শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * খুলনার কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনি`র মৃত্যুতে জানিপপ চেয়ারম্যানের শোক   * কক্সবাজার জেলা পরিষদের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আল মারুফের যোগদান   * ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, হুঁশিয়ারি সংকেত   * মাদক কারবারে ককস বাজারের সাবেক এমপি বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি   * দিশেহারা সুগন্ধা দাশের পাশে দাঁড়াল চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসন   * আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ;   * আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ;   * রশিদ মিয়া কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান ;   * কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে যে সকল প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন;   * বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলো মিয়ানমারের ৯ বিজিপি সদস্য  

   প্রবন্ধ
একজন নোবেল বিজয়ী বনাম রাষ্ট্রহীন একজাতি এবং কিছু কথা
  Date : 01-10-2017

ইলিয়াস সাগর

ছোটবেলা থেকেই আমার পশু-পাখি পোষার শখ। আব্বা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। যার দরুন আমার ছেলেবেলার অধিকাংশ সময়ই কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। আমার পৈত্রিক নিবাস গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানাধীন বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের তালুকদার বাড়ীতে কৈশোরে কিছুটা সময় কাটিয়েছি। তখন আমি দু’টো কুকুর পোষতে শুরু করেছিলাম। কুকুর দুটিই ছিল মাদি কুকুর। একটির রং ছিল সাদা ও আরেকটির রং ছিল কালো। সাদা কুকুরটির নাম রেখেছিলাম ‘ধবলী’ আর কালো কুকুরটির নাম রেখেছিলাম- ‘কাজলী’ কিছু দিনের মধ্যেই কাজলী ও ধবলী আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছিল। ওরা দিনের বেশীরভাগ সময়ই আমাদের ঘরের দরজার সিড়ির দুপাশে বসে থাকতো। আম্মা দরজা খোলা রেখে বাহিরে কাজ করার সময় ধবলী ও কাজলী কে বলতেন “দেখিস, কেউ যাতে ঘরে না আসে” ওরা আম্মা আসার আগ পর্যন্ত একটি মুরগীকেও ঘরে ঢুকতে দিতো না।

আমাদের বাড়ীতে থাকা অবস্থায় ধবলী বেশ ক’টি বাচ্চা প্রসব করলো। ধবলীর বাচ্চাগুলোকে কাজলী মায়ের মতো আগলে রাখতো। একবার আমাদের পাশের বাড়ীর একটি ছেলে একটি বাচ্চাকে ধরেছিলো, অমনি কাজলী সেই ছেলেকে ধাওয়া করে পুকুরে নিয়ে ফেলেছিল।

ধবলী ও কাজলী একসাথে থাকতে থাকতে ওদের মাঝে মমত্ববোধ গড়ে উঠেছিল। যা বর্তমানে মানুষের মাঝে দেখা যায় না। কুকুরদের কিন্তু গোত্র বা ধর্ম নেই। আর ওদেরকে ধর্মপরায়ণ ও মানবিক করার জন্যে পৃথিবীতে কোনকালেই কোন মহামানবের আগমন ঘটেনি। পক্ষান্তরে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষগুলো বিভিন্ন গোত্র ও ধর্মে বিভক্ত। পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধর্ম প্রচারের জন্য বিভিন্ন মহামানবের আগমন হয়েছে। আমার জানা মতে প্রতিটি ধর্মই ন্যায়ের কথা বলে, কোন ধর্মই অন্যায়কে সমর্থন করে না। যদিও বিশেষ কোন ধর্মকে নিয়ে আমার অতিমাত্রায় মাথাব্যথা কেনোকালেই ছিল না, এখনও নেই। প্রতিটি ধর্মের মূলমন্ত্রই মানবতা রক্ষা। আমি সাম্প্রদায়িকতার পূজারী নই। আমি বরাবরই অসাম্প্রদায়িক; মানবতার পক্ষে। তবুও যখন দেখি কোন নির্দিষ্ট দল বা গোত্র কোন নির্দিষ্ট গোত্র বা নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের উপর নির্বিচারে লুন্ঠন, হত্যা, ধর্ষণ চালিয়ে তদেরকে দেশছাড়া করছে তখন একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে আমি চুপ করে থাকতে পারি না। তাই আজ আমার এই লেখার অবতারনাÑ

সাম্প্রতিক বিশ্বে জাতিসংঘের বিবেচনায় পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর নাম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দের অর্থ হলো নৌকার মানুষ, যারা সমুদ্রজলে নৌকা ভাসিয়ে মৎস্য সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ‘রোহিঙ্গা’ মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে বসবাসকারী এক মুসলমান জনগোষ্ঠীর নাম। মায়ানমারে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রতিনিয়ত মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে এবং তাদের নেতৃত্বেই দেশ থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়ণে চলছে- লুন্ঠন, ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগের মত ঘৃণিত কর্মযজ্ঞ। আর এই রোহিঙ্গা নির্যাতনের পৃষ্ঠপোষক এমন এক মহামানবী যিনি ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এই মহামানবী ২০১২ সালে নোবেল পুরস্কার আনার পথে নিউইয়র্কবাসীর সামনে তার মুখ গহ্বর থেকে একটি অমূল্য বানী প্রসব করেছিলেন। বাণীটি হলোÑ ‘চূড়ান্তভাবে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ বাস্তুচ্যুত, গৃহহীন ও আশাহীন মানুষ মুক্ত একটি পৃথিবী নির্মাণ। তা হবে এমন একটি পৃথিবী, সেখানে প্রতিটি মানুষ থাকবে স্বাধীন এবং তাতে থাকবে শান্তিতে বসবাসের পরিস্থিতি।` ১৯৯১ সালে গণতন্ত্রের পক্ষে(!) কাজ করার জন্য মহামানবী কে নোবেল কমিটি পুরষ্কারটি প্রদান করেন। ১৯৯১ সালে মায়ানমারের সামরিক সরকার কর্তৃক গৃহবন্দি থাকায় ২০১২ সালে তিনি পুরষ্কারটি গ্রহণ করেন।

প্রিয় পাঠক, সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানেন ? শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই মহামানবী আর কেউ নন। নৃশংসতার জন্য হিটলারের পর যার নামটি সাম্প্রতিক বিশ্বে সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে; যিনি রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের মূলহোতাÑ অং সান সু চি !

অং সান সু চি একজন বৌদ্ধ ধর্মালম্বী মানুষ। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক- গৌতম বুদ্ধ। বৌদ্ধ ধর্ম মতে ‘জীব হত্যা মহাপাপ’। তাই তারা নিরামিষ ভোজী। তারা আমিষ অর্থাৎ মাছ-মাংস খায় না। সেই ধর্মের অনুসারী হয়ে সে কিভাবে লুন্ঠন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘৃনিত নৃশংস কর্মযজ্ঞের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তা কোন বিবেকবান মানুষের পক্ষে বোধগম্য নয়।
এই একবিংশ শতাব্দীতে কি পৃথিবীর আর কোথাও রোহিঙ্গাদের এমন কোন জনগোষ্ঠী আছে যারা অসুস্থ হলে হাসপাতালে যেতে পারে না, আর হাসপাতালে গেলেও তাদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না, তরুণ-তরুণীদের বিয়ে ও সন্তান ধারণে বাঁধা দেয়া হয়। শত শত বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বসবাস করলেও তাদের নাগরিকত্ব নেই। এত অত্যাচার-নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেও বর্তমানে প্রায় ৮ লক্ষাধীক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে বসবাস করেছে। বিভিন্ন সময়ে অত্যাচারের মাত্রা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ ও ওআইসি মিয়ানমার সরকারকে এই সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত নিপীড়ন বন্ধের আহ্বান জানালেও মায়ানমার সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না।

