শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, হুঁশিয়ারি সংকেত   * মাদক কারবারে ককস বাজারের সাবেক এমপি বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি   * দিশেহারা সুগন্ধা দাশের পাশে দাঁড়াল চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসন   * আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ;   * আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ;   * রশিদ মিয়া কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান ;   * কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে যে সকল প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন;   * বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলো মিয়ানমারের ৯ বিজিপি সদস্য   * ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দুর্গম সীমান্তে বিজিবি মহাপরিচালক   * টানা ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে লাখ লাখ পর্যটক, হোটেলে কক্ষ না পেয়ে ভোগান্তি  

   জাতীয়
বাংলাদেশ প্রশংসিত প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক বিধানগুলো নিয়ে উদ্বেগ
  Date : 13-06-2018

 

॥মানবাধিকার খবর প্রতিবেদন ॥
মানবাধিকার পর্যালোচনায় রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশ প্রশংসিত প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক বিধানগুলো নিয়ে উদ্বেগ। আগামী নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার তাগিদ। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং সেগুলোর বিচারহীনতার বিষয়টি এবার জাতিসংঘ ফোরামে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনায় সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে। এ ছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ওপর হামলা ও হুমকি, ভিন্নমতের অনুসারীদের রাজনৈতিক অধিকার, নারীর প্রতি সহিংসতা, বাল্যবিবাহ নিরোধের মতো বিষয়গুলোও আলোচনায় প্রাধান্য পায়।
১৪ তারিখ সোমবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনা বা ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউর তৃতীয় দফার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে আগামী নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ এবং অর্ন্তভুক্তিমূলক করার তাগিদ এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, জাপানসহ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা অবাধ, স্বচ্ছ এবং সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সভায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশ সবার প্রশংসা পেয়েছে। আলোচনায় ৯৫টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। লক্ষণীয়ভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বৌদ্ধপ্রধান জনসংখ্যার দেশগুলো (যেমন জাপান, চীন ও থাইল্যান্ড) মিয়ানমার থেকে আগতদের ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয় ব্যবহার করেনি এবং তারা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিয়েছে।
প্রায় কুড়িটির মতো দেশের প্রতিনিধিরা গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসব বেআইনি কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তের সুপারিশ করেন। জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যে মাত্রায় গুমের কথা বলা হচ্ছে তাতে আপত্তি আছে। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় ইউপিআরে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে গুম বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। আনিসুল হক এবার তা পুরোপুরি নাকচ না করে বলেন, গুম সম্পর্কে মাত্রাতিরিক্ত অপপ্রচারের রাজনৈতিক কারণ রয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ গুম হয়েছেন বলা হলেও তাঁকে ভারতে পাওয়া গেছে। হুম্মাম কাদের চৌধুরী, মুবাশ্বির হাসান, সাংবাদিক উৎপল দাসসহ অনেকেই ফিরে এসেছেন, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে সেগুলোকে গুম বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী জাতিসংঘের গুমবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে সহযোগিতা করার কথাও বলেছেন।
বিচারবহির্ভূত হত্যা বা যেকোনো ধরনের আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি সরকার শূন্য সহনীয়তার নীতি অনুসরণ করে বলে মন্ত্রী জানান। এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার বিচারের নজির তুলে ধরেন তিনি।
রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অধিকার ও নির্বাচনবিষয়ক উদ্বেগের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর জন্য বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণহানির কথা উল্লেখ করেন। ২০১৫ সালেও অবরোধ-হরতালের নামে ১০৮ জন নিহত হওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
সভায় সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর হামলা, হয়রানি ও হুমকির কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকোচনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অনলাইন-অফলাইন সব জায়গায় এসব বাধা দূর করার আহ্বান জানান। সবাই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা এবং প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক বিধানগুলো বাতিলের কথা বলেন। আইনমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, ৫৭ ধারা অপপ্রয়োগের অভিযোগ ওঠায় তা বাতিল করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারা নিয়ে আপত্তি উঠেছে, সেগুলো নিয়ে সরকার সবার সঙ্গে আলোচনা করছে।
গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতার প্রশ্নে আইনমন্ত্রী দেশে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা গত পাঁচ বছরে ১৮ থেকে বেড়ে ৩৪ হওয়া এবং সংবাদপত্রের সংখ্যা ২ হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষায় সরকার দেশে প্রায় ৫০০ বিশিষ্টজনকে সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা দিচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সব ধরনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নটিও বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সভায় উত্থাপন করেন। সমকামিতা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার যে আইন রয়েছে, সেটিও সংশোধনের সুপারিশ করেছে বেশ কয়েকটি দেশ। ইউপিআরে অংশগ্রহণকারীরা বাল্যবিবাহ নিরোধক আইনে বিশেষ পরিস্থিতিতে ছাড় দেওয়ার বিধান বাতিল করে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার কথা বলেছেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপরাধের অভিযোগ তদন্তে কমিশনকে ক্ষমতায়িত করার ওপর জোর দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। সভায় এ বিষয়ে ব্যাপক সমর্থন লক্ষ করা যায়। মানবাধিকারকর্মীদের কাজ নির্বিঘ্ন করতে তাঁদের সুরক্ষা দেওয়া, তাঁদের ওপর বিভিন্ন হামলা ও হয়রানির অভিযোগ তদন্ত করা এবং বিদেশি অনুদান আইন সংশোধনেরও জোরালো আহ্বানের কথা শোনা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি অনুদান আইন ব্যবহার করে বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রমকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
আইনমন্ত্রী অবশ্য এ অভিযোগের জবাবে বলেছেন, অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ, কালোটাকা সাদা করা এবং সন্ত্রাসের অর্থায়ন বন্ধের লক্ষ্যেই বিদেশি অনুদান আইন করা হয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ বা স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ারদের বাংলাদেশ সফরের সুযোগ দেওয়ার জন্য অনেক দেশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হলেও আইনমন্ত্রী বিষয়টিতে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ারদের অনুরোধ প্রায় এক দশক ধরে সিদ্ধান্তহীনভাবে পড়ে আছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের যেসব সনদ বা ঘোষণা ও নীতিমালা এবং আনুষঙ্গিক বা অতিরিক্ত প্রটোকল বাংলাদেশ এখনো অনুমোদন করেনি, সেগুলো গ্রহণের আহ্বানের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নয়টি সনদের আটটিতে স্বাক্ষর করেছে। অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক দায় গ্রহণের আগে এখন প্রয়োজন সক্ষমতা ও সামর্থ্য বাড়ানো।
আলোচনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন শাক্তিশালী করার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক। ইউপিআরে গুমের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে যেকোনো নাগরিক নিখোঁজ অথবা গুম হলে তাঁকে উদ্ধার এবং রহস্য উন্মোচনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। যাঁরা ফিরে এসেছেন বলা হচ্ছে, তাঁদের বেলায় কী ঘটেছিল তা এখনো জানা যায়নি এবং কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে সেই অপরাধীরও বিচার হয়নি।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজ ‘আমরা এমন ঘটনাও দেখেছি, নিখোঁজ থেকে হাজির করে অনেককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বেরিয়ে আসার পর সরকারের পক্ষ থেকে এমন কথাও বলা হয়েছে যে সরকার কাজ করেছে বলেই তারা বেরিয়ে এসেছে। এসব কথাবার্তায় অসংলগ্নতা স্পষ্ট।’
গুমবিষয়ক সনদ স্বাক্ষর প্রশ্নে ঢাকার অসম্মতি
গুম থেকে সবার সুরক্ষার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে বেশ কয়েকটি দেশের সুপারিশ গ্রহণে বাংলাদেশ সম্মত হয়নি। এ ছাড়া নির্যাতন ও অমানবিক শান্তি বন্ধের স্বেচ্ছামূলক অঙ্গীকারের দলিল (অপক্যাট), অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক অতিরিক্ত অঙ্গীকার এবং রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারবিষয়ক স্বেচ্ছামূলক অঙ্গীকারের দুটি দলিল স্বাক্ষরের বিষয়েও একই রকম সুপারিশ গ্রহণে বাংলাদেশ রাজি হয়নি। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড বিলোপবিষয়ক। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনা, যা ইউপিআর নামে পরিচিত, তার তৃতীয় দফা পর্যালোচনা সভায় এসব সুপারিশ উঠে আসে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে জেনেভায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১০৫টি দেশের প্রতিনিধি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এসব সুপারিশ করেন।
সভায় উত্থাপিত সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় এগুলোর একটি খসড়া প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত খসড়ায় দেখা যায়, ১৬৭টি সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশের সম্মতি রয়েছে। ২৩টি সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশ তার মতামত জানানোর জন্য সময় নিয়েছে, যা ইউপিআরের পরবর্তী অধিবেশনের মধ্যেই জানাতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে ইউপিআরের পরবর্তী সভার কথা আছে। ৬১টি সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশের অসম্মতির কথা এই খসড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো সংখ্যায় অনেক হলেও বিষয় ও করণীয় বিবেচনায় অনেকগুলোই পুনরাবৃত্তি।
পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগগুলো তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে যে সুপারিশ এসেছে, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সে বিষয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় চেয়েছে। মতামত জানাতে সময় নেওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে আরও আছে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি আইনের খসড়া সংশোধন, সংখ্যালঘুদের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা, বাল্যবিবাহ নিরোধক আইনে বিশেষ ছাড় দেওয়ার বিধি, কিশোরদের অপরাধের জন্য দায়ী করার ক্ষেত্রে বয়সসীমা বাড়ানো, দাম্পত্য জীবনে ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, নারী-পুরুষের মজুরিবৈষম্য দূর করার মতো বিষয়গুলো। মীর আহমেদ বিন কাসেম এবং আমান আজমীর গুমের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের তথ্য জানানোসহ নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগ তদন্ত ও বিচারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপারিশের বিষয়েও বাংলাদেশ সম্মত হয়নি।
যেসব সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশ অসম্মতি জানিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে গুমবিষয়ক সনদ ও ওপরে উল্লেখিত স্বেচ্ছামূলক অতিরিক্ত অঙ্গীকারের দলিল ছাড়াও আছে ১৯৫১-এর উদ্বাস্তুবিষয়ক সনদ, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকারবিষয়ক আইএলও সনদ ১৩৮,১৩৯ ও ১৮৯, শিশুশ্রম নির্মূলবিষয়ক সনদ, নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য অবসানের আইন, নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এখতিয়ার বাড়ানো, সমকামীদের সুরক্ষা এবং সে জন্য ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, মৃত্যুদন্ড বিলোপ করার লক্ষ্যে সব ধরনের ফাঁসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, মানহানির অভিযোগের ফৌজদারি দায় বাতিল, উদ্বাস্তু ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের বিচারলাভের অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
যেসব বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যক্রম এবং ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো, জাতীয় পর্যায়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, মানবাধিকার আন্তর্জাতিক সনদগুলোর সঙ্গে দেশীয় আইনগুলোর সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা ত্বরান্বিত করা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের বিষয়ে দ্বিতীয় ইউপিআরের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন,
পার্বত্য চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণ বাস্তবায়ন, মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করা, প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের হয়রানি ও হুমকির ঘটনাগুলো তদন্ত এবং তাদের সুরক্ষা, এ বিষয়ে পুলিশকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া, বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ জোরদার করা,
ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ, অনলাইন-অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা,
শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকারসহ সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীর জন্য গণতান্ত্রিক সুযোগ নিশ্চিত করা সম্পর্কিত সুপারিশ।
পড়ে আছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের যেসব সনদ বা ঘোষণা ও নীতিমালা এবং আনুষঙ্গিক বা অতিরিক্ত প্রটোকল বাংলাদেশ এখনো অনুমোদন করেনি, সেগুলো গ্রহণের আহ্বানের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নয়টি সনদের আটটিতে স্বাক্ষর করেছে। অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক দায় গ্রহণের আগে এখন প্রয়োজন সক্ষমতা ও সামর্থ্য বাড়ানো।
আলোচনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন শাক্তিশালী করার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক। ইউপিআরে গুমের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে যেকোনো নাগরিক নিখোঁজ অথবা গুম হলে তাঁকে উদ্ধার এবং রহস্য উন্মোচনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। যাঁরা ফিরে এসেছেন বলা হচ্ছে, তাঁদের বেলায় কী ঘটেছিল তা এখনো জানা যায়নি এবং কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে সেই অপরাধীরও বিচার হয়নি।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজ ‘আমরা এমন ঘটনাও দেখেছি, নিখোঁজ থেকে হাজির করে অনেককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বেরিয়ে আসার পর সরকারের পক্ষ থেকে এমন কথাও বলা হয়েছে যে সরকার কাজ করেছে বলেই তারা বেরিয়ে এসেছে। এসব কথাবার্তায় অসংলগ্নতা স্পষ্ট।’
গুমবিষয়ক সনদ স্বাক্ষর প্রশ্নে ঢাকার অসম্মতি
গুম থেকে সবার সুরক্ষার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে বেশ কয়েকটি দেশের সুপারিশ গ্রহণে বাংলাদেশ সম্মত হয়নি। এ ছাড়া নির্যাতন ও অমানবিক শান্তি বন্ধের স্বেচ্ছামূলক অঙ্গীকারের দলিল (অপক্যাট), অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক অতিরিক্ত অঙ্গীকার এবং রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারবিষয়ক স্বেচ্ছামূলক অঙ্গীকারের দুটি দলিল স্বাক্ষরের বিষয়েও একই রকম সুপারিশ গ্রহণে বাংলাদেশ রাজি হয়নি। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড বিলোপবিষয়ক। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনা, যা ইউপিআর নামে পরিচিত, তার তৃতীয় দফা পর্যালোচনা সভায় এসব সুপারিশ উঠে আসে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে জেনেভায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১০৫টি দেশের প্রতিনিধি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এসব সুপারিশ করেন।
সভায় উত্থাপিত সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় এগুলোর একটি খসড়া প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত খসড়ায় দেখা যায়, ১৬৭টি সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশের সম্মতি রয়েছে। ২৩টি সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশ তার মতামত জানানোর জন্য সময় নিয়েছে, যা ইউপিআরের পরবর্তী অধিবেশনের মধ্যেই জানাতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে ইউপিআরের পরবর্তী সভার কথা আছে। ৬১টি সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশের অসম্মতির কথা এই খসড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো সংখ্যায় অনেক হলেও বিষয় ও করণীয় বিবেচনায় অনেকগুলোই পুনরাবৃত্তি।
পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগগুলো তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে যে সুপারিশ এসেছে, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সে বিষয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় চেয়েছে। মতামত জানাতে সময় নেওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে আরও আছে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি আইনের খসড়া সংশোধন, সংখ্যালঘুদের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা, বাল্যবিবাহ নিরোধক আইনে বিশেষ ছাড় দেওয়ার বিধি, কিশোরদের অপরাধের জন্য দায়ী করার ক্ষেত্রে বয়সসীমা বাড়ানো, দাম্পত্য জীবনে ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, নারী-পুরুষের মজুরিবৈষম্য দূর করার মতো বিষয়গুলো। মীর আহমেদ বিন কাসেম এবং আমান আজমীর গুমের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের তথ্য জানানোসহ নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগ তদন্ত ও বিচারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপারিশের বিষয়েও বাংলাদেশ সম্মত হয়নি।
যেসব সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশ অসম্মতি জানিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে গুমবিষয়ক সনদ ও ওপরে উল্লেখিত স্বেচ্ছামূলক অতিরিক্ত অঙ্গীকারের দলিল ছাড়াও আছে ১৯৫১-এর উদ্বাস্তুবিষয়ক সনদ, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকারবিষয়ক আইএলও সনদ ১৩৮,১৩৯ ও ১৮৯, শিশুশ্রম নির্মূলবিষয়ক সনদ, নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য অবসানের আইন, নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এখতিয়ার বাড়ানো, সমকামীদের সুরক্ষা এবং সে জন্য ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, মৃত্যুদন্ড বিলোপ করার লক্ষ্যে সব ধরনের ফাঁসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, মানহানির অভিযোগের ফৌজদারি দায় বাতিল, উদ্বাস্তু ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের বিচারলাভের অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
যেসব বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যক্রম এবং ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো, জাতীয় পর্যায়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, মানবাধিকার আন্তর্জাতিক সনদগুলোর সঙ্গে দেশীয় আইনগুলোর সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা ত্বরান্বিত করা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের বিষয়ে দ্বিতীয় ইউপিআরের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন,
পার্বত্য চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণ বাস্তবায়ন, মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করা, প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের হয়রানি ও হুমকির ঘটনাগুলো তদন্ত এবং তাদের সুরক্ষা, এ বিষয়ে পুলিশকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া, বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ জোরদার করা,
ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ, অনলাইন-অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা,
শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকারসহ সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীর জন্য গণতান্ত্রিক সুযোগ নিশ্চিত করা সম্পর্কিত সুপারিশ।

 



  
  সর্বশেষ
৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, হুঁশিয়ারি সংকেত
মাদক কারবারে ককস বাজারের সাবেক এমপি বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি
দিশেহারা সুগন্ধা দাশের পাশে দাঁড়াল চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসন
আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ;

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308