মওদুদ আব্দুল্লাহ শুভ্র ( ব্যুরো চীফ- কুমিল্লা) :-কুমিল্লায় অনলাইনে ঘরে বসে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি হাতিয়ে নিয়ে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ অনলাইন প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম মো. আব্বাস (৩৮)। সে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থানার দক্ষিণ আড়ালিয়া গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
র্যাব জানায়, গত ১৫ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানা এলাকার এক ভুক্তভোগী নারীর টিকটক আইডিতে নক করে প্রতারক আব্বাস। সে ভুক্তভোগীকে অনলাইনে কাজ করে ঘরে বসে প্রতিদিন ১,০০০ টাকা আয়ের প্রলোভন দেখায়। ভুক্তভোগী আগ্রহী হলে রেজিস্ট্রেশনের নাম করে তার কিছু ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর ভুক্তভোগীকে একটি মোবাইল অ্যাপসের লিংক পাঠিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়। ওই লিংকে প্রবেশ করার সাথে সাথেই ভুক্তভোগীর ফেসবুকসহ যাবতীয় আইডির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় প্রতারক চক্রের হাতে।
পরবর্তীতে প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীর ছবি এডিট করেন নগ্ন ছবি ও ভিডিও তৈরি করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। লোকলজ্জার ভয়ে ওই নারী বিভিন্ন সময়ে বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রতারকদের সর্বমোট ৭ লাখ টাকা প্রদান করেন।
টাকা পাওয়ার পরও প্রতারকরা আরও টাকা দাবি করে। ভুক্তভোগী অপারগতা প্রকাশ করলে, আসামিরা ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের মোবাইলে ওই নগ্ন ছবি ও ভিডিও পাঠায়। এমনকি ভুক্তভোগীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে প্রোফাইল পিকচারে নগ্ন ছবি আপলোড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে গত ৫ নভেম্বর ভুক্তভোগী নারী র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায়, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ২১ নভেম্বর রাতে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থানাধীন সোনাফপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের মূল হোতা মো. আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি আভিযানিক দল। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, ধৃত আসামি একটি সংঘবদ্ধ অনলাইন প্রতারক চক্রের মূল হোতা। সে তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সহায়তায় দীর্ঘদিন যাবৎ নারীদের অনলাইনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করে পর্নোগ্রাফি তৈরি করে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব।