয়। চার থেকে পাঁচ দিন ভুটান ভ্রমণের প্যাকেজের মূল্য বিমানে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা, সড়কপথে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। আমি অবশ্য পরামর্শ দেব বিমানে ও নিজেদের মতো করে যেতে; এতে বেশি জায়গায় নিজের মতো করে ঘুরতে পারবেন। হোটেল: হোটেল আগে থেকে বুকিং করে রাখা ভালো। তবে পিক সিজন না হলে থিম্পু বা পারো পৌঁছেও যে কেউ হোটেল ঠিক করতে পারেন। ভুটানে মোটামুটি ভালো মানের হোটেলগুলো ই-মেইলে রুম বুক করে। এদের ভাড়া ২০০০ থেকে ৩০০০ রুপির মধ্যে। অফ সিজনে সব হোটেলই অনেক ছাড় দেয়। কেনাকাটা: ভুটানে সবকিছুরই দাম অবিশ্বাস্য। ওদের নিজেদের পণ্য নেই বললেই চলে। সব ভারতীয়, চীনা, তিব্বতি বা নেপালি। তবু নতুন দেশে গিয়ে কিছু কিনবেন না তা তো আর হয় না। তাই কিনতে পারেন হাতে বোনা কাপড়, কাঠের জিনিসপত্র, পাথরের গয়না অথবা মুখোশ। থিম্পুতে একটা রাস্তায় হস্তশিল্পের দোকান বসে। স্ট্যাম্প সংগ্রহের শখ থাকলে সেগুলোও কিনে নিতে পারেন। সস্তায় কিছু জিনিস কিনতে চাইলে স্থানীয় কারো কাছ থেকে ঠিকানা জেনে নিতে পারেন অথবা টাইগার’স নেস্ট যাওয়ার পথে কিছু জিনিস পাওয়া যায়, তবে মান খুব একটা ভালো হবে না। সতর্কতা: ভুটানের মানুষ ধর্ম, সংস্কৃতি এবং আইনের ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল। অনেক কিছু দেখে আপনার কালচারাল শক লাগতেই পারে; তবু ওদের মনে আঘাত লাগতে পারে এমন কিছু এড়িয়ে চলুন। ভুটানের রাস্তাঘাটে অনেক বেওয়ারিশ কুকুরের দেখা মিলবে। কারণ ওরা প্রাণী হত্যা করে না। তবে কুকুরের কাজ কুকুর ঠিকই করে। এক হোটেলের কর্মচারী মাত্র পাঁচবার কামড় খেয়েছে! সুতরাং ‘কুকুর হইতে সাবধান’। প্যাকেজ ব্যবস্থা ঢাকা ট্যুরসসহ বিভিন্ন ট্যুরিজম কোম্পানী সারা বছর প্যাকেজের ব্যবস্থা করে থাকেন। ফোন ঃ ০১৯৭৯-৮৭৪০৪২, ৯৫৮৫১৩৯।
|
|
|
|
|
|
করোনায় পর্যটন খাতে বেহাল দশা |
............................................................................................. |
পর্যটকদের জনপ্রিয় স্থান বিশ্বখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাত |
............................................................................................. |
তানভীর অপু বিশ্বের ৬৫০ শহর ঘুরলেন |
............................................................................................. |
ঐতিহ্যবাহী রকেট ভ্রমন ও কিছু স্মৃতি |
............................................................................................. |
দেখে এসেছি নয়নাভিরাাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন |
............................................................................................. |
দেখে এসেছি নয়নাভিরাাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন |
............................................................................................. |
দেখে এসেছি নয়নাভিরাাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন |
............................................................................................. |
দেখে এসেছি নয়নাভিরাাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন |
............................................................................................. |
নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কুয়াকাটা |
............................................................................................. |
ঘুরে আসুন প্রকৃতির লীলাভূমি “চর কুকরি মুকরি” |
............................................................................................. |
ভারত ভ্রমণের দিনলিপি |
............................................................................................. |
বিশ্ব পর্যটন মেঘের দেশ মেঘালয় ও আসাম আমার দেখা সৌন্দর্যের লীলাভূমিঃ |
............................................................................................. |
বাংলার পর্যটন নয়নাভিরাম হামহাম ঝরনা |
............................................................................................. |
ভুলবার নয় ভিয়েতনাম |
............................................................................................. |
ঘুরে আসুন সৈকত নগরী কক্সবাজারমানুষ |
............................................................................................. |
বিশ্ব পর্যটন ঘুরে আসুন হিমালয়ের দেশ ভুটান |
............................................................................................. |
ঘুরে আসতে পারেন রাতারগুল |
............................................................................................. |
ভ্রমণপিপাসুদের নতুন গন্তব্য মিয়ানমার |
............................................................................................. |
পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন স্পটগুলো উপভোগ করার এখনই সময় |
............................................................................................. |
ঘুরে আসতে পারেন ভূ-স্বর্গ কাশ্মীর |
............................................................................................. |
বেড়ানো দিল্লীর কুতুব মিনার |
............................................................................................. |
ত্রিমাত্রিক সবুজ ক্যানভাস পানিহাতা |
............................................................................................. |
ঘুরে আসুন সিঙ্গাপুর |
............................................................................................. |
ঘুরে আসুন লালমাই |
............................................................................................. |
দূর থেকেই দেখতে হবে তাজমহল |
............................................................................................. |
ঘুড়ে আসুন সিঙ্গাপুর |
............................................................................................. |
ঘুরে আসুন সাগরকন্যা |
............................................................................................. |
বেড়াতে যাইতে পারেন থাইলেন্ড |
............................................................................................. |
প্রকৃতির নৈসর্গিক মনলোভা দৃশ্যের হাতছানি ঘুরে আসুন পতেঙ্গা |
............................................................................................. |
নাজিরপুরে বিশ্ব বই দিবস উদযাপন |
............................................................................................. |
গাজীপুরে ইউপি নির্বাচন আওলীগ ১৭, বিদ্রোহী ৩ প্রার্থীর জয় |
............................................................................................. |
মোবাইল ফোন অপব্যবহার বাড়ছে অপ্রাপ্ত বয়সে প্রেমে জড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা |
............................................................................................. |
|