মসজিদ মার্কেটের ভাড়া ও মসজিদের বিভিন্ন আয়ের ‘আর্থিক কর্তৃত্ব’ পেতে খুন করা হয় পুরান ঢাকার ইসলামপুরের ঝব্বু খানম জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন বিল্লাল হোসেনকে (৪৯)।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে ২০ এপ্রিল দুপুরে সাংবাদিকদের এমন তথ্যই জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।
উপ-কমিশনার জানান, পুরান ঢাকায় মসজিদের ভিতর মুয়াজ্জিন খুনের সাথে জড়িত তিনজনসহ মোট চারজনকে আটক করা হয়েছে। আটকরা হলেন, মূল হত্যাকারী ও প্রধান আসামি মসজিদের খাদেম মো. হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব (৩০), সহকারী মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. মোশাররফ হোসেন (১৯) ও হাফেজ তফাজ্জল হোসেন (২৩)। এ ছাড়া হত্যাকা-ের পর থেকে জেল হাজতে আটক রয়েছেন নিহত মুয়াজ্জিন বিল্লাল হোসেনের বন্ধু ও হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি সারোয়ার হালিম (৩৮)।
মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, বিভিন্ন কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মঙ্গলবার একাধিক স্থান থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে হাবিবুর রহমানকে নড়াইল জেলার নড়াগাতি এলাকা থেকে, মোশারফ হোসেনকে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরের পাইকপাড়া থেকে ও তফাজ্জল হোসেনকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আমবাগিচা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে উপ-কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, মসজিদ মার্কেটের ৩৩টি দোকান থেকে বছরে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ভাড়া আসে। দানবাক্সে মুসল্লিদের দেওয়া অর্থসহ মসজিদের যাবতীয় আয়-ব্যয় ও লেনদেনের হিসেব এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন মুয়াজ্জিন বিল্লাল হোসেন। মসজিদের স্টাফদের বেতন ভাতাদি ও মাসিক খরচ শেষে উদ্বৃত্ত টাকা তার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসেবে জমা হতো।
এ ছাড়াও মুয়াজ্জিন বিল্লাল মসজিদ এলাকার একাধিক ব্যবসায়ীর নিকট লাভে টাকা খাটানোর কথাও জানিয়েছেন মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। এ সব টাকার ভাগ ও আর্থিক কর্তৃত্ব দখলে নেওয়ার অসৎ চিন্তা মাথায় আসে মুল হত্যাকারী খাদেম হাবিবের।
লাভে খাটানো টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে উত্তরে উপ-কমিশনার জানান, প্রায় আট লাখ টাকা ভাড়ায় খাটানোর তথ্য পাওয়া গেছে। হত্যার সাথে জড়িত হিসেবে আটক মুয়াজ্জিনের বন্ধু সারোয়ার হালিমের কাছেই এই টাকার সিংহভাগ রয়েছে।
ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বিশেষ আরো একজনের নাম ওঠে এসেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করেননি উপ-কমিশনার। তাকে গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি।
এ সময় তিনি আরো বলেন, গত দু’বছর ধরে মুয়াজ্জিন বিল্লালকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি মসজিদে সফল এ হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়।
হত্যাকারী ও প্রধান আসামি খাদেম মো. হাবিবুর রহমানের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ঘাতক হাবিব হত্যার উদ্দেশ্যে মসজিদের সিঁড়িতে উৎ পেতে ছিল। মুয়াজ্জিন বিল্লাল দোতলা ও তিনতলা সিঁড়ির মাঝখানে পৌঁছালে সরাসরি তার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় খাদেম হাবিবুর রহমান। তারপর শরীরের বিভিন্নস্থানে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। পালিয়ে যাওয়ার সময় হাবিব, ইসলামপুর রোডের বাবু বাজার ব্রিজ সংলগ্ন ড্রেনে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি ফেলে যায়। পরে তার স্বীকারোক্তি থেকে ছুরিটি উদ্ধার করা হয়।
হাবিবের এ হত্যা পরিকল্পনায় সায় দিয়ে সহযোগিতা করেছেন নিহত মুয়াজ্জিন বিল্লাল হোসেনের বন্ধু সারোয়ার হালিম। কারণ হিসেবে জানা যায়, বিল্লাল মসজিদের টাকা থেকে ভাড়ায় খাটানো টাকার সিংহভাগই খাটাতেন তার (সারোয়ার হালিম) মাধ্যমে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন, উপ কমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সর্দার, অতিরিক্ত উপ কমিশনার এসএম মুরাদ আলী প্রমুখ।
এদিকে তিন তিনের রিমাণ্ডে আনা হলে মুয়াজ্জিনকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধি দিয়েছেন মসজিদের খাদেমসহ আটক তিন আসামী। ২২ এপ্রিল মানবাধিকার খবরকে এসব তথ্য জানিয়েছেন কতোয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) পারভেজ ইসলাম।
তিনি আরো জানান, তিন দিনের রিমাণ্ডে থাকা অবস্থায় মসজিদ মার্কেটের আর্থিক কর্তৃত্ব পেতে দীর্ঘ দুই বছর পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে মুয়াজ্জিন বিল্লাল হোসেন (৪৯) কে। আদালতে এ সময় আসামীরা ফৌজদারী দন্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্ধি প্রদান করে। জবানবন্ধি শেষে তাদের জেলহাসতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত ৪ এপ্রিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরের ঝব্বু খানম জামে মসজিদের ভেতর থেকে মুয়াজ্জিন বিল্লাল হোসেনের (৪৯) লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি ওই মসজিদে প্রায় বিশ বছর ধরে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ সদরে।
ঘটনার পরদিন বিল্লালের বড় ছেলে মো. ইয়াসিন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে কোতয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বিশেষ প্রতিবেদক