|
ঘুরে আসতে পারেন ভূ-স্বর্গ কাশ্মীর |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
একঘেয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম, একটু বিরাম,একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন সৃষ্টিকর্তার অপরময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। ভ্রমণ করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় দুষ্কর। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। দেশের বাইরে ঘুরে আসতে চান? তবে ঘুরে আসতে পারেন কাশ্মীর। ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন- আনিসুল কবীর খোকন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে যেন এক স্বপ্নের জায়গা। অন্তত আমাদের প্রজন্মের মানুষের কাছে কাশ্মীর অতি আরাধ্য জায়গা। হৃদয়ের খুব কাছের। ধর্মীয় কারণেও অনেকের কাছে আবেগী জায়গা। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে, বাংলাদেশের এতো কাছের একটি জায়গা যার সাথে স্বর্গ বা বেহেস্থের তুলনা করা হয়! ভাবাই যায় না! আর সেই জায়গার প্রতি অতি-কল্পনা প্রবণ বাঙালির এক্সট্রা আকর্ষণ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ভূ-স্বর্গ কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর স্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার টানে শত শত বৎসর ধরে মুঘল বাদশাহদের গ্রীষ্মকালিন ছুটি কাটানোর প্রিয় জায়গা ছিলো এই কাশ্মীর। বিশেষত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে বেশ কিছু মুঘল বাগানের উপস্থিতিই মুঘলদের কাশ্মীর প্রীতির প্রমাণ বহন করে চলেছে। আগেই বলেছি বাংলাদেশি মাত্রই কাশ্মীর সম্পর্কে বিশেষ দুর্বলতা আছে। আমারও ছিলো, আছে। তবে কাশ্মীর সম্পর্কে আমার ধারণা অন্য অনেক বাংলাদেশির চেয়ে হয়তো কিঞ্চিৎ বেশি ছিলো। অনেক ভ্রমণকাহীনি পড়া হয়েছে ফেসবুক কিংবা দৈনিক পত্রিকার ভ্রমণ পেজে। তবে কাশ্মীর বিষয়ক সবচেয়ে প্রিয় বই সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের ‘ভূস্বর্গ ভয়ংকর’। ফেলুদার বই আমার অনেক ভ্রমনেরই ভ্রমণ গাইড। ফেলুদার বই থেকেই জানতে পারি, ডাল লেকের নৌকা সদৃশ বাসায় (হোটেল) রাতে থাকা যায়। যাকে বলে ‘হাউসবোট’, বোটহাউস না। ডাল লেকের ওপর যে নৌকাগুলো নৌকাভ্রমণ ও কেনাকাটার জন্য ব্যবহার করা হয়, তাদের বলে ‘শিকারা’। আরও অনেক কিছু। কাশ্মীর দিল্লিø থেকে শ্রীনগর, কাশ্মীরের দিকে উড়ে চলা ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের বিমানটা যখন শ্রীনগরের এয়ারপোর্টে নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, এয়ারহোস্টেজ সবাইকে সিটবেল্ট বেঁধে, জানালার ঢাকনা খোলা রেখে সিট সোজা করে বসতে বললো। আমি তখন প্রবল আগ্রহ নিয়ে বিমানের জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকালাম। মনে মনে যে রকম দ্রশ্য দেখার আশা ছিলো তার সাথে কোনো মিল পেলাম না। দূরে কিছু চোখা চোখা উঁচু পাহাড় দেখা গেলেও নিচে কোনো পাহাড় দেখলাম না। সমতল ভূমির মধ্যে একে বেঁকে চলা