বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধ সংঘর্ষ,আহত ৫   * কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার ২০   * রাঙ্গামাটির কল্পনা চাকমা অপহরণ: ২৮ বছর পর মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত ;   * কক্সবাজারের চকোরিয়ার মাতামুহুরি নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ২   * কর্মচারীদের বোরকা পরা ও নেকাব পরা নিষিদ্ধ করল চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ   * পঞ্চগড় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ৩৩ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ   * বাণিজ্যিকভাবে আঠাবিহীন বারোমাসি কাঁঠাল চাষে লাখপতি সবুজ   * চট্টগ্রামের জেলাপ্রশাসক -পুলিশ সুপার ও সাতকানিয়ার ইউএনও-ওসিকে হাইকোর্টের ভর্ৎসনা;   * বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কােন উন্নতি দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র!   * কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে কে কোন প্রতীক পেলেন  

   প্রচ্ছদ
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে স্বজনদের আহাজারি প্রিয়জনদের জন্য আর কত অপেক্ষা
  Date : 14-09-2020

মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন
“হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের ফিরে পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে?” এমন প্রশ্নই আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে স্বজন হারানো মানুষগুলোর। বাবার জন্য কাঁদছে সন্তান, সন্তানের জন্য কাঁদছে মা। স্বামীর জন্য স্ত্রী কাঁদছে, ভাইয়ের জন্য ভাই। কারো আপনজন কয়েক বছর আগে কারো বা হারিয়েছে কয়েক মাস হলো। নিখোঁজ মানুষগুলোর জন্য পরিবারের সদস্যদের শুধু কান্না আর কান্না।


সারা পৃথিবীতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয় ৩০ আগস্ট। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স এই আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয়। তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়েছে।


গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবসে উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন রাজধানীসহ সারাদেশে মানববন্ধন করেছে।


মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে গুমের শিকার হয়েছেন ৫৫৩ জন। তাঁদের কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। কেউ উদ্ধার হয়েছেন সীমান্তের ওপার থেকে। কারও লাশ পাওয়া গেছে পরে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ তুলছে। যাঁরা এখনো নিখোঁজ, তাঁদের পরিবারের বিপদ অন্য রকম। সেটি হলো নিখোঁজ ব্যক্তির নামে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমানো টাকা তুলতে না পারা এবং সম্পদও বুঝে না পাওয়া।


আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গুমের শিকার সকল নিখোঁজ ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে খুঁজে বের করা, প্রতিটি গুমের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন, জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গুমের শিকার ব্যক্তি ও তার পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সাথে গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষর করে গুম প্রতিরোধে সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।


আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, আসক কর্তৃক বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ থেকে ২০২০ (২৫ আগস্ট) পর্যন্ত ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন।

এদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৮৯ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন ফেরত এসেছে। অন্যদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়নি। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, সাংবাদিক বা মানবাধিকার সংগঠনের তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, বিশেষ বাহিনী-র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেয়া হচ্ছে। প্রায়শ সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে।

পরিচিত কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া খুব কম ক্ষেত্রেই আলোচনা বা আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং উদ্ধারের তৎপরতা লক্ষ করা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুম হওয়ার কিছুদিন পর হঠাৎ করেই তাদের কোনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় বা ক্রসফায়ারে তাদের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। যারা ফিরে আসতে পেরেছেন তাদের ক্ষেত্রেও কি ঘটেছে তা জানা যায় না।


বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গুমের ঘটনা বরাবর অস্বীকার করা হলেও দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার ব্যবস্থার আওতাধীন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ কমিটি এ বিষয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছেন। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির ৬৭তম অধিবেশনে নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তিবিরোধী সনদের আওতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা হয়।

এ পর্যালোচনায় অঘোষিত আটক, যাকে কমিটি অন্তর্ধান বা গুম হিসেবে বর্ণনা করেছে, সেই বিষয়টিতে কমিটি বলেছে, এভাবে আটককৃত ব্যক্তিকে যদি হত্যা করা হয় অথবা তিনি ফিরে আসেন- যাই ঘটুক না কেন, তাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে গুম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আসক বিশ্বাস করে, একটি ন্যায় ও মানবাধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গুমের মতো ঘৃণ্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ করতে হবে। আসক গুমের ঘটনা প্রতিরোধে এবং ভুক্তভোগী ও পরিবারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনসমর্থন ও ভোটারবিহীন সরকারের টিকে থাকার অবলম্বনই গুম। জনসমর্থন ছাড়াই টিকে আছে ওরা। ‘আন্তর্জাতিক গুম দিবস’ উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। ফখরুল আরও বলেন, গুম হচ্ছে একদলীয় দুঃশাসনের নমুনা। গুমের আতঙ্ক এখন দেশের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। দুঃশাসন থেকে উৎপন্ন হয় গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো মানবতাবিরোধী হিং¯্রতা।

এ ধারা বয়ে চললে বাংলাদেশ অরাজকতার ঘন অন্ধকারে ডুবে যাবে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, ৩০ আগস্ট ‘আন্তর্জাতিক গুম দিবস’ উপলক্ষে আমি হারিয়ে যাওয়া মানুষদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’ তিনি বলেন, দেশে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ‘গুম’-কে তাদের প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে। বিরোধী দলশূন্য একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে পথের কাঁটা দূর করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ‘গুম’কে ব্যবহার করা হয়েছে। এ নৃশংস গুমের শিকার হয়েছেন এমপি ইলিয়াস আলী, এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু, কমিশনার চৌধুরী আলম, সুমন, জাকিরসহ অসংখ্য মানুষ।

আরেকটি অভিনব গুমের শিকার হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাঁকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পাচার করা হয়েছে অন্য দেশে। এই নতুন ধরনের ঘটনা দেশবাসীকে অজানা আতঙ্কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। রাষ্ট্র সমাজে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টির জন্যই গুমকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে নিষ্ঠুর শাসকগোষ্ঠী। মির্জা ফখরুল সর্বস্তরের মানুষের উদ্দেশে বলেন, আসুন- আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হই। কেবল একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হলেই গুম, অপহরণ, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ দূর হবে, জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে।


আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সব অধিকারী এখন গুম হয়ে গেছে। যারা গুম হয়েছেন তাদের মধ্য থেকে অজ্ঞাতবাস থেকে যারা ফিরে এসেছেন তারা কেউই অপহরণকারীদের ব্যাপারে মুখ খোলেননি। অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।


যারা গুম হয়েছেন তাদের পরিবার-পরিজন অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে জীবন যাপন করছে। অনেকেরই পিতা-মাতা এবং স্ত্রীসহ আপনজন শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।


নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশ এখন দুঃশাসনে ডুবে গেছে। আন্দোলন ছাড়া চোখের জল এই সরকারের গদি নড়াতে পারবে না। প্রতিবছরই এখানে আসলেই স্বজনদের কান্না দেখি। কান্না কোনো সমাধান নয়। আন্দোলনই এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে পারে। পুলিশ লীগ না থাকলে আ’লীগের অস্তিত্বও থাকবে না। দুর্নীতিতে সারাদেশ ছেয়ে গেছে।

করোনাকালীন সময়েও যারা দুর্নীতি করেছে তাদের সেভাবে বিচার করতে পারছে না। কারণ দুর্নীতির ওপর ভর করেই জনগণের ভোট ছাড়া এ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। ৩০ আগস্ট গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে মায়ের ডাক এর উদ্যোগে শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের উপস্থিতিতে তিনি এসব কথা বলেন।


এছাড়া মায়ের ডাক এর সভাপতি হাজেরা খাতুনের অসুস্থতার কারণে তার বড় মেয়ে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, ঢাবি’র সাবেক ভিপি নূর, নুর খান লিটন, অধিকার’র নাসির উদ্দিন এলান, বাসদের আব্দুর রাজ্জাক, ফ্যাসিবাদ ও সা¤্রাজ্যবাদ কমিটির সদস্য ইফতেখার আহমেদ, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আল আমিন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অনির্বান প্রমুখ।



  
  সর্বশেষ
গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধ সংঘর্ষ,আহত ৫
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার ২০
রাঙ্গামাটির কল্পনা চাকমা অপহরণ: ২৮ বছর পর মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত ;
কক্সবাজারের চকোরিয়ার মাতামুহুরি নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ২

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308