|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
॥ মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ও দিশা বিশ্বাস ॥ আপন আর আশিক দুজনই বাংলাদেশী কিশোর। দুস্কৃতীকারিরা এই দুই কিশোরকে অপহরণ করে গোপনে নিয়ে আসে কলকাতায়। উদ্দেশ্য, কলকাতা থেকে এই দুই কিশোরকে অন্যরাজ্যে পাচার করা। আশিক বয়স ১৩ বছর আর আপনের বয়স ১২ বছর। আশিকের বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল জেলার শেখহাটি মোজেরপাড়া গ্রামে। বাবার নাম রবিউল মোল্লা। স্থানীয় বিমহিষকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আশিক। বাবা কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। তারা দু’ভাই দু’বোন তাদের মধ্যে আশিক তৃতীয় । আশিক মাস দুয়েক আগে গ্রামের বাড়ীর আফড়ার মেলায় গিয়েছিল। সেখান থেকে ৫ দুস্কৃতকারী মুখে গামছা বেঁধে জোর করে নিয়ে আসে বেনাপোল সীমান্তে। তারপর আশিকের মুখে লিকো প্লাস্টার টেপ লাগিয়ে তাকে একটি পণ্যবাহী ট্রাকের নিচে চেসিসের সঙ্গে বেঁধে পার করে বেনাপোল সীমান্ত। সেখান থেকে তাঁকে বনগাঁ রেলস্টেশনে এনে ট্রেনে করে নিয়ে আসা হয় রানাঘাট রেল স্টেশনে। এখানে এসে দেখে আরও ৫জন দুস্কৃতকারী অপেক্ষা করছে। সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যায় আশিক। তারপর একসময় ট্রেনে করে শিয়ালদহ স্টেশনে নামে। শিয়ালদহ নামার পর তার ক্ষিধে পেলে এক চায়ের দোকানদার তাকে খাওয়াবে এই শর্তে রেখে দেয় বাসনকোসন ধোয়ার কাজে। ইতিমধ্যে শিয়ালদহের রেলওয়ের সংস্থা রেলওয়ে চাইল্ড লাইন খবর পেয়ে উদ্ধার করে আশিক কে। তারপর তুলে দেয় রেল পুলিশের হাতে। রেল পুলিশ আশিককে পাঠিয়ে দেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সরকারি হোম হাসুস বা হরিপুর আমরা সবাই উন্নয়ন সমিতির কাছে। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে আশিক বারুইপুরের লক্ষীকান্তপুরের হাসুস’এ রয়েছে। আপনের বয়স ১২ বছর। বাড়ি যশোর শার্শা থানার নাভারনের দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামে। পিতার নাম রাজু হোসেন। বাবার-মার বিচ্ছেদের পর মা অন্যত্র চলে গেছে। আপন মানুষ হয় নানীর কাছে। নানীর নাম শৈরন বিবি। নাভারণ বাজারে আছে নানীর ফলের দোকান। আপন স্থানীয় মিন্টুর ভাই ভাই চটপটির দোকানে কাজ করতো। মাসখানেক আগে আপন বেনাপোলের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে আসে। সেখান থেকে দুস্কৃতকারীরা আপনকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তাকে সীমান্ত পাচার করে নিয়ে আসে বনগাঁ রেলস্টেশনে। বনগাঁ স্টেশনে দালালরা তার টিকিট কাটতে গেলে সেই সুযোগে সে পালিয়ে যায় স্টেশন থেকে। তারপর ট্রেনে করে চলে আসে শিয়ালদহ স্টেশনে। সেখানে এসে রেল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আপন। তারপর রেলওয়ের চাইল্ড লাইন আপনকে উদ্ধার করে পাঠিয়ে দেয় বারুইপুরের হাসুস হোমে। গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে আপনের ঠাঁই হয় এই হোমে। আশিক ও আপন দুজন এখন রয়েছে হাসুস হোমে। গত ২৫ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে দক্ষিণে প্রায় ১০০ কি.