সোমবার, মে ১৩, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * শ্রীপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী জলিলের পক্ষে গণসংযোগ-প্রচার   * ট্রেনে কাটা পড়ে গাজীপুরে প্রাণ গেল জনের   * চাঁদপুরে নিষিদ্ধ জালে মাছ ধরায় ১৪ জেলে গ্রেফতার ;   * চট্টগ্রামে ৩০ কোটি টাকা ঋণখেলাপি, সাবেক মন্ত্রীর ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা   * পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেল সীতাকুণ্ডের মেধাবী ছাত্র রাব্বি   * চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরের টয়লেট থেকে ৭০ লাখ টাকা মূল্যের সোনা উদ্ধার;   * চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে ত্রুটি, শারজাহগামী ১৬৪ জন যাত্রী হোটেলে   * চট্টগ্রাম বোর্ডে এবারও শীর্ষে বন্দর নগরীর স্কুলগুলো   * চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় মোবাইল চার্জার এর পরিবর্তে ল্যাপটপ   * চিতলমারীতে বিশ “মা” দিবস পালিত  

   প্রচ্ছদ
মানবাধিকার খবর’র সহযোগিতায় ফেরার অপেক্ষায় তিন সহোদর ভারতে পাচার হওয়া ১৭ নারী-শিশু দেশে ফিরেছে
  Date : 14-09-2019

মঞ্জুর মোর্শেদ স্বপন :
ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে অহরহ ভারতে পাচার হচ্ছে দরিদ্র শ্রেনীর নারী-শিশু। এক শ্রেনীর বিবেক বিবর্জিত মানুষ রুপী পশু এই অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজের সাথে জড়িত। দারিদ্রতা ও অসহায়ত্বের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভালো বেতনের চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে এক শ্রেনীর দালাল ভারতে নিয়ে যায়। ভারতে যাবার পর তাদের কাছ থেকে অর্থকড়ি নিয়ে পলিয়ে যায়। আবার অনেক দালাল এসব নারী-শিশুদেরকে ভারতে নিয়ে বিক্রী করে অন্ধকার জীবনের দিকে ঠেলে দেয় তাদেরকে। অতি কৌশলে দু’চার জন পালিয়ে বাঁচতে পারলেও অধিকাংশদের চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বর্তমানে ভারতে শত শত বাংলাদেশী নারী-শিশু জেলখানা, সেফহোম এবং অজানা স্থানে আটক রয়েছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী ও দু-দেশের সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের সহযোগীতায় আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রায় প্রতিমাসে দেশে ফিরছে পাচার হয়ে যাওয়া নারী-শিশু। আগষ্ট মাসে ১৭ জন নারী-শিশু বাংলাদেশে ফেরত আসবার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে তিন সহোদর শিশু। ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া নারী-শিশুদেরকে উদ্ধারে অন্যদের পাশাপাশি বিশেষ অবদান রেখে চলেছে মানবাধিকার খবরের সম্পাদক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন। মানবাধিকার খবরের সহয়োগীতায় উদ্ধার হওয়া অনেক নারী-শিশু ফিরে পেয়েছে তাদের পরিবার, স্বজন ও এক নতুন জীবন।

প্রায় ৩ বছর পর ফিরল ববিতা রানী :
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগস্ট ২৪ শনিবার ভারতে পাচার হওয়া ববিতা রানী (২৩) নামে এক বাংলাদেশি নারীকে ফেরত পাঠিয়েছেন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা । ওইদিন দুপুর ২ টায় কাগজ পত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারতের পেট্রাপোল বিএসএফ বেনাপোল চেকপোস্ট বিজিবির হাতেতুলে দেয়। পরে যশোরের একটি এনজিও সংস্থা তাকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে নিজেদের জিম্মায় নিয়েছেন। ফেরত আসা বাংলাদেশি নারী নীলফামারী জেলার সদর থানার বাসিন্দা।
পাচারের শিকার ববিতা রানী জানান, ভালো কাজের কথা বলে তাকে সীমান্ত পথে ভারতে নিয়ে যায়। পরে দালালরা তাকে হাওড়া স্টেশনে ফেলে পালিয়ে আসে। ভারতীয় পুলিশ তাকে আটক করে জেলে পাঠায়। জেল থেকে ভারতের কলকাতার হাওড়ায় অবস্থিত লিলুয়া নামে একটি এনজিও সংস্থা তাকে ছাড়িয়ে নিজেদের আশ্রয়ে রাখে। প্রায় ৩ বছর পর সে দেশে ফিরে আসে। এনজিও কর্মকর্তা জানান, দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগের মাধ্যমে তাকে স্বদেশ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ফেরত আনা হয়েছে। যদি পাচারকারীকে শনাক্ত করে মামলা করতে চায় তাকে আইনি সহায়তা করা হবে। বেনাপোল আইসিপি বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার বাকী বিল্লাল জানান, কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে পোর্টথানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ভারতে কারাভোগের পর ছাড়া পেল ৭ বাংলাদেশী নারী-শিশু :
ভাল কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার হওয়া ৭ বাংলাদেশি নারী ও শিশুকে ১৩ আগস্ট বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় পুলিশ।
ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ ও বিএসএফ সদস্যরা তাদেরকে যৌথভাবে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের হাতে তুলে দেন।
রাইটস যশোর নামে একটি এনজিও সংস্থা তাদেরকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে নিজেদের জিম্মায় নিয়েছেন। ফেরত আসা বাংলাদেশিরা হলেন- ঢাকার রুপা চৌধুরী (৩১), রাবেয়া খাতুন (৩২) ও লাবনী আক্তার (১৮), যশোরের নারগিস আক্তার (১৫), নড়াইলের শিলা খাতুন(১৫), বাগেরহাটের সাগর মোল্লা (১২) ও চাঁপাইনবানগঞ্জের শফিকুল ইসলাম (১৩)। পাচারের শিকার রুপা চৌধুরী ও রাবেয়া খাতুন জানান, ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা তাদের ভারতে নিয়ে যায় অর্থের বিনিময়ে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় দালালরা। পরে কলকাতা পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায় সেন্ট্রাল জেলে। সেখানকার আদালত তাদের ২ বছরের সাজা প্রদান করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। সাজার মেয়াদ শেষে সেখান থেকে নিলুয়া হোম নামে একটি এনজিও সংস্থা তাকে ছাড়িয়ে নিজেদের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখে। পরে দু’দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এনজিও সংস্থা মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের তথ্য ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান জানান, দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগের মাধ্যমে তাদেরকে স্বদেশ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় দেশে ফেরত আনা হয়েছে। এরা যদি পাচারকারীদের শনাক্ত করে মামলা করতে চান তাহলে তাদের আইনি সহায়তা দেয়া হবে। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি তদন্ত মাসুম বিল্লাহ জানান, কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে পোর্ট থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

ভারতে পাচার হওয়া ৯ নারী-শিশুকে বেনাপোলে হস্তান্তর :
ভারতে পাচার হওয়া ৭ বাংলাদেশি নারী ও দুই শিশুকে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে হস্তান্তর করেছেন ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। ২০ আগষ্ট মঙ্গলবার বিকাল ৪ টায় তাদের ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন এর আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে হস্তান্তর করেন। ফেরত আসা বাংলাদেশিরা হলেন- ঠাকুরগাও জেলার মিম আক্তার (১৭) মনি আক্তার (১৯) রুবিনা খাতুন (১৮) রিনা বেগম (১৬) মুক্তা আক্তার (১৯) বরিশাল জেলার মুন্নি আক্তার (২২) ইতি খাতুন (১৮) ও দুই জন শিশু। ফেরত আসারা বলেন, ভালো কাজের আসায় তারা বিভিন্ন সীমান্ত পথে দালালদের মাধ্যেমে ভারতে পাচার হয় দুই বছর আগে। এরপর সেদেশের পুলিশের কাছে আটক হয়ে তারা কলকাতার হাওড়া লিলুয়া হোম নামে একটি শেল্টার হোমে কাটায় দুই বছর।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি আবুল বাশার বলেন, এরা দালালদের খপ্পরে পড়ে ভারতে পাচার হয়ে দুই বছর পর দেশে ফেরত এসেছে। তবে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এর চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে তারা দেশে ফেরত আসেন। যশোর রাইটস নামে বেসরকারী এনজিও প্রতিষ্ঠান ফেরত আসাদের গ্রহন করেন। ওই এনজিওর যশোর জেলা কোয়ার্ডিনেটর তৌফিকুজ্জামান বলেন, বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও পোর্ট থানার কাজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে যশোর রাইটস এর অফিসে নেওয়া হবে। এরপর এদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

ফেরার অপেক্ষায় তিন সহোদর শিশু :
ভারতের সেফ হোমে অমানবিক বন্দী জীবন অবসান হতে যাচ্ছে বাংলাদেশী তিন শিশুর। আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে খুব অচিরেই মা-বাবার কোলে ফিরে আসবে তানিয়া , হেনা আর রায়হান। এ বিষয়ে অতি সম্প্রতি ভারত সফর করে এসে মানবাধিকার খবরের সম্পাদক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন জানান এই মূহুর্তে তিন শিশু ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দু’টি হোমে বন্দী রয়েছে। তবে, তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠাবার জন্য অফিসিয়াল প্রক্রিয়া প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যায়, যে কোনো সময়ের মধ্যে তারা দেশে ফিরতে পারবে। পাচারকারিদের খপ্পরে পড়ে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের নান্টু ফরাজী ও তার স্ত্রী লাকী বেগম দুই শিশু কন্যা ও এক শিশু পুত্রকে নিয়ে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় ৬ বছর আগে ভারতে চলে যায়। নান্টু ফরাজিকে পাচারকারি দালালরা একদিন বুদ্ধি দেয় এখানে এত কস্ট না করে চলে যাও ভারতে। দিল্লিতে কাজ মিলবে। আমি দিল্লিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব। নিজেরাতো খেতে পারবে, আর কিছু টাকাও উপার্জন করতে পারবে। প্রলোভনে পড়ে যান নান্টু ফরাজি। ভাবতে থাকে তাহলে প্রস্তাবটাতো একেবারে খারাপ নয়। ভিটে মাটি বেঁচে দালাল ধরে নান্টু ফরাজি পাড়ি জমান দিল্লির পথে। সঙ্গে স্ত্রী এবং তিন শিশু পুত্র-কন্যা। ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত অবৈধভাবে পেরিয়ে দালালের মাধ্যমে পৌঁছে যান তাঁরা দিল্লিতে। হোটেলে কাজ পায় নান্টু ফরাজি। স্ত্রী লাকি বেগমের কপালেও জুটে যায় পরিচারিকার কাজ। এভাবে তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে নান্টু ফরাজি বাঁচার নতুন পথ খুঁজে পান। আশ্রয় নেয় দিল্লির বস্তিতে। সে আজ থেকে ৬ বছর আগের কথা। পরে দিল্লিতে অনেকটা স্থায়ীও হয়ে যান নান্টুর পরিবার। তিন সন্তান এবং নান্টু ফরাজি ও তাঁর স্ত্রী শিখেও ফেলে হিন্দি ভাষা। স্কুলেও ভর্তি হয় তাঁর সন্তানরা।
২০১৮ সালের দিকে বাংলাভাষীদের তাড়াতে দিল্লিতে একসময় উদ্যোগী হয় পুলিশ। নান্টু ফরাজি ভয় পেয়ে যায়। শুনেছে আসামে বাঙাালিদের তাড়ানোর খবর। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন নান্টু ফরাজির পরিবার। তাঁদের হাতেতো ভারতে বসবাসের কোনও প্রমাণ পত্র নেই। অবৈধভাবে তাঁরা বাস করছেন। থাকছেন দিল্লির বস্তিতে ।
অগত্যা নান্টু ফরাজি সিদ্ধান্ত নেন, এবার ফিরে আসবেন দিল্লি থেকে দেশের বাড়িতে। আর নয় বিদেশে। গ্রামের মাটিতেই থাকবেন। ছেলে মেয়েরাতো বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে বাস করতে পারবে। যেভাবেই হোক নিজের দেশে আহার জোটাতে পারবেন তিনি।
