চট্টগ্রামে কালুরঘাট সেতু নির্মাণে বিদেশি দাতা সংস্থার সঙ্গে আগামী জুনে ঋণ চুক্তি হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি ) সরদার সাহাদাত আলী। শনিবার পূর্ব রেলের সদর দপ্তর চট্টগ্রামের সিআরবিতে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমরা দাতা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেতুর জন্য ১২ হাজার কোটি টাকার মত লাগবে। সরকারি তহবিল ৪ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা দেবে দাতা সংস্থা। “কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক কথা দিয়েছে। তারা আগামী জুনে সরকারের সঙ্গে ঋণচুক্তি করতে চায়।” চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই কালুরঘাট সেতু। মেরামতের জন্য গত বছরের ১ অগাস্ট সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করা হয়। আগামী জুনে মেরামত কাজ শেষ হতে পারে। সড়ক পথের সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি এ সেতু দিয়ে ট্রেনও চলে। প্রায় শতবর্ষী এ সেতু ছিল কক্সবাজারের পথে রেল চালুর ক্ষেত্রে মাথাব্যথার বড় কারণ। সেজন্যই সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় রেল কর্তৃপক্ষ।কর্ণফুলীর ওপারের বোয়ালখালীর অনেকে প্রতিদিন নদী পার হয়ে শহরে আসে। শহর থেকেও অনেকে যান বোয়ালখালীতে। সেতুর বিকল্প হিসেবে ফেরির মাধ্যমে পারাপার হতে হচ্ছে।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতু সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। ১৯৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। পরের বছর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা। ২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত এই সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণে এটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফা সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। সে সময়ও অন্যান্য যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চালু করা হয়েছিল। প্রায় শতবর্ষী এই সেতুর স্থলে আরেকটি নতুন রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দারা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আলাদা ট্রেন চালুর দাবিও জানিয়ে আসছে চট্টগ্রামের মানুষ। রেলওয়ের মহাপরিচালক বলেন, “আমরা নীতিগতভাবে একমত; চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন দিতে হবে। এই দাবিতে আমাদের কোনো ‘না’ নেই। সমস্যা হচ্ছে জনবল ও ইঞ্জিন সংকট।
“সে ক্ষেত্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কনটেইনারবাহী একটি ট্রেন কম চালাতে হবে। কারণ আমার ইঞ্জিন আছে, বগি আছে, কিন্তু চালক নেই। আমরা নিয়োগ দিচ্ছি- কিন্তু অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে প্যানেল সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। চুক্তিতেও পুরনো লোকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।”
পূর্ব রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মােঃ জানে আলম সাকী,
ব্যুরো চীফ, চট্টগ্রাম।