বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধ সংঘর্ষ,আহত ৫   * কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার ২০   * রাঙ্গামাটির কল্পনা চাকমা অপহরণ: ২৮ বছর পর মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত ;   * কক্সবাজারের চকোরিয়ার মাতামুহুরি নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ২   * কর্মচারীদের বোরকা পরা ও নেকাব পরা নিষিদ্ধ করল চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ   * পঞ্চগড় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ৩৩ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ   * বাণিজ্যিকভাবে আঠাবিহীন বারোমাসি কাঁঠাল চাষে লাখপতি সবুজ   * চট্টগ্রামের জেলাপ্রশাসক -পুলিশ সুপার ও সাতকানিয়ার ইউএনও-ওসিকে হাইকোর্টের ভর্ৎসনা;   * বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কােন উন্নতি দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র!   * কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে কে কোন প্রতীক পেলেন  

   পর্যটন
বিশ্ব পর্যটন মেঘের দেশ মেঘালয় ও আসাম আমার দেখা সৌন্দর্যের লীলাভূমিঃ
  Date : 20-05-2018

প্রকৃতি তার সব সৌন্দর্য যেন দিয়েছে মেঘালয় ও আসাম জুড়ে। পাহাড়ের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে যেন স্বর্গীয় হাতছানি। চোখ জুড়ানো শুভ্র পাহাড়ের আল্পনার সঙ্গে সাদা মেঘের ভেসে বেড়ানো প্রতিটি মুহুর্ত মুগ্ধ করে। ধারণা করা হয়, মেঘালায় নামটি এসেছে মেঘ থেকে। যার অর্থ হলো মেঘের বাসভুমি। ভারতের একটি রাজ্য মেঘলালয়। যা ভারতের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। বাংলাদেশেরও পূর্বে সিলেট সীমান্তের  চারিদিকের মেঘলালয়ের অবস্থান। আর যাদু বিদ্যায় খ্যাত দেশ আসামের কামরুখ কামাক্ষা তার পাশেই অবস্থিত। আসামের নাম শুনলেই  গন্ডার ও যাদু বিদ্যা সহ বিভিন্ন কারণে গা শিহরে উঠে। যাই হোক, মেঘের দেশ মেঘালয় এর সৌন্দর্য ও গন্ডায় যাদু বিদ্যার দেশ আসাম দেখার দীর্ঘদিনের প্রবল ইচ্ছা ছিল আমার। অবশেষে সময়, শ্রম ও অর্থের সমন্বয় করে গত ৩ মে যাত্রা শুরু করি এ দুই রাজ্যের উদ্দেশ্যে। ১৯৯২ সাল থেকে ভারতে বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে দেখার সুযোগ হলে প্রকৃতিক সৌর্ন্দযে ভরপুর এ রাজ্য ২টি দেখার সুযোগ হয়নি।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের উত্তর-পূর্বের এ রাজ্যগুলির সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন শিল্প বিকাশে সুযোগ-সুবিধা অনেক কম থাকায়, পর্যটকদের সংখ্যা এখনো অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কম। কারণ হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের অংশে পাহাড়িয়া অঞ্চল হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থায় রেল, বিমান এর পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় পর্যটকরা এ দুর্গম রাজ্য গুলিতে যেতে চায় না। আগের তুলনায় বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরাপওার ব্যবস্থার একটু উন্নতি হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি যেমন : - ত্রিপুরা, আসাম, অরুনাঞ্চল, মনিপুরী,  নাগাল্যান্ড সহ এসব রাজ্য গুলির সাথে ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটনের উজ্জল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে বাংলা-আসাম ফ্রেন্ডশীপ এসোসিয়েশান (বিএএফএ) নামক একটি সংগঠনের আত্ম প্রকাশ করে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্প বিকাশে আগ্রহীদের নিয়ে এ সংগঠনের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রেসিডেন্ট হলেন এ,টি,এম জাহিদ হাসনাত বুলবুল ও জেনারেল সেক্রেটারী মোঃ জহিরুল ইসলাম মনির। আমি এ সংগঠনের মিডিয়া সেক্রেটারীর দায়িত্বে আছি। কমিটি গঠনের পর অনেকদিন ধরে চেষ্টা চলছিল দু’দেশের পর্যটনে সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য আসাম ও  ভ্রমনের। ভিসা জটিলতা সহ, নানান কারণে তিন তিন বার পিছিয়ে যায় আসাম ভ্রমনের নির্ধারিত তারিখ। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ৩ মে রাত ১০ টায় ঢাকার গুলশান ১নং-এর মাহিমা টুরস এন্ড ট্রাভেল লিঃ এর কার্যালয় থেকে আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে ৫ দিনের যাত্রা শুরু করি। মেঘালয়-আসাম ট্যুরটির সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনায় ছিলো মাহিমা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেল লিঃ। আমি সহ মোট ১৪জন ছিলাম এ ট্যুরে অন্যান্যদের মধ্যে যারা এ টুরে ছিলেন তারা হলেন-  এ.টি.এম জাহিদ হাসনাত

বুলবুল, ড. লেঃ কর্নেল, মোঃ কবির আহমেদ খান, রেজাউল করিম, এস.এম.এনামুল্লাহ, কাজী নজরুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, মোঃ রিয়াজ উদ্দিন, মোঃ শামীম উদ্দিন সুমন, মিসেস সালমা বেগম, ডা. ফরিদা ইয়াসমিন, ফৌজিয়া রশীদ, মিসেস মমতাজ বেগম, আবুল মোনায়েম, ডা. শফিকুল হাসান চৌধুরী। এর মধ্য ৩ জন ডাক্তার, ১জন অবসর প্রাপ্ত কর্নেল, সাংবাদিকসহ গুরুত্বপূর্ণ পর্যটকবৃন্দ ছিলেন। আমি সহ আরও ২ জন সুমন ও রফিক ভাই যাদের বয়স ৪০ বছর এর নিচে। বাকীরা সবাই ছিলেন ৫০ বছরের উপরে। যারা ৫০ এর উপরে ছিলেন তাদেরকে বয়স্ক যুবকই বলা যায়। কারণ এত বড় লম্বা ভ্রমনে আসা-যাওয়ায় প্রায় তিন হাজার কি.মি পথ পাড়ি দেয়ার পরেও তাদের ক্লান্ত মনে হয়নি। এই ক্লান্ত না হওয়ার অনেক কারণ আছে। তার মধ্য অন্যতম কারন আমার হাসি মাখা কথা সবাইকে প্রতিনিয়ত তরতাজা রাখার সাহস ও উৎসাহ যুগিয়েছে। যাই হোক, আমরা ঢাকা থেকে ১০ জন মাহিমা ট্যুরিজমের অত্যাধুনিক এসি মাইক্রো বাস করে সিলেটে তামাবিল স্থল বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ৪ তারিখ সকাল ৬টা হযরত শাহাজালাল মাজারে পৌছে যাই। মাজারে নামাজ ও জিয়ারত করে সকালের নাস্তা সম্পন্ন করে শাহ্পরান মাজারে যাই। এরপর আমরা সকাল ৮ টায় তামাবিল পৌছাই। ওখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল আরও ৪ জন। সকাল ১০ টার আগে তামাবিল স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস না খোলায় আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। ১০ টার পর দুই পাশের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সম্পন্ন করে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমরা ভারতের ওপারে ডাউকি বর্ডারে রাখা ২৬ সিটের একটি মিনি বাসে ১৪ জন চরে বসলাম। দুই পাশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে আমাদের প্রায় ৩/৪ ঘন্টা সময় লেগে গেল। যা সবাইকে ধৈর্য্য হারা করে তোলে। এ দুই বর্ডারের  আধুনিক ব্যবস্থাপনায় কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন চালু হয়নি। চলছে ধীর গতির ম্যানুয়ালী ব্যবস্থাপনা।
ডাউকি বর্ডার থেকে আমাদের গাড়ি চলা শুরু করল। দক্ষ চালক দক্ষতা দিয়ে আমাদের নিয়ে চলল আকাবাকা পাহাড়ি পথ ও মেঘের উপর এবং মধ্য দিয়ে। অভিজ্ঞ গাইড আসামের নাগরিক বিনজু আমাদেরকে দু’পাশের পাহাড়ও স্থানের ইতিহাস বর্ণনা দিতে থাকল। আমরা অবাক দৃষ্টিতে বিশাল বিশাল পাহাড়ের সৌন্দর্য্য দেখতে থাকলাম। পাহাড়ের কোথাও কোথাও ৭/৮ হাজার ফুট গভীরতা। আমাদের সাথে দুর্বল চিত্তের কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে স্মরন করতে থাকল। ভারতীয় বেলা ১২টার সময় রওনা দিয়ে বিকাল ৩টায় পৌছাই পৃথিবীর অন্যতম বৃষ্টি প্রবন এলাকা চেরাপুঞ্জীতে। তখনও গুড়ি গুড়ি বৃস্টি হচ্ছিল।  পাহাড়ের সেভেন সিস্টার জলপ্রপাত থেকে নিচে তাকালে বাংলাদেশের সুরমা নদী দেখা যায়। পাহাড়ের পাদদেশে গ্রামগুলির বাড়িঘর অন্যরকম সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে রেখেছে। দুরে বা কাছ থেকে মেঘ ভেসে যাচ্ছে। আমরা চেরাপুঞ্জির সৌন্দর্য্য উপভোগ করে ওখানেই ইকোপার্ক রিসোর্টে  দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। ক্ষুধার্থ পেটে সবাই তৃপ্তি সহকারে খাবার খেয়ে নিল। হোটেলের সব কর্মচারীই ছিল মহিলা। তাদের আতিথিয়তা সবাইকে মুগ্ধ করে। ওখানকার মহিলারা অনেক

পরিশ্রমী। আরও একটি নতুন তথ্য জানা গেল বিবাহিত মহিলাদের গায়ে ওড়নার মত একটি চাদর পেচানো থাকে। চাদর পেচানো থাকা মানেই সে বিবাহিত। চেরাপুঞ্জিতে নামার পর আমরা প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভুত করলাম। তখন তাপমাত্রা ৭/৮ ডিগ্রী ছিল। ঠান্ডায় আমাদের শরীর শীতল হয়ে আসছিল। ২/১ জন ছাড়া কেউ গরম কাপড় নেয়নি। কেউ জানতো না এত শীত ওখানে।
যা হোক, আমরা চেরাপুঞ্জি থেকে রওনা দিয়ে মেঘলায়ের রাজধানী ও পৃথিবীর অন্যতম উচ্চতম শহর শিলং শহরের উপর দিয়ে আমাদের গাড়ী চলতে থাকল। পাহাড়ের উপর থেকে শিলং শহর খুবই আকর্ষনীয় দেখতে পেলাম। মনে হয় যেন, কোন চিত্র শিল্পী শহরটিকে রং তুলি দিয়ে মনের মাধূরী মিলিয়ে একে রেখেছেন। শিলং শহরে আমরা চা বিরতি দিয়ে আমাদের গাড়ী আসামের রাজধানী গোহাটিতে চলতে শুরু করল। তখন রাতের নিরবতা নেমে এসেছে। কারণ, সীমান্তবর্তী গ্রামের রাস্তায় বিকাল ৫ টার পর যাতায়াত নিষিদ্ধ। আমাদের গাড়ী শহর এলাকায় থাকাতে নির্বিঘেœ আকাবাকা  প্রায় একশ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে রাত ১০ টায়  গোহাটিতে হোটেল গ্রাবো গ্রান্ড পৌছাই। উল্লেখ্য যে ডাউকি সীমান্ত থেকে শিলং এর ৮০ কি.মি পথ শুধু পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এই সময় বাংলাদেশের জাফলং এর ঘড় বাড়ি ,পাহাড় ও মনোরম দৃশ্য চোখকে খুব আকৃষ্ট করে। পাহাড় ঘুরে ঘুরে গাড়ী শুধু উপরেই উঠতে থাকে । দুপাশের বিভিন্ন গাছ গাছালির সাথে পাহার সমান অসংখ্য লম্বা লম্বা পাহাড়ি গাছ ও ছোট ছোট গ্রাম ও শহর চোখে পড়তে থাকল। শিলং থেকে আবার ১০০ কি.মি. নামতে হয় শুধু পাহাড়ের আকাবাকা পথ বেয়ে। সমুদ্রের সমতল থেকে শিলং এর উচ্চতা প্রায় ৭ কি.মি.। রাত্রে আমরা গোহাটিতে হোটেলে রাত্রি যাপন করে পরের দিন ৫ মে শনিবার সকালে আমরা আসাম-বাংলা এসোসিয়েনের কর্মকর্তাদের অভ্যর্থনা গ্রহন ও সকালের নাস্তা সম্পন্ন করি। রাজধানী গোহাটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা ঘুরতে থাকি। কেউ কেউ মার্কেটিং এর কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। আসামের অন্যতম পর্যটন আকর্ষন কামরুখ কামাক্ষা মন্দির।