একটা নদী বেশ নজরে পড়লো। পুরো এলাকা জুড়ে ধুসর সমতল ভূমি আর গুচ্ছ গুচ্ছ টিনের চালওয়ালা বাড়ি নজরে আসছিলো। বাড়িগুলোর চেহারা ওপর দিয়ে তেমন বোঝা যাচ্ছিলো না। তবে সংখ্যায় ছিলো অগনিত। আমি পাসে বসা বড় আপাকে বললাম, এখানে গরীব মানুষের সংখ্যা খুব বেশি মনে হচ্ছে। সব টিনের বাড়ি। পৃথিবীর কোন বড় শহরে এতো টিনের বাড়ি দেখি নাই। বিমান তখন অনেক নিচে চলে এসেছে, কাছাকাছি একসারি পাহাড়ও দেখা যেতে লাগলো ততক্ষণে। তবে আমার মাথায় কেন যেন ছিলো, কাশ্মীরে তুষারাবৃত পাহাড় দেখতে পাবো। বিমানে বসেও যখন সেটা দেখতে পেলাম না মনে মনে একট দমে গেলাম। তুষারাবৃত পাহাড় না দেখা গেলেও বিমানের জানালা দিয়ে অনেক দুরের উচুঁ একটা পাহাড়ের ফাঁকে বরফের অস্তিত্ব পাওয়া গেল। দুরের পাহাড়ের ভাঁজের সেই গ্লেসিয়ার দেখে আমরা বেশ মুগ্ধ। আমিও নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো বলে মনকে বোঝানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এখন আমাদের কাশ্মীর ভ্রমণের কারণ একটু পিছন থেকে শুরু করা যায়। আমার বড় বোন প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুন একজন শিশু বিশেষজ্ঞ। উনার কলিগদের একটি টিম যাদের মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে খ্যাতিমান বেশ কিছু শিশু বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ওনারা ভারতের খাজুরাহ শহরে এডোলেসেন্ট হেলথয়ের ওপর একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে ভারতে এসেছিলেন। সেমিনারে অংশগ্রহণ করার আগে কাশ্মীর ভ্রমণ করে নিজেদের একটু চাঙ্গা করে নেওয়াই সবার উদ্দেশ্য। বলতে গেলে সবাই নিজেদের পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়েই এসেছিলো। সবার মধ্যে আমি ব্যতিক্রম, কারণ আমি আমার বড় বোনের সাথে বোনাস হিসেবে এসেছিলাম। আমাদের কাশ্মীর ভ্রমনের টিম মেম্বার ১৯ জন। বেশ বড় দল। তবে দলে বয়ঃজ্যৈষ্ঠ মানুষের সংখ্যা বেশি থাকাতে হইচই কম ছিলো। শ্রীনগরে আমাদের হোটেলের নাম ছিলো হোটেল এশিয়ান পার্ক। মাঝারী সাইজের ছিমছাম হোটেল। শহরের মধ্যেই অবস্থান। এখানের প্রতিটি বাড়ির উপরেই টিন ব্যবহার করা হয়। ঢালু চালের চারচালা আটচালা ছাদের বাংলোটাইপ বাড়ি সব। বেশ নান্দনীক চেহারা। দোতালা তিনতালার ওপরে কোনো বাড়ি নাই। সুন্দর বাড়িগুলোকে ওপর থেকে টিনের বাড়ি ভেবে ভুল করেছিলাম। আমাদের ড্রাইভার নিয়াজ কাশ্মীর সম্পর্কে অনেক জ্ঞান দিতে ব্যস্ত ছিলো প্রথম থেকেই। বলছিলো আগামী তিন দিন আপনাদের সাথেই আছি, কাশ্মীর সম্পর্কে সব জানাবো, দেখাবো, সমস্যা নাই সাব। বেশ চালু আর স্মার্ট ছেলে নিয়াজ। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল আসার পথে বেশ গরম লাগছিলো। হোটেলে চেকইন করে এক-দুই ঘন্টা রেস্ট নিয়েই আমাদের কাশ্মীর ট্যুরের প্রথম পর্ব শুরু হয়ে গেল। প্রথম দিন রাত হয়ে যাওয়াতে দুরে কোথায়ও ঘুরতে যাওয়া সম্ভব ছিলোনা। আমাদের পুরো ট্যুরের সার্বক্ষণীক সঙ্গী বুরহান জানালো ১৩৯৪ খৃস্টাব্দে সুলতান সিকান্দার শাহ কাশ্মীর তৈরী করেন। ছয় শত বছরের পুরাতন মসজিদটি সম্পূর্ণ চালু অবস্থায় রয়েছে এবং প্রতি ওয়াক্তের নামাজ আদায় করা হচ্ছে। আমাদের ১৯ জনের দল পুরুষ এবং মহিলা দলে বিভক্ত হয়ে মসজিদ পরিদর্শন করছিলাম। মসজিদের আকার বিশাল। মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতো। ৬০০ বছর আগে কি মনে করে এতো বড় মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিলো এটা নিয়ে প্রশ্ন মাথায় আসছিলো সবার। সেই সময় কাশ্মীরের লোকসংখ্যাই বা কতো ছিলো কে জানে। বর্তমান সময়েই মাত্র এক কোটির একটু বেশি মানুষ বাস করে পুরো রাজ্যে। মসজিদটি আয়তকার। তারমধ্যে মাঝখানে বিশাল বাগান। তাই আয়তাকার মসজিদটি চারটি বিশাল লম্বালম্বি শাখা তৈরি করেছে। প্রতিটির আকারই বিশাল আকৃতির। প্রায় ৩৮০ ফুট লম্বা। চারটি গেটের একটির দিয়ে ভিতরের দৃশ্য মসজিদে কর্মরত লোকজনের ভাস্যমতে প্রতি শুক্রবারের জুম্মার নামাজে প্রায় ৪০,০০০ মানুষ একত্রে এই মসজিদে নামাজ আদায় করে। আমাদের অবাক হওয়ার মতো অনেক কিছুই মসজিদটিতে ছিলো। কাশ্মীরের শীতের কথা মাথায় রেখেই মসজিদের মেঝেতে মোটা কার্পেট আর কার্পেটের উপরের হাজার হাজার একই ডিজাইনের জায়নামাজ বিছিয়ে রাখা হয়েছে। এশার নামাজের সময় হয়ে যাওয়াতে আমরা সবাই জামাতের সাথে নামাজ আদায় করে নিলাম। ৬০০ বছর পুরোনো মসজিদের নরম মেঝেতে নামাজ পরতে পরতে একটা অদ্ভূত অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পরছিলাম বার বার। মসজিদ দেখা শেষে হোটেলে ফিরে হোটেলের রেস্টুরেন্টে ডিনার সেরে নিলাম সবাই। যেহেতু বেশ রাত হয়ে গেছিলো ততক্ষণে, বেশ শীত পরে গেছিলো শ্রীনগরে। ডিনারের শেষে হোটেলের বাগানে পেতে রাখা চেয়ারে বসে বেশ কিছুক্ষন আড্ডা আর কফি খাওয়া হলো। ডাল লেক কাশ্মীরের বিখ্যাত বেড়ানোর জায়গা। কাশ্মীরি ভাষায় ডাল মানে লেক বা হৃদ। শ্রীনগর শহরের মধ্যে প্রাকৃতিক এই বিশাল জলাভূমি এই নগরকে করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আর শত শত হোটেল, হাউসবোট ও শিকারা নৌকা লক্ষ লক্ষ পর্যটককে সেবাদান করে চলেছে। ডাল লেকের পাশদিয়ে যে রাস্তাটি চলে গেছে সেটাকে বলে বুলেভার্ট। ডাল লেকের পাড় থেকে বিখ্যাত সব মুঘল বাগিচা বা বাগান গুলো অবস্থিত। মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীর শালিমার বাগ (বাগান), নিশাত ইত্যাদি বাগান সৃজন করিছিলেন। ডাল লেক আর এসব অনিন্দ সুন্দর বাগানগুলো শ্রীনগরকে করেছে পর্যটকদের জন্য স্বর্গসম। শ্রীনগরের সৌন্দর্য যেন ডাল লেকের দান। যাকে কিনা বলে `ঔববিষ রহ ঃযব পৎড়হি ড়ভ কধংযসরৎ`। কাশ্মীর বা শ্রীনগরের মুকুটের মনি। আদতে শ্রীনগর নগরটির বড় একটি জায়গা জুড়েই আছে এই প্রাকৃতিক জলাভূমি। লেক। এসব লেকগুলো স্থির জলাভূমি। পদ্মপাতায় ভরা অনিন্দ সুন্দর বিশাল সব হৃদ। পুরো জলাভূমির মোট আয়তন প্রায় ২১ বর্গকিলোমিটার। পাড়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এই অপূর্ব সুন্দর হৃদের গায়ে হেলান দিয়ে সু-উচ্চ পাহাড় দাড়িয়ে থাকে আর পাহাড়ের সাথে চলে দিনভর মেঘেদের খুনশুটি। কত শত