|
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন-২০২১ : ২০০ বনাম ৫০’এর লড়াই ? |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
দিশা বিশ্বাস , কলকাতা থেকে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার নির্বাচনী লড়াই জমে উঠেছে দুই শক্তিশালী রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। ইতিমধ্যে এই দুই শক্তিশালী দলের শীর্ষ নেতারা মাঠে নেমে একে অপরের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। দু’দলই দাবি করেছে তারাই ক্ষমতায় আসছে। ফলে এই দাবি ও পাল্টা দাবি নিয়ে এখন এই করোনা আবহের মধ্যে জমে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল বিজেপির নির্বাচনী লড়াই। আগামি বছরের মার্চ-এপ্রিলে এই রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনে ভোট নেওয়ার কথা। সেই নির্বাচনে জেতার জন্য এখনই মাঠ চষে বেড়াতে শুরু করেছে এই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধি দল বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেস এই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে গত ২০১১ এবং ২০১৬ সালে জয়ী হয়ে সরকার গড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মমতার দলের লক্ষ্য ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও মমতার দল তৃতীয় বার জিতে এই রাজ্যে সরকার গড়ার হ্যাট্রিক করবে। আর বিজেপি বলেছে, আর সরকার গড়ার সুযোগ পাবেনা মমতা। সামনে আসছে বিজেপির দিন। এই রাজ্যে মমতাকে হটিয়ে বিজেপির নেতৃত্বে গড়া হবে রাজ্য সরকার। মেদিজিই গড়ে দেবেন এই রাজ্যকে সোনার বাংলা হিসেবে। আর তৃণমূল ও বিজেপির এই দাবি ও পাল্টা দাবি নিয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি তোলপাড় হচ্ছে। বিজেপি বলেছে ২০০’এর বেশি আসনে জিতে তারা এই বাংলায় নতুন সরকার গড়বে। আর তৃণমূল বলেছে এই রাজ্যে অন্তত ২১২টি আসন পেয়ে ফের সরকার গড়বে তৃণমূল। মমতাই হবেন এই রাজ্যের তৃতীয় বারের মত মুখ্যমন্ত্রী। তবে মমতার এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। বিজেপি বলেছে ৫০টি আসন পাওয়ায়ই এবার কঠিন হবে তৃণমূলের। আর তৃণমূল বলেছে, ওদের ২০০ আসন স্বপ্নে থাক। ওরাতো ৫০টি আসনও পাবেনা। ফলে এখন লড়াই শুরু হয়েছে ২০০ বনাম ৫০ আসন নিয়ে। গত ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে বিজেপির এক জনসভায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা দিয়েছিল, একুশের নির্বাচনে এই বাংলায় ২০০’এর বেশি আসন পেয়ে সরকার গড়বে বিজেপি। উৎখাত হবে মমতাদির তৃণমূল কংগ্রেস। এই একই কথা দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি তাদের নির্বাচনী প্রচারে দাবি করে আসলেও তাতে আমল দেয়নি তৃণমূল। বরং তৃণমূল নেতা ও সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ওরা দিবাস্বপ্ন দেখছে। এই রাজ্যে তৃতীয় বারের মত বিপুল ভোটে জিতে সরকার গড়বে মমতাই। মমতাই হবেন এই রাজ্যের তৃতীয় বারের মত মুখ্যমন্ত্রী । বিজেপির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। ২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনকালিন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর গলায় দাবি তুলেছিলেন, এই রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের সবকটিতে জিতবে তৃণমূল। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে মমতা শ্লোগান তুলেছিলেন, ’৪২’এ ৪২’। এই শ্লোগান তুলে মমতা গোটা রাজ্যে ঝড় তুলেছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর দেখা যায় মমতা জিতেছেন ২২টি আসনে। বিজেপি জিতেছে ১৮টি আসনে। আর ২টিতে জিতেছে কংগ্রেস। কোনও আসন পায়নি বাম দল। যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ৩৪টি আসন। বিজেপি মাত্র ২টি আসন। আর কংগ্রেস ৪টি এবং বামদল সিপিএম ২টি আসন। ২০১৯ সালে মমতার প্রচারের সুর তুলে এবার বিজেপিও শুরু করেছে তারা এবার ২০০ আসনেই জিতছে। ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে এবং ২০ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতনের দুটি জনসভায় যোগ দিয়ে অমিত শাহ একই কথা বলেছিলেন তাদের দল বিজেপি এবার এই রাজ্যে ২০০ আসনে জিতে সরকার গড়বে। অমিত শাহ’এর দাবিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের ’ভোটকুশলী’ প্রশান্ত কিশোর পাল্টা দাবি করে বলেছেন, বিজেপি দুই অংকের সংখ্যা পার করতে পারবেনা। সুতরাং সরকার গড়ারস্বপ্ন দেখে কিভাবে? প্রশান্ত কিশোর চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একথাও বলেছেন, তার কথা ঠিক না হলে তিনি তার সংগঠনের সব পদ থেকে বিদায় নেবেন। প্রশান্ত কিশোরের এই বক্তব্যের পর বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় পাল্টা বলেছেন, ’বাংলায় বিজেপির পক্ষে সুনামী বইছে। এই রাজ্যে আমাদের সরকার গড়ার পর হারাতে হবে একজন ভোট কুশলীকে।’ আর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন,’ কোন জগতে বাস করছেন উনি?’ আবার এর পাল্টা বলেছেন, তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ’আমিতো আগেই বলেছি, এই রাজ্যে বিজেপি ৫০টি আসনও পাবেনা। তৃণমূল জিতবে ২১০টি আসনে। ফের সরকার গড়বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।’ আবার এরই প্রতি উত্তরে বিজেপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মুকুল রায় বলেছেন, ’এই রাজ্যে তৃণমূল ৫০টি আসন পাবে কিনা সন্দেহ। সুতরাং তৃতীয় বারের মত এই রাজ্যে তৃণমূল সরকার গড়ার স্বপ্ন দেখে কিভাবে?’ তবে তৃণমূল ও বিজেপির এই নির্বাচনী লড়াইয়ে যোগ না দিয়ে কংগ্রেস ও বামদল বলেছে, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর কোনও রাজনীতিবিদ নন। কোনও দলের সদস্য নন। কেন তার মতামতকে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? ২৪-১২-২০ ছবি দিলাম মমতা এবং অমিত শাহর।
|
|
|
|
|