শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * বাল্যবিবাহের কারণে বাড়ছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন   * চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শরীফ বলী;   * ঢাকা,চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান ;   * গাজীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অগ্নিকাণ্ড   * কক্সবাজারের টেকনাফে ধরা পড়ল ৪০০ কেজি ওজনের তলোয়ার মাছ   * মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা ও বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর   * ট্রাকচাপায় সড়কে ঝড়ল অটোরিকশা চালকের প্রাণ   * ৭নং ওয়ার্ডে এনজিও সংস্থা প্রত্যাশী এর সেমিনার অনুষ্ঠিত ;   * কুড়িগ্রামে অযৌক্তিক রেলভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন   * কুড়িগ্রামে তীব্র গরমে অচেতন হয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু  

   প্রবন্ধ
আজন্ম অধিকার বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার নারী
  Date : 24-03-2019

শাহনাজ পলি


যুগ যুগ ধরেই অধিকার বঞ্চিত ও অবহেলার শিকার নারী। সেই মানব সভ্যতার শুরু থেকেই। আদিতে এটা ছিল পুরুষের শক্তিমত্তার জন্য । পরবর্তীতে তা আরো বৃদ্ধি পায় সামাজিক বৈষম্যের কারনে। আজকের যুগে সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষা ও সচেতনার অভাবের কারনে।
সামাজিক ও পারিবারিক বৈষম্যের কারণে নারীর উপলদ্ধি সৃষ্টি হলেও নানা প্রতিকুলতায় তা কাটিয়ে উঠতে পারছে না নারী। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা শিক্ষা সংম্কৃতি ও রাজনীতিতে এগিয়ে আসছে ঠিকই কিন্তু হয়রানী ও বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। ঘরে বাইরে সবখানেই নারীর নিরাপত্তার অভাব। নারী শ্রমিকের মজুরি বৈষম্যের ব্যবধান কমলেও সুরক্ষার বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত। কর্মজীবি নারীদের জন্য সুরক্ষা আইন থাকলেও তাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন নেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীদের সুরক্ষার জন্য বেশকিছু আইন প্রণীত হয়েছে ।
তারপরও আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশের নারী প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা আইন করে বন্ধ করা যাবে না ; এ জন্য সকলের সচেতনতা দরকার।
আমাদের দেশে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। পরিবারে শারিরিক বা মানষিক নির্যাতন, যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, পাচার বা খুনের মত ঘটনা ঘটছে নিত্য দিন। ঘরের বাইরে বখাটেদের অত্যাচারে নারীর স্বাভাবিক জীবন বিঘ্নিত হচ্ছে। কিশোরীরা ইভটিজিংয়ের ভয়াবহতা সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। কর্মস্থলে বেতন বৈষম্যের চেয়ে ভয়াবহ রূপে দেখা দিয়েছে পুরুষ সহকর্মীদের যৌন হয়রানীর ঘটনা। এ সবের কতটাই বা প্রকাশ পায়?
সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ঘোষিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাস্তবে নারীরা একজন মানুষ হিসেবে তাদের জন্য প্রদত্ত অধিকারগুলো পুরুষের মতো সমভাবে ভোগ করতে পারে না। মানবাধিকার জন্মগতভাবে প্রতিটি মানুষের একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। যা মানুষ ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। স্থানীয়,জাতীয়,আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হল এসব অধিকার মানুষ ভোগ করবে কিন্তু অন্যের বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হলেও বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের বিষয়টি এখন আরো প্রকটভাবে অনুভূত হচ্ছে। শিক্ষা, খাদ্য. কর্মক্ষেত্রে সব খানেই তারা ন্যায্য অধিকার পাচ্ছে না। মৌলিক অধিকার ছাড়াও বাল্য বিয়ে, সন্তান জন্মদানে তাদের মতামতকে উপেক্ষা, যৌতুক প্রথা, যৌন হয়রানি, গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবায় তাদের সঠিক মুল্যায়ন নেই। দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে দেওয়া সুবিধাগুলো কারখানার নারী শ্রমিকেরা পাচ্ছেন না।
পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি,ঐতিহ্য, আইন-কানুন বা রীতি-নীতি,বিচার ব্যবস্থায় দেখা যায় নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক। এমন কি নারী শিশু ধর্ষণের শিকার হলেও তারা সুবিচার পাচ্ছে না। ধর্ষণকারী রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বিচার তো দুরের কথা ধর্ষণের জন্য মামলা করতে গিয়েও অনেকে হেনস্তার শিকার হচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, মামলা দিতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ নারী শিশুর অর্ধেকই হেনস্তার শিকার হতে হয়। দেখা যায়, মামলা করার সময় নারী শিশুর সঙ্গে পুলিশের আচরণ মানবিক নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ষণের মামলা রেকর্ড করতে পুলিশ হেলাফেলা করেছে। এর জন্য টাকা খরচ করতে হয়েছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ আসামি ধরতে পারে না। আসামী ধরতে না পারার পেছনে পুলিশ রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় মাস্তান ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুলিশ স্টাফ কলেজের গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে থানায় যাওয়ার পর থেকে নারী ও শিশুরা বিচারের প্রতিটি ধাপে কী কী প্রতিবন্ধকতার শিকার হয় তা দেখানো হয়েছে।
