মো. সামিউল আহমেদ:
গত ২৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের রসরাজ দাস নামক এক হিন্দু যুবক তার ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবাশরিফের উপর শিবমন্দিরের ছবি পোস্ট করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উক্ত এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয়রা ঐ যুবককে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এরপরও তীব্র প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। কয়েকটি ইসলামী সংগঠন ও স্থানীয় মুসলমানরা পরের দিন ৩০ অক্টোবর প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয়। পৃথক দুটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হাজার হাজার লোক অংশ নেয়। প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালীন একদল লোক বহু হিন্দু বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর এবং লুটপাট করে। কে বা কারা এগুলো করেছে তাদেরকে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে সনক্ত করার চেষ্টা চলছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত ৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, ঘটনার নয়দিন পর তিনি ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার আইজিপি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের কতিপয় নেতাকে নিয়ে নাসিরনগর পরিদর্শন করেছেন। এদিকে, ক্ষতিগ্রস্থ ৫১টি হিন্দু পরিবারের মধ্যে গত ৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দু-মুসলমানরা দীর্ঘদিন যাবত একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেনইবা রসরাজ দাস কর্তৃক পবিত্র কাবাশরিফ অবমাননা করা হলো, পরবর্তীতে কারাইবা হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা চালান এ রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে প্রশাসন। স্থানীয়দের অনেকেই দাবি করেছে হামলাকারীরা বহিরাগত এবং স্থানীয় অনেক মুসলমান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হামলা থেকে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির রক্ষা করার চেষ্টা করে। এদিকে এ ঘটনা ঘটার পর ২ নভেম্বর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার কয়েকটি মাদ্রাসা ও মসজিদের গেইটে দুর্বৃত্তরা তালা দেয় এবং ভাদুঘরের একটি মাদ্রাসার তোরণের মধ্যে কাবাশরিফের উপর শিবমন্দির বসানো ছবির পোস্টার লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু ৪ নভেম্বর সকালে নাসিরনগরে আবারো নতুন করে ৫টি হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে করে স্থানীয় হিন্দুদের মধ্যে উদ্ভেগ ও আতংক তৈরি হয়। তবে এ ঘটনায় কারা জড়িত সেটি পুলিশ বা স্থানীয়রা তাৎক্ষনিকভাবে কিছইু বলতে পারেনি। পুলিশের নিরাপত্তা থাকার পরও কীভাবে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটল এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান পিপিএম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন যারা অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চাচ্ছে তারাই নতুন করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন মূল বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়নি, গোয়ালঘর ও রান্নাঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। যে জায়গাগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি নেই সেই জায়গাগুলোতে এ ঘটনা ঘটেছে। মূল ঘটনার পর নাসিরনগর থানার ওসিকে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া বিতর্কিত ভূমিকার জন্য স্থানীয় আওয়ামীলীগের তিন নেতাকে বহিস্কার করা হয়।
এ সমস্ত ঘটনার পর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা দেশে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছে। হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের ঊধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। বর্তমানে নাসিরনগরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাধিক মামলা হয়েছে। ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে ব্রহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালগুদের ওপর হামলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে।