বাংলার জন্য ক্লিক করুন

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   শিশু-কিশোর -
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 
তরুণদের শরীরে যৌনশিক্ষার অভাবে রোগব্যাধি বাসা বাঁধছে

যৌন ও প্রজনন শিক্ষার অভাবে তরুণদের শরীরে জটিল রোগব্যাধি বাসা বাঁধছে। এসব কারণে শুধু পারিবারিক নয়, চিকিৎসার ব্যয়ভারও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা দিতে সরকার নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।

এদিকে বাল্যবিয়ের কারণে দেশের মেয়েরা অল্প বয়সেই গর্ভধারণ করছে, যা মাতৃমৃত্যু এবং অপুষ্ট শিশু জন্মদানের প্রধান কারণ। এই শিশুরাও সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। অল্প বয়সে মা হওয়ায় অনেক মেয়েও নানা জটিল রোগে ভুগে থাকে।

 

সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে তরুণদের উপযোগী কাউন্সেলিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে। যৌন ও প্রজনন শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৮০ কোটি তরুণ। এর বেশিরভাগই বাস করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশই তরুণ। টেকসই উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের নেতৃত্ব থাকবে এই তরুণদের হাতে। এই বিশালসংখ্যক তরুণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল, বাংলাদেশের প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা মেটাভেলের মতে, যদি এই তরুণদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও পেশা নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তারা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবে।

অ্যাডভান্স ফ্যামিলি প্ল্যানিং বা এফপি ২০২০ নিয়ে যেসব দেশ কাজ করছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার এফপি ২০২০ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবে আজও দুই কোটিরও বেশি ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুব ও কিশোর-কিশোরীর উচ্চমানের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ নেই। যা তাদের ক্ষমতায়নের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করত। অনেক তরুণকেই পরিবার পরিকল্পনার আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ব্যাপারে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে বৈষম্য, সামাজিক কুসংস্কার এবং তথ্য পাওয়ার অভাব। এ ছাড়াও বয়ঃসন্ধিকালীন যে মানসিক অবস্থা তৈরি হয়, তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং সেবা। আবার অনেকে গোপনীয়তা সংকটের কারণেও কাউন্সেলিং সেবা নিতে যায় না। এ ক্ষেত্রে তরুণদের উপযোগী কাউন্সেলিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে। যৌন ও প্রজনন শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে।

এ ক্ষেত্রে সরকার, এনজিও, ধর্মীয় নেতা এবং সুশীল সমাজের একযোগে কাজ করা প্রয়োজন। নতুবা সম্ভাবনাময় এই বিশাল জনগোষ্ঠী দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। দেশের রাজনীতি, সামাজিক পরিস্থিতি, শান্তি ও অর্থনীতির জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই সংশ্নিষ্ট নীতিনির্ধারকদের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং তরুণদের জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবা খাতের নীতিমালায় যথাযথ পরিবর্তন আনতে হবে।

চলতি বছর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক বৈশ্বিক উন্নয়ন নীতিমালার উৎস-ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিপিডি) ২৫ বর্ষপূতিতে বাংলাদেশের তরুণদের মত, ভাবনা এবং তাদের প্রয়োজনগুলোর ভিত্তিতে আটটি বিভাগের তরুণদের ওপর একটি যৌথ প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে। সিরাক-বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এটি তৈরি করছে। এ ছাড়াও আগামী ২০-২১ অক্টোবর সিরাকের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশ চতুর্থ জাতীয় যুব পরিবার পরিকল্পনা সম্মেলন’। এ সম্মেলনে নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি তিন শতাধিক তরুণ ও কিশোর-কিশোরী তাদের চাহিদা, স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানা বিষয়ে মতামত তুলে ধরার সুযোগ পাবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও এফপি ২০২০-এর রেফারেন্স গ্রুপে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি কাজী মহিউল ইসলাম বলেন, কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে বর্তমান সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য কর্নারের (এএফএইচসি) মতো উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলো।

এসব কর্নারে কিশোর-কিশোরীরা প্রজনন সেবা ও তথ্য পাচ্ছে এবং তাদের আগ্রহী করে তুলতে প্রয়োজনীয় তথ্য নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। পাশাপাশি সামাজিক আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগ কার্যক্রমের আওতায় দেশব্যাপী প্রচার, আলোচনা অনুষ্ঠান-টকশো, বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের সম্পৃক্ত করে তাদের মধ্যে সামগ্রিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর বাইরেও আমরা চেষ্টা করছি তরুণদের কথা শুনতে।

সিরাক-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত বলেন, কিশোরীদের অল্প বয়সে গর্ভধারণ, পুষ্টিহীনতাসহ নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণ বাল্যবিয়ে। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের কাছে পরিবার পরিকল্পনার সেবা ও তথ্য পৌঁছানো খুবই জরুরি। সেবাদাতা ও গ্রহীতার মাঝে সম্পর্ক উন্নয়ন মানসম্মত সেবার একটি সূচক। সে অর্থে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও তথ্যগুলো যারা দেবেন তাদের হতে হবে তরুণবান্ধব। এ ক্ষেত্রে শুধু বিবাহিত নয় বরং সব তরুণ-কিশোর-কিশোরীর ওপর জরিপ করতে হবে, জানতে হবে তারা কী চায়, কীভাবে চায় এবং তা কেমন পরিবেশে চায়।

মেরী স্টোপস, বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মঞ্জুন নাহার বলেন, বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তরুণ সমাজকে সেবার আওতায় আনতে তরুণদেরই সহযোগিতা নেওয়া এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতর, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর, নিপোর্টের মতো প্রতিষ্ঠানের কাজেও তরুণদের কার্যকর অংশগ্রহণ জরুরি

তরুণদের শরীরে যৌনশিক্ষার অভাবে রোগব্যাধি বাসা বাঁধছে
                                  

যৌন ও প্রজনন শিক্ষার অভাবে তরুণদের শরীরে জটিল রোগব্যাধি বাসা বাঁধছে। এসব কারণে শুধু পারিবারিক নয়, চিকিৎসার ব্যয়ভারও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা দিতে সরকার নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।

এদিকে বাল্যবিয়ের কারণে দেশের মেয়েরা অল্প বয়সেই গর্ভধারণ করছে, যা মাতৃমৃত্যু এবং অপুষ্ট শিশু জন্মদানের প্রধান কারণ। এই শিশুরাও সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। অল্প বয়সে মা হওয়ায় অনেক মেয়েও নানা জটিল রোগে ভুগে থাকে।

 

সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে তরুণদের উপযোগী কাউন্সেলিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে। যৌন ও প্রজনন শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৮০ কোটি তরুণ। এর বেশিরভাগই বাস করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশই তরুণ। টেকসই উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের নেতৃত্ব থাকবে এই তরুণদের হাতে। এই বিশালসংখ্যক তরুণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল, বাংলাদেশের প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা মেটাভেলের মতে, যদি এই তরুণদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও পেশা নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তারা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবে।

অ্যাডভান্স ফ্যামিলি প্ল্যানিং বা এফপি ২০২০ নিয়ে যেসব দেশ কাজ করছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার এফপি ২০২০ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবে আজও দুই কোটিরও বেশি ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুব ও কিশোর-কিশোরীর উচ্চমানের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ নেই। যা তাদের ক্ষমতায়নের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করত। অনেক তরুণকেই পরিবার পরিকল্পনার আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ব্যাপারে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে বৈষম্য, সামাজিক কুসংস্কার এবং তথ্য পাওয়ার অভাব। এ ছাড়াও বয়ঃসন্ধিকালীন যে মানসিক অবস্থা তৈরি হয়, তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং সেবা। আবার অনেকে গোপনীয়তা সংকটের কারণেও কাউন্সেলিং সেবা নিতে যায় না। এ ক্ষেত্রে তরুণদের উপযোগী কাউন্সেলিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে। যৌন ও প্রজনন শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে।

এ ক্ষেত্রে সরকার, এনজিও, ধর্মীয় নেতা এবং সুশীল সমাজের একযোগে কাজ করা প্রয়োজন। নতুবা সম্ভাবনাময় এই বিশাল জনগোষ্ঠী দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। দেশের রাজনীতি, সামাজিক পরিস্থিতি, শান্তি ও অর্থনীতির জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই সংশ্নিষ্ট নীতিনির্ধারকদের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং তরুণদের জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবা খাতের নীতিমালায় যথাযথ পরিবর্তন আনতে হবে।

চলতি বছর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক বৈশ্বিক উন্নয়ন নীতিমালার উৎস-ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিপিডি) ২৫ বর্ষপূতিতে বাংলাদেশের তরুণদের মত, ভাবনা এবং তাদের প্রয়োজনগুলোর ভিত্তিতে আটটি বিভাগের তরুণদের ওপর একটি যৌথ প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে। সিরাক-বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এটি তৈরি করছে। এ ছাড়াও আগামী ২০-২১ অক্টোবর সিরাকের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশ চতুর্থ জাতীয় যুব পরিবার পরিকল্পনা সম্মেলন’। এ সম্মেলনে নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি তিন শতাধিক তরুণ ও কিশোর-কিশোরী তাদের চাহিদা, স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানা বিষয়ে মতামত তুলে ধরার সুযোগ পাবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও এফপি ২০২০-এর রেফারেন্স গ্রুপে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি কাজী মহিউল ইসলাম বলেন, কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে বর্তমান সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য কর্নারের (এএফএইচসি) মতো উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলো।

এসব কর্নারে কিশোর-কিশোরীরা প্রজনন সেবা ও তথ্য পাচ্ছে এবং তাদের আগ্রহী করে তুলতে প্রয়োজনীয় তথ্য নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। পাশাপাশি সামাজিক আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগ কার্যক্রমের আওতায় দেশব্যাপী প্রচার, আলোচনা অনুষ্ঠান-টকশো, বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের সম্পৃক্ত করে তাদের মধ্যে সামগ্রিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর বাইরেও আমরা চেষ্টা করছি তরুণদের কথা শুনতে।

সিরাক-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত বলেন, কিশোরীদের অল্প বয়সে গর্ভধারণ, পুষ্টিহীনতাসহ নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণ বাল্যবিয়ে। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের কাছে পরিবার পরিকল্পনার সেবা ও তথ্য পৌঁছানো খুবই জরুরি। সেবাদাতা ও গ্রহীতার মাঝে সম্পর্ক উন্নয়ন মানসম্মত সেবার একটি সূচক। সে অর্থে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও তথ্যগুলো যারা দেবেন তাদের হতে হবে তরুণবান্ধব। এ ক্ষেত্রে শুধু বিবাহিত নয় বরং সব তরুণ-কিশোর-কিশোরীর ওপর জরিপ করতে হবে, জানতে হবে তারা কী চায়, কীভাবে চায় এবং তা কেমন পরিবেশে চায়।

মেরী স্টোপস, বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মঞ্জুন নাহার বলেন, বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তরুণ সমাজকে সেবার আওতায় আনতে তরুণদেরই সহযোগিতা নেওয়া এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতর, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর, নিপোর্টের মতো প্রতিষ্ঠানের কাজেও তরুণদের কার্যকর অংশগ্রহণ জরুরি

