মঙ্গলবার, জুলাই ১, ২০২৫
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন চিতলমারী সীমান্তে নগরমান্দ্রায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব   * কক্সবাজারের উখিয়ায় অপহরণ চক্রের ১সদস্যকে গ্রেফতার করেছে. র‍্যাব-১৫   * কুমিল্লার মুরাদনগরের আলোচিত ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলী সহ গ্রেফতার ৪ জন   * চিতলমারীতে দোহার তৈরি করে জীবিকা চলে শতাধিক পরিবারের   * ভেসে গেল মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁই: চর আব্দুল্লাহর রাকিব এখন খোলা আকাশের নিচে   * সাতক্ষীরায় মাদকদ্রব্যরে অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আর্ন্তজাতকি দবিস পালন   * পঞ্চগড়ে আবারও সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠালো ভারতীয় বিএসএফ   * কক্সবাজারে ছাত্রশিবিরের ‘বৃক্ষরোপণ অভিযান ২০২৫   * চট্টগ্রামে শতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদ   * কুমিল্লা থেকে সেনাবাহিনী, RAB ও পুলিশের যৌথ অভিযানে আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক মুন্নার বাড়ি থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র  

   প্রবন্ধ
পর্নোগ্রাফি জীবন ধ্বংসের হাতিয়ার
  Date : 01-11-2016

 

মুহাম্মদ আবদুল কাহহার

 

পর্নোগ্রাফি কথাটির সাথে আমরা এখন বেশ পরিচিত। এর অর্থ হলো- যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যৌনসংক্রান্ত বিষয়বস্তুর প্রতিকৃতি অঙ্কন বা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা। সম্প্রতি নারীদেহ, নারীর রূপ-সৌন্দর্য, পোশাক-আশাক তথা নারীর সামগ্রীক যৌনতাকে উপজীব্য করে অকথ্য, অব্যক্ত, বিকৃত ও কুরুচিপূর্ণ যৌনতায়ভরা কতিপয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা দেখা যায়। এর আধুনিক নাম হচ্ছে ‘ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি’। কিন্তু এই শব্দটিই যে আমাদের সন্তানদেরসহ গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে কলুষিত বা ধ্বংস করে দিচ্ছে সে বিষয়টি হয়তো কখানো চিন্তা করিনি। আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের রয়েছে নিজস্ব মোবাইল ফোন। আবার অনেকেরই রয়েছে একাধিক ফোন। অধিকাংশ ফোনেই রয়েছে মেমরি কার্ড ব্যবহার সুবিধা। ভাল ও মন্দ দু’ধরণের কাজেই মেমরিকার্ড ব্যবহার হয়। এর মাধ্যমেই খুব সহজে অন্যায় ও গর্হিত কাজে জড়িয়ে পড়া যে কারো পক্ষে খুবই সহজ। বিতর্কীত কাজ থেকে নিজেরা বিরত থাকলেও আমাদের সন্তানদের বিরত রাখছি কি না সেটিও  গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।

কেননা, গত ১ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ নামের  একটি সংস্থা ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি: সংবাদ বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ অভিমত’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকায় স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ শতাংশ পর্নোগ্রাফি দেখে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেশে তৈরী এই পর্নোগ্রাফিগুলোয় যাদের ভিডিও দেখানো হচ্ছে, তাদের বয়স ১৮ বছরের কম। অনুষ্ঠানে সংস্থার শিশু সুরা কার্যক্রমের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ৫০০ স্কুলগামী শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, সুস্থ যৌন শিক্ষার বিপরীতে বিকৃত যৌন শিক্ষার মধ্যে বেড়ে উঠছে। সংস্থার গবেষণায় আরো দেখা গেছে, চারটি পদ্ধতিতে অশ্লীল ভিডিও তৈরী হচ্ছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে তৈরী পর্নোগ্রাফির চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ঘিরে পর্নোভিডিও মানুষ বেশি দেখছে। ‘যুক্তরাজ্যে ছেলেদের অনলাইনে প্রথম পর্ন ছবি দেখার গড় বয়স মাত্র ১১! আর  ১৩-১৮ বছর বয়সী ৩ হাজার বালকের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, তাদের ৮১ শতাংংশই অনলাইনে পর্ন দেখছে।’(কালের কন্ঠ, ১১ সেপ্টেম্বর,‘১৬)। ২০১৩ সালে ঢাকার কয়েকটি কয়েকটি স্কুলে পরিচালিত একটি বেসরকারি টেলিভিশনের পরিচালিত অপর এক জরিপে দেখা যায়, ‘স্কুল শিক্ষার্থীদের ৮২ শতাংশ ছেলেমেয় স্বীকার করে যে, তারা সুযোগ পেলে মোবাইলে পর্নো ছবি দেখে। প্রায় ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে বসেই পর্নো ছবি দেখে। প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা মোবাইলের পেছনে ব্যয় করে। অঅর ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায় তারা কেবল প্রেম করার উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।’ (বিবার্তা, ৪ অক্টোবর,‘১৬)।

বর্তমান প্রজন্মের জন্য বড় একটি ঝুঁকি হলো, অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখা। বাস্তবে পাওয়া যায় না এমন আকর্ষণ ও চাহিদা মেটাতেই পর্নোগ্রাফি দেখছে বলেই গবেষণা খেকে জানা যায়। যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ১৯৫৫ সালে পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীলতাকে সভ্যতার কালো দাগ বলে মন্তব্য করেছেন। জার্মানের একদল গবেষক বলেছেন, ‘নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখলে  মস্তিষ্কের একটি বিরাট অংশ সংকুচিত হয়ে কার্যক্ষমতা কমে যায়। প্রাপ্তবয়স্করা ‘দোষী’ বিনোদন হিসেবে পর্নোগ্রাফি দেখে। অনেক অভিভাবকরা শিশুদেরকে দামি ফোন, ট্যাব ও সেগুলোয় ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু তারা কী কাজে এগুলো ব্যবহার করছে, সে বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা মৌলিক দায়িত্ব। পর্নোগ্রাফি দেখলে মুহূর্তে সে যৌনতার কল্পরাজ্যে ঘুরে বেড়ায়। মানবদেহে সুখানুভূতির অনুভূতি জাগায়। বিভিন্ন কৌশল ও নেতিবাচক চিন্তায় সে জর্জিত হয়ে হয়ে বাস্তবে পরিণত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অবৈধ পন্থায় এমন কর্মে লিপ্ত হতে গিয়ে লজ্জা হারিয়ে ফেলে। এর ফলে স্বাস্থ্যগত ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এতে করে, শিশুদের যৌন জীবন ও ভবিষ্যত দাম্পত্য সম্পর্ক ধ্বংস হচ্ছে। পর্নো আসক্তি হলে-নৈতিক অবক্ষয়, যৌন নিপীড়ন, পারিবারিক কলহ, হতাশা, সামাজিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। রুচি বোধের অবণতি হয়, নিঃসঙ্গতা চেপে বসে, শারীরিক ক্ষতি হয়, সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়,  বৈবাহিক জীবনে নারী-পুরুষ একে অপরে ঘৃণার চোখে দেখে এবং পরকালে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

পর্নোগ্রাফি থেকে সন্তানদের দূরে রাখতে চেষ্টা করতে হবে। ‘ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফির প্রায় শতকরা ২০ ভাগ অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিয়ে। প্রতি সপ্তাহে ২০,০০০-এর বেশি অপ্রাপ্তদের ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট করা হয়।’ (প্রিয় ডটকম)। সীমালংঙ্ঘন ও মন্দ বিষয় থেকে আমাদের সন্তান ও তরুণপ্রজন্মকে সুরক্ষার জন্য পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট কতিপয় দায়িত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্বই মৌলিক ভূমিকা হিসেবে কাজ করবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্নোগ্রাফির সাথে সম্পর্কিত ২০০ শব্দের ওপর সংবরণ দেয়া আছে। কেউ ওই শব্দগুলো লিখে সার্চ দিলে সার্ভারে নোটিফিকেশন যায়। অনুমোদন ছাড়া ওই সব সাইটে ঢোকা যায় না। বিশ্বের অন্যন্য দেশের দিকে তাকালে দেখতে পাই, চীনে পর্নোগ্রাফি ব্যবস্থাপনা রয়েছে, সিঙ্গাপুরে নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে, মালয়েশিয়ায় সমাজোপযোগী ফিল্টারিং ব্যবস্থা, সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরব মুসলিম সমাজে নেতিবাচক সাইট ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং ইন্টারনেটভিত্তিক সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটসমূহ প্রবেশের অগ্রহণযোগ্য। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও নেতিবাচক সাইটগুলোকে সরকার কেন ফিল্টারিং করছে না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কোন ধরণের কটুক্তি করলে বা বিতর্কিত কোনো ছবি পোস্ট করলে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬, তথ্য ও প্রযুক্তি (সংশোধিত) আইন ২০১৩ প্রয়োগ করে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হলে অশ্লীল ছবি, ভিডিও পোস্টকারী ও পর্নোসাইট নিয়ন্ত্রণে ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এ দ-বিধির যে ধারা উল্লেখ রয়েছে তা কেনো বাস্তবায়ন করা হবে না? যথা শীঘ্রই ইন্টারনেট ব্যবহারে শৃঙ্খলা আনতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষকরে যৌন সংবেদনশীলতা, পর্নো বই, সিডি, ভিডিও তৈরী ও প্রচার কিংবা ডাউনলোড করে যারা সরবরাহ করছেন তাদেরকে অনুসন্ধান করে বের করা উচিত। 

 

মনে রাখতে হবে, নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি প্রবল আগ্রহ, পর্নোগ্রাফির অতিমাত্রায় সহজলভ্যতা, সন্তানদের কর্মকান্ডের ওপর অভিভাবকদের যথাযথ নজরদারি, প্রযুক্তির অসৎ ব্যবহার, ধর্মীয় অনুশাসন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে আইনের বাস্তবায়ন ও ইন্টারনেট ফিল্টারিং না থাকা আসক্তির অন্যতম কারণ।

মাতা পিতার উচিত শিশুদের সঙ্গে বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতেই অর্থাৎ ১০ বছর বয়সেই স্বাস্থ্যকর ব্যপারে আলাপ-আলোচনা শুরু করা। পর্নোগ্রাফি ব্যবহার আইন করে বন্ধের চেয়ে এর খারাপ দিকগুলো বুঝাতে সক্ষম হলে অবশ্যই ইতিবাচক কাজে সন্তানরা আগ্রহী হবে। ইন্টারনেট ব্রাউজার হিস্টোরী চেক করা।  বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্রাউজিং করতে করতে অনাঙ্খিতভাবে কোনো পর্নো ওয়েবসাইট  সামনে চলে আসতে পারে, তাই ওয়েবসাইট ব্লক করার পদ্ধতি জানতে হবে। কম্পিউটারের মনিটর এমনভাবে সেট করা যাতে বাসার সবাই তা দেখতে পায়।  সন্তানদের সাথে বন্ধুর মতো মিশে বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও কোনো সমস্যার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা। শিশুদের খেলাধুলাসহ বিনোদানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। মা-বাবা যতই বাস্ত থাকুক না কেন সন্তানকে মানুষ করতে চাইলে তাদেরকে সময় দিতে হবে। কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ সে বিষয়ে পৃথক করার জ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে। সন্তানের মোবাইল ফোন, সিডি, মেমরি, পেনড্রাইভ,  ট্যাব, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি লুকিয়ে রাখছে কিনা বা পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা, অশ্লিলতার কাজে ব্যবহার সম্পর্কে খোঁজ  রাখা। রাতে কিংবা দিনের কোনো সময়ে একাকি ইন্টানেট ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করুন। কোনো আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও সংরক্ষণ করছে কি না তা খতিয়ে দেখা। এছাড়া পর্নোগ্রাফি সম্পর্কে ইসলামের দিক নির্দেশনাগুলো মানতে হবে। আল কুরআনে বলা হয়েছে -‘তাদের বলে দাও  হে মুহাম্মদ): আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপকাজ---নিষিদ্ধ করেছেন। (৭:৩৩)। মুসলিম শরীফের এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘কোনো পুরুষ বা নারীর উচিৎ নয় অপর কোন পুরুষ বা নারীর গোপনাঙ্গের  দিকে দৃষ্টিপাত না করা। এককথায়, নৈতিক মূল্যবোধের বিকল্প নেই।

 

লেখক: শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট



  
  সর্বশেষ
জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন চিতলমারী সীমান্তে নগরমান্দ্রায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব
কক্সবাজারের উখিয়ায় অপহরণ চক্রের ১সদস্যকে গ্রেফতার করেছে. র‍্যাব-১৫
কুমিল্লার মুরাদনগরের আলোচিত ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলী সহ গ্রেফতার ৪ জন
চিতলমারীতে দোহার তৈরি করে জীবিকা চলে শতাধিক পরিবারের

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308