শুক্রবার, মে ৯, ২০২৫
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ   * রাণীশংকৈল সীমান্ত থেকে ৪ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ   * কক্সবাজারে কৃষি কার্যক্রম পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত সচিব   * চট্টগ্রামের আ.লীগ নেতা নুরুল আবছার চৌধুরী গ্রেপ্তার   * চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালাল আটক   * পরীক্ষাকেন্দ্রের মাঠে চলছে বৈশাখী মেলা ১৪৪ ধারা অমান্য করে সাধারণ মানুষ মেলায় ঢুকে পড়ে   * এ মেলায় সকলের সম্পৃক্ততা নেই- এটা মনে হচ্ছে বিএনপি’র মেলা - রাণীশংকৈলে মির্জা ফয়সাল   * সর্বোৎকৃষ্ট মানের স্কিন কেয়ার ও কসমেটিকস পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখে রিমার্কের ভূয়সী প্রশংসা করলেন শিল্প সচিব   * উপকূলের শ্যামনগরে বোরোর ফলনে কৃষকের মুখে হাসি   * চিতলমারীতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত  

   আন্তর্জাতিক
সু চিকে রোহিঙ্গা তরুণের খোলাচিঠি চোখের জলে লিখে গেলাম আপনার ভবিষ্যৎ
  Date : 01-11-2017

॥ মানবাকিার খবর প্রতিবেদন ॥

ছাব্বিশ বছর বয়সী রোহিঙ্গা তরুণ রো মাইয়ু আলি। স্বপ্ন দেখতেন একজন লেখক হওয়ার। রাখাইনের মংডু এলাকায় নিজ বাড়িতের গড়ে তুলেছিলেন পাঠাগার। মিয়ানমারের সেনাদের দেওয়া আগুনে সেই পাঠাগার হারিয়েছেন। পুড়ে গেছে তাকে অনুপ্রেরণা দেওয়া পছন্দের বইগুলো। প্রাণ বাঁচাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাখাইন থেকে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। ঠাঁই হয়েছে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে। নিজের স্বপ্ন পুড়ে নিঃশেষ হওয়া এই তরুণ রাখাইন সংকটের জন্য শান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকেই দায়ী করেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার মাধ্যমে সু চির কাছে এক খোলা চিঠি লিখেছেন মাইয়ু আলি। চিঠিতে সু চির কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন রাখার পাশাপাশি মন্তব্য করেছেন, চোখের জলেই তিনি লিখে গেলেন সু চির ভবিষ্যৎ। ইতিহাসে একজন সামরিক জান্তার সমান্তরালেই উচ্চারিত হবে সু চির নাম।

সু চিকে খোলা চিঠিতে মাইয়ু আলি লেখেনঃ

যে বছর আপনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান, সেই বছরেই আমার জন্ম। আমাদের দেশের যে কারও পাওয়া সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার এটি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে আমার জন্ম। আমাদের এখানকার সবাই সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, আমরাই যেন এ পুরস্কার পেয়েছি। বছরের পর বছর সামরিক জান্তার অত্যাচারে নিষ্পেষিত রোহিঙ্গারা আপনার পুরস্কার পাওয়ায় নতুন করে অনুপ্রেরণা পায়। স্বাধীনতার পর ওই ঘটনায় প্রথমবারের মতো অনুভব করেছিলাম, আমরাও মিয়ানমারের অংশ। মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করেছিলাম।

আমার দাদা সব সময় আপনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন। আপনার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির লোকজন যখন আমাদের বাড়িতে আসত, তখন তিনি সবচেয়ে বড় ছাগল ও গরু জবাই করতেন। তিনি তাদের খুবই আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাতেন। আমার বাবা ও প্রিয় দাদা চেয়েছিলেন, আমি যেন আপনার পথ অনুসরণ করি। নির্যাতিতদের পক্ষে আপনার সোচ্চার কণ্ঠস্বর ও জীবনবোধ আমার মাকেও আকৃষ্ট করেছিল।

২০১০ সালে সামরিক বাহিনী যখন আপনাকে গৃহবন্দিত থেকে মুক্তি দেয়, তখন আমরা রোহিঙ্গারা খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু মাত্র সাত বছরের মাথায় আমরা, রোহিঙ্গারা আবারও বর্বরতা ও গণহত্যার শিকার হলাম। এবার তা আপনারই হাতে।

২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আপনি দল থেকে মুসলিম প্রতিনিধিদের বের করে দিলেন। এটি ছিল আপনার রাজনৈতিক ভীরুতার প্রথম চিহ্ন। এর কয়েক মাস পরেই উত্তর রাখাইনে আপনার প্রশাসন রাখাইন `জাতিগত নিধন` অভিযান শুরু করল। হত্যা করা হলো অসংখ্য বেসামরিক লোককে। গণধর্ষণের শিকার হলো অসংখ্য নারী। বিশ্বজুড়ে এর ব্যাপক নিন্দা হলো। কিন্তু আপনি সেই অপরাধের কথা স্বীকার করেননি। এমনকি আপনি আমাদের রোহিঙ্গা পরিচয় দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অথচ শত বছর ধরে আমরা রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছি এবং রোহিঙ্গাই আমাদের জাতিগত পরিচিতি।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর থেকে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। ১৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা এখনও রাখাইন ছাড়তে পারেনি, তারা আতঙ্ক ও নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে।

গত ১ সেপ্টেম্বর আমাকে ও আমার বাবাকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। ছোট্ট একটি নৌকায় করে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে তিন দিন ও দুই রাত পর আমরা বাংলাদেশে আসি। আমাদের আশ্রয় হয় কুতুপালংয়ের একটি শরণার্থী ক্যাম্পে। এরপর খবর পেলাম, মংডুতে আমাদের বাড়িটি জ্বালিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বলছে, এটি সেনাবাহিনী কিংবা স্থানীয় বৌদ্ধরা করেছে। কিন্তু আমি বলব, সু চি আপনিই এগুলো করছেন। এর জন্য আপনাকেই দায়ী করব আমি।

আপনি শুধু আমার বাড়িই জ্বালিয়ে দেননি, আমার বইগুলোও পুড়িয়ে দিয়েছেন। আমি সব সময় েেলখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। আমি সিত্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে পড়ছিলাম। কিন্তু আপনি জানেন, সেখানে রোহিঙ্গাদের পড়াশোনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই আমি বই ও আর্টিকেল পড়ে অনুপ্রেরণা পেতাম। আপনি নেলসন ম্যান্ডেলার `লং ওয়াক টু ফ্রিডম` বইটি পুড়িয়ে দিয়েছেন। মহাত্মা গান্ধীর জীবনী পুড়িয়েছেন, লিমাহ জিবোইয়ের `মাইটি বি আওয়ার পাওয়ার` বইটিও আপনি পুড়িয়েছেন। এমনকি আপনি নিজের `ফ্রিডম ফ্রম ফেয়ার` বইটিও পুড়িয়ে দিয়েছেন। আমার সব আশা ও স্বপ্নকে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমি শুধু আপনাকেই দায়ী করব। আপনার কাছে আমার বাবার একটি প্রশ্ন রয়েছে, সবকিছু ঘটার পরও আপনি কেন রোহিঙ্গাদের একবারও দেখতে আসেননি, হোক সেটা রাখাইন রাজ্যে কিংবা বাংলাদেশে, যেখানে আমাদের পালিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। আপনি কি একবারও আমাদের খবর জানতে চেয়েছেন?

আমরা রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত সম্প্রদায়। আমার হৃদয় ভেঙে যায়, যখন আমি শুনি যে সু চির দেশ মিয়ানমারের একটি জনগোষ্ঠী পৃথিবীতে সবচেয়ে নির্যাতিত। আপনি যে পথ বেছে নিয়েছেন, তা আজ সবার কাছেপরিস্কার। ইতিহাসে আপনার নাম একজন অত্যাচারী সামরিক জান্তার কাতারেই লেখা হবে। লাখ লাখ রোহিঙ্গার রক্ত আর বিলাপে লেখা আপনার নাম ইতিহাসে অবশ্যই থাকবে। তবে তা শান্তিতে নোবেলের জন্য, নাকি আপনার নারকীয় নৃশংসতার জন্য- তার জবাব সুদূর ভবিষ্যতের কোনো এক পাতায় আমরা রোহিঙ্গারা চোখের জলে লিখে রেখে গেলাম।



  
  সর্বশেষ
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়েতে কুকুর-শিয়ালের উৎপাত, ঝুঁকিতে বিমান অবতরণ-উড্ডয়ন
সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ
রাণীশংকৈল সীমান্ত থেকে ৪ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
কক্সবাজারে কৃষি কার্যক্রম পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত সচিব

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308