সাহিত্য সিনেমায় ডাল লেকের সৌন্দর্যের কথা লেখা হয়েছে, সিনেমায় দেখানো হয়েছে, ইয়ত্তা নাই। যদিও শ্রীনগরের মধ্যে দিয়ে ঝিলাম নদী বয়ে গেছে। কিন্তু ঝিলাম নদীর চেয়ে শ্রীনগরের হৃদ বা লেকগুলোর সৌন্দর্য মানুষের হৃদয়কে বেশি ছুয়ে যায়। শীতকালে ডাল লেকের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ১১ ডিগ্রী নিচেও নেমে যেতে পারে। ডাল লেকের পারের রাস্তার নাম বুলেভার্দ মনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা নিয়েই ডাল লেক দেখতে বের হলাম আমরা। ৪টা গাড়িতে ১৯ জন। সাথে বুরহান। চমৎকার স্বাস্থ্যবান হ্যান্ডসাম কাশ্মীরি তরুণ। খুব লাজুক। চাচাতো ভাইয়ের স্যারদের সেবা করতে এসে লজ্জায় চুপচাপ একপাসে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছিলো আর ড্রাইভারদের বুঝিয়ে দিচ্ছিলো কোথায় যেতে হবে। শহরের যে জায়গা থেকে ডাল লেক শুরু হলো সেখানে ডাল লেকের চেহারা হত দরিদ্র। চিকন নদীর মতো। লেকের অপর পারে অজস্র হাউসবোর্ট। এপারে বুলেভার্দ রোড আর রাস্তার পাশে পাশে কমদামি হোটেলের সাড়ি। লেকের ওপারের হাউসবোটগুলোকে পুরাতন আর নোংরা লাগছিলো। হাউসবোর্টগুলোকে দেখে বেশ জীর্নশীর্ন মনে হচ্ছিলো। লেকটাও এখানে চিকন আকৃতির। আমাদের গাড়ি লেকের পাড়ের রাস্তা ধরে সামনে যেতে থাকলে লেকের চেহারা ভালো হতে থাকলো। হাউসবোর্ডগুলোর চেহারাও ভালো হতে থাকলো। লেকের বেশ চওড়া একটি জায়গায় বেশ কিছু শিকারা নৌকা দেখে বুরহান আমাদের সবাইকে গাড়ী থেকে নেমে চারটি নৌকাতে ভাগ করে উঠিয়ে দিলো। শিকারাগুলো সুন্দর করে সাজানো থাকে। দু’জন মানুষ আধশোয়া হয়ে দৃশ্য দেখতে পারে। বালিস টালিস দিয়ে সুন্দর করে সাজানো নৌকার ভিতরটা। অন্য পাশের বেঞ্চে দুইজন বসে বসে দৃশ্য দেখার সুযোগ পায়। শিকারায় আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা রঙে রঙে সাজানো অপূর্ব সব শিকারা। তবে শিকারা ভ্রমনের শুরুতেই পর্যটকদের বিরম্বনার শিকার হতে হয় ভাসমান হকারদের কাছে। আমাদের নৌকা রওনা দেবার সাথে সাথেই খেয়াল করলাম পাশাপাশি এক ভদ্রলোক নৌকা বেয়ে চলেছে। মিষ্টি করে হেসে সালাম দিলেন। সালামের উত্তর দিতেই জিজ্ঞেস করলেন কোথা থেকে এসেছি, বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে বাংলাদেশের বেশ প্রশংসা করলেন। আমরা খুশি হয়েছি দেখে তার নৌকাটি আমাদের নৌকার সাথে মিশিয়ে আসল কথায় আসলেন। উনি একজন ইমিটেশন গহনার ব্যবসায়ী, সাথে থাকা ঝোলা খুলে গলার মালা, কানের দুল আংটি ইত্যাদি দেখাতে লাগলেন। আমরা যাত্রার শুরুতে মোটামুটি ধাক্কা খেলাম। সাথে রুপি নাই বলে কাটাতে চাইলাম। বলে আমি ক্রেডিট কার্ড নেই। যাক, এর পর এমন অনেক নৌকাই আমাদের পাশাপাশি এলো গেল। পরের দিকে অনেক কিছুই কিনলেন অনেকে। এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় বার্তা আদান প্রদান করে সবাই স্বীকার করলো, ট্যুর জমে গেছে। পানির স্বর্গরাজ্য যেন ওয়াটার ওয়ার্ল্ড সিনেমার জগতের মতো। এক ভাসমান জগৎ। অসংখ্য ভাসমান হাউসবোট, ভাসমান বাজার, কোথায়ও কোথায়ও দেখলাম ভাসমান