৫ বছর পর দেশে ফিরেছে কিশোর ছামিরুল
                                  

বছর পর দেশে ফিরেছে কিশোর ছামিরুল
দিশা বিশ্বাস , কলকাতা থেকে ঃ-
বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে পালিয়ে এসেছিল ১১ বছরের বাংলাদেশী কিশোর মো: ছামিরুল ; সেই ২০১৩ সালে। তারপর বেনাপোল সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ঢুকে পড়ে পশ্চিমবঙ্গে। লোকজন ধরে চলে আসে রাজস্থানে আজমীর শরীফ দেখতে।
 আজমীর শরীফ দেখে কলকাতায় ফেরার পথে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হয় সেই কিশোর মো: ছামিরুল ওরফে সমীর আহমেদ। সমীরের বাড়ি ছিল ঢাকার মীরপুর এলাকায়। বাবা শামীম আহমেদ ওখানকার একজন কাপড় ব্যবসায়ী। গ্রেপ্তারের পর সমীরকে পুলিশ ঠাঁই দেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার  ’হরিপুরা আমরা সবাই সমাজ উন্নয়ন সমিতি’ বা হাসুস হোমে। জেরায় সমীর বলেছে, সে প্রথমে স্কুলে পড়াশুনা করতো। তারপর মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিল। সেখানে বসেই আজমীর শরীফ দেখার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। এরপর একদিন বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তারপর বেনাপোল সীমান্তে এসে দালালের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে। এরপর আজমীর শরীফ দেখার জন্য বিনা টিকিটে ট্রেনে করে চলে যায় রাজস্থানে।
সেই হাসুস হোমটি চারমাস আগে বন্ধ হয়ে যায়। তখন ওই হোমে থাকা ৮১ জন বন্দি কিশোরকে স্থানান্তর করা হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ ব্লকের ঢোলাহাটের নুর আলি মেমোরিয়াল সোসাইটি পরিচালিত ‘মাতৃতীর্থ জুভেনাইল হোমে’। ওই সময় এই হোমে ৩ জন বাংলাদেশী কিশোর ঠাঁই পায়। এরমধ্যে একজন সমীর আহমেদ। বাকি দুজন হলো আশিক (১৪) এবং আপন হৃদয় (১৪) নামের আরও দুই কিশোর। এবার এই তিন কিশোরের মধ্যে প্রথম ছাড়া পাচ্ছে সমীর আহমেদ। বাকি দুজনের ছাড়া পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে মানবাধিকার খবর কর্তৃপক্ষ।
১১ নভেম্বর বিকাল ৩ টায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ হরিদাসপুর-বেনাপোল সীমান্ত পথে সমীরকে তুলে দেয় বাংলাদেশের হাতে। বাংলাদেশ ভারত বর্ডারে ইমিগ্রেশন শেষে ছারিরুলকে বেনাপোল থানায় হস্তান্তর করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী বেনাপোল থানা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন রাইটস যশোর এর কাছে হস্তান্তর করে। রাইটস যশোর এর পক্ষে তথ্যানুসন্ধান কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান গ্রহন করেন। এরপর গত ১১ নভেম্বর রাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাইটস যশোর কর্তৃপক্ষ ঢাকা থেকে আসা ছামিরুল পিতার কাছে ছামিরুলকে তুলে দেন।  মাতৃতীর্থ হোমের সম্পাদক শেখ আসিফ ইকবাল ১০ নভেম্বর বলেছেন, এখন তাদের হোমে আরও ২ জন বাংলাদেশী কিশোর বন্দি রয়েছেন। এরআগে ১১  নভেম্বর সকালে সমীর আহমেদকে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের  তুলে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেছেন, তাদের হোমে বাংলাদেশ ছাড়া আরও দুই কিশোর রয়েছে নেপালের। তিনি বলেছেন, সমীরের সঙ্গে আলাপ করে তারা জানতে পারেন, বাবা মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে সমীর গোপনপথে চলে আসে বেনাপোল পশ্চিমবঙ্গের বেনাপোল-হরিদাসপুর সীমান্তে । আজমীর শরীফ দেখার সখ নিয়ে সে ট্রেনে করে রাজস্থান গিয়ে আজমীর শরীফ দেখে ফের কলকাতায় ফেরার পথে পশ্চিমবঙ্গে ট্রেনের পরীক্ষকদের হাতে ধরা পড়ে বিনা টিকিটে চলার জন্য বছর পাঁচ আগে। তারপর তাকে জেরা করে রেল পুলিশ জানতে পারে সমীরের বাড়ি বাংলাদেশে। এরপরেই পুলিশ সমীরকে তুলে দেয় হাসুস হোমে। তিনি আরও বলেছেন, আমরা চাইছি ছামিরুলের মত এই হোমে বন্দি অন্য দুই বাংলাদেশী কিশোর আশিক ও আপন হৃদয় মুক্তি পেয়ে ফিরে যাক তাঁদের বাবা মায়ের কাছে।
উল্লেখ, ছামিরুলসহ অন্য দুই কিশোরকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘদিন ধরে একাধিকবার ভারতে গিয়ে আইনি প্রক্রিয়া ও কাগজপত্র সরবরাহ করে মানবাধিকার খবর কর্তৃপক্ষ। মানবাধিকার খবর নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে। ছামিরুলের পাচার হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে মানবাধিকার খবরের গত মার্চ ২০১৭ সংখ্যায় বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। গত ১০ নভেম্বর সকালে ছামিরুলের বাবা মার সাথে কথা হয় মানবাধিকার খবরের সাথে। ছামিরুল দেশে আসছে শুনে তারা খুবই আনন্দিত। এদিকে মানবাধিকার খবরের সহযোগিতায় ছামিরুলের পিতা দু’বার ভারতে গিয়ে ছামিরুলের সাথে সাক্ষাৎ করে  এসেছেন।
উল্লেখ্য যে, মানবাধিকার খবর এর আগে ভারতের উত্তরাখ- প্রদেশের রুদ্রপুর থেকে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশী কলেজছাত্রী সাবানা আক্তার চায়না, হায়দ্রাবাদ থেকে গৃহবধু মুন্নি, পশ্চিমবঙ্গের লক্ষীকান্তপুর থেকে শার্শার কিশোর বিপ্লব, হুগলী থেকে গাইবান্ধায় সালমা, দিল্লীর তিহার জেল থেকে পটুয়াখালীর বিউটি আক্তার, খুলনার শিশু সুমনসহ সাফল্যের সাথে অসংখ্য নারী ও শিশুকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে এনে মা বাবা ও আইনের হাতে তুলে দিয়ে সাফল্য দেখিয়েছে।
এছাড়া ভারতীয় কিশোরী বৈশাখী ও পাকিস্তানের নাগরিক প্রকৌশলী অনিল কুমারকে বাংলাদেশ থেকে উদ্ধারের সার্বিক সহযোগিতা করে সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠিয়েছে। যা বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও প্রথম শ্রেনীর দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে গুরুত্ব সহকারে প্রচার হয়।
নারী ও শিশু উদ্ধার অভিযানে যারা মানবাধিকার খবরকে সার্বিক সহযোগিতা, পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়েছেন তাদের মধ্য রয়েছেন, কলকাতাস্থ উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, কাউন্সিলর ও হেড অব চ্যাঞ্চেলর মিয়া মোঃ মাইনুল কবির, ফাষ্ট সেক্রেটারী (প্রেস) মোঃ মোফাক্কারুল ইকবাল, কাউন্সিলর বি এম জামাল হোসেন সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত, পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান নপরাজিৎ মূখার্জি, রাজ্য সভার সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, লোকসভার সংসদ সদস্য ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান শ্রীমতি প্রতিমা ম-ল, আলিপুর ভবানী ভবনে দক্ষিন ২৪ পরগনায় জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্রীমতি শান্তি দাস, জেলা ইন্টেলিজেন্ট ব্রাঞ্চের নিবেদিতা তালুকদার এডিশন সেক্রেটারি ফরেনার্স গভ পশ্চিমবঙ্গ হোম ডিপার্টমেন্ট গৌরাঙ্গ  সরকার।  
জেলা শিশুরক্ষা সমিতির কর্মকর্তা অনিন্দ ঘোষ, কলকাতার সল্টলেকে বিকাশ ভবনে অবস্থিত শিশু রক্ষা প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুচরিতা সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর,  প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি অমর সাহা, মানবাধিকার খবর পত্রিকার কলকাতা প্রতিনিধি দিশা বিশ্বাস, ভারত প্রতিনিধি মনোয়ার ইমাম, বারাসাত প্রতিনিধি প্রদীপ রায় চৌধুরী, মানবাধিকার খবরের কলকাতাস্থ আইন উপদষ্টা রাজীব মুখার্জি, নিলোৎপল মৈত্র, রিয়াসহ অন্যান্য।


