পূর্ব প্রকাশের পর
কি কি মনে রাখতে হবে
শিশুর স্বাভাবিক ক্রমবিকাশে সহায়তা করার জন্য যে সকল অনুশীলন করতে হবে তা সংক্ষেপে নি¤েœ উল্লেখ করা হলো। তাবে তার আগে মা-বাবাকে মনে রাখতে হবে,
১। শিশুর পোষাক ঢিলেঢালা রেখে তার স্বাভাবিক চলাফেরার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
২। বিভিন্ন রঙের এবং বিভিন্ন আকৃতির খেলনা শিশুকে দেওয়া উচিত।
৩। শিশুর খেলার সাথী সহসা পরিবর্তন করা যাবে না। অর্থাৎ আজ একজন, কাল আরেকজন বা পরশু আবার অন্য কেউ- এমনি ধরনের পরিবর্তন শিশুর স্বাভাবিক ক্রমবিকাশের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
৪। শিশুর খেলার মাঝে হঠাৎ তার মনোযোগ অন্য দিকে আকৃষ্ট করা যাবে না। অর্থাৎ তার খাবার সময় হয়ে গেছে- তাই হুট করে তাকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তার সাথে ন¤্রভাবে কাজ করতে হবে।
৫। গোসলের বেশ কিছুক্ষণ তাকে নিয়ে অনুশীলন করলে ভালো হয়। অনুশীলনের পর শিশু ঘেমে গেলে শরীর মুছে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে এবং পরে গোসল করাতে হবে। ঘামে ভেজা শরীরে তাকে গোসল করানো যাবে না।
অনুশীলনসমূহ
১। বুকের উপর শিশুকে শুইয়ে এমনভাবে খেলনা দেখাতে হবে, যেন তার দিকে তাকাতে গিয়ে শিশুর অবশ্যই মাথা ঘোরাতে হয়।
২। তাকে বুকের উপর থেকে পিঠে এবং পিঠের উপর থেকে বুকে- এমনি করে গড়াতে সাহায্য করতে হবে।
৩। দু’হাত ধরে আলতোভাবে টেনে বসাতে সাহায্য করতে হবে। জোরে টানলে শিশু ব্যথা পাবে।
৪। পাঁচ মাস বয়স থেকে দু’পাশে বালিশ দিয়ে মাঝে মাঝে বসিয়ে দিতে হবে।
৫। বিভিন্ন পাশ থেকে এমনভাবে খেলনা দেখাতে হবে এবং তার কাছে আনতে হবে, যেন সে সহজেই ধরতে চেষ্টা করে এবং ধরতে পারে।
৬। শিশুর নাম ধরে বিভিন্ন দিক থেকে ডাকতে হবে এবং তাকে আকৃষ্ট করতে হবে।
৭। আয়নার সামনে দাড়িয়ে তাকে প্রতিবিম্ব দেখিয়ে খেলা করানো যায়। তবে অনেক শিশু এটা পছন্দ করে না ভয় পায়, সেক্ষেত্রে তা করা যাবে না।
৮। শিশুর সাথে কথা বলে, জানালার বাইরে বা ঘরের বিভিন্ন জিনিস দেখিয়ে তাকেও কথা বলাতে চেষ্টা করাতে হবে।
চার মাস বয়স থেকেই শিশু সবাইকে চিনতে শেখে। তার নিজস্ব জিনিসগুলো তাই এ সময় তার কাছে প্রিয় হয়ে দাড়ায়। ছয় মাস বয়সে সে কথা বলতে চেষ্টা করে। এ সময় খুব মনযোগের সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে, শিশু কানে শোনে কিনা। বিভিন্ন দিক থেকে শব্দ করে তার মনোযোগ আকৃষ্ট করতে হবে। যদি সে শব্দের উৎস খোজে, তবে সে নিশ্চই কানে শুনেছে। যদি সে কানে না শোনে তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কানে না শুনলে সাধারনত কথাও বলতে শেখে না। ফলে শিশুর মানষিক বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
শিশুকে মাঝে মাঝে কোলে নিয়ে আদর করতে হবে। তবে সারাদিনই তাকে কোলে কোলে রাখা ঠিক নয়। সে কান্না করলে প্রথমে তার কারণ বের করা উচিত। কারন এ বয়সে অনেক সময় তারা বুঝে ফেলে যে, কান্না শুরু হলেই তাকে কোলে নেওয়া হয়। ফলে কোলে ওঠার জন্য সে সারাক্ষণ চিৎকার করতে পারে। শিশু বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে তার ঘুমের সময় কমে যাবে। সজাগ থাকা অবস্থায় সে সবাইকে বিরক্ত করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই এর সাথে খেলা ও অনুশীলনের মাধ্যমে আমাদের সময় এমনভাবে ভাগ করে নিতে হবে, যেন কোন অবস্থাতেই শিশু আমাদের বিরক্তের কারণ না হয়। শীতের দিনে সকাল ১০-১১ টার দিকে তাকে বেশ কিছুক্ষণ রৌদ্রে শুইয়ে রাখতে হবে, অথবা এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যেন মাথায় রোদ না লাগে। অনেকে মাথায় পাতলা কাপড়ের হ্যাট দিতে বলেন। রৌদ্রে থাকাকালীন কয়েকবার শিশুর অবস্থান বদল করে দিতে হবে। অন্যথায় একই স্থানে রৌদ্র লেগে সে স্থান লাল হয়ে যেতে পারে। সকালে ও বিকালে শিশুকে নিয়ে বাইরে খোলা বাসাতে বেড়াতে হবে। তবে যথাসম্ভব ধুলা-বালি এড়িয়ে চলা উচিৎ। শিশুকে অবশ্যই ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে কাপড় চোপড় পরাতে হবে।