এই মন্দিরটি প্রায় ১ কি.মি উচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এই কামরুখ কামাক্ষা সারা বিশ্বের অন্যতম যাদু বিদ্যার জন্য বিখ্যাত। পাহাড় ঘুরে ঘুরে আমাকে একা বহনকারী গাড়ী চলল কামরুখ কামাক্ষার পাহাড়ের চূড়ায়। আমার অতি উত্তেজনায়, ভয়ভীতি ও আতংকের  মধ্য দিয়ে শরীর শিহরে উঠছে। কারণ ছোটবেলায় এই কামরুখ কামাক্ষার যাদু বিদ্যার কথা অনেক শুনেছি। আমাদের বাড়ীর কাছে হাটবাজারে হকাররা   ঔষধী গাছ-গাছালীর ঔষধ বিক্রি করার জন্য মজমা মিলিয়ে বিক্রি করত। এই মজমায় বিক্রেতারা বলতো কামরুখ কামাক্ষা থেকে যাদু শিখে এসেছি, সেই যাদু গুলোই প্রদর্শন করত। সাধারন মানুষকে বোকা বানিয়ে যাদু দেখাতো। এই সময়ে সাধারন মানুষকে বলতো যাদু বিদ্যার সময় হাতের মুঠ আটকে রাখবেন না, তাহলে যাদু প্রদর্শনকারী লোকটি মারা যাবে, এই কথা বলে আতংকে সৃষ্টি করত। আমিও মাঝে মাঝে হাটবাজারে এ দৃশ্য দেখে আতংকিত হইতাম। সেই থেকেই কামরুখ কামাক্ষার দেখার আমার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল। সকালে আমরা যখন হোটেল থেকে বের হই তখন দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে যাই। একটি গ্রুপ গাড়ি নিয়ে আসামের একটি বিখ্যাত মসজিদ সহ অন্যান্য স্পট  দেখার জন্য বের হয়। অন্য গ্রুপে আর আমার উপর দায়িত্ব পরে আমাদের সাথে যাওয়া মহিলাদের ও আসমের  দুই জন মহিলাকে নিয়ে মার্কেটে যাওয়ার। যথারীতি  সিব্ধান্ত অনুযায়ী আমরা পেন্টোলিন্স মার্কেটে যাই। মার্কেটে গিয়ে ডলার ভাঙ্গাতে না পারায় আমার সাথে থাকা বাংলাদেশী ভদ্র মহিলারা সমস্যায় পড়ে যায়। আমি পেন্টোলিন্স মার্কেটে উক্ত মহিলাদের রেখে রাস্তার অপর পারে ডলার ভাঙ্গাতে

যাই। আমার সাথে আসামের ঐ দুইজন মহিলা পরিচিত ডলারের দোকানে নিয়ে যায়। ডলার ভাঙ্গানোর জন্য আমাদের আসতে দেরি হওয়ায় বাংলাদেশী ভদ্র মহিলারা নিজেরাই অটোতে করে অন্য একটি মার্কেটে চলে যায়। আমি একাকি হয়ে পরি তখন আসামের ঐ দুই মহিলা আমাকে সঙ্গ দেয় এবং তাহাদের সাথে ঘুরতে থাকি। তাদের   মধ্য একজন আসামের ভাষার উপর পিএইচডি করছেন তার নাম ইয়াতান্নেছা । তারা আমাকে দুপুরে আপ্যায়নও করায়। এরপর আমি  গাড়ীতে করে ওখান থেকে একাকি কামরুখ কামাক্ষায় চলে যাই। সেখানে ঘুরে ঘুরে দেখে অনেক অজানা তথ্য নিয়ে ফিরে আসি হোটেলে ।  আগের দিনের হোটেল ছেড়ে পাশেই নতুন  গ্রীন হেরিটেজে  সবাই মিলে উঠি । ঐ হোটেলের লবিতে পরিচয় হয় সিলেট থেকে আগত গোহাটিতে বেড়াতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া রাশেদ, তানভীর ও প্রভার সাথে। পরিচয় সূত্রে সবাই ভ্রমনের খুটিনাটি ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একে অপরকে শেয়ার করলাম। অল্প সময়ে তাদের সাথে ঘনিষ্টতা গড়ে ওঠে। হোটেলে রাত্রি যাপন করে ৬ই মে আমরা শিলং এর উদ্দেশ্যে সকাল ১০ টায় রওনা দিলাম। পথে সৌন্দর্য মন্ডিত লেক, সারে ৩ কিঃ মিঃ র্দৈঘ্য গুহা, পাহাড় ও পবিত্রা সাফারি পার্ক দেখতে দেখতে রাত ১০ টায় শিলং এ পৌছাই। পবিত্রা সাফারি পার্ক দেখে আমরা সবাই হতাশাগ্রস্ত’ হলাম। কারণ সেখানে ২/১ টা গন্ডার ,গরু ,ছাগল ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না।