বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * ৭ নং ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত ;   * কুড়িগ্রামে অফিস সহকারীকে জুনিয়র শিক্ষক দেখিয়ে ওই পদে নিয়োগ বাণিজ্য   * কক্সবাজারে নলকূপ-মোটরে উঠছে না পানি, সংকট চরমে জন জীবনে দূর্ভোগ;   * কচুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩ পদে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ   * যৌথ বাহিনীর অভিযান: বান্দরবানের ৩ উপজেলা নির্বাচনের ভোট স্থগিত;   * গাজীপুরে বৃষ্টি প্রার্থনায় ইসতিকার নামাজ আদায়   * চট্রগ্রামে সকাল থেকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ চরমে   * গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইকে শোকজ!   * এবার সিসি ক্যামেরার আওতায় আসছে সম্পূর্ণ কক্সবাজার কক্সবাজার;   * লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির মামলার আবেদন;  

   প্রবন্ধ
মানবাধিকার
  Date : 10-12-2017

 

১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষনা দেয়া হয় জাতিসংঘের সাধারন পরিষদ কর্তৃক। অনেকের মতে, এই দলিলটি হলো বিশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন (দঞযব ংরহমষব সড়ংঃ রসঢ়ড়ৎঃধহঃ ড়ভ ঃযব ঃবিহঃরবঃয পবহঃঁৎু’), কেননা এতে রয়েছে বিশ্বময় সাধারন মানুষের অধিকার সংক্রান্ত কিছু সর্বজনীন দাবি। তা আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর স্বীকৃত ও হয়েছে। কিন্তু বিগত ছয় দশকেও সেই ঘোষনায় বিধৃত দাবিগুলি বাস্তবে রূপলাভ করেনি। বিশ্বময় মানবাধিকার অত্যন্ত নির্মমভাবে দলিত মথিত হয়ে চলেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে পশ্চাত্যের উন্নত গনতান্ত্রিক দেশসূহ উচ্চবাচ্য করলেও নিজেরা নিজ নিজ দেশে, এমন কী নিজ স্বার্থে অন্যান্য দেশে এই অধিকার লঙ্ঘন করতে বিন্দুমাত্র কার্পন্য করছে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্ব ১৯৪৮ সালের পূর্বে যেমন বিশৃঙ্খল ও নৈরাজ্যিক ছিল এখনও প্রায় তেমনই রয়েছে।

মানবাধিকার পর্যালোচনার সময় প্রায় আমরা নাগরিক অধিকার (ঈরারষ ষরনবৎঃু) সম্পর্কে মনোযোগী বেশি হই। সাধারনভাবে মানবাধিকার এবং নাগরিক অধিকারের মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করেই কিন্তু আমাদের অগ্রসর হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর কারন দুটি। এক, নাগরিক অধিকার মঞ্জুর করা হয় উপর থেকে, রাষ্ট্র কর্তৃক। এসব অধিকার রাষ্ট্র এবং নাগরিকদের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত হয় এবং কিছু শর্ত সাপেক্ষে, কিছু সুনির্দিষ্ট দায়িত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নাগরিকদের উপভোগ করতে হয়, বিশেষ করে সংবিধানের কাঠামোয়। দুই, তাই নাগরিক অধিকার স্থান, কাল, পাত্র ভেদে বিভিন্ন হতে পারে। কিন্তু মানবাধিকার উপভোগের সুযোগ আসে বিশ্বজননী নৈতিক বোধ থেকে, মানবের শ্রেষ্ঠতম গুণ ইনসাফবোধ থেকে, যে নৈতিক সচেতনতায় স্বীকৃত হয় প্রতেক ব্যক্তির জীবন সত্তার সাম্য এবং যা সকল সমায়ে, সর্বত্র, সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। নীতিগতভাবে তাই এই অধিকার কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল নয়। এই জন্যেই মানবাধিকারকে চিহ্নিত করা হয় মানুষের জন্মগত অধিকার রুপে।