কিশোর অপরাধ ও প্রতিকার
                                  

মোঃ মেহেদি হাসান (সনি)
কিশোর অপরাধ বা ঔাঁবহরষব উবষরহয়ঁবহপু সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে আমাদের জানতে হবে কিশোর অপরাধ কি? কিশোর অপরাধ প্রত্যয়টি আধুনিক সমাজতত্বের আলোচনার অন্যতম প্রত্যয়। এটিকে একটি অন্যতম সামাজিক সমস্যা হিসেবে সমাজবিজ্ঞান চিহ্নিত করেছে। সাধারণত উন্নত, অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল  সকল দেশেই কিশোর অপরাধ প্রত্যয়টি সামাজিক সমস্যা হিসেবে গন্য করা হয়।বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে বিশেষ করে শিল্পায়োন ও নগরায়নের ফলে এ সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে যা দেশের ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে অংকুরে বিনষ্ট করছে।
কিশোর অপরাপধের সংজ্ঞা:- অপরাধের সঙ্গে বয়সের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বিশেষ করে শান্তির ক্ষেত্রে বয়স্ক ও কিশোর অপরাধের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হতো না। পরবর্তীতে বেলজিয়ামের প্রখ্যাত সমাজ তত্ববিদ এভলাকুইটিল সর্বপ্রথম গবেষণা করে আবিষ্কার করেছিলেন কিশোর ও বয়ষ্ক মানুষের মাঝে অপরাধের মধ্যে ভিন্নতা। শিল্প বিপ্লবের পরবর্তীকালে কিশোর ও বয়স্ক অপরাধ শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে বিভিন্ন সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়। ফলে অপরাধ দমন এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে আসে পরিবর্তন। এর ফলশ্রুতিতে কিশোর অরাধের বিষয়টি ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বিচার বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সাধারণ অর্থে সমাজে যে প্রচলিত রীতি বা আইন আছে তা যদি কোন কিশোর ভঙ্গ করে তাকে বলে কিশোর অপরাধ। কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক/বালিকা দেশের প্রচলিত আইন অমান্য বা লংঘন করলে কিংবা সমাজ বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হলে তাকে কিশোর অপরাধ বলা হয়। এখানে কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিজ্ঞানীদের সংজ্ঞা প্রদান করা হলোঃ-
অপরাধ বিজ্ঞানী লুলমান এর মতে, কিশোর অপরাধ বলতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর উপর পরিবার ও সমাজের নিয়ন্ত্রনহীনতা বুঝায়।উড়ড়ঢ় এর মতে, “শিশু ও কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত সামাজিক ভাবে নির্ধারিত কোন কাজ যদি প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নির্ধারিত আইনের আওতায় আসে তবে তা কিশোর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
অপরাধ বিজ্ঞানী ঈধাবহ ্ ঋবৎফরহধহফ এর মতে, সমাজ কর্তৃক আকাংঙ্খিত আচরণ প্রর্দশনে কিশোরদের ব্যর্থতাই হলো কিশোর অপরাধ।
অপরাধ বিজ্ঞানী অ.ঠ ঔড়যহ এর মতে, কিশোর অপরাধ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট বয়সীমার মধ্যে দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গকারী এবং সামাজিক নিয়ম লঙ্ঘনকারী যার চরিত্র সংশোধন কিংবা পুনঃবাসনের জন্য একটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা আদালতের সম্মুখীন হতে হয়।
উপরোক্ত সংজ্ঞা গুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা কিশোর অপরাধের নি¤েœাক্ত বৈশিষ্ট গুলি দেখতে পাইঃ-
ক। কিশোর অপরাধ একটি আচারণ বিশেষ (অনাকাংক্ষিত আচরণ)
খ। এ ধরণের আচরণ ব্যক্তিবর্গের জন্য-হুমকি স্বরুপ গ। এ ধরণের আচরণ রাষ্ট্রীয় আইন ও সমাজ বিরোধী ঘ। এ ধরণের আচরণ অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে যেখানে বিবেচ্য বয়স বিভিন্ন দেশের প্রচলিত আইন/ষধংি/জঁষবং দ্বারা পরিচালিত।
কিশোর অপরাপধ নির্ধারণে বয়সীমা: যুক্তরাষ্টে ১৬ বছরের নিচের বয়সীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধকে কিশোর অপরাধ বলে চিহ্নিত করা হয়। দন্ডবিধি ৮২ ধারায় বলা হয়েছে ৭ বছরের নিচে কোন শিশুর কাজকে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না যদি না সে বিশেষ কোন সময় বা পরিস্থিতিতে তার কৃতকর্মের প্রকৃতি এবং ফলাফল সম্পর্কে বিচার করার সব ক্ষমতা অর্জন করে।অপরাধ বিজ্ঞানী রবার্ট মার্টন তার ঈড়হঃবসঢ়ড়ৎধৎু ঝড়পরধষ ঢ়ৎড়নষবস বইতে কিশোর অপরাধীদের বয়স ৭ থেকে ১৪ বছর নির্ধারণ করেছেন। সার্বিক আলোচনা শেষে আমরা ধরেনিতে পারি, কিশোর অপরাধের সময়সীমা ৭ বছরের উর্ধ্বে এবং ১৮ বছরের নিচে।
কিশোর অপরাধের কারণ: অপরাধ বিজ্ঞানী সাইরলব্রট কিশোর অপরাধের কারণ হিসেবে ৪টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। যথাঃ-
১. ঊহারৎড়হসবহঃধষ (পরিবেশ গত)
২.  চযুংরপধষ (শারীরিক)
৩. ওহঃবষষবপঃঁধষ (বুদ্ধিগত)
৪. ঊসড়ঃরড়হধষ (ভাবগত)
কিশোর অপরাধের বহুবিধ কারণ থাকতে পারে। তবে কিশোর অপরাধ যেহেতু একটি সামাজিক প্রপঞ্চ সেহেতুতা সমাজের প্রভাবশালী মূল্যবোধ দ্বারা সংজ্ঞায়িত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায় যে, কিশোর অপরাধকে আমরা নৈতিক ভাবে এবং সামাজিক ভাবে বিশ্লেষণ করব। তবে অধিকাংশ সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী কিশোর অপরাধের কারণ গুলোতে আমরা প্রচলিত ৫টি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি। যথা-
ক) সামাজিক কারণ খ) অর্থনৈতিক কারণ
গ) মনস্তাত্বিক কারণ ঘ) রাজনৈতিক কারণ
ঙ) ভৌগলিক কারণ
নি¤েœ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আলোচনা করা হলোঃ-
ক) সামাজিক কারণ সমূহ:
১) পারিবারিক কারণ: একজন কিশোরের উপর পরিবারের প্রভাব অনেক খানি। বাবা মার বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে অনেক কিশোর কিশোরী তার বাবা মাকে হারাচ্ছে। এ কারণে কিশোরের স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব বিকাশে সমস্যা দেখা দেয়। তারা অসংলগ্ন আচরণ অথবা সমাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়।
২) সামাজিক শোষণ: আমাদের সমাজ ব্যবস্থা অনেক সময় কিশোর অপরাধের জন্য অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যখন আমাদের সমাজ ব্যবস্থা উক্ত কিশোর কিংবা কিশোরের পরিবারকে কোননা কোন ভাবে শোষণ করে তখন উক্ত কিশোর সমাজ বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়।
৩) মাতৃ¯েœহের বৈষম্যও সামাজিকীকরণের অভাব: পরিবার শিশুর সামাজিককীকরণের অন্যতম প্রধান বাহন। একটি শিশু যদি তার পরিবার থেকে ভাল আচরণ, শিক্ষা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস অর্জন করে তাহলে ঐ শিশুবা কিশোরের পক্ষে সমাজচ্যুত কিংবা বর্হিভূত আচরণ করা সম্ভব নয়। আবার অনেক সময় কোন কোন পরিবারের পিতা-মাতাকে যদি তাদের এক সন্তান অপেক্ষা অন্য সন্তানকে বেশি ভালোবাসেন ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন অর্থাৎ যেকোন ভাবে উক্ত সন্তানকে বঞ্চিত করে তাহলে উক্ত কিশোর পরিবার ও সমাজের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যায়। ফলে কিশোর অপরাধ সংঘটিত হয়।
৪) ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্তা: ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার ফলে কিশোরেরা অনেক সময় শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং অপরাধ কার্যে জড়িয়ে পড়ে। যেমন স্কুলে নিয়মিত হাজিরা ব্যবস্থা যদি শিথিলতা করা হয় অথবা শিক্ষক যদি পুরষ্কার ও প্রশংসার কথা ভুলে গিয়ে হাজিরার প্রতি অত্যাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয় তখন কিশোরদের চরিত্রে স্কুল পালানোর প্রবণতা দেখা দেয়।
