শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * তথ্য গোপন করে উপাচার্যের পদে আব্দুল মঈন;   * কুড়িগ্রামে ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন রাজা   * ফেনীর ঈদ বাজারে ব্র্যান্ডের শো-রুম চাঙ্গা, সাধারণ দোকানে মন্দা;   * কচুয়া এপির মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান   * শ্রীপুরে বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ,পুলিশ- শ্রমিক সংঘর্ষ   * কক্সবাজারের রামুতে সাড়ে ৭ কোটি টাকা মূল্যের ক্রিস্টাল মেথ জব্দ, গ্রেপ্তার-১   * হেঁটে হজ পালন করতে যাওয়া কক্সবাজার জেলার টেকনাফের জামিল এখন ইরানে;   * মহেশখালীর আলোচিত কিলার লোকমান প্রকাশ আজরাইল গ্রেফতার ;   * গাজীপুরে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ শতাধিক পরিবার পেল ঢেউটিন ও নগদ অর্থ   * প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে `স্বাধীনতা পুরস্কার` গ্রহণ করলেন কুড়িগ্রামের কীর্তিমান সন্তান এস এম আব্রাহাম লিংকন  

   প্রবন্ধ
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব
  Date : 01-09-2020

 

ইতিহাসের পাতায় ১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে অঙ্কিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের নাম। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে সমগ্র বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দুঃসাহসিক নেতৃত্ব বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সেদিন। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেন ইতিহাসের মহানায়ক। বঙ্গবন্ধুর মহানায়ক হওয়ার পিছনে যার সহনশীলতা, নির্লোভ চরিত্র আর দেশপ্রেম বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে, সেই অন্তরালের তিনিই আমাদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। আমার মনে হয় বঙ্গমাতার জীবনটাও যেন আল্লাহর বিশেষ চিন্তার ফসল। শিশু বয়সে ফজিলাতুন নেছা হারিয়েছিলেন বাবা ও মাকে। বঙ্গমাতার ছোট একটি নাম ছিল, রেনু নামে বঙ্গবন্ধু তাঁকে ডাকতেন।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যখন রেনুর বিয়ে হয় তখন বঙ্গবন্ধুর বয়স ছিল ১২-১৩ বছর এবং রেনুর বয়স ৩ বছর। রেনুর বাবা শিশু বয়সেই ইন্তেকাল করেন। রেনুর বয়স যখন ৫ বছর তখন তাঁর মা মারা যান। দাদাও রেনুর ৭ বছর বয়সে মারা যান। তার পর থেকে একাই বাসায় রেনু এবং বঙ্গবন্ধুরা থাকতেন। বঙ্গবন্ধুর মায়ের কাছেই বেড়ে উঠেন রেনু। পরিবারের মানুষগুলোর চিন্তা, মানসিকতা, দেশপ্রেম সেই বয়সেই তার ভিতরে তৈরি হতে আরম্ভ করে। ইতিহাস যেমন নেতৃত্ব সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি নেতৃত্ব সৃষ্টি হতে চাই পরিবেশ। বঙ্গবন্ধু ছেলেবেলা থেকেই নেতৃত্বের অধিকারী ছিলেন। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন আর স্বাধীনতা, স্বাধীনতার শীর্ষে পৌঁছতে বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করতে হয়েছে অনেক ত্যাগ।

আমরা কিছুটা জানি সেই ত্যাগের ইতিহাস। কিন্তু আমরা কি জানি বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি তাঁর সহধর্মিণী কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন? সেই ১৯৪৯ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদী জীবন আর সেই সঙ্গে কারাবরণ শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু আর ফজিলাতুন নেছার কন্যা শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে জন্ম হয় শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রেহানার। এই ছোট শিশুদের নিয়ে বঙ্গমাতাকে কাটাতে হয়েছে নিদারুণ কষ্টের জীবন। শেখ মুজিবকে হয়রানি করতে তৎকালীন সরকার সব সময় ব্যস্ত থাকত। শেখ মুজিব অন্তরে যা পোষণ করতেন, মুখেও তাই প্রকাশ করতেন। আমি যদি অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করি তাহলে বলতেই হয় বঙ্গমাতা ও বঙ্গবন্ধুর এই নেতৃত্বসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিকে নীরবে ভালোবাসতেন।