মানবাধিকারের তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেøখযোগ্য : এক, মানবাধিকার সর্বজনীন এই অর্থে যে, ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা, নারী-পুরুষ, বয়স বা রাজনৈতিক বিশ্বাস অথবা রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্যে এই অধিকার। দুই এই অধিকার অপরিবর্তনীয় (ওহপড়হঃৎড়াবৎঃরনষব) সম্পূর্ণ, পরিপূর্ণ (অনংঁষধঃব) এবং সহযাত বা অন্তর্জাত (ওহহধঃব)। এই অধিকার কোন রাষ্ট্র বা কোন কর্তৃপক্ষ থেকে প্রদত্ত নয় এবং কোন রাষ্ট্র বা কর্তৃপক্ষ এই অধিকার কেড়ে নিতেও পারে না। এমন কী, কোনরুপ দায়িত্বের বন্ধনেও তা আবদ্ধ নয়। তিন, মানবাধিকার হলো আত্মগত বা আত্মনিষ্ঠ (ঝঁনলবপঃরাব) এই অর্থে যে, এই অধিকার তার ব্যক্তিত্বের সম্পত্তি। যেহেতু ব্যক্তির রয়েছে বিচারবুদ্ধি (জধঃরড়হধষরঃু) এবং স্ব-শাসনের ক্ষমতা তাই এই অধিকার তার সহজাত।

যদিও সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে ১৯৪৮ সালে, অধিকারের দাবি কিন্তু মানব জাতির ইতিহাসের মতই প্রাচীন। যে কেউ মানবাধিকার সম্পর্কিত ভাবনা-চিন্তার পরিচয় পেতে পারেন গ্রীক লেখক সফোকিøস (ঝড়ঢ়যড়পষবং), প্লেøটো (চষধঃড়), এরিস্টটলের (অৎরংঃড়ঃষব) লেখায়। পেতে পারেন আইন বিশেষজ্ঞ সিসেরো এবং সেনেকার লেখায়।‘‘বিশ্বের নাগরিকের (পরঃরুবহংযরঢ় ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ) ধারণারও তারা তাদের লেখায় পেতে পারেন। থমাস হবস (ঞযড়সধং ঐড়ননবং) জন লক (ঔড়যহ খড়পশব), রুশো (জড়ঁংংবধঁ) হেগেল, কান্ট, মার্ক্স (ক. গধৎী), ম্যাক্সওয়েবার প্রমুখ দার্শনিকরা মানুষের অধিকার সংরক্ষণ সম্পর্কে উচ্চকন্ঠ ছিলেন। আঠার শতকের আলোকিত যুগ (ঊহষরমযঃবহসবহঃ অমব) মানবাধিকার সংরক্ষন ক্ষেত্রে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করে। শুধু তাই নয়, গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার ঐতিহাসিক আন্দোলন এবং শান্তিপূর্ন পৃথিবীর স্বপ্ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত গণঅধিকার সংরক্ষন এবং অধিকারের গ্যারান্টি নিশ্চিত করার পদক্ষেপের সাথে। জনগনের অধিকারই যদি সংরক্ষিত না হলো তবে কিসের গনতন্ত্র? গনতন্ত্র হলো দ্বন্ধ ও সংঘাতের শান্তিপূর্ন সমাধানের প্রকৃষ্ট পন্থা। অন্য কথায়, গনতন্ত্র হলো নাগরিকদের সমাজ ব্যবস্থা এবং নাগরিকদেও সমাজ ব্যবস্থা এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত না হলে সে ব্যবস্থা গনতন্ত্রই নয়।

কীভাবে মানবাধিকার সংরক্ষন করা সম্ভব?

এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন। কারো মতে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এবং সাধারন মানুষ আইন মেনে চললে তারা নিজ নিজ অধিকার সংরক্ষন করতে পারেন। কেউ বা বলেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এবং প্রশাসকগনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে অধিকার লঙ্ঘনের কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে। আবার অনেকের মতে জনগন তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলে এবং অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তীব্রভাবে প্রতিবাদী হলে অধিকার ক্ষুণœ হবার ঘটনা হ্রাস পেতে থাকে। কারো মতে আইনের শাসনের সাথে বিচার বিভাগ যদি তৎঃপর হয়ে ওঠে তাহলেও অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কমে যাবে। কেউ কেউ আবার বলেন, স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম এবং সচেতন সুশীল সমাজ এক্ষেত্রে মণিকাঞ্চন স্বরূপ। আমার ধারনা কিন্তু ভিন্নরূপ। আমি মনে করি, স্বশাসন ও সুশাসনের চমৎকার সমন্বয়ই গনঅধিকার নিশ্চিত করার স্বর্ণালী পন্থা। গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা এক্ষেত্রে অপরিহার্য। জনগনের নির্বাচিত সরকার স্বচ্ছভাবে নীতি প্রনয়ন করবেন। দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং দল-নিরপেক্ষ প্রশাসকরা সেই নীতি বাস্তবায়ন করবেন এবং তাদের নীতি ও কাজের জন্য জনগনের নিকট সম্পূর্ন ভাবে দায়ী থাকবেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন ভঙ্গকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন দল-নিরপেক্ষভাবে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের কর্মকর্তাগন নিজেদের বিবেক পরিচ্ছন্ন রেখে বিচার করবেন। তাহলেই তো হয়। একজনের অধিকার রক্ষার জন্যে প্রয়োজন হলে তারা অন্য কয়েকজনের শাস্তি বিধানে কার্পন্য করবেন না।
সার্বজনীন অধিকারের ঘোষনা দান জাতিসংঘের অতীব গুরুত্বপূর্ন অবদান। জাতিসংঘের অনেক ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও মানবাধিকার সংরক্ষনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অবদান নেহাত অপ্রতুল নয়। মানবাধিকার কমিশন গঠন, শরনার্থীদের অধিকার সংরক্ষনের লক্ষে হাইকমিশন গঠন, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার সংরক্ষন কমিটি গঠন, ১৯৬৬ সালের চুক্তি মনিটর প্রভৃতি এক্ষেত্রে উল্লেøখযোগ্য। তবে জাতিসংঘ হলো স্বাধীন সার্বভৌম সদস্য রাষ্ট্রসমূহের তৎপরতার উপরই জাতিসংঘের কৃতিত্বের অনেকটাই নির্ভরশীল। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের অধিকাংশ গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ। কোন কোন ক্ষেত্রে এসব নব্য গনতান্ত্রিক দেশের শাসক-প্রশাসকরা ভীষন ক্ষমতাশ্রীয়। নির্বাচিত হলেই তারা নিজেদের গনতান্ত্রিক সরকার বলে বাগাড়ম্বর করেন। গনতন্ত্রে নির্বাচন অপরিহার্য বটে, কিন্তু নির্বাচন শুধু ঐ জনপদকে গনতন্ত্রের মহাসরকে টেনে তোলে। গনতন্ত্রকে জনগনের নিকট অর্থপূর্ন করতে হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দল-নিরপেক্ষ দক্ষ ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে গড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা, দল-নিরপেক্ষ জনকল্যাণকামী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সীমিতভাবে ক্ষমাত প্রয়োগ, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন বিশেষ করে কার্যকারী মানবাধিকার কামিশন এবং সু-শাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমে গণতন্ত্রের জন্যে অপরিহার্য। এসব দেশে এমন ব্যবস্থা অনুপস্থিত বলে নব্য গনতন্ত্র রূপান্তরিত হয়েছে ওষষরনবৎধষ ফবসড়পৎধপু ব্যবস্থায় যেখানে মানবাধিকার সংরক্ষিত হবার কোন সম্ভবনা নেই। বাংলাদেশে মানবাধিকার রয়েছে এক করুন অবস্থায়। দেশে যখন কিছ’ ব্যক্তি আইনের ঊর্ধে উঠে যায় তখনই বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটে থাকে। অন্য কথায়, দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা যখন ঐসব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয় অথবা তাদের বিচার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখনই এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, সিয়েরালিওন প্রভৃতি দেশে এভাবেই বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ঐগুলি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত হয়। বর্তমানে এমনি বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ডের জন্যে পাকিস্তান, ইয়েমেন, সুদান, কসোভো, সার্বিয়া, জর্জিয়া প্রায়-ব্যর্থ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে সাবধান হতে হবে আগে থেকেই। সরকারের প্রিয়ভাজনদেও বিচার হবে না, যেহেতু তারা “আমাদের লোক” এমন অবস্থা কাঙ্খিত নয়। এই প্রেক্ষাপটে দেশে গনতন্ত্রেও স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই। দেশের পত্যেকটি প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের অভিশাপে অভিশপ্ত। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন আকাশছোঁয়া। ক্ষমতাশ্রয়ের মাত্রা উচ্চতম শিখর স্পর্শী। দায়িত্বহীনতা চরম। এই অবস্থায় মানবাধিকার সংরক্ষনের কথা শুধু কথার কথা। তবে এসব কথা উচ্চারিত হোক সর্বত্র। দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত। দেশের সাধারন মানুষ এসব কিছু জানুক এবং প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠুক। জনগনই পারেন অন্ধকার এই অচলায়তনে অধিকারের আলো জ্বালাতে। তারাই পারেন মানবাধিকারের আলোয় চারদিককে ঝলমল করে তুলতে।

লেখক : সাবেক উপাচাযর্, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।



  
  সর্বশেষ
৭ নং ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত ;
কুড়িগ্রামে অফিস সহকারীকে জুনিয়র শিক্ষক দেখিয়ে ওই পদে নিয়োগ বাণিজ্য
কক্সবাজারে নলকূপ-মোটরে উঠছে না পানি, সংকট চরমে জন জীবনে দূর্ভোগ;
কচুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩ পদে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308