৫) সঙ্গদোষ: কিশোরদের মন স্বাভাবিক ভাবে কোমল কল্পনা প্রবণ ও অনুকরণ প্রিয় হয়ে থাকে। তারা যাদের সাথে চলাফেরা করে তারা যদি অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তাদের অনুকরণে কিশোররা বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হতে পারে।
৬) শিল্পায়োন ও শহরায়নের প্রভাব: শহরায়ন ও শিল্পায়োন কিশোর অপরাধের জন্য অন্যতম দায়ী। সমগ্র বিশ্বব্যাপী টৎনধহরুধঃরড়হ এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। শিল্পায়োন ও নগরায়নের ফলে চরম জনাকীর্ণ এলাকায় কিশোরদের চলাফেরা গল্প গুজব এবং বিভিন্ন ধরনের লোকের সাথে দলদ্ধভাবে এবং অবাধ মেলামেশার ফলে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা গড়ে ওঠে। এছাড়া শহরায়ও ও শিল্পায়োনের ফলে কর্মজীবি মানুষের ঘনঘন আবাসস্থল পরিবর্তন কিশোর অপরাধের জন্য দায়ী।
খ) অর্থনৈতিক কারণ:
১) দারিদ্রতা: দারিদ্রতা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। বাংলাদেশের সকল অপরাধের মূলে রয়েছে এই দারিদ্রতা। দারিদ্রতা কিশোর অপরাধ বণ্টনে ও ভূমিকা রাখে। অনেক সময় টাকার লোভ দেখিয়ে দারিদ্র শিশুদের হরতাল, পিকেটিং কিংবা মাদকদ্রব্য চোরাচালান প্রভৃতি কার্যে লিপ্ত করা হয়, ফলে কিশোর অপরাধ সংঘটিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউটটের তথ্যানুযায়ী প্রতি বছর প্রায় ৬৯% কিশোরকে দারিদ্রের জন্য কিছু না কিছু অপরাধ করতে হয়।
২) মুদ্রাস্ফীতি: দেশে বিভিন্ন অস্থিতিশীল কারণে মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মানুষ চাহিদা অনুযায়ী যোগান পায় না। এ অবস্থায় নূন্যতম চাহিদা পূরণ করতে কিশোররা চুরি, ডাকাতি, কিংবা বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়।
৩) সহজলভ্য শিশুশ্রম : শিল্পকারখানা ভিত্তিক নগরজীবন কর্ম সংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শিশুশ্রম বিক্রি হয়। শিশু-কিশোররা বাসার কাজ, কুলিগিরি, ইটভাঙ্গা প্রভৃতি কাজ করে অর্থ উপার্জন করে। এদের প্রতি নমনীয় ও উদার মনোভাব পোষণকরে শাস্তিবা নিয়ন্ত্রয়ন ব্যবস্থা শিথিল করা হয়। ফলে এমতবস্থায় অনেক সময় শিশুরা তাদের অর্জিত অর্থ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে ব্যয় করার সুযোগ পায়। যেমন: জুয়া খেলা, মদ্যপান, গাজা খাওয়া, অশ্লীল ছবি দেখা ইত্যাদি।
গ) মনস্তাত্ত্বিক কারণ:
১) অতি আদর বা শাসন: অতি মাত্রায় সন্তানকে আদর কিংবা অতি মাত্রায় শাসন করলে উক্ত ছেলে- মেয়েরা কিশোর অপরাধ করে। অনেক পিতামাতা আছে যারা সন্তানদের অতি মাত্রায় ¯েœহ করে এবং সকল দোষ ত্রুটি ক্ষমা করে দেয়। ফলে সন্তানেরা অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং সন্তানরা বিভিন্ন অপরাধ কর্মে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আবার অত্যধিক শাসনের ফলে শিশু কিশোরদের মনোবল ভেঙ্গে যায় এবং একসময় এরা অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে।
২) দাম্পত্য কলহ: দাম্পত্য কলহ একটি অন্যতম সমস্যা। পারিবারিক মন্ডলে শিশু-কিশোররা যদি ঝগড়া বিবাদ দেখে তাহলে তার স্বাভাবিক বিকাশে বিঘœ সৃষ্টি হয়। তারা যদি সহসাই অজ্ঞ আচরণ, হিংসাত্ত্বক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে তাহলে তাদের পক্ষে কিশোর অপরাধী হয়ে পড়া অসম্ভব নয়।
৩) পিতামাতার আকাঙ্খা: অনেক অভিবাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করে থাকেন। কিন্তু পারিপার্শি¦ক বা বিভিন্ন কারণে হয়ত সন্তানরা অভিভাবকের আশা পূরণে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয় এবং বিভিন্ন অপরাধ কর্ম যেমন মাদক দ্রব্য সেবন করে।
৪) নিঃসঙ্গতা: বর্তমান নগর কেন্দ্রিক সভ্যতার উদ্ভবের ফলে পিতা-মাতা উভয়ই কর্মব্যস্ত থাকেন শহরের অধিকাংশ পেশাজীবি পিতা- মাতা, বাসা-বাড়ি অপেক্ষা কর্মস্থলে সময় বেশি দেওয়ার কারণে সন্তানেরা নিঃসঙ্গতা ভোগ করে। ফলে তারা নিঃসঙ্গতা থেকে পরিত্রানের জন্য বন্ধুদের সাথে আড্ডা, অশ্লীল সিনেমা দেখা, মাদক গ্রহণসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
ঘ) রাজনৈতিক কারণ:
১) রাজনৈতিকঅস্থিতিশীল পরিবেশ: কিশোর বয়সটি বিপদজনক বয়স। এই বয়সে তার অত্যধিক ভাবে ভাবপ্রবণ আদর্শবাদী ও বাক প্রয়োগশীল হয়। এই বয়সেই তারা জীবন মরণ সম্মুখে বেপরোয়া হয়। ভুল আদর্শে প্রণোদিত হয়ে ওরা রাজনৈতিক আদর্শে জড়িয়ে পড়ে।
২) রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা: ক্ষমতা লোভী বহু নেতা কিশোরদের আবেগ প্রবণতার সুযোগ নিয়ে থাকেন। জনতাকে জাগানোর নামে কিশোরদের অসম্পূর্ণ হাতে জাগিয়ে তোলেন। প্রায়ই ওদের শিকার হয়ে নিজের ও পরিবারের সর্বনাশ ডেকে আনে।
ঙ) ভৌগলিক কারণ:
১) গ্রামের তুলনায় শহরের অপরাধ প্রবনতা বেশি: সাধারণত এবড়মৎধঢ়যরপধষ ওসঢ়ধপঃ কিশোর অপরাধের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। অধিকাংশ সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ একমত যে ভৌগলিক কারণে স্থানভেদে অপরাধের তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন সমতল অপেক্ষা পাহাড়ি এলাকায় বা দুর্গম এলাকায় অপরাধ বৃদ্ধি পায় ঠিক তেমনি গ্রাম অপেক্ষা শহরের ছেলে মেয়েরা বেশি পরিমানে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এর অন্যতম কারণ হল শিল্পায়োন ও নগরায়ন।
২) শীত প্রধান দেশের চেয়ে গ্রীষ্ম প্রধান দেশে অপরাধ বেশি: গ্রীষ্ম মন্ডলে খুব সহজেই বয়স বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া আরো কিছু উল্লেখ যোগ্য কারণ আছে-
* আধুনিক সংস্কৃতর প্রভাব
* উপযুক্ত চিত্তবিনোদনের প্রভাব
* নৈতিক কারণ
* দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজ
* বংশগত কারণ
বাংলাদেশ কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণের উপায়: বাংলাদেশের কিশোর অপরাধ বর্তমানে একটি মারাতœক সমস্যা হিসেবে আতœপ্রকাশ করেছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রনের উপায় নি¤েœাক্ত ভাবে সম্পাদন করা যায়। যথাঃ-
* প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা * সংশোধন মূলক ব্যবস্থা
* পুনর্বাসন মূলক ব্যবস্থা
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে ঃ-
* পরিবারের ভূমিকা। * পিতামাতার দায়িত্ব। * বিদ্যালয়ের ভূমিকা।
* জ্ঞানমূলক সামাজিক পরিবেশ। * সুস্থ বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা।
* পরিত্যক্ত শিশুদের পুনর্বাসন করা।
কিশোর অপরাধ সংশোধনের প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা: বাংলাদেশের কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের জন্য ঢাকার অদূরে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে একটি সংশোধনী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান তিনটি দিক রয়েছে। যথা-
* কিশোর আদালত । * কিশোর হেফাযত। * সংশোধনী প্রতিষ্ঠান।
শেষ কথা ঃ কিশোর অপরাধীদের চরিত্র সংশেঅধনের জন্যে পূর্নবাসন ব্যবস্থা একটি বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতি। যদি বৃত্তমুলক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং কিশোরদের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পূনর্বাসন করা যায় তাহলে ভবিষতে তারা আর কোন অপরাধের সুযোগ পাবেনা। পরিশেষে বলতে চাই উপরোক্ত বিষয়ের প্রতি আমাদের উচিত যথাযথ দৃষ্টিপাত দেওয়া এবং সমাজ থেকে কিশোর অপরাধ বিতাড়িত করতে সহায়তা করা।

শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপ ৩ মাসে ধর্ষিত ১৪৫ শিশু
                                  

মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন
সারাদেশে গত তিন মাসে ১৪৫ টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে ৫১ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছেন শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন। ১০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত শিশু হত্যা, ধর্ষণ শিশু নির্যাতন ও ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসনের দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেধে এক প্রতিবাদী মানববন্ধনে তারা এ কথা জানান।
মানবন্ধনে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মুঈদ হাসান তড়িৎ বলেন, গত ৩ মাসে সারাদেশে ১৪৫ টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে। যা গত বছরের থেকে ৫১ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি গণধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে প্রায় তিন গুণ। বর্তমান সরকার শিশুদের জন্য অত্যন্ত আন্তরিক,আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং শিশু হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শিশু বিষয়ক মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করণ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসনসহ শিশুদের নানাবিধ দাবি মানববন্ধনে তুলে ধরা হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) পরিসংখ্যান থেকে গেল বছরে ২৯২ শিশুকে হত্যা করা হয়। অপহরণের পর হত্যা করা হয় ৪০ জন শিশুকে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সূত্রমতে, চলতি বছরের জানুযারি ও ফেব্রুযারিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০ জন শিশুকে হত্যা করা হয়।
মানববন্ধনে বিভিন্ন শিশু সংগঠনের প্রতিনিধি, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নিউ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয, উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সহ-বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।

সংস্কৃতির চর্চায় শিশুদের গড়ে তুলতে হবে -শিরীন শারমিন চৌধুরী
                                  

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :

 

সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে শিশুদের বিকশিত করার পাশাপাশি মানবিক গুণে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

১৫ জুন বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে শিশুদের মৌসুমী প্রতিযোগিতার পদক প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

স্পিকার বলেন, শিশু একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিশুদের প্রতিভা অন্বেষণ ও বিকশিত করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিযোগিতায় সংস্কৃতিচর্চা করে শিশুরা নিজেদের তুলে ধরতে পারছে। এভাবেই সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে মানবিক গুণাবলী সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে শিশুদের।

তিনি বলেন, সংবিধানে সব শিশুর সুরক্ষার কথা উল্লখ রয়েছে। বর্তমান সরকার শিশুদের নিয়ে নানা কার্যক্রম সম্পাদন করছে।

শিশুদের উদ্দেশ্যে ড. শিরীন বলেন, তোমাদের সবাইকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠতে হবে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণই মূল বিষয়। তাই যারা পুরস্কার পাওনি তারা মন খারাপ না করে আরও কীভাবে ভালো করা যায় সেই চেষ্টা করে যাবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মন্ত্রালয়ের সচিব নাছিমা বেগম, শিশু একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।

দেশের তৃণমূলপর্যায়ে শিশুদের পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার, দলগত সমঝোতা বৃদ্ধি এবং শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী শিশুদের নিয়ে এই মৌসুমী প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

বাকিদের হিসেব নেই! শিশু শ্রমের আওতায় এখনো ১৭ লাখ শিশু
                                  

 

 

১৭ লাখ শিশু এখনো শিশুশ্রমে। বাংলাদেশে এখন সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৭ লাখ শিশু রয়েছে, যাদের কাজ শিশুশ্রমের আওতায় পড়েছে। বাকি শিশুদের কাজ অনুমোদনযোগ্য।

 

কর্মরত শিশুদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছে ১২ লাখ ৮০ হাজার। আর ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। তাদের কাজের বৈশিষ্ট্য জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ।

শিশুশ্রমের এ চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক সমীক্ষায়। জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০১৩-তে এ তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি বছসের প্রথম দিকে এ সমীক্ষাটি চূড়ান্ত করেছে বিবিএস।

কর্মরত শিশু, শিশুশ্রম, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের আলাদা আলাদা সংজ্ঞা রয়েছে। ১৮তম শ্রম পরিসংখ্যানবিদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং ২০১৩-এর সংশোধন অনুসারে কর্মরত শিশু বলতে বোঝায়, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে। এ শ্রম অনুমোদনযোগ্য। তবে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী কোনো শিশু যদি কোনো ধরনের ঝুঁকিহীন কাজও করে, তবে সেটা শিশুশ্রম হবে। তারাও কর্মরত শিশুদের মধ্যে পড়ে যায়। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হিসেবে স্বীকৃত।

প্রায় এক দশকের ব্যবধানে কর্মরত শিশুর সংখ্যার পাশাপাশি শিশুশ্রম অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিবিএসের ২০০৩ সালের জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষায় দেখা গেছে, তখন প্রায় ৭৪ লাখ কর্মরত শিশু ছিল। তাদের মধ্যে ৩১ লাখ ৭৯ হাজার শিশুর কাজ শিশুশ্রমের আওতায় ছিল। তবে এক দশকের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের সংখ্যা তেমন কমেনি, কমেছে মাত্র ১১ হাজার। ২০০৩ সালে দেশে ১২ লাখ ৯১ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ছিলো। ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিশুশ্রম নির্মূল নীতিমালায় ২০১৬ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূল করার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান এ বিষয়ে  কে বলেন, ২০১৬ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূল করা সম্ভব হবে কি না, সন্দেহ রয়েছে। তবে শিশুশ্রম কমানোর চেয়ে বেশি জরুরি হলো ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নির্মূলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি পরামর্শ দেন, যেসব পরিবারের শিশুরা কাজ না করলে সংসার চলবে না, এমন পরিবারকে কিছু ভাতার ব্যবস্থা করে ওই শিশুকে কাজে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখা যেতে পারে। এর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে ওই শিশুর দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে।

পাসের হার ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ : বেড়েছে সাফল্য
                                  

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের দশ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে পাসের হার বাড়লেও এবার কমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। গত বছর ৮৭ দশমিক শূন্য চার শতাংশ পাস করলেও এবার পাস করেছে ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই হাজার ১৪০ জন কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ নয় হাজার ৭৬১ জনে। সাধারণ আট বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুই সূচকেই বেড়েছে। তবে মাদ্রাসা বোর্ডের ফল আগের বছরের চেয়ে খারাপ হওয়ায় কমে গেছে দশ বোর্ডের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বাকি সকল সূচকেই আগের সকল ভাল ফলকে ম্লান করে প্রতিটি সূচকেই শিক্ষার্থীদের সাফল্য চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পাসের হারে এগিয়ে আছে রাজশাহী আর জিপিএ-৫-এ যথারীতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বিষয়ওয়ারী ভাল ফলে সবচেয়ে এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা।

এবার দশ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার চার হাজার ৭৩৪টি, যা গত বছর ছিল পাঁচ হাজার ৯৫টি। কেউ পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠান এবার ৫৩টি, যা গত বছর ছিল ৪৭টি। এবার মোট ২৮ হাজার ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ১১ মে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কপি হস্তান্তরের পর দুপুর একটায় সচিবালয়ের সংবাদ সম্মেলন করে সারাদেশের ফল প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপরই স্ব স্ব কেন্দ্র, বিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট, মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে ফল জানতে পারে পরীক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রীর পাশে শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে এবার ভাল ফলের নানা কারণ থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ইতিবাচক প্রভাবেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার এ সাফল্য। ওই পরীক্ষার সুফল পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। কারণ এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা জেএসসি ও জেডিসিতে একটি ছাকনির ভেতর দিয়েছে এসেছে। কারণ সকলকেই জেএসসি বা জেডিসিতে পাস করে আসতে হয়েছে। এরা সকলেই মেধাবী হিসেবে ছিল পরীক্ষিত। ইংরেজী, বিজ্ঞান, গণিতের মতো বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে চ্যালেঞ্জিং হলেও এবার এসব বিষয়ে ভাল করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ভাল ফলের পেছনে আছে আরও কিছু কারণ। তবে খাতা মূল্যায়নে উদারতা ও সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি সম্পর্কে ক্রমেই ভাল ধারণা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ফলাফলে এর সুফল পাচ্ছে বলে বলছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারাসহ সংশ্লিষ্টরা।

ফলাফলকে শিক্ষার উন্নয়নে নেয়া নানা উদ্যোগ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের প্রচেষ্টার ফল অভিহিত করে পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। মন্ত্রী বলেন, এসএসসির এবারের ফলাফলে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, ফলাফলের বিভিন্ন সূচকেই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। ইংরেজী, বিজ্ঞান, গণিতের মতো বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে চ্যালেঞ্জিং। এ জন্য এসব বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে।

জ্ঞানই সব থেকে বড় সম্পদ - প্রধানমন্ত্রী
                                  

 নিজস্ব প্রতিবেদক :     

মন দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। জ্ঞানই সব থেকে বড় সম্পদ। এই সম্পদ কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। ২২ মে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন।

স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ‘সুপ্ত প্রতিভা’ খুঁজতে জাতীয়ভাবে আয়োজিত সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মনে করেন, সবচেয়ে মেধাবী হলো এ দেশের ছেলেমেয়েরা। কিন্তু তাদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের কাজ সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। আমরা তা করে দিচ্ছি।’ প্রতিযোগী ও পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সত্যিই উজ্জ্বল।

পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁরা (অভিভাবক ও শিক্ষক) একেকটা সোনার টুকরো ছেলেমেয়ে তৈরি করছেন। স্বাধীন দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সোনার ছেলেমেয়ে চেয়েছিলেন। আজকের এই ছেলেমেয়েরা সোনার ছেলেমেয়ে হিসেবে দেশটাকে গড়ে তুলবে। এই প্রজন্মই ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়নে যেন বাঁধা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হতে হবে।

শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আজকের ছেলেমেয়েদের সৌভাগ্য, তারা এক জায়গায় বসে বিশ্বটাকে দেখতে পারে। প্রযুক্তির দ্বারা শিক্ষা, জ্ঞান অর্জন ও বিশ্বকে জানার সুযোগ আরও প্রসারিত করার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অটিস্টিক শিশুরা দেশের সম্পদ -নাসিম
                                  

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, অটিস্টিক শিশুরা দেশের সম্পদ। তারা যাতে দেশকে এগিয়ে নিতে পারে সেজন্য তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব আমাদের সবার।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রচেষ্টার কারণে অটিস্টিকদের সহায়তায় দেশে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।

১৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর শহীদ ডা. মিল্টন হলে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৬ উদযাপন উপলক্ষে গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ধনী-দরিদ্র সবাই অটিস্টিক শিশু জন্ম দেন। এসব শিশুদের মানবিক হয়ে লালন-পালন করতে হবে। সেবা পাওয়া তাদের অধিকার। সেবার নামে তাদের যেনো কেউ করুণা না করে। অটিজমকে নিয়ে কেউ যেনো ব্যবসা না করে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান।

বিএসএমএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব নাসিমা বেগম, এনডিসি।

এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনজীবী এ্যাড. ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, গোলাম কুদ্দুস, বিএসএমএমইউ প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. রহুল আমিন মিয়া, প্রোভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ইনস্টিটিউট অব প্যাডিয়াট্রিক নিউরো-ডিসঅর্ডার এ্যান্ড অটিজম (ইপনা)-এর ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শাহীন আকতার মূল প্রবন্ধ এবং ইপনার সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ড গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বৈঠকে ৯ম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৬ উপলক্ষে ইপনা কর্তৃক প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান ইপনা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন-এর অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্ন শিশুদের সেবায় ইপনা তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা প্রস্তুত থাকবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, অটিজম শিশুরা আজ আর সমাজের বোঝা নয়, অবহেলিত নয়। তাদের পাশে সমগ্র জাতি রয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যত ও সুস্থ জীবন-যাপন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন দেশের সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ ও সম্মিলিত প্রয়াস।  

অন্য বক্তারা মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশব্যাপী অটিজম সচেতনতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইপনাসহ বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তারা বলেন, অটিজম ইস্যুকে প্রান্তি পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারলে অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্ন শিশু ও তাদের পিতা-মাতারা সমাজে নানা বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পাবেন এবং তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন সহজ হবে।

অটিস্টিক শিশুরা ফুলের মতো : সংস্কৃতিমন্ত্রী
                                  

সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, অটিস্টিক শিশুরা ফুলের মতো। তারা অসাধারণ শিশু। কারণ তাঁদের নানা সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয়। তিনি বলেন, এসব শিশু ফুলের মতো পবিত্র। সঠিক পরিচর্যা পেলে যারা অসাধরণভাবে নিজেদের বিকশিত করতে পারে।

 

নবম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে আয়োজিত এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এ সব কথা বলেন। এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ও ‘অটিজম লক্ষ্য ২০৩০: স্নায়ু বিকাশের ভিন্নতার একীভূত সমাধান’ স্লোগানকে ধারণ করে সচেতনতা দিবস পালিত হয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও বিএসএমএমইউ’র ডিন অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান।

 

স্বাগত বক্তব্য রাখেন  ইনস্টিটিউট অব প্যাডিয়াট্রিক নিউরোডিসঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা)-এর ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শাহীন আকতার। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট সাংসাদিক আনিসুল হক, কৈকার কান্ট্রি ডিরেক্টের মি. জোই হিউন গুয়ে প্রমুখ।

 

সংস্কৃতিমন্ত্রী সকল শিশু মা-বাবার উদ্দেশ্যে বলেন, প্রত্যেক মা-বাবা যেন তাদের সন্তানকে একটু সময় দেন। আত্মকেন্দ্রিকতা ভুলে সামাজিক দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। সন্তানরা যেন স্কুল, টেলিভিশনের পাশাপাশি আকাশ, ফুল, নদী ও পাখির ডাক শোনা, দেখা এবং উপভোগ করারও সুযোগ পায়।

 

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, অটিস্টিক শিশুদের সেবা, শিক্ষা ও উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য কন্যা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ ও ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি অন অটিজম অ্যান্ড নিউরো-ডেভলপমেন্টাল ডিসঅর্জার-এর চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়, বিশেষ উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় অটিস্টিক শিশুরা আজ আর সমাজের বোঝা নয়।

 

 

তিনি বলেন, অটিস্টিক শিশুদের আজ সম্মানের চোখে দেখা হচ্ছে। তাদের সমাজের মূল গ্রোতধারায় নিয়ে আসা হচ্ছে। মানুষ জানে অটিজম কী। তিনি বলেন, যেখানেই মানবতা ও উন্নয়ন সেখানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কারণেই আজ অটিস্টিক শিশুদের অভিভাবকরা একা নয়, তাঁদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কারণ তাদের দেবতুল্য শিশুদের পাশে সমগ্র জাতি রয়েছে।

 

(ইপনা)-এর ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শাহীন আকতার বলেন, এটা আজ প্রমাণিত অটিস্টিক শিশুরাও হতে পারে বিশেষ কিছু।

 

এছাড়া অন্যান্য বক্তারা বলেন, আজ থেকে এক দশক আগেও অটিজম রোগটির সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম না। তখন অসাধারণ এসব শিশুদের ভুতে ধরেছে, জিনে ধরছে বলে অপ-চিকিৎসা করা হতো। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। দেশে বিশ্বমানের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। এখন আর অটিস্টিক শিশুরা সমাজের বোঝা নয়। সঠিক চিকিৎসা ও উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে তারা যেকোনো অসাধ্য সাধন করতে পারে। তবে এর জন্য সামাজিক উদ্যোগ প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তারা।

 

অনুষ্ঠানে ৯ম অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত পরান কথা শিরোনামে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্ন শিশুদের বাবা-মাদের ভেতর থেকে ১৫ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানের শেষে অটিজম বৈশিষ্ট সম্পন্ন শিশুরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশ করে।


শিশু শরণার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে এলো ব্রিটেন
                                  

যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তিন হাজার শিশু শরণার্থী, যাদের মা বাবা কিংবা অন্যান্য পরিজন নেই, তাদের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেন। এই কর্মসূচীতে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করবে ব্রিটেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছে।

দেশটির সরকার বলছে এটি এই মূহুর্তে বিশ্বের সবচাইতে বড় শিশু পুনর্বাসনের কর্মসূচী।

 

সিরিয়ার যুদ্ধে বহু শিশু নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, অনেকের অভিভাবক যুদ্ধে মারা গেছে। তেমন অনেক শিশুই সিরিয়া থেকে পালিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।

তবে, এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ২০২০ সালে মধ্যে বিশ হাজার শরণার্থী গ্রহণের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই শিশুরা সেই হিসাবের মধ্যে পড়বে না।

কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, যে হাজার হাজার সিরিয় শরণার্থী শিশু ইতিমধ্যেই বাবা-মা কিংবা অভিভাবক ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঢুকে পড়ার পর পাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তাদের কোন উপকারে আসবে না এই উদ্যোগ।

   Page 1 of 1
     শিশু-কিশোর
তরুণদের শরীরে যৌনশিক্ষার অভাবে রোগব্যাধি বাসা বাঁধছে
.............................................................................................
৫ বছর পর দেশে ফিরেছে কিশোর ছামিরুল
.............................................................................................
কিশোর অপরাধ ও প্রতিকার
.............................................................................................
শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপ ৩ মাসে ধর্ষিত ১৪৫ শিশু
.............................................................................................
সংস্কৃতির চর্চায় শিশুদের গড়ে তুলতে হবে -শিরীন শারমিন চৌধুরী
.............................................................................................
বাকিদের হিসেব নেই! শিশু শ্রমের আওতায় এখনো ১৭ লাখ শিশু
.............................................................................................
পাসের হার ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ : বেড়েছে সাফল্য
.............................................................................................
জ্ঞানই সব থেকে বড় সম্পদ - প্রধানমন্ত্রী
.............................................................................................
অটিস্টিক শিশুরা দেশের সম্পদ -নাসিম
.............................................................................................
অটিস্টিক শিশুরা ফুলের মতো : সংস্কৃতিমন্ত্রী
.............................................................................................
শিশু শরণার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে এলো ব্রিটেন
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308
    2015 @ All Right Reserved By manabadhikarkhabar.com    সম্পাদকীয়    আর্কাইভ

   
Dynamic SOlution IT Dynamic POS | Super Shop | Dealer Ship | Show Room Software | Trading Software | Inventory Management Software Computer | Mobile | Electronics Item Software Accounts,HR & Payroll Software Hospital | Clinic Management Software Dynamic Scale BD Digital Truck Scale | Platform Scale | Weighing Bridge Scale Digital Load Cell Digital Indicator Digital Score Board Junction Box | Chequer Plate | Girder Digital Scale | Digital Floor Scale