তাই তো তিনি তাঁকে উৎসাহ দিতেন। পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যায় বঙ্গবন্ধুকে জড়াতেন না। পরোক্ষভাবে তিনিও কষ্টের জীবন কাটাতেন। সংগ্রামী শেখ মুজিবের জীবনের সঙ্গে নিবেদিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। স্বামীর কারাগারে দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলতেন, “কত রকমের টিফিন কেরিয়ারই না আমার বাসায় ছিল।” বড় সাইজের টিফিন কেরিয়ার ভরে স্বামীর জন্য তিনি জেলে খাবার পাঠাতেন। যাদের আপনজনরা খাবার পাঠাত না তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু খেতেন। কোথায় তিনি রাগ করতেন, তা নয় বরং সাহস জুগিয়েছেন সব সময়। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে নিজের জীবনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে গিয়ে বারবার বলেছেন সহধর্মিণীর কথা-যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি ছিলেন। কখনো কোনো দুঃসময়ে এলোমেলো কথা বলে বঙ্গবন্ধুকে বিচলিত করতেন না, বরং দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। শুধু তাই নয় সময়মতো সঠিক পরামর্শ দিতেন।

 

৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ, যে ভাষণটি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেই ভাষণ যেদিন বঙ্গবন্ধু দিতে যাবেন সে সময়ে বঙ্গমাতা একটি কথাই তাঁকে বলেছিলেন, অনেকে অনেক উপদেশ দিবে, তবে তোমার মনে যেটা আসবে তুমি তাই বলবে। তিনি জানতেন তার স্বামী জনগণকে কতটা ভালোবাসতেন। কখন কী বলতে হয় তা তিনি সবচেয়ে ভালো জানেন। আজ ইতিহাসের পাতায় সেই ভাষণ স্থান পেয়েছে। কিন্তু বঙ্গমাতাকে কে মনে করেছে।


আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলায় যখন বঙ্গবন্ধু কারাবন্দী। বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এই খবর বঙ্গমাতার কাছে যখন পৌঁছাল, তিনি এক মুহূর্ত দেরি করেননি। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর দেশপ্রেমের সঠিক চিন্তা তাঁর ভিতরে আসে। বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা যেন একই চরিত্রের দুজন মানুষ, যাদের জীবন গাঁথা একসঙ্গে। সাধারণত দেখা যায় স্ত্রীরা অনিশ্চিত জীবন যখন দেখেন তখন হতাশ হয়ে পড়েন। স্বামীকে ফিরে আসতে বলেন, কিংবা পরিবারে অশান্তি তৈরি করে ফেলেন। বঙ্গমাতার মধ্যে কিন্তু আমরা সেই চরিত্র দেখি না। বরং কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে গেলে নিজের কষ্ট, পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যা কিংবা সন্তানদের দায়িত্ব নিয়ে তিনি কিছুই বলতেন না। তিনি বারবার এটাই বুঝতেন বঙ্গবন্ধু যেন ভেঙে না পড়েন

তার নেতা-কর্মীদের সাহস দেওয়ার পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়া সবই নিজে তাঁর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে চালিয়ে যেতেন। যখন অর্থ সংকটে পড়েছেন ছেলেমেয়েদের সেই ভাবেই মানিয়ে নিতেন। তাঁর কন্যার মুখ থেকে শোনা, “মা খিচুড়ি রেঁধে বলতেন আসো আমরা আজকে গরিব খাওয়া খাই।” ফ্রিজ বিক্রি করে বলতেন ঠা-া খাওয়া ঠিক না, তাই ফ্রিজের দরকার নেই। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যার বিয়ে হয় একটি অনাড়ম্বর পরিবেশে। এই নিয়ে বঙ্গমাতার বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই। তিনি তো তাঁর স্বামীকে দেশের তরে উৎসর্গ করেছিলেন। যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলছিল দেশের বাইরে থেকে ব্যারিস্টার নিয়ে আসা এসব কিছুই ছিল খুব ব্যয়বহুল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন আমার বাবা শহীদ ময়েজউদ্দিন।

