কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কসহ অলিগলি আজ সোমবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ছিল অনেকটাই ফাঁকা। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজারো মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়। বিকেল চারটার দিকে ভাঙচুর শুরু হয়। উত্তেজিত জনতা ভাঙচুরের পর আগুন দেন শহরের লালদীঘির পাড়ের জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। একই সঙ্গে হামলা ও ভাঙচুর করা হয় কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ারের মালিকানাধীন নীদমহল এবং কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহর মালিকানাধীন সৈকত হোটেলে। হামলা-ভাঙচুর চালানো হয় কক্সবাজার মডেল থানায়।
এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায়ও আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমানের ব্যক্তিগত অফিসেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কক্সবাজার মডেল থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালানোর সময় থানার আঙিনায় থাকা অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল লুট করার অভিযোগও উঠে। হামলার সময় পুলিশ সদস্যরা ভবনের বিভিন্ন কক্ষে আত্মগোপন করেন। পরে ঘটনাস্থলে সেনাসদস্যরা আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। উত্তেজিত জনতা কক্সবাজারে থানার বিপরীতে থাকা ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়েও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। বিকেল পাঁচটার দিকে হাজারো মানুষ শহরের সার্কিট হাউস সড়কের ঘুমগাছতলাতে জড়ো হন। এরপর বিজয় মিছিল নিয়ে প্রধান সড়কের লালদীঘির পাড়, বাজারঘাটা, বিজিবি ক্যাম্প, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, বাইপাস সড়ক, কলাতলী সৈকত সড়ক হয়ে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের একটি দল। সেখানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সড়কে বসে শুকরিয়া মোনাজাত করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলন এবং কারফিউর কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজারের ব্যবসা-বানিজ্য এমনিতেই অচল হয়ে পড়েছিল। গতকাল সোমবার সকাল ছয়টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলও খালি পড়ে রয়েছে। কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ গণমাধ্যম কে বলেন, শিক্ষার্থীদের সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন এবং কারফিউ পরিস্থিতিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা গন্তব্যে ফিরে গেছেন। এখন হোটেলে কোনো পর্যটক নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সৈকতে আবার পর্যটক সমাগম ঘটতে পারে। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত ১৪ দিনে পর্যটনসহ ১৪টি খাতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিকেলে টেকনাফ পৌরসভার প্রধান সড়কে নেমে উল্লাস প্রকাশ করেন কয়েক শ মানুষ। এ সময় অধিকাংশ মানুষের হাতে লাঠিসোঁটা, লোহার রড ও হকিস্টিক ছিল। পৌরসভার প্রধান প্রধান সড়কে উৎসুক জনতাকে মিছিল করতে দেখা গেছে। পরে বাসস্টেশন এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সাবেক সংসদ সদস্য ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর বাসস্টেশন এলাকার পুলিশ বক্স ও আওয়ামী লীগ নেতা বদরুল হাসানের মালিকানাধীন হোটেল মিল্কিতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পরে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমেদের নেতৃত্বে কিছু লোকজন ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
মােঃ জানে আলম সাকী,
ব্যুরো চীফ,চট্টগ্রাম।