মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন:
আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ। বিলুপ্তপ্রায় ইলিশ মাছের গৌরব ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। এক সময় আমাদের দেশে ইলিশের প্রাচুর্য ছিল। বাজারে গেলেই ইলিশের ছড়াছড়ি দেখা যেত। কিন্তু আশির দশকের পর থেকে ইলিশের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমতে থাকে এবং বিলুপ্তপ্রায় অবস্থা হয়। এ বছর আবার সেই পূর্ব গৌরবে ইলিশের সাগরে ভাসছে বাংলাদেশ। মনে হচ্ছে সরকারের জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি পুরোপুরি সফল হয়েছে।
মানবাধিকার খবরের অনুসন্ধানে জানা যায় প্রতিদিন ৩-৪ টি ঘাটেই গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার মণ ইলিশ বেচা-কেনা হচ্ছে। পাইকারী বাজারে বড় সাইজ (এক কেজি) ইলিশের হালি ক’দিন আগেও সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। সেই মাছ এখন ২ থেকে তিন হাজার টাকায় হালি (৪টি) বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাড়ে ৩’শ থেকে সাড়ে ৫’শ গ্রামের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। ৬’শ থেকে সাড়ে ৮’শ গ্রামের ৪টি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪’শ থেকে ১৯’শ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে দাম একটু বেশি বলে জানা ক্রেতারা।
এ বছর পদ্মা, মেঘনা, ভৈরব ইত্যাদিসহ আরো উপকূলবর্তী নদীর মোহনার এলাকা হিসেবে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, খুলনা ইত্যাদি স্থানে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা পড়তে দেখা গেছে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ৯১ হাজার টন। এর পরিমাণ ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল তিন লাখ ১৩ হাজার টন, ২০১০-১১ অর্থবছরে তিন লাখ ৪০ হাজার টন ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে তিন লাখ ৫১ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিন লাখ ৮৭ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছর এর উৎপাদন আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে মাছের আমদানি কম থাকায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছিল। কিন্তু মৌসুমের এ সময় ইলিশের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় সবার মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষই তাদের স্বাদ, সঙ্গতি ও সাধ্যের মধ্যে ইলিশ মাছ কিনে খেতে পারছে।
ইলিশ মাছ মূলত লবণাক্ত পানির মাছ। কিন্তু তার প্রজননসহ অন্যান্য জীবনচক্রেও কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করতে স্বাদু বা মিঠা পানির প্রয়োজন পড়ে। তাই, সমুদ্রেও লোনাপানিতে বড় হয়ে যখন পেটে ডিম হয় তখন স্বাদু পানিতে ডিম ছাড়ার জন্য চলে আসে। আর নদীর মোহনায় ¯্রােতের তোড়ে পানি যেখানে ঘোলা হয়ে যায়, সেই ¯্রােতস্বিনী ঘোলা পানিই মূলত ইলিশ মাছের ডিম ছাড়ার উপযুক্ত স্থান। তখন সেই ¯্রােতের মধ্যে ডিম ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়ই এরা আসলে শিকারিদের জালে ধরা পড়ে।
বাংলাদেশের এ রুপালি ইলিশের পার্শ্ববর্তী ভারত, মিয়ানমারসহ ইউরোপ ও আমেরিকায় ব্যাপক কদর রয়েছে। যে প্রাপ্তির প্রাচুর্য, স্বাদ ও গন্ধের জন্য ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছের গৌরব অর্জন করেছিল, সেটি অনেকাংশেই দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুচে যাবার পথে ছিল।
বর্তমান সরকার ইলিশের ঐতিহ্য ফেরানোর জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। তার মধ্যে জাটকা নিধন বন্ধ করা, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে ধরা বন্ধ করা, ইলিশের রফতানি কিছুদিন বন্ধ রাখা, সাগর ও নদীর মোহনায় ইলিশের অভয়ারণ্য নির্ধারণ করা ইত্যাদি। দেখা গেছে, এসব ইতিবাচক কার্যক্রমের ফলেই এ বছর সারা দেশে ইলিশের ছড়াছড়ি চলছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে যদি এসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তবে প্রতিবছরই ইলিশ মাছ এভাবেই সবার জন্য সহজলভ্য হবে। এতে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে পরিচিত ইলিশের হারানো গৌরব ফিরতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। মাছে এমনিতেই আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছি।
প্রতি বছর ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকার সময় জেলেদের পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান করে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের ইলিশ রক্ষার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হবে।’
ইলিশের হাইলাইট: এবছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ইলিশ রক্ষায় প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে অভিযানের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধন্ত নেওয়া হয়েছে।