শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকে অস্থিতিশীল করছে যুক্তরাজ্য : অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ;   * ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’   * বাল্যবিবাহের কারণে বাড়ছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন   * চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শরীফ বলী;   * ঢাকা,চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান ;   * গাজীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অগ্নিকাণ্ড   * কক্সবাজারের টেকনাফে ধরা পড়ল ৪০০ কেজি ওজনের তলোয়ার মাছ   * মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা ও বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর   * ট্রাকচাপায় সড়কে ঝড়ল অটোরিকশা চালকের প্রাণ   * ৭নং ওয়ার্ডে এনজিও সংস্থা প্রত্যাশী এর সেমিনার অনুষ্ঠিত ;  

   পর্যটন
ভারত ভ্রমণের দিনলিপি
  Date : 13-06-2018


বিশ্ব পর্যটন
ভারত ভ্রমণের দিনলিপি
ভারত উপমহাদেশ, আসলে মনে হয় মহাদেশ।
ভারত ভ্রমণ করলেই পৃথিবী ভ্রমণ হয়ে গেল। লেখকের বইটি পড়ে আবার আমার ভ্রমণ তৃষ্ণা জেগে উঠেছে। যেতে ইচ্ছে করছে আবার আগ্রা, আগ্রার তাজমহল, আজমির, যমুনা, বৃন্দাবন, পুরী, কোণারক, ভুবনেশ্বর, ব্যাঙ্গলোর, হায়দরাবাদ, মুম্বাই, দিল্লি। অনেক জায়গার নাম শুধু পড়েছি, যাইনি। যাওয়ার সময়ও শেষ। তাই পরিব্রাজকের বই নিয়ে বসলাম। তাতেও ভ্রমণের সাধ মেটে বৈকি। ১৬১ পৃষ্ঠার বইটি পড়তে লাগল কয়েক ঘণ্টা সময়, তার চেয়ে অনেক বেশি মাস-বছর-সময় লাগত ভ্রমণে। কি ভাগ্য, বিনা খরচে সব দেখা হয়ে যায় বই পড়ে।
লেখকের বর্ণনায় কলকাতায় প্রথম গেলাম। ময়দানের পাশেই হাজির হলাম ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে, যেটি বাংলা ভাষার জন্মকেন্দ্র, ১৮০০ থেকে ১৮৫৪ ভাষার যখন ক্রমবিবর্তন চলেছে। ওখানেই কয়েকটি দিন কাটিয়ে দেয়া যায়, চিনে নেয়া যায় কীভাবে সমাজ বিবর্তিত হয় শিক্ষার কল্যাণে। টিপু সুলতানের হত্যাকাণ্ডের এক বছর পর স্থাপিত ফোর্ট উইলিয়াম। উদ্দেশ্য ভাষার প্রসার। আসলে তা নয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসারদের ভারতীয় ভাষার শিক্ষার জন্যে প্রতিষ্ঠিত ওই কলেজটি। এখানে শিক্ষকতা করেছেন— মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রামনাথ বাচস্পতি, তারিনি চরণ মিত্র, রামরাম বসু, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। কাজের ভাষা ছিল ফারসি। আর মুসলমানদের শিক্ষা ছিল আরবি, ফারসি। ব্রাহ্মণ পন্ডিতেরা পড়াতেন সংস্কৃত, কারণ বাংলা ছিল নিচু স্তরের ভাষা। বাংলার অধ্যাপকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের উইলিয়াম কেরি। বাইবেলের প্রথম বাংলা অনুবাদ করলেন তিনি। ১৮০১ সালে উইলিয়াম কেরি লিখলেন ‘প্রথম বাংলা ব্যাকরণ’ ও বাংলা গদ্যে ‘কথোপকথন’। রাজা রামমোহন রায় প্রথম বাংলা গদ্যভাষা চর্চা করেন, যাতে সংস্কৃতের প্রাবল্য। বিদ্যাসাগর যোগালেন শক্তি। সেই পথেই বঙ্কিমচন্দ্র। মধুকবি মাইকেল আনলেন অমিত্রাক্ষর ছন্দ। মুসলমানদের ব্যবহূত পালি, প্রাকৃত, সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি অনেকটা অগ্রাহ্য করে ফোর্ট উইলিয়াম নিল উঁচু শ্রেণির ভাষা সৃষ্টির উদ্যোগ।
মুসলমানরা পিছিয়ে ছিলাম ইংরেজি লেখাপড়ায়, তাই সামনের দিকে এগোতে পারিনি। দুজন তিনজন করে গ্র্যাজুয়েট বের হতো আমাদের পক্ষ থেকে। আর ওদের পক্ষ থেকে হাজার হাজার। আর আজ আমরা পৃথিবীতে একমাত্র সার্বভৌম পতাকার নিচে সমবেত ষোলো কোটি বাঙালি, হাজার হাজার লাখ লাখ গ্র্যাজুয়েট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, নানা পেশার বাংলাদেশি পুরো পৃথিবীতে। ওই কলেজটি না দেখলে অনেক ইতিহাসের শিড়্গা থেকে হতাম বঞ্চিত।
লেখক নিয়ে গেছেন নিউমার্কেটে, যেখানে ইন্ডিয়ান সিল্ক হাউস। লিন্ডসে স্ট্রিটে যেখানে নিউমার্কেট। তারপর ভার্দান মার্কেট, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা বাজার সওদা করেন। আমি খালেদের সঙ্গে সর্বক্ষণ ছিলাম। কারণ কলকাতা আমার জন্ম শহর। ঠিক যেন জন্ম নদী কালজানির মতো। কলকাতার সবকিছু আমার ভালো লাগে। খালেদের ভাষা খুব মিষ্টি, যা নতুন লেখকদের মধ্যে বিরল। নিচের অল্প একটু পড়লেই বুঝতে পারবেন—
‘অন্ধকারের জমিনে আলোর খেলা দেখছি। অন্ধকারের মাঝে যেন আলোর গান শুনতে পাচ্ছি। ধ্বংসের গান, সৃষ্টির গান। আলোর গান, অন্ধকারেরও গান। একই গান। রেলগাড়ির গতির কারণেই অনুভূতিটা আরও প্রগাঢ় হচ্ছে বোধকরি। বাতাস যেন আলোদের গায়ে- অন্ধকারের গায়ে বাড়ি খেতে খেতে মূর্ছনা তুলছে। আমি জানালার পাশে বসে অন্ধকারের গান শুনি।’
কলকাতার পথঘাট ভুলে গেছি। কিছুদিন আগে আতিথ্য পেলাম গঙ্গার পারে একটি দিন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের মন্দির ও বিবেকানন্দ কুটিরে। মনটা ভরে গিয়েছিল। বইতে যাদের কথা পড়েছি যেন ওদেরকে দেখতে পাচ্ছি। যার অতিথি তিনি জানতে পারলেন না, আমি কী পেলাম।
এত বড় ভারত। যাকে বলা হয় ভূ-ভারত তার সবটা দেখা হয়নি। হয়তো আর হবে না। কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষী দিল্লি এই বইটির সঙ্গে মিলিয়ে পড়বেন, তাহলেই অনেক কিছু জানতে পারবেন। আমার ভালো লেগেছে কলকাতার আখ্যান। কারণ ওইখানেই আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। মহর্ষি ভবনের দোতলায় একমাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত একটানা বারান্দা। ‘জীবন স্মৃতি’ গ্রন্থের ‘দক্ষিণের বারান্দা’, যার সঙ্গে জড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের শৈশব স্মৃতি। এই ভবনেই রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ কক্ষ ও শয়ন কক্ষ। রান্নাঘর, খাওয়ার ঘর তেমনটি আছে। তিনতলায় শোভা পাচ্ছে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কেশব চন্দ্র সেন, স্বামী বিবেকানন্দ, প্রমুখের তৈলচিত্র।
রবীন্দ্রনাথকে লেখা মৃণালিনী দেবীর পত্র, তাদের বিয়ের আমন্ত্রণলিপি। পুরনো গ্রামোফোন রেকর্ড, সবই আছে। আমরা একদিনেই সব দেখে ফেলতে চাই। তা কখনোই সম্ভব নয়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে সাত দিন। তেমনি মুর্শিদাবাদে মুসলমানদের যা কিছু সৌন্দর্য চেতনা, তা দেখতে লাগবে সাত দিন। যদি আরেকটা জন্ম পাই, তাহলে নিশ্চয়ই আমি খালেদের সঙ্গী হবো। বড় হোটেলে থাকতে চাই না, যে কোনো খানে ঘুমাতে পারি। মসজিদ হলেও চলবে। আমি মুসাফির। আমার নেই কোনো চাহিদা। এবার পাঠকদের নিয়ে যাই পাহাড়ের হাতছানি দেয়া সিমলা ও মানালিতে। লেখকের লেখা এত মিষ্টি। হিমাচলে পদার্পণের পর পরই একটা এসএমএস এসেছিল, অনুবাদ করলে দাঁড়ায়— ‘দেবতাদের ভূমি হিমাচল প্রদেশে স্বাগতম। আপনার ভ্রমণ সুখময় ও আরামদায়ক হোক। আপনার নিরাপত্তা ও কল্যাণের স্বার্থে নদী তীরে বিপজ্জনক ভ্রমণ বা নদীর পানিতে নামা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করছি’। আমি ঘুমিয়েছিলাম বোধকরি, খেয়াল করে পড়া হয়নি। ফোনের অ্যালার্মে ঘুম ভাঙে, বন্ধ করতে গিয়ে এই বার্তাটি দেখি। আজ ‘দেবতাদের ভূমিতে’ ঘুরে বেড়ানোর দ্বিতীয় দিন। আজকের গন্তব্য কুফরি আইস পয়েন্ট। বরফের দেখা হয়তো পাওয়া যাবে না এখন, তবে সেখান থেকে বেশ দূর পর্যন্ত দেখা যায়। চমৎকার প্যানোরোমিক ভিউ ছাড়াও আট হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কুফরি ভারতের অন্যতম স্কিইং পয়েন্ট।’
শাহ মোস্তফা খালেদের কাছে কৃতজ্ঞ, কারণ তার কাছে ভ্রমণের মনটি আবার ফিরে পেলাম। যেতে চাই দার্জিলিং, ভুটান। কুচবিহারের পাশেই। সঙ্গীর প্রয়োজন নেই। ভ্রমণের জন্য প্রয়োজন ভ্রমরের মন। ভ্রমর যাবে মনের সঙ্গে। তা হলেই ভ্রমণ।
বইটি বের করেছেন ”স্বরেআ”। সুন্দর প্রচ্ছদ দাম - ২৭০ টাকা ।
লেখক: সাহিত্য-সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব।



  
  সর্বশেষ
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকে অস্থিতিশীল করছে যুক্তরাজ্য : অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ;
ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
বাল্যবিবাহের কারণে বাড়ছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শরীফ বলী;

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308