সৃষ্টির শুরুতে মানবতার প্রথম লংঘন হয়েছে মানবাধিকার কাবিল কর্তৃক হাবিলকে খুনের মাধ্যমে। আজও অবিরত চলছে এই খুনের ধারা। মানবাধিকার লংঘন হয়েছে কারবালার প্রান্তরে।নির্দোষ সক্রেটিসের, রানী ইসাবেলার ইনকুইজিশনের জলন্ত অগ্নিকুন্ডে, স্টালিনের শাসনামলেও। মানবাধিকার লংঘন হয়েছে নাৎসী কনস্ট্রেশন ক্যাম্পে, হিরোশিমায় আনবিক বোমার আঘাতেও মানবাধিকার লংঘন হয়েছে, বর্ণ বৈষম্যে সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে. যুদ্ধ সংঘটিত কারনে গৃহহীন শরনার্থীদের। মানবাধিকার লংঘন হয়েছে ক্ষমতার অপব্যাবহারে, পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি সম্পত্তি মাত্র এক শতাংশ পুজিপতিদের দখলের মাধ্যমে, বিশে^র প্রতিটি প্রান্তে প্রতিনিয়ত লংঘন হচ্ছে মানবাধিকার।
মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে যুগে যুগে বহু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় জন্য, প্রাচীনতম ব্যবিলনের রাজা হাম্মুরাবি মানবাধিকার সংরক্ষনে আইন করেছেন। খৃষ্টীয় ৭ম শতাব্দিতে সাম্প্রদায়ী শান্তির জন্য বহু ধর্মভিত্তিক সমাজে হজরত মুহাম্মদ (সঃ) কর্তৃক প্রনীত মদিনা সনদ’ এ মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। ক্ল্যাসিকাল যুগে, মধ্য যুগে, রেনেসার যুগে বিভিন্ন দার্শনিকগন মানবাধিকারের কথা বলে গেছেন। তাতেও মানবাধিকার হরন কমেনি। পরবর্তী বিশে^ বিভিন্ন দেশের প্রজা সাধারন স্বৈর শাসকদের অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হতে থাকে। এবং স্বেচ্ছাচারী শাসকগন কর্তৃক তাদের মৌলিক অধিকার সমূহ ব্যাপক ভাবে লংঘিত হতে থাকে। সেজন্য উপযুক্ত দার্শনিকগনের চিন্তা ধারার আলোকে বিপ্লবের নায়কগন বিভিন্ন দেশের চার্টার, বিল, পিটিশন ও ডিক্লারেশন প্রনয়ন করেন যেখানে কয়েকটি অধিকার দাবি পায়। এ সকল দলিল প্রনীত হওয়ার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার সনদের ধারা অব্যাহত থাকে। ১৯৪৫ সালে জুনে সানফ্রান্সিসকোতে একটি সনদ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় পরবর্তি কালে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে গৃহীত জাতিসংঘের সার্বজনীন ঘোষনা ‘ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অবহিউম্যান রাইটস’ বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘে প্রায় ৬০ টির অধিক দলিল ও কনভেশন প্রনীত ও গৃহীত হয়েছে যেন মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।
যুগে যুগে সবচেয় বেশি মানবাধিকার লংঘন হয়েছে ক্ষমতার লড়াইয়ে। এই উপমহাদেশে বহুজাতির শোষনে লংঘন হযেছে মানবাধিকার । এই দেশে মানবাধিকারের সব সীমা অতিক্রম হযেছে ১৯৭১ সালে নীরস্ত্র মানুষদের হত্যার মাধ্যমে। স্বাধীন বাংলায় মানবাধিকার লংঘন হয়েছে রাষ্ট্র প্রধানদের খুনের মাধ্যমে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু স্ব-পরিবার হত্যার মাধ্যমে ধুলিসাৎ করা হয়েছে মানবতাকে।
মানবাধিকার রক্ষায় এতো আইন ধারা নিয়ম করার পরও বিশে^ প্রতিটি মানুষ কি তার পূর্ণ অধিকার নিয়ে বাচতে পারছে? আজও কি আমরা প্রতিটি মানুষকে তার প্রাপ্য অধিকার দিতে পারছি? বিশে^ এতো শক্তিধর রাষ্ট্র, ক্ষমতাসীনগন মানবতার জন্য সবাই কি এক হতে পারছে? বিশ^ মোড়ালগন লোভ, শক্তি ও ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় মরিয়া হয়ে মানব সভ্যতাকে বিপন্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
১০ ডিসেম্বর এলেই বিশ^ মানবারধিকার দিবস পালন করা হয় কিন্তু এর কার্যকারিতা কতটুকু প্রভাব বিস্তার করছে বিশ^বাসির সেদিকে নজর রাখতে হবে। মানুষের সবচেয় বড় অধিকার হচ্ছে বেঁচে থাকা, মানব সভ্যতাকে বাঁচাতে হলে অকল্যানকর যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার উন্নয়নে মনবাধিকার রক্ষায় কতোটুকু ভুমিকা রাখতে পারছি সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সমাজ থেকে দরিদ্রতা দুর করতে হবে। হিংসা-বিদ্ধেষ, সন্ত্রাস, লুন্ঠন বন্ধ করতে হবে। রুখে দিতে হবে মানবাধিকার লংঘন কারীদের। জাগ্রত করতে হবে মানবিক মূল্যবোধ। সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে মানবতার।