শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * তথ্য গোপন করে উপাচার্যের পদে আব্দুল মঈন;   * কুড়িগ্রামে ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন রাজা   * ফেনীর ঈদ বাজারে ব্র্যান্ডের শো-রুম চাঙ্গা, সাধারণ দোকানে মন্দা;   * কচুয়া এপির মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান   * শ্রীপুরে বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ,পুলিশ- শ্রমিক সংঘর্ষ   * কক্সবাজারের রামুতে সাড়ে ৭ কোটি টাকা মূল্যের ক্রিস্টাল মেথ জব্দ, গ্রেপ্তার-১   * হেঁটে হজ পালন করতে যাওয়া কক্সবাজার জেলার টেকনাফের জামিল এখন ইরানে;   * মহেশখালীর আলোচিত কিলার লোকমান প্রকাশ আজরাইল গ্রেফতার ;   * গাজীপুরে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ শতাধিক পরিবার পেল ঢেউটিন ও নগদ অর্থ   * প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে `স্বাধীনতা পুরস্কার` গ্রহণ করলেন কুড়িগ্রামের কীর্তিমান সন্তান এস এম আব্রাহাম লিংকন  

   প্রচ্ছদ
খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত বাবার অপেক্ষায় থাকবঃ আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে মিম
  Date : 22-09-2021


একজন মানুষের কাছে মানবাধিকার মানে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি ও বাক্ স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রে প্রতিটি মানুষ যেন আইনের সমান সুবিধা পায়। দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পর্যালোচনা ও বিবেচনায় দেখা যায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে গুম একটি আতংক শব্দের নাম। যা বিগত সব সরকারের আমল থেকেই চলে আসছে। প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রন না করায় এর মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই গুম সংস্কৃতি এখনই বন্ধ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও দেশ-বিদেশের সাধারণ মানুষের কাছে বাংলাদেশের খারাপ বার্তা যেতেই থাকবে। এজন্য সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিতভাবে কাজ করা একান্ত জরুরী।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাস খানেক আগে, ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে সাজেদুল ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে একদল লোক আটক করে নিয়ে যায়। এরপর প্রায় আট বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু খোঁজ মেলেনি তাঁর।
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রæপ (ওয়ার্কিং গ্রæপ অন এনফোর্সড অর ইনভেলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স) বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৩৪ ব্যক্তির নাম পাঠিয়ে তাঁদের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছে। সেখানে সাজেদুল ইসলামের নামও রয়েছে।
সাজেদুলের বোন সান্জিদা ইসলাম গত ২৯ আগস্ট সংবাদ-মাধ্যমকে বলেন, ‘ছেলের শোকে আমাদের ৮২ বছরের মা এখন অর্ধমৃত। আমাদের ভাই কোথায় রয়েছে, আমরা তার জবাব চাই। যত দিন উত্তর পাব না, অপেক্ষায় থাকব। আমরা চাই, আমার ভাইয়ের মতো নিখোঁজ সবাই ফিরে আসুক।’
৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। এই দিবস সামনে রেখে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট্স্ ওয়াচের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৮৬ জনের খোঁজ আজও পাওয়া যায়নি।
ক‚টনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে গুম বিষয়ক জাতিসংঘের ওয়াকিং গ্রæপ বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি পেতে বেশ কয়েকবার অনুরোধ জানিয়েছিল।
সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরের অনুমতি পেতে অনুরোধ জানায় ওয়ার্কিং গ্রæপ। কিন্ত বাংলাদেশ সাড়া দেয়নি। চলতি বছরের ফেব্রæয়ারীতে ওয়ার্কিং গ্রæপ তাদের এক বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের হতাশার কথা ব্যক্ত করে। এরপর গত জুনে বাংলাদেশের কাছে নিখোঁজ ৩৪ ব্যক্তির নাম পাঠিয়ে তাঁদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য চেয়েছে জাতিসংঘ। তাতে জানতে চেয়েছে, গুমের অভিযোগগুলো সত্য কি না। যদি সত্যি না হয়, প্রকৃত ঘটনা কী ? সরকার এ বিষয়গুলো প্রতিকারের জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছে? এসব ঘটনায় গুরুত্ব দিয়ে স্বাধীন ও পক্ষপাতাহীন তদন্ত হয়েছে কি না? গুম হওয়া ব্যক্তিদের অবস্থান ও ভাগ্য জানতে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার? গুম হওয়া ব্যক্তিরা ও তাঁদের পরিবারের জন্য কী ধরনের প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ?
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকে জবাব দেওয়া হবে।
জাতিসংঘ যে ৩৪ জনের সম্পর্কে জানতে চেয়েছে তাঁরা হলেন মোহাম্মদ চৌধুরী আলম, সাজেদুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবদুল কাদের ভ‚ঁইয়া, মো. কাউসার হোসেন, মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, আল আমীন, সোহেল রানা, মোহাম্মদ হোসেন চঞ্চল, পারভেজ হোসেন, মো. মাহফুজুর রহমান, জহিরুল ইসলাম, নিজাম উদ্দিন, মীর আহমাদ বিন কাশেম, মাহবুব হাসান সুজন, কাজী ফরহাদ, স¤্রাট মোল্লা, তপন দাশ ওরফে তপু, কে এম শামীম আক্তার, খালেদ হাসান সোহেল, আবদুল্লাহ আজমি, এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন, মো. হাসিনুর রহমান, রাজু ইসলাম, ইসমাইল হোসেন, মো. তারা মিয়া, মোহাম্মদ নূর হোসেন, মোহন মিয়া, ইফতেখার আহমেদ দিনার, মো. ইলিয়াস আলী, আনসার আলী, কেইথিলপাম নবচন্দ্র, সেলিম রেজা পিন্টু ও জাহিদুল করিম।
জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান গত ২৯ আগস্ট গনমাধ্যমে বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ওয়ার্কিং গ্রæপ গুমের বিষয়ে যা জানতে চেয়েছে, সেটার জবাব আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া হবে। বিশেষ করে যেসব ব্যক্তির বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্যের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনি ও নীতিগত অবস্থান তুলে ধরব।’
এদিকে এইচআরডবিøউ ১৬ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনায় স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি সব সময় বলে এসেছি যে এই সমস্যা নতুন নয়। জাতিসংঘ থেকে তালিকা দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে এ দেশে এটি ঘটছে।’ তিনি বলেন, ‘ভয়ের সংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে আতঙ্ক তৈরি হয়। তাতে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সমুন্নত হয় না। তাই গুমকে অতীতে পরিণত করতে হলে, আমাদের নিজেদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু জাতিসংঘকে জবাব দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়।’
এদিকে গত ৩০ আগস্ট গুম প্রতিরোধ দিবসে ‘মায়ের ডাক’ শিরোনামে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সভা চলছিল, তখন মঞ্চের সামনে বাবার ছবি বুকে নিয়ে বসেছিল ছোট্ট সাফা রহমান। বাবা ছাত্রদল নেতা মাহফুজুর রহমান সাত বছর আগে যখন নিখোঁজ হন, তখন সাফা ছিল মায়ের গর্ভে। জন্মের পর বাবাকে ছুঁয়ে দেখেনি, চোখে দেখেনি সে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে যেকোন কর্মসূচিতেই বাবার ছবি বুকে নিয়ে হাজির হয় সাফা। তার একটাই আকুতি, ‘বাবা ফিরবে, বাবাকে ছুঁয়ে দেখব।’
সাফা বলছিল, ‘বাবাকে ছাড়া আমার ভাল্লাগে না। বন্ধুদের সব জন্মদিনে তাদের বাবারা কত উপহার নিয়ে আসে। আমার জন্মদিনে বাবাকে পাই না। বাবাকে যারা নিয়ে গেছ, ফিরিয়ে দাও, প্লিজ। বাবাকে ছাড়া আমার ভাল্লাগে না।’ তাঁর প্রশ্ন, বাবা কি কখনো ফিরবে না? সাফার মতো ১০ বছর বয়সী লামিয়া মিমও সভামঞ্চের সামনে বাবার ছবি নিয়ে বসেছিল। আট বছর আগে মিমের বাবা গাড়িচালক কাওসার হোসেন নিখোঁজ হন। তখন মিমের বয়স ছিল দুই বছর। লামিয়া মিমেরও প্রশ্ন, বাবাকে কেউ কি ফিরিয়ে দেবে না?
তিতুমীর কলেজের ফাইন্যান্স বিভাগের ছাত্র আবদুল কাদের নিখোঁজ হওয়ার পর আট বছর পেরিয়ে গেছে। তাঁর মা আয়েশা আলী এখনো প্রতীক্ষায় আছেন। মাসুমের মায়ের ভাষ্য, এই অপেক্ষা যে কত দুঃসহ যন্ত্রণার, এটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
শুধু সাফা, মিম বা আয়েশা আলী নন, এমন প্রশ্ন গুমের শিকার প্রত্যেক মানুষের স্বজনদের। কারও বুকে সন্তানের ছবি। কারও বুকে বাবার ছবি। আবার কারও বুকে ভাইয়ের ছবি। প্রতিটি ঘটনাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ করেন তাঁরা।
বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যগণ ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে ‘মায়ের ডাক’ শিরোনামে গত ৩০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেন। এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন অন্তত ৩৭ জন নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজন। তাঁদের একটাই আকুতি, ফিরে পেতে চান স্বজনদের।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, গত ১৫ বছরে দেশে ৬১৪ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। তবে সেই সংখ্যা খুবই কম।
মিরপুর এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন নিখোঁজ হন ২০১৯ সালের জুনে। ইসমাইল হোসেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো জানি না, আমার বাবার কী অপরাধ ? অপরাধ করলে, তাঁর বিচার হোক, গুম করে জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারেন না।’
বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি ঃ
সভায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারকে সহমর্মিতা জানাতে এসেছিলেন মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
সেখানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট্রি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সাবেক একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি করে গুমের বিষয়ে তদন্ত করা উচিত।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘এখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে, ভারতে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এখানে আন্তদেশীয় একটি সম্পর্ক কাজ করছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলের জ্ঞাতসার ছাড়া এটা সম্ভব নয়।’
নাগরিক ঐক্যের আহŸয়াক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই সরকার হৃদয়হীন, পাষন্ড। এখন রাজপথে বসে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’
আলোকচিত্রী শহিদুল আলমও গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে যেতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘গুম সরকারি বাহিনী করেছে। সরকার করেছে এটা বিশ^াস করার বহু কারণও রয়েছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য গুম করা হয়।’
‘মায়ের ডাক’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিখোঁজ সাজেদুল ইসলামের বড় বোন মারুফা ইসলাম।
বিচারহীনতার সংস্কৃতিই গুমকে উৎসাহিত করছে Ñ মার্কিন কংগ্রেস
বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, ভিন্নমতাবলম্বী ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের উদ্দেশ্যে গুমের মাধ্যমে একধরনের ভয়ের সংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছে। অবাধ বিচারহীনতার সংস্কৃতি গুমকে উৎসাহিত করছে। গুমের এই চর্চা বাংলাদেশে বন্ধ করতে হলে, সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে গুম পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনের এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। মানবাধিকার রক্ষায় কংগ্রেসের ভেতরে ও বাইরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এই কমিশন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য জেমস পি ম্যাকগভার্ন ও রিপাবলিকান পার্টির কংগ্রেস সদস্য ক্রিস্টোফার স্মিথের উদ্যোগে গত ৩১ আগস্ট এই ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা হয়। তাঁদের দুজনই কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনের কো-চেয়ারের দায়িত্বে আছেন।
আলোচনায় বক্তারা বাংলাদেশে গুম বন্ধে জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের ভূমিকার ওপর জোর দেন। বিশেষ করে গুমের ঘটনাগুলোর সঙ্গে র‌্যাবের নাম আসায় বাহিনীর জ্যেষ্ঠ সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও আলোচনায় উঠে আসে।
এই আলোচনার আগের দিন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম সভার আয়োজক মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য জেমস পি ম্যাকগভার্ন ও ক্রিস্টোফার স্মিথকে চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি গুমের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত লেখেন: নিখোঁজের সব ঘটনাকে গুম হিসেবে বর্ণনা করার মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ও অর্জনকে ক্ষুণ্ন করাটা উদ্বেগের। কারণ ‘ঘটনার শিকারে’ পরিণত হওয়া লোকজনের ফিরে আসার মাধ্যমে প্রমাণিত ‘তথাকথিত গুমের’ অভিযোগ মিথ্যা। কিছু দুষ্কৃতকারী র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ভাঙিয়ে অপহরণে যুক্ত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত দক্ষতা আর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণœ করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