সাফারি পার্ক ঘুরতে সময় লাগলো ২ঘন্টা। অপরদিকে প্রত্যেক গাড়িতে ৬জন করে পর্যটক ও ১ বন্দুকসহ নিরাপত্তা কর্মী থাকা বাধ্যকতা রয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীদের কোন প্রয়োজনই দেখলাম না।  শুধু লোক দেখানোর জন্য নিরাপত্তা প্রহরী রাখা। আমাদের মধ্যে অনেকেই গেল না। কারণ ভারতীয়দের প্রবেশ টিকিট ৫০টাকা হলেও বিদেশীদের ৫০০টাকা। আমরা বাংলাদেশিরাও ওখানে বিদেশী হিসেবে গন্য। আমরা যখন  সাফারি পার্ক ঘুরে ফিরে  এলাম। তখন যারা যায়নি তারা আমাদের সাথে ঠাট্টা মশকারী করতে থাকল। টিকিট সংগ্রহের  সময় মেঘালয় রাজ্য থেকে আশা একদল কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে পরিচিত হইলাম। কথার্বতা  এক পর্যায়ে ঘনিষ্ট সম্পর্ক হলে তারা আমাকে তাদের সাথে ভারতীয় হিসেবে টিকিট সংগ্রহের আমন্তণ জানায় । কিন্ত শেষ পর্যন্ত আমাদের দলের দুষ্টু ট্যুরিষ্টদের বাধার কারণে তাদের সাথে আর যাওয়া হল না ।
শিলংয়ে আগে থেকে আমাদের হোটেল রিজার্ভ না থাকায় আমরা একটু বিড়ম্বনায় পড়ে গেলাম। এতগুলো লোক একসাথে রুম পাওয়া খুবই মুশকিল হয়ে গেল। যা হোক শহরের এ পাহাড় ওপাহাড় ঘুরে শিলং এর পলো রোডে ওরসিড হোটেল নামে একটি হোটেলে রুম খুজে পেলেও বাংলাদেশী শুনে তারা আমাদেরকে রুম দিতে রাজি হচ্ছিল না। কারণ এই হোটেলে নাকি বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে একটি ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। শিলং এর পুলিশের হাতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়ে সালাউদ্দিন বর্তমানে জামিনে থেকে শিলং এ অবস্থান করছেন। সেই জন্য বাংলাদেশী হিসেবে আমাদেরকে হোটেলে রুম দিতে বিলম্বিত করে। রাত বাজে তখন ১০টা এত রাতে আমরা এখন কোথায় যাই। অনেক অনুরোধ করে পুলিশের সকল ধরনের নিয়ম কানুন মেনে আমরা ঐ হোটেলেই রাত্রি যাপন করি। পরের দিন  ৭ মে বেলা ১২টার সময় হোটেল থেকে চেকিং করে ডাউকি বর্ডারের উদ্দেশ্যে দেশে আসার জন্য রওনা হই। কিন্তু প্রতিমধ্যে বাধসাধে প্রচন্ড ঘনমেঘ। চারিদিকে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। আমাদের গাড়িসহ অন্যান্য বাস ট্রাক, গাড়ির হেডলাইট জালিয়ে আস্তে আস্তে

পিপড়ার মত চলতে লাগল। পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে ডাউকি বর্ডারে আসতে আমাদের দুই ঘন্টা পথ লাগল ৩ ঘন্টা। মেঘের  ভিতর ও উপর দিয়ে পথ চলা কি যে রোমাঞ্চকর তা নিজের চোখে না দেখলে আসলে কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। দুই বর্ডারে ভিড়াভিড় না থাকায় আমরা ৩০ মিনিটের মধ্যে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বিকাল ৫ টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা করি। সিলেট শহরের বিখ্যাত পাচভাই হোটেলে গরুর মাংসের কালা ভুনা সহ বিভিন্ন রকমের ভর্তা দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। রাত ১২ টায় আমরা ঢাকায় পৌছাই। সময়ের অভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা আমরা ভ্রমন করতে পারিনি। আগামীতে আবারো সময় করে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। ভ্রমন পিপাসুদের সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টির লীলাভূমি দেখতে পর্যটকদের উক্ত স্থানগুলি ভ্রমনের জন্য আমন্ত্রন জানাচ্ছি। ঢাকা-আসাম-মেঘালয়-ঢাকা এই দীর্ঘ আসা-যাওয়ার পথে নারীদের বিষয়গুলি নিয়ে আমার সাথে সংঘটিত ঘটনাবলি নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠে । ট্যুরিস্ট দলের সবাই নারী প্রীতি এবং নারী ভীতি নামক বিষয়টি নিয়ে আমাকে বলির পাঠা বানিয়ে হাস্য রহস্যে মেতে উঠে। সবার হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়।