শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * তথ্য গোপন করে উপাচার্যের পদে আব্দুল মঈন;   * কুড়িগ্রামে ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন রাজা   * ফেনীর ঈদ বাজারে ব্র্যান্ডের শো-রুম চাঙ্গা, সাধারণ দোকানে মন্দা;   * কচুয়া এপির মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান   * শ্রীপুরে বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ,পুলিশ- শ্রমিক সংঘর্ষ   * কক্সবাজারের রামুতে সাড়ে ৭ কোটি টাকা মূল্যের ক্রিস্টাল মেথ জব্দ, গ্রেপ্তার-১   * হেঁটে হজ পালন করতে যাওয়া কক্সবাজার জেলার টেকনাফের জামিল এখন ইরানে;   * মহেশখালীর আলোচিত কিলার লোকমান প্রকাশ আজরাইল গ্রেফতার ;   * গাজীপুরে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ শতাধিক পরিবার পেল ঢেউটিন ও নগদ অর্থ   * প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে `স্বাধীনতা পুরস্কার` গ্রহণ করলেন কুড়িগ্রামের কীর্তিমান সন্তান এস এম আব্রাহাম লিংকন  

   প্রবন্ধ
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
  Date : 11-02-2019

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চল্লিশ বছর পূর্তিতে আবদুলাহ আবু সায়ীদ 

আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে একটা বেদনা আমার সারা অস্তিত্বকে অসম্ভবভাবে কামড়ে ধরেছিল। সে বেদনা আমার জাতির অজ্ঞতার বেদনা। তখন আমাদের দেশ জাতীয় জীবনের দীর্ঘ নেতিবাচক ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করে প্রথমবারের মতো স্বাধীন হয়েছে। যুগ যুগের পরাধীনতা, দাসত্ব, দুঃখ আর লাঞ্চনার নিগ্রহে জাতি তখন মুমূর্ষু। জ্ঞানের অভাবে, মনের সংকীর্ণতায়, অজ্ঞতায়, দারিদ্র্যে ও অন্ধকারে দেশ যেন ভবিষ্যৎহীন। অথচ আমরা তখন একটি জাতীয় যুদ্ধ সাফল্যজনকভাবে শেষ করে নিজেদের জন্যে একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছি।
অনেক নৈরাজ্য ও বেদনার পাশাপাশি মানুষের মন তখনও এক অফুরন্ত আশা ও স্বপ্নে জাগ্রত। দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে তাই তখন এক নিদ্রাহীন উৎকণ্ঠা: কী করে সেই নিষ্ক্রিয়তা আর জাড্য থেকে দেশ ও জাতিকে শক্তি গতি ও সামর্থ্যের জগতে উন্নীত করা যায়।
আমি শিক্ষক মানুষ। একজন শিক্ষক যেভাবে এমন পরিস্থিতির জবাব দেবার কথা ভাবতে পারেন আমি সেভাবেই ভাবলাম।
স্পষ্ট দেখলাম যুগ যুগের নিঃস্বতা আর দারিদ্র আমাদের জাতীয় চেতনার চারপাশে এক দুরারোগ্য অন্ধকারকে চিরস্থায়ী করে রেখেছে। তাই দেশকে বড় করে তুলতে হলে যেভাবেই যতদিনেই হোক এই দুর্ভেদ্য অন্ধকারের জড়ীভূত জগদ্দল ভেঙে আমাদের বেরিয়ে যেতে হবে। আর তা করতে হলে এই জাতির প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জ্বালিয়ে তুলতে হবে আলো- জ্বলিত উদ্যত ও অপরাজেয় আলো- কেননা আলোর দীর্ঘ জাগ্রত উজ্জ্বল বর্শাই সেই আয়ুধ যা দিয়ে অন্ধকারের হৃদয়কে ছিন্নভিন্ন করা যায়।
তখন প্রশ্ন উঠল: যে মানুষদের হৃদয়কে আমাদের প্রজ্বলিত করতে হবে তাঁরা কারা? প্রথমেই স্পষ্ট হল যাঁরা বয়স্ক, নির্জীব, নিষ্ক্রিয়; যাঁরা বৃদ্ধ, অথর্ব, অক্ষম, যাঁরা সৃজনক্ষমতায় নীরক্ত ও নিঃশেষিত তাঁরা আমাদের মূল লক্ষ্য হবে না। আমাদের এই মূল লক্ষ্য হবে শিশুরা, কিশোরেরা, তরুণরা, নবীনেরা- যারা আগামী দিনের বাংলাদেশ- যারা কচি, উন্মুখ, উৎকর্ণ; যারা অনুভূতিময়, স্পর্শকাতর, গ্রহণক্ষম। মনে হল, এদের তরুণ জীবনে শুভ-স্বপ্নের বীজ যদি কোনও মতে একবার বুনে দেওয়া যায় তবে পাথুরে মাটির রুক্ষ অনুর্বরতা তাদের ব্যর্থ করতে পারবে না। তাদের কাঁচা বয়সের পলিপড়া নরম উর্বর মাটিতে সেই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে একটু একটু করে বিকশিত হয়ে চলবে। একসময় তাদের কান্ড গজাবে, ডাল হবে, পাতা আসবে, শাখা-প্রশাখায় ফুলে-ফলে তারা ভরে উঠবে। আর তাদের সেসব ফল চারপাশের মাটিতে পড়ে পড়ে সেখানে জন্ম দেবে আরও অনেক নতুন গাছ। এমনি করে গোটা এলাকাটা একদিন অরণ্য হয়ে উঠবে। এই জন্য একটি শিশুর হৃদয়কে আলোতে প্রজ্বলিত করা এত জরুরি। এতে সে যে শুধু নিজে আলোকিত হয় তা নয়। জীবনের দীর্ঘ পরিক্রমায় চারপাশের জগৎকেও সে আলোকিত করে চলে। তারপর একদিন সেই উজ্জ্বল মশাল সে তুলে দেয় পরবর্তী প্রজন্মের হাতে।
মৌমাছিদের যেমন চাক থাকে, তেমনি একটি দেশের কিশোর-তরুণদের জীবনের সেই চাক হল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ তাদের উৎকর্ষে বসতি। আমরা ভেবে দেখেছিলাম আমরা যদি আমাদের উৎকর্ষ কার্যক্রমগুলো নিয়ে দেশের প্রতিটি স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিশোর-তরুণদের কাছে পৌঁছাতে পারি তবে তা হবে আগামী দিনের সম্পন্ন বাংলাদেশের কাছেই পৌঁছানো। তাই আমরা তাদের আলোকিত জীবনের লালনক্ষেত্র হিসেবে মূলত এই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বেছে নিয়েছিলাম।
প্রথমেই আমাদের ভাবতে হয়েছিল কী কী উপায়ে আমাদের কিশোর-তরুণদের চিত্তকে আলোকিত করে বড় জীবনের স্বপ্ন ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তোলা যায়। আমাদের মনে হয়েছিল দুটি ব্যাপার এই লক্ষ্যে বড় রকমের অবদান রাখতে পারে:
এক. তাদের মন ও বয়সের উপযোগী শ্রেষ্ঠ ও অনিন্দ্যসুন্দর বইগুলো পড়িয়ে তাদের জীবনকে অনুভূতিময় সৌন্দর্যস্নাত ও উচ্চমূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তোলা । বইয়ের ওপর আমরা জোর দিয়েছিলাম একটি কারণে। তা হল, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষদের আত্মার আলো এদের ভেতর জ্বলছে। ওইসব মানুষদের হৃদয়ের ভেতরকার যা কিছু সুন্দর, গভীর, ঐশ্বর্যময়, কল্পনাসমৃদ্ধ, মহৎ ও বৈভবসমৃদ্ধ- তাদের ওই বইগুলোর মাধ্যমে সেই সব দীপ্তি ও উজ্জ্বলতার সাহচর্যে বিকশিত হলে আমাদের তরুণদের হৃদয়েও এসবের সংক্রাম অনিবার্য হবে।
দুই. পড়ার পাশাপাশি সুস্থ সাংস্কৃতিক কর্মসূচির ভেতর দিয়ে তাদের বড় করে তোলা।
ফলে বইপড়ার ভেতর দিয়ে ঘটবে তাদের বৌদ্ধিক জীবনের সমৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক কর্মসূচির ভেতর দিয়ে ঘটবে তাদের হৃদয়ের পরিশীলন। এতে তারা উন্মীলিত হবে আলোকস্নাত কার্যকর ও দীপান্বিত মানুষ হিসেবে। গত চল্লিশ বছরের নিরন্তর চেষ্টায় বইকে আমরা আজ জাতির কাছে জনপ্রিয় করতে পেরেছি এ-ও আমাদের একটা অর্জন।
আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে মাত্র দশজন তরুণ ও তাদের জন্য দশটি বই কেনার দাম বাবদ এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে পাওয়া ৩৫টি টাকা সম্বল করে শুরু হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রর যাত্রা। আমাদের সেই সভ্যসংখ্যা আজ বছরে ২৮ লক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে। গত চল্লিশ বছরে নব্বই লক্ষ কিশোর-তরুণ আমাদের বিভিন্ন উৎকর্ষ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আলোর স্পর্শ পেয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী ২০২২ সাল নাগাদ বছর প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী নিয়মিতভাবে আমাদের উৎকর্ষ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৫০টি উপজেলার প্রায় ১৫,০০০ স্কুল ও কলেজে, এক কথায় প্রায় সব স্কুল ও কলেজে, আমাদের এই কর্মসূচি প্রসারিত হয়েছে। কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি গত বিশ বছর ধরে দেশের ৫৬টি জেলায় পাঠকদের বাড়ির দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দিয়ে আসছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে এই লাইব্রেরি সারা দেশের সবখানে, অর্থাৎ দেশের প্রতিটি জেলা শহরে, উপজেলার শহরে, ইউনিয়নে এমনকি বর্ধিষ্ণু গ্রামে পাঠকদের দরজায় বই পৌঁছানোর কাজ শুরু করবে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রকাশনা কার্যক্রমের আওতায় বাংলাভাষার চিরায়ত বইসহ অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বইগুলোর প্রকাশের কাজ চলছে। এই বিভাগ থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচশ বই বেরিয়েছে। ‘আলোর ইশকুল’ স্কুল-কর্মসূচির মাধ্যমে মানব জ্ঞানের ৭৫টি শাখার ব্যাপক পঠন-পাঠন, শ্রবণ ও দর্শনের ভেতর দিয়ে উচ্চায়ত মানুষ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। ‘আলোর পাঠশালা’ কর্মসূচির মাধ্যমে অন-লাইন বই পড়ার কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে।

৭. ২০ বছর আগে লেখা আমার একটি জর্নাল উদ্ধৃত করে এই প্রসঙ্গ শেষ করি :
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রর আসল লক্ষ্য কী, এ নিয়ে নানান লোকের কাছে নানান কথা বলি। কিন্তু আমি তো জানি এই কেন্দ্রের সামনে আজ যদি সত্যিকার করণীয় কিছু থাকে তবে তা হচ্ছে দুটো :
এক, আজকের তরুণদের অর্থাৎ আগামীদিনের মানুষদের বড় করে তোলা;
দুই, তাদের সংঘবদ্ধ জাতীয় শক্তিতে পরিণত করা।
ভালো সময় বলতে কী বুঝি আমরা? ভালো সময় মানে সেই সময়- যখন ভালো মানুষেরা সংঘবদ্ধ আর খারাপেরা বিভক্ত এবং পরাজিত। এর উল্টোটা হলেই তাকে আমরা বলি দুঃসময়।
আমাদের দেশে সব জায়গায় আজ শুধু অশুভের সংঘবদ্ধতা। কোথাও একটা দুর্বৃৃত্ত হেঁকে উঠলে মুহূর্তে সব দুর্বৃত্ত সংঘবদ্ধ হয়ে যায়।
আমাদের দেশে ভালো মানুষেরা আজ বিচ্ছিন্ন, যোগাযোগহীন- যে যার আলাদা ঘরে শুয়ে একা একা কাঁদছে। পরস্পরকে খুঁজে পাচ্ছে না।
তারা পরস্পরের কাছে অপরিচিত আগন্তুক এবং প্রত্যেকের মাঝখানে এক আকাশ অন্ধকার। তাদের মাঝখানকার এই বিচ্ছিন্নতার দেয়াল ভাঙতে হবে।
তাদের সকলকে করতে হবে- ‘একত্রিত, সমবেত, আয়োজিত’।
এতগুলো বছর তাদের একত্রিত করার উপায় বের করতেই শেষ হয়েছে। এখন পথ জানা হয়ে গেছে। এখন সংগ্রাম গন্তব্যর জন্যে।
কাজ এখন একটা: প্রদীপ উঁচিয়ে রাখা। ‘ভাই হে, তোমাদের মশালগুলো যেন পলকের জন্যেও না-নেভে।’



  
  সর্বশেষ
তথ্য গোপন করে উপাচার্যের পদে আব্দুল মঈন;
কুড়িগ্রামে ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন রাজা
ফেনীর ঈদ বাজারে ব্র্যান্ডের শো-রুম চাঙ্গা, সাধারণ দোকানে মন্দা;
কচুয়া এপির মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308