শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * কক্সবাজার জেলা পরিষদের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আল মারুফের যোগদান   * ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, হুঁশিয়ারি সংকেত   * মাদক কারবারে ককস বাজারের সাবেক এমপি বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি   * দিশেহারা সুগন্ধা দাশের পাশে দাঁড়াল চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসন   * আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ;   * আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ;   * রশিদ মিয়া কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান ;   * কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে যে সকল প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন;   * বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলো মিয়ানমারের ৯ বিজিপি সদস্য   * ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দুর্গম সীমান্তে বিজিবি মহাপরিচালক  

   সম্পাদকীয়
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই
  Date : 01-07-2016

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

 

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান: বিদায়ী চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও প্রধান উপদেষ্ঠা মানবাধিকার খবর। টানা দুই দফায় দায়িত্ব পালন করে ২৩ জুন অবসরে গিয়েছেন। অবসরের যাওয়ার আগে ২১ জুন রাজধানীর মগবাজারে  নিজ কার্যালয়ে মানবাধিকার খবরের পক্ষ থেকে একান্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন  সম্পাদক ও প্রকাশক রোটারিয়ান মোঃ রিয়াজ উদ্দিন। পাঠকের উদ্দেশ্যে তার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো- 

 

 

মানবাধিকার খবর : আপনি দুই বার মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। আগেও মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। বিভিন্ন সময় আপনার পাওয়া অনেক পদকের মধ্যে গান্ধী ও ম্যান্ডেলা পদকও দেখা যাচ্ছে। এই দুই বিশিষ্ট জনের মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আজকের বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়?

 

ড. মিজানুর রহমান  : এই দুই বিশিষ্টজন যে ভাবে আন্তর্জাতিক পরিম-লে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন, তাঁরা যেভাবে মানুষের মর্যাদাকে দেখেছেন ও অনুশীলন করে গেছেন, সেটা বর্তমান বাংলাদেশে নেই। মানুষের মানবিক মর্যাদা যদি মানবাধিকারের প্রাণ হয়ে থাকে, তাহলে সেখানে বিরাট ঘাটতি আছে। আত্মস্থ করতে হবে যে সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।

 

মানবাধিকার খবর : আমরা জানি সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। কিন্তু আমাদের দেশে তা কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করেন? বিশেষ করে আপনার দায়িত্বকালিন সময়ে দেশে গুম হলেও কোনো তদন্ত করতে দেখা যায়নি। এনটা কেন ?

ড. মিজানুর রহমান  : জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে আমাদের  দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছি। সরকার বলেছে গুম হচ্ছে না। আমরা বলেছি গুম হচ্ছে। আমরা লুকাইনি। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের  মধ্যে তফাত করেছি। আর ২০০৯ সালের আইন বলছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা কমিশন তদন্ত করতে পারবে না। আমাদের কাছে আসা অভিযোগগুলোতে নির্দিষ্টভাবে পুলিশ বা র‌্যাবের নাম এসেছে। তাই আইন দ্বারা আমরা বারিত।

 

মানবাধিকার খবর : আপনি তাহলে রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় রেখে যাচ্ছেন?

ড. মিজানুর রহমান  : আমি একমত যে রাষ্ট্র দৃশ্যত কাঠগড়ায় রয়েছে। এর প্রতিটি  ক্ষেত্রে আমরা নির্দিষ্ট দিনক্ষণ উল্লেখ করে বলেছি এ বিষয়ে তদন্ত করে কমিশনকে জানাতে। ইলিয়াস আলীর বিষয়ে আমরা তদন্ত চেয়েছিলাম। সংসদে তুলতে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে ২৩টি হত্যাকান্ডের  বিষয়ে তদন্ত চেয়ে কোনো খবর না পাওয়ার একটি তালিকা হস্তান্তর করেছি। কোনোটিতে ২২ বারও তাগাদাপত্র দিয়েছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে, একটিবারও উত্তর পাইনি।

 

মানবাধিকার খবর : আইন আপনাকে সুযোগ দিয়েছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের মামলায় পক্ষভুক্ত হতে। কেন হননি?