প্রতিনীয়ত প্রাণ বাঁচাতে ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধরা ছোট ছোট নৌকায় করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলোও তাদের গ্রহণ করতে চাচ্ছে না।

আরাকানের রোহিঙ্গারা সেখানে বসবাস করছেন কয়েক শতাব্দী ধরে। প্রচলিত ধারণায় রোহিঙ্গারা ষোলশ শতকের দিকে আরকানে (বর্তমান রাখাইন রাজ্য) আসা আরব বনিকদের বংশধর। আর মগরা রাখাইন রাজ্যের ভূমিপুত্র। কিন্তু ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। পূর্ব ভারত হতে খৃস্টপূর্ব ১৫০০ এর দিকে অস্ট্রিক জাতির একটি শাখা ‘কুরুখ’ এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। এরপর ক্রমান্বয়ে বাঙালি হিন্দু (পরবর্তীকালে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম), পাঠান, পার্সিয়ান, আরব, তুর্কি ও মোঘলরা বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর আবাসস্থল গড়ে তোলেন। বস্তুত এ সকল নৃগোষ্ঠী শঙ্করজাতই রোহিঙ্গা।

পক্ষান্তরে ১০৪৪ খ্রিস্টাব্দে আরাকান রাজ্য দখলদার কট্টর বৌদ্ধ বর্মী রাজা ‘আনাওহতা’ (অহধধিযঃধ) মগদের বার্মা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ে আসেন। রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করে আরকানে বৌদ্ধ বসতি স্থাপন করেন। সে হিসেবে রোহিঙ্গাদেরকেই আরাকানের প্রকৃত ভূমিপুত্র বলা যায়, আর মগদের অভিবাসী। পরবর্তীতে সম্রাট নারামেখলার (১৪৩০-১৪৩৪) বাংলার সুলতান জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ শাহের সহায়তায় আরকান পুনর্দখল করে এই অঞ্চলের নাম দেন রোসাং বা রোহাং। ধারণা করা হয়, এখান থেকেই রোহিঙ্গা নামের উৎপত্তি। সেই থেকে আরকানে পাশাপাশি দু’টি ভিন্ন জাতির বসবাস। মোঙ্গোল বংশোদ্ভূত মগ আর পূর্ব-ভারতীয় রোহিঙ্গা। ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ পর্যন্ত এখানকার প্রায় ২২ হাজার বর্গমাইলের একটা অঞ্চল রোসাংগ নাম নিয়ে স্বাধীন থাকে।

এ সময় ছোটখাট কিছু দুর্ঘটনা ঘটলেও মগ আর রোহিঙ্গারা মোটামুটি সহাবস্থানেই ছিল। এরপর আসে মহান ব্রিটিশ রাজ। যাদের কূটনামি হিন্দি সিরিয়ালের বউ শাশুরিদের কাজকারবারকেও হার মানায়। আঠার’শ সালের দিকে ব্রিটিশরা এমন একটা খেলা খেলে, যে খেলা পরবর্তীতে উপমহাদেশের মানচিত্রই পাল্টে যায়। খেলার নাম ঐতিহাসিক ‘ডিভাইড এন্ড রুল’। রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে তৎকালীন বার্মার ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীকে তালিকাভুক্ত করে ব্রিটিশরা খেলার বাশিটা বাজিয়ে দেয়। স্বভাবতই ধর্মীয় উগ্রবাদীদের মুসলিম নিধনের এহেন বাম্পার সুযোগ চিনিতে ভুল করার কথা না, করেনি। রোহিঙ্গারা বহিরাগত আরকানে জোর করে বসতি স্থাপনকারী, মগরা এধরনের প্রোপাগান্ডা চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়। এর চাইতে রোহিঙ্গাদের হত্যা করা, তাদের সম্পদ লুট করার গ্রহণযোগ্য কারণ আর কি হতে পারে। যার ফলে আরকানে ছড়িয়ে পড়ে জাতিগত বিদ্বেষের ভয়ঙ্কর দাবানল। যার সাময়িক অবসান ঘটে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বার্মা তথা বর্তমান মিয়ানমারের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে।

নৃতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবীদদের মতে, বাংলার সঙ্গে আরাকানের রয়েছে হাজার বছরের দীর্ঘ সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক যোগসূত্র। আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসতি হাজার বছরের পুরনো। ঐতিহাসিক এন এম হাবিব উল্লøাহ রচিত ‘ রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাস’ বইয়ে লেখা হয়েছে, ৭ম শতকে আরব বণিকদের মাধ্যমে আরাকানের সঙ্গে মুসলমানদের প্রথম পরিচয় ঘটে। আরাকানের চন্দ্রবংশীয় রাজবংশের সংরক্ষিত ইতিহাস ‘রদজাতুয়ে’ এ তথ্য উল্লেøখ রয়েছে। ঐতিহাসিকদের কেউ কেউ এ সম্পর্কের সূত্রপাত দেখিয়েছেন খলিফা হজরত ওমর বিন আব্দুল আজিজের সময়কালে। নানা ইতিহাসগ্রন্থের সাক্ষ্য মতে, ১৪০৬ সালে মিয়ানমার রাজা আরাকান আক্রমণ করলে রাজা নরমিখলা বাংলার রাজধানী গৌড়ে এসে আশ্রয় নেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তিনি সোলায়মান শাহ নাম ধারণ করেন। ১৪৩০ সালে গৌড়ের সহায়তায় আরাকান পুনরুদ্ধার করেন। ১৫৩০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১০০ বছর গৌড়ের সুলতানকে কর দিতো আরাকান। ১৫৩০ সালের পর গৌড়ের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগে আরাকান স্বাধীন হয় এবং ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত আরাকান ম্রাউক রাজবংশের অধীনে শাসিত হয়। দীর্ঘ এ সময় পর্যন্ত আরাকানের সব শাসক তাদের নামের সঙ্গে মুসলিম উপাধি ব্যবহার করতেন। গৌড়ের অনুকরণে তাদের মুদ্রার এক পিঠে আরবিতে কালিমা ও রাজার মুসলিম নাম ও তার ক্ষমতা আরোহণের সময় উল্লেøখ থাকতো। সরকারি ভাষা ছিল ফার্সি এবং সৈনিকদের প্রায় সবাই ছিল মুসলমান। পরে জেকুক শাহ’র আমলে পুর্তুগীজ নৌ-সেনাদের সহায়তায় মগদের নিয়ে গঠিত তাদের নৌবাহিনী পরবর্তীতে জলদস্যুতে পরিণত হয়। মগ জলদস্যুরা চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় নির্বিচার লুণ্ঠন আর হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ সময় অগণিত মুসলমান নর-নারী ধরে নিয়ে যায় আরাকানে এবং তাদের দাস হিসেবে বিক্রি করে। এভাবেও বিপুলসংখ্যক মুসলমানের আগমন ঘটে আরাকানে। ১৭৮৪ সালে বার্মার রাজা ভোদাপায়া দখল করে নেয়ার পর তাদের অধীনে শাসিত হয় আরাকান।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আরাকান নামে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত প্রায় সব সময়ই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৭৮৫ সালে বার্মা রাজ ভোদাপায়া আরাকানের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে রাষ্ট্রটি দখল করে নিজ রাজ্যভুক্ত করেন। তখন থেকে আরাকান বার্মার একটি প্রদেশ হিসেবেই আছে।

১৮২৬ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর সংঘটিত চুক্তিতে আরাকান, আসাম ও ত্রিপুরার ওপর থেকে দাবি প্রত্যাহার করে তৎকালীন বার্মা সরকার। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৭৮৪ সালে বার্মার রাজা ভোদাপায়া আরাকান দখল করে নিয়ে এককালের স্বাধীন আরাকান রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটার পাশাপাশি বর্মী বাহিনীর অত্যাচারে রোহিঙ্গা হিন্দু-মুসলিম, রাখাইন নির্বিশেষে দলে দলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে প্রবেশ করে। বর্মী বাহিনীর হত্যা ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে ১৭৯৮ সালে আরাকানের তিন ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যা আশ্রয় নেয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। ১৯৪৮ সালে বার্মা বৃটিশ কর্তৃক স্বাধীনতা লাভ করার পর বিপুলসংখ্যক আরাকানি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আসে। বিশেষ করে মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় দুটি জনগোষ্ঠী চাকমা ও মারমা জনগোষ্ঠী।

১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। সমস্যা হল সামরিক শাষকদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে সবসময় শত্রু শত্রু খেলা খেলতে হয়। নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের জন্য জনগণের সামনে বাস্তব হোক আর কাল্পনিক একটা শত্রু দাড় করাতে হয়। নে উইনেরও একটা গ্রহণযোগ্য কিন্তু দুর্বল শত্রু দরকার ছিল, যাকে ইচ্ছা মত মারধর করা যাবে। কিন্তু তার পক্ষ নিয়ে বাঁধা দেওয়ার মত কেউ থাকবে না। নতুন করে শত্রু খোঁজার চাইতে নে উইন পুরানো দুর্বল প্রতিপক্ষ রোহিঙ্গাদের বেছে নিলেন। নানাভাবে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে দেয় তার নাসাকা বাহিনী! সাথে যোগ দেয় উগ্র ধর্মান্ধ কিছু মানুষ।

একাধিক ইতিহাসবীদের উপরোক্ত লেখাগুলো বিশ্লেষণ করে এটাই প্রতিয়মান হয়েছে যে শতাব্দী পর শতাব্দী ধরে অনেক উত্থান পতনের পরও বংশানুক্রমিকভাবে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারেই বসবাস করছে। ওরা মিয়ানমারেরই নাগরীক। বিভিন্ন সময়তারা বৌদ্ধদের কর্তৃক শোষণের শিকার হয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে যেসব তথ্য সামনে এসেছে তাতে বোঝা যায়, সমস্যা অতি পুরনো ও অত্যন্ত জটিল। ৭০০-৮০০ বছর ধরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন বা আরাকানে বসবাস করা সত্ত্বেও মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করছে না। বৃহৎ শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থে সমস্যাটিকে ব্যবহার করে আসছে।

১৯৭৮ সালে দিনের বেলা রোহিঙ্গাদের উপর নেমে আসে নিকষ কালো অন্ধকার, সরকারি বাহিনী সামরিক অভিযান পরিচালনা করে নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের উপর। নিপীড়নের দেয়ালে শেষ পেরেক ঠুকে ১৯৮২ সালে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে। যাকে মগের মুল্লøুক বলে আর কি। সেই থেকে রোহিঙ্গা আদ্যবধি রাষ্ট্রহীন জাতি। ঐতিহ্যগত ভাবে ভারতীয়দের সহ্য ক্ষমতা অসীম এবং কিছুটা স্বার্থপর যে কারণে তাদের শোষণ করা অন্যান্য অঞ্চল থেকে তুলনামূলক সহজ। রোহিঙ্গারাও এর বাইরে না। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা, ভ্রমণ, বিয়ে, সন্তানগ্রহণের মত মৌলিক অধিকারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও বাংলাদেশে প্রবেশ করা ছাড়া স্থানীয় রোহিঙ্গাদের দিক থেকে দৃশ্যমান কোনো প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি। এই সুযোগটি লুফে নিয়ে সামরিক সরকার নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। পূর্বে সরাসরি সামরিক অভিযান পরিচালনা করলেও ১৯৮২ সালের পর তারা এই পথ থেকে সরে আসে। যেকোনো ভাবে রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়া করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। এক্ষেত্রে ধর্মীয় উস্কানির মাধ্যমে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেওয়া ছিল সামরিক জান্তা সরকারের তুরুপের তাস।

১৯৯১-৯২ সালে এসে সামরিক জান্তা সফল হয়। রোহিঙ্গাদের সাথে মগদের ভয়াবহ দাঙ্গা বেধে যায়। পেছন থেকে মগদের সাহায্য করে সেনাবাহিনী। দাঙ্গায় প্রায় ৮,০০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা এবং ২ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি এবারও রোহিঙ্গারা দৃশ্যমান প্রতিরোধ করতে ব্যার্থ। তাদের লক্ষ্যই যেন মগদের ঠেঙ্গানি খেয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ। ২০১০ সালে অং সান সু চি বন্দিত্ব দশা থেকে মুক্তি পান। রোহিঙ্গারা নতুন আশায় বুক বাধে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী নেত্রী নিশ্চয় তাদের জন্য শান্তি বয়ে আনবেন। কিন্তু বোকা রোহিঙ্গারা জানে না নেত্রীর লক্ষ্য শান্তি কায়েম না, ক্ষমতার হিস্যা হওয়া। ২০১২ সালের নির্বাচনে তিনি সেটা পেয়েও যান। এরপর রোহিঙ্গারা বাঁচল না মরল তা নিয়ে উনার ভাবার অবকাশ কোথায়! নিউইয়র্ক, নরওয়ে স্টোকহোমে বক্তৃতা দিলে অনেক হাততালি জোটে। খামোখা রোহিঙ্গা নিয়ে কথা বলে মোড়ল দেশগুলোর বিরাগভাজন হতে যাবেন কেন? আশাহত রোহিঙ্গাদের সামনে সশস্ত্র আন্দোলন ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

২০১২ সালের জুলাইয়ে সু চি যখন নিউইয়র্কবাসিকে বাস্তুহীন মানুষের জন্য কাল্পনিক পৃথিবী গড়ার ফাকাবুলি আওড়াচ্ছিলেন, তখন তার জাত ভাইয়েরা আরও বেশি মানুষকে বাস্তুহীন করার জন্য প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছিল। এবার অবশ্য বর্মীরা রোহিঙ্গা নিধনে খুব বেশি সফল হতে পারেনি।

অবশ্য বাস্তুহীন করার ক্ষেত্রে এবারো তারা সফল, আনুমানিক ২২ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে ঘরছাড়া হয়। বার্মার গণতান্ত্রীক সরকার! বুঝতে পারে শান্তিপূর্ণভাবে আর রোহিঙ্গা নিধন সম্ভব না। দীর্ঘদিন মার খেতে খেতে এরা প্রতিরোধ শিখে গেছে। তাই রাখঢাক ছেড়ে ২০১৫ থেকে আবারো সামরিক অভিযান শুরু করে। আইওয়াশ হিসেবে বিশ্ববাসীকে দেখায় আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা সংক্ষেপে আরসার সৃষ্টিকে যা আরকানের অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী বলে দাবি করা হয়। ২০১৫ থেকে দফায় দফায় নানা ছুতোয় সেনাবাহীনি রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন জারি রাখে। কখনো উসিলা দেখায় নিরাপত্তা চৌকিতে আক্রমন, আবার কখনোবা বর্মী নারী ধর্ষণ। আমরাও নাসাকা বাহিনীর প্রোপাপান্ডা গিলে বলছি রোহিঙ্গারা জন্মগতভাবে অপরাধী। অথচ একবারও ভেবে দেখিনি নাসাকা বাহীনির কথা! যদি সত্যিও হয় তবু একজন মানুষের অপরাধে তারা কিভাবে একটা নৃগোষ্ঠীকে বাস্তুহীন করার অধিকার পায়? কোনো বেসামরিক মানুষকে হামলা না করে সামরিক চৌকিতে হামলা করার পরও আরসাকে আমরা জঙ্গি বলছি।

রোহিঙ্গাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা কিছুই নেই। আছে ফোর্স লেভার দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। টেকনাফ ও উখিয়ার পথে পথে মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা মানুষদের জানা গেছে- রাষ্ট্রীয় কাজে বিনে পারিশ্রমিকে রোহিঙ্গাদের শ্রম দিতে বাধ্য হওয়ার এমন অনেক গল্প। তবু তারা নিজ দেশেই থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের সামরিক সরকার যে উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা শুরু করেছিল, তা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

বৃটিশ আমলসহ বিভিন্ন সময়ে এসব অঞ্চল একই প্রশাসনের অধীনে থাকায় নানা সময়ে নানা জনগোষ্ঠীর মানুষ মিয়ানমারে যেমন গেছে, তেমনি এসেছে বাংলায়। ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে বঙ্গ এবং চট্টগ্রাম থেকে যেমন মানুষ আরাকানে গেছে তেমনি আরাকানসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলে দলে রাখাইন, চাকমা ও মারমা জনগোষ্ঠীর লোকজন এসেছে বাংলাদেশে। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পটুয়াখালীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করছেন। ইতিহাসবিদরা বলছেন, মিয়ানমারের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর নাম। মাত্র দুই দশক আগেও বার্মার মূলধারার রাজনীতি এবং নির্বাচনে ছিল তাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। কিন্তু দেশটির সামরিক জান্তা দেশ, রাজধানী, আরাকান, আকিয়াবের নামের মতোই পাল্টে দিয়েছে অনেক কিছুই। সুপরিকল্পিতভাবে মুছে ফেলতে চাইছে একটি জাতিগোষ্ঠীর চিহ্ন।

আজকে রোহিঙ্গারা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে, এক সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের রাখাইনরাও কিন্তু সেখান থেকে শরণার্থী হিসেবেই এদেশে এসেছিল। স্বার্থ ও রাজনীতির কারণে এখন যুক্তি ও মানবতা মার খাচ্ছে।

সু চি দেশে-বিদেশে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছে । বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মেনে নেয়নি সু চি’র সে অযৌক্তিক দাবি। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে একাধিকবার।

রাশিয়া, চীন ও ভারত মিয়ানমারের পক্ষ অবলম্বন করে সমস্যার সমাধানের কথা বলছে। অনেক সরকার ও কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ মানবিক বিপর্যয় দেখে সেদিক থেকে সমস্যার সমাধানের কথা বলছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক প্রভৃতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে থেকে সমস্যার সমাধানের কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ বাংলাদেশের ভূমিকার খুব প্রশংসা করছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কথার ওপর আস্থা রাখা যায় না। আর জাতিসংঘে তো শেষ পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোরই সংঘ।

রোহিঙ্গা সমস্যাকে বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত বড় সমস্যা হিসেবে দেখছে কিন্তু আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সিভিল সোসাইটি সেভাবে উপলব্ধি করছে বলে মনে হয় না। তাদের বক্তব্যেও পারস্পরিক ভিন্নতা ফুটে ওঠে। এনজিও মহল তাদের অবস্থানে থেকে কথা বলছে এবং কাজ করছে। এই বহুত্ববাদী বাস্তবতায় বাংলাদেশের জাতীয় অনৈক্য প্রকাশ পাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুত্ববাদ দারুণ জাতীয় অনৈক্যের পরিচয়কে প্রকটিত করছে। এর ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে দুর্যোগের মুহূর্তে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর সামনে নিজেকে ঐক্যহীন ও দুর্বল প্রমাণ করছে। আমরা চাই, বহুত্ববাদ নয়, বহুত্বমূলক সংহতি; আমরা চাই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। বহুত্ব ও বৈচিত্র্যকে যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে ঐক্য। এনজিও ও সিএসও মহল থেকে প্রচারিত বহুত্ববাদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব ও জনজীবনের জন্য সমূহ বিপদের কারণ হচ্ছে। আমি তবুও মানবিকতার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের সমস্যা উত্তরণের পক্ষে
রোহিঙ্গাদের ওপর এহেন ভয়াবহ নির্যাতনের পরও বিশ্ববিবেক যেন বধির। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো এতোদিন কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নিলেও এখন কিছুটা নড়েচরে বসতে শুরু করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেছেন- মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের যে তথ্য পাওয়া গেছে তা রক্ত হিম হওার মতো। নোবেল কমিটি অং সান সু চি’র নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহার করেছে। কানাডা সু চি’র নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে জাবতজীবন কারাদ-ে দন্ডিত করেছে। বিভিন্ন শক্তিধর দেশগুলো সু চি’র উপর চাপ প্রেয়োগ করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইতোমদ্ধেই বহির্বিশ্বে জনমত তৈরী করতে শুরু করেছে। বিশ্বেও বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বিশ্বসাহিত্য একাডেমি, বাংলাদেশ চলচিত্র পরিবার, বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, মানবাধিকার খবরসহ অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনগুলো মায়ানমাওে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে সোচ্চার রয়েছে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক চাপের ফলে অং সান সু চি কে ভোল পাল্টাতে দেখা যাচ্ছে। সু চি তার এক ভাষনে রোহিঙ্গাদেও ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে। বিন্তু পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। আন্তর্জাতিক চাপের হাত থেকে বাঁচার জন্য এটা সু চি’র একটা নয়া কৌশল। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে সমস্যার সাময়িক সমাধান হতে পারে। তাছাড়া মিয়ানমারকে প্রভাবমুক্ত করে রাখাইনকে আবার স্বাধীন আরাকানে পরিণত করতে পারলেই শুধু এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। তা না হলে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠীকে বাঁচানো সম্ভব নয়। জাতিসংঘ, ওআইসি, মুসলিম বিশ্ব ও বিশ্বের সকল মানবাধিকার সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হলে এবং এ ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করলেই নির্যাতনের অবসান সম্ভব।

আজ কয়েক যুগ পরে ‘ধবলী’ ও ‘কাজলী’কে আমার বড্ড বেশী মনে পরছে। ওদের মধ্যে যে মমত্ববোধ আমি দেখেছি তা সত্যিই দৃষ্টান্ত স্থাপনের দাবীদার। ওরা কুকুর হয়েও একে অপরের বাচ্চাকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে। যা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রানী মানুষের মাঝে তেমন একটা পরিলক্ষিত হয় না। আর মিয়ানমারের বৌদ্ধদের মধ্যেতো নয়ই। কিছুদিন একসাথে থাকার ফলে ‘ধবলী’ ও ‘কাজল’র মধ্যে যে মমত্ববোধ গড়ে উঠেছিল তার কিয়দাংশ যদি মায়ানমারের বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মাঝে গড়ে উঠতো তবে ‘রোহিঙ্গা মুসলমানরা’ বিশ্বেও সবচেয়ে নির্যাতিতো জাতি হিসেবে গন্য হতো না। এখন একটি কথাই জানতে ইচ্ছে করছে- শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি’র চেয়ে কি আমার ‘কাজলী’ই উত্তম ছিল ?

লেখক : কবি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট;
প্রধান নির্বাহী, বিশ্বসাহিত্য একাডেমি।

ই-মেইল : eliasshagar@gmail.com        



  
  সর্বশেষ
খুলনার কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনি`র মৃত্যুতে জানিপপ চেয়ারম্যানের শোক
কক্সবাজার জেলা পরিষদের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আল মারুফের যোগদান
৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, হুঁশিয়ারি সংকেত
মাদক কারবারে ককস বাজারের সাবেক এমপি বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308