মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন:
১৫ আগস্ট। বাঙালির ইতিহাসের একটি জঘন্যতম দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। সে সময় যারা চার বছর বয়সী শিশু বাংলাদেশ নামের নবীন রাষ্ট্রটির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল, তারা সফল হয়নি। বরং নিক্ষিপ্ত হয়েছে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। তবু এই বিয়োগান্ত ঘটনায় জাতির অস্তিত্ব ও মননে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনো পুরো উপশম করা সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- বাংলাদেশকে এর মৌলনীতি ও প্রত্যয় থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। ১৫ আগস্ট এখন সরকারিভাবে জাতীয় শোক দিবস। প্রতিবছর ১৫ আগস্টে আমাদের মন বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়। এই দিনে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজনসহ ১৫ আগস্টে নিহত সবার স্মৃতির প্রতি মানবাধিকার খবরের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং সবার আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করি।
শান্তনার কথা হলো অনেক বাধা-বিপত্তির পেরিয়ে দেরিতে হলেও ইতিহাসের জঘন্যতম ও কলঙ্ক জনক এই হত্যাকা-ের বিচার হয়েছে। খুনিদের অধিকাংশের দ- কার্যকর করার মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। গ্লানিমুক্ত হয়েছে বাঙালি জাতি। এখনো যারা পলাতক রয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে এই পর্বটির ইতি টানা প্রয়োজন; যদিও গত সাড়ে তিন বছরে এ ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন একটি সুখী-সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান ও সাধনা। বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাঁর অসীম সাহসী নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়, তার প্রধান প্রেরণাও ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন বঙ্গবন্ধু নতুন করে গড়ে তোলার কাজে ব্রতী হন, তখনই দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এই ষড়যন্ত্র কেবল ব্যক্তি মুজিবের বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও তাঁর আদর্শের বিরুদ্ধে। দুঃখজনকভাবে ষড়যন্ত্রকারীরা দুই ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে।
জাতীয় শোকের মাসে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি এই মহান নেতাকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমরা মনে করি, তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে, যে সুখী, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, তার বাস্তব রূপ দেওয়া। এমন একটি দেশ গড়ে তোলা, যেখানে স্বাধীনতার মূল চেতনা বাস্তবায়িত হবে এবং ধর্মগোত্রনির্বিশেষে সব মানুষ সম-অধিকার ভোগ করবে। গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই সেই কাজটি করা সম্ভব।
বঙ্গুবন্ধু যেহেতু একজন মানুষ, সেহেতু বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে তাঁর অনন্য ও সাহসী ভূমিকা অস্বীকার করা বাংলাদেশকে অস্বীকার করারই শামিল। তাই, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এই মহান স্থপতিকে আমাদের স্মরণ করতে হবে জাতীয়ভাবে, সব সংকীর্ণতা ও দলীয় গ-ির বাইরে গিয়ে। আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধুকে তাদের দলীয় সম্পদ ও তাঁকে এককেন্দ্রীক করে ফেলার জন্য যে পরিমান বাড়াবাড়ি করেন তাও ঠিক নয়। আওয়ামীলীগ তথা বর্তমান সরকারেরও এটা কোন ভাবেই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, বঙ্গবন্ধু একক ভাবে কোনো ব্যক্তি বা দলের নন, তিনি সমগ্র জাতির, সবার।
