বুধবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * প্রাইম ব্যাংক`র চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী   * ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকঃ ভবিষ্যতের বাংলাদেশ   * ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকঃ ভবিষ্যতের বাংলাদেশ   * দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস এবং পারস্পরিক সমঝোতার অভাব নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সব সময়ই সংকটময় করে তোলে   * কুড়িগ্রাম-১ আসনে ঘর গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি, মাঠে জামায়াত   * কুড়িগ্রামে ২৮ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন পিতা-মাতা   * দেশটা শুধু পলিটিশিয়ানরাই চালায় না, দেশটা বিজনেসম্যানরাও চালায়: আনিস উদ দৌলা   * সাংবাদিক নির্যাতন মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি`র আদালতে হাজিরা   * ভাঙনের অজুহাতে খোর্দ্দ বাঁশপাতা আবাসন প্রকল্পের ঘরের খুলে নিয়েছে দরজা-জানালা   * ব্রিজের অভাবে কুড়িগ্রামে ৮ বছর ধরে ৪ গ্রামের মানুষের ভোগান্তিতে পারাপার  

   আন্তর্জাতিক
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকঃ ভবিষ্যতের বাংলাদেশ
  Date : 03-09-2025

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকঃ ভবিষ্যতের বাংলাদেশ

 

॥ রাজু আলীম।

২০২৫ সালের জুনের এক সন্ধ্যা। লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা থেকে যাত্রা করেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তখনো কেউ জানত না, এই সফর কেবল একটি সম্মাননা গ্রহণের অনুষ্ঠান নয় বরং এটি হতে চলেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক

অধ্যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চার দিনের সফর এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে। বিশ্লেষকের চোখে তা যেন এক নীরব পরিবর্তনের পূর্বাভাস। এই সফর কি কেবল একটি

সম্মাননা গ্রহণ? নাকি এর মাঝেই লুকিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন রূপরেখা? এই নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ, রাজনীতির ভেতরে গভীর রাজনীতি পর্যবেক্ষণ আর সজাগ চোখে তথ্য অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা।

ড. ইউনুস, তার লন্ডন যাত্রা এবং তারেক রহমানের সাথে তার ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ। পুরো বিষয়টি দেখতে হলে একটু পেছনে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

৫ আগস্ট। দেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়া একটি দিন, একটি অধ্যায়। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সময় অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা, সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত না হয়েও কেবল মাত্র ক্ষমতার অপব্যবহারে একটি দমবন্ধ ম্যাজিক রিয়েলিস্টিক সামাজিক পরিস্থিতি সৃষ্টি। যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় টিকে

থাকা। এক নায়ক প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথাই ছিলো শেষ কথা। রুদ্ধ কণ্ঠে সত্য প্রকাশে সবসময়ই শঙ্কিত থাকতে হয়েছিলো সংবাদমাধ্যমগুলোকে। জনতা যেখানে ছিলো উপেক্ষিত। বিরোধী দল নির্যাতিত। রুদ্ধশ্বাস সামাজিক পরিস্থিতিতে নিরব নিষ্পেষনের শিকার সাধারণ মানুষ একদিন ঠিকই গর্জে উঠেছিলো। ছাত্র জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানে ভেঙ্গে যায় শোষকের রাজকীয় দরবার, জল্লাদখানা। এরপর থেকেই বাংলাদেশ এবং দেশের রাজনীতি হতে পারতো প্রীতি আর হৃদ্যতার অনন্য উদাহারণ। কিন্তু রাজনীতির নাটকীয়তা আর ক্ষমতার মারপ্যাচ, বাংলাদেশ আর বাঙ্গালী জাতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। অভ্যুত্থানে জড়িত থাকা, অভ্যুত্থানে অংশী-দারিত্ব এবং আগামীর বাংলাদেশে নতুন সরকার গঠনের হিসেব নিকেশ

প্রকাশে প্রয়েছিবে ন ছিলে পয়নেন থানে রবার আর এই

আর টানা পোড়েনে সাধারণ মানুষের স্বপ্নভঙ্গে খুব বেশি সময় লাগেনি।

যাতে তাল মেলায় জামাত এবং গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। সব মিলিয়ে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা। সরকারের বিভিন্ন কাজ এবং বক্তব্যে বিএনপি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাঝে তৈরি হয় দূরত্ব।

সাধারণ মানুষের মনে জমে শঙ্কার কালো মেঘ। কোন পথে হাঁটবে বাংলাদেশ?

ঠিক এমনই এক সময়ে, ৯ জুন রাতে ঢাকা ত্যাগ করে লন্ডনে পা রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরে তার সফরসূচী ছিল ঘন ও লক্ষ্যনীয়। ১০ জুন তিনি বৈঠক করেন এয়ারবাস ও মেনজিস এভিয়েশনের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে। ১১ জুন তিনি রাজা চার্লসের কাছ থেকে গ্রহণ করেন হারমনি

জাতীয়

বাংলাদেশের জনগণ স্বপ্ন দেখেছিলো এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে দেয়ালে দেয়ালে শিক্ষার্থীদের হাতে আঁকা দেয়ালচিত্র, হাজাবো শ্লোগান আজও সেই স্বপ্নের কথা জানান দেয়।

কিন্তু বাস্তবতার খেরো খাতা বলছে ভিন্ন কথা। সাবেক স্বৈরাচারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হবার পরেও বাংলাদেশ এক হতে পারেনি। এক হতে পারেনি রাজনীতি। দেশের গণঅভ্যুত্থানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একদল মানুষ তৈরি করে মব। ধর্মীয় অনুভূতির সুবিধা নিয়ে রাজনী-ি তের মাঠে তৈরি করেছে বিভাজন।

যে গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের স্বপ্ন বাংলাদেশ চেয়েছিলো তা এখনও দূরের বস্তু বলেই প্রতীয়মান। দেশের যে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দেখতে চেয়ে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছিলো সেই সংস্কারগুলোই মনে হতে থাকে বহুদূরে থাকা দ্রাক্ষাফল। যা দিন দিন আরও দূর থেকে বহু দূরের বস্তু বলে প্রতীয়মান হতে থাকে।

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এই পুরো সময়টিতে ছিলো শান্ত, দৃঢ় অথচ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিচল। মধ্যবর্তী সময়ে তাই বিএনপির দাবি ছিলো সবচেয়ে কম সময়ে ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। তবে মাঝখানে বাধ সাধে সংস্কারের গল্প। অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার প্রায় ১১ মাস ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে দেশের প্রধান কোন সংস্কার সম্পাদন না হলেও, সংস্কারের কথা বলে ডিসেম্বরে দাবী করা নির্বাচন পিছিয়ে এপ্রিলে দেবার কথা বলে সরকার।

অ্যাওয়ার্ড। একই দিনে ব্রিটিশ বানিজ্য ও শিল্প সচিব জনাথন রেনল্ডস এর সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। ১২ জুন সকালে বাকিংহাম প্যালেসে রাজা চার্লসের সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত অডিয়েন্সে অংশ নেন। তবে সবচেয়ে আংলা-চক ঘটনা ঘটে ১৩ জুন সকালে, যখন তারেক রহমানের সঙ্গে তার দেড় ঘণ্টার গোপন বৈঠক জনসম্মুখে আসে।

এই বৈঠক, এবং পুরো সফরকে ঘিরে যেসব প্রশ্ন ও অনুমান তৈরি হয়েছে, তার পরিধি বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে গড়ায় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। ড. ইউনুসের মতো একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বীকৃত ব্যক্তিত্বের এমন সফরকে কেবল আনুষ্ঠানিক সৌজন্য সফর হিসেবে দেখার সুযোগ নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকালীন সময়ে সমালোচনাও ঘিরে ধরে সরকার প্রধানকে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সাথে সাক্ষাৎ ঘিরে তৈরি হওয়া সমালোচনার মেঘ অনেকটাই কেটে যায় তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাতের ঘটনায়। এ সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বারবার উঠে আসে তারেক রহমানের নাম।

১৩ জুন লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে বিএন-ি পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের দেড় ঘণ্টার বৈঠকটি সফরের সবচেয়ে নাটকীয় অধ্যায়। এতদিন জনসমক্ষে কোনও রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকা ইউনূসের জন্য এটি ছিল এক ধরনের `পলিটিক্যাল কামব্যাক`। তারেক রহানের সাথে বৈঠকটি ছিলো অনেকটা বরফ গলার মতো।

উভয় পক্ষই এটিকে `ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে সৌজন্য সংলাপ` বলে অভিহিত করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটি একটি শক্তিশালী বার্তা। এমনকি কেউ কেউ বলছেন, এটি একটি সম্ভাব্য জাতীয় ঐক্যমতের রূপরেখা তৈরির সূচনা হতে পারে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই সফর ও বিশেষ করে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠককে ভাল চোখে দেখেনি অনেকেই। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে ড. ইউনুসের সম্ভব্য সম্মতি অনেকের মনেই তৈরি করেছে দুশ্চিন্তার ছায়া। এখানেই দেখা দেয় একটি দ্বিধা। কেউ কেউ বলছেন, তিনি `কোনও পক্ষের হয়ে নয়`, বরং `নিজস্ব অবস্থান থেকে একটি নিরপেক্ষ আলোচনার চেষ্টা করছেন`। এই বিভাজন তাঁকে সুযোগ যেমন দিচ্ছে,

তেমনি সীমাবদ্ধতাও তৈরি করছে। বিএনপিসহ সরকারের মুখোমুখি থাকা রাজনৈ-তিক দলগুলো এই সফর ও বৈঠককে ইতিবাচ-কভাবে দেখছে। দীর্ঘদিন পর ড. ইউনূসকে

সরাসরি তাদের মঞ্চে দেখা গেছে, এবং তাদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা দেখা গেছে। এমনকি রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন উঠেছে, একটি `অরাজনৈতিক` বা `নিরপেক্ষ` জাতীয় সরকারের ধারাবাহিকতায় তিনি পরামর্শক বা তত্ত্বাবধায়ক ভূমিকায় আসতে পারেন।

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া মহলে এই সফর ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ মনে করছেন, এটি একটি ইতিবাচক আন্তর্জানি তক বার্তা, যা বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার বাইরে যাওয়ার পথ খুলতে পারে। আবার একটি গোষ্ঠি এই সফরকে `পক্ষপাত হিসেবেও মনে করছেন।

তবে এক বিষয় বেশিরভাগ বিশ্লেষকই একমত: ইউনূসের সফর দেশের রাজনীতিতে আলোচনার নতুন ঢেউ তুলেছে। রাজনীতির বর্তমান সংকটে একটি `বিকল্প আলোচনার প্ল্যাটফর্ম` গঠনের ধারণা এখন আরও বেশি উচ্চারিত হচ্ছে।

ড. ইউনুস এখন কী করবেন, সেটাই ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তিনি কি আরও সক্রিয়ভাবে রাজনীতির আলোচনা ও সমঝোতায় যুক্ত হবেন? না কি এই সফর কেবল তাঁর একটি "সুশীল কূটনীতি`র প্রচেষ্টা ছিল?

সফরের ধারাবাহিকতা যদি ভবিষ্যতেও থাকেড়যেমন আন্তর্জাতিক মহলে আরও সমর্থন, দেশে ফেরার পর আরও সংলাপ, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও বৈঠকড়তাহলে এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের

রাজনীতিতে একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক গঠনের পূর্বাভাস হয়ে দাঁড়াবে।

ইংল্যান্ড সফর শেষে ড. ইউনূস দেশে ফিরে এলেও রেখে গেছেন বহু প্রশ্ন, বহু ইঙ্গিত। এই সফর শুধু পুরস্কার গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা ছিল না; ছিল এক ধরনের রাজনৈতিক ভাষা, যা উচ্চারিত হয়নিড়তবে অনূদিত হয়েছে ঢাকার অলিগলি, টকশো, সংবাদমাধ্যমে। ও আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন অনিশ্চয়তা ও

আস্থাহীনতা ঘনীভূত, তখন ইউনূসের সফর যেন এক শান্তির অপেক্ষা। এই সফরের ফলোআপেই নির্ধারিত হবে তিনি শুধু একজন নোবেলজয়ীই থাকবেন, না কি হয়ে উঠবেন রাজনৈতিক ইতিহাসের আরেক নতুন অধ্যায়ের নায়ক। অন্যদিকে তারেক রহমান দেশের রাজনীতিতে তৈরি করবেন স্থিরতা,

সংকল্প এবং পরিপক্ক রাজনীতির পথ। লেখক:

কবি, সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব



  
  সর্বশেষ
প্রাইম ব্যাংক`র চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকঃ ভবিষ্যতের বাংলাদেশ
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকঃ ভবিষ্যতের বাংলাদেশ
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস এবং পারস্পরিক সমঝোতার অভাব নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সব সময়ই সংকটময় করে তোলে

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308