মার্কিন কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনের ভার্চ্যুয়াল সভায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনেন কংগ্রেস সদস্যরা। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইট্স্ ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, গুম নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানটা কী, তা এই আলোচনা শুরুর আগে রাষ্ট্রদূতের চিঠি থেকে স্পষ্ট। অনেকের আশঙ্কা, সরকারের এ নিয়ে জবাবদিহির কোনো ইচ্ছাই নেই। এইচআরডবিøউ-এর প্রতিবেদনে যে ৮৬ জনের কথা বলা হয়েছে, তাঁরা আইনের আওতায় আসেননি। এইচআরডবিøউ-এর এই কর্মকর্তা বলেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে যখন এত অভিযোগ, তখন তাদের বিচারহীনতায় রাখার মধ্য দিয়ে গুমকে উৎসাহিত করা হয়। এতে র‌্যাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় কি না, সেটাই এক প্রশ্ন।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলা নিয়ে সারা বিশ্বে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে এ নিয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করতে গিয়ে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কিশোরের যে পরিণতি হয়েছে, সেটি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে।’
আলোচনায় ভার্চ্যুয়ালী যুক্ত হয়ে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে গুমের একটি মামলারও বিচার হয়নি কেন, তা একটি বড় প্রশ্ন। তার চেয়ে বিস্ময়ের ঘটনা হচ্ছে, যাঁদের নিরাপত্তা বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে যায়, বের হয়ে আসার পর তাঁরা নিশ্চুপ হয়ে যান। ফলে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। কথা বলতে হলে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়। এ রকম এক নিপীড়নকারী সরকারের শাসনে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যখন থাকে না, সংসদে যখন কোনো জবাবদিহির সুযোগ নেই, তখন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ দুরূহ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিস্থিতি উত্তরণের একমাত্র পথ।’
এশিয়ান মানবাধিকার কমিশনের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, র‌্যাবকে বিচারহীনতার আওতায় রেখে কর্মকান্ড চালাতে দিয়ে ভিন্নমতের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। কারণ, গ্রেপ্তার এবং গুমের জন্য যখন কাউকে বীর হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়, তখন পরিস্থিতি বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তাঁর ভাইসহ গুমের শিকার সবার খোঁজ জানতে চান। গুমের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনাটা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
টেক্সাস থেকে ১১ বার নির্বাচিত ডেমোক্রেট কংগ্রেস সদস্য শীলা জেকসন লি প্রশ্ন করেন, এই পরিস্থিতির উত্তরণে নাগরিক সমাজকে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করতে পারে? শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগের বিষয়ে কী করা যেতে পারে?
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন রবার্ট এস কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাঞ্জেলিটা বায়েনেস বলেন, এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র অভিযুক্তদের নিয়োগের সময় তার ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। এমনকি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।
যাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁরা গেলেন কোথায় ? প্রশ্নÑমির্জা ফখরুলের। দেশে কোন গুম হয় না, সরকারের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার বলছে, এখানে গুম হয় না। তাহলে যাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁরা গেলেন কোথায় ?
৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বিএনপি মানবাধিকার সেলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানব বন্ধনে মির্জা ফখরুল এ প্রশ্ন রাখেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের অসহায়ত্বের দায় সরকারের। তাই সরকারকেই এই দায় নিতে হবে। অনেকে আছেন যে, ৯-১০ বছর ধরে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী, ঢাকার কমিশনার চৌধুরী আলমসহ আজ আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী গুম হয়ে আছেন।’ তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর মেয়ে এখন বড় হয়েছে। সে এখনো দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে, কখন তার বাবা ফিরে আসবে- এ অপেক্ষায়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এমন একটা দেশ, যেখানে সন্তানেরা নিখোঁজ হয়ে যাবে, তাদের কেউ খুঁজে পাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী লোকেরা তুলে নিয়ে যাবে। সরকার জবাব দেবে না।গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ তাঁদের বাবার ছবি, কেউ ভাইয়ের ছবি, কেউ সন্তানের ছবি, কেউ স্বামীর ছবি হাতে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।
বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ, গুম হওয়া মো. সোহেলের মেয়ে সাবা, মো. কাউসারের মেয়ে মীম, সেলিম রেজার বোন রেহানা আখতার, সাজেদুল ইসলামের বোন আফরোজা ইসলাম ও খালেদ হোসেনের মেয়ে শাম্মী আখতার বক্তব্য দেন।



  
  সর্বশেষ
তথ্য গোপন করে উপাচার্যের পদে আব্দুল মঈন;
কুড়িগ্রামে ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন রাজা
ফেনীর ঈদ বাজারে ব্র্যান্ডের শো-রুম চাঙ্গা, সাধারণ দোকানে মন্দা;
কচুয়া এপির মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308