পুলিশ তদন্তে দেখা গেছে, ধর্ষণের শিকার নারীদের দুই তৃতীয়াংশ শিশু। এবং ধর্ষকের সবচেয়ে বড় অংশ প্রতিবেশী। এছাড়াও সহপাঠী বা ফেসবুক বন্ধুদের দ্বারাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তারপরে মামলার গাফিলতি তো রয়েছেই। ধর্ষিত নারী শিশুদের একটা বড় অংশই বিচার চাইতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয় আথবা বিচারের প্রাথমিক পর্যায় পেরোতেই হিমসিম খায়। থানায় পুলিশের কটুক্তির কারণেও মামলা করতে অনেক সময় নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু কোথায় নারীর অধিকার। বাংলাদেশে নারী শ্রমিকের প্রায় অধের্ক নারীই কাজ করে তৈরি পোশাক কারখানায়। সেখানেও তারা নানা বৈষম্য এবং হেনস্তার শিকার হচ্ছে। এক গবেষনায় জানা যায়, নারী শ্রমিকদের ১২৬ জন কর্মক্ষেত্রে মৌখিক নির্যাতনের শিকার হন। আর যৌন নির্যাতনের শিকার হন ১৮ জন। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন যথাক্রমে ১০৬.৫ এবং ৩০ জন। ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত ১৫০ জন নারী শ্রমিকের ওপর দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেশির ভাগ নারী পোশাক শ্রমিক কাজে যোগ দেওয়ার সময় নিয়োগ সংক্রান্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাঁরা নিয়োগপত্র,পরিচয়পত্র,পে-স্লিপ,সার্ভিস বই, উপস্থিতির কার্ড পান না। তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত সময়ের কাজ করতে না চাইলেও অনেক সময় তাঁদের বাধ্য করা হয়।
অনেক ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের মৌখিক নির্যাতনের শিকার হতে দেখা যায়। মৌখিক নির্যাতন বলতে তারা কর্তৃপক্ষ ও সুপারভাইজার কর্তৃক বকাঝকা এবং নিজেদের ও মা-বাবা তুলে গালাগাল করার কথা শোনা যায়। মালিকের মন মত না চললে কর্মক্ষেত্রে ছাঁটাইয়ের ঝুঁকি রয়েছে। নারী শ্রমিকদের ওপর করা গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে,শ্রম আইন অনুযায়ী নির্ধারিত চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না। অনেক সময় গর্ভবতী হওয়ার পর অনেক নারী শ্রমিকের চাকরি চলে যায়। তা ছাড়া মাসিক চলাকালীন তাঁরা আগে চলে যাওয়া,কাজের কম চাপ এবং বসে কাজ করা এবং ওষুধ ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের সুবিধা পান না।
কিন্তু একটা দেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ সেখানে নারীর অধিকারকে আগে নিশ্চিত করা দরকার। নারী পোশাক শ্রমিকদের শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা-নিয়োগপত্র,কর্মঘণ্টা,বিশ্রাম ও ছুটি,কর্মপরিবেশ,কল্যাণ ও সামাজিক সুরক্ষা এবং নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ গড়েতুলতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। নারী পোশাক শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পেশাগত অগ্রগতি সহায়ক ভূমিকা রাখা দরকার। সমাজে নারী পুরুষ বৈষম্য কমিয়ে আনা এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকারের সাথে সকল নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে। সরকার কর্তৃক যে আইন আছে বাস্তবায়নের দায় তো শুধু সরকারের না। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে বা নানা স্তরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। সমাজ এগিয়ে না আসলে নারীর অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব না আবার নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব না।
নারীর মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কোনো অনুগ্রহ নয়,বরং তা একজন মানুষ হিসেবেই সেটা তাদের প্রাপ্য। সমাজ বা জাতির উন্নয়নের মূলে যেমন একজন পুরুষ দরকার তেমনই দরকার একজন নারীরও।
নারীর মানবাধিকার হচ্ছে ন্যায় বিচারের অন্যতম পূর্বশর্ত। তাই খাদ্য, শিক্ষা, আশ্রয়, সম্পদ, সম্পত্তি, যৌনতা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, মতপ্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সকল প্রকার নির্যাতন থেকে মুক্তিসহ সব কিছুতেই নারীর সমান অধিকার থাকতে হবে। এগুলো হলোমানুষ হিসেবে নারীর জন্মগত ও সহজাত অধিকার।
কবির কথায় ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’ এটা যদি আমরা মানি তাহলে নারীকে অবহেলা বা নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।



  
  সর্বশেষ
বাল্যবিবাহের কারণে বাড়ছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শরীফ বলী;
ঢাকা,চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান ;
গাজীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অগ্নিকাণ্ড

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308