শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকে অস্থিতিশীল করছে যুক্তরাজ্য : অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ;   * ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’   * বাল্যবিবাহের কারণে বাড়ছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন   * চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শরীফ বলী;   * ঢাকা,চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান ;   * গাজীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অগ্নিকাণ্ড   * কক্সবাজারের টেকনাফে ধরা পড়ল ৪০০ কেজি ওজনের তলোয়ার মাছ   * মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা ও বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর   * ট্রাকচাপায় সড়কে ঝড়ল অটোরিকশা চালকের প্রাণ   * ৭নং ওয়ার্ডে এনজিও সংস্থা প্রত্যাশী এর সেমিনার অনুষ্ঠিত ;  

   প্রবন্ধ
পরিবর্তিত জলবায়ু ও আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা
  Date : 01-10-2017

ড. মুহা: শফিকুর রহমান

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারনে সামগ্রিকভাবে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের কৃষি তথা সার্বিক জীবনযাত্রার উপরে। ভৌগলিক অবস্থান, জনসংখ্যার আধিক্য, আর্থসামাজিক অবস্থার কারনে জলবায়ুর পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বিপদাপন্ন দেশ হিসেবে পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তন এমন একটি বিষয়, যা সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করতে পারে। পৃথিবী সৃষ্টির আদিকাল থেকে পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ু। এর প্রভাব পড়েছে পরিবেশ ও মানুষের উপরেপরিবেশ, মানুষ ও জলবায়ু অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে আন্ত:সম্পর্কযুক্ত। আমাদের কৃষির সাথেও পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ুর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কৃষিক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে পরিবর্তিত পরিবেশে বদলে যাচ্ছে এদেশের খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থা। কৃষিতে সূর্যের আলো, তাপমাত্রা, বাতাসের আদ্রতার মৌসুমভিত্তিক পরিবর্তনের সাথে ফসলের ধরন, জাত, চাষ পদ্ধতি, উৎপাদনশীলতা নির্ধারিত হয়ে থাকে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের সময় ও পরিমানে তারতম্য ঘটছে এবং এর প্রভাব পড়ছে ফসলের উৎপাদনশীলতার উপর। এ কারণে দেশে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়ছে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা। বাংলাদেশের কৃষি মূলত আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতি নির্ভর হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মাত্রাও কৃষিখাতে সবচেয়ে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অসম বৃষ্টিপাত, বন্যা, ভুমিক্ষয়, জলবায়ু, শুষ্ক মৌসুমে অনাবৃষ্টি, উপকুলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি, শীত মৌসুমে হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহ, খরা, টর্নেডো, সাইক্লোন, জলোচ্ছাসের প্রভাবে প্রাদূর্ভাব ও মাত্রা বৃদ্ধি, আকস্মিক বন্যা ও এ দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে ক্রমাগত বিপর্যস্ত করে যা মানব কল্যান ও জনগোষ্ঠির টেকসই জীবনযাত্রা এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিরূপ পরিস্থিতির সাথে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার সামঞ্জস্য বিধান করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কৃষিকে মুক্ত রাখা বা ঝুঁকি কমানো, দূর্যোগমুক্ত সময়ে শস্য বহুমূখীকরন পুষিয়ে নেয়া বিশেষ ভাবে বিবেচ্য। এ রকম পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও দূর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বাস্তবায়ন করতে হলে প্রয়োজন বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য উপাত্ত এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন উপযোগি কলাকৌশল ও সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট কারণ। প্রাকৃতিক কারনগুলোর মধ্যে রয়েছে তাপমাত্রার হ্রাসবৃদ্ধি, মহাসাগরে উত্তাপ শক্তির পরিবর্তন, সুমদ্র স্রোতের পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরির দূষন, লানিনো এবং এলনিনোর প্রভাব ইত্যাদি। মনুষ্য সৃষ্ট কারনগুলোর মধ্যে- শিল্প বিপ্লবের পর ঊনবিশংশ শতাব্দীর সূচনালগ্ন থেকে জীবাশ্ম জালানীর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া, বন উজাড়, জৈবিক পচন, কৃষিক্ষেত্রে সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারসহ বহুবিধ কারনে বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন প্রকার গ্যাস বিশেষ করে কাবন-ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, এবং গ্রীনহাউজ গ্যাসের পরিমান বেড়ে যাওয়ায় সূর্য থেকে আগত তাপ রশ্মিকে পুনরায় মহাকাশে প্রতিফলিত হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে। ফলে পৃথিবী ক্রমাগত উষ্ণ হচ্ছে। আইপিসির (ওহঃবৎ মড়াবৎহসবহঃ ঢ়ধহবষ ড়হ পষরসধঃব পযধহমব) সমীক্ষা অনুযায়ী বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি। আইপিসির পঞ্চম সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্ব তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলে ফসল উৎপাদন, পানির প্রাপত্যা, জীব বৈচিত্র, তাপ প্রবাহ, অতিবৃষ্টি, উপকূলীয়, জলোচ্ছাস ইত্যাদির উপর প্রভাব পড়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা একবিংশ শতাব্দীর শেষে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করবে ও বিশ্ব পানি চক্রে অসমতা পরিলক্ষিত হবে।

আশংকা করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে ২০৩০ সাল নাগাদ গড় তাপমাত্রা ১.০ ডিগ্রী, ২০৫০ সালে ১.৪ ডিগ্রী এবং ২১০০ সালে ২.৪ ডিগ্রী বেড়ে যেতে পারে। সম্প্রতি দেশে উষ্ণ ও শৈত্য প্রবাহের মাত্রা বেড়েছে। বাংলাদেশের ক্রমান্বয়ে শীতকালীন ব্যাপ্তি ও শীতের তীব্রতা দুই-ই কমে আসছে। বেশির ভাগ রবি ফসলেরই স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে ফসলের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এছাড়া শীত মৌসুমে উষ্ণ প্রবাহ দেখা দিলে বেশি সংবেদনশীল ফসল যেমন গমের ফলন খুব কমে যায় এবং উৎপাদন অলাভজনক হয়। শৈত্য প্রবাহের সাথে দীর্ঘ সময় কুয়াশাচ্ছন্ন থাকলে অনেক ফসল বিশেষ করে গমের পরাগায়ন ও গর্ভধারন (ফার্টিলাইজেশন) না হওয়ায় আংশিক বা সম্পূর্ণ ফসল চিটা হয়ে যায় এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। এছাড়া প্রজাতি বৈচিত্র কমতে পারে ও প্রজননে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

ধানের ফুল ফোঁটা বা পরাগায়নের সময় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তার উপরে গেলে চিটার সংখ্যা বেড়ে যেয়ে শিষে ধানের সংখ্যা কমে যেতে পারে। যা ধানের ফলনকে কমিয়ে দেবে। ধানের প্রজনন পর্যায়ে বাতাসের গড় তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে ধানগাছের অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ও অতিরিক্ত চিটা হয় ও ফলনের মারাত্বক প্রভাব পড়ে।

এ কথা অবশ্য স্বীকার্য যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবে পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর কৌশল অবলম্বন করতে হবে। বৈরী জলবায়ুর ( বন্যা, খরা, লবনাক্ততা, জলাবদ্ধতা, অধিক তাপ সহিষ্ণু) সাথে খাপ খাওয়ানোর মতো উচ্চ ফলনশীল ফসলের নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং এগুলোর চাষাবাদ বাড়াতে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে। নতুন শষ্য পর্যায় ও অভিযোজন কৌশলের উপর ব্যাপক গবেষনা জোরদার করতে হবে।

অভিযোজন কৌশল ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে সরকারের নীতি নির্ধারক থেকে শুরু করে কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতা বাড়াতে হবে। লবন সহিষ্ণু, বন্যা সহিষ্ণু, খরা সহিষ্ণু, ঠান্ডা ও তাপ সহিষ্ণু, আলোক সংবেদনশীল ধানসহ বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন করে ভবিষ্যত কৃষিকে টেকশই করার জন্য অগ্রাধিকার ভিক্তিতে কৃষিকে যান্ত্রিকিকরন করা প্রয়োজন।

পরিশেষে বলা যায়, দেশের প্রতিটি উপজেলায় জলবায়ু ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করে কৃষি, খাদ্য ও অবকাঠামোসহ সবগুলো বিষয় নিয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা, গবেষনার মাধ্যমে বৈরী জলবায়ুর সাথে অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তার স্বত:স্ফূর্ত বাস্তবায়ন ঘটানোর মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

লেখক: পরিবেশ চিন্তক




  
  সর্বশেষ
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকে অস্থিতিশীল করছে যুক্তরাজ্য : অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ;
ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
বাল্যবিবাহের কারণে বাড়ছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শরীফ বলী;

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308