শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * বাল্যবিবাহের কারণে বাড়ছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন   * চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শরীফ বলী;   * ঢাকা,চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান ;   * গাজীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অগ্নিকাণ্ড   * কক্সবাজারের টেকনাফে ধরা পড়ল ৪০০ কেজি ওজনের তলোয়ার মাছ   * মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা ও বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর   * ট্রাকচাপায় সড়কে ঝড়ল অটোরিকশা চালকের প্রাণ   * ৭নং ওয়ার্ডে এনজিও সংস্থা প্রত্যাশী এর সেমিনার অনুষ্ঠিত ;   * কুড়িগ্রামে অযৌক্তিক রেলভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন   * কুড়িগ্রামে তীব্র গরমে অচেতন হয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু  

   প্রবন্ধ
ভালোবাসার পয়লা বৈশাখ
  Date : 20-04-2017

সন্দেহবাদীরা প্রশ্ন উত্থাপন করতেই পারেন, পয়লা বৈশাখ অন্য দশটা দিনের চেয়ে আলাদা কিভাবে। সেই তো একইভাবে সূর্য ওঠে এবং অস্ত যায়, দিনের আলো নিভে আসে, সন্ধ্যার আঁধার ঘনায়। তারপরের দিন বা আগের দিনের থেকে পয়লা বৈশাখ ভিন্ন কী হিসেবে?
শিশুরা যখন জন্মায় তখন আর দশটা শিশুর সঙ্গে তার কি তেমন কোনো পার্থক্য থাকে? তবু মায়ের কাছে তার শিশু মহার্ঘ্য, অমনটি আর হয় না। কেন এমন মনে হয়? ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখেন বলে। তেমনি পয়লা বৈশাখকে আমরা ভালোবাসার চোখে দেখি, তাই ওই দিনটা অন্য সকল দিনের থেকে আলাদা লাগে আমাদের কাছে।
এ-প্রশ্নও উঠতে পারে যে, সারা বছর বাংলা পঞ্জির খোঁজ কজন রাখে? তাহলে পয়লা বৈশাখে এত সাজসজ্জা, এত নৃত্যগীতবাদ্যপুষ্প দিয়ে সাড়ম্বরে তাকে বরণ করা কি একটা লোক দেখানো ব্যাপার, একটা ভণ্ডামি নয়?
আমাদের ব্যবহারিক জীবনে বাংলা পঞ্জিকার ব্যবহার নেই বললে চলে। তাই হঠাৎ করে কাউকে বাংলা তারিখ জিজ্ঞেস করলে সে প্রায়ই ঠিক জবাব দিতে পারে না। যদি বাংলা মাসের হিসেবে আমরা মাস-মাইনে পেতাম, আদালতে আমাদের ডাক পড়ত, বিদ্যুৎ-গ্যাস-টেলিফোনের বিল দিতে হতো, তাহলে বাংলা তারিখ আমাদের ঠিকই মনে থাকত। তবু যে বছরের প্রথম দিনে আমরা অনুষ্ঠান করে, আড়ম্বর করে তাকে আবাহন করি, তাও মিথ্যে নয়। আমাদের যে একটা নিজস্ব বর্ষপঞ্জি আছে, আমরা যে সকল ক্ষেত্রে পরনির্ভর নই, সেটা আমরা উপলব্ধি করতে চাই, অন্যকে জানাতে চাই। তাই এমন আয়োজন।
 
আমাদের দেশে নববর্ষ-উৎসব পালিত হতো গ্রামাঞ্চলে মেলা করে। শহরাঞ্চলে ব্যবসায়ীরা হালখাতা খুলে সম্বৎসরের দেনা-পাওনার হিসাবের সারসংগ্রহ করতেন, ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ-রীতি, মনে হয়, আবহমান কালের। ইংরেজদের দেখাদেখি বাঙালিরাও নিউ ইয়ার্স ডে পালন করতেন দেখে ব্যথিত হয়ে উনিশ শতকের শেষে রাজনারায়ণ বসু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা নববর্ষ-উৎসব পালনের রীতি প্রবর্তন করেন, পরে তা ছড়িয়ে যায়।
আমার ছেলেবেলা কেটেছে কলকাতায়। সেখানে হালখাতার অনুষ্ঠানে গেছি পিতার হাত ধরে। মিষ্টি শুধু খেয়ে আসিনি, প্যাকেটে করে নিয়েও এসেছি। দেশভাগের পরে যখন ঢাকায় এলাম, তখন নববর্ষের অনুষ্ঠান প্রথম দেখি মাহবুব আলী ইনস্টিটিউটেথ বোধহয় লেখক-শিল্পী মজলিসের উদ্যোগে। অন্যত্রও সে-অনুষ্ঠান পালিত হয়েছিল, বোধহয় একবার কার্জন হলেও। পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে আমরাও তার আয়োজন করেছি সওগাত অফিসেথ তবে নিয়মিত নয়।
ধীরে ধীরে টের পাওয়া যায় যে, এই অনুষ্ঠান সরকারের পছন্দ নয়। আমার শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধের শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সেই পঞ্চাশ দশকেই এক প্রবন্ধ লিখে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ইরানি মুসলমানেরা যদি ইসলামপূর্ব নওরোজ অনুষ্ঠান সাদরে উদ্যাপন করতে পারে, তাহলে আমরা কেন বাংলা নববর্ষ পালন করতে পারব না। বিশেষ করে, যেখানে বাংলা বছরের শুরু সম্রাট আকবরের রাজস্ব-সংস্কারের ফলে, সেখানে তো ওই বর্ষপঞ্জি মুসলমানের দান বলেই গণ্য করতে হবে। থএসব প্রশ্নের উত্তর কেউ কখনো দেয়নি। যারা নববর্ষ পালন করার, তারা তা করে গেছে। সরকার তাদের সন্দেহের চোখে দেখেছে, নথিপত্রে তাদের দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের উত্তরাধিকারীরা কিন্তু তাতে দমেনি। ষাটের দশকে ছায়ানটের উদ্যোগে সংগঠিতভাবে নববর্ষ পালন শুরু হলো। সে-যাত্রা এখনো চলছে। এমনকি পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা মেরেও তা থামানো যায়নি।

 

 

                                                                         
এরই মধ্যে, এবারে, আওয়ামী ওলামা লীগ নামধারী এক ভুঁইফোড় সংগঠন ফতোয়া দিয়েছে, বাংলা নববর্ষ-পালন অনৈসলামিক, ওটা বন্ধ করে দিতে হবে। যে-কথা পাকিস্তান আমলেও জোরেশোরে বলা যেত না, বাংলাদেশে তা অনায়াসে বলে ফেললেন এই ধর্মব্যবসায়ীরা।
সরকার আবার নিরাপত্তার অজুহাতে দুটি ব্যবস্থা নিয়েছেন। চারুকলা অনুষদ থেকে যে মঙ্গল-শোভাযাত্রা বের হয়, তাতে মুখোশপরা চলবে না এবং বিকেল পাঁচটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করে ফেলতে হবে।
মঙ্গল-শোভাযাত্রায় মুখোশধারী কেউ প্রবেশ করে নাশকতামূলক কিছু করে ফেলবেথ এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। দুর্বৃত্তের ভয়ে গৃহস্থকে তাহলে প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিয়ে পলায়নের পথ খুঁজতে হবে। মেয়েদের লাঞ্ছিত করার ভয় থাকায় যাঁরা আজ পাঁচটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে বলছেন, কাল যে তাঁরা মেয়েদেরকে ঘরের বাইরে বেরোতে নিষেধ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী?
বাংলাদেশে তাহলে কি আমরা কেবল পেছন দিকে চলতে থাকব? শহিদ মিনারে আলপনা আঁকাকে, পুষ্পার্ঘ্য দেওয়াকে একসময় অনৈসলামিক বলা হয়েছিল। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে, ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে, বরকত ও সফিউর রহমানের কবরে যেতে মেয়েদের বাধা দেওয়া হয়েছিল। তখন তাঁরা কেউ নিজের জায়গা থেকে সরে যাননি এবং ছাত্রনেতারা আজিমপুর গোরস্তানের রক্ষণাবেক্ষণকারীদের সঙ্গে যুক্তিতর্কে বিজয়ী হয়ে তাঁদের প্রবেশাধিকার আদায় করে নিয়েছিলেন। ছয় দশকের বেশি সময় পরে আমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি।
যে-পাকিস্তান রাষ্ট্রের আদর্শকে আমরা ভেঙেচুরে বহু ত্যাগের বিনিময় বাংলাদেশ অর্জন করেছি, সেই বাংলাদেশকে কি আমরা আরেকটা পাকিস্তান বানাতে চাই? নিশ্চয় কিছু লোক চায়, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তা চায় না। আমাদের কি আবার ১৯৫২র মতো রক্ত দিতে হবে, ১৯৬৯-এর মতো গণ-অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে? তবেই ধর্মব্যবসায়ীরা ইঁদুরের গর্তে লুকাবেন এবং দেশে সুস্থ সবল স্বাধীন সংস্কৃতিচর্চা সম্ভবপর হবে? ইতিহাসের শিক্ষা কি আমরা নেবো না? তারপরও অযৌক্তিক বাধানিষেধ থাকবে?
ছায়ানটের নববর্ষের অনুষ্ঠানে যখন বোমার আক্রমণ ঘটেছিল, তারপর ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের টেলিভিশন সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন, তোমরা কি আগামী বছরে এখানে আবার আসবে? নিদ্বর্ধিয় তারা জবাব দিয়েছিল, আমরা আবার আসব। এখানেই বাংলাদেশের শক্তি। প্রতিক্রিয়াশীলদের ভয়ে এই শক্তিকে আমরা যেন দুর্বল না করে ফেলি।



  
  সর্বশেষ
বাল্যবিবাহের কারণে বাড়ছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শরীফ বলী;
ঢাকা,চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান ;
গাজীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অগ্নিকাণ্ড

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308