চায়ের দোকান, ষ্টেশনারী দোকান এমনকি গোসলখানা বা হামামখানা। ডাল লেকের সবচেয়ে আকর্ষনীয় জায়গা এই লেকের মাঝামাঝি অসাধারন একটি দ্বীপে কিছুক্ষন কাটানো। তিন ঘন্টার নৌকা ভ্রমণ শেষে হোটেলে ফিরে আসলাম সবাই। প্রথম পর্বের ডাল লেক ভ্রমণ শেষে হোটেলে গোসল সেরে আবার গাড়ি নিয়ে লাঞ্চ করতে বের হলাম। কাশ্মীরি খাবার পেট ভরে খেয়ে নিয়ে আমাদের দ্বিতীয় পর্বের ভ্রমণ শুরু। এবারের গন্তব্য শ্রীনগরের আরেক বিখ্যাত বস্তু মুঘল সম্রাটদের বানানো সাজানো বাগিচা বা বাগান দর্শন। প্রথম গন্তব্য চশমাশাহী গার্ডেন। ডাল লেকের পাড় দিয়ে পাহাড়ের কিছুটা উপরে চশমাশাহী বাগিচা। চশমাশাহী স্প্রিং বা ঝরণার জন্য বিখ্যাত। বিশাল উঁচু পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে থাকা বাগানটি দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নাই। চশমাশাহী গার্ডেন খুব তারা তাড়ি দেখেই আমরা রওনা হলাম পরীমহল গার্ডেনের দিকে। পরিমহল গার্ডেনের বেশ কয়েকটি ধাপ আছে। মুঘলদের তৈরী বাগান, ঐতিহাসিক স্থাপনা মিলে জায়গাটা অসাধারন। ডাল লেকের বেশ সুন্দর ভিউ এখান থেকে পাওয়া যাচ্ছিলো। আমি যেহেতু আগে আগে বাগানের উপরের ধাপে উঠে গেছিলাম তাই উপর থেকে সবার ছবি তুলে দিয়েছিলাম। পাহাড়, ঐতিহাসিক বিল্ডিংস্, ডাল লেকের দৃশ্য সব মিলে পরিমহল গার্ডেনটা আমার বেশ ভালো লেগেছিলো। কীভাবে যাবেন ঢাকা থেকে ইন্ডিয়া দূতাবাসের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ইন্ডিয়া ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স, স্পাইজেট বিমানযোগে কাশ্মীর যেতে পারেন। বাংলাদেশ বিমানেও যাওয়া যায় কাশ্মীর। প্যাকেজ ব্যবস্থাঃ ঢাকা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেল্সসহ বিভিন্ন ট্যুরিজম কোম্পানী সারাবছর ট্যুরস প্যাকেজব্যবস্থা করে থাকেন। ফোন ঃ ০১৯৭৯৮৭৪০৪২ বাংলার পর্যটন অপার সৌন্দর্যের হতাছানি সুন্দরবন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। ভ্রমন করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় মুশকিল। একঘেয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম, একটু বিরাম, একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পরেন সৃষ্টিকর্তার অপারময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। ঢাকার বাইরে ঘুরে আসতে চান? তবে স্বল্প মূল্যে পরিবার নিয়েঘুরে আসতে পারেন দেশের দর্শনীয় স্থান। আমাদের সুজলা-সুফলা নদী মার্তৃক এই দেশের মধ্যেই রয়েছে পাহাড়, পর্বত সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে বিনোদনের নানান ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। আর আপনি যদি একজন পর্যটক হিসেবে ভ্রমণ করতে চান, তবে মাথার ওপর নীল চাঁদোয়া, মেঘে-বৃষ্টিতে ভেজা বাতাস। পায়ের নিচে অন্য এক পৃথিবী। উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন অপার সৌন্দর্যের হতাছানি সুন্দরবন। ভ্রমণ পিপাসুদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন- জহিরুল ইসলাম
|
|
|
|
|