মুন্সী রেজাউল করিম মহব্বত কপিলমুনি (খুলনা) থেকে:
কপিলমুনিতে সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ীর পর এবার সাদা মাছে মড়ক দেখা দিয়েছে। ফলে মৎস্য ঘেরের উপর নির্ভরশীল প্রান্তিক চাষীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, কপিলমুনি এলাকায় আশির দশকে শুরু হয় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিংড়ি চাষ। চিংড়ির পাশাপাশি একই ঘেরে সাদা মাছের চাষও শুরু করেন মৎস্য চাষীরা। শুরুর দিকে চিংড়ি চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় কপিলমুনিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে পড়তে থাকে এ চাষ ব্যবস্থা। ৯০ দশকের শেষ দিকে দেখা দেয় ভাইরাসসহ নানা রোগ। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে চিংড়ি শিল্পকে এগিয়ে নিতে থাকেন এ শিল্পে সংশ্লিষ্টরা। কপিলমুনি, লতা ও হরিঢালী ইউনিয়নের প্রায় ১২‘শ ঘেরে গোটা মৌসুম জুড়ে এ বছর চিংড়িতে ভাইরাসের ঘানি টেনে একটু সস্তির জায়গায় যেতে না যেতেই প্রান্তিক চাষীর শেষ ভরসা সাদা মাছে মড়ক লাগায় হতাশায় ভুগছেন হাজার হাজার মৎস্য চাষী।
সরেজমিনে দেখা যায়, কামারাবাদ, চিনামলা, গোয়ালবাথান, ঠাকুরাবাদ, গংগারকোনা, হাড়িরাবাদ, গদারডাঙ্গা, বাহিরবুনিয়া, লতা, হানিরাবাদ, তালতলা, শংকরদানা, নাবা, ধোনারদোয়ানিয়া, উত্তর সলুয়া, দঃ সলুয়া, পানারাবাদ, পুটিমারী, শামুকপোতা, তেঁতুলতলা, কাটামারী, হরিদাশকাটী, উলুডাঙ্গা, রহিমপুর, লতা, হাউলী, খোলা ও নাছিরপুরের প্রায় ঘেরে ব্যাপক হারে সাদা মাছে মড়ক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মনোসেক্স তেলাপিয়া, রুই, মৃগেল, ভেটকি, কার্প মাছ বেশি বেশি মারা যাচ্ছে। কেন যে এমনিভাবে সাদা মারা যাচ্ছে সে কারণ যেন কোন ভাবেই নির্নয় করতে পারছেন না চাষীরা। ফলে কোন উপায় না পেয়ে দিশেহারা হয়ে গেছেন এ জনপদের মৎস্য চাষীরা।
এদিকে এই ভয়াবহ মড়ক থেকে মাছকে বাঁচানোর সুনির্দ্দষ্ট কোন ঔষধ বা প্রতিকার না থাকায়, চাষীরা অনুমাননির্ভর ঔষধ ক্রয় করে ঘেরে প্রয়োগ করে ভাল ফলও পাচ্ছেন না। ফলে তাদের বাড়তি টাকার অপচয় হচ্ছে।
কাজিমুছা গ্রামের মৎস্য চাষী শাহিন কাগজী বলেন, ‘সারা বছর বাগদা চিংড়িতে ভাইরাস লাগার পর সাদা মাছ ছেড়ে ভেবেছিলাম ঘের সেচার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ সাদা মাছ পাবো, কিন্তু সাদা মাছে ব্যাপক মড়ক দেখা দেওয়ায় সে আশা আজ নিরাশায় পরিণত হয়েছে। জমির হারির টাকা কিভাবে পরিশোধ করব তা নিয়ে চিন্তায় আছি’।
এবিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, ‘মৎস্য ঘেরে মাছ চাষে ভাল ফল পেতে হলে ঘেরে অবশ্যই ৩ ফুট পানি থাকতে হবে, না থাকলে মাছের সমস্যা হয়। তাছাড়া পুষ্টির অভাবে মাছ হঠাৎ করে মারা যেতে পারে’। এ মড়কের প্রতিকারের প্রশ্নে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘চুন, জিওলাইড পাউডার প্রয়োগ ও যে কোন উপায়ে পানিতে অক্রিজেন প্রবেশ করাতে হবে’।