শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, হুঁশিয়ারি সংকেত   * মাদক কারবারে ককস বাজারের সাবেক এমপি বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি   * দিশেহারা সুগন্ধা দাশের পাশে দাঁড়াল চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসন   * আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ;   * আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ;   * রশিদ মিয়া কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান ;   * কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে যে সকল প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন;   * বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলো মিয়ানমারের ৯ বিজিপি সদস্য   * ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দুর্গম সীমান্তে বিজিবি মহাপরিচালক   * টানা ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে লাখ লাখ পর্যটক, হোটেলে কক্ষ না পেয়ে ভোগান্তি  

   প্রবন্ধ
বড়দিন : মঙ্গল আলোকে উদ্ভাসিত হোক মানবজীবন : শান্তা মারিয়া
  Date : 25-01-2020

শান্তা মারিয়া , কবি ও সাংবাদিক

আমি যখন খুব ছোট তখন ‘বড়দিন’ কথাটি শুনে মনে মনে ভাবতাম, ২৫ ডিসেম্বর ‘বড়দিন’ কেন? শীতের এই মাসে দিন তো খুবই ছোট। বিকেল পাঁচটা বাজতে না বাজতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। বাবাকে কথাটা জিজ্ঞেস করতে তিনি হেসে বললেন, দিন বড় বা ছোটর ব্যাপার নয়, বড়দিন সত্যিই বড় তার মানব কল্যাণ ও মঙ্গলচিন্তার আদর্শে। পরে ধীরে ধীরে বুঝেছি কথাটার সত্যিকার অর্থ।


ক্রিসমাস স্পিরিট বা বড়দিনের চেতনা হলো সব মানুষের কল্যাণ ও প্রীতির আদর্শ প্রতিষ্ঠা। দুহাজার বছরেরও বেশি সময় আগে বেথেলহেম শহরের প্রান্তে একটি গোশালায় যে আলোকোজ্জ্বল শিশুর জন্ম হয়েছিল তিনি পরবর্তিতে মানবজাতিকে দেখিয়েছিলেন ক্ষমা ও মুক্তির পথ। মহামানব যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনকে ঘিরে পঁচিশে ডিসেম্বর সারা বিশ্বের খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের মানুষ পালন করেন ক্রিসমাস বা বড়দিন।


বড়দিন মানেই স¤প্রীতি ও ভালোবাসার উৎসব। কালক্রমে ক্রিসমাস হয়ে উঠেছে বিশ্ব সংস্কৃতিরও প্রতীক। বড়দিনের গাছ সাজানো, সান্তাক্লজের কাছ থেকে শিশুদের উপহার পাওয়া, স্নোম্যান, ক্রিসমাস বেল, ক্রিসমাস স্টার, রেইন ডিয়ার আর এলফদের নিয়ে মজার গল্প, ক্রিসমাস কেক এগুলো এখন শুধুমাত্র খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের নয় বরং বিশ্ব সংস্কৃতিরই অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের প্রধান উৎসব বড়দিন পালিত হচ্ছে প্রার্থনা, উপহার, আনন্দ ও সম্মিলনের মধ্য দিয়ে। ঢাকার কাকরাইল চার্চ, তেজগাঁওয়ের হলি রোজারি চার্চ বা জপমালা রানীর গির্জার মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎসব রীতিমতো জমকালো। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা চার্চগুলোতেও পালিত হচ্ছে বড়দিনের উৎসব। যা সারাদেশেই একটা উৎসবের আবহ তৈরি করেছে সব স¤প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই।


বাংলাদেশে খ্রিস্ট ধর্মের আদর্শ প্রচারিত হয় প্রধানত চারশ’ বছর আগে। মূলত পর্তুগিজ ও ওলন্দাজ মিশনারিদের মাধ্যমে প্রথম যুগে খ্রিস্ট ধর্মের প্রসার ঘটে। ভারতীয় উপমহাদেশে অবশ্য অনেক আগেই খ্রিস্ট ধর্মের প্রবেশ ঘটেছিল। সেন্ট টমাস ৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসেন।


৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি মালাবার উপকূলে একদল মানুষকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করেন। তবে অবিভক্ত বাংলায় খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারকদের আগমন অনেক পরে। জেসুইট স¤প্রদায়ের প্রচারকদের মাধ্যমে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারকরা বাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ১৫৭৬ সালে ফাদার অ্যান্টোনি ভাজ ও ফাদার পিটার ডায়াস এবং ১৫৮০ সালে রোমান ক্যাথলিক যাজকরা বাংলায় আসেন।


