মো: একরামুল হক মুন্সী, চিতলমারী(বাগেরহাট):
‘আমরা ভুলেও ভাবতে পারিনি একজন শিক্ষকের দ্বারা এমন কাজ হতে পারে। তাকে বিশ্বাস করে বড় ভুল করেছি। ওই শিক্ষকের জন্য আমার মেয়েটা এখন মরতে বসেছে। তার দুই সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এখন পরিবারটির স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার!’ গত ৭ সেপ্টেম্বর কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নির্যাতিত ওই নারীর মা।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় সোহাগ মোল্লা নামে এক শিক্ষকের হীন লালসার শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন এক নারী। বর্তমানে ওই নারীকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার ওই শিক্ষকের অনৈতিক কাজের তদন্তপূর্বক বিচার দাবী করেছেন। এছাড়া, ছাত্রীর মায়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক এবং স্কুলের অন্যান্য ছাত্রীদের সাথে আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে প্রচারের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
বিদ্যালয়ের জরুরী সভায় নিজের অপরাধ স্বীকার করে শিশু কানন বিদ্যা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক সোহাগ মোল্লা বলেন, ‘অন্যায় অপরাধ সবকিছুই আমার। কিন্তু এক হাতে তালি বাজে না। আমি পুরুষ মানুষ। আমার মতো ৯৯ ভাগ পুরুষ এই কাজ করছে। তাদের বিচার কে করবে?’
নির্যাতিত নারীর মা আরো জানান, তার মেয়েকে উপজেলার হাড়িয়ারঘোপ গ্রামে ১২ বছর আগে দেন।মেয়ের স্বামী ঢাকায় চাকুরী করেন। দুই সন্তানকে নিয়ে মেয়ে বাবার বাড়ি শিবপুর গ্রামে থাকেন। এখানে থেকে শিশু কানন বিদ্যা নিকেতনে প্রথম শ্রেনীতে পড়–য়া নাতনিকে নিয়ে মেয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করত। এই সুবাদে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহাগ মোল্লা তার মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে। ছাত্রীর লেখাপড়ার খবর নেয়ার অযুহাতে মাঝেমধ্যে সোহাগ মোল্লা রাতে-বিরাতে তাদের বাড়িতে যাতায়াত করত।
তিনি জানান, গত ঈদ-উল-আযহার প্রায় ১৫ দিন আগে তার মেয়ে
নাতনিকে নিয়ে স্কুলে যায়। এদিন স্কুল ছুটির পর লাইব্রেরীতে বসে তার মেয়েকে চেতনানাশক খাওয়ায়। এতে সে জ্ঞান হারালে বিপর্যস্ত অবস্থায় বাড়িতে রেখে আসে। এ অবস্থায় তাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু বাড়িতে ফেরার পর মেয়ে অস্বাভাবিক আচরণ দেখে পরিবারের সন্দেহ জাগে। তারা বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় মেয়েকে তৎবিরের তাবিজ-কবজ পায়। তাবিজের মধ্যে সোহাগ মোল্লা ও তার মেয়ের নাম লেখা কাগজ পাওয়া যায়। বিষয়টি জানার পর পরিবারের লোকেরা স্কুলে আসে। চাপের মুখে শিক্ষক সোহাগ মোল্লা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক সোহাগকে জুতাপেটা করা হয়। শিক্ষক সোহাগ তার কৃতকর্মের জন্য মাফ চায়। এদিকে, ঈদের ছুটিতে মেয়ের স্বামী ঢাকা হতে বাড়িতে আসে। তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। স্বামীকে সরাসরি জানিয়ে দেয় সে সোহাগ মোল্লার সাথে সংসার করবে। পরিবারের পক্ষ হতে বিষয়টি শিশু কানন বিদ্যা নিকেতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর শিশু কানন বিদ্যা নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘একজন শিক্ষকের অনৈতিকতা কোন ভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সোহাগ মোল্লার বিরুদ্ধে এক ছাত্রীর মায়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক এবং স্কুলের ছাত্রীদের শরীরে তার হাত রাখা বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে প্রচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুমতি ছাড়া কারো ছবি প্রকাশ করা আইনে নিষেধ। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের গোপনীয়তা রক্ষা করা বাঞ্চণীয়। অভিযোগ পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর শিক্ষক সোহাগ মোল্লাকে গত ২৩ আগস্ট সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু সে নিজের দোষ গোপন রেখে কৌশলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রভাবশালীদের আবেগীয়ভাবে প্রভাবিত করে স্কুলে অবস্থান করছে। ’চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’