॥ রুবিনা শওকত উল্লাহ ॥
এই উপমহাদেশের একমাত্র খেতাব প্রাপ্ত প্রথম নারী যিনি নবাব উপাধি অর্জন করেছিলেন নিজ যোগ্যতার বলে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। তিনি দীর্ঘ ৪৫ বৎসর ন্যায়পরায়ন ভাবে জমিদারী শাসন করেছিলেন। নবাব ফয়জুন্নেছা বাংলার প্রথম মুসলিম মহিলা কবি যার কাব্যগ্রন্থ ‘রূপজালাল’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭৬ সালে। তার জীবনের উদ্দেশ্য ছিল মানবকল্যাণ। তিনি সূদীর্ঘ কাল সমাজের কল্যাণে দুঃস্থ মানবতার জন্য সমাজের উন্নয়নমূলক কল্যাণমুখী নানান কাজ করে গেছেন। স্বল্প পরিসরে তার বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়।
ফয়জুন্নেছার অনেক কর্মকান্ড ইতিহাসের কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে তারপরও তার কিছু কর্মকান্ড এখনো উদ্বজীবিত। জাতির উন্নয়নের জন্য তার শিক্ষা বিস্তার প্রশংসনীয়। স্বাস্থ্য সেবায় অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি সমাজের নারী উন্নয়নের সর্বদা সচেতন ছিলেন। আমাদের দেশের নারী উন্নয়নের প্রথম অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছা। অথচ আমরা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতকে নারী মুক্তির অগ্রদূত বলি এ কথা সঠিক নয় কারণ বেগম রোকেয়ার জন্মেরও আগে ফয়জুন্নেছা নারীদের উন্নয়নের জন্য বহু পদক্ষেপ নিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন। আর রোকেয়ার জন্মের ৭ বৎসর পূর্বেই ১৮৭৩ খ্রীঃ নবাব ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। বেগম রোকেয়ার প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ফয়জুন্নেছার প্রতিষ্ঠিত বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৪৬ বৎসর পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে। অথচ আমরা ভুল ইতিহাস পড়ে আসছি। ফয়জুন্নেছাকে নারী মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছিনা। যে নারী একটা অন্ধকার যুগে সাহসিকতার সঙ্গে সমাজের জন্য নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন, অথচ আজ বর্তমান প্রজন্ম ফয়জুন্নেছা সম্পর্কে অবগত নন। ইতিহাসের পাতায় তাকে স্থান দিতে পারিনি। যেটা কিনা অনেক দুঃখকর।
নবাব ফয়জুন্নেছার জন্ম ১৮৩৪ খ্রিঃ কুমিল্লা জেলার অর্ন্তগত লাকসামের পশ্চিমগাঁওস্থ পৈত্রিক বাড়িতে, তার পিতা জমিদার আহমদ আলী মাতা নন্দিনী আরফান্নেছা, তার দুই ভাই ইয়াকুব আলী চৌধুরী ও ইউসুফ আলী চৌধুরী, ছোট বোন লতিফুন্নেছা চৌধুরানী, তিনি তৃতীয় সন্তান ছিলেন। ফয়জুন্নেছার পড়াশোনার প্রতি অতি আগ্রহ দেখে তার বাবা উপযুক্ত গৃহ শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। তখনকার সময় নারীদের জন্য পুরুষ শিক্ষক দ্বারা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন ছিলনা কিন্তু ফয়জুন্নেছা সামাজিক প্রতিকূলতার সুকঠোর নিয়মের বাইরে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন উস্তাদ তাজউদ্দিন এর কাছে।
ফয়জুন্নেছা অল্প বয়সেই পিতৃহারা হন। বাল্যকাল শেষ না হতেই পিতৃ বিয়োগ তার জীবনকে বিপর্যয় করল। জমিদারী চালাবার মত কোন ভাই বোন সক্ষমতা লাভ করেনি সবাই নাবালক। ফয়জুন্নেছার বয়স যখন কম গাজী চৌধুরী ফয়জুন্নেছার রূপে পাগল হয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন, ফয়জুন্নেছার মা মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স বলে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। এরপর গাজী চৌধুরী নাজমুন্নেছাকে বিয়ে করেন। কিন্তু মন থেকে ফয়জুন্নেছাকে পরিত্যাগ করতে পারেনি। তাইতো বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, বিভিন্ন কৌশলে দীর্ঘ বিশ বছর ফয়জুন্নেছার বিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন এত রূপবতী হওয়া সত্ত্বেও, ফয়জুন্নেছার বিয়ে অনেক দেরিতে হয়েছিল। গাজী চৌধুরী ফয়জুন্নেসার আত্মীয় ছিলেন এই গাজী চৌধুরী প্রবল প্রতাপশালী, ত্রিপুরা জেলার স্থানীয় জমিদারদের মধ্যে মহারাজার পরেই ছিল তার স্থান। গাজী চৌধুরীর বিয়ের দীর্ঘ সময় সন্তান প্রাপ্তি না হওয়ায় নাজমুন্নেছাকে সন্তানদানের ব্যর্থতার অজুহাতে প্রথম স্ত্রীকে দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি করে তারি হস্তক্ষেপে নানান কুটিলতার মাধ্যমে ফয়জুন্নেছাকে বিয়ে করেন। এই বিয়ে খুব ঘটনাবহুল, নাটকীয় ও জৌলষতায় পরিপূর্ণতায় হয়। বিয়ের শর্ত অনুযায়ী ফয়জুন্নেছা মায়ের কাছে থেকে যান।
ফয়জুন্নেছার কোল জুড়ে দুটি কন্যা সন্তান আসে, তাদের নাম আরশাদুন্নেছা ও বদরুন্নেছা। বিয়ের পর তিনি দুবার স্বামীর বাড়ী গিয়েছিলেন প্রথমবার বিয়ের ৫ বছর পর দ্বিতীয়বার গাজী চৌধুরীর মৃত্যুর সময়। ফয়জুন্নেছার প্রতি স্বামীর অত্যধিক অনুরাগ তৎকারণে সম্পত্তির ঈষা থেকে সৃষ্ট পারিবারিক দ্বন্ব আর সতীনের দুর্ব্যবহার স্বামীর বিরাগ এবং সেই সতিনের হাতেই ফয়জুন্নেছার প্রথমা কন্যাকে পালনের জন্য ইন্ধন যুগিয়ে গাজী চৌধুরীকে বাধ্য করে নাজমুন্নেছা নিয়ে যায় ফয়জুন্নেছার বড় মেয়েকে ফলে অনেক কারণে গাজী চৌধুরীর মুখ দেখবেননা এ কথা ফয়জুন্নেছা জানিয়ে দিয়ে বুকে পাথর বেঁধে চিরতরে স্বামীর গৃহ পরিত্যাগ করেন।
ফয়জুন্নেছার মাতৃ বিয়োগের আগেই জমিদারি দেখাশুনার ভার বর্তায়। তার ভাইয়েরা বিদ্যমান সত্ত্বেও এই দায়িত্ব পাওয়ার কারণ, তিনি বিদ্যা বুদ্ধিতে ব্যক্তিত্বে বিচক্ষণতায় ও কর্মদক্ষতায় ছিলেন যোগ্যতমা। কথিত আছে তার জমিদারী সীমানার মধ্যে বাঘে, ছাগলে এক ঘাটে পানি খেতো। প্রজা সাধারণের অবস্থা স্বচক্ষে অবলোকনের অভিপ্রায়ে প্রায়ই তিনি পালকিতে চড়ে, হাতিতে করে বিভিন্ন মৌজা পরিদর্শনে বেরুতেন নারী পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণ প্রজাদের সুখ দুঃখের তত্ত্বতল্লাশী করতেন। তার কাছে প্রতিটি ধর্মের মানুষ, ধনী, দরিদ্র সবাই সম্মান ছিল। তার জমিদারীর বেশীর ভাগ আমলরা ছিল ভিন্ন ধর্মের। তিনি মানুষদের জন্য পানি সমস্যার লাঘব করার জন্য বহু দীঘি, খাল, পুকুর খনন করেন, রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণ। মুসাফির থানা সহ অসংখ্য কাজ করে গেছেন। যে কোন প্রয়োজনে ছোট বড় কেউই তার নিকট হতে খালি হাতে ফেরেননি। ফয়জুন্নেছার সমগ্র জীবন ছিল নিয়ম তান্ত্রিক ও শৃঙ্খলার মধ্যে সুনিয়ন্ত্রিত। তার জীবনের দু’টি প্রধান সাধনা ছিল আল্লাহর ইবাদত দ্বিতীয়টি সাহিত্য সাধনা, তার গড়া পাঠাগার ছিল সাহিত্য চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। শতবর্ষ পূর্বে নিজের গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন সম-সাময়িকী, সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা সমূহে অর্থ সাহায্যের এক বিস্ময়কর সাক্ষর রেখে গেছেন তিনি।