ষোল শতকে পর্তুগিজ ক্যাথলিক অগাস্টিনিয়ানরা হিজলিতে দুটি চার্চ নির্মাণ করে। বলেশ্বর, ঢাকার তেজগাঁও, হাসনাবাদ, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম এবং বাকেরগঞ্জে ষোল ও সতের শতকে বেশ কয়েকটি চার্চ নির্মিত হয়। তেজগাঁওয়ের হলি রোজারি চার্চ এবং আরমানিটোলার আর্মেনীয় গির্জা ঢাকার দুটি প্রাচীন খ্রিস্টান উপাসনালয়। ঢাকায় সতেরশ ও আঠারশ শতকে আর্মেনীয় খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের মানুষের বসতি গড়ে ওঠে ব্যবসা সূত্রে। ১৭৮১ সালে আর্মেনীয় গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে এখানে আর্মেনীয় খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের একটি কবরস্থান ছিল।


বাংলায় খ্রিস্টান ক্যাথলিক ও প্রোটেসটান্ট উভয় স¤প্রদায়ের মিশনারিরাই জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। সারা উপমহাদেশেই খ্রিস্টান মিশনারিরা অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরপরই নির্যাতিত নারী ও যুদ্ধশিশুদের পুনর্বাসনে মাদার তেরিজা প্রতিষ্ঠিত দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য মিশনারি প্রতিষ্ঠানও সেসময় যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে এগিয়ে আসে।

 

মুক্তিযুদ্ধের পর সেসময়কার আর্চবিশপ টি এ গাঙ্গুলী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে নিজের গলার স্বর্ণের চেইন ও ক্রুশ দান করেছিলেন দেশ গঠনের কাজে ব্যয় করার জন্য। মিশনারি পরিচালিত আশ্রমগুলোতে আশ্রয় জুটেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার যুদ্ধাহত নারীদের। এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে মিশনারিদের কল্যাণমূলক ভূমিকাও অনবদ্য। সেন্ট গ্রেগরীস, সেন্ট ফ্রান্সিস, নটরডেম কলেজ, হলিক্রস স্কুল ও কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এদেশে অসংখ্য মেধাবী কৃতী শিক্ষার্থীর জীবনে আলোর বার্তা নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে সেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, অনাথ আশ্রম এখনও পরিচালিত হচ্ছে খ্রিস্টান মিশনারিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে।


বাংলাদেশের জনসংখ্যার অধিকাংশ মুসলিম হলেও এদেশ মূলত ধর্মীয় স¤প্রীতি ও ভালোবাসার দেশ। বহুযুগ ধরেই এদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী ধর্মীয় স¤প্রদায়ের মানুষ পারস্পরিক স¤প্রীতির মধ্যে বাস করছেন। কখনও কখনও কুচক্রী ও স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে সা¤প্রদায়িক অস্থিরতা দেখা দিলেও এদেশে শান্তিপ্রিয় মানুষের সংখ্যাই অনেক বেশি। ক্রিসমাস বা বড়দিনের উৎসব দেশের সকল ধর্মের মানুষের জন্যই সেবা, ভালোবাসা ও ত্যাগের বার্তা বয়ে আনে।


এবারে বড়দিন এমন একটি সময় পালিত হচ্ছে যখন প্রতিবেশি দেশ ভারতে চলছে সামাজিক অস্থিরতা। যদিও ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার বিষয়ে কিছু বলার নেই, তবুও বন্ধুপ্রতীম দেশটির সংকট উত্তরণ নিশ্চয়ই আমাদের কাম্য।


ক্রিসমাসের প্রেম ও শান্তির বাণী বিশ্বের সকল দেশের, সকল মানুষের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক। যুদ্ধ নয়, হানাহানি নয়। পরম করুণাময়ের মঙ্গল আলোকে উদ্ভাসিত হোক মানবজীবন। মেরি ক্রিসমাস।

লেখক : কবি, সাংবাদিক, শিক্ষক।



  
  সর্বশেষ
৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, হুঁশিয়ারি সংকেত
মাদক কারবারে ককস বাজারের সাবেক এমপি বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি
দিশেহারা সুগন্ধা দাশের পাশে দাঁড়াল চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসন
আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ;

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308