শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * কক্সবাজারের পেকুয়ায় শিক্ষক হত্যা মামলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ৫ দিনের রিমান্ডে;   * কক্সবাজারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের খরচ বাড়ছে যেসব কারণে;   * কক্সবাজারে সমন্বয়কদের দুই গ্রুপের হাতাহাতি   * ফেনীতে টাস্কফোর্সের অভিযান, পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা   * চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অর্ধশতাধিক দোকান উচ্ছেদ;   * নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়ন পরিষদের গাছ বিক্রি করে দিলেন পলাতক চেয়ারম্যান   * চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইলিশ ধরায় ৬ জেলে আটক   * আমি তোমার মুখ মনে রাখতে চাই যাতে স্বর্গে তোমার সাথে দেখা হলে আমি তোমাকে চিনতে পারি এবং আবারো ধন্যবাদ দিতে পারি।   * পূজা মণ্ডপে ‘ইসলামি সংগীত’: চট্টগ্রাম পূজা পরিষদের সভাপতি ও সম্পাদককে অব্যাহতি   * বিশ্ব বিখ্যাত শিল্পপতি রতন টাটা সকলের ছেড়ে চলে গেছেন পরলোকে  

   সারাদেশ
প্রতিবছর কুড়িগ্রামের দ্বীপ চরবাসীদের দূর্ভোগ, নেই স্থায়ী সমাধান
  Date : 16-07-2024
বাড়ির পাশে গবাদিপশু রাখার মাটির ঢিবি। ঢিবির ওপর মাচান করে সেখানে পাতানো হয়েছে খাট। ওপরে জিও ব্যাগ আর পলিথিন দিয়ে তৈরি চালা। চতুর্দিকে পলিথিনে ঘেরা। এভাবেই তৈরি ঝুপড়িতে খাটের ওপর বসে আছেন রূপবানু (৪৫)। খাটের পাশে বাঁশের মাচায় চুলা, হাঁড়ি-পাতিলসহ তৈজসপত্র। গত প্রায় এক মাস ধরে এই ঝুপড়িতেই রূপবানুর সংসার। চারদিকে পানি কিন্তু রূপবানুর খাবারের পানি সীমিত। শুধু পানি নয়, খাদ্যসংকটে রূপবানু ঠিকমতো তিনবেলা খেতেও পারেন না।  রূপবানুর বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মশালের চর গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত হাছেন মণ্ডলের স্ত্রী তিনি। চলতি বন্যায় পানিবন্দি রূপবানু গৃহবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। অভাব তার নিত্যসঙ্গী। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে পশ্চিম মশালের চর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় রূপবানুর বসতবাড়ির ঘরে এখনও হাঁটুপানি। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকার শব্দ শুনে ঝুপড়িতে বসে উঁকি দিচ্ছিলেন রূপবানু। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখলেন খাদ্যসহায়তার নৌকা কিনা। ঝুপড়ির একেবারে কাছে নৌকা ভিড়িয়ে রূপবানুর কাছে জীবনযাপন নিয়ে জানতে চাই। জবাবে যা জানালেন তা শিউরে ওঠার মতো। রূপবানু বললেন, ‘আমাদের খুব অসুবিধা। এক মাস থাইকা এই মাচানে আছি। বাইরে যাইতে পারি না। খাওয়াদাওয়ার অভাব, ট্যাকাপয়সার অভাব। ধার কইরা চলতাছি। বাড়িতে টিউবওয়েল তলায় গেছে। শান্তি মতো পানিও খাইতে পারি না।’ বন্যায় সহায়তা পাওয়া প্রশ্নে প্রান্তিক এই নারী বলেন, ‘বানের শুরুতে খালি আধা সের চিড়া আর আধা সের মুড়ি দিছে। আর কিছু পাই নাই।’ রূপবানুর বাড়ির ঠিক পূর্বে তার প্রতিবেশী আছির উদ্দিনের বাড়ি। আঙিনায় থাকা বন্যার পানিতে হাঁস সাঁতার কাটছে। বন্যার পানির স্রোতে হেলে যাওয়া একটি ঘর বাঁশ আর গাছের গুঁড়ি দিয়ে কোনোমতে দাঁড় করিয়ে রাখা। বাকি ঘরটিতে এখনও হাঁটুপানি। বললেন, ‘একবার আধা সের মুড়ি আর আধা সের চিড়া ছাড়া কোনও সাহায্য পাই নাই।’ পরিবার নিয়ে কীভাবে দিন কাটছে, এমন প্রশ্নে আছির উদ্দিন বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র এবার খুব ক্ষয়ক্ষতি কইরা গেছে। আমরা খুব কষ্টে আছি। এলাকায় কাজ-কামাই নাই। যাগো কাছে কাজে যামু তাগো বাড়িতেই পানি। জমা টাকা শ্যাষ কইরা অহন ধারে চলতাছি।’ রূপবানু আর আছির উদ্দিনের মতো একই অভাব-অভিযোগ ওই গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর আশরাফুল ও গৃহবধূ রোবেকা খাতুনের কথাতেও। তাদের বসতভিটাতেও পানি। কষ্ট আর ভোগান্তির গল্পটা সবার একই। বন্যার পানি কমলেও অভাব তাদের বিড়ম্বনা আর ভোগান্তি বাড়িয়েছে। 
নৌকাযোগে গ্রামটি ত্যাগ করার সময় দূর থেকে আরও একটি ভেঙে পড়া ছনের তৈরি ঘর চোখে পড়ে। কাছে গিয়ে জানা গেলো ঘরটি মৎস্যজীবী এরশাদের। বন্যায় পানির স্রোতে সেটি ভেঙে পড়েছে। উঁচু ঢিবির ওপর গবাদিপশু রেখে আরেকটি ঘরে বাঁশের খুঁটির ওপর উঁচু করে খাট পেতেছেন এরশাদ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তাতেই বসবাস। সোমবার ঘর থেকে পানি সরে গেলেও আঙিনা থেকে সরেনি। এরশাদের স্ত্রী হাসিনা বলেন, ‘রান্নার কষ্ট, খাবারের কষ্ট, খাওয়ার পানির কষ্ট। ঘর পইড়া গেছে। ট্যাহার অভাবে ঠিকমতো খাওন জোগাড় করাই কষ্ট হইয়া গেছে। নদীত মাছও ধরা পড়ে না। কোনও সাহায্য নাই।’ ব্রহ্মপুত্রের জনবসতিপূর্ণ চরগুলোতে এখন অভাব আর ভোগান্তির গল্প। পানি নামতে শুরু করলেও বানভাসিদের ভোগান্তি কমেনি। চারপাশে পানি, কাদা। সবচেয়ে বেশি সংকট কাজের। কাজের সংকটে চরে চরে অভাব। রোজগার না থাকায় নিম্ন আয়ের দিনমজুর পরিবারগুলো চলছে ধারদেনার ওপর। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামতের বাড়তি খরচের জোগানের চিন্তা তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছে, পুনর্বাসন সহায়তা না পেলে তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে, অনেকের পক্ষে অসম্ভব। যাত্রাপুর ঘাটে নৌকা থেকে নামার পরপরই শুরু হয় ঝুমবৃষ্টি। সে সময় রূপবানু আর তার প্রতিবেশীদের ভোগান্তি চোখে ভাসছিল। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আতিকুর রহমান বলেন, ‘পশ্চিম মশালের চর গ্রামে আমি নিজে গিয়ে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করেছি। সহায়তা পাওয়ার যোগ্য কোনও পরিবার না পেয়ে থাকলে তালিকা যাচাই করে তাদের দেওয়া হবে।’ কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলায় সব নদ-নদীর পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, চলমান বন্যায় জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত মানুষদের জন্য ৬০৯ মেট্রিক টন চাল ও ২৬ হাজার ২৭০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
আনোয়ার সাঈদ তিতু
কুড়িগ্রাম


  
  সর্বশেষ
কক্সবাজারের পেকুয়ায় শিক্ষক হত্যা মামলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ৫ দিনের রিমান্ডে;
কক্সবাজারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের খরচ বাড়ছে যেসব কারণে;
কক্সবাজারে সমন্বয়কদের দুই গ্রুপের হাতাহাতি
ফেনীতে টাস্কফোর্সের অভিযান, পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308