|
মানবাধিকার দিবসঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
আদিম অসভ্য যুগে কোন নিয়মনীতি-শৃঙ্খলা ছিল না। ক্রমবিকাশের মধ্যে দিয়ে সভ্যতার সোপান রচিত হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নীতি নৈতিকা, শৃঙ্খলা ও আইনের প্রবর্তন হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র এখন আর নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আন্তর্জাতিক রূপ নিয়েছে, আমরা এখন বিশ্বয়নের যুগ। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ সংগঠন সহ আঞ্চলিক অসংখ্য সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে। লক্ষ্য একটিই, গোটা বিশ্বকে শান্তিময় করে তোলা, সন্ত্রাস ও দারিদ্রের হাত থেকে রক্ষা করা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অনিবার্য শর্ত হল মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিাত করা। যখনই মানুষ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের আশ্রয় নেয়। দেশের সবোর্চ্চ আইন, অর্থাৎ সংবিধানের মানুষের মৌলিক অধিকরের গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে। সাংবিধানিক আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ তার ন্যায় বিচার প্রাপ্তি ও অধিকার বাস্তবানের দাবি জানায়। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এখন রাজা-প্রজা বা প্রভূ-কৃতদাস প্রথা না থাকলেও বাস্তবে তার ছায়া-প্রভাব পড়ে আছে। এখনও ধনী-দরিদ্র, প্রভাবশালী-দুর্বল, পরাক্রমশালী রাষ্ট্র-দরিদ্র, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ব্যবস্থার মৌলিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে ক্ষমতার প্রভাবের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। মানবাধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসর থেকে শুরু করে আঞ্চলিক পর্যায়ে অনেক সংগঠন ও ব্যাক্তি কাজ করছেন। মানবাধিকার রক্ষায় সাফল্যের পরিমাণও কম নয়। তবে, দুর্দন্ড প্রতাপশালী রাষ্ট্র, ব্যক্তি ও সমাজ এখনও অব্যাহতভাবে অপর রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। যারা নিজেরাই অন্যের মানবাধিকার খর্ব করছে প্রতাপের সঙ্গে, তারাই মোড়লের মত মানবাধিকরের উপদেশ দিচ্ছে অন্যদেরকে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করে সেখানে নির্বিচার দখলদারিত্ব, নাগরিকদের হত্যা করা, মারনাস্ত্রের নির্বিচার প্রয়োগ করে চলেছে। সন্ত্রাসী ও খুনী রাষ্ট্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে চলেছে, যেমন ফিলিস্তিনিদের হত্যাকারী ইসরাইল, নিরীহ বাঙ্গালীদের হত্যাকারী পাকিস্তান। লিবিয়া, ইরাক,ইয়ামেন, নিকারাগওয়া, মিশর, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান সহ অসংখ্য দেশকে উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে। গুয়ান্তানামা কারাগারে বিনা বিচারে নির্যাতনের কাহিনী পৃথিবীর সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনকে হার মানায়। রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ও বৈষম্য ও শোষণের নির্মম চিত্র প্রতিনিয়ত দেখা যায়। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আদালতের আশ্রয় নেয়া বিচার প্রার্থীর সংখ্যা লক্ষ-লক্ষ। কিন্তু বাস্তবে প্রত্যাশিত বিচার পাচ্ছে কতজন ? বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদছে। তদন্ত সংস্থা থেকে শুরু করে বিচারালয়ে প্রভাবশালী-ধনী ব্যক্তিদের প্রভাবের বলয়ে দরিদ্র-দুর্বল বিচার প্রার্থীদের হয়রানী নিত্য নিয়মিত বিষয়ে পরিনত হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিচার চাইতে এসে আরও বেশী হয়রানী ও অবিচারের শিকার হতে হচ্চে অসহায় বিচার প্রার্থীদেরকে। নীতি বাস্তবায়ন করবেন এবং তাদের নীতি ও কাজের জন্য জনগনের নিকট সম্পূর্ণভাবে দায়ী থাকবেন। বছরের পর বিচার ঝুলে থাকায় এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে বিচারের আশা ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে অনেকেই। কোন কোন বিচার দেখে যাবার সৌভাগ্য অর্জন করেনা। নানা অজুহাতে মৌলিক অধিকার-মানবাধিকার ব্িঞ্চত হতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। হয়ত কোন জরিপ হলে দেখা যাবে বিচার বঞ্চিতের সংখ্যা সমাজ জীবনে সবচেয়ে বেশী। নাগরিকের ট্যাক্সের টাকায়ই রাষ্ট্রযন্ত্র চলছে, চলছে বিচারালয়। কিন্তু যাদের জন্য সত্যিকার অর্থে বিচারালয়, তারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, দরিদ্র ও কম ক্ষমতারধর অসহায় মানুষ। তারা কি প্রত্যাশিত হারে বিচার পাচ্ছেন ? ্র প্রশ্নের জবারে দ্বিধাহীন ভাবে বলা যায় “প্রায়ই পাচ্ছেন না”। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন। যেখানে ধনী ও প্রভাবশালীদের কৌশলগত প্রভাবের কাছে দরিদ্র-অসহায় বিচার প্রার্থীদের ফিরে যেতে হবে না বিনা বিচারে। একই সঙ্গে আইনের কঠোর বিধান হতে হবে তাদের জন্য, যারা রাষ্ট্র ক্ষমতার যে কোন স্তরে থেকেই হোক মানবাধিকার লঙ্ঘণ করবে। শুধুমাত্র আইন করলেই হবে না, হতে হবে আইনের কঠোর প্রয়োগ। যে যত বড়ই হোক, দল-সরকার বা অর্থ-বিত্তের প্রাচুর্যে যে স্তরে থাকুক না কেন আইনের আমলে আনার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রকে হতে হবে নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তাকারী প্রতিষ্ঠান। আইনের উর্দ্ধে থাকবে না কেউ। এই প্রত্যাশা বাস্তবায়ন ছাড়া প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করা বাস্তবে অসম্ভব। অনিবার্যভাবে মনে রাখতে হবে পরিবার, সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে চলছে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন। নাগরিক দায়িত্বে সোচ্চার হতে হবে সচেতন সকলকে। শ্রেণী, পেশা, ধর্ম, দরিদ্র নির্বিশেষে সোচ্চার হতে হবে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা অন্যায় অবিচারের দীর্গ ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে। তবেই বন্ধ হবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন, প্রতিষ্ঠিত হবে নাগরিকের জন্মগত মৌলিক অধিকারের প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তিময় সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব। (লেখক : এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, সাবেক সম্পাদক, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি) মানবাধিকার আপনার জন্মগত গণতান্ত্রিক অধিকার। একজন সুনাগরিক হিসেবে আপনার কি কি অধিকার রয়েছে তা জানতে হলে নিয়মিত পড়–ন মাসিক “মানবাধিকার খবর”
|
|
|
|
|