বাবার মুখ থেকে শুনেছিলাম এই মামলা পরিচালনার জন্য বিভিন্নভাবে চাঁদা উঠাতে হয়েছে। তারপরও প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বঙ্গমাতা সেই সময়ে তাঁর কাছে যা স্বর্ণ-অলঙ্কার ছিল তাও তিনি এই মামলার জন্য দিয়ে দিয়েছিলেন। যুদ্ধকালীন বঙ্গবন্ধু যখন পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী, বঙ্গমাতা তখন সন্তানদের নিয়ে গৃহবন্দী। এ অবস্থায় জুলাই মাসে তাঁর প্রথম নাতির জন্ম হয়। বন্দীজীবনে তিনি সব রকম সাহস নিয়ে বুদ্ধি দিয়ে সময় অতিবাহিত করেছেন। স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরে আসেন তিনি আগে জনগণের কাছে ছুটে যান। তারপর তিনি বাসায় ফেরেন। বঙ্গমাতা কীভাবে সময় কাটিয়ে ছিলেন কেউ কি উপলব্ধি করতে পারেন?

দেশ তখন এলোমেলো, একদিকে ৩০ লাখ শহীদের পরিবার অন্য দিকে ২ লাখ নির্যাতিত নারী, তাদের জীবন। এই নারীদের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গমাতা। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের পর যখন সুখের মুখ দেখলেন, স্বাধীন দেশ, দুই ছেলের বিয়ে দিয়ে ছেলে বউদের ঘরে এনেছেন। স্বামী এখন আর কারাগারে থাকে না, প্রতি দিন চিন্তায় থাকতে হয় না স্বামীর জন্য, ঠিক সেই সময়ে ষড়যন্ত্রের কালো থাবা সব শেষ করে দেয়। বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে যে নারী দেশমাতৃকার জন্য পার্থিব জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়েছিলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকরা এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার চিরদিনের সাথীকেও নিয়ে গেল পরপারে। রক্তভেজা ধানমন্ডির ৩৩ নম্বরের বাড়ি বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে বঙ্গমাতার রক্ত। ইতিহাসেও মিশে থাকবে তাঁদের কথা, তাঁদের আত্মদান। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন তিনি আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করেননি। বরং খুনিদের বলেছিলেন, আমাকেও মেরে ফেল। আমি বেঁচে থাকতে চাই না।


একজন সাহসী, দেশপ্রেমিক নারী টুঙ্গিপাড়া থেকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির জীবনে বহু চড়াই-উতরাই পার করে এদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবনের সব স্বত্ব বিসর্জন দিয়ে ছিলেন। আমরা তাঁকে ভুলতে পারি না। তাঁর সন্তানদের তিনি তৈরি করেছেন দেশের জন্য। দুর্ভাগ্য তাঁর আদরের তিন পুত্র সন্তানকে হত্যা করা হয়েছিল। দুই কন্যা বেঁচে থেকে তাঁর শিক্ষার আলোর চেতনায় দেশকে নিয়ে যাচ্ছে সূর্যোদয়ের পথে। ইতিহাস কখনো হারিয়ে যেতে পারে না। বঙ্গমাতা চিরদিন অ¤øান হয়ে থাকবেন ইতিহাসের পাতায়।

লেখক : সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদ
মহিলা সম্পাদিকা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

 



  
  সর্বশেষ
তথ্য গোপন করে উপাচার্যের পদে আব্দুল মঈন;
কুড়িগ্রামে ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন রাজা
ফেনীর ঈদ বাজারে ব্র্যান্ডের শো-রুম চাঙ্গা, সাধারণ দোকানে মন্দা;
কচুয়া এপির মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308