|
বৈরী আবহাওয়ায় শাহপরীর দ্বীপ হয়ে সেন্টমার্টিনে স্বল্প পরিসরে যাচ্ছে নৌযান; |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
মিয়ানমার অভ্যন্তরে চলমান সংঘাত থেকে নাফনদী দিয়ে সেন্টমার্টিনগামী নৌ-যানে গুলি এসে পড়ে গত একমাস আগে।একাধিকবার গুলি এসে পড়ার ঘটনায় স্বেচ্ছায় গুলি করা হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে কে বা কারা এ গুলি করছে, তা নির্ণয় সম্ভব না হওয়ায় সংঘাত না থামা পর্যন্ত নাফনদ হয়ে টেকনাফ- সেন্টমার্টিন নৌ-পথে যান চলাচল অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য সংকটও দেখা দেয়। এনিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে প্রশাসন বিকল্প পথে সেন্টমার্টিন যাতায়ত শুরু করে। প্রথমে ইনানী নৌবাহিনী জেটিঘাট দিয়ে শিপে মালামাল নিলেও পরে শাহপরীরদ্বীপ ঘোলারচর সেন্টমার্টিন-টেকনাফ যাতায়াত করা হচ্ছে। কিন্তু আষাঢ়ের ভারী বর্ষণে সাগর উত্তাল হলে আবারো বন্ধ হয়ে যায় যাতায়াত। ২২ জুন থেকে দীর্ঘ ১৫ দিন বন্ধ থাকার পর ৭ জুলাই আবারো শুরু হয় সার্ভিস বোট চলাচল। এরপর ফের টানা বৃষ্টির কারণে বৈরী আবহাওয়ায় প্রয়োজনের তাগিদে শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিনে সীমিত পরিসরে নৌযান চলছে। অসুস্থ রোগী, শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা ভয় নিয়েই আসা-যাওয়া করছেন। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, মিয়ানমারের সংঘাতে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ এবং দেশটির সীমান্ত থেকে বাংলাদেশি ট্রলার ও স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ায় নাফনদী হয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন পথে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় স্বাভাবিক যাত্রী ও খাদ্যপণ্য আনা-নেওয়া। এভাবে দ্বীপে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়। সঙ্গে অসুস্থ রোগী, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম শহরে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ দ্বীপ থেকে তাদের গন্তব্যে যেতে পারেননি। তিনি বলেন, এখন বিকল্প পথে শাহপরীরদ্বীপে গিয়ে ভিড়ছে সেন্টমার্টিনের নৌযান। চলমান বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল হলেও কাজের প্রয়োজনে কিছু ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করছে। যাত্রী সাধারণ আগে টেকনাফ কায়ুকখালি ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে গেলেও এখন সময়ের কথা বিবেচনা করে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটই ব্যবহার করছে। তবে বিভিন্ন মালামাল টেকনাফ কায়ুকখালি ঘাট থেকেই নেওয়া হচ্ছে। সেন্টমার্টিন স্পিডবোট পরিচালনায় দায়িত্বরত মো. জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের জানান, দ্বীপ থেকে স্পিডবোটে করে যাত্রীরা শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে যাচ্ছেন। তবে এখন যেহেতু বর্ষাকাল, স্বাভাবিক ভাবে সাগর উত্তাল থাকে। বৃষ্টির অবস্থা বুঝে স্পিডবোট চলাচল করে। শুক্রবারও কিছু অসুস্থ রোগী ও যাত্রী নিয়ে একটি স্পিডবোট দুপুরে শাহপরীর দ্বীপে যায়। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, এখন ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও বৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সাগর উত্তাল থাকলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ট্রলার কম চলাচল হয়। যাত্রীর ওপর নির্ভর করে এক বা দুইটা ট্রলার টেকনাফ কায়ুকখালি ঘাট থেকে ছাড়ে। শুক্রবারও একটি ট্রলার যাত্রী ও মালামাল নিয়ে সেন্টমার্টিনে গেছে। তিনি আরও জানান, যেসব স্পিডবোট শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাচ্ছে সেগুলো ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করছে। কায়ুকখালি ঘাট থেকে স্পিডবোট এখন ছাড়ে না।
সূত্র মতে, বৈরী আবহাওয়ায় ২৯ মে সেন্টমার্টিনে স্থগিত হওয়া টেকনাফ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ৫ জুন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী কাজ শেষে ফেরার পথে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহন করা ট্রলারে নাফনদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে গুলি করা হয়। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে কে বা কারা গুলি করেছে তা নির্ণয় করা যায়নি। এরপর ৮ জুন (শনিবার) আরও এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয় একই পয়েন্টে। সর্বশেষ ১১ জুন (মঙ্গলবার) আরেক স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। এসব গুলিবর্ষণের ঘটনায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট ও জরুরি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ১২ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে যাত্রীদের আসা-যাওয়া ও পণ্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৩ জুন থেকে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকূল ব্যবহার করে শুরু হয় যাত্রীদের আসা-যাওয়া। ১৪ জুন কক্সবাজার শহর থেকে দ্বীপে পণ্য নিয়ে যায় জাহাজ। আর বিকল্প পথ হিসেবে শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে সীমিত পরিসরে কিছু নৌযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২২ জুনের পর থেকে তাও বন্ধ হয়। শনিবার (৬ জুলাই) রাত থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে রোববার সকালে স্বাভাবিক নিয়মে সেন্টমার্টিনে নৌ-যান চলাচল শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার ভারী বর্ষণ চলমান থাকায় সাগরের পরিস্থিতি বুঝে এক-দুটি সার্ভিস বোট দিনে চলাচল করে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, সাগরের পরিস্থিতি দেখে সেন্টমার্টিন-টেকনাফ ট্রলার আসা যাওয়া করছে। ঘাটতি হওয়ার আগেই পৌঁছে যাচ্ছে ভোগ্যপণ্য ও অন্যান্য সরঞ্জাম। সবদিকেই আমাদের নজর রয়েছে।
মােঃ জানে আলম সাকী,
ব্যুরো চীফ, চট্টগ্রাম।
|
|
|
|
|