জনস্বাস্থ্যমূলক কর্মকান্ডের মধ্যে প্রথম বিষয়টি, নারীদের স্বাস্থ্য সেবার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছিলেন। কারণ তৎকালীন নারীরা শরিফি প্রথার জন্য অকালে মৃত্যুর মূখে পতিত হয়েছেন অসুস্থ্য অবস্থায় কোন ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা করানোর প্রচোলন ছিলনা। নারীরা ধুকে ধুকে মরেছেন কারণ একটাই পুরুষ ডাক্তার দেখাবেনা, পূর্ববঙ্গের এ অঞ্চলে হিন্দু মুসলমান সবার জন্য একই নিয়ম ছিল। নারীদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে দূর্গতির অন্ত ছিলনা। ফয়জুন্নেছা বাঙ্গালী জাতির দুর্ভাগ্যের এই ব্যাপারটি অনুধাবন করেছিলেন। তাই নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য স্থাপন করেন দাতব্য চিকিৎসালয় লাকসামের সরকারি দাতব্য চিকিৎসালয় নামে আজও অবধি বিদ্যমান। ১৮৯৩ মনে কুমিল্লায় জানান হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেনা নারী কল্যাণের লক্ষে উনবিংশ শতাব্দীতে মহিলা সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক স্বয়ং সম্পূর্ণ একটি হাসপাতাল স্থাপন করা প্রকৃত পক্ষে তার যুগের চেয়েও অগ্রগামী চিন্তার ফসল। তখনকার সময় মহিলাদের জন্য কোনো চিকিৎসালয় আলাদা ভাবে ছিলনা। তার এই কর্মকান্ড একটি অনন্যকীতি ছিল। ফয়জুন্নেছার ভিন্নমুখী কর্মের মাধ্যমে নারীদের সাহায্য করতেন এর মধ্যে অন্যতম ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সমিতি সখি নামে প্রতিষ্ঠিত হয়, এটি আদি বাহ্মসমাজের, স্বর্ণকুমারী দেবীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি হয়। সে সময় এই প্রতিষ্ঠানে কোন মুসলমান নারী সদস্য হয়নি, ফয়জুন্নেছাই একমাত্র মুসলমান নারী ছিলেন এই সদস্যের তিনি সখি সমিতিকে অর্থদানের মাধ্যমে উৎযোগীদের উৎসাহিত করতেন। এই সমিতিটির কাজ ছিল বিভিন্ন শ্রেণী ও ভিন্ন ধর্মের মেয়েদের মধ্যে সম্ভাব্য সৃষ্টি করা ও দুঃস্থ অসহায় নারীদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে কাজ করা, তার মধ্যে হস্তশিল্প ছিল অন্যতম, তখনকার সময় এই কর্মকান্ড এখানকার নারীদের চিন্তার বাইরে ছিল। তিনি নিজেকে আবদ্ধ না রেখে নারীদের জন্য এই ধরনের অনেক কাজে নিয়োজিত রেখেছিলেন। ফয়জুন্নেছার একটি অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট ছিল তিনি গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত হয়েও একজন পর্দানশিন শরিফ মহিলা হওয়া সত্ত্বেও সমাজ ও দেশের সর্বদিকেই খেয়াল রাখতেন।
শিক্ষা বিস্তারে ফয়জুন্নেছার অবদান বিস্তৃত তিনি সবচেয়ে শিক্ষা বিস্তারে বিষে নজর দিয়েছিল। আমাদের সমগ্র বাংলাদেশে তার পূর্বে কোন সংস্কারবাদী নারী বা পুরুষ নারীদের জন্য ইংরেজি মাধ্যমের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেননি ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ফয়জুন্নেছা কুমিল্লা শহরে তাল পুকুর পাড়ে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য ইংরেজী মাধ্যমের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি সরকারি স্কুল এবং অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুশিক্ষা দান করে যাচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য তিনি জমিদারীর বিভিন্ন মৌজায় অজ¯্র প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে গেছেন। তার শিক্ষা বিস্তারে বিশাল কর্মকান্ড শুধমাত্র নিজ জমিদারী এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিলনা এর পরিধি বিদেশের মাটিতেও বিসৃত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কৃষ্ণনগর নদীয়াতেও তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি মক্কা মদিনাতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। তিনি মক্কায় যোবায়দা নহর পুনঃ খনন করেছিলেন হাজীদের পানির সমস্যা দূর করার জন্য এবং আরাফাতগামী একটি রাস্তা নির্মাল ও মেছফালায় একটি মুসাফির খানা স্থাপন করেছিলেন। তিনি শীত ঋতুতের দরিদ্রদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করতেন তার পরবর্তীদের উপর এরূপ কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন লিখিতভাবে ফয়জুন্নেছার মানবদরদী অনেক কর্ম যা অগনীত। তার সেবা আজও চলছে যুগ যুগ ধরে তার গড়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
