শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকে অস্থিতিশীল করছে যুক্তরাজ্য : অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ;   * ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’   * বাল্যবিবাহের কারণে বাড়ছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন   * চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শরীফ বলী;   * ঢাকা,চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান ;   * গাজীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অগ্নিকাণ্ড   * কক্সবাজারের টেকনাফে ধরা পড়ল ৪০০ কেজি ওজনের তলোয়ার মাছ   * মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা ও বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর   * ট্রাকচাপায় সড়কে ঝড়ল অটোরিকশা চালকের প্রাণ   * ৭নং ওয়ার্ডে এনজিও সংস্থা প্রত্যাশী এর সেমিনার অনুষ্ঠিত ;  

   প্রবন্ধ
বঞ্চিত ও দরিদ্রদের জন্য কোরবানীর পশু বন্টনঃ একটি মডেল উপস্থাপন
  Date : 01-09-2016

তারেক মোহাম্মদ জায়েদ

কোরবানীর মূল শিক্ষা:

চান্দ্র বসরের শেষ মাসে ঈদুল আযহা বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়। মুসলিমপ্রধান দেশ হিসাবে বাংলাদেশেও ১০ জিলহজ্জ ঈদুল আযহা পালন করা হয়। এই দিন ঈদগাহে সালাত আদায় করা হয় এবং পশু যবেহ করা হয়। নিশ্চয়ই পশু যবেহ করার সকল আয়োজন একটি প্রতিকী ইবাদত মাত্র অর্থাৎ এটার পিছনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য। এজন্যই আল্লাহ আলকুরআনে বলেন : ‘তোমাদের যবেহ করা পশুর রক্ত ও গোশত কোনোটাই আল্লাহ গ্রহণ করেন না, তবে তিনি তোমাদের আল্লাহ-ভীতিটাই গ্রহণ করেন।’ (সুরা হজ্জ: ৩৭)। এই আয়াতের সার কথা হচ্ছে আল্লাহ তাআলা মানুষের খোদা-ভীতিটাই দেখেন যা একেবারেই আন্তরিক। একইভাবে, আল্লাহ তাআলা রমযান মাসের রোযা রাখার মাধ্যমে আল্লাহভীতি অর্জনের উপর তাগিদ দিয়েছেন। ইসলামের অন্য দুটি মৌলিক ইবাদত তথা যাকাত এবং হজ্জের অন্তরালেও একই উদ্দেশ্য নিহীত।

কোরবানীর পশু যবেহ করার মাধ্যমে মানুষ একটি প্রাণীকেই মাত্র জবেহ করে থাকে। এর থেকে আমাদের ত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এই শিক্ষা আমাদেরকে আরো ত্যাগে উজ্জীবিত করবে। সর্বোচ্চ ত্যাগ সেটাই যা মানুষকে মানবতার সেবায় নিঃস্বার্থভাবে নিয়োজিত করে। আলোচ্য প্রবন্ধে কোরবানীর পশু যবেহ ও গোশত বিতরণ সংক্রান্ত একটি মডেল উপস্থাপন করা হয়েছে। তার আগেই আমি বলে নিচ্ছি কেন একটি মডেল উপস্থাপন অত্যন্ত জরুরী। যেহেতু আল্লাহ মানুষকে অর্থ ও সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন তাই ধনীদের অন্যতম কর্তব্য হচ্ছে দরিদ্রদেরকে তাদের সম্পদের অংশীদার মনে করা। এ ব্যাপারে আল-কুরআন অনেক আলোচনা করলেও সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য হচ্ছে সূরা মুদ্দাসস্রি এর ৪৪ নাম্বার আয়াত। এই আয়াতে আল্লাহ বলেন, যারা গরিব ও মিসকীনদের খাদ্য সামগ্রী দিবে না তারা ‘সাকার’ নামক দোযখে প্রবেশ করবে। বিদায় হজ্ঝের ভাষণে মহানবী (স.) আমাদেরকে মানুষের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। এমনটি তিনি বলেছেন  যে, একটি মানুষের মর্যাদা আল্লাহর কাছে স্বয়ং কাবা ঘরের মর্যাদার মতই।

এই মর্যাদা সম্পন্ন মানুষের কষ্ট লাঘব করা ও তার সেবা করা অন্যদের দায়িত্ব। এমনকি মানুষের সেবা আল্লাহর সেবা করারই নামান্তর।  এছাড়া কোরআনের অন্যান্য আয়াতে দরিদ্রদের খাদ্য দিতে প্রত্যক্ষভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেহেতু একটি কোরবানীর পশু থেকে আমরা অনেক গোশত পেয়ে থাকি যার পুরোটাই খাদ্য সামগ্রী হিসাবে বিবেচিত হয় তাই এই কোরবানীর আয়োজনের ভিতর কীভাবে অনেক গরিব মানুষকে উপকৃত করা সম্ভব তা আলোচনা করা জরুরী।

সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের হার:

কোন পরিসংখ্যান ছাড়াই একথা নির্দিধায় বলা যায় যে, বাংলাদেশের একটি বিরাট জনগোষ্ঠী দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত। এমনকি নিয়মিতভাবে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করার সামর্থও তাদের নেই। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের দিক খেকে যখন গড়পরতা অধিকাংশ জনগণই পিছিয়ে তখন আমাদের আরেকটি বিরাট জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা প্রকৃতপক্ষে সকল প্রকার পুষ্টিকর খাবার থেকেই বঞ্চিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুষ্টিকর খাবারের উৎস মূলত দুটি। প্রথমটি হলো হর্টিকালচার ও ক্ষেতখামার থেকে প্রাপ্ত সকল প্রকার ফলমূল, শস্যজাত খাবার, ও শাকসবজি। আর দ্বিতীয়টি হলো পোলট্রি ও ডেইরী ফার্ম থেকে প্রাপ্ত সকল প্রকার ডিম, গোশত, এবং দুধ। আমাদের দেশের খাদ্য চাহিদার ৭০ শতাংশই পুরণ হয় ক্ষেতখামার থেকে প্রাপ্ত চাল, ডাল, ও অন্যান্য শস্যজাতীয় খাবার থেকে। অথচ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ঋঅঙ)ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) আদর্শ খাদ্য তালিকার হিসাব মোতাবেক ৬০ শতাংশ খাদ্য চাহিদা চাল, ডাল, ও অন্যান্য শস্যজাতীয় খাবার থেকে পূরণ করা বাঞ্চনীয়। এ হিসাব থেকে বুঝতে পারি যে ফলমূল ও গোশত থেকে যে পরিমাণ খাদ্য আমাদের গ্রহণ করা উচিত তা আমরা করছি না।

বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণেরই নিয়মিতভাবে পরিমাণমত ফলমূল, দুধ, ডিম ও গোশত থেকে খাদ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। পরিসংখ্যাণের হিসাবে দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তির ৪০০ গ্রাম ফল ও শাক-সবজি খাওয়া উচিত অথচ আমাদের দেশে তার পরিমান হচ্ছে মাত্র ২০০ গ্রাম। এমতাবস্থায় খাদ্য হিসাবে দুধ, ডিম ও গোশতের অবস্থান আরো অনেক নিচে। উপরে যে গড় হিসাব দেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে খাদ্য বঞ্চিত বিরাট জনগোষ্ঠীর পুষ্টিগ্রহণের হার অনেক নিম্ন।

পুষ্টি ও মানব সম্পদ উন্নয়ণের সম্পর্ক: আব্রাহাম মাসল’র তত্ত্ব:

দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নের সাথে যেমন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সম্পর্ক আছে তেমনি এর পিছনে নিয়মিতভাবে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের ভূমিকাও অনেক। যে দেশে খাবারের সুষম বন্টন রয়েছে এবং যে দেশে খাবার সহজলভ্য সে দেশের মানুষ সামগ্রিকভাবে অধিক যোগ্য এবং দক্ষ। এর সারকথা হচ্ছে খাবার এর সাথে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এই ধারণা বৈজ্ঞানিক হলেও মূলত: আব্রাহাম মাসল(মৃত্যু ১৯৭০) এর পাঁচস্তর বিশিষ্ট চাহিদা তত্ত্ব থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। মাসল ১৯৪৩ সালে ইঙ্গিত করেন একজন ব্যক্তির দারিদ্র্য বিমোচন বা মৌলিক চাহিদা নিবারণ করলে তার আত্মিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। তিনি তাঁর তত্ত্বে একজন ব্যক্তির প্রধানত: চারটি চাহিদা পূরণ করার কথা বলেন। সেগুলো হলো শারীরিক চাহিদা (যথা: খাদ্য, পানীয়), নিরাপত্তার চাহিদা, পারষ্পারিক আন্তরিকতা ও ভালবাসার চাহিদা, সম্মান প্রাপ্তির চাহিদা। তিনি বলেন এই চারটি চাহিদা পূরণ হলেই একজন ব্যক্তি তার জীবনে যা করা উচিত তা করতে পারেন। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন।

একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ লক্ষ্য হওয়া উচিৎ দেশ ও জাতির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। নিজেকে দেশ ও জাতির জন্য গঠন করা। আব্রাহাম মাসল’র তত্ত্ব অনুযায়ী এই লক্ষ্য অর্জনের প্রথম স্তরেই ব্যক্তির চাহিদা মোতাবেক সকল মানুষের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অথবা তা নিশ্চিত করা দেশ ও জাতির কর্তব্য। আর তখনই কেবল একটি জাতির জনগোষ্ঠী নিজেদেরকে দক্ষ মানবসম্পদে উন্নীত করার মাধ্যমে উক্ত দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে বিপুল জনসংখ্যা হওয়া সত্তেও দক্ষ মানবসম্পদের অভাব রয়েছে। অথচ এই সমস্যা সমাধানের পিছনে সঠিক খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহের সম্পর্ক নিহিত। বাংলাদেশের দারিদ্র্য পীড়িত বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা কোরবানীর পশুর গোশত দিয়ে কিছুটা হলেও পূরণ করা সম্ভব।

কোরবাণীর পশু বন্টনের একটি মডেল প্রস্তাব:

আমাদের দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত কালচার যে যারা কোরবানীর পশু যবেহ করে থাকেন তারা উক্ত পশুর সব গোশত নিজেরা খান না বরং তারা এর কিয়দংশ প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, ফকীর মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে থাকেন। গোশত বিতরণের এই পুরো প্রক্রিয়াটি কোন নিয়ম মাফিক হয় না বিধায় এর দ্বারা কোন দীর্ঘস্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী উপকার আশা করা যায় না। বাংলাদেশের উপরোল্লিখিত দীর্ঘদিনের পুরোনো কালচারের পাশাপাশি আরেকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে যা দিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ কিছুটা হলেও সম্ভব হবে। কীভাবে কোরবানীর পশু বা পশুর একটি অংশ এর সঠিক হকদ্বার বা প্রাপকের কাছে পৌঁছানো যায় তার একটি খসড়া মডেল নি¤েœ উপস্থাপন করা হলো:

তত্ত্বগতভাবে এটা প্রমাণিত এবং সত্য যেকোন কাজের তথ্য মানুষকে উক্ত কাজে নিয়োজিত করতে পারে অথবা তা করা থেকে বিরত রাখতে পারে। তাই একটি ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে কোরবানীর পশুর দরিদ্র গ্রাহকদের উপস্থাপন করা যেতে পারে। যে কোনো একটি বেসরকারী সংস্থা এই দরিদ্র গ্রাহকদেরকে পাড়া মহল্লা থেকে চিহ্নিত করতে পারে। উক্ত সংস্থা প্রচারের মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের জন্য একটি পশু না হলেও অন্তত: একটি পশুর অংশবিশেষ গ্রহণ করতে পারে। একটি পশুর গোশত বিভাজনের ও বিতরণের এই প্রক্রিয়া বা নিয়ম একেবারেই নতুন নয়। আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশের অনেক ক্রেতারাই বাজার থেকে ফ্রজেন বীফ ক্রয়ের পরিবর্তে সরাসরি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে একাধিক ক্রেতা সম্মিলিত হন। অত:পর তারা সুবিধামত সময়ে যেকোনো একদিন একটি খামার থেকে একটি গরু ক্রয় করে তা জবেহ করে এর টাটকা গোশত ক্রয় করে থাকেন।

কোরবানীর পশু যবেহ করার মূল উদ্দেশ্য টাটকা গোশত খাওয়া নয় বরং যবেহকৃত পশুকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করাই আসল লক্ষ্য। গোশত পুরোটাই নিজেরা না খেয়ে গরিবদেরকে একটি মডেলের আওতায় এনে বিতরণ করা যেতে পারে। একজন ধনী ব্যক্তি যিনি দুটি পশু জবেহ করার সামর্থ রাখেন তিনি অন্তত: একটি পশু গরিবদেরকে দান করে দিতে পারেন। কেউ একটি ছাগল অথবা ভেড়াও দান করতে পারেন। কেউ কমপক্ষে কিছু টাকাও এই খাতে সংস্থাটিকে দান করতে পারেন। গরিব পরিবারের সঠিক তথ্য সরবরাহ এবং ধনী ব্যক্তিদের সম্মিলিত সাহায্যের ফলে একটি সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘস্থায়ী উপকার ও জনসেবা আশা করা যায়। মনে রাখতে হবে কোরবানীর মূল লক্ষই হলো ত্যাগ ও জনসেবায় ব্রতী হওয়া।

লেখক: পি এইচ ডি গবেষক, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া



  
  সর্বশেষ
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকে অস্থিতিশীল করছে যুক্তরাজ্য : অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ;
ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
বাল্যবিবাহের কারণে বাড়ছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শরীফ বলী;

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308