ড. মিজানুর রহমান  : গত ছয় বছরে শুধু সাগর-রুনির মামলায় হয়েছি। বিনা বিচারে আটকে রাখা জনৈক তানভিরকে মুক্ত করেছিলাম।

 

মানবাধিকার খবর : সম্প্রতি ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বাড়ল কেন? হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে  বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- কমে গুমের সংস্কৃতি এসছে। কেন এমন হচ্ছে?

ড. মিজানুর রহমান  :  যদি সত্যিকারার্থে দুই পক্ষ গোলাগুলি করছে বা যুদ্ধ করছে, তাহলে সেটা অন্য ঘটনা। আমরা যে বন্দুকযুদ্ধের কথা বলছি, সেখানে কিন্তু যেনতেন বন্দুকযুদ্ধ নয়। এসব বন্দুকযুদ্ধে যারা নিহত হচ্ছেন, তারা গুপ্তহত্যা করতে গিয়ে মানুষের হাতে ধরা পড়েছেন। যাকে আমরা হাতেনাতে ধরেছি, রিমান্ডে নিয়েছি, তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। এ তথ্যের মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে প্রকৃত অপরাধী, মূল হোতা, অর্থের জোগানদাতা, পরিকল্পনাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীর মুখোশ উন্মোচন করা সম্ভব ছিল। কিন্তু এই ক্রসফায়ারে মৃত্যুর ফলে সেই পথটাই বন্ধ হয়ে গেল। এ কারণে জঙ্গিবাদ নির্মূলও থমকে গেল। যে আশার দুয়ার উন্মোচিত হয়েছিল, সেটাও বন্ধ হয়ে গেল।

কিন্তু কারা এটা করল ? সরকার যেখানে চাইছে জঙ্গিবাদকে দ্রুত নির্মূল করতে, তাদের মূলোৎপাটন করতে। এটা তাদেরই কাজ, যারা চায় না সরকারের এ কর্মসূচি সফল হোক। সুতরাং এ ধরনের ক্রসফাসার মানবাধিকার লঙ্ঘন।

আমাদের সমগ্র রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হলো। এ অপরাধকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। আমরা প্রত্যাশা করি, রাষ্ট্র এবং সরকার এ বিষয়টিকে অতি দ্রুত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। যারা যারা এর পেছনে রয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।

নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য, এ ব্যাপারে সজাগ থাকা। সবারই দায়িত্ব হচ্ছে, আশপাশে সন্দেহভাজন ব্যক্তির গতিবিধি লক্ষ্য রাখা। তাদের কোনো কর্মকা- সন্দেহজনক মনে হলে, তা সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে। নাগরিক হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। নাগরিক সমাজ যদি সংগঠিত থাকে, তাহলে কিন্তু অপরাধীরা অপরাধ করতে দুবার ভাববে। তবে যেসব নাগরিক পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করবেন, তারাও যেন প্রশংসিত হন। কোনো কারণে যেন তাদের হয়রানির শিকার না হতে হয়। এটাও নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মানুষ যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গিয়ে উল্টো হয়রানির শিকার হয়, তাহলে তারা কিন্তু তাদের কাছে যেতে চাইবে না। অনেক মানুষ এ কারণেই নিরুৎসাহিত বোধ করে। এটা ভালো নয়।

পুলিশ জনগণের কাজ করছে। তারা যে জনগণের বন্ধু। তাদের কর্মকা- দিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে। তাহলেই পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস দৃঢ় হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বলা হচ্ছে, ১৯৪ জন জঙ্গি ধরা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার। কিন্তু এ ধরনের অভিযান কোনো সভ্য রাষ্ট্রে কাম্য নয়। কারণ ১৯৪ জন ধরতে গিয়ে যদি ১৩ হাজার বা ১৪ হাজার মানুষকে আটকাতে হয়, তাহলে আমার সেই বাহিনীর পেশাগত দক্ষতা নিয়ে বিরাট বড় প্রশ্ন আছে। তারা আসলেই কতখানি দক্ষ, প্রশিক্ষিত, সেটা জনগণের কাছে প্রশ্ন। তাদের হাতে আমাদের রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনগণের ভার দিয়ে রেখেছি। তাদের কাছে আমি আশ্বস্ত বোধ করতে পারি, এই প্রশ্ন কিন্তু থেকে যায়। এইভাবে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ আটক করা, কোনো সভ্য সমাজ, যেখানে গণতন্ত্র রয়েছে, আইনের শাসন রয়েছে, সেখানে এটা কাম্য হতে পারে না।

এটা আরও খারাপ বিষয় যে, যখনই নির্বিচারে আটক হয়, তখনই গ্রেফতার-বাণিজ্যের একটি সুযোগও সৃষ্টি হয়। আমরা কিন্তু অনেক আগেই, যখন শুরু হয়, তখনই এই সাবধানবাণী দিয়েছিলাম, তারা যেন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আমাদের সতর্কবাণী যদি তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতেন, যদি আমাদের হেয় না করা হতো, অবজ্ঞা না করা হতো, তাহলে আজকে যারা অভিযোগ করছেন, গ্রেফতার-বাণিজ্যের শিকার হয়েছেন, তারা তা করতে পারত না।

 

মানবাধিকার খবর : বিচারবহির্ভূত হত্যা ছাড়া সত্যিই কি রাষ্ট্র চলতে পারে না?  এর পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব?

ড. মিজানুর রহমান  : বিচার যদি বিকিয়ে দিতে না হতো, বিচার যদি পেশি, রাজনীতি ও অর্থের কাছে বন্দী না থাকত, তাহলে বিকল্প পথের সন্ধান করা দরকার ছিল না। বদলানোর প্রসঙ্গে বলব বিচারিক স্বাধীনতা আমি বজায় রাখি কি না। নিজকে পরাধীন রাখতেই উৎসাহী কি না।

 

মানবাধিকার খবর : আপনি কি মনে করেন, সংবাদক্ষেত্র ও বাকস্বাধীনতা খর্বিত হচ্ছে?

ড. মিজানুর রহমান  : সমাবেশের স্বাধীনতার চেয়ে এখন বাকস্বাধীনতা বেশি। বিএনপি-জামায়াতের বিবৃতি মিডিয়ায় আসে, তাদের সমাবেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নার্স ও শিক্ষকদের সঙ্গেও আমরা সদাচরণ দেখিনি।

 

মানবাধিকার খবর : পেট্রলবোমার সময় আপনি শক্তি প্রয়োগের পক্ষে বলেছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনো বিচার বিভাগীয় সম্পৃক্ততা পেলাম না। এটা রাষ্ট্রের অসামর্থ্য নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ?

ড. মিজানুর রহমান  : আপনার এই সমালোচনার সঙ্গে অনেকটাই একমত হব। তাদের সামর্থ্য নেই সেটা বলা সম্ভব নয়। দু-একটা ক্ষেত্রে তারা দেখিয়েছে তারা পারে। অভিজিৎ খুনের পরে এফবিআই এল। ভাবলাম এবার কারও রক্ষে নেই। তাহলে কি তাদেরও সামর্থ্য নেই?  এ কারণে আমারও প্রশ্ন এটা কেন, তাহলে কি তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে? বরং একে কখনো কখনো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমার কাছে সঠিক তথ্য-উপাত্ত নেই যে এর সঠিক কোনো উত্তর দেব।

 মানবাধিকার খবর : ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের চলমান হত্যাকা-কে কীভাবে দেখছেন?

ড. মিজানুর রহমান  : সাধারণ মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি, একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা। যখন একটা সমাজ পুরোপুরি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তখন এটা বলা সহজ হয় যে কোনো কিছুই আর সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই।

 

মানবাধিকার খবর : সাধারণ নির্বাচন বা তেমন ধরনের কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন কি এ থেকে উতরাতে সহায়ক, নাকি তা সংকটকে আরও গভীর করবে?

ড. মিজানুর রহমান  : জামায়াত তার লোগো বদলাচ্ছে কিন্তু এখনো একাত্তরের অবস্থান বদলায়নি। আপনি পেট্রলবোমা মারলেন, ভুল স্বীকার করলেন না, এটা না করা পর্যন্ত আমি আশ্বস্ত হতে পারি না যে এর পুনরাবৃত্তি করবেন কি না।

 

মানবাধিকার খবর : কিন্তু এমনটা মোকাবিলা করতে গিয়ে অন্য কোনো জাতি একতরফা নির্বাচন করেছে কি? বিএনপিকে দায়ী করলেও তো জাতি হিসেবে দায়মোচন ঘটে না। তাই বাংলাদেশ এখানে একা।

ড. মিজানুর রহমান  : সেটা আপনি বলতে পারেন।

 

মানবাধিকার খবর : আপনার দায়িত্বকালে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য কী করলেন? হিন্দুদের অর্পিত সম্পত্তি সমস্যা মেটানোর নয় ?

ড. মিজানুর রহমান  : অর্পিত সম্পত্তি আইনের খ তফসিল চূড়ান্ত করার পরে আমাদের বাধায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা ২০১৪ সালে বাতিল হয়। ওটা পাস হলে হিন্দুদের জমি যার যা ছিল, তাও হারাত।

 

মানবাধিকার খবর : এঁরা কারা, যাঁরা এই আমলেও এমন বিধ্বংসী বিধান চূড়ান্ত করেন এবং তাতে প্রধানমন্ত্রীর সই আশা করেন?

ড. মিজানুর রহমান  : আপনার সঙ্গে আমি একমত। এঁরা আমলাতন্ত্র, যাঁদের পরাস্ত করা খুব কঠিন এবং আমার আশঙ্কা হচ্ছে সেই আমলাতন্ত্রের কাছেই সরকার আবার বন্দী হয়ে যাচ্ছে কি না। বাংলাদেশে মানবাধিকার উন্নয়নে আমলাতন্ত্রই অন্যতম বড় বাধা। আমলাতন্ত্র মানবাধিকারকে কোনো পাত্তা দেয় না। নাগরিকের মানবিক মর্যাদায় তার কোনো বিশ্বাস নেই। আটক, নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন ইত্যাদি বিষয়ে আমরা একটি গাইডলাইন করেছিলাম। ভারতে এটা মানা হচ্ছে। কিন্তু এখানে কেউ পাত্তাই দিল না। দ্বিতীয় বড় বাধা হলো ২০০৯ সালের মানবাধিকার আইন, যা আমাদের পঙ্গু করে রেখেছে।

 

মানবাধিকার খবর : আপনি মানবাধিকার কমিশনের দায়িত্ব শেষে কি করতে চান?

ড. মিজানুর রহমান  : আমি একজন শিক্ষক। ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় আমার ঠিকানা। তাই আমার দায়িত্ব শেষে আমি সেখানে শিক্ষকতায় ফিরে যাব।

 

মানবাধিকার খবর : নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্বে কে আসছেন?

ড. মিজানুর রহমান  : এটা আমি জানি না। সরকার ঠিক করবে। যারাই নতুন দায়িত্বে আসুক তাদের প্রতি আমার এবং  আমাদের শুভ কামনা।

 

মানবাধিকার খবর : আপনার দায়িত্ব কালে মানবাধিকার কমিশন মানুষের কল্যানে কতটুকু সঠিকভাবে কাজ করতে পেরেছে ? আপনার ব্যক্তিগত মুল্যয়ন জানতে চাই ?

ড. মিজানুর রহমান  : আমরা তো মানুষের জন্যই মানুষকে নিয়েই কাজ করেছি। আমাদের এখানে হাজার হাজার মানুষকে তার ব্যক্তিগত ও নাগরিক প্রতিকার দিয়েছি। যদিও সমগ্র আমলাতন্ত্রকে পরিবর্তন করা, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা সেই জায়গাগুলতে হয়ত আমরা বড় ধরনের সফলতা অর্জন করিনি। কিন্তু ব্যক্তি নাগরিকের অধিকার পুনঃরুদ্ধার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা এবং তাকে প্রতিকার পাইয়ে দেওয়া এই কাজগুলোতে কিন্তু আমরা অনেক বেশি করতে সক্ষম হয়েছি। তাই একদিকে যেমন আমাদের তৃপ্তি আছে তেমনি কিন্ত আমাদের মধ্যে একটি অতৃপ্তি এবং  গ্লানিও রয়েছে।

 

মানবাধিকার খবর :  দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার খবর ও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান উৎপ্রোতভাবে জড়ীত।   বিদায়ী শুভেচ্ছা হিসেবে মানবাধিকার খবরকে কিছু বলতে চান?

ড. মিজানুর রহমান  : আমি শুধু এটুকুই বলবো যে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং মানবাধিকারকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন তা হলো সাধারণ জনগন যেন তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকেন। সাধারণ জনগণকে সচেতন করার কাজটি কিন্তু সবার উপর অর্পিত। এর জন্য যেমন সাংবাদিক দরকার, ঠিক তেমনই এটি কার্যকর করার জন্য গণমাধ্যমকে ব্যবহার করতে হয়। আমরা সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহন করি। কিন্তু এখানে মানবাধিকার খবর যে কাজটি করছে, বিশেষ করে মানবাধিকারকে কেন্দ্র করে বিশেষ একটি পত্রিকা বের করা, এটি কিন্তু একটি অনন্য অসাধারণ ব্যাপার।

এটা কিন্তু আমরা অন্য কোথাও দেখি না। এমনকি শুধু আমাদের সার্ক আঞ্চলিক দেশগুলোতেই নয় এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপেও কিন্তু মানবাধিকার বিষয়ক এমন জনপ্রিয় একটি মাসিক পত্রিকা আছে বলে আমার জানা নেই যেখানে শুধু মানবাধিকার বিষয়ক সংবাদ থাকবে। বাংলাদেশে এমন একটি পত্রিকা প্রকাশ করে আপনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এজন্য আপনাকে আমি মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে এবং আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আপনার এই উদ্যোগটি আসলেই একটি সুফল বয়ে নিয়ে আসছে। মানবাধিকার নিয়ে কি কি কাজ হচ্ছে এবং কারা কি করেছেন, কি কি ঘটনা ঘটেছে সেটি সম্পর্কে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী জানতে পারছেন। এর প্রভাব কিন্তু সমাজে পড়ছে। মানবাধিকার খবরের এ উদ্যোগ আরো ফলপ্রসু  ও সফল হোক, এর ব্যপ্তি আরও বিস্তৃত হোক সেটি কামনা করি  আপনার ব্যক্তিগত এবং আপনার সাংগঠনিক মঙ্গল হোক সেই প্রত্যাশা করি।

 

মানবাধিকার খবর :  মানবাধিকার কমিশনকে আপনি ভবিষ্যতে কেমন দেখতে চান?

ড. মিজানুর রহমান  :  যদিও আমি দ্বিতীয় চেয়্যারম্যান কিন্তু ইতিহাসে এক সময় বলবে, বস্তুত আমি এবং আমরাই প্রথম মানবাধিকার কমিশন হিসেবে কাজ শুরু করি কেননা আমার পূর্বে যিনি ছিলেন, বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী স্যারের অনন্য মেধা এবং জ্ঞান থাকা সতেও নানা তরফ থেকে অসহযোগীতার কারনে স্যার কিন্তু কিছু করতে পারে নি। আসলে তাকে কোন কিছু করতে দেয়া হয়নি।

তাই মানবাধিকার কমিশনের হয়ে কোন কিছু করার ভার এবং দায়িত্ব পরেছে আমাদের উপর। তাই প্রাথমিক ভাবে মানবাধিকারকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে সমস্ত কাজগুলো করা দরকার সেগুলো কিন্তু আমরা করার চেষ্টা করেছি। অনেক সফলতাও এসছে।

তাই এখন এই যাবার মুহুর্তে বলতে পারি আজকের এই মানবাধিকার কমিশনের একটি মজবুত প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় রয়েছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় থাকার ফলে এখন এই প্রতিষ্ঠানকে আরও কার্যকর, আরও শক্তিশালি করার দায়িত্ব তাদের যারা ভবিষ্যতে দায়িত্ব বহন করবেন। তবে এই কাজটি যে হবেই তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

 

মানবাধিকার খবর :  ভবিষ্যতে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন দেখতে চান?

ড. মিজানুর রহমান  : বাংলাদেশ একটি মানবাধিকার বাস্তবায়নের, অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ফসল। তাই আমরা সব সময় স¦প্ন দেখেছি সে রাষ্ট্রটি হবে মানবাধিকার বান্ধব একটি রাষ্ট্র। মানবাধিকার বন্ধব রাষ্ট্র হতে হলে বিশেষ করে এদেশে যারা দরিদ্র শ্রেণীর শ্রমজীবি মানুষ রয়েছে, তাদের মুখে হাসি থাকতে হবে। এই হাসিটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতি হলেই হবে তা কিন্তু নয়। আপনি ধনী হতে পারেন কিন্তু যদি আপনি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। আপনার যদি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক নিগৃহীত হওয়ার অবধারিত ভয় থাকে, তাদের দ্বারা যদি হযরানি হওয়ার ভয় থাকে তাহলে কিন্ত আপনার পকেটে টাকা থাকা সত্বেও আপনার মুখে হাসি থাকবে না।

কিন্ত আমরা চাই আপনার পেটে যেমন ভাত থাকবে তেমনি আপনার মুখেও হাসি থাকবে এবং এটি তখনই সম্ভব যখন রাষ্ট্র জনগন বান্ধব হবে, মানববন্ধব হবে। আমাদের রাষ্ট্র আরও মানবিক হবে সেরকম একটি বাংলাদেশকে আমরা দেখতে চাই।

 

মানবাধিকার খবর :  আপনি পত্রিকার প্রধান উপদেষ্ঠা হিসেবে আছেন। আমাদের কিছু দিক নির্দেশনা দিবেন। ভবিষ্যতেও আমাদের প্রধান উপদেষ্ঠা ও উপদেষ্ঠা প্রয়োজন আছে কিনা। থাকলে কিভাবে যাচাই বাচাই করে রাখা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

 

ড. মিজানুর রহমান  :  যিনি এখানে চেয়্যারম্যান হিসেবে থাকবেন তাকেই প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাখাটা উচিত হবে এবং আমি তো আছিই। আমি মানবাধিকার কর্মী ছিলাম আছি এবং থাকব। আমার সুযোগ এবং সাধ্য অনুযায়ী আমার যতটুকু সম্ভব আমি তো আপনাদের সাথেই আছি। আমার সাহায্য এবং সহযোগিতা থাকবেই। তবে এটাই শ্রেয় হবে যিনি চেয়্যারম্যান হবেন তিনিই যদি উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন।

 মানবাধিকার খবর : আমরা পত্রিকার শুরু থেকেই আপনাকে উপদেষ্টা হিসেবে পেয়েছি। আপনার উদ্দেশ্যে আমাদের অফিসে বসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। যখনই সুযোগ পাবেন অবশ্যই আমাদের অফিসে যাওয়ার অনুরোধ করছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন, দিক নির্দেশনা দিবেন এবং বসে পরামর্শ দিবেন। পত্রিকার শুরু থেকে আমাদের সাথে ছিলেন বর্তমানে আছেন। আমি মানবাধিকার খবরের সম্পাদক হিসেবে আশাবাদ ব্যাক্ত করছি ভবিষ্যতেও থাকবেন। আমাদের জন্য দোআ করবেন।

ড. মিজানুর রহমান  :   আপনারা আমার জন্য বসার ব্যবস্থা করেছেন এ জন্য ধন্যবাদ। আমার জন্যও দোআ করবেন। অবশ্যই দোআ করি আপনারা ভাল থাকবেন। নিশ্চয়ই আপনারা সফল হবেন।

 

মানবাধিকার খবর :   আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. মিজানুর রহমান  :   আপনাদেরও ধন্যবাদ।



  
  সর্বশেষ
কক্সবাজার জেলা পরিষদের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আল মারুফের যোগদান
৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, হুঁশিয়ারি সংকেত
মাদক কারবারে ককস বাজারের সাবেক এমপি বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি
দিশেহারা সুগন্ধা দাশের পাশে দাঁড়াল চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসন

Md Reaz Uddin Editor & Publisher
Editorial Office
Kabbokosh Bhabon, Level-5, Suite#18, Kawran Bazar, Dhaka-1215.
E-mail:manabadhikarkhabar11@gmail.com
Tel:+88-02-41010307
Mobile: +8801978882223 Fax: +88-02-41010308