চার বছর আগে জামিনে ছাড়া পেয়ে পলাতক চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে নগরীর অনন্যা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে ধরা হয় বলে চান্দগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবির একাধিক গণমাধ্যমকে এ তথ্য দিয়েছেন। ওসি জাহিদুল কবির বলেন, অনন্যা আবাসিক এলাকার একটি নির্জন বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন সরোয়ার। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। গত ১৮ জুলাই বহদ্দারহাট এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা ও তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার প্রধান সন্দেহভাজন সরোয়ার। তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে, বলছেন ওসি। সরোয়ারের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা আছে জানিয়ে ওসি বলেন, ২০২০ সালে গ্রেপ্তারের পর জামিনে ছাড়া পেয়ে পলাতক ছিলেন তিনি। ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘ক্যাডার’ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করা সরোয়ারের নাম চট্টগ্রাম পুলিশের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ তালিকাতেও রয়েছে। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরোয়ারকে আটক করেছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরদিন তাকে চট্টগ্রামে এনে বায়েজিদ থানার খন্দকীয়া পাড়ায় তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৩০ রাউন্ড গুলিসহ একটি একে-২২ রাইফেল, চার রাউন্ড গুলিসহ একটি এলজি উদ্ধার করা হয়। চট্টগ্রামে বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রমে প্রায় দেড় দশক আগে আলোচনায় আসে সরোয়ার ও তার বন্ধু ম্যাক্সনের নাম। সে সময় তারা পরিচিত ছিলেন শিবির ‘ক্যাডার’ সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে। সাজ্জাদ চট্টগ্রামের আট খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি। ২০১১ সালের জুলাইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিঙ্গারবিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন ম্যাক্সন। তার দেওয়া তথ্যে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সরোয়ারকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তখন সরোয়ার-ম্যাক্সনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি একে-৪৭ রাইফেল, দুটি পিস্তল, একটি এলজি, একে-৪৭ রাইফেলের দুটি ম্যাগজিন ও গুলি। ২০১৭ সালে কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কাতারে চলে গিয়েছিলেন সরোয়ার ও ম্যাক্সন। এদিকে বিদেশে বসেই দেশে সরোয়ার ও ম্যাক্সনের চাঁদাবাজির কথা আলোচনায় আসে। ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসায় যুক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে সরোয়ার, ম্যাক্সনের নামে চাঁদা দাবি করেন তাদের সহযোগী কয়েকজন যুবক। তাদের কথামত চাঁদা না দেওয়ায় ওই বছর ২৩ সেপ্টেম্বর নয়াহাটে সেই ব্যবসায়ীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। এরপর উজ্জ্বল দেওয়ানজী নামে আরেক ব্যক্তির কাছ থেকেও একই কায়দায় টাকা দাবি করা হয় ভারতের কারগারে বন্দি সাজ্জাদের নামে। এ বিষয়ে তদন্তে নেমে একই বছরের ২৪ অক্টোবর রাতে পাঁচ যুবককে গ্রেপ্তার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মধ্যপ্রাচ্যে বসে সরোয়ার ও ম্যাক্সনের দেশে চাঁদাবাজির বিষয়ে তথ্য পান পুলিশ কর্মকর্তারা। প্রচার আছে- কারাগারে থাকাকালীন সরোয়ার ও ম্যাক্সনের সম্পর্কের অবনতি হয়, যা নিয়েও তারা আলোচনায় আসেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত সরোয়ার-ম্যাক্সনের মধ্যে ম্যাক্সন ভারতের কলকাতায় মারা যান বলে দাবি করে তার পরিবার।
মােঃ জানে আলম সাকী,
ব্যুরো চীফ, চট্টগ্রাম।