॥ আজাদ রুহুল আমিন ॥
ভৌগলিক নদী নালা বিল বেষ্টিত অপরুপ গ্রাম বাংলা । মেঠো পথের শেষ নেই । অসংখ্য বাঁশের সাঁকো ভাঙ্গা কাঠের পুল । পথে পথে খেয়া নৌকায় যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড়ে দুর্ঘটনা কম নয়। সারি সারি রাস্তার দু`পাশ জুড়ে শত শত আমড়া গাছ। চারিদিকে তাকালে সবুজ আর সবুজ বৃক্ষের শেষ নেই। সুপারি নারকেল কলা ফলজ বাগান। প্রমত্তা খরস্রোতা তালতলা গাওখালী চাঁদকাঠী নদী। থমকে দিয়েছে জীবনযাত্রা। জীবন সংগ্রামী প্রত্যয়ী মানুষ এরপরও থেমে নেই। বিলে শাপলা নেই। এক ফসলী ধান বপনের পালা। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। এখানকার মানুষের জিজ্ঞাসা! ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোয়া পেতে আর কত অপেক্ষার প্রহর ? ধান নদী খাল এই তিনে শেরে বাংলার বৃহত্তর বরিশাল পিরোজপুর নাজিরপুর।
পিরোজপুরের নাজিরপুর একটি বিশাল বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বাস। হিন্দু মুসলমানের সম্প্রীতি লক্ষ্যনীয়। চার ইউনিয়নের অধিবাসী আর বৃহত্তর কাউখালী বন্দর যা পিরোজপুর শহরকে হার মানায়। গাওখালী আর গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়া বরিশাল উজিরপুর পিরোজপুর পটুয়াখালী মোংলা হতে আসা যাওয়া করে দেড় লক্ষাধিকের অধিক যাত্রী। চাঁদকাঠী নদীর তীব্র স্রোত অতিক্রম করে এখানকার মানুষ জরুরী প্রয়োজনে কিংবা অসুস্থ্য হলে মুমুর্ষ অবস্থায় ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকায় রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে নাজিরপুর, পিরোজপুর, কাউখালী, উজিরপুর, বটিয়াঘাটা, বরিশাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে জীবনের ঝুকি নিয়ে সেখানে যেতে হয় অধিক চড়া ভাড়া দিয়ে। যা অনেকেরই সংগতি নেই। এছাড়া এখান থেকে তিনটি বড় বড় নদী থাকার কারনে নাজিরপুরের সাথে যোগাযোগ এবং যাতায়াতে যাত্রী সাধারনের দারুন বেগ পেতে হয়। এছাড়া প্রশাসনিক কাজ কর্মে মাদ্রাসা স্কুল কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তাগন আকস্মিক পরিদর্শনে যাবার আগেই ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগন তথ্য প্রবাহের যুগে মুঠো ফোনে খবর পেয়ে তারা সতর্ক হন এবং দুর্নীতি অপকর্ম চাপা পড়ে যায়। এ এলাকা এতই দুর্গম যে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, দাখিল পরীক্ষা সদরে না হয়ে যার যার ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছাতে অধিক রাত হয়ে যায়। অভিভাবকরা থাকেন উদ্বিগ্ন। বলেশ্বরের শেষ মোহনায় তালতলা নদীর উপর দীর্ঘ সেতু নির্মান কাজ ২০১৮ জুনে শেষ হবার কথা থাকলেও এ এলাকার অধিবাসীরা নিশ্চিত নন। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে গাও খালী নদীর উপর নাও টানা ব্রীজ ভেঙ্গে পড়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাজার হাজার মানুষকে। এছাড়া চাঁদকাঠী নদীর নাব্যতা ও স্রোত এতই প্রবল মায়ের সাথে দুধের শিশু খেয়া গড়িয়ে নদীতে পড়ে যায় । শুধু তাই নয় মৃত্যুর মত অসংখ্য মর্মান্তিক ঘটনার কালের সাক্ষী এই তিন নদী। মিনি ট্রলার মালিক সমিতি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে মাপ ঝোপ করে সেতু নির্মানের পরিকল্পনা করলেও ব্যয়ের পরিমাপ যা বহনযোগ্য নয়। এ অঞ্চলের প্রায় ৫শতাধিক খেয়া ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাঝি চালক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখান থেকে যাত্রী পারাপার করলেও সরকার কর্তৃক এ সকল নদীতে কোন পাকা ঘাট নির্মান করে নি বা কোন সহায়তা প্রদান করে নি। চাঁদকাঠী আর গাও খালী এবং তালতলা নদী পার হয়ে বিশাল বন্দর গড়ে উঠেছে গাও খালী বাজার। এখানে শত শত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থাকলেও এখান থেকে উৎপাদিত ধান ফসল তরিতরকারী ও এখানকার নদীতে ইলিশ কৈ সিংগি মাগুর কাউন সহ বিরল প্রজাতির মাছ জেলে ও কৃষকদের পানির দরে বিক্রি করতে হয়। শুধুমাত্র যাতায়াতের সহজলভ্যতা না থাকার কারনে। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, তালতলা নদী এবার টেন্ডার হয়েছে ২১ লাখ টাকা। অথচ খেয়া নৌকা কম থাকায় প্রচুর গাদাগাদি করে যাত্রী পারাপারে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পরতে হয়। প্রতি ব্যক্তিকে নদী পার হতে ৭টাকা দিতে হয়। যা এ সকল এলাকায় বসবাসরত অধিবাসীদের জন্য একাধিকবার যাতায়াতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ব্যয় বহুল। প্রতিদিন শত শত মটর সাইকেল রিক্সা ভ্যান বহনে অধিক ভাড়া গুনতে হয়। স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াত রুদ্ধ করেছে তিন নদী। বলেশ্বরের শেষ মোহনা তালতলা নদী। এর উপর দীর্ঘাসেতু নির্মান চলমান। গাওখালী নদীর উপর নাওটানা পুরাতন ব্রীজ ভেঙ্গে গেছে। চাদকাঠী নদী এতই প্রমত্তা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা এবং প্রানহানীর ঘটনাও কম নয়। বর্তমান মৌসুমে বিল থেকে নেমে আসা লাখ লাখ কচুরিপানা ট্রলার নৌকায় আটকে গিয়ে স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনেক দূর। এ যেন এখানকার মানুষের নিত্যদিনের বাস্তবতা । কর্ম ব্যস্ততায় দুর্ঘটনা একটি রুটিনে পরিনত হয়েছে। নদী ভাঙ্গন এলাকায় মানুষ দুর্জয় শপথে এ নদী এমন নদী সে শোনে না কোন ধর্মের কাহিনী। এ গ্রামের রাস্তার পথেই গবাদি পশুর ছাউনি।
হোগলা তৈরীতে ব্যস্ত মা বোনেরা। পোল্ট্রি ফার্ম মাছের ঘের আর বহিঃ বিশ্বের মডেল নাজিরপুরের দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সবজী ক্ষেত। এখন শুধুমাত্র এই তিন নদীর উপর সেতু নির্মান সময়ের দাবি। এলাকাবাসী ও ভুক্তভুগীরা জানান সরকার যায় সরকার আসে আমাদের যাতায়াতে ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আসে না। নির্বাচনে তারা শুধু জয় লাভের প্রত্যাশায় ওয়াদাই করে যান।