বৃহস্পতিবার, জুলাই ৩, ২০২৫
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * কুড়িগ্রামে এনসিপি`র `দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা`   * মতলব উত্তরের দক্ষিণ টরকী একাদশ ক্লাবের উদ্যোগে ফুটবল টূর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত   * মতলব উত্তর থানা ও এখলাছপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ডিসির পরিদর্শন   * রাঙ্গামাটি শহরের একটি বাসা থেকে বিচারকের স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ;   * বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত   * কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন ও সাবেক জেলা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত;   * জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন চিতলমারী সীমান্তে নগরমান্দ্রায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব   * কক্সবাজারের উখিয়ায় অপহরণ চক্রের ১সদস্যকে গ্রেফতার করেছে. র‍্যাব-১৫   * কুমিল্লার মুরাদনগরের আলোচিত ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলী সহ গ্রেফতার ৪ জন   * চিতলমারীতে দোহার তৈরি করে জীবিকা চলে শতাধিক পরিবারের  

   ইসলাম
নারী অধিকারের স্বরূপ বিশ্লেষণ প্রেক্ষিতঃ ইসলাম ও আধুনিক সভ্যতা
  Date : 01-10-2017



মাওলানা মোহাম্মদ আবুবকর সিদ্দীক আদ্দাঈ

পূর্ব প্রকাশের পর ...একজন নারী নবী (স:) এর দরবারে এসে নিবেদন করে বলল, আমার পিতা তার সামাজিক মর্যাদা রক্ষার জন্যে আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু এতে আমি সন্তুষ্ট নই। মহানবী তাকে বললেন, “তোমার ইচ্ছা হলে বিয়ে বহাল রাখতে পার অথবা বাতিল করেও দিতে পার।”(আহমদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

এ থেকে বুঝা যায় মহানবী (স:) শুধু নারী সম্পর্কে পুরুষের নয় বরং নারীরও মনোবৃত্তির প্রতিফলন ঘটাতে পূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্যের অধিকার দিয়েছেন। ইসলাম একজন নারীকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার অধিকার ও স্বাধীনতা যেমন দিয়েছে, তেমনিভাবে দিয়েছে বিশেষ প্রয়োজনে বিবাহ বিচ্ছেদের স্বাধীনতা ও অধিকার। তবে তালাক পেতে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী বা আদালতের নিকট তালাকের আবেদন করার বিধান রাখা হয়েছে। বিবাহের পরে নির্যাতিত জীবন যাপনে শরীয়ত কখনো তাকে বাধ্য করেনি। স্বামী তাকে জুলুম নির্যাতন করবে, তার অধিকার চূর্ণ-বিচুর্ণ করে তাকে জীবিকা নির্বাহের উপকরণ থেকে বঞ্চিত রাখবে, তার ইজ্জত সম্মানের হানী ঘটাবে এর পরও স্ত্রী তা নিরবে সহে যাবে এমন কোন বাধ্য-বাধকতা ইসলামে নেই। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সামান্য কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো যাবে। যেমনটি পাশ্চাত্য সমাজে আমরা দেখতে পাই। রাসূলে করিম (স:) এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।“যে নারী অকারণে তার স্বামীর নিকট তালাক চাইবে, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণও হারাম হয়ে যাবে।” (মিশকাত)

বিবাহবিচ্ছেদের শরীয়ত অনুমদিত কারণসমূহ হলো: ১. খেয়ারে বুলুগ তথা নাবালেগ অবস্থায় কোন মেয়েকে বিয়ে দেয়া হলে বালেগা হওয়ার পর বিয়ে ঠিক রাখা বা না রাখার ইখতিয়ার, ২. কুফু বা সমতা না হওয়া, ৩. স্বামী নিখোঁজ বা উধাও হওয়া, ৪. স্বামী পাগল হওয়া, ৫. স্বামীর নপুংসকতা বা পুরষত্বহীনতা, ৬. স্বামী শ্বেত রোগী বা কুষ্ঠ রোগী হওয়া, ৭. স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে খোরপোষদানে অক্ষমতা বা খোরপোষদানের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও না দেয়া, ৮. ইসলাম স্ত্রীকে যেসব অধিকার দিয়েছে তা স্বামী কর্তৃক লঙ্ঘিত হওয়া, ৯. নির্যাতন করা, ১০.স্বামীর ফাসেকী কর্মকা-ে লিপ্ত থাকা, যেমন মদ্যপ বা নেশাখোর হওয়া যা স্ত্রীর ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ১১. শরীয়ত বিরোধী কাজে স্ত্রীকে বাধ্য করা, ইত্যাদি। (ইসলাম মে আওরাত কা মাকাম)

এছাড়া, ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের ৩২৩ ধারায় স্বামীর চার বছর ধরে নিখোঁজ থাকা, দুই বছর ধরে স্ত্রীর ভরণ পোষণের ব্যর্থতা এবং স্বামীর ্ওপর সাত বছরের কারাদ-ের আদেশকে বিবাহ বিচ্ছেদের ঐচ্ছিক কারণ হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিন্ন আইনের অধিকারঃ প্রাচীন ধর্মগুলো নারীকে নগণ্য কর্ম মর্যাদা এবং পুরুষকে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী মনে করে পৃথক আইন রচনা করেছিলো। কিন্তু ইসলামে নারী-পুরুষের মর্যাদা সমান এবং তাদের জন্য অভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে: পুরুষ যেমন কাজ করবে তেমনি ফল পাবে এবং নারী যেমন কাজ করবে ঠিক তেমনি তার ফল লাভ করবে। আরও বলা হয়েছে,“ চোর পুরুষ হোক বা নারী উভয়কে হাত কেটে দাও।”(সূরা আল মায়েদা: ৩৮ ) অর্থাৎ নারী যদি এমন অপরাধ করে যা সাধারণ আইনে দ-নীয় তবে সে পুরুষের সমান শাস্তিই পাবে। বিচারের ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয় নি। জারীকৃত আইনের একটি ধারা হচ্ছে, “স্ত্রীলোকের হত্যাকারী কোন পুরুষ হলে শাস্তি স্বরূপ তাকে হত্যা করা হবে।” অর্থাৎ সমস্ত ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমান আইন প্রযোজ্য।

মত প্রকাশ ও পরামর্শের অধিকারঃ একজন পুরুষ যেমন শরীয়তের সীমারেখার ভিতরে থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রাখে, এমনিভাবে একজন মহিলারও অধিকার আছে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে তার মত প্রকাশের। চাই ধর্মীয় ব্যাপার হোক বা পার্থিব ব্যাপারে। রাসূলে করিম (স:) এর সম্মুখে মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সব সাহাবাই স্বাধীন ভাবে প্রশ্ন করার ও মত প্রকাশের সুযোগ পেতেন। তাই ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সমাজ জীবনের বিভিন্ন ব্যাপারে মেয়েদের অভিমত ও হৃদয়াবেগ প্রকাশের অবাধ অধিকার রয়েছে। এটা তারা মৌখিকভাবে বা লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে। নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে এই মত প্রকাশের অধিকার তাদের রয়েছে। হযরত হাসান বসরী (র:) বলেছেন, নবী (স:) মেয়েদের সাথেও পরামর্শ করতেন এবং কোন কোন সময় তাদের অভিমত গ্রহণ করতেন। মহানবী (স:) বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নারীদের মতামতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির একটা শর্ত ছিল যে, এই বছর মুসলমানরা উমরা না করেই ফিরে যাবে। তাই রাসূল (স:) সকলকে মাথা মু-ন করতে এবং নিয়ে আসা পশুগুলোকে জবাই করার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু সাহাবাগণ যেহেতু এই সন্ধির শত দেখে মর্মাহত হয়েছিলেন, সে কারণে তারা কেউ এই নির্দেশ পালনে কোন তৎপরতাই দেখালেন না। এরূপ অবস্থা রাসূল (স:) হযরত উম্মে সালমা (রা:) এর নিকট প্রকাশ করলে তিনি সাহাবাদের মনস্তত্ব লক্ষ করে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা সহকারে পরামর্শ দিলেন যে, আপনি এর পর আর কাউকে কিছু না বলে যা কিছু করার নিজেই অগ্রসর হয়ে করে ফেলুন। দেখবেন, সকলেই আপনার দেখাদেখি সব কাজই করবে। রাসূল (স:) এই পরামর্শ সানন্দে গ্রহণ করলেন এবং যখনই তিনি করণীয় সব কাজ করলেন সাহাবায়ে কেরামরাও তাঁর অনুসরণ শুরু করে দিলেন। এভাবে হযরত উম্মে সালমার(রা:) যথার্থ ও সুচিন্তিত পরামর্শ উপস্থিত অচলাবস্থা দূর করাতে সক্ষম হল এবং বাস্তবে প্রমান করে দিল যে, মহিলাদেরও যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি আছে এবং তাদের পরামর্শ জাতীয় জীবনে অনেক সমস্যারই সমাধান করতে সক্ষম।

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের নিকট অবশ্যই দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হবে যে, অন্যান্য ধর্ম এবং আধুনিক সভ্যতার তুলনায় ইসলামই সর্বাধিক নারী অধিকার নিশ্চিত করেছে। বাস্তবিক অর্থে ইসলাম বর্ণিত নারী অধিকার সমূহ যদি আমাদের সমাজে বাস্তবায়িত হত তবে নারী জাতির জন্য এর থেকে কল্যাণ দায়ক আর কিছুই হতো না। সমাজের সর্বস্তরে ইসলাম বর্ণিত নারী অধিকার সমূহ নিশ্চিত হোক এ প্রত্যাশা রেখে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
...সমাপ্ত

লেখক: ধর্মীয় গবেষক, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত আলোচক ও সহকারী সম্পাদক, মানবাধিকার খবর



  
  সর্বশেষ
রামগতি পৌরসভার ১৭ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
কুড়িগ্রামে এনসিপি`র `দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা`
মতলব উত্তরের দক্ষিণ টরকী একাদশ ক্লাবের উদ্যোগে ফুটবল টূর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত
মতলব উত্তর থানা ও এখলাছপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ডিসির পরিদর্শন

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308