মি. দূরে লক্ষীকান্তপুর বিজয়াঙ্গি বাজারে ওই হোমে ঢাকা থেকে প্রকাশিত মানবাধিকার খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক রোটারিয়ান মো: রিয়াজ উদ্দিন পরিদর্শনে গেলে, সেখানে হোমের কর্মকর্তারা তাঁকে জানান ওই দুই বাংলাদেশী কিশোরের কথা। ওই কিশোরদ্বয় বাংলাদেশে ফেরার জন্য সম্পাদকের কাছে কান্না-কাটি করে। চাইছে অবিলম্বে তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। বলেছে, তারা ফিরে যেতে চায় তাদের বাবা মায়ের কাছে। সম্পাদক গত ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এসে ঐ দুই কিশোরের বাড়ীর ঠিকানায় এবং সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করে। সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারী তাদের অবিভাবকদের খুজে পাওয়া যায়। আপনের নানী শৈরন ও মামা ফলের দোকানদার মিজানুর রহমান জানতে পেরে সম্পাদকের কাছে দাবী জানান- যে করে হোক তাদের আপনকে যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের কাছে দেয়া হয়। আপনের মায়ের নাম নাসিমা । অনেক আগে পিতার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ হওয়ায় মা অন্যত্র বিবাহ করে সংসার করছেন আর পিতা কোন খোজ-খবর নেয় না। নানীর কাছেই দুঃখে ও কষ্টে বড় হচ্ছিল আপন। অপর দিকে আশিকের বাবা হলেন যাত্রীবাহী মটর সাইকেল চালক। দরিদ্রতার মধ্যে তাদের দিন চলে। আশিকের বাব-মা ও দাবী জানান তাদের বুকের ধন কে যে কোন ভাবে হোক দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের কাছে দেওয়ার জন্য। আশিকের মায়ের নাম নাজমা বেগম। আশিক ও আপন বেঁচে আছে প্রায় ২মাস পর জানতে পেরে দুই পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে। এতদিন তারা বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করে, না পেয়ে তাদের জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। ভারতে সেফ হোমে আশিক ও আপন এবং হোমের কর্মকর্তারা সম্পাদককে পেয়েও আনন্দিত হন। সেফ হোমের কর্মকর্তারা তাদের সঠিক ঠিকানা না থাকায় অনেকটা বিপদে ছিলেন। সম্পাদকের কারনে বাচ্চা দু’টিকে এবার দেশে ফিরিয়ে নেওয়ায় সার্বিক সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন। বাচ্চা দু’টির বর্তমানে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে। কাগজপত্র হাতে পেলেই অতিদ্রুত মানবাধিকার খবরের উদ্যোগ তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এ ব্যাপারে মানবাধিকার খবর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে মানবাধিকার খবর মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা করছে। অপরদিকে, বাচ্চা দু’টিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাবেক শ্রম মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মেম্বার তথ্য-প্রযুক্তি সংসদীয় কমিটি, মেম্বার নিরাপত্তা বিশ্লেøষক সংসদীয় কমিটি এবং রাজ্যসভার এমপি শ্রী প্রফেসর প্রদীপ ভট্টাচার্য, পশ্চিমবঙ্গ চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান ও রাজ্য সভার এমপি প্রতিমা মন্ডল, কলকাতায় বাংলাদেশস্থ উপ-দূতাবাসের কাউন্সিলর মোঃ জামাল হোসেন, হাসুস সেফ হোমের প্রিন্সিপল বাবু সোনা পাইকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে মানবাধিকার খবরকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছেন। লক্ষীকান্তপুর হাসুস সেফ হোম পরিদর্শনের সময় মানাবাধিকার খবরের সম্পাদকের সাথে কলকাতা মানবাধিকার খবরের এক্সিকিউটিভ রিয়া সেন ছিলেন। রোটারি ক্লাব অব গুলশান লেকসিটি নারী ও শিশু উদ্ধার মানবাধিকার খবরকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এই মহতি কাজে মানবাধিকার খবরের পক্ষ থেকে বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে।
|
|
|
|
|