জমিদার থেকে নওয়াব উপাধি অর্জন করেছিলেন নিজ কর্ম যোগ্যতায়। তখনকার সময় ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ ডগলাস একটি সমাজ কল্যাণমূলক কাজের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সরকার হতে টাকা প্রাপ্তি বিলম্ব হওয়ায় ডগলাস স্থানীয় জমিদার, ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং আগরতলার মহারাজার কাছেও এ প্রকল্পের জন্য ধার চেয়ে ব্যর্থ হউন। এরপর ফয়জুন্নেছার কাছে টাকা চেয়ে ঋণ হিসেবে পেয়েছিল। কিছুদিন পর মিঃ ডগলাস এই টাকা ফেরত দিতে গেলে ফয়জুন্নেছা টাকা ফেরত নেননি তিনি বলেন আমি যখন অর্থ দেই তা দান হিসেবেই দেই কর্জ হিসেবে নয়। ফয়জুন্নেছার এই কথাগুলো ডগলাসকে বিমোহিত করেছে তাই তিনি এ সংবাদটুকু ইংল্যান্ডের রাণীর নিকট পৌছে দিয়েছিলেন। একজন মুসলিম জমিদার নারীর এরকম আচরণে মুগ্ধ হয়ে রানী ফয়জুন্নেছাকে বেগম উপাধিতে ভূষিত করলেন, কিন্তু ফয়জুন্নেছা এই উপাধিকে প্রত্যাখান করেন। দুনিয়া জোড়া বিশাল সা¤্রাজ্যের অধিকারী, সর্বোচ্চ পদে অধিষ্টাত্রী মহারানী ভিক্টোরিয়ার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান? মহারানী স্বয়ং এক বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হন বলে কথিত আছে। তখন ভিক্টোরিয়া অধিবেশন ডেকে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নেন ফয়জুন্নেছাকে নওয়াব উপাধিতে ভূষিত করা হবে। এরপর রানী ভিক্টোরিয়া এই তেজস্বী মহিলা জমিদারের কার্যকলাপ পরিদর্শনের জন্য এক প্রতিনিধি দল পশ্চিম গায়ে পাঠান দলটি ইংল্যান্ড হতে এসে ফয়জুন্নেছার কাজকর্ম দেখলেন তৎকালীন অধিকাংশ পুরুষরাও তারমত সফলতার সাথে জমিদারী পরিচালনা করতে পারেনি এমনকি তার ভ্রাতাগণও না। তার নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি এই গুনাগুনগুলোর সম্পর্কে শুনতে পান প্রতিনিধিরা, ফয়জুন্নেছা জমিদারী দর্শনে যাওয়ার সময় পর্দানশিন অবস্থায় নন্দিতভাব অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সুসজ্জিত হাতিতে আরোহন করার দৃশ্য দেখে প্রতিনিধি দল বিমুগ্ধ চিত্তে প্রত্যক্ষ করে রানী ভিক্টোরিয়ার দূত প্রকাশ্যেই ব্যাক্ত করেছিলেন যে এ নারী শুধু নারী নন তিনি সাধারণের চেয়ে উর্ধ্বে এবং তার জন্য ‘নওয়াব’ খেতাবই উপযুক্ত। এরপর প্রতিনিধি দলটি ইংল্যান্ড যাওয়ার কিছুদিন পরই ঘোষিত হলো পশ্চিমগাঁয়ের জমিদার ফয়জুন্নেছার জন্য নওয়াব খেতবা এ সবই জনশ্রুতি।
অবশেষে তারকাকৃতি হীরক খচিত মহামূল্যবান পদকটি বিশেষভাবে সরকারি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফয়জুন্নেছাকে ‘নওয়াব’ উপাধি প্রদান করা হয়। ফয়জুন্নেছার এই পদকটি বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরে জমা দেয়া আছে।
সময়ের স্রোতে কালের আবর্তনে ফয়জুন্নেছার ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে কেউ কোন খবর রাখছেনা তার সম্পর্কে। অথচ এই নারী সমাজ ও দেশের উন্নয়নের জন্য বিশাল অবদান রেখেছিল কিন্তু এ কথা অনেকেরই অজানা। নবাব ফয়জুন্নেছার মৃত্যুর এতকাল অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও আমরা তাকে তার কর্মের স্বীকৃতি দিতে পারিনি। তাকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছি। এখন আমাদের উচিত ফয়জুন্নেছাকে যথাযথ মর্যাদায় তার প্রাপ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করা তাকে বাংলার নারী মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া।