ছাত্র আন্দোলনের মামলা
কোন দল না করেও লিজা কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক
আদালত প্রতিবেদকঃ ফাহিমা বেগম লিজা। দুই সন্তানের মা এই ডিভোর্সি মহিলা থাকেন রাজধানীর কদমতলী থানাধীন এলাকায়। কোনো দল না করা সংগ্রামী এই মা আসামী হয়েছেন জুলাই ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায়। মামলাটিতে তাকে কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।মামলার বাদী মোঃ রাব্বি কাজী। মামলায় তার পরিচয় চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ থানার নওগাঁও গ্রামের রিপন কাজীর ছেলে। চলতি বছর ২৯ মে ঢাকার সিএমএম তিনি এ মামলা দায়ের করেন। যার সিআর মামলা নং-৩৪৬/২০২৫ (কতমতলী আমলী)। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৩৩ জন আসামি।এ মামলায় লিজা ১৩ নম্বর আসামি।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্ট্রিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম আকাশ। যিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির বিএনপি ঘরনার একজন আইনজীবী হিসেবে পরিচিত।
লিজার দাবী, তিনি জীবনে কখনো কোন দল করেন নাই। মামলার আইনজীবী মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম আকাশ তার সাবেক স্বামী। সাবেক স্বামী আকাশই একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় শত্রুতাবশত তাকে হয়রানি করার জন্য মামলায় যুব মহিলা লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে উল্লেখ করে আসামী করেছে। তবে আইনজীবী মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম আকাশ বলেছেন, লিজা তার সাবেক স্ত্রী নয় এবং মামলায় তাকে আসামি করার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নন বলে তিনি জানান। মামলার বাদীর রাব্বি কাজী সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কারণ মামলায় বাদী যে মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে সে নম্বরটি আইনজীবী আকাশের। তিনি বাদীর নম্বর সরবরাহ না করায় বাদী রাব্বি কাজী সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
লিজার দলীয় পরিচয় সম্পর্কে জানতে মামলার আরজিতে দেয়া বাদীর মোবাইল নম্বরে গত বুধবার যোগাযোগ করে বক্তব্য জানতে চাইলে ফোন রিসিভকারী তিনি রাব্বি কাজী নন বলে জানান। এরপর তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি রাব্বি কাজীর আইনজীবী আকাশ। বাদীর মোবাইল নম্বরের স্থলে তার মোবাইল নম্বর কেন দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাব্বি কাজীর মেবাইল নম্বর ছিলো না তাই।
এরপর আইনজীবী মনিরুল ইসলাম আকাশের কাছে জানতে চাওয়া হয়, মামলা ১৩ নম্বর আসামি ফাহিমা বেগম লিজা যুব মহিলা লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে আছে কি না। তিনি বলেন, এটা বাদী ভালো বলতে পারবেন। আমি জানি না।
এরপর তাকে প্রশ্ন করা হয় লিজা বলেছেন, আপনি লিজার সাবেক স্বামী ছিলেন। তিনি বলেন, এটা সত্য নয়, তাকে চিনি না। এরপর তাকে প্রশ্ন করা হয়, লিজা অভিযোগ করেছেন, এর আগে তার (লিজার) বিরুদ্ধে আপিন কয়েকটি মামলা করেছেন। সে মামলাগুলোয় কিছু না করতে পেরে হয়রানি করার জন্য যুব মহিলা লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে উল্লেখ করে তাকে আসামি করেছেন। তিনি বলেন, সত্য নয়।
তবে এ সম্পর্কে লিজা বলেন, তার এক মেয়ে এক ছেলে। ওই অবস্থায় প্রথম স্বামী বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় মারা যায়। এরপর তিনি আইনজীবী হওয়ার চেষ্টায় ঢাকা জজ কোর্টে আসা- যাওয়ায় আইনজীবী আকাশের সঙ্গে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে সে তাকে বিষয়ের প্রস্তাব দেয়। রাজি না হওয়ায় তার ছেলের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে বিয়েতে রাজী করায়। সে অনুযায়ী বিয়ে হয়। বিয়ের পর সে ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেয়। টাকার পর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে তার (আকাশ) বিরুদ্ধে তিনি দেনমোহার ও খোরপোষের একটি, যৌতুক আইনে একটি এবং একটি চেক ডিজঅনারের মামলা করেন। আর আইনজীবী আকাশ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে ৬টি মামলা করেছেন। আইনজীবী আকাশের করা মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। তবে তার করা ৩টি মামলার মধে যৌতুক আইনের মামলায় আইনজীবী আকাশের ১ বছরের কারাদণ্ড, চেকের মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ড হয় সেই মামলায় সে পলাতক রয়েছে এবং দেনমোহার ও খোরপোষের মামলায় তিনি ২৭ লাখ টাকার ডিক্রি পেয়েছেন। তার ৩ মামলায় দণ্ডিত হওয়ার কারণেই এই মামলায় তাকে মিথ্যাভাবে আসামি করেছেন। তিনি এই মিথ্যা মামলার জন্য বিচার চান।
রাব্বি কাজীর করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ শের বৈশম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ সরকার ও আওয়ামীপন্থী পুলিশ বাহিনী নস্যাত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। ওই অবস্থায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে অটো রিক্সা চালক বাদী গত বছর ২০ জুলাই সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়ে অটো বিক্সা চালাইয়া আনুমানিক সকাল ১১.০০ হইতে ১২.০০ ঘটিকায় কদমতলীস্থ মেরাজ নগর সড় গ্যায়েরজের সামনে আসলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সন্ত্রাসী আসামীদের ছড়া গুলি লেগে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। এছাড়া তার বাদীর ডান বহু, ডান পাজর, ডান হাত, পিঠ সহ শরীরের স্থানে/জায়গায় অসংখা গুলি লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। বাদী প্রথমে যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানা এলাকায় অবস্থিত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে আসামীদের নির্দেশে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের হুমকি-ধামকিতে ভিকটিমকে চিকিৎসা না করিয়া ফেরৎ দেয়। তার পর বাধ্য হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেন। পরবর্তী সময় বাদীর অবস্থা বেগতিক হইলে সম্মিলিত মেলিটারী হাসাপাতালে গেলে ডাক্তারগণ অপারেশন করে বাদীর ডান পাজর, ডান বাহু, ডান হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছড়া গুল বাহির করেন। সর্ব শেষ চলতি বছর ৪ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেন।