শুক্রবার, মে ৯, ২০২৫
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ   * রাণীশংকৈল সীমান্ত থেকে ৪ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ   * কক্সবাজারে কৃষি কার্যক্রম পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত সচিব   * চট্টগ্রামের আ.লীগ নেতা নুরুল আবছার চৌধুরী গ্রেপ্তার   * চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালাল আটক   * পরীক্ষাকেন্দ্রের মাঠে চলছে বৈশাখী মেলা ১৪৪ ধারা অমান্য করে সাধারণ মানুষ মেলায় ঢুকে পড়ে   * এ মেলায় সকলের সম্পৃক্ততা নেই- এটা মনে হচ্ছে বিএনপি’র মেলা - রাণীশংকৈলে মির্জা ফয়সাল   * সর্বোৎকৃষ্ট মানের স্কিন কেয়ার ও কসমেটিকস পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখে রিমার্কের ভূয়সী প্রশংসা করলেন শিল্প সচিব   * উপকূলের শ্যামনগরে বোরোর ফলনে কৃষকের মুখে হাসি   * চিতলমারীতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত  

   প্রচ্ছদ
মানবতাবাদী শেখ ফজিলাতুন্নেছা
  Date : 14-04-2017

রুবিনা শওকত উল্লাহ
পৃথিবীর কোন জাতি কোন নারীর কারণে হতে পারে ধ্বংস বা হতে পারে সৃষ্টি এর প্রমাণ শেখ ফজিলাতুন নেসা। তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধুর সহধর্মীনি। শেখ ফজিলাতুন্নেছার আত্মত্যাগের কথা আজও অনেকের অজানা। আমরা আজ যে স্বাধীন বাংলায় বাস করছি এর পেছনে তার প্রেরণা ও ত্যাগের বড় একটা ভূমিকা রয়েছে। শেখ ফজিলাতুন্নেছার অসংখ্য গুণাবলী হতে পারে অনেক নারীর শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার কারণ। তিনি একজন নারী হয়ে যে অগনিত কষ্ট প্রতিকূলতার মাঝেও জীবনের হাল ছাড়েননি বরং প্রতিটি কষ্টের মুহুর্তগুলোকে সংগ্রাম করে জয় করেছেন। একজন নারীর কারণে দেশ ও জাতি যে বহু কিছু পেতে পারে তিনি তার প্রমাণ।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ পথ চলার সাথী ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিল। শত বিপদেও সব সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর ভরসার কারণ ছিলেন। ফজিলাতুন্নেছা সংসার জীবনে পরিবারের জন্য খুব কম সময় তিনি তার স্বামীকে কাছে পেতেন। কিন্তু কখনও তার অভিযোগ ছিল না, অভিমান ছিল না। কারণ তিনি ভাবতেন তার স্বামী দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতেন।
একজন গৃহিনী হয়ে দেশের স্বার্থে পর্দ্দার আড়ালে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন ফজিলাতুন্নেছা। তিনি প্রচারে বিমূখ ছিলেন তার ধারণা ছিল দেশপ্রেম নিঃস্বার্থ, লোক দেখানো নয়। এটা নিজ দায়িত্ব। আজ সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি তার কিছু অবদান।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন হয়েছিল যেসব নির্বাচনের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু জয়ী হওয়ার পরে মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছিলেন। পরে আবার মন্ত্রিসভা ভেঙে গিয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু সহ ফজিলাতুন নেসা মিন্টু রোডের ৩ নম্বর বাসায় থাকতেন। একদিন হঠাৎ করে রাতে বাসায় পুলিশ এসে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং ১৪ দিনের নোটিশ দিয়ে পুরো পরিবারকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল। তখন পরিবারটি ঢাকায় মাত্র নতুন এসেছিল তেমন কেউ চেনাজানা ছিল না। এই অবস্থায় কোথায় বাসা দেখবে বুঝে উঠতে পারছিলেন না ফজিলাতুন নেসা। তখন এক আত্মীয়ের সাহায্য নিয়ে অনেক খোঁজার পর নাজিরা বাজারে একটা বাড়ি পেয়ে উঠেছিলেন। এই ধরনের একের পর এক ঘাত-প্রতিঘাত, রাজনীতির কত রকম হয়রানির সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু কোনদিন বঙ্গবন্ধুকে বলেননি রাজনীতি ছেড়ে দাও, বরং উৎসাহ দিয়েছেন।
১৯৫৪ সালের পরে বার বার গ্রেফতার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এরপর ‘৫৫ সালে বঙ্গবন্ধু আবার মন্ত্রী হন। তখন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচন করে জয়ী হয়ে মন্ত্রী সভায় যোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিয়ে ১৫ নম্বর আবদুল গণি রোডের বাসায় নিয়ে উঠেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সংগঠন শক্তিশালী করার জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। এই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ঐ সময়ে অন্য কোন নারী হলে নিশ্চয় অভিযোগ করত যে, স্বামী মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিচ্ছে, বাড়ী, গাড়ি এত কিছু সব হারাতে হবে এই লালসা হতো। কিন্তু এসব নিয়ে ফজিলাতুন নেসার কোন লোভ কিংবা অভিযোগ ছিল না। তিনি বরং তার স্বামীর সকল পদক্ষেপকে সমর্থন করতেন। ওনারা সব গুছিয়ে একটি ছোট্ট বাসায় উঠেছিল। ‘শহিদ সোহরাওয়ার্দী’ বঙ্গবন্ধুকে টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে সেগুন বাগিচার বাসায় থাকতে দেয়া হয়েছিল।
শুরু হলো মার্শাল ল। আইয়ুব খান যেদিন মার্শাল ল ডিক্লেয়ার করলেন সে সময় বঙ্গবন্ধু করাচিতে ছিলেন। এ খবরের পর তাড়াতাড়ি চলে এলেন বঙ্গবন্ধু। রাতে ১২ তারিখে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলেন, গ্রেফতার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে নগদ যে টাকা, গাড়ি ছিল সে গুলো সিজ করে নিয়ে যাওয়া হয়। মাত্র ছয় দিনের নোটিশ দিয়ে পুরো পরিবারকে বের করে দেয় বাসা থেকে। সেই মুহুর্তে ছোট সন্তানদের নিয়ে রাস্তার ওপর অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সঙ্গে এরকম একটা পরিস্থিতির সামাল দিয়েছিলেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা। পরে এই পরিবারকে একজন একটা বাসা দিয়েছিলেন দুই কামরার এরপর ঐ বাসায় উঠলেন। ঠিক ঐ মুহুর্তে দিন রাত বাড়ি খোঁজা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে একটার পর একটা মামলা মোকদ্দমা চালানো, কোর্টে যাওয়া অনেক ধৈর্য্যরে ব্যাপার ছিল।
এর কিছুদিন পর সেগুনবাগিচার দোতলা একটা বাসায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা সন্তানদের নিয়ে উঠেছিলেন। সে সময় আওয়ামী লীগের কোন নেতা কর্মীর অসুখ-বিসুখ হলে তাদের সাহায্য করা, যারা বন্দী তাদের পরিবারগুলোকে দেখা, দলের কার কার বাড়িতে বাজার নেই সে খোঁজ খবর নেওয়া, কার কি অসুবিধে সমাধান করতে গিয়ে নিজের গহনা পর্যন্ত বিক্রি করেছিলেন মানুষের উপকার করার জন্য। প্রতিটি পদে পদে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেছিলেন এই নারী।
বঙ্গবন্ধু যখন বন্দি অবস্থায় তখন ফজিলাতুন্নেছা সংসার চালাতে হচ্ছে, আওয়ামীলীগের নেতাদের সাহায্য করতে হচ্ছে। এমন দিন গেছে ঘরের জন্য বাজার পর্যন্ত করতে পারছিলেন না। তখন চাল, ডাল দিয়ে খিঁচুড়ি রান্না করে আচার দিয়ে সন্তানদের এরকম বলে খাইয়েছেন যে, সব সময় এক ধরনের খাবার ভাল লাগেনা আজ অন্যরকম খাও, তবুও সন্তানদের বুঝতে দেয়নি টাকার সমস্যার কথা বঙ্গবন্ধুর শখ করে আনা ফ্রিজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন টাকার জন্য। ফ্রিজটি বিক্রি করার আগে বাচ্চাদের বুঝিয়ে বলেছিলেন ঠান্ডা পানি খেলে সর্দি হয়, কাশি হয়, গলা ব্যাথা করে এজন্যই ফ্রিজটা বিক্রি করে দেব। কত সুন্দর করে সন্তানদের বুঝিয়েছিলেন তাদের যেন মন না ভাঙে সে জন্য। এত সমস্যার পরেও তিনি মুখ দিয়ে অভাব বা হা-হতাশ করেননি যতই সমস্যা আসত না কেন। শেখ ফজিলাতুন্নেছার এই ধরনের আরও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার ঐ সময়ের জীবন যাপন ও আদর্শগুলো যদি কোন নারী অনুসরণ করে তাহলে কোন নারীর সংসার জীবনে যত বড় যত ধরনেরই সমস্যা আসুক না কেন সব সমস্যা থেকে উঠে দাড়ানোর মানসিক শক্তি যোগাবে।
বঙ্গবন্ধু ’৫৮ সালে অ্যারেস্ট হন, ’৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে হেবিয়াস কর্পাস করে মুক্তি পান। শহিদ সোহরাওয়ার্দী নিজে এসে মামলা পরিচালনা করেন। তখন বঙ্গবন্ধু জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু ইখবার্গো থাকে যে, উনি ঢাকার বাইরে যেতে পারবেন না। রাজনীতি করতে পারবেনা সব রাজনীতি বন্ধ। ঐ সময় বঙ্গবন্ধু ইন্স্যুরেন্সে চাকরি নেন। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধুর হাতে টাকা পয়সা, ভাল বেতন, গাড়ি সব হলো। সেই সময়ে ফজিলাতুন নেসার জীবনে সুন্দর সময় চলছিল বঙ্গবন্ধু চাকরি করছেন আর উনি স্থিরভাবে জীবনটা চালাতে পারছিল। বঙ্গবন্ধু তখন ধানমন্ডিতে দুইটা কামরা করেন ’৬১ সালের অক্টোবরে পুরো পরিবার ধানমন্ডিতে চলে আসে। বাড়িটি তৈরি করার সময় ফজিলাতুন নেসা লেবার খরচ বাঁচানোর জন্য নিজের হাতে ওয়ালে পানি দিতেন ইট বিছাতেন। পরিবারের সন্তানদের নিয়ে কাজ করতেন সন্তানরা যেন পরিশ্রমি হয়। বঙ্গবন্ধু ভালো বেতন পেতেন কিছুর অভাব ছিলনা ঐ মুহুর্তে তারপরও চলার পথে সীমাবদ্ধতা থাকা বা সীমিতভাবে চলা, সবকিছুতে সংযতভাবে থাকা এই যে, আদর্শগুলো তিনি সন্তানদের শেখাতেন, তার এই নিয়ম নীতি যদি প্রতিটি মা অনুসরণ করেন তাহলে প্রতিটি ঘরের সন্তান জাতির জন্য সুফল বয়ে আনবে।
এরপর আস্তে আস্তে দেশের পরিস্থিতি উত্তাল হলো। ’৬২ সালে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলেন। ৬৪’ সালে আবারও গ্রেফতার হলেন। সে সময় ৬৪’ সালে একটা রায়ট হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই সময় হিন্দু পরিবারগুলোকে বাসায় নিয়ে আসতেন। সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাদের শেল্টারের ব্যবস্থা করতেন। রাইট থামানোর জন্য ভলেন্টিয়ার করে দিয়েছিলেন। জীবনের যত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। আদমজীতে বাঙালি বিহারী রায়ট হলো, সেখানে বঙ্গবন্ধু ছুটে গেছেন। প্রতিটি মুহুর্তে এই যে কাজগুলো বঙ্গবন্ধুর সাথে শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছায়ার মতো সাহায্য করেছেন। একটার পর একটা পরিবার নিয়ে আসতেন তাদের জন্য রান্না করা, খাওয়ানো সব দায়িত্ব পালন করতেন নিজেই। কিন্তু কখনো বিরক্ত বোধ করেননি বরং মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