সেই লক্ষ্য নিয়ে দেশে ফিরে আসার উদ্যোগ নেয় নান্টু ফরাজি। দালালও যোগাড় হয়ে যায়। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের নভেম্বর মাস। দালালের মাধ্যমে ওরা দিল্লি থেকে ট্রেন যোগে পৌছে যায় কলকাতায়। তারপর উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার সীমান্তপথে বাংলাদেশে বেআইনিভাবে ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। যথারীতি তাঁরা দালালের মাধ্যমে গোপালনগর যাওয়ার জন্য বাসে ওঠে। চাকদার সড়কপথে পুলিশ গোপনসূত্রে খবর পেয়ে আটকায় তাঁদের বাস। ওই বাসে আরও ছিল বেশ ক’জন বাংলাদেশী। তারাও পাড়ি দেবে বাংলাদেশে। নান্টু ফরাজির সঙ্গে ছিল তাঁর এক শ্যালকও। সেও দিল্লি থেকে ফিরে দেশে যাচ্ছে নান্টু ফরাজির সঙ্গে।
কিন্তু দুভার্গ্য নান্টু ফরাজির। দেশে ফেরার পথে গ্রেপ্তার হয় নান্টু ফরাজি ও তাঁর পরিবার। বাস থেকে নামিয়ে আনা হয় তাঁদের গোপালনগর থানায়। দায়ের হয় মামলা । আদালতে তোলা হয় নান্টু ফরাজির পরিবারকে। আদালত নান্টু ফরাজি ও তাঁর স্ত্রী লাকি বেগম আর শ্যালককে পাঠিয়ে দেয় কারাগারে। তাঁদের ঠাঁই হয় দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে। আর শিশু বিধায় নান্টু ফরাজির তিন সন্তানকে পাঠানো হয় পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হোমে। কারণ ওদের বিচার হয় জুভেনাইল কোর্টে। সেই ভাবে সেদিন নান্টু ফরাজিও তার স্ত্রীর হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের তিন সন্তান।
বিচারে নান্টু ফরাজি ও তাঁর স্ত্রীর চার মাসের কারাদন্ড হয়। কারাদন্ড ভোগকরার পর তারা চলতি বছরের ১৯ মার্চ কারাগার থেকে মুক্তি পান। তারপর তাঁদের পুশব্যাক করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশে। কিন্তু যাওয়ার আগে নান্টু ফরাজি খোঁজ নিতে পারেননি তাঁর সন্তানরা কোন সরকারি হোমে আছেন। বুকভরা একরাশ ব্যথা আর কস্ট নিয়ে নান্টু ফরাজি ফিরে যান বাংলাদেশের গ্রামের বাড়িতে।
সেখানে গিয়ে কথা বলেন, পিরোজপুর ইন্দুরকান্দী প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সঙ্গে। এলাকাবাসীও জেনে যায় নান্টু ফরাজির দুর্বিষহ দিনগুলির কথা। সে শুধু বলতে থাকে, আমি জানিনা আমার তিন সন্তান এখন কোথায় রয়েছে। কোন হোমে রয়েছে তাঁরা। আপনারা তাঁকে খুঁজে দেশে এনে দিন। আমরা জানিনা কীভাবে, কোথায় ওরা বেঁচে আছে। নান্টু ফরাজির সেই ৬ বছর আগের বড় কন্যা তানিয়া আখতারের বয়স এখন ১৩, ছোট মেয়ে হেনা আখতারের বয়স ১১ আর পুত্র রায়হানের বয়স এখন ৭ বছর।
অন্যদিকে ভারতের আশ্রয় কেন্দ্রে বন্দী তিন সন্তানকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবার জন্য নান্টু ফরাজি দম্পতি অনুরোধ জানান মানবাধিকার খবর পত্রিকার সম্পাদক মোঃ রিয়াজ উদ্দিনকে। ফলে, রিয়াজ উদ্দিন ঢাকা থেকে তাদের গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে পিতা-মাতার সাথে মুখোমুখি কথা বলেন।
এরপর পিতা-মাতার অনুরোধ ওই তিন শিশুকে উদ্ধারে কলকাতায় ছুটে যান মানবাধিকার খবর পত্রিকার সম্পাদক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন । তিনি কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর করেন ওই তিন শিশুর। কোন সরকারি হোমে রয়েছে তারা। অবশেষে কয়েকদিনের প্রচেষ্টায়এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে যোগাযোগ করে খোঁজ পান ওই তিন শিশু সন্তানের । নান্টু ফরাজির শিশুপুত্র ঠাঁই পেয়েছে কলকাতা শহরের উপকন্ঠ বারাসাতের ’কিশলয়’ হোমে। আর দুই কন্যা রয়েছে কলকাতার সল্টলেকের ’সুকন্যা’ হোমে। রিয়াজ উদ্দিন এই দুটি হোমে গিয়ে এই তিন শিশুকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কথাও বলেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। হোমের কর্মকর্তারা তাঁকে বলেছেন, কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন থেকে এঁদের ফেরত নেওয়ার চিঠি পেলে তারা বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবেন এই তিন শিশুকে। রিয়াজ উদ্দিন এই নিয়ে কথা বলেছেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের হেড অফ চ্যান্সারী বিএম জামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনিও কথা দিয়েছেন, এই তিন শিশুকে অবিলম্বে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়ার।
এ বিষয়ে পিতা নান্টু ফরাজী মানাধিকার খবরকে জানান, আমি স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে দিল্লি থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে বনগাঁও জেলার গোপার নগর থানা পুলিশ আমাদেরকে আটক করে আদালতে পাঠায়। আদালত আমাদেরকে দমদম জেলে এবং তিন সন্তানকে পৃথক জেলে পাঠায়।
জেল শেষ হলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মুক্তি দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের তিন সন্তান তানিয়া আকতার (১৩), হেনা আকতার (১১) ও রাহান উদ্দিন ফরাজী (৯) কে অন্যত্র রাখায় আমরা বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আমাকে ও আমার স্ত্রীকে জেল থেকে বের করে সরাসরি দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ফলে সন্তানদের কোনো খোঁজ-খবর নেয়া সম্ভব হয়নি। যার কারণে আমরা খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। তবে, মানবাধিকার খবরের সম্পাদক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ভারতে গিয়ে দুই দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহায়তায় আমাদের তিন সন্তানের খোঁজ বের করার পর থেকে আমরা বেশ স্বস্তিতে আছি। সন্তানদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলিয়ে দেয়ায় আমরা আনন্দিত। সন্তানদেরকে কখন কাছে পাবো সেই সময়ের অপেক্ষায় উৎগ্রিব আমরা।
উদ্ধার কাজে সহায়তা দিয়ে আসছেন যারা :
মানবাধিকার খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক রোটা. মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, পাচার হয়ে যাওয়া নারী-শিশু উদ্ধার কাজে দু’দেশে যাদের সহযোগীতা-সহায়তা পেয়েছেন তারা হচ্ছেন, কলকাতাস্থ উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, কাউন্সিলর ও হেড অব চ্যাঞ্চেলর মিয়া মো. মাইনুল কবির, ফাষ্ট সেক্রেটারী (প্রেস) মো. মোফাক্কারুল ইকবাল, কাউন্সিলর বি এম জামাল হোসেনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান ও কাজী রিয়াজুল হক, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত, পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান নপরাজিৎ মূখার্জি, রাজ্য সভার সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, লোকসভার সংসদ সদস্য ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান শ্রীমতি প্রতিমা ম-ল, আলিপুর ভবানী ভবনে দক্ষিন ২৪ পরগনায় জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্রীমতি শান্তি দাস, জেলা ইন্টেলিজেন্ট ব্রাঞ্চের নিবেদিতা তালুকদার এডিশন সেক্রেটারি ফরেনার্স গভ পশ্চিমবঙ্গ হোম ডিপার্টমেন্ট গৌরাঙ্গ সরকার। জেলা শিশুরক্ষা সমিতির কর্মকর্তা অনিন্দ ঘোষ, কলকাতার সল্টলেকে বিকাশ ভবনে অবস্থিত শিশু রক্ষা প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুচরিতা, প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি অমর সাহা, মানবাধিকার খবর পত্রিকার কলকাতা প্রতিনিধি দিশা বিশ্বাস, ভারত প্রতিনিধি মনোয়ার ইমাম, বারাসাত প্রতিনিধি প্রদীপ রায় চৌধুরী, মানবাধিকার খবরের কলকাতাস্থ আইন উপদষ্টা রাজীব মুখার্জি, নিলোৎপল মৈত্র প্রমুখ।



  
  সর্বশেষ
শ্রীপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী জলিলের পক্ষে গণসংযোগ-প্রচার
ট্রেনে কাটা পড়ে গাজীপুরে প্রাণ গেল জনের
চাঁদপুরে নিষিদ্ধ জালে মাছ ধরায় ১৪ জেলে গ্রেফতার ;
চট্টগ্রামে ৩০ কোটি টাকা ঋণখেলাপি, সাবেক মন্ত্রীর ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308