এনসিসি ব্যাংক: ব্যাংকিংয়ে এক নতুন দিগন্ত
রাজু আলীম
বেসরকারি খাতের এনসিসি ব্যাংক পরিবেশবান্ধব অর্থায়নে ধারাবাহিক অগ্রগতি ধরে রেখেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকটি শুধু আর্থিকভাবে নয়, সামাজিক এবং পরিবেশগত দায়বদ্ধতার দিক থেকেও সুনাম অর্জন করেছে। ব্যাংকটি গত চার বছরে টেকসই ঋণে আট গুণের বেশি বৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা তাদের কৌশলগত পরিকল্পনা, দায়িত্বশীল বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগের এক অভিন্ন প্রতিফলন। শুধু ঋণই নয়, এনসিসি ব্যাংক তাদের আমানত ও সম্পদ ব্যবস্থাপনাতেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে তাদের মোট আমানত ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মোট ঋণ বেড়েছে ২৭ শতাংশ। এই বৃদ্ধির পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে তাদের টেকসই খাতে ঋণ বিতরণ, নারী অন্তর্ভুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগকে চিহ্নিত করা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি টেকসই রেটিংয়ে এনসিসি ব্যাংককে স্থান দিয়েছে। ব্যাংকটি শুধুমাত্র আর্থিক লাভের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না, বরং সমাজ ও পরিবেশের দায়বদ্ধতাকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ‘টেকসই খাতে অর্থায়ন’ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো টেকসই খাতে মোট ৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এটি মোট ঋণের ৩৩.৪৩ শতাংশ এবং শুধুমাত্র এক বছরে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পে বিতরণকৃত ঋণ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এনসিসি ব্যাংকও এই বৃদ্ধির ধারায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে।
এনসিসি ব্যাংক ২০২১ সালের অনেক আগে থেকে টেকসই খাতে ঋণ প্রদান শুরু করেছে। এখন তারা তাদের মোট ঋণের প্রায় ২৭.৫ শতাংশ এই খাতে বিনিয়োগ করছে। তারা সৌরবিদ্যুৎভিত্তিক প্রকল্প, পরিবেশবান্ধব কারখানা, চক্রায়ন অর্থনীতি বা সার্কুলার ইকোনমি, নারী ও প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং সম্প্রসারণে অর্থায়ন করছে। ব্যাংকটি শুধু প্রকল্পে বিনিয়োগই করছে না, বরং তাদের নিজস্ব কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও কাগজের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শুধু মুনাফার দিকে নজর দিই না, আমরা সমাজ ও পরিবেশের দায়বদ্ধতাকেও মাথায় রাখি। এজন্য আমরা নারী, তরুণ উদ্যোক্তা, কৃষি এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প খাতে টেকসই ঋণ বৃদ্ধি করেছি।’ এই বক্তব্য ব্যাংকের কার্যক্রমের মূল দর্শনকে তুলে ধরে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, আগামী দিনের ব্যাংকিং কেবল লাভের হিসাব নয়, বরং এটি সামাজিক দায়িত্ব, পরিবেশ সচেতনতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সঙ্গে সমন্বিত হতে হবে।
গত কয়েক বছরে এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। তারা আর্থিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব খাতে বিনিয়োগকে সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে টেকসই ঋণ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান ঋণ খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ব্যাংক এই খাতের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনাও আরও শক্তিশালী করেছে।
সূত্র অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে এনসিসি ব্যাংকের মোট আমানত ছিল ২৫ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৫ হাজার ৪১১ কোটি টাকা বেশি। একই সময়ে মোট ঋণ বেড়ে ২৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা হয়েছে। তাদের টেকসই খাতে ঋণ বিতরণে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি ঘটেছে। ২০২১ সালে তারা ৮৩০ কোটি টাকার টেকসই ঋণ প্রদান করেছিল। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকায়, যা চার বছরের মধ্যে প্রায় ৬৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
এনসিসি ব্যাংক টেকসই অর্থায়নে কৌশলগত অগ্রাধিকার পুনর্গঠন করেছে। তারা পরিবেশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। নারী অন্তর্ভুক্তি এই নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০২৪ সালে তারা ১১ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ২ লাখ ১৮ হাজার নারীকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এটি দেখায় যে, তারা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক হিসাব নিকাশের জন্য নয়, বরং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
এনসিসি ব্যাংক শুধুমাত্র নারী উদ্যোক্তা নয়, তরুণ উদ্যোক্তা, কৃষি খাতের উদ্যোক্তা এবং প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তাদেরকেও ঋণ প্রদানে উৎসাহ দিচ্ছে। এই উদ্যোগ ব্যাংকিং খাতের ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, টেকসই ঋণ কেবল অর্থনৈতিক লাভ নয়, বরং এটি সমাজ এবং পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত।
এনসিসি ব্যাংকের ব্যাংকাররা বলছেন, ভবিষ্যতের ব্যাংকিং কেবল মুনাফাভিত্তিক হবে না; এটি হবে কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই। বিশ্বব্যাপী ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই এই দিকটি গ্রহণ করছে। বাংলাদেশেও এই প্রবণতা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। এনসিসি ব্যাংক তাদের গ্রাহকের চাহিদা, আন্তর্জাতি…