॥ এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাট ॥
নুসরাত জাহান। বয়ষ মাত্র ১ মাস ৩ দিন। বাগেরহাটের একটি বেসরকারী শিশু ক্লিনিকের সাধারণ সিটে রোগী হিসেবে শুয়ে আছে। অপুষ্টি ও শিশু ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত সে। স্বভাবতই শিশুটির পাশে তার মায়ের থাকার কথা ছিল। কিন্তু নুসরাত হয়তো জানে না তার মা এই পৃথিবী আর নেই। চিরতরে মাতৃ¯েœহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে। পিতা যেন থেকেও নেই। জন্মের পর একটি বার কোন খোঁজ নেয়নি সে। সিটের পাশে আপনজন হিসেবে বসে আছে তার খালা। বাড়ি পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলায়। সেও একজনের আশ্রিতা। তার নিজেরও নেই কোন খাবারের ব্যবস্থা। জন্মের পর এমন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে নুসরাতকে, কে ভেবেছিল সে কথা। বাগেরহাট শহরের পুরাতন বাজার এলাকায় “বাগেরহাট শিশু ক্লিনিক” নামের ওই বেসরকারী ক্লিনিকে গিয়ে কথা হয় শিশু নুসরাত জাহানের খালার সাথে।
তিনি বলেন, তার মেঝ বোন শাহিদা বেগমের সাথে ৬/৭ বছর আগে বিয়ে হয় বরিশালের মুলাদি উপজেলার রিপন হাওলাদারের সাথে। উভয় পরিবারই গরিব। তারা দুজন ঢাকার একটি জুতার কারখানায় কাজ করত। কিছুদিন আগে তাদের সাথে পারিবারিক কলহ হয়। শাহিদাকে তার পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এসময় ৭ মাসের অন্তঃসত্তা সে। এরপর রিপন হাওলাদার শাহিদার সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখেনি। নুসরাতের জন্মের সময় তার মা শাহিদার মৃত্যু হয়। নুসরাতের ঠাঁই হয় তার খালা লিজা খাতুনের কাছে। লিজা তার ফুফুর আশ্রিতা। নিজের যেখানে বেলা ভাত জোটেনা, সেখানে বোনের মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে বিপাকে পড়ে সে। এর মধ্যে নুসরাতের শিশু ডায়েরিয়া দেখা দেয়। স্থানীয়দের পরামর্শে নুসরাতকে সে পিরোজপুরের একটি শিশু ক্লিনিকে নিয়ে আসে। কিন্তু ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক তখন তার বাগেরহাটের ক্লিনিকে রোগী দেখছিলেন। নুসরাতের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে বাগেরহাট এনে ভর্তি করার পরামশ দেন তিনি।
এভাবেই নুসরাতের বাগেরহাটে আসা। প্রথমে অন্য রোগীর স্বজনদের দেয়া খাবার খেয়ে দিন কেটেছে লিজা খাতুনের। পরে “ইচ্ছা নামের বাগেরহাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শিশুটির জন্য গুড়া দুধ ও কিছু ঔষধ এবং তার খালার জন্য সামান্য খাবার কিনে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে অনেকে কিছু সহায়তা করছেন শিশু নুসরাতকে।
কিন্তু শিশুটির বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। ক্লিনিকের অন্য রোগীর স্বজনরা জানান, বাচ্চাটি প্রায় মৃত্যু অবস্থায় এখানে আনা হয়েছিল। এখন আগের থেকে অনেকটা ভাল হয়েছে। অনেকে সামান্য কিছু সহায়তাও করছেন শিশুটিকে। এবিষয়ে ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নুসরাত শিশু ডায়েরিয়া ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত। তার অবস্থা আগের থেকে কিছুটা ভাল।