কখন যে ক্ষুধা লেগে গেছে তাও ভূলে যায়, ভূলে যায় ক্লান্তি । সবাইকে চলার পথে আনন্দ দিতে পেরে আমি নিজেও ধন্য। চলতি পথে আনন্দ ভ্রমনে আমাকে দেওয়া হয় রমনীকান্ত সহ নানা রকম উপাধি। অন্যান্য উপাধির কথা না-ই বললাম। এই দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে আমরা যে কখন ঢাকায় পৌছে যাই তা বুঝতেই পারলাম না। টুরিস্ট দলের সবার ভাষ্যমতে আমিই ছিলাম হাস্যরহস্যের মধ্যমনি। সারাপথ আনন্দ ও মজা করে সুস্থ্য সফল ভাবে যার যার গন্তব্যে ফিরতে পেরে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
দর্শনীয় স্থান সমূহঃ
আকাশ ছোঁয়া মেঘ, নদ-নদী, মসজিদ, মন্দির, কাজী রাঙ্গা ও মানাস ন্যাশনাল পার্ক সহ রয়েছে আরও দর্শনীয় স্থান।
সাবধানতাঃ

১। মেঘালয় পাহাড় এলাকা হওয়ায় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। অক্সিজেন স্বল্পতা এড়াতে ধীরে ধীরে থেমে থেমে বেড়ানো উচিৎ।
২। পর্যাপ্ত শীতের কাপড় সঙ্গে রাখা বাধ্যতামুলক।
৩। সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বরের ঔষধ সঙ্গে রাখুন।
৪। পাহাড় ভ্রমনে অভিজ্ঞ গাইডের সহায়তা নিন।
৫। মেঘালয় পাহাড় গুলোর গভিরতা এত বেশী যে, একবার পড়লে আর খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। এ বিষয়ে অবশ্যই সচেতনতা অবলম্বন করুন।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে বাই রোড়ে অথবা রেল কিংবা এয়ারে পৌছে যান কলকাতা। কলকাতা থেকে বাই ট্রেন আসামের রাজধানী গোহাটি। মেঘালয়ে কোন ট্রেন ব্যবস্থা নেই। সব চেয়ে সহজ পথ হচ্ছে ঢাকা থেকে সিলেট তামাবিল স্থল বন্দর দিয়ে ওপারে ডাউকি বর্ডার। যেখান থেকে ট্যুরিষ্ট বাস, বা ভাড়া করা প্রাইভেট গাড়িতে মেঘালয় রাজধানী শিলং যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেনঃ
পাচঁ তারকা হোটেল থেকে শুরু করে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সব ধরনের হোটেল পাবেন মেঘালয় ও আসামের শহরগুলিতে। ভাড়া পরবে ৫০০-৫০০০ রুপি।
কোথায় খাবেনঃ
মেঘালয় ও আসামের বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টই ভেজিটেরিয়ান। তবে শপিংমল এলাকায় বাঙালী ও মুসলিম রেস্টুরেন্ট খুজে পাবেন। পতিবেলায় খাবারে আপনার খরচ হবে ১০০-৫০০ রুপি। এটা আসলে নির্ভর করবে আপনার খাবারের মেন্যু কি নির্বাচন করছেন তার উপর।
প্যাকেজ ব্যবস্থাঃ
মাহিমা ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস-০১৭০৭২৫৫৯০৭। ঢাকা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস-৯৫৮৫১৩৯, সহ বিভিন্ন ট্যুরিজম কোম্পানী সারা বছর প্যাকেজর ব্যবস্থা করে থাকেন।



  
  সর্বশেষ
গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধ সংঘর্ষ,আহত ৫
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার ২০
রাঙ্গামাটির কল্পনা চাকমা অপহরণ: ২৮ বছর পর মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত ;
কক্সবাজারের চকোরিয়ার মাতামুহুরি নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ২

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308