একটা সময় আসলো ৬ দফার। দিলেন ৬ দফা দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সারা বাংলাদেশ ঘুরেছেন যেখানেই বক্তৃতা দিয়েছেন, সেখানে মামলা হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছেন, আবার মুক্তি পেয়েছেন। প্রতিটি জেলায় গেছেন চলতে চলতে ’৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করলো। এই কারাগার থেকে বন্দী করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেলে ৫ মাস পরিবার জানতেও পারেনি বঙ্গবন্ধুকে, কোথায় নিয়ে গেছেন, বেঁচে আছেন কিনা তাও কেউ বলতে পারছিলেন না। সে সময়ের গড়ে তোলা আন্দোলন, ৭ জুনের হরতাল। শেখ ফজিলাতুন্নেছা সন্তানদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর এক বোনের বাসায় যেতেন ওখানে গিয়ে নিজের পায়ের স্যান্ডেল বদলাতেন, কাপড় বদলাতেন বোরকা পরতেন। ওনার এক ছোট ভাই ঢাকায় পড়তেন তাকে নিয়ে তিনি ছাত্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতেন, আন্দোলন চালাবে কিভাবে তার পরামর্শ নিজেই দিত দলকে। এরপর ফিরে বঙ্গবন্ধুর বোনের বাসায় কাপড় বদলিয়ে সন্তানদের নিয়ে বাসায় ফিরতেন, গোয়েন্দারা সব সময় ফজিলাতুন নেসাকে নজরদারিতে রাখতেন কারণ তিনি রাজনীতির জন্য দলকে কোন সাহায্য করছিল কিনা, তাই গোয়েন্দাদের নজর থেকে বাঁচতে এভাবেই ছদ্মবেসে কাজ করে গেছেন। ছাত্রদের আন্দোলনকে কীভাবে গতিশীল করা যায় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং এ হরতালটা যেন সফল হয়। যেন আন্দোলন বাড়ে সফল হয়, তার জন্য এভাবে কাজ করতেন। কিন্তু কখনোও পত্রিকার ছবি ওঠা, বিবৃতি এসবে তিনি এড়িয়ে চলতেন।
একটা সময় এলো ৬ দফা, না ৮ দফা সব বড় বড় নেতারা এলেন করাচি থেকে। তখন শাহবাগ হোটেল আজকে যেটা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তখন তিনি নিজ বড় কন্যাকে ওখানে পাঠাতেন নেতারা আসছেন তাদের স্ত্রীরা সাথে এসেছিলেন। সব খবরাখবর নিয়ে আসার জন্য কি হচ্ছে ওখানে সব ঠিকঠাক আছে তো। ফজিলাতুন্নেছা ঢাকা শহরে নিজের একটা ভালো নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন নিজ পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে। সে সময় দলের কখন কী হচ্ছে তিনি মহানগর আওয়ামীলীগের গাজী গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে সব খবর পেয়ে যেতেন। মফস্বল থেকে নেতারা যখন আসতেন তাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি রাজনৈতিক ব্যাপারে অনেক সচেতন ছিলেন। তিনি ৬ দফা থেকে এক চুল এদিক ওদিক যাবেনা এটাই শেখ ফজিলাতুন্নেছার সিদ্ধান্ত ছিল কারণ এটাই বঙ্গবন্ধু মত ছিল। কিন্তু নেতারা সব উঠেপড়ে লাগলেন ৮ দফা ভালো হবে বলে বোঝাতেন নেতারা, আপনি ভাবি বুঝতে পারছেন না। তখন ফজিলাতুন্নেছা বলতেন আমি তো ভাই বেশি লেখাপড়া জানিনা। খালি এইটুকু বুঝি ৬ দফা হচ্ছে বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ।
এরপর নেতারা আবার উঠেপড়ে লাগলেন আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক ডাকল, সেখানে যেতে হবে, না গেলে সর্বনাশ হবে। তখন শেখ ফজিলাতুন্নেছা বঙ্গবন্ধুকে বলে দিয়েছিলেন প্যারোলে যাবেন না, যদি মুক্তি দেয় তখন আসবেন। এ খবর নেতারা শুনে বাসায় এসে বকাঝকা করেছিলেন, বলেছিলেন আপনারা চাননা বঙ্গবন্ধু জেল থেকে বের হোক আপনিতো বিধবা হবেন, তখন ফজিলাতুন্নেছা বলেছিলেন আমি তো একা না এখানে তো ৩৫ জন আসামি তাদের মধ্যে ৩৪ জনই বিবাহিত তাদের স্ত্রীরা তো বিধবা হবে তখন কি হবে? আমার একার কথা চিন্তা করলে চলবে? আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যারা জড়িত তাদের সবার কথা তো ভাবতে হবে। শেখ ফজিলাতুন্নেছার এই যে দূরদর্শিতা রাজনীতিতে সেটাই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছিল।
সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষনের সময় এল বড় বড় বুদ্ধিজীবিরা বঙ্গবন্ধুকে লিখে দিয়েছিলেন এটা বলতে হবে ওটা বলতে হবে আবার কেউ কেউ নাকি বলেছিলেন। এটা, ওটা না বললে সর্বনাশ হবে। তখন শেখ ফজিলাতুন্নেছা বঙ্গবন্ধুকে বললেন তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি সে কথা বলবে মন থেকে। কারণ লাখো মানুষ সারা বাংলাদেশ থেকে ছুটে এসেছে, হাতে বাঁশের লাঠি, নৌকার বৈঠা নিয়ে। এদিকে পাকিস্তানি শাসকরা অস্ত্র নিয়ে বসে আছে। ঐ মুহুর্তে বঙ্গবন্ধুর শেরা ভাষনের উৎসাহ জুগিয়েছিলেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন কীভাবে স্বাধীনতা আসবে সে কথাই তিনি ভাষণে বলে এলেন। যে ভাষন আজকে এ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষন, আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে যত ভাষন আছে, যে ভাষন মানুষকে উজ্জীবিত করেছে এ ভাষন শ্রেষ্ঠ একশটি ভাষনের মধ্যে স্থান পেয়েছে। এই ভাষনের কারনেই ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু যে মুহুর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন তারপরই সেনাবাহিনী এসে বাড়ি আক্রমন করল বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। পরের দিন এসে আবার বাড়ী আক্রমন করায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা পাশের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপর ও বাসা এ বাসা করে মগবাজারের এক বাসা থেকে অ্যারেষ্ট করে নিয়ে যাওয়া হলো। ১৮ নম্বর রোডের একতলা এক বাসায় ওনাদের রাখা হলো খোলা বাড়িতে। পর্দ্দা নাই কিছুই নাই এ অবস্থাতে। রোদের মধ্যে শত কষ্টে দিনের পর দিন থাকতে হয়েছিল। তিনি এত কষ্টের মাঝেও ভেঙে পড়েনি বরং আত্মবিশ্বাস, সাহস নিয়ে দিন কাটিয়েছিলেন।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী স্যালেন্ডার করে। তখনও ফজিলাতুন্নেছার পরিবার মুক্তি পাননি একদিন পর মুক্তি পেয়েছিলেন। ওই দিন রাতেও ওনাদের মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, যেভাবে হোক আল্লাহ ওনাদের বাঁচিয়েছিল।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ ফজিলাতুন নেসা একজন প্রধান মন্ত্রীর বউ হিসেবে বিলাসী জীবন যাপন করেননি ; ওই ধানমন্ডির বাড়িতে থেকেছিলেন। ওনার এই ধারণা ছিল ছেলে মেয়েরা বেশি বিলাসিতায় অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে। তিনি জীবনে সাদামাটা ভাবেই চলতেন। স্বাধীনতার পর যেসব মেয়েরা নির্যাতিত হয়েছিলো তাদের সাহায্য করা, হাসপাতালে দেখতে যাওয়া, বোর্ডের মাধ্যমে তাদের পূনর্বাসন ব্যবস্থান করেছিলেন। মেয়েদের যখন বিয়ে দিতে হতো নিজে উপস্থিত থেকেছেন ও নিজের গহনা যতটুকু সম্ভব হয়েছে দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ কী ভয়াবহ পরিস্থিতি, সেই সময় চারপাশের খোঁজ খবর সব তিনি সংগ্রহ করে বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন। শেখ ফজিলাতুন্নেছা সবসময় মানুষের কল্যানের জন্যই চিন্তা করতেন। কিভাবে দেশের শান্তি আসবে, দেশের উন্নতি হবে। এই মানবতাবাদী নারীর দেশ প্রেমের জন্য দালাল ঘাতকদের হাতে সহপরিবার প্রাণ দিতে হয়েছে। বাংলাদেশ যত দিন বেঁচে থাকবে এই পৃথিবীর বুকে এই মহিয়সী নারীর কাছে চির ঋণী হয়ে থাকবে।



  
  সর্বশেষ
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়েতে কুকুর-শিয়ালের উৎপাত, ঝুঁকিতে বিমান অবতরণ-উড্ডয়ন
সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ
রাণীশংকৈল সীমান্ত থেকে ৪ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
কক্সবাজারে কৃষি কার্যক্রম পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত সচিব

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308