বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উদ্বেগজনক ঐ তালিকায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩০টি দেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই চিত্র দেখা যায়। ২০১৫ সাল নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি ২১ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়। মূলত গণতান্ত্রিক মূল্যায়ন, আইনের শাসন ও মানবাধিকার এই তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তারা এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সমস্যা হিসেবে অসাম্প্রদায়িক ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট হত্যা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, স্বাধীন মত প্রকাশে বাধার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হামন্ড বলেন, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাপী আমাদের কূটনীতিকদের মাধ্যমে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ম্যাগনাকার্টা ফান্ড থেকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আগের বছরের চেয়ে কোনো উন্নতি ঘটেনি। এক্ষেত্রে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্ধ অবসান না ঘটার কথা উল্লেখ করা হয়। এই রাজনৈতিক বিরোধ থেকে ২০১৫ সালের শুরুর চার মাসের সহিংসতা, বিএনপির লাগাতার অবরোধ আহ্বান, দলটির নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়গুলো উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এর প্রভাবে জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়।
গত বছরের শেষে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচনও সবার অংশগ্রহণে হওয়ার ওপর জোর দিয়ে এজন্য সব দলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়ন এবং গুম নিয়ে বাংলাদেশের এনজিওগুলোর কথা বলার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিচার পেতে দেরি হওয়ায় মানুষের আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতার দিকটিও ইঙ্গিত করেছে যুক্তরাজ্য। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার সংস্কারে যুক্তরাজ্যের ৩৭ লাখ পাউন্ড এবং পুলিশ সংস্কার কর্মসূচিতে ১২ লাখ পাউন্ড সহায়তা দেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশে ২০১৫ সালে অন্তত ৫ জনের সর্বোচ্চ দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি প্রতিবেদনে নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে তিনজন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য এই সাজা পেয়েছেন।
বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও সমাজে এখনো নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে যুক্তরাজ্যের পর্যবেক্ষণ। নারীর প্রতি সহিংসতা এবং বাল্যবিয়েকে এক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা বাংলাদেশের সম্ভাবনার দিকটি তুলে ধরে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সহযোগিতার কথাও বলেছে যুক্তরাজ্য।
যে ৩০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং মিসর, ইরাক, ইরান, কঙ্গো, সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, ইসরাইল, সুদান, চীন ও মিয়ানমারও রয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক