সোমবার, মে ১৩, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে ত্রুটি, শারজাহগামী ১৬৪ জন যাত্রী হোটেলে   * চট্টগ্রাম বোর্ডে এবারও শীর্ষে বন্দর নগরীর স্কুলগুলো   * চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় মোবাইল চার্জার এর পরিবর্তে ল্যাপটপ   * চিতলমারীতে বিশ “মা” দিবস পালিত   * কচুয়ায় বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত   * ২দিন ব্যাপী কক্সবাজারের ডিসি সাহেবের বলীখেলা সম্পন্ন: চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ   * কুড়িগ্রামে গরীবের আলু, কাঁচা মরিচেও চোখ মধ্যস্বত্তভোগীদের   * রামগঞ্জ শিশু পার্ক সামনে ফিটফাট ভিতরে ফাঁকা মাঠ   * কচুয়ার রাধামাধব মন্দিরে শ্রীশ্রী অক্ষয় তৃতীয়া উদযাপন   * বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য এক হার না মানা মা  

   প্রচ্ছদ
দুখে যদি সুখ থাকে কিবা এমন ক্ষতি!
  Date : 20-05-2018

জয়া ফারহানা
মাথাপিছু আয়, সামাজিক নিরাপত্তা, সামাজিক স্বাধীনতা, জনগণের সুস্থ জীবনের প্রত্যাশা এবং ঘুষ ও দুর্নীতির হার এই পাঁচটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে ১৫৫টি দেশে সমীক্ষা চালিয়ে সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৫৫টি দেশের মধ্যে সুখের শীর্ষে আছে ফিনল্যান্ড এবং সবচেয়ে নিচে বুরুন্ডি। কী কারণে ফিনল্যান্ড সবচেয়ে সুখী এবং বুরুন্ডি সবচেয়ে অসুখী, তার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি সমীক্ষা প্রতিবেদনটিতে। তবে এই সমীক্ষা আবার আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে সেই সুখী কাঠুরিয়ার কথা। যুগ যুগ ধরে সুখী মানুষ হিসেবে যিনি এই প্রাচ্য অঞ্চলে সুখী হিসেবে বিখ্যাত। এক ছিল কাঠুরিয়া। বনে বনে কাঠ  কেটে বেড়াত। সারাদিন অক্লান্ত-পরিশ্রমে কাঠ কাটত। দিন শেষে সেই কাঠ হাটে বিক্রি করে যা পাওয়া যেত, তা দিয়ে কিনত চাল, ডাল,  তেল, নুন। সন্ধ্যায় রান্নাবান্না। রাতে গান গাইতে গাইতে ঘুমোতে যাওয়া। পরিশ্রান্ত মানুষের প্রশান্ত ঘুম। এ এক সরল সময়ের সুখী মানুষের গল্প। সুখের সূচক নির্ধারণের মাপকাঠি ভিন্ন ছিল তখন। সুখী মানুষের গায়ে জামা থাকবে না- এ ছিল সুখের অবধারিত শর্ত। বৃক্ষের প্রতি অনুরাগ থেকে নয়। কাঠ কেটে বন ধ্বংসের প্রতি বিরাগ থেকেও নয়। নানামাত্রার জটিল কারণে খালি গায়ের কাঠুরিয়া এখন আর সুখী মানুষের প্রতীক নয়। সুখ নির্ধারণে যেসব সূচক অনেক দিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে, তা নিয়ে একটু ভাবনা-চিন্তা করা দরকার বলে মনে হয়। তা সে জাতিসংঘের নির্ধারণ করে দেওয়া সূচক হোক আর আঞ্চলিক সংঘেরই হোক। এ কারণে বলছি যে, এসব সূচক বেশিরভাগ সময় সুখ নির্ধারণের সঠিক চেহারা তুলে তো আনেই না, কখনও কখনও সাংঘর্ষিকও হয়ে ওঠে। সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে জাতিসংঘের কাছ থেকে। আবার সেই জাতিসংঘেরই করা সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, সুখের অবস্থানে বাংলাদেশ পাঁচ ধাপ পিছিয়েছে। কুড়িগ্রাম বাংলাদেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপ্রবণ অঞ্চল। কিন্তু এই দরিদ্র দিয়ে কি কুড়িগ্রাম অঞ্চলের সুখ নির্ধারণ করা যাবে? দারিদ্র্য-দুর্দশা দিয়ে সুখের পরিমাপ করা কঠিন। পৃথিবীর গন্ডি পেরিয়ে নাসা যখন স্পেস  গ্রেড নেটওয়ার্কের হার্ডওয়্যার তৈরির মাধ্যমে চাঁদে ফোরজি নেটওয়ার্ক চালুর বন্দোবস্ত করছে এবং ফাইভজির পরিসেবা যখন পরীক্ষাধীন পর্যায়ে, সেই হাইটেক প্রযুক্তির সময়ে, চারপাশে নানা অ্যাপসের মাধ্যমে সুখী হওয়ার লাখো কোটি উপায়ের যুগে কে কাঠুরিয়া হয়ে সুখী হতে চাইবে! কেউ কেউ বলবেন, গায়ে জামা না থাকা মোটেও সুখের কোনো শর্ত হতে পারে না। গায়ে জামা না থাকা মানে পেটে ভাতও না থাকা। সবকিছুকে এত সরাসরি অনুবাদ করলে খাঁটি সুখ খুঁজে পাবেন না। সুখী মানুষের গায়ে জামা না থাকার শর্তটি মূলত প্রতীকী। এই অর্থে প্রতীকী যে, সুখী হতে চাইলে অবশ্যই অল্পে সন্তুষ্ট হতে হবে। এখন এই শর্তের সঙ্গে আপনি একমত না হতে পারেন। তবে অফুরান বিত্ত, অফুরান বৈভবও  যে সুখের শর্ত নয়, তার প্রমাণও কিন্তু বারবার মিলেছে। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীলের সীমা ছাড়িয়ে অর্থ-বিত্তসম্পন্ন দেশের দিকে তাকাই। প্রচলিত ধারণায় যারা উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত। সুখী হওয়ার বস্তুগত কোনো উপাদান  নেই তাদের? এমন যে রোগশোক, আয়ু যা অনেকটা অনায়াত্ত বলে ধরে নেওয়া হতো, তাকেও তারা কব্জা করে ফেলছে প্রযুক্তি দিয়ে। উদাহরণ দিই। ফেসটাইম ভিডিওতে এক নারী  বোনের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। আইফোনের ভিডিও ফিচার ৯১১ নম্বরে ফোন করে অন্য প্রান্তে বসা আরেক বোন স্ক্যান করে জেনে নেন স্ট্রোকে আক্রান্ত বোনের মস্তিস্কে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। অ্যাপসের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত হওয়ায় বেঁচে গেছেন বোন। শুধু কি তাই? সম্প্রতি গবেষকরা এমন মোবাইল অ্যাপ বানিয়েছেন, যা অনিয়মিত রক্ত স্পন্দন, রক্ত জমাট বাঁধা হার্ট অ্যাটাক এবং হৃতপিন্ড সম্পর্কীয় যে কোনো আর্টিয়াল ফিবরিলেশনের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব। স্মার্টফোনের মাধ্যমেই সম্ভব। চুলের রঙ বা আঘাতের চিহ্ন  দেখে ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে শনাক্ত করা যাবে ত্বকের ক্যান্সার আছে কিনা। নর্থ ওয়েস্টার্নের বিজ্ঞানীরা বানিয়েছেন তারবিহীন এক সেন্সর।  কেউ নির্বাক হয়ে গেলে এই ডিভাইসটি নির্ধারণ করে দেবে স্নায়ুবিক আঘাতের পরিমাণ। হৃতপিন্ডের খবর জানার জন্য কষ্ট করে চিকিৎসকের কাছেও যাওয়ার দরকার নেই। এবার আসুন দেখা যাক প্রযুক্তির নতুন নতুন ডিভাইস এবং যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে একুশ শতকের মানুষের এত গরিমা ও এত সুখ, তা কীভাবে অসুখেরও কারণ হয়ে উঠছে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ওয়েবসাইটে লেখা আছে, মোবাইল ফোনের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির লেডের কারণে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় বিকিরণ কোষের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়। অনলাইন ও মোবাইল ফোনে  বেশিক্ষণ থাকলে শরীরে রেডিয়েশন ঢুকে ক্ষতিকর মাত্রায়। মোবাইল ফোনে যত বেশি কথা বলা হবে, অনলাইনে যত বেশি সময় ব্যয় হবে, শরীরে রেডিয়েশনের মাত্রা ততই বাড়তে থাকবে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময়  মোবাইলে বসানো অ্যান্টেনা থেকে সরাসরি মাথার মধ্যে বিকিরণ ছড়ায়। এতে মোবাইল  ফোনের কাছাকাছি শরীরের যেসব কোষ থাকে, তাতেই সবচেয়ে বেশি বিকিরণ ছড়ায়। আইফোনের বিকিরণ ছড়ানোর রেকর্ড সবচেয়ে  বেশি। একজন মানুষ তার শরীরে যতটুকু বিকিরণ গ্রহণ করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, এর মাত্রা তার চেয়েও অনেক  বেশি। স্বয়ং অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিমোথি  ডোনাল্ড কুক সম্প্রতি বলেছেন, ডিজিটাল যন্ত্রপাতি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সংস্পর্শে আসায় শিশুদের ক্ষতির কথা। এক লাখ বিশ হাজার শিশুর ওপর চালানো ইউনিসেফের জরিপে দেখা যাচ্ছে, যেসব শিশু সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় দিয়েছে, তারা সামাজিক  যোগাযোগে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আইপ্যাডের এবং ডিজিটাল ট্যাবের মতো যন্ত্রের প্রতি আসক্তির কারণে শিশুরা পেন্সিল ধরতে ভুলে গেছে। পানিতে ভাসছে প্লøাস্টিকের কণা। যে কোনো সহিংসতা এমনকি যুদ্ধের কারণে যে পরিমাণ মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে  বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় পানিবাহিত  রোগের কারণে। বিশ্বের দুইশ` কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। এই যখন অবস্থা তখন ২৭ ফেব্রুয়ারির সমকালে দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের প্রধানতম খরস্রোতা নদ পরিণত হয়েছে মরা খালে। শীতকালে এখন সেই নদ   হেঁটেই পার হওয়া যায়। বিশ্বজুড়ে বিশুদ্ধ পানি হাওয়া ও মাটির সংকট। প্রকৃতিকে দূষিত করে মানুষ কী করে সুখী হতে চায়? নানা অ্যাপস আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সরোবরে ডুবে আছে আপনার আদরের শিশু নিয়ন্ত্রিত শীতাতপ পরিবেশে। কিন্তু তার চারপাশে খোলা হাওয়া  নেই। খোলা মাঠ নেই। অন্যদিকে পথের পাঁচালির অপুর কথাই ভাবুন না। কুমড়োর শুকনো খোলা দিয়ে বানানো নৌকা আর বাতাবি লেবুর খোসা দিয়ে বানানো ফুটবল দিয়ে খোলা মাঠে খেলছে সে। তালপাতার চাটাইয়ে বসে বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে   খোলা আকাশ দেখতে পাচ্ছে তার নবীন চোখ দিয়ে। কার মুখ খাঁটি, অমলিন? দরিদ্র অপুর মুখই। দারিদ্র্যের মাঝে, দুঃখের মাঝেও যদি খাঁটি সুখ থাকে, তবে সেই সুখ খুঁজে নিতে ক্ষতি কী।



  
  সর্বশেষ
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে ত্রুটি, শারজাহগামী ১৬৪ জন যাত্রী হোটেলে
চট্টগ্রাম বোর্ডে এবারও শীর্ষে বন্দর নগরীর স্কুলগুলো
চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় মোবাইল চার্জার এর পরিবর্তে ল্যাপটপ
চিতলমারীতে বিশ “মা” দিবস পালিত

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308